ফুলকৌড়ি পর্ব(২) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
837

#ফুলকৌড়ি
পর্ব(২)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

মধ্যেদুপুর অথচ বিস্তৃত আকাশটা এমন মেঘের ঘনঘটায় ঢেকে আছে মনেহচ্ছে,সূর্যটা ডুবে গিয়ে সন্ধ্যা নাম-নাম ভাব।নামীদামী জিনিস দিয়ে সাজানো গুছানো বড়সড় রুমটার একপাশের দেয়ালজুড়ে বিস্তৃত জানালা।আর সেই জানলাার পাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের অসময়ের রঙ বদল দেখে চলেছে কৌড়ি।তার জীবনের সমীকরণটাও ঠিক আজকের আকাশের মতো।জীবনটা তার মধ্যদুপুরও গড়াইনি অথচ অসময়ের মেঘের ঘনঘটায়,সেই দুপুরটা ভর সন্ধ্যা রূপে ধরা দিলো কৌড়ির জীবনে।দুপুরের মেঘেভরা আকাশটা দেখে জীবনের মধ্যদুপুরটা কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন সন্ধ্যাবেলার মতো বলে অন্তত মনেহচ্ছে কৌড়ির।না হলে কতো সুন্দর দিনগুলো যাচ্ছিলো তার।মা ছিলোনা অথচ দাদীআপা আর বাবাকে নিয়ে কতো সুন্দর দিনগুলো পার হয়ে যাচ্ছিলো তার।আর সেই সুন্দর দিনগুলোর ক্ষান্ত তার জীবনের মধ্যদুপুর আসার আগেই সমাপ্তি রূপে পরিণয় নিলো।দুপুর পার হলেনা অথচ তার জীবনে সন্ধ্যা নেমে গেলো!নিজের আপনজন,পরিচিত সবকিছু ছেড়ে অন্যের আশ্রিতা হয়ে গেলো সে!অন্যের আশ্রিতা হয়ে যেতে হলো তাকে!
জীবনটা তার এমন রূপ কেনো হলো,মায়ের ভরপুর আদর শাসনটা ঠিকঠাক মতো পাওয়া হলো-না,তার আগেই মা চলে গেলেন।তবুও বাবার আদর ভালোবাসায় তো খুব ভালো ছিলো তবে কেনো জীবনের মধ্যে দুপুরটা গড়ানোর আগেই এখন আবার বাবাও,তাকে একাকি করে মায়ের কাছে চলে গেলেন।বাধ্য হয়ে মায়ের মতো আদর মমতায় মুড়িয়ে রাখা দাদীআপাকে-ও ছেড়ে চলে আসতে হলো তাকে।এ কেমন নিয়তির শিকলে বাঁধা পড়লো সে?

কালো মনির ডগরডগর সুন্দর নয়নযুগলের কার্নিশ বেয়ে আপনমনে আবারও একদল অশ্রু বয়ে চলে গেল।
ঘন পল্লবগুলো ভিজে দলা বেঁধে গেলো অথচ কৌড়ি চোখের পলক ফেললো না।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘমালায় ডুবে থাকা আকাশপানে।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান কৌড়ি।বাবা আহসান হাবীব এবং মা জেবা নাহারের বৃদ্ধা বয়সের সন্তান সে।কৌড়ির বাবারা হলেন পাঁচ ভাই।সবার বড় বাবা হওয়া সত্ত্বে- ও, সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে তিনি ছোটো চাচারও শেষে।তারজন্য নাকি কম ব্যাঙ্গাত্মক কথা শুনতে হয়নি উনাকে।কিন্তু শেষ বয়সে সন্তান লাভে থোড়াই না উনাদের দোষ ছিল।সন্তান দেওয়া নেওয়ার মালিক তো আল্লাহ।তিনি সেই বিশেষ রহমত সরূপ, সন্তানসুখ কখন একজোড়া দম্পতিকে দেবেন সেটা শুধু তিনিই জানেন।অথচ সেই মহান স্রষ্টার সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে না বুঝে কতো মানুষ উপহাস করে বসে।উপহাস্য সরূপও দেখে।

প্রথম বয়সে একটা সন্তান লাভের আশায় কতো ডাক্তার কবিরাজের শরণাপন্ন হয়েছিলেন উনারা।দুজন কারও কোনো সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও, যৌবন বয়স গড়িয়ে যাওয়ার একপর্যায়েও সন্তান লাভে সক্ষম হননি উনারা।একটা সময় শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর অবিচল হলেন।ভরসা করলেন।তিনি দিলে দিবেন না দিলেতো আর উনাদের হাতে কিচ্ছু নেই।বাবার বয়স চল্লিশের অধিক গড়িয়ে যাওয়ার পর হঠাৎই একদিন কৌড়ির পৃথিবীতে আসার সুখবর পেলেন।যে উনারা সন্তানসুখ লাভ করতে চলেছেন।হয়তো সেসময় উনারা আর আশা রাখের-নি,যে এই বয়সে এসে উনারা আর সন্তানের মুখ দেখতে পাবেন।কিন্তু সৃষ্টিকর্তার উপরে সকল জ্ঞান, বিচার, বিবেচনা কার চলে?সে আস্পর্ধা রাখার ক্ষমতা যে এই জগত সংসারে কার-ও নেই।স্বয়ং তিনিই যখন উত্তম পরিকল্পনাকারী।সেখানে উনার পরিকল্পনার উপরে পরিকল্পনা।তা কি কখনো মেনে নেন তিনি।

