ফুলকৌড়ি (১) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
1266

—দিবা আপু,নিভান ভাইয়া বউ নিয়ে এসেছে।জানো কি সুন্দর দেখতে সে,আমাদের বাগানের সদ্য ফোঁটা শুভ্র বেলীফুলের ন্যায় রূপ তার।মলিনত্ব শুভ্ররঙা শাড়িতেও তাকে,স্নিগ্ধ বেলীফুলের ন্যায় সতেজ দেখাচ্ছে।এসো এসো দেখবে।কি সুন্দর দেখতে সে,তোমার থেকে-ও আর-ও বেশী খুব খুব সুন্দর।একটা জীবন্ত বেলীফুল সে।

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে চঞ্চল পায়ে চলে গেলো মৌনতা।সেদিকে এখনো নিষ্পলক নজরে তাকিয়ে আছে দিবা।মেয়েটা এগুলো কি বলে গেল?নিভান বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে?তা কি করে সম্ভব!নিভান তো মৃত ব্যক্তিকে দেখতে গিয়েছিলো,তবে?আর মৌনতা শেষে কি বলে গেলো,তার থেকে-ও সুন্দর নারী।সত্যি কি-তাই?যে সৌন্দর্যতার অহংকারে সে নিভানের মতো শ্যামবর্ণ পুরুষের বদৌলে অন্য কাওকে নিজের জীবনে বেছে নিলো।যদি-ও সেই সৌন্দর্যের অহংকার তারজন্য পতন বয়ে এনেছে।দীর্ঘশ্বাস ফেললো দীবা।নিভানের মতো ব্যাক্তিত্বপূর্ন ছেলেকে উপরে করা তার যে কত বড় ভুল হয়েছে এটা সে এখন প্রতিটি পদেপদে অনুভব করতে পারছে।হয়তো এই ভুলের মাশুল তাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে,আর আফসোস করে যেতে হবে।সেই নিভান তারচেয়ে-ও সুন্দরী রমনী বিয়ে করে নিয়ে এসেছে।মৌনতার কথা গুলো জেনো মন মানতেই চাইলো-না দিবার।এতোসময় হুঁশ হারিয়ে ফেলেছিলো জেনো সে।কথাগুলো মাথায় গেঁথে যেতেই তড়িৎ গতিতে বেড থেকে উঠে বসলো।চঞ্চল পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে নিচতলায় যাওয়ার জন্য সিঁড়িপথ ধরলো।তাড়াহুড়োর জন্য দু-একবার হোঁচট ও খেলো,তবে সেদিকে খেয়াল দিলো না।আর না নিজের পায়ে পাওয়া ব্যাথাকে গ্রাহ্য করলো।

.

বাড়িটার নাম “বেলাশেষে”।বিশাল বড় দুতলা বাড়িটার সদর দরজায় সামনে দাঁড়িয়ে উৎসুক মুখর বাড়ির প্রতিটি সদস্য,আর বাড়ির সদর দরজার ওপাশে স্ট্রেইট দাঁড়িয়ে আছে নিভান।বরাবরের মতোই মুখ অবায়বে কঠিনত্য ভাব তার।দুধে সাদা পাজামা পাঞ্জাবিতে শ্যামবর্ণের উঁচু-লম্বা পুরুষটার মুখের এই কাঠিন্যভাবটা জেনো সবসময় তার ব্যাক্তিত্বের সাথে বেশ যাচিত।শ্যামবর্ণ রঙটা বাদে ছেলেটার সবকিছু বেশ আকর্ষণীয় ছিলো দিবার কাছে।নিভানকে পেয়েও সে,এই রঙটার জন্যই নিভানকে উপেক্ষা করে দ্বিতীয় কাওকে নিজের জীবনে বেছে নিয়েছিলো।অথচ এখন ছেলেটার সেই শ্যামবর্ণ রঙটাই তাকে আকার্ষিত করে।অতি আকর্ষিত।কিন্তু..অতীত মনে পড়তেই ফের হুঁশ ফিরলো দিবার।তখন মৌনতার বলা কথাগুলো মাথায় আসতেই চকিতে নিভানের পাশে তাকালো সে।নজর স্থির হয়ে গেলো তার।বুকের মধ্যে কিছু হারিয়ে ফেলার আলোড়ন শুরু হলো।নিজের জীবনের বাজে অভিজ্ঞতার পর পুনরায় যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলো,তাকে আবার-ও হারিয়ে ফেলানোর ভয়!সিঁড়ির মাঝ বরাবর থেকে আর-ও দুকদম পা আচমকা আরও দুই সিঁড়িতে নামিয়ে দিলো দিবাকে।নিজের লোভী সিদ্ধান্তের কারনে জীবন এমনিতেই তাকে অনেকটা নিচে নামিয়ে দিয়েছে।এখন আর-ও নিচে!ভিতরটা হু হু করলেও,দিবার নজরটা সামনের পানেই স্থির রইলো।

