ফুলকৌড়ি (৪০) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
313

#ফুলকৌড়ি
(৪০)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

একে একে কৌড়ির পরিক্ষার দিনগুলো পার হতে লাগলো।সঙ্গী হিসাবে সেই মানুষটাকেই পেয়েছে সে।যে তাকে দায়িত্ব নিয়ে,নিয়েযাবে বলে আগেই আদেশজারী করে রেখেছিলো।সঙ্গী হিসাবে মানুষটা একটুও মন্দ নয়।একদম মনের মতো।যদিও পরবর্তী পরিক্ষার দিনে যখন তিনি, কৌড়িকে পরিক্ষা দিতে নিয়ে যাবেন বলে বললেন।বাড়ির বড়রা বেশ অবাক হয়েছিলেন।বিশেষ করে,বড়মা।অবাক হয়েই মুখ ফসকে বলেছিলেনও-তুই নিয়ে যাবি কৌড়িকে পরিক্ষা দিতে!

মানুষটা অপ্রস্তুত হয়েছিলো কি-না কৌড়ির জানা নেই।যদিও মুখের আন্দাজে কৌড়ির মনে হয়েছিলো,মানুষটা একটুও অপ্রস্তুত নয়।বরং বরাবরের মতো স্বাভাবিক।
একদম নিজের ব্যক্তিত্ব আর শান্ত আচারনের মতোই খুব স্বাভাবিক।আর কি সুন্দর অবলীলায় আর সাবলীল কন্ঠে বড়মাকে জানিয়েছিলেনও–ওকে আমি নিয়ে গেলে সমস্যা কোথায়?

বড়মার বিস্ময় নজর যেনো কৌতুহল হয়ে উঠেছিলো।
যা সেই ভোরবেলার আবাছা আলোতেও লক্ষ্য করেছিল কৌড়ি।আর যেটা লক্ষ্য করে তার অপ্রস্তুততা যেনো দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিলো।তবুও গাঁট হয়ে সে দাঁড়িয়ে ছিলো।বড়-মা যেনো কেমন দ্বিধান্বিত গলায় শুধু বলেছিলেন।

‘সমস্যা নেই,কিন্তু তুই তো অসুস্থ!এখনো ঠিকঠাক সুস্থ হোসনি।এই অবস্থায়?

‘আমি ঠিক আছি মা।ওকে নিয়ে যেতে অসুবিধা হবেনা।আর ইভানও যেতে পারছেনা।হাফিজ ভাইকে দিয়েও একটা মেয়েকে এভাবে এতোদূরে একা ছাড়া ঠিক নয়।আমি অন্তত ভরসা পাচ্ছিনা।

ইভান ভাইয়াকে আগে থেকে কি বলে রেখেছিলো, কৌড়ির বিশেষ জানা নেই।তবে সেদিন সকালে ইভানকে উঠতে দেখিনি কৌড়ি।তাই বিশেষভাবে আর কিছু বলেওনি বড়মা।তবে কেমন যেনো উনার নজর থেকে কৌতূহলই সরছিলোনা।সেটা বুঝে,ভিতরে ভিতরে কৌড়ি যে কি অপ্রস্তুত হয়েছিলো।সাথে লজ্জায়,আড়ষ্টতায় মনে হয়েছিলো,মানুষটার তারসাথে যেতে না করুক।তবে তিনি যেতেও না করেনি আর কৌড়ির মুখ ফুটে কিছু বলা হয়নি,বিধায় যেতে হয়েছিলো তাকে।তারপর থেকে আর কোনো প্রশ্ন তোলেনি কেউ।বড়মাও কেমন ছেলের অস্বাভাবিক আচারনের স্বাভাবিকতা দেখে নিজেও স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলেন।তবে উনার সামনে সেদিন থেকে সহজভাবে চলতে ফিরতে কেমন যেনো অস্বস্তি কাজ করে।তবে কৌড়ি যে নিরুপায়।তা নিয়ে মজা করতেও ছাড়েনি,ইভান আর মান্যতা।সয়ে নিতে হয়েছিলো কৌড়িকে।বলারই বা কি আছে এখন।

