#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
চতুর্ত্রিংশ পর্ব (৩৪ পর্ব)
জাহাঙ্গীর সাহেব ও নার্গিস পারভিন বাসায় চলে অনেকক্ষণ হলো। আহনাফ এখনো ছাদেই দাঁড়িয়ে আছে। একপাশের দেয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চিন্তায় এখন শুধুই সারাহ্ আর তার বেবি। ফোন বেজে উঠলো, আহনাফ চমকে উঠে পকেটে হাত দেয়।
ফোন বের করে আননোন নাম্বার দেখে কপাল কুঁচকায়। রিসিভ করতে ভ°য় করছে ওর। সাত পাঁচ ভেবে শেষে রিসিভ করে নেয়,
“আসসালামু..”
সালাম শেষ করার আগেই অপরপাশ থেকে অপরূপা বলে,
“কি ব্যাপার মিস্টার আহনাফ ফয়েজ? সারাহ্-কে কয়দিন লুকিয়ে রাখবেন? বউকে বাঁচাতে গিয়ে বাবাকে হা°রাবেন না তো?”
আহনাফের ভ°য়টা বেড়ে গেল। বাবা তো বাসায় একা। তবুও নিজেকে শক্ত রাখে সে। এভাবে ভে°ঙে পড়লে তো চলবে না।
“কে বলছেন?”
অপরূপা মৃদু হেসে বলল,
“রূপকথার অপরূপা আমি৷ তাহসিনার মৃ°ত্যুর সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে, দুচোখ ভরে দেখেছি তার মৃ°ত্যুর কষ্ট।”
আহনাফ জবাব দিতে পারলো না। ওর কানে ওর ভালোবাসার মৃ°ত্যুর বর্ণনা বেজে চলেছে।
“তাহসিনার আপু, আপু বলে চিৎকার আর তাহমিনার ইমতিয়াজ বলা মিলেমিশে গিয়েছিল সেদিন। (একটু থেমে) ইশ, কেন যে ভিডিও করিনি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভিডিও হতো তবে।”
পাশে বসা শাফিনের দিকে তাকায় অপরূপা। আহনাফের ঢাকায় আসার সংবাদ জামিলের মাধ্যমে পেয়েছে ওরা। সেদিন জামিলের সাথে কি আচরণ আহনাফ করেছে তাও জানে। তাই আহনাফকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এই ব্যবস্থা।
অপরূপা একটু জোরেই বলে,
“আরেকটা কথা, সারাহ্ প্রেগন্যান্ট তো। সামলে রেখো, প্রেগন্যান্ট মেয়েগুলো কিন্তু বেশি সুন্দরী হয়।”
“হেই, কেন বলছেন আমাকে এসব? আপনি..”
আহনাফের কথা শেষ হওয়ার আগেই কল কে°টে দেয় অপরূপা। আহনাফ কলব্যাক করলেও নাম্বার বন্ধ দেখায়।
অপরূপা ফোন রেখে বলে,
“দুলালের কোনো খোঁজখবর নেই কেন?”
“জার্মানি গেছে যতদূর শুনেছি। এখন কোনো খোঁজখবর নেই।”
“জার্মানি গিয়ে ম°রে গেছে নাকি?”
শাফিন হাসলো। ওর অন্ধকার অধ্যায়ের পুরোটা জুড়েই আছে অপরূপার স্থান। তার কু°কর্মের সম্পূর্ণ ভাগিদার এখন অপরূপা৷
এদিকে আহনাফ আব্বাস সাহেবকে কল দেন। আব্বাস সাহেব রিসিভ করলে আহনাফ তাড়াহুড়ো করে বলল,
“কোথায় আছো বাবা?”