চিকনচাকান বেলীফুলের ন্যায় শুভ্ররঙা শরীরে সাদা মলিন শাড়িটাও জেনো মেয়েটার মুখের সৌন্দর্যের অবায়বকে একটুও কমাতে পারি-নি।মেয়েটার ফোলা ফোলা নাকমুখ,ডগরডগর ঘনপল্লবিত ভেজা রক্তিম চোখজোড়া,সেই শুভ্ররঙা সৌন্দর্যের মায়া জেনো আরও চড়াও করে দিয়েছে।ইশ,মেয়েটা কাঁদছে কেনো?নিভানের মতো ছেলেকে কেউ জীবনসঙ্গী হিসাবে পেলে কাঁদতে আছে নাকি?শুভ্র শাড়ীর আঁচলের অংশবিশেষ কিছুটা মাথায় থাকার কারনে, কি সুন্দর দেখাচ্ছে মেয়েটাকে।সত্যিই কি এটা নিভানের বউ?তার রূপের অহংকার কি তবে চুরমার করে দিলো নিভান?

‘মেয়েটাকে এভাবে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখলে কেনো ছোটো বউমা?কতোদূর থেকে এসেছে?তাতে মেয়েটার অবস্থা দেখেও তো ভালো মনে হচ্ছে না।দূর্বল লাগছে তাকে দেখতে।

ফাতেমা বেগমের গলার তীক্ষ্ণ আওয়াজ পেতেই সদর দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো সবাই।ফাঁক পেয়ে আশেপাশে তাকালো-না নিভান।বড়বড় কদম ফেলে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।সিঁড়ি পথে দিবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে-ও তাকে নূন্যতমও গ্রাহ্য করলো-না।না নিজের চলার পথ ধীর করলো,আর না নজর ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করলো।এমনভাবে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে গেলো,মনেই হলো-না তার আশেপাশে বা সামনে কেউ আছে।এই অগ্রাহ্যতা সেদিন থেকেই,যেদিন ওই শ্যাম পুরুষটাকে অগ্রাহ্য করে অন্য কাওকে বেছে নিয়েছিলো নিজের জীবনে সে।নিভান চলে যেতেই এবাড়ির ছোটো বউ স্বান্তনা রহমান উত্তর দিলেন।

‘বড়ভাবী আসার অপেক্ষা করছিলাম আম্মা।

ফাতেমা বেগম ধীর কদমে সামনে এগোলেন।আশি উর্ধ্বে বয়স হয়ে গেছে উনার।তবুও চেহারার জৌলুশ এখনো কমেনি আর না চলাফেরায় দূর্বল ভাব এসেছে। এখনো শক্তপোক্ত ভাবে চলাফেরা করতে পারেন। কিছুটা বিরক্তস্বরে তিনি বললেন।—কেনো?বড়বউমার অপেক্ষা কেনো করছো।একি নতুন বউ যে,বড় বউমা না এলে তাকে বরন করে ঘরে ঢুকাতে পারছো-না।সমস্যা কোথায়?আর বড় বউমা বা কোথায়?