তবে মানুষটার আরও একটা কাজে কৌড়ি কৌতুহলী হয়েছে, মনে জেগেছে বিভিন্ন প্রশ্ন।তবে না কৌড়ি প্রশ্ন করতে পেরেছে আর না সেই মানুষটা নিজ থেকে কৌড়ির কৌতুহলী মনের উত্তর দিয়েছে।সেটাতেই যেনো কৌড়ির কৌতুহল আরও বেড়েছে।রোজ পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে,মানুষটার পাশাপাশি নাহিদকেও দেখেছে সে।দু’জনেই খুব স্বাভাবিক।ছেলেটা পরিক্ষার হল থেকে বের হলে শুধু দুইটা কথা জিজ্ঞেস করতো,কেমন আছিস? আর পরীক্ষা কেমন হয়েছে?কৌড়ি না চাইতেও, একটাই উত্তরে কথা সমাপ্ত করতো,আলহামদুলিল্লাহ। তারপর সে চুপচাপ হয়ে যেতো।আর কথা বলার প্রয়োজন মনে করতোনা।যদিও নাহিদের বেলায় কথা বলার ইচ্ছেশক্তিটা কাজ করেনা তার।তবুও রক্তের সম্পর্ক আর মানুষ বলে তো কথা।বিধায় এড়িয়ে যেতেও পারেনা।তবে নাহিদকে দেখেও পাশের মানুষটার নির্লিপ্ত আচারন,তাকে অবাক করে দিয়েছিলো।মনেমনে আশ্চর্যও হয়েছিলো বৈকি।
সেদিন যে ছেলেটার কারণে তাকে এবাড়িতে থাকতেই দিলো-না।কতো রাগ-অভিযোগ দেখলো।এমনকি পরে এবাড়িতে থাকার অপশন যেনো না থাকে,তাই দাদিআপাকেও কৌশলে ওবাড়িতে নিয়ে গেলো।সেই মানুষটা,নাহিদকে তারজন্য অপেক্ষা করতে দেওয়া! তারসাথে কথা বলতে দিতে এলাও করা।সর্বোপরি চলে আসার সময় দু’জনের হ্যান্ডশেক করে মৃদুহেসে বিদায়ের গমন।নাহিদের বার্তা —ভালো থাকবেন ভাই।কৌড়িকে কেমন যেনো বিস্মিত করেছিলো!অবাক করেছিলো!তেমন মনেমনে কৌতুহলীও করে তুলেছিল।তবে নাহিদের সাথে প্রথম দিনের আলাপনের পর,কি কথা হয়েছিলো কৌড়ির তো জানা নেই। সেদিন যেনো মানুষটা আসার পথে অনেক্ক্ষণ নিশ্চুপ ছিলো।অনেকটাই শান্ত, গম্ভীর।কৌড়ির সাথেও কম কথা হয়েছিলো।যদিও তার, প্রয়োজন অপ্রয়োজন সবকিছুর খেয়াল রেখেছিলেন মানুষটা।তবুও কেমন অদ্ভুত শান্ত লেগেছিলো মানুষটাকে।তাই চেয়েও আর নাহিদের বিষয় নিয়ে কৌড়ি প্রশ্ন করতে পারি-নি।তবে সেদিন বাড়িতে এসে দাদিআপাকে প্রশ্ন করতে ভোলেনি কৌড়ি।নিজের কৌতূহল দমাতে না পেরে জিজ্ঞেস করেছিলো।

‘তোমার নাতী হঠাৎ এতো ভালো হয়ে গেলো কি-করে?যেখানে মেজোমাও আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন,ওই ছেলে মানুষ হওয়ার নয়।সেখানে উনার এতো পরিবর্তন কি করে হলো?নাকি লোক দেখানো?

শেষ কথাটায় কেমন ভৎসনা ছিলো।বৃদ্ধা প্রথম না বুঝে প্রশ্ন করলেন।–কার কথা কইছিস?নাহিদের?