তার জন্ম হওয়ার কথাগুলো দাদিআপার থেকে জানা কৌড়ির।জীবন থেকে নির্দিষ্ট সময়ের অধিক সময় চলে যাওয়ার পর যখন সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হলেন মা।তখন তার আয়ুটা কমে এলো।কৌড়িকে জন্ম দিতে গিয়ে তিনি নিজের জীবনটা বিসর্জন দিলেন।জীবনের বিনিময় জীবন দিয়ে গেলেন।তারপর ছোট্টো কৌড়িকে মানুষ করার জন্য বাবা আর বিয়ে করেননি।দাদিআপা বলতেন।–তোর মা মরার পর তোর বাপেরে কতো সাধলাম একখান বিয়ে কর বাপ।নাহলে এই দুধের শিশু মানুষ করবো কি-করে? আর বু্ড়ো বয়সে বা তোরে দেখবো কে।কিন্তু কে শোনে কার কথা।তোর বাপ কিছুতেই আমার কথা শুনলো না।বিয়ের কথা কইলে তোর বাপে কইতো কি জানিস ছেড়ি?

‘আমার মেয়ের মা লাগবে না আম্মা।আমি আমার মেয়ের আম্মা আব্বা দু’জনেই হয়ে আমার মেয়েরে আদর যত্ন দিয়ে মানুষ করতে পারবো।তাই বলে আমার সোনার টুকরো রত্মটাকে আমি সৎমা নামক কারও হাতে তুলে দিয়ে অবহেলার পাত্রী হতে দিতে চাই-না।

‘কত বুঝাইলাম অথচ তোর বাপে কানেই তুললো না আমার কথা।তবে তোর বাপের কথামতো সে ঠিকই তোরে আদর যত্ন কইরা আলগাইয়া বড় কইরা তুললো।একটু আঘাত ছুতে দেয় নাই তোরে কোনোদিন।ব্যাটা মানুষ হইয়াও কি সুন্দর তোরে সামলাইলো।তোরে একখান কথা কই বুবু।আমি মরার পর তোর বাপেরে আদর যতন করার লোক আর নাই বুঝলি।দুনিয়ায়টা বড়োই স্বার্থপর,এখানে নিঃস্বার্থভাবে মায়াদয়া ভালোবাসা দেখানোর মানুষের খুবই অভাব।তাই তুই যেখানেই থাকোস তোর বাপারে একটু আমার মতো করে আদর যতন করিস।মা বাপের মতো নিঃস্বার্থভাবে কেউ আদর যতন করতে পারেনা।ওরকম আর কেউ হয়না বুঝলি।কেউ হয়না।

চোখ বুঝে ফেললো কৌড়ি।হড়হড় করে আবারও দুচোখের কার্নিশ বেয়ে নামলো নোনাজল। দাদিআপা রয়ে গেলো,রয়ে গেলো তার কথা।অথচ সেই আদর যত্ন পাওয়ার হকদার মানুষটাই,উনার প্রাপ্য ভালোবাসা আর যত্নের ভাগটা না নিয়ে তাকে ঋনি করে চলে গেল।আর আশ্রয় থাকতেও তাঁকে অন্যের আশ্রিতা করে দিয়ে গেল।এবার ফুপিয়ে বাবা বাবা বলে কেঁদে দিলো কৌড়ি।কেনো তার আপনজন গুলো একে একে এভাবে তাকে নিঃস্ব করে দিয়ে চলে যাচ্ছে।দু’হাতে গ্রীল চেপে ধরে তৃষ্ণার্থ পাখির ন্যায় আকাশের দিকে ফিরে,ওই বিশালত্ব ছাপিয়ে যাওয়া আকাশের মালিকের কাছে কাতরস্বরে অভিযোগ জানালো।

‘ও মাবুদ তোমার দয়ার নজর কেনো আমার উপরে একটু সুস্পর্শ করোনি।আমাকে কেনো এতটা অসহায় করে দিলে।কেনো?

কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেলো কৌড়ির।গলা দিয়ে আর কথা বের হতে চাইলো না।মাথা নুইয়ে দুহাতের মুঠোয় গ্রিল চেপে ধরলো কৌড়ি।ফের বাবার দেওয়া উপদেশ এর কথা মনে পড়লো,বাবা সবসময় তাকে বলতেন।–যতো বিপদ আপদ আসুক , দুঃখ কষ্ট হোক।কখনো সৃষ্টিকর্তার উপরে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করবেনা।
বরংচ তার কাছে আর্জি জানাবে।ধৈর্য্য ধরবে।তার ফল সরূপ সৃষ্টিকর্তা তোমাকে আরও ভালো কিছু দেবেন।

মাথা নুইয়ে চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় আবারও ফুপিয়ে কেঁদে দিলো কৌড়ি।ফের বিড়বিড় করলো বললো– ও মাবুদ তোমার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না থাকার কারনে আমাকে ক্ষমা করো।সবকিছু সয়ে নেওয়ার জন্য আমাকে ধৈর্য্য দাও।

মাথায় স্নেহের পরশ পেতেই মুখ উঁচু করে তাকালো কৌড়ি।ঝাপসা দৃষ্টিতে সুন্দর হাস্যজ্বল একখানা মুখ নজরে পড়ল তার।পরিপাটি করে শাড়ী পরা,খুব সুন্দর দেখতে মাঝবয়সী এক ভদ্রমহিলা।কে উনি?উত্তর সামনে হাঁটু মুড়ে বসা ভদ্রমহিলাই দিয়ে দিলেন।

‘তুমি যার আদেশে এবাড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছো আমি উনার কর্ত্রী।তোমার আঙ্কেলকে দেখলেও আমার সাথে দেখা হয়নি কখনো তোমার।তাই আমাকে চিনবে না।

কৌড়ি ভেজা চোখে চেয়ে থাকলো সেই সৌন্দর্যে ভরপুর লাবন্যময়ী মাঝবয়সী নারীরপানে।যে পরিচয়টা দিলেন ভদ্রমহিলা সেই হিসাবে বয়সের সামন্য আচও পড়েনি এখনো উনার চেহারায়।সামনে বসা ভদ্রমহিলা কৌড়ির ভেজা চোখমুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।হাত উঠিয়ে মমতাময়ী স্পর্শে কৌড়ির চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বেশ মায়ামায়া কন্ঠে আদুরেস্বরে বললেন।

‘তুমি সেই কখন এসেছো অথচ তোমার কাছে আসতে আমার কতো দেরী হয়ে গেলো দেখলে।এভাবে মেঝেতে বসে আছো কেনো?অসুস্থ হয়ে পড়বে তো।আর কান্নাকাটি করে এতো সুন্দর চোখমুখের কি অবস্থা করেছো ফেলেছো তুমি?এটা কিন্তু একদম ঠিক নয়।তুমি এভাবে কান্নাকাটি করলে,সেখানে ভালো থাকতে পারবেন তোমার বাবা? কি করে ভালো থাকবে বলো তো?তার আদরের একটা মাত্র মেয়ে এভাবে যদি কেঁদে-কেটে অস্থির হয়ে পড়ে,আল্লাহ যে তাকে দায়ী করবেন।আর তিনি তোমার চোখের পানির দায়ী হলে কখনো ভালো থাকতে পারবেন?কান্নাকাটি করেনা,মা।যদি কান্নাকাটি করার হয়,নামাজে দাড়িয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করো।বাবার জন্য দোয়া করো।তাতে বরংচ আল্লাহ খুশি হবেন।আর একদম কান্নাকাটি নয়। আমরা আছি তো।এই যে আমি তোমার বড়মা,আমি আছিতো।

ফুপিয়ে কান্না থামলেও চোখ দিয়ে পানি পড়া বন্ধ হয়নি কৌড়ির।সামনে বসা মমতাময়ীর আদুরে কথায় কান্নার জেনো আরও ভিতর থেকে উগলে ভেঙে এলো তার।সেটা দেখে সামনে বসা নিহারিকা বেগম সংগোপন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।ফের প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললেন–তুমি সেই কখন এসেছো অথচ এখনো পোশাক পাল্টাওনি।সেই বেশেই বসে আছো,শরীর খারাপ করবে তো?
এভাবে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে তো মা।উঠো,গোসল সেরে নেবে।নিশ্চয় কান্নাকাটি করে মাথা ধরিয়ে ফেলেছো,তারউপর কতো পথ জার্নি করে এলে।আর একটুও কান্নাকাটি নয়, উঠো।

উঠে দাড়ালেন নীহারিকা বেগম।মুখে তাড়া দিতে থাকলেও হাত থেমে নেই উনার।হাত ধরে কৌড়িকেও উঠে দাঁড় করালেন।সঙ্গে সঙ্গে কপাল কুঁচকে গেলো উনার।বাচ্চা মেয়েটার এরকম সাদা শাড়িতে কেনো?
গ্রামের মেয়েরা সেই পুরানো যুগের মতো এখন তো আর শাড়ী পরে না।আধুনিকতার ছোয়াতো এখন আর শুধু শহরতলীতে সীমাবদ্ধ নেই।স্মার্ট ফোন এসে তা গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে।আর না কৌড়ির বিয়ে হয়েছে?তবে এমন ধারার সাদা শাড়ী পরা কেনো মেয়েটার?বাবা মারা গিয়েছে তাই?এরকম কোনো প্রচলন আছে কি?