আব্বাস সাহেব হাসলেন। বলেন,
“বাড়িতে এসেছি, এখন তোমার বড়কাকার সাথে কথা বলছি। বাসায় একা একা ভালো লাগে না।”
আহনাফ স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে। বাবা তার ভালো আছে, একা নেই। আঁধারের রহস্যে ক্রমাগত হাতড়ে যাচ্ছে, কিছু কালো পাখি খবর দিচ্ছে কিন্তু ধরা দিচ্ছে না। এ বিহ্ব°লতার সমাধান পাচ্ছে না, আঁধারের শেষপ্রান্তেও পৌঁছাতে পারছে না।
______________________________________
রাত পৌনে একটা, নিজেদের বাসায় চলে এসেছে ইমতিয়াজ-মৃত্তিকা। বাসায় আসার পর থেকে এখনো ইমতিয়াজ একরুমে বসে আছে। রুমের দরজা বন্ধ, মৃত্তিকা ডাকলেও জবাব দেয় না।
তাহমিনার ওড়না হাতে নিয়ে ফ্লোরে বসে আছে ইমতিয়াজ। এ কেমন যন্ত্রণা সে জানে আর আল্লাহ্ জানে। ওড়নাটা নাকের কাছে নিয়ে তাহমিনার ঘ্রাণ অনুভব করে সে। কানের কাছে বেজে উঠে সেই ডাক,
“আমার তাজ।”
ওর তাজ ওর ডাকে সারা দেয়নি, ওকে বাঁচাতে পারেনি।
ডাইনিং এ বসে মৃত্তিকা একদৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর উঠে গিয়ে আবারো দরজায় নক করতে নিয়ে দেখে দরজা খোলা। মৃত্তিকা দরজা ঠেলে ভিতরে এসে ইমতিয়াজের দিকে তাকালো। ধীরে ধীরে ওর সামনে গিয়ে বসে। হাতের মুঠোয় থাকা ওড়নাটা দেখে।
“তোমাকে দূরে থাকতে বলেছি না?”
ইমতিয়াজের কন্ঠটা অন্যরকম শোনালো। মৃত্তিকা ওর চোখের দিকে তাকায়, অনবরত কেঁদেছে মানুষটা। চোখ লাল হয়ে আছে, যেন এখনই র°ক্ত ঝরবে৷ ওর গালে থাকা অশ্রু মুছতে গেলে ইমতিয়াজ বাধা দিয়ে বলল,
“দূরে থাকতে বলেছি, কেন বারবার কাছে আসছো?”
হঠাৎ করে চেঁচিয়ে উঠে ইমতিয়াজ,
“যাও।”
মৃত্তিকা সরে যায়। একটু দূরে গিয়ে বসে। এরকম অবস্থায় মানুষকে কখনো একা ছেড়ে দিতে হয় না। ছোট বাচ্চাদের মতো আগলে রাখতে হয়।
“মৃত্তিকা?”
বেশ কিছুক্ষণ পর ইমতিয়াজ আলতো সুরে ডাকে ওকে। মৃত্তিকা তাকাতেই বলে,
“মিনা খুব কষ্ট পেয়েছিল, আমাকে ডেকেছিল, আমি যাইনি বলে আরো কষ্ট পেয়েছিল। (একটু থেমে) বেবিটাও ডেকেছিল তাই না?”
