#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
চতুর্বিংশ পর্ব
দুইদিন পর,
সিআইডি অফিসে এসেছে সারাহ্ ও আহনাফ। সারাহ্-র সকল কথা আবারো মনোযোগ দিয়ে শুনছে অফিসার গালিব ও নাইমা।
তারপর গালিব বলে,
“ম্যাডাম, আপনার কথার ভিত্তিতে আমরা সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। ওই গাড়িটার নাম্বারও সংগ্রহ করেছি। (একটু থেমে) দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, এরকম নাম্বারের কোনো গাড়ি এ পর্যন্ত দেশে নেই। রেকর্ডে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ সবটাই নকল। ড্রাইভারের মুখে একটা ফেস মাস্ক ছিল, কোনো একটা কার্টুনের।”
সারাহ্ আহনাফের দিকে তাকায়। আহনাফ বুঝতে পারে বেশ বড়সড় একটা জা°লে ফেঁ°সে°ছে ওরা। যেখানে শুধু সামিহা না সারাহ্-র জীবনও সংশয়ে আছে।
আহনাফ একটা কাশি দিয়ে বলে,
“এখন এই সল্যুশন কি?”
“আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করবো। ম্যাডামের পুরো পরিবারের ডিটেইলস আমার লাগবে।”
সারাহ্ হালকা মাথা নেড়ে বলল,
“ঠিক আছে, আমি দিয়ে যাবো।”
সকল ফরমালিটি শেষ করে দুজনে বেরিয়ে আসে। কাল আবারো ওদেরকে আসতে হবে এখানে।
আহনাফ ওর অবস্থাটা বুঝেছে। সারাহ্-র একহাত ধরে বলল,
“এতো ভাবছো কেন ঐশী? আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই তো করে।”
সারাহ্ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
“আমি জানি, হয়তো এতেও আল্লাহ্ কোনো একটা ভালো লিখে রেখেছেন। তাওয়াক্কুল করতে হবে, ধৈর্য রাখতে হবে। তবে মনটা যে অশান্ত আমার।”
আহনাফ রিকশা ডাকে। দুজনে উঠে বসলে আহনাফ দুষ্টুমি করে বলে,
“মনকে শান্ত করার একটা উপায় বলি? তুমি এখন আমাদের বাবুদের কথা চিন্তা করো। সাদাবের আব্বু, সাইদার আব্বু বলে আমাকে ডেকে ডেকে প্র্যাকটিস করো।”
সারাহ্ রেগে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছি আর আপনি মজা করছেন?”
“আরে না, সিরিয়াস।”
সারাহ্ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। ওর মন ভালো করার বৃথা চেষ্টা করতে থাকে আহনাফ। একসময় সারাহ্ ওর কাঁধে মাথা রাখে। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু। আহনাফ মুছে দেয়। এ মন সহজে ভালো হবে না।
পরিবারের বড় মেয়েগুলো খুব দায়িত্বশীল হয়। এরা একদিনে হয় পরিবারের জন্য ঢা°লস্বরূপ, অন্যদিকে ওরাই পরিবারের জন্য বেশি স্যাক্রিফাইস করে।
______________________________________
ধীরে ধীরে চোখ খুলে ইমতিয়াজ। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝলো সে হাসপাতালে আছে। ডানহাতে স্যালাইন লাগানো, হাত নাড়াতে পারলো না সে। পায়ের নাড়াতে চেষ্টা করে বুঝলো সেখানে ব্যান্ডেজ আছে।
“নড়াচড়া করবেন না। আপনি এখনো অসুস্থ।”
পাশ থেকে কথাটা বলল এক সুকন্ঠী যুবতী। ইমতিয়াজ সেদিকে তাকিয়ে মুখের অক্সিজেন মাস্কটা খুলে বলল,
“কে আপনি?”
মেয়েটি আলতো হেসে বলে,
“আপনার বউ বললে তো আর বিশ্বাস করবেন না। তাই আমি নীলুফার, একজন নার্স।”
নীলুফার ওকে অক্সিজেন মাস্ক পড়াতে চাইলে ইমতিয়াজ বাধা দিয়ে বলে,
“আমাকে এখানে কে এনেছে?”