‘তুমি এরকম পোশাকে কেনো?তাও আবার সাদা শাড়ীতে?

নিজের দিকে তাকালো কৌড়ি।অচমকা কাল সন্ধ্যাবেলার চিত্র ভেসে উঠলো মানসপটে।সে শাড়ী পরে এমনটা নয়।বাবার সাথে তার বন্ডিংটা ছিলো খুবই ভালো।ভালোমন্দ সব কথা বাবাকে না বলা গেলেও, নিজের জীবনের নিত্যকার অধিকাংশ কথা বাবাকে বলতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করতো কৌড়ি।বাবাও তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন।আর ভালো মন্দ আদেশ উপদেশ দিতেন।তিনজনের সংসারে বাবার ছিলেন দুই-মা।আর এই দুই মায়ের মধ্যে সবসময় বাবার কাছে ভালো সাজার দন্ডতা চলতো।সেটা ভালোমন্দ সাজে হোক বা একে অপরের বিরুদ্ধে নালিশে।যদিওবা সেটা তাকে ভালোবাসার দাদিআপার একটা অন্য পন্থা ছিলো সেটা কৌড়ি জানতো। তবে বাবার কাছে দেওয়া দাদিআপার সেই মিছিমিছি অভিযোগ নালিশ শালিসিগুলো সে বেশ উপভোগ করতো।কাল সন্ধ্যায় দাদিআপাকে রাগাতে,উনাকে ক্ষেপাতে সেরকম একটা মজা করেছিলো কৌড়ি।

সন্ধ্যার নামাজের পর দাদিআপা যখন বসেবসে তসবিহ গুনছিলো।আচমকা দাদিআপাকে রাগাতে দুষ্ট বুদ্ধি সাজালো সে।নিজের পরিহিত সালোয়ার-কামিজে পাল্টে আচমকা দাদিআপার সাদা শাড়ী পরলো।সাথে ব্লাউজ পেটিকোটও পরতে ভোলেনি।তাতে দাদিআপা আরও ক্ষিপ্ত হবেন হাহুতাশ করবেন আর নামাজে শেষে বাবা যখন বাড়িতে ফিরবেন তখন তাকে দেখিয়ে নানান অভিযোগ আর নালিশি জুড়বেন।যদিও কৌড়ির জানা সেসব অনুযোগ মিছিমিছি।তবুও কেনো জানিনা কৌড়ির দাদিআপার সাথে বাঁদরামী গুলো করতে বেশ ভালো লাগতো।তবে কালকে দাদিআপা সেই নালিশ করার সুযোগই পাননি।নামাজ শেষে উনার ছেলে আর সুস্থ সমেত বাড়িতে ফেরেননি।সুস্থ মানুষ বাড়ি থেকে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন ফিরেছিলেন লাশ হয়ে।
মসজিদে মুসল্লীদের বয়ান অনুযায়ী নামাজে সিজদাহরত অবস্থায় বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।তারপর আর নিজে কি পরা ছিলো এটা আর খেয়ালই হয়নি।তারপরের পরিস্থিতি যা হলো,শাড়ী পাল্টে অন্যকিছু পরার সময় পেলো কোথায় সে।আচমকা দাদিআপার কথা মনে পড়তেই আবারও দুচোখ ভরে উঠলো কৌড়ির।মানুষটা বাবাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো সাথে তাকেও।সেই বৃদ্ধা মানুষটা বাবাকে ওই অবস্থায় দেখে কতোটা বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন।সেটাতো কৌড়ি দেখেছিলো,আর তাকে কিভাবে আগলে রেখেছিল। সেই মানুষটা বাবাকে ছাড়া তাকে ছাড়া কেমন আছো?

‘কৌড়ি।চলো গোসল সেরে নেবে।

নামটা ইতিমধ্যে বাড়ির ইঁচড়েপাকা ছেলেটার কাছ থেকে জেনে নিয়েছেন নীহারিকা বেগম।কৌড়িকে বেশ সময় ধরে চুপ থাকতে দেখে তাকে ডেকে উঠলেন তিনি।বুঝলেন মেয়েটার একরকম পরিস্থিতিতে প্রশ্ন করা উনার ঠিক হয়-নি।তাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে কৌড়িকে তাড়া দিলেন।তবে কৌড়ির কথাগুলো কানে ঢুকলোনা বোধহয়। সে আচমকা বললো।

