অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী ত্রিংশ পর্ব (৩০ পর্ব)

0
203

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

ত্রিংশ পর্ব (৩০ পর্ব)

ফজরের আযান দিচ্ছে। আহনাফ গো°র°স্থানের পাশের মসজিদে নামাজের জন্য যায়। ওযু করে নামাজ পড়ে আবারো চলে আসে পূর্বের স্থানে।

পুব আকাশে একটু একটু করে উঠে আসছে সূর্য। আকাশ লাল হয়ে উঠেছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো সাদা হয়ে যাবে। আলোতে ভরে যাবে সবকিছু, মানুষের আনাগোনা বাড়বে৷

এদিকে সারাহ্-র অবস্থা যাচ্ছেতাই। জায়নামাজে বসে অসম্ভব কান্না করে যাচ্ছে শেষরাত থেকে। কি যেন এক অজানা ভয় তার। তার আহনাফ হারিয়ে যাবে, চলে যাবে তার জীবন থেকে। আ°শংকা আর আ°ত°ঙ্কে কান্না করছে সে। চোখ পানি শুকিয়ে যাক, তবুও আল্লাহ্ তার দোয়া কবুল করুক।

ফজরের পর আবারো আহনাফের নাম্বারে ডায়াল করে। ফোনের কাঁ°পুনি অনুভব করে আহনাফ। ফোন বের করে সারাহ্-র নাম্বার দেখে কে°টে দেয়। আবারো কল আসে, আহনাফ কে°টে দেয়। কয়েকবার কে°টে দিয়ে পরে বি°র°ক্ত হয়ে ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে।

গো°র°স্থানে প্রবেশ করা শরীফের পায়ের কাছে গিয়ে পড়ে ফোনটা। আহনাফ উনার দিকে তাকিয়ে আবারো অন্যদিকে ঘুরে যায়। শরীফ ফোনের উপর দিয়েই হেঁটে আসে। রিপা বেগমের কবর জিয়ারাত করে।

আহনাফকে ঠায় বসে থাকতে দেখে বলল,
“এখানে বসে আছো? তাও এতো ভোরে?”

আহনাফ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আপনার কোনো সমস্যা?”

শরীফ মাথা দুলিয়ে বলল,
“না, আমার কি সমস্যা হবে? এমনিতেই জিজ্ঞাসা করলাম।”

তাহসিনার কবরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শরীফ বলে,
“ওই তো রিপার সাথে মা°রা যাওয়া ব্রাইড। তাহসিনা তাবাসসুম।”

আহনাফ মাথা নেড়ে শুধুই সম্মতি জানায়৷ শরীফ বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
“এখানে এভাবে থাকলে শরীর খারাপ করবে, বাসায় চলে যাও।”

শরীফ তো বেরিয়ে গেল, কিন্তু আহনাফ গেল না। সে দাঁড়িয়ে আছে। তাহসিনাকে কেউ কেন মা°র°বে, তাও তারই পরিবারের কেউ। ঘন মেঘ আহনাফের মনকে ঘিরে ফেলেছে, বারেবারে ব°জ্র°পা°ত হচ্ছে কান ফাটানো তীব্র শব্দে। আহনাফ এখন শুধুই বৃষ্টির অপেক্ষা করছে।
______________________________________

সকাল আটটা, মৃত্তিকা বেশ আরামেই ঘুমাচ্ছে। সারারাত সজাগ থেকে ফজরের নামাজ পড়ে একেবারে ঘুমিয়েছে সে। রুমে এসি চলছে, হালকা বেগুনি রঙের কম্ফোর্টার গায়ে জড়িয়ে রেখেছে। যদিও সে এটা নিজে থেকে দেয়নি, কিছুক্ষণ আগে ইমতিয়াজ দিয়ে দিয়েছে।

ইমতিয়াজ এখন ব্যস্ত সকালের নাস্তা তৈরিতে। রুটি, ডিম আর চা, এরচেয়ে বেশি ঝা°মেলা সে সকালে করতে চায় না। নাস্তা টেবিলে রেখে রুমে উঁকি দিয়ে মৃত্তিকাকে ঘুমাতে দেখে ইমতিয়াজ আর ওকে ডাকাডাকি করে না। নিরবে ওয়াশরুমে চলে যায়।

খানিকক্ষণ পরে মৃত্তিকা আপনা থেকেই জেগে উঠে। চোখ খুলে গায়ে কম্ফোর্টার দেখে। ওয়াশরুমে পানির শব্দে বুঝতে পারে ইমতিয়াজ ওখানে। উঠে ঝিম মে°রে বসে থাকে।

ইমতিয়াজ গোসল সেরে বেরিয়ে ওকে বসে থাকতে দেখে বলল,
“ঘুম হয়েছে?”