নীলুফার হাসলো। বলল,
“একজন ডাক্তার।”
“আর কাউকে এনেছে? কোনো মেয়ে?”
নীলুফার ওর অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দিয়ে বলল,
“আপনার হাত ভেঙ্গেছে। নিজে ম°র°তে গিয়েছিলেন অথচ বউকে ভুলেননি? আজব প্রেম। (একটু থেমে) আপনার স্ত্রীকে খুঁজছেন তো, মিউকো? উনি আইসিইউতে।”
“আমি যাবো।”
ইমতিয়াজ উঠতে চায়। ডানহাতে ভর দিতেই “উহ” বলে আবারো শুয়ে পড়ে। অসহ্য ব্য°থা এখানে।
সোজা দাঁড়ানো থেকে কবরে পড়ে যাওয়া সহজ কথা নয়। ডানহাত দিয়েই সে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে চেয়েছিল। এতো বড় শরীরের ভার কি একহাত নিতে পারে?
নীলুফার সাহায্য নিয়ে উঠে বসে ইমতিয়াজ। ডানহাতটা গলার সাথে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। হাঁটার সময় পায়ে জো°র দিতেও পারছে না।
কেবিন থেকে বেরিয়ে আরেকদফা অবাক হয় ইমতিয়াজ। শান্ত একটা পরিবেশ এখানে। পুরোটা জায়গায় সাদা রং চকচক করছে। বোঝা যাচ্ছে এখানের রং মাত্র কিছুদিন আগেই করা হয়েছে।
কোনো মানুষ না দেখে ইমতিয়াজ প্রশ্ন করে,
“হাসপাতাল এতো ফাঁকা কেন?”
নীলুফার কেবিনের দরজা লাগিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“এই বিল্ডিং এখনো ওপেন হয়নি।”
“তবে আমরা এখানে?”
নীলুফার আবারো হাসলো। তারপর সোজা হাঁটা শুরু করে। ইমতিয়াজ খুব ধীরেসুস্থে হাঁটছে৷ মেয়েটার আচরণ অদ্ভুত লাগলো তার। হাসিহাসি চেহারার পিছনে কিছু তো একটা লুকাচ্ছে। হাসপাতালের ফাঁকা বিল্ডিংয়ে ওর চিকিৎসা, সেদিন ওই মহিলার ওকে জীবন্ত কবর দিতে চাওয়া। সব মিলিয়ে ইমতিয়াজ ভাবনা শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
আইসিইউর সামনে গিয়ে কাচের ওপারে মৃত্তিকাকে দেখে। শান্ত হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। চোখ বন্ধ, হাতে স্যালাইন। পাশের মেশিনটা জানান দিচ্ছে সে জীবিত।
“ভিতরে যেতে পারেন।”
নীলুফার কথায় ইমতিয়াজ মাথা নেড়ে ভিতরে যায়। মৃত্তিকার পুরো মাথায় ব্যা°ন্ডে°জ, বোঝা যাচ্ছে হয়তো চুল সব ফেলে দেয়া হয়েছে। কয়েকটা ইলেকট্রোড লাগানো আছে মাথায়, হাতে ও পায়ে।
নীলুফার এসে স্যালাইনের প্যাকেট দেখে। ইমতিয়াজ নিচুস্বরে বলে,
“কি হয়েছে ওর?”
“মাথার স্পাইনাল কর্ড ইন°জুরি, সারভাইভাল নার্ভ সিস্টেম ক্ষ°তি°গ্র°স্ত হয়েছে।”
ইমতিয়াজ অপলক তাকিয়ে থাকে। ঠোঁট দুটো নিজের অজান্তেই ফাঁক হয়। মৃত্তিকার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ও সুস্থ হবে তো?”