‘আমি দাদিআপার কাছে যেতে চাই।

যদি-ও বাচ্চাদের মতো আবদার।তবু-ও করে বসলো কৌড়ি।কৌড়ির কেঁদেকেটে ফুলনো মুখের দিকে নির্বাক হয়ে কিছুসময় তাকিয়ে রইলেন নীহারিকা বেগম।
বাড়ির বাচ্চা পার্টি ঠিকই বলেছে।মেয়েটা অদ্ভুত এক মায়াবিনী সৌন্দর্যর অধিকারী।আর এরকম মায়ামায়া কন্ঠে আবদার করলে ফেরানো যায়?কিন্তু মেয়েটা যার কাছে যাওয়ার আবদার জুড়েছে, তারইতো অনুরোধে এখানে আনা মেয়েটাকে।সংগোপন তপ্ত শ্বাস ফেলেেন তিনি।ফের কৌড়ির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন।

‘তুমি নিশ্চয় জানো,তোমাকে এখানে কেনো পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তোমার দাদি আপা।তবু-ও জেনে-বুঝে এরকম আবদার করলে চলবে মা?সব ঠিক হয়ে যাবে।

চাচাতো ভাই নামক ওই কুকুটার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য দাদিআপা যে তড়িঘড়ি করে আঙ্কেলের কাছে অনুরোধ জানিয়ে তাঁকে এখানে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন এটা কৌড়ি জানে।বাবা বেঁচে ছিলেন তাই তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিতো বারবার জানোয়ারটা। আর এখন ববা৷ বেঁচে নেই।হয়তো বৃদ্ধা দাদিআপার পক্ষেও তাকে আগলিয়ে রাখার সাধ থাকলেও শক্তি, ক্ষমতা কোনেটাই নেই।আর কথা বাড়ালো না কৌড়ি।নীহারিকা বেগমের নির্দেশনা অনুযায়ী চুপচাপ গোসল করতে চলে গেলো।সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নীহারিকা বেগম।কতো সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে,কি শান্ত কি নিস্পাপ চেহারা।অথচ ভাগ্য তাকে কোথায় এনে দাঁড় করালো।

.

নিজের রুমের আরামদায়ক বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে কেঁদে চলেছে দিবা।তখন নিভানকে প্রশ্ন করলেও উত্তর মেলেনি তার।মিলেছে আপমানসরূপ,মুখের উপর ধড়াম করে দরজা লাগিয়ে দেওয়ার উচ্চশব্দ।দিবা জানতো উত্তর মিলবে-না। নিভান তাকে কখনোই উত্তর দেবেনা।আর উত্তর পাওয়ার জন্য নিজের জেদীরূপটা প্রকাশ করলে,পুনরায় নিজের খারাপটা নিমন্ত্রণ করে আনা ছাড়া ফলটা ভালো হবেনা।বিধায় সে-ও আর বাড়াবাড়ি না করে চুপচাপ চলে এসেছে।তবে তার শেষের প্রশ্নে নিভান কেনো অতসময় ধরে নিরব ছিলো।এটাই তাকে বিচলিত করে চলেছে।সে আগের ন্যায় সহজে নিভানের স্বাভাবিক ব্যবহার পাবেনা এটাও জানে।তবে চেষ্টা করে চলেছিলো তো সে।হয়তো কোনো একদিন সেই চেষ্টা সফল হতো।তবে ওই মেয়েটাকে দেখার পর কেনো মনেহচ্ছে সেই চেষ্টা আর কখনো সফল হওয়ার নয়।তবে যাই হোক সে নিভানকে পুনরায় নিজের দিকে ফিরানোর চেষ্টা করবে।ওই মেয়েটাকে যেটুকু দেখেছে নিভান,আর তার আশেপাশে মেয়েটাকে ঘেঁষতে দেবেনা।তবে নিভান?দিবা নিজ মনে তো ভেবে নিচ্ছে,সে তার চেষ্টায় একদিন না একদিন সফল হবে।তবে নিভান যেই ধরনের ছেলে তাকে কি আর কখনো মেনে নেবে নিজের জীবনে?

হঠাৎ ফোনের আওয়াজে মাথা কাত করে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা তুলে নিলো দিবা।আননোন নম্বর দেখে রিসিভ করতে মন চাইলো-না তবে ফেনটা থেমে নেই।একবার বেজে ক্ষান্ত হয়নি সে।দ্বিতীয়বার আবার বেজে উঠায় বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করলো দিবা।ওপাশের মানুষটার গলা শুনতেই ক্রোধে জর্জরিত হয়ে পড়লো সে।

‘কি খবর আমার সুন্দরী বউ?তোমার আশায় আশায় থাকায় পানি ফেলো দিলো বুঝি নিভান?যার আশায় বিয়ে করা বর কে ছাড়তে চাইছো, তাকে দেখলাম তোমার চেয়েও সুন্দরী মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে।সেজন্য বুঝি কেঁদেকেটে অস্থির হয়ে পড়েছো বউ?অথচ তোমার জীবন থেকে কি সুন্দর নিজের স্বামীকে বিদায় করে দিতে চলেছো তাতে কোনো বিরহজ্বালা নেই তোমার!ঈশ,পুরানো প্রেমিকের প্রতি কি দরদ তোমার!তোমার কান্নারত গলা শুনে আামরই বুক জ্বলছে।তবে আমি যদি নিভান হতাম না তবে……