‘হুমম।

বৃদ্ধা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ফের বললেন—তোর মতো আমারও প্রথমে ওর ভালোমানুষি দেইখা অবিশ্বাস হইছিলো।আরশাদকে নিয়ে নাহিদ যেদিন এবাড়িতে আইলোনা,আমিতো জানতাম না।তুই কইলি,তাই জানতে পারলাম।সেদিন এখান থেকে যাবার পর কারও সাথে কথা কয়-নায়।ঘরের দরজা বন্ধ কইরা সারারাত নাকি নেশা-ভান করছে।সাথে ঘরের জিনিসপত্র ভাইঙ্গা তছনছ করছে।মেজো বউতো সেদিন আমার ডাইকে কাইন্দে কাইটে তো একশার।কতো কিছু কইলাম,দরজাই তো খুললো-না।অন্যদিনের মতো মুখ চালাইলোনা।পরের দু’দিন খাওয়া নাওয়া বাদ দিয়ে ঘুম।মেজোবউতো কাঁদতে কাঁদতে,শাপশাপান্তরও করলো।মরে যাক ওই ছেলে,বাইচা থাইকা ওর লাভ নাই।মরলে সবার কলিজা জুড়োই।মা তো,মুখে হাজার শাপশাপান্তর করলেও অন্তরে তো উল্টো দোয়া গায়।সেখানে সন্তানের জন্য দরদ, মায়া ভরা।যাই হোক দুদিন বাদে ঘর থেকে বাইর হইলো।এই দুদিন না খাইয়া না দাইয়া, বাচলো কিকরে আল্লাহই জানে।তবে ছেলেটার মুখের দিইকা তাকানোই গেলো না।কি উশৃংখল,নিষ্ঠুর অমানুষের মতো মুখখান দেখা গেছিলো। বংশের বড় নাতী আমার,যদিও খারাপ পথে পা তার।তবুও কেমন জানি কলিজা জ্বইলা উঠলো।সেদিনও কারও সাথে কোনো কথা না কইয়ে,ভরসন্ধ্যায় গোসল সেরে ভাত খাইতে বইছিলো।কি হইছিলো, কি জানি।ভাত সামনে নিয়েই গলা ছেড়ে হুহু করে কাইন্দা দিছিলো।গালে তুলতে গিয়েও গালে তোলেনাই ভাত।পাশে মেজো বউ দাঁড়ানো ছিলো।তাকে জড়াইয়া ধইরাও কাঁদলো।বারবার মাফ চাইলো।কি হইলো ওর তারপর, ভাতের থাল রইখা সেই অবস্থায় তোর আব্বার কবরস্থানের সামনে গিয়াও কাঁদলো।মাফ চাইলো বারবার।আবোলতাবোল এটাওটাও কইলো।সেসময় কেমন তারে যেনো পাগলপাগল বইলা মনে হইলো আমার।সেদিনের পর থাইকা কি হইলো,মোড়ের বাজে পোলাপানদের সাথে আর মিশেনা।রাস্তাঘাটে তেমন বাহিরি হয়-না।নেশাভানও আর করতে দেখালাম না।তোর মেজোচাচা কোনো উল্টো পাল্টা আবদার করলেই,কথা শোনাই।তাকে সঙ্গ দেয়না।কেমন কইরা যেনো সেই বিশৃঙ্খলা জীবনডারে দুইরা ঠেইলা দিলো।অদ্ভুতভাবে পাল্টাইয়া গেলো ছেলেটা।একদিন তোর ঘরে আইসাও তো হাহুতাশ করে কাদলো।যে ছেলে জীবনেও আমার ভালোমন্দ খোঁজখবর লইনাই কখনো।সেই ছেলে আমারে নিয়ম কইরা খোঁজখবর নেওন শুরু করলো।কি স্বভাবের ছেলে ছিলো আর কি হইয়া গেলো!আমিও একটু একটু কইরা তারে বিশ্বাস করতে শুরু করলাম।প্রথমতেো আমার মনে হইলো,ও তোরে পাওয়ার লইগা এমন ভালো মানুষ সাজছে।পরে ওর কথাবার্তায় ব্যবহারে সেটা আর মনে হইলোনা।

একটু থামলেন বৃদ্ধ। ফের বললেন—দেখলিনা সেদিন আসবার সময় কি কইলো।সবতো গুছাইয়া দিলো ও।
আসতেও তো বাধা-নিষেধ করলো না।আরও আমি আসতে চাইলাম না,দেইখা কইলো–ওর পরিক্ষা চলছে দাদিআপা।তুমি ওরকাছে গিয়ে থাকলে ওর মন ভালো থাকবো।পরিক্ষা ভালো হইবো।তাই ওর ভালোর জন্য ভাইবা ওরাসাথে যাও।

‘আমিতো আরও মনেমনে ভাইবা রাখছিলাম।নাহিদ যখন ভালো পথে ফিরছে,তোরে নিয়ে বাড়িতে রাখবো।জাহিদরেও ফোনে সেই কথা কইছিলাম।সে মানা কইরা দিলো। কেনো জানি রাজি হইলো-না।বিপদের সময়ের বন্ধু বইলা কথা, সে না করলে কি জোর করা কথা কহন যায়।নিজের মাইয়াদের মতো হয়তো তোর উপরেও মায়া পইড়া গেছে,এজন্য হয়তো মানা করছে।তয় এবার তোরে নিয়ে যাবার কথা কইমু।বিপদ যখন নাই,পরের বাড়িতে ঝামেলা হয়ে থাইকা লাভ আছে?

সত্যিই কি তবে ছেলেটা ভালো পথে ফিরলো! দাদীআপার বুদ্ধি জ্ঞান নজরভঙ্গি নাহয় দূর্বল হয়ে পড়েছে।যদিও সেটা মন থেকে মানেনা কৌড়ি।কথার কথা।তবে নিভান নামের মানুষটা!যার তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তায় বিশাল এক ব্যবসা চলছে।কতশত কর্মচারী তার আয়ত্তধীন।যার সুক্ষ নজরে চলছে ব্যবসার প্রতিটি কার্যক্রম।সেই মানুষটার নজরভঙ্গি, জ্ঞান,বুদ্ধি বিবেচনা নিশ্চয় ভুল হবেনা।আর ভুল যদি হতো,তবে ওই বুদ্ধিমান ব্যাক্তিটি নিশ্চয় ওই ছেলেটার সাথে স্বাভাবিক চেনাপরিচিতর মতো আচারন করতোনা। দুদিনের সাক্ষাতে অমায়িক বন্ধুত্বপূর্ণ আচারন তাদের মধ্যে নাহলেও,হয়েছে তো কিছু একটা।তা না হলে দুজনের মধ্যে যেভাবে কথা হতে দেখেছে কৌড়ি।সেটা অন্তত নিভানের মতো মানুষের পক্ষে এতো সৌজন্যতা দেখনো সম্ভব নয়।তাও আবার এটা জেনে যে,ওই ছেলেটা কৌড়িকে পছন্দ করে।কৌড়িকে চায়।সেখানে নিভান দেখাবে সেই ছেলেটাকে সৌজন্যেতাবোধ,কৌড়ি নিজেও আশা করে-না।তবে কি সত্যিই বিপথ ছেড়ে সুপথে ফিরেছে ছেলেটা?