মৃত্তিকা দ্রুত ওর কাছে যায়। ইমতিয়াজের কথায় বোঝা যাচ্ছে তার মানসিক অবস্থা খারাপের দিকেই যাচ্ছে। মৃত্তিকা ওর দুগালে ধরে বলল,
“ইমতিয়াজ, আমার দিকে তাকাও। এমন করো না প্লিজ। তুমি তো শক্ত মানুষ, এমন কেন করছো।”
ইমতিয়াজ ওকে সরিয়ে দেয়। মৃত্তিকা সরে না বরং ওকে ধরে টে°নে উঠায়। ইমতিয়াজের শরীর নি°স্তে°জ হয়ে গেছে, মৃত্তিকা ওকে বিছানায় বসিয়ে বলে,
“ইমতিয়াজ, শান্ত হও। একটু ঠান্ডা হয়ে ভাবো, এভাবে হাল ছেড়ে দিলে ওরা পার পেয়ে যাবে।”
ইমতিয়াজ চুপ করে বসে থাকে। আর দশজন মানুষের মতো ভাবনার শক্তি তার নেই। মৃত্তিকা ভাতের প্লেট নিয়ে আসে। ছোট ছোট লোকমা দিয়ে খাইয়ে দেয় নিজ হাতে।
______________________________________
সকাল সকাল তানজিমের সাথে দেখা করতে এসেছে আহনাফ। সামিহাও সাথে এসেছে। একপ্রকার জো°রাজু°রি করেই বেরিয়েছে আহনাফের সাথে। ঢাবির কার্জন হল এরিয়ায় এসেছে ওরা। তানজিম এখানেই আসার কথা। সামিহা জানে না আহনাফ এখানে কেন এসেছে।
তানজিম রিকশা থেকে নেমে ওদের দিকে এগিয়ে আসে। সামিহা ওকে দেখে হাত নেড়ে বলল,
“হাই।”
“হ্যালো।”
তানজিমও হাত নাড়ে।
আহনাফের সাথে সামিহাকে দেখে একটু অবাক হয় তানজিম। আহনাফের বিয়েটা পরিকল্পিত এইটুকু জানলেও আহনাফ কাকে বিয়ে করেছে তা তানজিম জানে না।
তানজিম কাছে আসতেই সামিহা আহনাফকে বলে,
“ওর নাম তানজিম, আমার ফ্রেন্ড।”
তানজিমের দিকে তাকিয়ে বলল,
“উনি হলো আহনাফ, আমার আপুর একমাত্র হাসবেন্ড।”
তানজিম মুচকি হেসে বলল,
“সারাহ্ আপু?”
“হ্যাঁ তো।”
বেশ ঢং করে কথাটা বলে সামিহা।
তানজিম আহনাফের সাথে কোলাকুলি করে বলে,
“কেমন আছো ভাইয়া? তোমার শ্যালিকা আমার ক্লাসমেট। আচ্ছা চলো, যাওয়া যাক।”
“তোমরা একজন আরেকজনকে চেনো?”
ঠোঁট উলটে প্রশ্ন করে সামিহা।
আহনাফ হেসে ওর গাল টে°নে ওর মতো ঢং করে বলে,
“হ্যাঁ তো।”
সামিহা গাল ফুলিয়ে সামনে সামনে হাঁটতে থাকে। আহনাফ একটু নিচুস্বরে তানজিমকে বলে,
“বিয়েটা পরিকল্পিত, কে করেছে এই পরিকল্পনা?”
তানজিম হাঁটার গতি কমিয়ে সামিহার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
“কোনো সমস্যা হয়েছে?”
“হুম, কালরাতে কোনো এক মেয়ে কল দিয়েছিল। নাম অপরূপা। ও আবার তাহসিনার কথা বলছিল। আবার এই মেয়েটাই সারাহ্-র কিডন্যাপের কথা বলেছে।”
তানজিম রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“আপুকে সাবধানে রাখেন। উনি এমন একজনের নজরে পড়েছে যে নারী°পা°চারের সাথে যুক্ত আর (একটু থেমে) মানসিকভাবেও অসুস্থ বোধহয়।”
“মানে? কে সে?”
সামিহা ফিরে দৌড়ে ওদের কাছে আসে।
“কি কথা বলছো?”