সিয়ামের ব্যাঙ্গাত্মক কথায় দিবার ক্রোধ আরও দ্বিগুণ হলো।কৌড়িকে নিয়ে আসার সময় হয়তো এই ছেলে কোথা থেকে দেখেছে বিধায় তাঁকে উস্কানোর জন্য এই ফোন কল।সিয়ামের বাজে ইঙ্গিতপূর্ন কথা শেষ করতে দিলোনা দিবা।সিয়ামের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কড়া গলায় বললো—একদম আজেবাজে কথা ভুলেও মুখে আনবেনা।এজন্য তো তুমি নিভান নও,আর না তার যোগ্য কখনে হতে পারবে।সবাইকে কি তোমার নিজের মতো চরিত্রহীন মনে করো।নাকি নিজে শুঁকুন তো সেই নজরে সবাইকে অনুভব করো।আর আমার চরিত্রে কাঁদা ছুঁড়ানোর আগে,একবার নিজের দিকে তাকা-ও।লজ্জা করে-না আমাকে আবার ফোন দিয়ে নাটক করো।

‘সেই তো আমার কাছে ফিরতেই হবে তবে এতো রঙঢঙ দেখাও কেনো?তোমার ওই পুরোনো আশিকি তোমাকে আর গ্রহণ করবে-না।সো রঙঢঙ না দেখিয়ে সসম্মানে চলে এসো।আমি তোমাকে সদাসর্বদা গ্রহন করতে প্রস্তুত।

সিয়ামের হেসে হেসে ফের ব্যাঙ্গাত্মক কথায় মাথার ভিতর ধপ করে আগুন জ্বলে গেলো দিবার।দাঁতে দাত চেপে একই স্বরে বললো—তোমার মনে হয় এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পর-ও আমি তোমার কাছে কখনো ফিরবো?হাও ডিজগাস্টিং ফানি।তুমি নিজেকে কি ভাবো?রাজপুত্র।যদিও তাই,তবু-ও আর আমি তোমার কাছে ফিরছি না।আমি একবার বাহিরের চাকচিক্যের মোহে পড়ে মানুষ চিনতে ভুল করেছি।আর দ্বিতীয়বার সেই মোহে পড়ে ভুল করততে চাইনা।কান খুলে শুনে নাও শেখ সিয়াম মাহমুদ আমি তোমার কাছে আর কখনোই ফিরছিনা।সুতরাং আমাকে অযথা ফোন দিয়ে বিরক্ত করবে না।

‘তবে কার মোহে আঁটকে যেতে চাইছো।তোমার সাধুসঙ্গ চরিত্রবান প্রেমিক পুরুষের মোহে?

‘বাজে কথা বলা বন্ধ করো সিয়াম।নিভানের সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক কখনোই ছিলো-না,এটা তুমি খুব ভালো করে জানো।সো যে নোংরা কাঁদায় নিজে ডুবে আছো তা অন্যের দিকে ছোড়াছুড়ি বন্ধ করো?নাহলে কিন্তু ভালো হবে না।

‘তবে চলে আসছো না কেনো?নিভানকে পাওয়ার লোভেইতো পড়ে আছো ওখানে।আবার চরিত্রের ভালো গুনাগুন শোনাও আমাকে তুমি।আর কাকে ভয় দেখাও তুমি? আমাকে,সিয়াম মাহমুদ শেখকে!

‘হ্যা তোমাকেই ভয় দেখাচ্ছি শেখ সিয়াম মাহমুদ।আর ফিরবো মানেটা কি?লজ্জা করছেনা একথা বলতে তোমার!কি চাইছো?তুমি মদ গাঁজা খেয়ে সারাদিন চৌদ্দটা মেয়ের সাথে ফূর্তি করে এসে আমার উপর জুলুম করবে।আর আমি সেটা অবলা নারীর মতো সহ্য করবো।এতোটা অবলা আমাকে মনেহয় তোমার?এতোটা অবলা যে আমি নই এটা তুমিও খুব ভালো করে জানো।আর আমি মরে গেলেও তোমার কাছে কখনোই ফিরছিনা।আই জাস্ট হেইট ইউ।