মৃত্তিকা মৃদুস্বরে বলল,
“হুম।”
“ফ্রেশ হয়ে নেন, নাস্তা ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

মৃত্তিকা হেলেদুলে ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখে ইমতিয়াজ বিছানা গুছিয়ে ফেলেছে। ডাইনিং এ উঁকি দিয়ে মৃত্তিকা বলে,
“আপনি একা একা সব করেন?”

ইমতিয়াজ আলতো হেসে বলল,
“তো কে আর করবে?”

মৃত্তিকা চেয়ার টেনে বসে বলে,
“আমি করতে পারতাম, আপনার তো হাত কা°টা।”

ইমতিয়াজ কিছু না বলে ওর প্লেটে রুটি-ডিম তুলে দিয়ে নিজেও খেতে বসে। মৃত্তিকা ওর জবাবের আশায় চেয়ে থেকে ব্যর্থ হয়ে খাওয়া শুরু করে।

“আপনি কি আজ অফিস যাবেন?”

ইমতিয়াজের সোজাসাপ্টা প্রশ্নে মৃত্তিকা জবাব দেয়,
“না, আজকে ছুটি। কাল যেতে হবে।”
“ওহ।”

মৃত্তিকা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনিও যাবেন আমার সাথে।”
“আমার তো ডিউটি আছে।”
“আপনি কাল থেকে অফিসে যাবেন আর আমি বাসায় থাকবো।”

ইমতিয়াজ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
“ওয়েট, আপনার অফিসে আমি কি করবো? বিজনেসের কিছুই আমি বুঝি না।”

মৃত্তিকা খেতে খেতে বলল,
“ও কি আর একদিনে বুঝে নাকি? ধীরে ধীরে বুঝে যাবেন। (একটু থেমে) আর আমার অফিস মানে কি? আমারটা কি আপনার না?”
“রি°স্ক নিচ্ছেন ম্যাডাম।”
“আমি জানি, আমি কি করছি।”

ইমতিয়াজ হেসে আবারো খেতে শুরু করে৷ খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে মৃত্তিকা ইমতিয়াজকে দেখে। কাল রাতে কি ভ°য়ং°কর রূপই না সে নিয়েছিল, অথচ এখন কতটা হাসিখুশি।

“কোম্পানির বাকি দুটি শেয়ার কে কিনেছে জানেন?”

ইমতিয়াজের কথায় মৃত্তিকা চমকে উঠে। এতোক্ষণ সে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। ঠোঁট উলটে বলে,
“শিউর তো জানি না, তবে একজন ডাক্তার।”

ইমতিয়াজ একটু হেসে বলল,
“আপনার বাবা।”

ইমতিয়াজের টিশার্ট ধরে টে°নে মৃত্তিকা ওকে কাছে এনে বলে,
“ওই লোকের সাথে আপনার এতো ঘনিষ্ঠতা কেন?”

ইমতিয়াজ ওর হাতের দিকে তাকালে মৃত্তিকা টিশার্ট ছেড়ে দেয়। বি°র°ক্তি প্রকাশ করে মৃত্তিকা বলল,
“ওই লোকের হাত থেকে আমি নিস্তার চেয়েও পাচ্ছি না।”
“নিস্তার পাননি বলেই বেঁচে আছেন। নাহলে মৃত্তিকা নামটা নিশ্চিহ্ন হতো।”

মৃত্তিকা জানে ওর বাবা ওকে বাঁচিয়েছে, ইমতিয়াজই চিঠি মাধ্যমে বলেছিল। তবুও সে বাবাকে বিশ্বাস করে না, ভরসা করে না বরং ঘৃ°ণার চোখে দেখে।

খাওয়া শেষে মৃত্তিকা প্লেট, কাপ ধুয়ে রেখে ডাইনিং এ এসে দেখে ইমতিয়াজ বিড়ালকে হারনেস পড়াচ্ছে। বিড়ালটি বারবার নড়াচড়া করছে আর ইমতিয়াজ তাকে বকাবকি করে হারনেস পড়াচ্ছে। মৃত্তিকা এসব দেখে হেসে রুমে আসে।