‘দাদাভাই এসেছে দেখে আমি আম্মুকে ডাকতে গিয়েছিলাম দাদুমা।আব্বু ওয়াশরুমে গিয়েছে,তাই দাদাভাই এসেছে জেনেও আম্মু নিচে আসতে পারিনি।

এবাড়ির বড় মেয়ে মান্যতা।দাদিমার কথার উত্তর দিয়ে দিলো।দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ফাতেমা বেগম।দারজার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি।মেয়েটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার নিরক্ষর করলেন।যে বয়োবৃদ্ধ নজরে সহজে কেউ মুগ্ধ হয় না, সেই নজরজোড়া মুগ্ধ হলো উনার।মেয়েটার মাথায় কাপড় দেওয়াটা আর মাথা নিচু করে থাকাটা আরও মুগ্ধ করলো উনাকে।নিজের কুঁচকে যাওয়া হাতটা দিয়ে আলতো স্পর্শে মেয়েটার চিকন কোমল হাতখানা ধরলেন তিনি। মূহুর্তেই কেঁপে উঠলো মেয়েটা।তবে মাথা উচু করলো না।কম্পনটা ফাতেমা বেগম-ও টের পেলেন।যদি-ও কোমল গলায় তিনি সহজে সবার সাথে কথা বলেন না তবে সামনে দাঁড়ানো মেয়েটার চোখমুখে শোকের আনাগোনা এখনো সতেজভাবে পরিলক্ষিত।তাই তিনি গলার চড়াও আওয়াজটা বের করতে পারলেন না।নামনীয় গলায় শুধালেন।

‘নাম কি তোমার?

এবারেও মাথা উঁচু করলোনা মেয়েটা।এই সামনে দাঁড়ানো মানুষগুলো তার সম্পূর্ণ অচেনা।যদিও তাদের মুখ দেখেনি এখনো।শুধু পায়ের আবরণ গুলোই দৃষ্টি গোচর হয়েছে তার।যে মানুষটার সাথে এতো পথ পাড়ি দিয়ে এবাড়িতে এসেছে,সেই মানুষটাকেও পর্যন্ত নজর তুলে দেখা হয়নি।মানুষটা কে? আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে?সংকোচ,দ্বিধা তারমধ্যে একটু বেশি।একা একা মানুষ হওয়ায় সহজে সে কারও সাথে মিশতে পারে-না।বাহিরের অপরিচিত কারও সাথে কথা বলতে গেলেও সেই দ্বিধাটা সহজেই স্বভাবে তার ধরা দেয়।তবে বাবার উপদেশ আদেশ,নিজের স্বভাব ব্যবহারেও যে সে পরিলক্ষিত রাখতে চায়।হঠাৎ বাবা কথা মনে পড়তেই কলিজা মোচড় দিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো মন।কান্নারা গলায় এসে ফের দলাপাকিয়ে যন্ত্রণা দিল।সামনে অপেক্ষারত বয়োবৃদ্ধার শুধানো উত্তরখানা মুখ থেকে বের হতেই চাইলো না।সামনে দাড়িয়ে থাকা অভিজ্ঞ বৃদ্ধা নারীটা জেনো সেটা বেশ বুঝতে পারলেন।ফের নরম কন্ঠে শুধালেন।

‘বলবে না তোমার নাম কি?

‘কৌড়ি।

কান্না গলায়ও নিজের নামটা তড়িঘড়ি করে বললো কৌড়ি।নাহলে সামনে দাড়ানো বয়োবৃদ্ধার সাথে যে বেয়াদবি হয়ে যাবে।কৌড়ির উত্তর পেয়ে মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়া কিছু বলতে যাবেন ফাতেমা বেগম।তার আগে প্রানবন্ত কন্ঠে পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো।

‘ফুলকৌড়ি নাকি পানকৌড়ি।কোনটা তোমার নাম?