ওপাশ থেকে সিয়াম প্রতিত্তোর করার আগেই রাগেক্ষোভ ফোন কেটে দিলো দিবা।সঙ্গে সঙ্গে নম্বরটা ব্লকলিস্টে ফেলে দিলো।রোজ নতুন নতুন নম্বর দিয়ে তাকে বিরক্ত করা এই ছেলে স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে।তপ্ত শ্বাস ফেললো দিবা।সে আর ওই খুবলে খাওয়া নারী দেহলোভী লোকটার কাছে ফিরতে চায়না।কখনোই চায় না।নিজের এই পরিনতির জন্য তার নিজের স্বইচ্ছায়ই সিদ্ধান্ত দায়ী,তবে কাকে দোষী করে বুকের ভিতরের জ্বলা আগুন নিভাবে সে।বিয়ের আগে ক্ষুনাক্ষরেও যদি টের পেতো সিয়াম প্লেবয় স্বভাবের ছেলে তবে জীবনেও সে সিয়ামের ভালোবাসা নামক ফাঁদে পা দিতো না।আর না তাকে বিয়ে করতে কখনো রাজী হতো।বড়মামীর বড় ছেলের বউ হওয়ার প্রস্তাব উপেক্ষা করাটা জীবনে তার যে কতোবড় ভুল করেছে সেটা এখন হাড়েহাড়ে বুঝতে পারছে সে।তবে তার এই সিদ্ধান্তে তার মা-ও যে কম দায়ী নয়।চোখ বুঁজে নিজের জীবনের সবচেয়ে মস্ত বড় ভুলটা করার জন্য আফসোস আওড়াতে থাকলো দিবা।

.

গোসল সেরে নামাজের বিছনায় বসে আছে কৌড়ি।বড়সড় ঘরটায় সে একা আর কেউ নেই।তাকে গোসল করতে পাঠিয়ে নীহারিকা আন্টি খাবার আনার কথা বলে চলে গেছে।এখনো ফেরেননি। অথচ নামাজের বিছানার সিজদাহরত জায়গায় নজর রেখে-ও কৌড়ি অনুভব করতে পারছে,গভীর কোনো নজর তাকে দেখে চলেছে। কে? অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো নজরে নজর পড়ার ভয়ে ঘাড় ফিরিয়ে দরজার দিকে তাকাতেও তার কেমন দ্বিধা কাজ করলো।বেশ কিছুক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও, যখন একই ইন্দ্রিয় অনুভব করলো।ঘাড় ঘুরাতে বাধ্য হলো সে।অথচ শূন্য দুয়ারই নজর পড়লো তার।কেউ নেই।আর না সেখানে কোনো প্রানী দাঁড়িয়ে থাকার নিদর্শন পেলো।কিন্তু হঠাৎ কেনো মনে হলো এরকম?হয়তো মনের ভুল।হবে হয়তো?

‘তোমার নামাজ পড়া শেষ হয়ে গেছে তবে উঠে খেয়ে নাও।

আবারও একজন অচেনা নারী অবয়ব।শ্যামবর্ণের মিষ্টি একখান মায়াবী মুখ।অমায়িক তার মুখের মৃদু হাসি। সেই হাসি হাসি মুখে খাবারের ট্রেটা বিছানার পাশে টেবিলে রেখে কৌড়ির পাশে এসে দাঁড়ালেন তিনি।ফের ব্যস্ততা দেখিয়ে বললেন–সেই কখন খেয়েছো তার ঠিক নেই,উঠো মেয়ে।খেয়ে নেবে।

কাল দুপুরে খাওয়া হয়েছে আর খাওয়া হয়নি কৌড়ির।দাদি, চাচিরা জোরাজোরি করেছিলো খাওয়ার জন্য কিন্তু খায়নি সে।সত্যি বলতে ক্ষুধায় কাতর সে।তবে খাওয়ার ইচ্ছেটা জেনো নেই তার।উঠে দাড়ালো কৌড়ি।উঠে দাঁড়াতেই ভদ্রমহিলা নামাজের বিছানাটা নেওয়ার জন্য নিচু হতে গেলেই।কৌড়ি ব্যস্ত ভঙ্গিতে তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো –কি করছেন কি?আমি গুছিয়ে নিতে পারবো।

নিচু হয়ে নামাজের বিছানাটা তুলে ভাজ করতে শুরু করলো কৌড়ি।তবে সেটা নরম স্পর্শে কৌড়ির কাছ থেকে নিয়ে ভদ্রমহিলা কৌড়িকে বিছানায় বসিয়ে সেটা গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললেন।

‘সেটাতো আমি জানি তুমি পারবে।তুমি যে ভারী মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে এটা তোমাকে দেখেই বুঝে ফেলেছি আমি।তবে ভাবীর আদেশ,তোমাকে মায়ের মতো খেয়াল করতে বলেছেন।ভাইজান অসুস্থ বিধায় তারকাছ থেকে নড়ার গতি নেই ভাবিজানের।তাই তোমার খাবারটা নিয়ে আমাকেই আসতে বললেন।আর নির্দেশ দিলেন,মেয়েটার সাথে জেনো মায়ের মতো ব্যবহার করি, খেয়াল রাখি।