ইমতিয়াজ বলে উঠে,
“মিউকো, চল ঘুরতে যাই।”

মৃত্তিকা খুশিমনে এসে বলে,
“হ্যাঁ, চলুন।”

ইমতিয়াজ ফিরে তাকিয়ে জোরে হেসে দেয়। কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলে,
“আমার বিড়ালের নাম মিউকো আর আপনি মৃত্তিকা।”

মৃত্তিকা লজ্জা পেয়ে ভিতরে চলে আসে। ইমতিয়াজ তার বিড়ালকে ডাকছিল আর মৃত্তিকা ভেবেছে ওকে বলছে। ইমতিয়াজ বের হওয়ার আগে মৃত্তিকা বলে,
“ওই মিউকোর সাথে এই মিউকোকেও একটু বাইরে নিয়ে যাবেন?”

ইমতিয়াজ হেসে বলল,
“চলেন।”
______________________________________

“আহনাফ এখনো বাসায় আসেনি?”

আব্বাস সাহেবের কথায় সারাহ্ মাথানেড়ে বলল,
“না, বাবা।”
“কল দিয়েছিল? কোন কাজে আছে?”
“চলে আসবেন হয়তো।”

আব্বাস সাহেব নিজের রুমে চলে যায়। সারাহ্ রান্নাঘরে যায়। কাজের খালা, আলেয়া খাতুন, এখানে কাজ করছে। আজ মেহমান আসবে, আহনাফের ছোটফুপা আর ফুফু। কাজ তো অনেক, গোছাতে হবে।

সারারাত নির্ঘুম সারাহ্ কাজে মন দিতে পারছে না। আহনাফ যে একটাবারের জন্যও কল দিলো না। ওর ছ°টফ°টানি কে বুঝে?

একের পর এক সবজি কা°টায় ব্যস্ত হয় সে। কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বাজলে আলেয়া খাতুন যাওয়ার আগেই সারাহ্ ছুটে যায়। দরজা খুলে আহনাফকে দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে সে। কিন্তু আহনাফের অবস্থা যে এলোমেলো, যেন বিশাল ঝ°ড় গেছে তার উপর দিয়ে।

“কি হয়েছে আপনার?”
চিন্তিত সারাহ্-র প্রশ্নের জবাব আহনাফ দেয় না। শান্ত চাবি দেয়া পুতুলের মতো হেঁটে সে ভিতরে চলে যায়।

রুমে গিয়ে ধুম করে ফ্লোরে বসে পড়ে সে। সারাহ্ এসে আহনাফকে দেখে আরো অ°স্থির হয়ে যায়।

ওর পাশে গিয়ে বসে বলল,
“আপনি ঠিক আছেন? আহনাফ।”

আহনাফ শান্ত চোখে ওর দিকে তাকায়। মেয়েটার চোখেমুখে অ°স্থিরতা, লাল ফুলে উঠা চোখ দুটো সারারাতের কান্নার সাক্ষী হয়ে আছে। ওর গালে আলতো করে হাত দেয়। সারাহ্ ওর গা ঘেষে বসে বলল,
“বলবেন না আমায়? কোনো ভুল করেছি আমি?”

আহনাফ ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে বলে,
“মাথায় হাত বুলিয়ে দাও, আমি ঘুমাবো। চিরনিদ্রায় চলে যাবো আমি।”

“চিরনিদ্রা” কথাটা শুনে সারাহ্ ভ°য় পায়, কাঁ°পা হাতে আহনাফের চুলে বিলি কাটে। আহনাফ আরাম করে শোয়।

“আপনার সাদাব-সাইদাকে না দেখে চিরনিদ্রায় কেন যাবেন?”