সময়টা অপরাহ্ন।বিকাল আর সন্ধ্যার মধ্যবর্তী সময়।গাড়ী চলছে তার নিজ গতিতে।বিশাল বড় পিচঢালা রাস্তার দু’পাশের হাজারও দোকানপাট রেখে শাশা করে চলেছে গাড়ীটা তার নিজ গন্তব্যে।ক্লান্ত চোখে খেয়ালি নজরে সেটা দেখছে কৌড়ি।মূহুর্তেই সেই দোকানপাট পিছে ফেলে সবুজ অরণ্যে ঘেরা বিস্তৃত বিল নজরে পড়লো কৌড়ির।গাঢ় সবুজ ধানের পাতায় মাইল কি মাইল বিলে পরিপূর্ণ।হঠাৎই গাড়ীটা ব্রেক কষতেই হুঁশ ফিরলো এমনভাবে পাশে ফিরলো কৌড়ি।ফ্যাকাসে নীল কালারের একটা জিন্স হাফ টিশার্ট পরা।তাতে শক্তপোক্ত লোমযুক্ত হাতদুটো পরিস্ফুট,আকার্ষনীয়।ফর্মাল ড্রেসের সাথে মানুষটা ঘড়ি পড়লেও কেনো জানি সাধারণ ড্রেসের সাথে পরেনা।তাই হাতটা ফাঁকা। সাধারণ মাথার ঘন-কালো চুলগুলো পরিপাটি।সুন্দর শ্যামলটে সচ্চ একটা মুখ।ক্লান্তি নেই সেই মুখে।একদম সতেজ সচ্চ।হয়তো এরকম জার্নি রোজ করার অভ্যাস আছে মানুষটার।সেজন্য সহজে ক্লান্ত দেখায় না।ফর্মাল ড্রেসের বাহিরে এরকম সাধারণ পোশাকে,বিগত তিনমাসে মানুষটাকে কখনো দেখেছে,কৌড়ির মনে হয়না। বাড়ির সাধারণ ট্রাউজার টিশার্টে দেখেছে।তবে এরকম সাধারণত বাহিরের সাধারণ পোশাকে নয়।
আজ হঠাৎ এরকম পোশাকে দেখেই কেমন যেনো অন্য রকম লাগছে মানুষটাকে।শ্যামবর্ণ লম্বাটে পুরুষটাকে আরও হান্ডসাম আর আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে। যা আজ সকাল থেকে নজর মনকে আকর্ষিত কর চলেছে কৌড়িকে।পরিক্ষা দিয়ে বিথীও এটা নিয়ে ফাজলামো করতে ছাড়লোনা।

‘কি দেখছো?

লজ্জায় আড়ষ্ট হলো কৌড়ি।অথচ নিভানের সহজসরল গলার প্রশ্ন।সেখানে নেই কোনো লজ্জামো দেওয়ার রংচঙ।তবুও নিজের কাজে ভিতরে ভিতরে হাসফাস হয়ে লজ্জায় আঢ়ষ্ট হলো কৌড়ি।তবে মূহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে কথা ঘুরিয়ে বললো।

‘হঠাৎ এখানে গাড়ি থামালেন যে?

এবার দুষ্টমিতে মাতলো নিভান।গা এলিয়ে দিলো সিটে।দুষ্টুদের গলায় জড়ো করে ফিরতে উত্তর দেওয়ার বদলে প্রশ্ন করলো-‘কেনো?আমাকে নিয়ে সংশয় আছে নাকি?