স্বান্তনা রহমান সঙ্গেসঙ্গে ছেলের পানে চোখ মোটামোটা করে কঠিন চোখে তাকালেন।অসভ্য ছেলের কোথা-ও মুখ স্থির থাকেনা।সম্মানের বারো বেজে যায়,এই ছেলে যেখানে থাকে।মুখ কাচুমাচু করে মাথা নিচু করে নিলো নাফিম।সে তো সবসময় সত্য কথা বলে তবে কেনো তাকে সবসময় এরকম চোখ মোটামোটা করে, বকে ধমকিয়ে শাসন করা হয়।ভাল্লাগেনা তার একটুও।তবে কৌড়ি নামের মেয়েটার তার ভীষন ভালো লেগেছে।কি শান্ত।তার আপুদের মতো এতো বকবক করেনা।আর কি সুন্দর দেখতেও।সবাই বলে এ-বাড়ির মেয়েগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দিবা আপু সুন্দর।তার-ও মনেহয়।তবে আজ থেকে দিবা আপু কাট।দিবা আপুর থেকে কতো সুন্দর এই মেয়েটা।এতোসময় সে হা হয়ে দেখেছে।সবাই দাদাভাইকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে,অথচ দাদাভাই এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখেও বিয়ে করতে চায়না।অথচ এবাড়ির কেউ তাকে একবারও বিয়ে করার কথা বলেনা।তাকে বিয়ে করার কথা বললে,সে আগে যাকে পছন্দ করতো করতো।এখন নির্দ্বিধায় এই ফুলকৌড়ি নাকি পানকৌড় নামক মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে।বাড়ির সবাই দাদাভাইকে বিয়ে দেওয়ার জন্য যখন দাদাভাইয়ের মতামত চেয়েছিলেো,নিশ্চয় তারও চাইবে।তো ছেলের মতামত সরূপ দাদাভাই বিয়েতে রাজী নাহলেও সে অবশ্যই রাজী হবে।এবং বলবে,এই ফুলকৌড়ি নামক মেয়েটাকে তার বউ হিসাবে চাই।চাই মানে চাই।যদিও দাদাভাইয়ের মতো এখনো বড় হয়নি।তবে সে মেপে দেখেছে,দাদাভাইয়ের হাটু পর্যন্ত সে।আর মাথা পর্যন্ত হতে কতক্ষণ….

‘ওই পাকা বুড়ো কি ভাবছিস?নিশ্চয় আবোলতাবোল?না হলে তোর মুখ থেকে এতো উল্টোপাল্টা কথা বের হতো না।

মান্যতার সুক্ষ আপমানমুলক কথাগুলাে গায়ে মাখলো না নাফিম।এগুলো তার সয়ে গেছে।বোনেরা তাঁকে এভাবেই কারনে অকারনে পচায়।নিজের আশপাশটা ফাঁকা দেখে চঞ্চল গলায় শুধালো।

‘আপু,ওই সুন্দর মেয়েটা কোথায় গেছে।

‘তুই যখন তোর আবোলতাবোল গবেষণায় ব্যস্ত ছিলি, দাদিমা তখন ওকে ঘরে নিয়ে গেছেন।ক্যান বলতো?

কপাল কুঁচকে শেষের প্রশ্নটা করল মান্যতা।সেটা দেখে একগাল বোকাবোকা হেসে দিলো নাফিম।ফের বললো।—মেয়েটা খুব সুন্দর তাই-না আপু।কি সুন্দর দুটো মোটামোটা চোখ দেখেছো?আমার না খুব সুন্দর লেগেছে ওই মোটামোটা চোখ দুটো।

নজর মান্যতারও আটকে গিয়েছিলো কৌড়ির সৌন্দর্যে তাই সেও অকপটে স্বীকার করলো।—ঠিকই বলেছিস মেয়েটা আসলেই খুব সুন্দর।এমনকি আমাদের দিবা আপুর থেকেও বেশি সুন্দর।

মুখে সুন্দর হাসি ফুটিয়ে কথাগুলো বললেও ফের নাফিমের দিকে কপাল কুঁচকে বললো—সুন্দর মেয়ে মানেটা কি?আবার সৌন্দর্যের বিবরন ও দিতে শিখেছো দেখছি।মোটামোটা সুন্দর চোখ,ব্যাপার কি?

কথাগুলো বলতেবলতে নাফিমের কান চেপে ধরলো মান্যতা।চোখ পাকিয়ে তাকাতেই নাফিম মুখ ভার করে বললো।
‘সুন্দর মেয়ে মানে সুন্দর মেয়ে।আমার তাকে খুব পছন্দ হয়েছে তো আমি কি করবো।হুমম।

‘খুব পেকে গেছো।এই বয়স কতো তোর?