আহনাফ মাথা নেড়ে বলল,
“কিছু না, চলো।”
ওরা দোয়েল চত্বর পর্যন্ত গেল। ওখানে রাস্তার পাশে গড়ে ওরা ছোট ছোট দোকানে সামিহাকে কিছু জিনিসপত্র দেখতে বলে ওরা আবারো একটু দূরে সরে।
“ভাইয়া, উনার নামটা আমি বলতে চাচ্ছি না। আমার জীবনের ইম্পোর্টেন্ট একজন।”
“উনি তোমার বোনদের মে°রেছে।”
তানজিম চুপ করে অন্যদিকে তাকায়। আহনাফ বলে,
“দেখো, তোমার সারাহ্ আপু অসুস্থ। নিজেকে রক্ষা করার মতো শক্তি ওর নেই, এখন সে এক থেকে দুইয়ে আছে। রি°স্ক নিতে চাই না আমি।”
তানজিম তবুও চুপ। আহনাফ চিন্তায় পড়ে, এমন কে হতে পারে ওর জীবনের এতো গুরুত্বপূর্ণ কেউ।
“আচ্ছা চলো।”
ফিরে তাকিয়ে সামিহাকে কোথাও দেখে না। আহনাফ এদিক ওদিক তাকিয়ে তানজিমকে বলে,
“সামিহা কোথায়?”
তানজিম চমকে উঠে আশেপাশে দেখে৷ পাগলের মতো এদিকসেদিক ছোটাছুটি করে সে। ভ°য়ে ওর হৃদপিণ্ডের গতি বেড়েছে। ঘেমে-নেয়ে একসারা হয়ে গেছে। আবার কোনো বি°পদ ওর না হয়ে যায়।
আহনাফের নজর রাস্তার অপরপাশের পুলিশ পোস্টের দিকে যায়৷ সামিহা ওখানে দাঁড়িয়ে ওকে চুপ থাকতে বলে। আহনাফ কপাল কুঁচকায়।
তানজিম ওকে দেখে দৌড়ে রাস্তা পেরিয়ে যায়। আহনাফও যায় ওর পিছুপিছু। তানজিম গিয়েই ওকে জড়িয়ে ধরে, আহনাফ একটু দূরে দাঁড়িয়ে যায়। সামিহা নিজেই বোকাবনে গেছে, এটা সে আশা করেনি। সে তো শুধুই তানজিমের সাথে মজা করতে চেয়েছিল।
তানজিম নিজের মুখটা ওর কানের কাছে এনে বলে,
“কতটা ভ°য় পেয়েছিলাম জানিস?”
সামিহা আলতো করে ওর পিঠে হাত রেখে চোখ বুজে ফেলে, তানজিমের আজকের স্পর্শটা অন্যরকম। তানজিম দূরে সরে যায়। একটু অ°স্বস্তি নিয়েই বলে,
“এগুলো বা°জে ধরনের রসিকতা, সামি।”
ওর ঘা°ব°ড়ে যাওয়া মুখটা দেখে সামিহা হাসে। আহনাফ ফোনে কথা বলার অজুহাতে দূরেই থাকে। তবে চিন্তা হতে থাকে সামিহাকে নিয়ে৷ তানজিমের সাথে তার সম্পর্ক গভীর, কিন্তু তানজিমের যা ফ্যামিলি তাতে কোনো মেয়ে কি আদৌ নিরাপদ?
______________________________________
দুইদিন পর, আজ সোমবার। কলেজে আজ সাইক্রিয়াটিস্ট এসেছে, ছাত্রছাত্রীদের মানসিক অবস্থা উন্নতির জন্য এটা একটা সাধারণ ব্যবস্থা। ডাক্তার আরিফা ইসলাম ছাত্রীদের সাথে কথা বলছে আর ডাক্তার নাইম আহমেদ ছাত্রদের সাথে কথা বলছে।
হলরুমের বাইরে সারাহ্ দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে ছাত্রছাত্রীরা ডাক্তারদের সাথে কথা বলছে। আহনাফ এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“তুমিও ডাক্তার দেখাবে নাকি?”