আহনাফ মাথাতুলে ওর দিকে তাকায়। কাঁদোকাঁদো মুখেও সারাহ্ জোরপূর্বক হেসে বলে,
“কয়েকদিন ধরে অনুভব হচ্ছিল, কাল জানতে পেরেছি।”
“কি?”
নিষ্প্রাণ হয়ে প্রশ্ন করে আহনাফ।

সারাহ্ একহাতে ওর চুলে বিলি কেটে, অন্যহাত দাঁড়িতে রেখে বলল,
“শীঘ্রই আপনি সাদাবের আব্বু, সাইদার পাপা হবেন ইনশাআল্লাহ ফয়েজ স্যার।”

মন খারাপের মাঝেও এ এক খুশির খবর হয়ে এলো। পরিবার যে দুই থেকে তিনে যাচ্ছে। আহনাফ উঠে বসে সারাহ্-র গালে, কপালে পাগলের মতো চুমো দেয়। লাজুক সারাহ্ সেই আহনাফের বুকেই আশ্রয় পায়। শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরে আহনাফ।

তাহসিনার মৃ°ত্যু নিয়ে সারাহ্-কে আর কিছুই জানায় না আহনাফ। তবে সারাহ্-কে ও হারাতে দিবে না, আগলে রাখবে শেষ র°ক্ত°বিন্দু পর্যন্ত। তানজিমের কথা অনুযায়ী এ বিয়ে যদি পরিকল্পিত হয়ে থাকে তবে স্বার্থের জন্য সারাহ্-র প্রাণ নিতে এক মুহূর্ত সময়ও তাদের লাগবে না।

“ঐশী আমার, আমার অপ্রকাশিত প্রেমটুকু তোমার জন্য রইলো।”
মনের কথা মনে থাকে, আহনাফ থাকে চুপ।
______________________________________

দুপুর দুইটা, জুম্মার নামাজ পড়ে বাসায় এসেছে ইমতিয়াজ। মৃত্তিকা নামাজ শেষে মিউকোকে নিয়ে বসে আছে।

ইমতিয়াজ এসে বলে,
“চলুন, বাইরে কোথাও লাঞ্চ করে আসি?”

সকালে অনেকক্ষণ ওরা বাইরে ঘুরেছে। গোরস্থানে গিয়ে জিয়ারাত করে বাসায় ফিরতে ফিরতে আযান দিয়ে দিয়েছিল। তাই তাড়াহুড়ো করে আর রান্নার ঝা°মেলা করতে নিষেধ করে ইমতিয়াজ।

মিউকোকে বাসায় রেখে দুজনে বাইরে যাবে। মৃত্তিকা তৈরি হয়ে নেয়। স্কার্ফটা দেয়ার সময় ইমতিয়াজ বলে,
“কাল আপনাকে হিজাবে সুন্দর লাগছিল।”

মৃত্তিকা ফিরে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
“মানে আমি হিজাব পড়বো? কিন্তু ওটা তো সুরভি আপুর ছিল। আমার হিজাব নেই।”

ইমতিয়াজ উঠে গিয়ে আলমারি খুলে একটা হিজাব বের করে ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“এটা পড়ুন।”
“কার এটা? তাহমিনার?”

ইমতিয়াজ উত্তর না দিয়ে মৃত্তিকাকে হিজাব পড়িয়ে দেয়। মৃত্তিকা অনুভব করে ওর প্রতিটা স্পর্শ। হিজাব পড়িয়েই ইমতিয়াজ বাইরে চলে যায়। মৃত্তিকা আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আজ সৌন্দর্যটা সত্যিই অন্যরকম।”

হ্যাঁ, অন্যরকম, ভীষণ অন্যরকম একটা দিন কাটায় ইমতিয়াজ ও মৃত্তিকা। দুপুরের লাঞ্চ রেস্টুরেন্টে করে বিকাল পর্যন্ত ঘুরে বেড়ায় আশেপাশেই।

বিকালে রমনার দিকে যায়। ভীড় আর মানুষ মৃত্তিকার অপছন্দ। ভীড়মুক্ত স্থান খুঁজে খুঁজে ব্যর্থ হয়ে ইমতিয়াজ যখন বলে,
“হুমেনের ভীড়।”

মৃত্তিকার জবাব ছিল,
“আমরা এলিয়েন।”

হাওয়াই মিঠাই দেখে মৃত্তিকা ইমতিয়াজের হাতে খোঁ°চা দিয়ে বলে,
“কটন ক্যান্ডি খাবেন?”
“হাওয়াই মিঠাই, সংক্ষেপে শুধু মিঠাই।”

দুটো হাওয়াই মিঠাই কেনা হলো। প্যাকেট খুলে মৃত্তিকা বলে,
“চিয়ার্স।”

ইমতিয়াজ “চিয়ার্স” বলে দুজনে মিঠাই ধা°ক্কা দিতেই তা একসাথে লেগে গেল। মৃত্তিকা ঠোঁট উলটে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ফিক করে হেসে দেয়। ইমতিয়াজ মুগ্ধ হয়। মেয়েটার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা যে বড়ই দুর্লভ। মৃত্তিকা খাওয়ার সময় নাকে, গালে মিঠাই লেগে আঠা আঠা অবস্থা।