নীলুফার মাথা নাড়ে। বলে,
“সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি, হাই সারভাইভাল নার্ভ ইন°জুরিতে সুস্থ হওয়া কঠিন। হলেও বেশ সময় সাপেক্ষ।”
ইমতিয়াজ আর কিছু বলে না, শুধু মৃত্তিকার দিকে তাকিয়ে থাকে। নীলুফার বলল,
“চলুন, আপনার কেবিনে যাই?”
ইমতিয়াজ মাথা উঠিয়ে বলে,
“এই বিল্ডিং পুরো খালি তো?”
“হুম।”
“আমি যেকোনো রুমে থাকতে পারবো?”
নীলুফার হেসে বলে,
“ম°র্গেও থাকতে পারবেন।”
“তবে এখানে থাকতে চাই আমি।”
হাতের ইশারায় মৃত্তিকার পাশের বেডটা দেখায় ইমতিয়াজ।
নীলুফার মুখ টিপে হাসে। মাথা নেড়ে বলে,
“লাকি গার্ল।”
______________________________________
মতিঝিলে নিজের বাসায় এসেছে সারাহ্। কাল বাবার সাথে কথা হয়েছে, আজ মায়ের সাথে অবশ্যই কথা বলতে হবে। ওদের পারিবারিক শত্রু কে হতে পারে।
ফ্রেশ না হয়েই মায়ের রুমে যায় সে।
“আম্মু, আসবো?”
“আসো।”
নার্গিস পারভিন বিছানা ঠিক করছেন। সারাহ্ ভিতরে গিয়ে সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করে,
“কাল বাবার সাথে কথা বলার সময় জবাব দাওনি কেন?”
নার্গিস পারভিন কাজ করতে করতে স্বাভাবিকভাবে বললেন,
“এমনিই।”
সারাহ্ কপাল কুঁচকে বলল,
“কিছু লুকাচ্ছো তুমি আম্মু?”
এবারেও জবাব এলো না। উনার হাতে বিছানা ঝাড়ুটা টে°নে এনে সারাহ্ ফেলে দেয়। তারপর উনাকে বসিয়ে বলে,
“এসব পরেও করা যাবে। আগে বলো কি লুকাচ্ছো?”
উনি মাথা নেড়ে বলেন,
“কিছুই না।”
সারাহ্ জে°দ ছাড়লো না। রাগি কন্ঠে বলে উঠে,
“তোমার মেয়েরা মরে গেলে তারপর বলবে?”
সারাহ্-র রাগে নার্গিস পারভিনও রেগে যান। চেঁচিয়ে বলেন,
“হ্যাঁ, ম°রে যা। সব মায়েরা মেয়েদের তো বাঁচিয়ে রাখে না, কেউ কেউ মে°রেও ফেলে। যা, ম°রেই যা।”
সারাহ্ উঠে দাঁড়ায়। মায়ের এমন তী°ক্ষ্ণ আচরণ তার অপরিচিত। সারাহ্ রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নার্গিস পারভিন একইভাবে একইস্থানে চুপচাপ বসে থাকেন।
সারাহ্ রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিতে নিতে বলে,
“বাসায় চলেন।”
আহনাফ ফোনের কথা বলছে। সারাহ্-কে হাতের ইশারায় শান্ত থাকতে দেখিয়ে আবারো কথায় মনোযোগ দেয়। সারাহ্ বুঝলো কলেজের কারো সাথে কথা বলছে আহনাফ।
সারাহ্ গিয়ে আহনাফকে জড়িয়ে ধরে। ওর বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে। আহনাফ চমকে উঠে তাড়াহুড়ো করে বলল,
“স্যার, একটু পরে কল দিচ্ছি।”
ফোন ছুড়ে বিছানায় ফেলে আহনাফ বলে,
“ঐশী, কি হয়েছে?”