‘থাকলেও।হলাম কলঙ্কিনী।আপনিই তো।কথাটা মনে গাইলেও মুখ ফুটে বলতে পারলোনা কৌড়ি।নিভানের সচ্চ নজরে একপলক নজর রেখে পাশে খোলা জানালায় নজর ফেললো।স্বভাবসুলভ নরম অথচ স্পষ্ট গলায় বললো।–আমি কৌড়ি।আমি নিজেকে শুধু একজন পুরুষের জন্য সব হারামস্পর্শ থেকে এমনভাবে বাঁচিয়ে রেখেছি,আপনি ভাবতেও পারবেন না।সেখানে
সেদিন যদি নাহিদ ভাইয়া আমাকে ছুতো,আজ হয়তো আমি এখানে থাকতাম না।আপনার সাথেও না।এতোদিনে আমার জায়গা থাকতো নিরালায় কবরে।তারপর ঝড়বর্ষার ওইদিন যদি ওই ছেলেগুলোর শিকারী হয়ে যেতাম।নিজেকে একমুহূর্ত বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা আমি করতাম না।সেখানে আপনার প্রতি বিশ্বাস ভরসার স্পৃহা জানতে চাইছেন?আপনার প্রতি বিন্দুমাত্র সংশয় রেখে আমি আপনাকে বিশ্বাস ভরসা করিনি।

স্পষ্ট উত্তর।চোখ বুঁজে কৌড়ির নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাসের স্মৃতিমধুর প্রতিটি শব্দ শুনলো নিভান।ঠোঁটে লেগে থাকলো তার অমায়িক হাসি।সময় ঘনিয়ে যেতেই বললো।–পৌরশুদিন তোমাকে সময় দিতে পারবো-না। অফিসের কাজে ঢাকার বাহিরে যেতে হবে।থাকতে হবে দু-চারদিন।

‘সমস্যা কোথায়?ইভান ভাইয়া তো আছেন।ভাইয়া না আসতে পারলে হাফিজ ভাইয়া আসবেন।

নিজের কথার প্রেক্ষিতে এরকম উত্তর মোটেও আশা করেনি নিভান।তবে কৌড়ি বলে কথা।উত্তর তো এরকমই আসবে।চোখ খুললো ইভান।অভিযোগ হানলো।–তুমি আমার ক্ষেত্রে প্রচুর উদাসীন কৌড়ি।

বিস্তৃত বৃহৎ মাঠের দিকে নজর তখন কৌড়ির।সূর্যটা পশ্চিমকাশে ঢুলে পড়েছে।নিভুনিভু ভাব তার।বিস্তৃত সবুজ মাঠে সেই নিভুনিভু গাঢ় কমলাভাব আলোটার আলো এসে পড়েছে,কি সুন্দর অপরূপ সৌন্দর্য তার।নিভানের অভিযোগে হাসলো কৌড়ি।সেটা দেখতে পেলো না নিভান।ফের অভিযোগ করার আগেই কৌড়ি বললো–নাহিদ ভাইয়ার সাথে আপনার এমন বন্ধুসুলভ সম্পর্ক তৈরী কি করে হলো?

কৌড়ির হিজাবে মুড়ানো মাথাটার পিছনটা ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা নিভান।সেদিকে নিষ্পলক কিছুসময় তাকিয়ে থেকে চোখ বুঁজে নিলো,মূহুর্তেই নাহিদের বলা একটা কথা বারবার কানে বাজতে।লাগলো–আমি আপনার মতো করে ওকে চাইতে পারিনি, তাই ও আপনার হয়ে গেছে।হয়তো হওয়ারই ছিলো।তবে রক্তের সম্পর্কিত আপনজন হিসাবে আমাকে ওর ভালোমন্দ খোজখবর টুকু অন্তত রাখতে বাঁধা দেবেন না ভাইয়া।প্লিজ।