ইমতিয়াজ টিস্যু এগিয়ে দিলে মৃত্তিকা গালে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“মুছে দেন।”
“পিঁপড়া হওয়া উচিত ছিল আমার।”
ইমতিয়াজের কথার অর্থ বুঝতে চেয়েও বুঝে না মৃত্তিকা।

রাত পর্যন্ত ঘুরাঘুরি করে রাতের খাবার নিয়েই বাসায় ফেরে দুজনে। শরীরটা ক্লান্ত হলেও মনটা বেশ ফুরফুরে। মৃত্তিকার জীবনে এই হাসিটুকুর বড্ড বেশি অভাব ছিল। আজ তা পূর্ণতা পেয়েছে।

মৃত্তিকার চালচলনে বোঝা যাচ্ছে সে খুশি, প্রচন্ডরকম খুশি। এই মন ইমতিয়াজ ভা°ঙবে না, ওর শত কষ্ট হোক ও মৃত্তিকাকে কষ্ট বুঝতে দিবে না। তাহমিনার স্থান হয়তো মৃত্তিকা পাবে না, তবে হৃদস্পন্দের কোনো এক ছন্দে সে থাকবে আজীবন। ইমতিয়াজের ভালোবাসা বড্ড বেশি অপ্রকাশ্য।

প্রকাশ না করলেও কিছু প্রেম হয়৷ ভালোবাসা সৃষ্টিকর্তা থেকে পাওয়া এক নেয়ামত। এর উপর কারো প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছানুসারে কারো মনে কারো জন্য প্রেমের শুরু হয়। কঠিন লাগছে কথাটা?

আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত একটা হাদিস বলি,
রাসুল (সা.)-ও আপন স্ত্রীদের পালা বণ্টন করে বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার যতটুকু সাধ্য ছিল আমি ইনসাফ করার চেষ্টা করেছি— আর যে বিষয়টি আমার সাধ্যে নেই (অর্থাৎ কোনো স্ত্রীর প্রতি বেশি ভালোবাসা), সে বিষয়ে আমাকে ভ°র্ৎ°স°না করবেন না।’ (সুনানে তিরমিজি, ৩/১৮৫, হাদিস : ১১৪০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৪/৪১৪)
______________________________________

দুপুরে বাসায় মেহমানরা এসেছে। বাসার কেউ এখনো নতুন অতিথির সুসংবাদ সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। আহনাফ কাউকে জানাতে চায় না। সকলের অজানা থাকুক, সারাহ্-কে নিয়ে কোনো প্রকার ঝুঁ°কি সে নিবে না।

আহনাফের ফুপা, ফুফুর সাথে ড্রইংরুমে বসে আলাপ করছে আব্বাস সাহেব। আহনাফ ও সারাহ্ কিছুক্ষণ সেখানে ছিল। কিন্তু সারাহ্-র শরীর খারাপ লাগায় রুমে চলে আসে।

সারাহ্ বিছানায় শুয়ে আছে আহনাফ এসে পাশে শুয়ে বলল,
“আমার সাইদা কি করছে?”

সারাহ্ ওকে একটা চিমটি দিয়ে বলে,
“সাইদা ঘুমাচ্ছে।”

হঠাৎ কিছু মনে পড়ায় সারাহ্ উঠে বসে বলল,
“কাল সারারাত কোথায় ছিলেন?”
“টেনশনে ছিলাম।”

সারাহ্ কপাল কুঁচকায়। আহনাফ হেসে বলল,
“সাদাব বা সাইদা যে আসছে তা আমি জানতাম, এরজন্যই টেনশনে ছিলাম।”

সারাহ্ গাল ফুলিয়ে বসে বলল,
“মি°থ্যা কথা। বাসায় এসেই কেমন যেন ছিলেন আপনি?”

আহনাফ উঠে ওর ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
“চুপ থাকো, এতোকিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। নিজেকে নিয়ে আর বেবিকে নিয়ে ভাবো।”

আহনাফ চায় থাকুক ওর কষ্টগুলো সারাহ্-র অজানা। সত্য যেমনি বের করবে, ঠিক তেমনি সে সারাহ্-কেও র°ক্ষা করবে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here