সারাহ্ কিছু বলে না। মাথাও তুলে না। আহনাফ ওর মুখটা জোর করে উঠিয়ে চোখ মুছে দেয়। সারাহ্ বলে,
“বাসায় যাবো আমি।”
“কাল বিকালে যাবো, ঐশী। কাঁদে না প্লিজ।”
______________________________________
বিকাল চারটায় তানজিম বাসায় ফিরেই চেঁচামেচি শুরু করে,
“বিয়ের কথা হয়েছে, বিয়ে হয়ে যায় নাই যে ওরা যেখানে ইচ্ছা চলে যাবে। আর তোমরা এমনভাবে বসে আছো যেন ওরা হানিমুনে গেছে।”
শাফিন সাহেব চিন্তিত মুখে বসে রইলেন। মৃত্তিকা আর ইমতিয়াজের চিন্তায় বাসার সবাই প্রায় অসুস্থ। দুইদিন আগে অর্থাৎ যেদিন ওদের উপর আ°ক্র°ম°ণ হয়েছিল বিকালে ইমতিয়াজের নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে যে, মৃত্তিকাকে নিয়ে সে ঢাকার বাইরে এসেছে। যদিও তারপর থেকে ইমতিয়াজের ফোন অফ।
বাসার সবাই তা বিশ্বাস করে নেয়, কিন্তু তানজিম তা মানতে পারছে না। সেদিন থেকে প্রতিদিন তানজিম যতক্ষণ বাসায় থাকবে চেঁচামেচি লেগেই থাকবে।
শাফিন সাহেব ধমক দিয়ে বলেন,
“চুপ করো তানজিম। এমন উ°গ্র বিহেভ কেন তোমার?”
মমতাজ বেগম আজকাল ভয় পায় ছেলেকে নিয়ে। ছেলের ব্যবহার দিনদিন খারাপ হচ্ছে। লুৎফর রহমানের শাসন নেহাৎ কম নয়। তবুও যেন ছেলে তা মানে না।
“যা খুশি করো।”
লুৎফর রহমান তানজিমের গালে একটা চ°ড় বসায়। ধ°ম°ক দিয়ে বলে,
“নিজের ঘরে যাও। বড়দের মুখে মুখে তর্ক করবে না।”
তানজিম রুমে চলে যায়। লুৎফর রহমান বেরিয়ে যান নিজের দোকানের উদ্দেশ্যে। উনি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না ইমতিয়াজ মৃত্তিকাকে নিয়ে ঢাকার বাইরে গেছে। কোথাও একটা সন্দেহ উনাকে কু°ড়ে°কু°ড়ে খাচ্ছে।
______________________________________
রাত পেরিয়ে যাচ্ছে নিজের আপন ছন্দে। এক সময় পেরিয়ে যায়৷ ইমতিয়াজ ফজরের নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসে আছে।
মনে তার অনেক চিন্তা। কে বা কারা ওকে মা°র°তে চাইলো, আবার মৃত্তিকাকে মা°র°তে চাইলো, ওই মহিলা কে যে ওর উপর নজর রেখেছে, কেই না ওদেরকে বাঁচালো।
দরজার শব্দ শুনে ইমতিয়াজ সেদিকে তাকায়। নীলুফার সাথে আরেকজন নারী এসেছে, পোশাক-আশাক দেখে একজন ডাক্তার বলে চিহ্নিত করে ইমতিয়াজ।
“কেমন আছো, বাবা? আমি ডা. পল্লবী ইসলাম।”
খুব মিষ্টি করে ইমতিয়াজকে জিজ্ঞাসা করেন পল্লবী।
ইমতিয়াজ ঘাড় দুলিয়ে বলল,
“ঠিক আছি।”
ইমতিয়াজ উঠে বিছানায় বসে। পল্লবী মৃত্তিকার রিপোর্টগুলো একে একে দেখে বলে,
“ওর অবস্থা খুবই খারাপ।”
ইমতিয়াজ সেদিকে তাকিয়ে থাকে। ডাক্তারি রিপোর্ট সে বুঝে না, বোঝার কথাও না। এতো বড় বড় বিষয়ের রিপোর্ট বড় মানুষরাই বুঝবে।
“মৃত্তিকার কি হয়েছে?”