সচ্চ চোখদুটো দিয়ে যখন তারমতো কৌড়ির জন্য পরিক্ষার হলের বাহিরে আপেক্ষা করছিলো ছেলেটা।
নিভানের মনে হয়েছিলো,তারমতো ওই ছেলেটাও তার বোন অথবা প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা করছে।মনেমনে ভালো লেগেছিলো।তখনও নাহিদকে সে চিনতে পারিনি।নিজের দেখা উশৃংখল অভদ্র ছেলেটার এমন ভদ্র সচ্চ রূপ।চেনা কি যায়?তারপর যখন দেখলো,ছেলেটার অপেক্ষা নিভানের প্রিয়জনকে ঘিরে।তখন মনে হলো,ছেলেটাকে ইচ্ছেমতো মেরেধরে শেষ করে দিতে।ক্রোধে জ্বলেছিলো শুধু ভিতরে ভিতরে।
তবে কারণ থাকলেও হুটহাট কারও উপর রেগে যাওয়া বা রাগ দেখানো যায়না।আর পাবলিক-প্লেসে সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো তো আরও অযৌক্তিক, অসঙ্গতিকপূর্ন।বিধায় দাঁতে দাঁত চেপে শুধু নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে গিয়েছিলো।কৌড়ির জন্য অপেক্ষিত নজর শুধু তার হবে।সেখানের ভাগিদার কেউ নয়।হতে পারেওনা।আর সেই হতে পারাটা যেনো গায়ে শুলের মতো বিধছিলো তার।তবে ক্রোধিত হওয়া নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে শুধু নিশ্চুপ ছেলেটার সাথে কৌড়ির আলাপন দেখেছিলো।পরের পরিক্ষার দিন যখন ছেলেটা নিজ ইচ্ছেতে তারসাথে অমায়িক হেসে আলাপন জুড়লো।কেনো জানি নিভান সেই হাসিতে,সেই চাহুনিতে কোনো ছলনা দেখিনি।অতিচালাকি খুঁজে পায়নি।যেটা সে মনেমনে অনুভব করেছিলো।একপর্যায়ে ছেলেটার কথায় তার সাথে আশপাশে ঘুরলো,চা খেলো।তবুও ছেলেটার কোনো কাজ অসঙ্গতপূর্ণ লাগেনি তার।যেটা নিভান তার চতুর বুদ্ধি নজর দ্বারা খুঁজে চলছিলো।অথচ ওই ছেলেটার সাথে কখনো নিজের না দেখা হোক,কখনো তার ছায়া মাড়াতে নাহয়, মনেপ্রাণে এটাই চেয়ে এসেছিলো নিভান।তার পরিবর্তনে হয়ে গেলো,নিদারুণ একটা অদ্ভুত সম্পর্ক।বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না-হলে-ও,কেমন যেনো সুপরিচিত সুপরিচিত একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে।যেটা নিভান চায়নি। একদম চায়নি।অথচ সেদিন ছেলেটা কি নির্দ্বিধায় বললো—আমি আপনার মতো করে ওকে চাইতে পারিনি তাই ও আপনার হয়ে গেছে।হয়তো হওয়ারই ছিলো।তবে রক্তের সম্পর্কিত আপনজন হিসাবে ওর ভালোমন্দ খোঁজখবরটুকু রাখতে অন্তত বাঁধা দেবেন না ভাইয়া।প্লিজ।

ছেলেটার ওই সম্পর্কিত ভাইয়ের আড়ালে আলাদা চাওয়া ছিলো,সেটা নাহিদের কথার ভাঁজে স্পষ্ট টের পেয়েছিল নিভান।কৌড়িকে ভালোবাসে ছেলেটা, কৌড়িকে চায়।এটা যেনো নাহিদের উপস্থিতিকে অসহ্য করে তুলেছিলো তাকে। শরীরে জ্বলন ধরে গিয়েছিলো।
নিজের নিঃশ্বাসকে পর্যন্ত ভারী লেগেছিলো নিভানের।ছেলেটাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করেছিলো।কিন্তু চাইলেই কি সব ইচ্ছে পূর্ন করা যায়।তার যে কৌড়িকে নিয়ে সংসার করার অনেক ইচ্ছে। কতোকতো ইচ্ছে।উফফ!এই আকুতি সে কাকে জানায়!কি করে জানায়!

সেদিন ছেলেটা চলে যাওয়ার সময় আরও একটা কথা বলেছিলো।–ওকে ভালোবাসার জন্য আলাদা করে ওর থাকাটা আমার প্রয়োজন নেই।ওকে প্রয়োজন নেই।

খড়কুটো দিয়ে যেনো সযত্নে কেউ বুকের ভিতরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলো।কথাটা উপলব্ধি করতেই এমনই অনুভব করেছিলো নিভান। কৌড়ির প্রতি ভালোবাসা কি নিগাঢ় সেটাও অনুভব করতে পেরেছিলো।তবে ওর চাইলেও কি আর না চাইলেও কি!কৌড়িকে যে নিভানের চাই।সেখানে বিন্দুমাত্র কম্প্রোমাইজ চলবে না।মনের কুটুরিতে জ্বলন, পচন,ভাঙন যাই ধরুক।কম্প্রোমাইজ চলবে না।

‘সন্ধ্যা নামছে।বাড়িতে যেতে হবে তো?