‘কেনো তুমি জানো না।সেদিন না তোমরা সবাই মিলে আমার এগোরোতম জন্মদিনের উইশ করলে আমাকে।এখন আবার না জানার রংঢং করছো।

মান্যতা কথাটা কথার কথা বলেছিলো।কিন্তু এই ছেলে যে মহা সেয়ানা এটা মাথায় ছিলো-না তার।কান ছেড়ে দিয়ে চোখ পাকিয়ে ফের বললো।–খবরদার ওই মেয়েকে একটুও বিরক্ত করবি না।মেয়েটার বাবা মারা গিয়েছে।তাতে মেয়েটার শরীর মন দুটোই খারাপ।বুঝলি তো?

হঠাৎ চঞ্চল ছেলেটা শান্ত বাচ্চা হয়ে গেলো।সেটা দেখে মান্যতা মৃদু হেসে নাফিমের হাতটা নিজের হাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো—চল দেখে আসি মেয়েটা কি করছে।তোর মতো আমার-ও না তাকে খুব ভালো লাগছে।

নাফিমও বোনের কথায় সায় দিয়ে মান্যতাকে অনুসরন করলো।

.

দিবা এখনো সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে।আগে মৌনতা প্রশংসাবানী এখন মান্যতারও অতিরিক্ত প্রশংসা।যদিও নিজে চোখে দেখেছে তবে কৌড়ির প্রসংশা শুনতে একটুও ভালো লাগলো-না তার।মূহুর্তেই যে সৌন্দর্যে সবাই বিমোহিত হলো,নিভান কি মেয়েটাকে মোটেও- দেখে-নি।যদি দেখে থাকে তবে সবার মতো সেও সেই সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে পড়লো নাতো?মনটা হাসফাস করে উঠলো দিবার।ঘাড় ঘুরিয়ে উপরতলার কাঙ্ক্ষিত রুমটার দিকে তাকালো সে।খোলা দরজায় লাগানো আভিজাত্যপূর্ণ স্বর্ণালি পর্দাগুলোর স্থিরতা ছাড়া আর কিছুই নজরে পড়লোনা তার।

—স্যরি আপু,তখন তোমাকে ভুল কথা বলার জন্য।কিন্তু আমি মিথ্যা বলিনি।আম্মু যেটা আমাকে বলেছে সেটাই বলেছি আমি।কাল থেকে দাদাভাইকে বাড়িতে না দেখে আম্মুকে যখন জিজ্ঞেস করলাম।দাদাভাই কোথায় গেছে,দাদাভাইকে দেখছি না কেন?আম্মু তখন বলেছে দাদাভাই বিয়ে করে বউ আনতে গেছে।কিন্তু আম্মু যে তখন কথাটা রাগ করে বলেছিলো,এটা আমি বুঝতে পারিনি।

মুখে হাসি ফুটতে না চাইলেও জোর করে মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করলো দিবা।ফের সহজ সরল মৌনতার কাচুমাচু মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো–ঠিক আছে পাগলি আমি কিছু মনে করিনি।তুই কোথায় যাচ্ছিলি যা।

চলে গেলো মৌনতা।মৌনতা বয়সে ছোটো হলেও,বরাবর বাড়ির প্রতিটি ব্যক্তির বিষয়ে তার কৌতুহল বেশি।কে কোথায় গেছে, আজ বাড়িতে কে নেই?নেই কেনো?কার মন খারাপ, মনখারাপ কেনো?কি হয়েছে তার?কে খেয়েছে না খেয়েছে,তবে খায়নি কেনো?ক্লাস সেভেনে পড়লে-ও মেয়েটার এসব বিষয়ে খেয়াল ধ্যান একটু বেশিই।ছোটো মামি হয়তো কাজে ব্যস্ত ছিলো,সেই ব্যস্ততার মধ্যে গিয়ে মেয়েটা হয়তো বারবার জিজ্ঞেস করছে “দাদাভাই কোথায়?তাই হয়তো উত্তর সরূপ এমন কথাই বলে দিয়ছেন মামি।দীর্ঘশ্বাস ফেললো দিবা।তবে নিভান মেয়েটাকে বউ করে না নিয়ে আসলেও,সবার মতো নিশ্চয় মেয়েটার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়েছে।আর সেই আকৃষ্টতায় সম্পর্ক তৈরী হতে কতক্ষণ!