পল্লবী ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ঘাড়ের দিকটায় আর মাথার পেছনে আ°ঘা°ত পেয়েছিল। অবস্থা ভালো হবার কোনো লক্ষণ নেই।”
ইমতিয়াজ তাকিয়ে থাকে মৃত্তিকার চেহারার দিকে। মেয়েটার চেহারায় একটা পাকিস্তানি ভাব আছে। পাকিস্তানের মেয়েদের মতো লম্বা মুখ, চিকন গাল, হালকা-পাতলা ঠোঁট, মোটা ভ্রূ আর উঁচু নাক।
পল্লবী ইমতিয়াজের দৃষ্টি লক্ষ করে। বলল,
“দেখো, মানুষ তার নিজের ভাগ্য নিজে লিখে না। সৃষ্টিকর্তা যা দিয়ে দিয়েছে তা খ°ন্ডাবে কার সাধ্য।”
ইমতিয়াজ জিজ্ঞাসা করে,
“আমাদেরকে কি আপনি বাঁচিয়েছেন?”
“বাঁচাতে আর পারলাম কই? মৃত্তিকা তো বাঁচেনি, ও হয়তো কো°মায় থাকবে। সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।”
ইমতিয়াজের মনটা ছটফটিয়ে উঠে। পল্লবী এসে ওর পাশে বসে বলল,
“আমি না, আমার ভাই তোমাদের বাঁচিয়েছে। আমি তো তোমাদের অবস্থার কথা ভেবে এখানে শিফট করেছি।”
পল্লবী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“যেভাবে তোমাকে জি°ন্দা কবরস্থ করছিলো, এমন শ°ত্রু আমার শ°ত্রুরও না হোক।”
ইমতিয়াজ কিছুই বলে না, ওই শত্রুকে সে চেনে না। পল্লবী ওর হাতটা দেখে বলে,
“এটা এভাবে ভিজিয়ো না। নামাজ ছাড়া বোধহয় থাকো না। নামাজের সময় তায়াম্মুম করে নিও, আমি মাটি পাঠিয়ে দিবো।”
ইমতিয়াজের সন্দেহ নীলুফার আর পল্লবীর উপরেও হতে থাকে। এতো ভালো আচরণ কেন করছে, উদ্দেশ্য কি আসলেও ভালো নাকি নজর রাখা?
“আমাকে তোমার মায়ের বয়সী বলতে পারবে না। কিন্তু খালা কিংবা ফুপ্পির জায়গা অবশ্যই দিতে পারো। আন্টি ডাকতে পারো।”
পল্লবী চলে যাওয়ার সময় আবারো ফিরে দাঁড়িয়ে বলে,
“নাম ইমতিয়াজ, তাইতো?”
ইমতিয়াজ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে,
“আমাদেরকে কি আপনি পার্সোনালি চিনেন?”
“না চিনলে কি কাউকে বাঁচানো যায় না?”
উত্তরের অপেক্ষা না করে সে চলে যায়।
ইমতিয়াজ অনুভূতিহীন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। জীবনে তো কম মানুষের মৃ°ত্যু সে দেখেনি, চলে যাওয়া মানুষের মধ্যে আপনজন তো অনেক। তবে এভাবে জীবন্ত মৃত্তিকার জন্য কেন এতো কষ্ট হচ্ছে।
এই কষ্টের নাম দেয়ার চেষ্টা করতে থাকে ইমতিয়াজ। নিজের য°ন্ত্র°ণাগুলো সে ভুলে গেছে। মনে আছে একটা কথা, ও হয়তো কো°মায় থাকবে। মৃত্তিকা আর ওই বড়বড় চোখ মেলে তাকাবে না। ওর লাজুক ভাবের খেলা ইমতিয়াজ আগেই খেয়াল করেছিল, যা এখন একটা বিছানায় সীমাবদ্ধ। সিল্কি লালচে সোনালী চুলগুলো আর গোছাতে ব্যস্ত হবে না সে।
অবশেষে এই খারাপ লাগার নাম দিয়ে দেয় ইমতিয়াজ। হয়তো এটা ভালোবাসা।
চলবে……