কৌড়ির প্রসঙ্গ বদলানোর কারণ,নিভানের নিশ্চুপতা।নিশ্চয় কথাগুলো প্রকাশ করতে চাইছেনা।তাই চুপ।কৌড়িও জোর করে উত্তর পেতে চাইলোনা। কিন্তু নিভানের কি হলো।খুব শান্ত গলা একটু একটু করে শব্দ সাজিয়ে বললো–নাহিদকে আমি প্রথম দিন চিনতে পারিনি।তবে কার-ও জন্য ওর সচ্চ অপেক্ষা আমার ভালো লেগেছিলো।তোমার জন্য অপেক্ষা,আমার মন আমাকে কখনো ক্লান্ত হতে দেয়না।বিরক্ত বোধ করায় না।অস্বস্তি ধরায় না। আমার অপেক্ষার নজরভঙ্গিটা আমি যেনো ওর নজরেও দেখতে পেয়েছিলাম।বিষয়টা আমার সেকারণেই ভালো লেগেছিলো।তবে আমি যদি জানতাম আমার মানুষটার জন্য অপেক্ষা করছে ও।বিলিভ মি,ওকে ওখানে আমি কিছুতেই দাঁড়িয়ে থাকতে দিতাম না।কখনোই না।তোমার সাথে ওর ভালোমন্দ আলাপনটা দেখে,ওর নাকমুখ ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিলো। আমার সেদিনও ভালো লাগিনি,আজও ভালো লাগিনি।কখনোই ভালো লাগেনা তোমার সাথে ওর আলাপন।তবে তোমার প্রতি ওর আচারন আমাকে ঔদ্ধত্য, অভদ্র, অসভ্য হতে দেয়না।আমার ভিতর থেকে বাঁধা দেয়।আমি চেয়েও পারিনা,নিজের ঔদ্ধত্যের সীমাটা পার করতে।আমার ভদ্রতার খোলাসাটা ছেড়ে ভিষন অভদ্র হতে।অসভ্যতা করতে।

নিভান এবার সোজা হয়ে বসলো।ফের কিছুটা রাগত স্বরে বললো।–তবে ও যেমন ওর নরম শান্ত আচারন কথা দ্বারা আমাকে ভিতরে ভিতরে শেষ করে দিচ্ছে।
যার জ্বলেনর তপ্ততা আমি বহিঃপ্রকাশ করতে পারছিনা।আমি-ও ওকে ওর মতো করে শাস্তি ফিরিয়ে দেবো,দেখো।ওকে তো আমার অনাগত সন্তানদের মামা বানিয়ে শাস্তিস্বরূপ শোধটা আমি তুলবোই।

বাচ্চামো রাগ।সহজসরল গুছানো কথা।অথচ রাগের মধ্যে লুকিয়ে আছে কতো না প্রকাশ করা কথা।যা তার সামনে প্রকাশ করতে চাইছেনা নিভান।কিন্তু ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাচ্ছে।আর সেটা প্রকাশ পাচ্ছে,তার এলোমেলো কথায়।অবাক চোখে সেটা দেখলো কৌড়ি।সময় নিয়ে বললো।

‘আপনার রেগে যাওয়া উচিত নয়!

‘ওর চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা উপলব্ধি করা।ওর গলার স্বরে তোমার জন্য দরদমাখা বাক্য।এগুলো বুঝেও তুমি কি করে বলছো আমার রাগা উচিত নয়।

‘সেটা ওর সমস্যা।ও কাকে ভালোবাসলো কি না বাসলো সেটাতে আপনার যায় আসা উচিত নয়।উচিত কি?

‘অবশ্যই উচিত নয়।তবে মানুষটা তুমি!তোমাকে ও ভালোবাসার নজরে কেনো দেখবে?তোমাকে শুধু ওর বোনের নজরে দেখা উচিত। ভালোবাসার নজরে শুধু আমার নজর দেখবে তোমাকে।শুধু আমিই তোমাকে ভালোবাসবো।অন্য কেউ নয়।

অবুঝপনা!স্পষ্ট পাগলামো!উফ!এই মানুষটাকে এরকম অবুঝ কখনো ভাবিনি কৌড়ি।অথচ মানুষটা অবুঝপনা করছে!আশ্চর্য হতে গিয়েও নিরস হলো
কৌড়ি।মুখ ঘুরিয়ে ফের বাহিরের পানে দৃষ্টি ফেলে গলায় বললো– এখন না রেগে সেটা তাকে তখন বুঝিয়ে বলতেন যে,আমার দখলদারি মানুষটার দিকে তুমি ওভাবে তাকাতে পারো-না।তাকে ভালোবাসার অধিকার তোমার নেই।তা কেবলই শুধু আমার হক।আমার অধিকার।সে যদি তখন না শুনতো বা না মানতো। তখন না-হয় মেরেধরে একটা ব্যবস্থা নিতেন।এটা আপনি নিভানের কাছে আহামরি কিছু না।সেদিনের ছেলেগুলো তো মনেহয় এখনো হসপিটালে।

‘সেই মেরেধরে হসপিটালে পাঠানোর কাজটা তো আমি তোমার জন্য করতে পারলাম না।

‘কেনো?আমি কি করলাম?থোড়াই না আমি আপনাকে বাঁধা দিয়ে রেখেছিলাম।

‘রক্তের সম্পর্ক তৈরী করে বসে আছো যে।

রাগ আর কোথায় দেখাবে!তাই কথার ছলে মিটিয়ে নিচ্ছে।মিষ্টি হাসলো কৌড়ি।সেও কথা বাড়াতে বললো-এটাতেও আমার দোষ?