অবাক হয়ে ভদ্রমহিলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কৌড়ি।মহিলা যে স্বভাব চরিত্রে বেশ সহজ সরল স্বভাবের এটা বেশ বুঝলো সে।নামাজের বিছানাটা গুছিয়ে রেখে কৌড়িকে চুপচাপ বডে থাকতে দেখে তার পাশে এসে বসলেন মহিলা।ফের বললেন—মন খারাপ করোনা মেয়ে।সবার বাবা মা চিরকাল বেঁচে থাকেনা।এমনকি আমারাও চিরকাল বেঁচে থাকবোনা।এই দেখো আমাকে, এবাড়ির আশ্রিতা কিন্তু আমি।কিন্তু কেউ দেখলে বুঝতেই পারবেনা এবাড়ির আশ্রিতা আমি।সেই কোন ছোটো কালে বাবা মাকে হারিয়েছি,ঠিকঠাক বাবা মায়ের মুখটাও মনে নেই।রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়াতাম।হঠাৎ একদিন ক্ষুধার জ্বালায় এবাড়ির বড়কর্তার পা আঁকড়ে ধরেছিলাম,উনার মনেহয় আমাকে দেখে হয়তো মায়া হয়েছিলো।তাই এবাড়িতে এনে ঠাই দিয়েছিলেন।সেই থেকে আমি এবাড়িতে।কতোগুলো বছর পার হয়ে গেলো এবাড়িতে।বুঝলে মেয়ে,এবাড়ির মানুষগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্বভাবের হলেও সবাই বেশ ভালো।

কৌড়ির আশ্চর্যতা জেনো বাড়লো সামনের মহিলার সংক্ষেপন জীবন কাহিনি শুনে।তার থেকেও দুঃখের জীবন ছিলো এই মহিলার।সঙ্গে সঙ্গে মনেমনে আলহামদুলিল্লাহ যাপন করল কৌড়ি।কৌড়িকে অবাক উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভদ্রমহিলা ফের ব্যস্ততা দেখিয়ে বললেন।-এই দেখ,নিজের জীবন বৃত্তান্ত খুলে বসে তোমার খাওয়ায় দেরি করে দিলাম।খেয়ে নাও মেয়ে, বেলা অনেক গড়িয়েছে। আসরের আজান পড়লো বলে কথা।আর কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে একবার ডাক দিও।

হঠাৎই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ভদ্রমহিলা।ফের বললেন–
জানো মেয়ে আমি কখনো মা হতে পারবো-না।তাই এবাড়ির প্রতিটি বাচ্চাগুলোকে আমি আমার সন্তানসম নজরে দেখি।আমার নাম রানি।তাই তারা সবাই আমাকে রানিসাহেবা বলে ডাকে।যদি-ও রানিসাহেবা নামটা নিভান বাবাই প্রথম ডেকেছিলো।সেই থেকে এই নামের উৎপত্তি,এই বাড়ির বাচ্চাগুলোর রানীসাহেবা আমি।তাই আমিও রানিসাহেবা সবার সবসময়ের আবদারে হাজির।তুমিও তোমার যেকোনো প্রয়োজনে, আবদারে এই রানিসাহেবাকে ডাকতে পারো।

মূহুর্তেই দৃঢ় গম্ভীর কণ্ঠের আওয়াজ এলো।-রানিসাহেবা আমাকে একমগ কফি দিয়ে যান তো।

একগাল হেসে দিলেন ভদ্রমহিলা। সেই হাসি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখলো কৌড়ি।ভদ্রমহিলা ব্যস্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়িয়ে কৌড়িকে উদ্দেশ্য করে ফের বললেন।

‘তাড়াতাড়ি খেয়ে নেবে কিন্তু মেয়ে,মন খারাপ করে খাবার না খেয়ে কিন্তু একদম বসে থাকবে-না।কেমন?আমি তোমার সাথে আরও গল্প করতাম।তবে নিভান বাবা সহজেই কফির অর্ডার করেনা।যদি না তার অতিরিক্ত মাথাব্যথা না করে।তাই সে যখন অর্ডার করে তার কাজটা সবার আগে।এটা আমার মনেহয় বুঝলে মেয়ে। নাও এবার লক্ষ্মীমেয়ের মতো খেয়ে না-ও।

ব্যস্ত ভঙ্গিতে দ্রুত পা চালিয়ে চলে গেলেন ভদ্রমহিলা।
সেদিকে বেশ কিছুসময় তাকিয়ে সামনে রাখা খাবারের দিকে মনোযোগ দিলো কৌড়ি।ভাত মাখিয়ে মুখে তুলতেই মনে হলো,গলায় ভিষণ ব্যথা তার।এই মুখে দেওয়া ভাতের লোকমাটা কিছুতেই তার গলা দিয়ে নামবে না।ভিষণ ব্যথা করছে।মুখ থেকে ভাতটা বের করার আগেই নিজের মুখের সামনে পানি ভরা কাঁচের গ্লাসটা নজরে পড়লো তার।কেউ একজন তার সামনে পানি ধরে দাঁড়িয়ে আছে….

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here