ভাবনাটা মাথায় আসতেই মূহুর্তেই পা চালিয়ে উপরে সেই কাঙ্ক্ষিত রুমটার দিকে পা বাড়ালো দিবা।যদিও উপেক্ষা আর অপমান ছাড়া সেই মানুষটার থেকে কিছুই মিলবে-না।তবু-ও তার যে নিজের মনে চলা প্রশ্নের উত্তরের বিহিত চাই।নাহলে যে খাওয়া ঘুম হারাম হয়ে যাবে তার।রুমটার সামনে এসে বুঝতে পারলো,দরজাটা খোলা।নিস্তব্ধতায় ঘেরা শুনশান রুমটা ভিতরে পা রাখার আগেই গম্ভীর বজ্রকন্ঠের কঠিন ভাষায় আওয়াজ এলো।

‘কার অনুমতি নিয়ে রুমে ঢুকতে যাচ্ছিলি?যেখানে দাঁড়িয়ে আছিস সেখানেই থেমে যা।কিছু বলার থাকলে সেখান থেকেই বল।নাহলে,গেইট আউট ফর্ম মাই রুম।বাড়িটা তোর মামুর হলেও রুমটা আমার।সেখানে প্রবেশ করতে গেলে অবশ্যই নিভান আওসাফ আহমেদ এর অনুমতি লাগবে।

পুরুষালী গলার কাঠিন্য আওয়াজে বুকের ভিতর কম্পন শুধু হলো দিবার।পর্দার এপাশ থেকেও নিভানের শক্তপোক্ত চোয়াল না দেখেও অনুভব করতে পারলো সে।তবুও নিজেকে যতসম্ভব স্বাভাবিক রেখে কাঁপা গলায় বললো।–এতো কড়াকাড়ি কিন্তু আগে সেভাবে ছিলোনা আমার সাথে।

‘পাস্ট ইজ পাস্ট।অতিতের প্রভাব নিভান আওসাফ আহমেদ সহজে তার বর্তমান লাইফে আচ ফেলতে দেয়না।সেটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করা-ও তার স্বভাব নয়।যে থুতু সে একবার মুখ থেকে উগড়ে ফেলে দিয়েছে,সেই থুথু কোথায় গিয়ে পড়লো।তা দেখা তো দূর সেটা মাড়ানোর সময়ও নিভান আওসাফের নেই।সো আউট।আর দ্বিতীয়বার এই রুমে প্রবেশ করার কথা মাথাতে আনার আগেও দশবার চিন্তা ভাবনা করে নিবি।নয়তো নিভান আওসাফ আহমেদকে তো তোর চেনা আছে।

দিবা এখনো থু-থুতেই আঁটকে আছে।নিভান তাকে থুথুঃ এর সাথে তুলনা করলো।যে মেয়েটাকে একসময় সে নিজের জীবন সঙ্গী হিসাবে পেতে চেয়েছিলো,সেই মেয়েটাকে এতো বাজেভাবে আপমান করতে পারলো সে।মূহুর্তেই টানাটানা চোখজোড়া ভরে উঠলো দিবার।হয়তো এই বাজেভাবে আপমানটা তার যথাযথ প্রাপ্য ছিলো।আর একমুহূর্তও এখানে থাকতে ইচ্ছে করলোনা। পা চালিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে কাঁদতে মন চাইলো।তবে সেই কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নটা যে এখনো বাকি।আপমান যখন গায়ে মেখেছে আরও একটু নাহয় মাখলো।কিন্তু নিভানের কাছ থেকে প্রশ্নটার ভালোমান্দ উত্তর না নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত যে তার শান্তি মিলবেনা।পরপর কয়েকবার ঢোক গিলে কান্না আটকানো গলাটা স্বাভাবিক করে নেওয়ার চেষ্টা করলো দিবা।ফের নিভানকে উদ্দেশ্য করে শুধালো।

‘তুমি মেয়েটাকে দেখেছো?তুমিও নিশ্চয় ওই মেয়েটার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে গেছো, তাইনা?

দিবার ইঙ্গিত মূহুর্তেই বুঁজে আসলোনা নিভানের।গম্ভীর গলার স্বর তবুও হঠাৎই আপনাআপনি মুখ থেকে বের হয়ে গেলো–কে?

‘যে মেয়েটাকে তুমি নিয়ে এসেছো।কৌড়ি।

চলবে কি?

#ফুলকৌড়ি
(১)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here