‘দোষ নয় বলছো।রক্তের সম্পর্কিত কিছু নাহলে আমার প্রিয় জিনিসের দিকে নজর দেওয়া,ওর চোখ সত্যিই উপড়ে ফেলতে আমার সময় লাগতো না।

বিভৎস কথা।চোখ বুঁজে নিলো কৌড়ি।বাহিরের পানে এখনো মুখ তার।সূর্য ডুবে গিয়েছে।সন্ধ্যার মিষ্টি গুনগুন হাওয়া বইছে।সেই হাওয়া ক্ষনে ক্ষনে ছুঁয়ে যাচ্ছে কৌড়ির ফর্সা মুখ।ফের সেই হিমেল হওয়াটা মুখটা ছুয়ে দিতেই,ক্লান্ত শরীরটা কেমন শিহরণ দিয়ে উঠলো।সময় নিয়ে কোমল মৃদুকন্ঠে বললো–উল্টো পাল্টা ভেবে ভয় পাচ্ছেন কেনো?আর কেনোই বা এতো পাগলামো অবুঝ কথাবার্তা।কৌড়ি তো আপনার।সে বলেছে যখন সে আপনার।তখন সে আপনারই।সেখানে অন্যের,চাহুনির বিবরন,কন্ঠের মধূর বার্তা, ভালোলাগা, ভালোবাসা, আপনার কি যায় আসে!কৌড়ি তো আপনারই।

এতক্ষণে সন্ধ্যার কোমল ঝরঝর দক্ষিণা হাওয়াটা বুঝি শরীর ভেদ করে মনের গহীনে গিয়ে লাগলো।কয়েকদিনের দহনে জ্বলা অশান্ত মন শীতল হলো,শান্ত হলো।সুখ সুখ প্রজাতিগুলো অনুভূতি হয়ে ঘুরলো যেনো মনের আনাচে-কানাচেতে।সেই অনুভূতিতে কালো বোরোকা আর হিজাবে মোড়া মেয়েটাকে দু’হাতে বুকের গহীনে জাপ্টে ধরতে ইচ্ছে করলো।মূহুর্তেই সেই ইচ্ছে দমন করে নিশ্চুপ নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো কৌড়ির পানে।অথচ মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে না।সে বাহিরের পানে তাকিয়ে।তবে এতোসময়ের চলা প্রসঙ্গে আর কথা বলতে ইচ্ছে করলো-না।কৌড়ির স্বীকারোক্তি, সহজ উত্তরটা বুঝি সেটা ক্ষান্ত করে দিল।
সময় পার হলো।ক্ষানিক বাদেই হঠাৎ উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো –চলো-না কৌড়ি, কোনো এক অজানাতে আজ হারিয়ে যাই দুজনে।

কৌড়ির সহজ সরল উত্তর —চলুন।

সেই সন্ধ্যায় গাড়ি কোথা থেকে না কোথায় ঘুরে আসলো কৌড়ির জানা নেই।তবে মানুষটার চেনাজানা ফাঁকা রাস্তা, নিরিবিলি নদীর পাড়,ঝলমলে কফিশপ, কোথাও বুঝি বাদ নেই।কোথা না কোথা থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে এসেছে।হাতে হাত রেখে হাঁটিনি তারা,বেশি কথা হয়নি,চোখে চোখ রেখে কথা বলিনি অথচ অদ্ভুত এক অনুভূতি।

মাগরিবের নামাজ শেষে চায়ের অপেক্ষা করছিলেন জাহিদ সাহেব।সময়মতো চায়ের ট্রে নিয়ে হাজির হলো নীহারিকা বেগম।সাথে কৌড়ির দাদিআপাও।ভদ্রমহিলাকে এই সময়ে নিজের রুমে দেখে কিছুটা বিচলিত হলেন।মনেমনে চিন্তিত শঙ্কিত হলেন,তিনি না আবার চলে যাওয়ার আবদার জুড়তে এসেছেন।
ভদ্রমহিলা এসে থেকেই বাড়িতে চলে যাবেন বলে বেশ কয়েকবার আবদার জুড়েছেন।কিন্তু ভদ্রমহিলাকে তো এখন যেতে দেওয়া যাবে-না।তবে পুনরায় যদি বাড়িতে যাওয়ার আবদার জোড়েন,তবে তো মুশকিল।সেই ভাবনাতেই তিনি মনেমনে বিচলিত হলেন।আর উনার আশংঙ্কা বাড়িয়ে দিয়ে ভদ্রমহিলা উনার পাশে এসে বসলেন।এবং সহসা বললেন।

‘বাড়িতে যেতে চাইলাম,এতোদিনে যাইতা তো দিলা না।তবে ভালোই হইলো।কৌড়ির আর দুইখান পরিক্ষা আছে।শেষ পরিক্ষার দিনে কিন্তু আমি ওরে একেবারে লইয়া বাড়িতে ফিরমু।আর না করতে পারবা-না কিন্তু।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here