সারাহ্ কপাল কুঁচকে বলল,
“না, ক্লাস নেই তাই দাঁড়িয়ে আছি।”
বারান্দার দেয়াল ঘে°ষে দাঁড়িয়ে আহনাফ বলে,
“দেখিয়ে নাও, তোমার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না।”
সারাহ্ ওর পিঠে একটা চা°প°ড় দিয়ে বলে,
“ঠিক আছি আমি।”
“স্টুডেন্টরা দেখবে।”
সারাহ্ ভ্রূ উঁচিয়ে বলে,
“স্টুডেন্টদের সামনে যখন হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন, তখন দেখেনি?”
আহনাফ মুখ বাঁ°কিয়ে হাসলো। তারপর বলে,
“সকালে ক্লাস ছিল?”
“হ্যাঁ, ছিল।”
“দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে অসুবিধা হয়?”
সারাহ্ ব্যা°ঙ্গা°ত্মক ভাষায় বলল,
“আমি কি নয়মাসের প্রেগন্যান্ট?”
আহনাফ ফিক করে হেসে দেয়। বলে,
“আস্তে কথা বলো, মানুষ শুনবে।”
সারাহ্ও হাসে। মাথানিচু করে তাকায় নিজের উদরে, একটা প্রাণ বেড়ে উঠছে এখানে। সে অনুভব করতে পারে আহনাফের সন্তান আর ভালোবাসার নির্দশনকে
হুট করে লজ্জা লাগতে শুরু করে তার। নিরবে হলরুমের ভিতরে চলে যায়। ডাক্তার আরিফার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো সে। আরিফা ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
“কি অবস্থা সারাহ্ ম্যাম? আপনার মা আর বেবি ভালো আছে?”
সারাহ্ চোখ বড় করে তাকায়। ওর মায়ের কথা এই মহিলা কেন জিজ্ঞাসা করলো আর ওর প্রেগ্ন্যাসির বিষয়ট কিভাবে জানলো।
এই আরিফা ইসলামের কাছেই মমতাজ বেগমের চিকিৎসা করানো হয়েছিল। সে পরোক্ষভাবে শাফিনের সাথে যুক্ত আছে।
______________________________________
ইমতিয়াজ এসেছে উত্তরা, শাফিনের বাসায়। দুইদিন নিজেকে ঘরব°ন্ধী রেখে আজ অনেক ভেবেচিন্তে এখানে চলে এসেছে। বেল বাজাতেই সুরভি এসে দরজা খুলে দেয়। আটমাসের অন্ত:সত্ত্বা সুরভির হাঁটতে চলতেও সমস্যা হচ্ছে।
ইমতিয়াজকে দেখে হাসিমুখে বলল,
“ভাইয়া, কেমন আছেন? ভিতরে আসুন।”
ইমতিয়াজ ধীরপায়ে ভিতরে যায়। বলে,
“মামা আছে?”
“না, আপনি বসুন আমি কল করছি।”
ইমতিয়াজ শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে বলল,
“এখুনি কল দিন।”
সুরভি শাফিনকে কল করে কিন্তু শাফিন ফোন বন্ধ করে রাখায় কল যায় না। সুরভি ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলে,
“বাবার ফোন বন্ধ।”
ইমতিয়াজ সোফায় বসে বেশ শান্ত গলায় বলে,
“ব্যাপার না, আমি অপেক্ষা করছি।”
এদিকে মৃত্তিকা ইমতিয়াজকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। সকালে উঠে হঠাৎ করে তাকে না দেখে মেয়েটা পাগল প্রায় হয়ে গেছে। গো°র°স্থানে গিয়েও খুঁজে এসেছে, পায়নি।
“কোথায় গেলে ইমতিয়াজ?”
বাসায় এসে বেডরুমে দাঁড়িয়ে কথাটা বলে সে।
এমনসময় সদর দরজায় শব্দ হয়। মৃত্তিকা দরজা খুলেই ভিতরে চলে এসেছিল। ইমতিয়াজ এসেছে ভেবে রুমের বাইরে এসে দেখে শাফিন। মৃত্তিকার মাথায় যেন র°ক্ত চড়ে যায়।
শাফিন দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলল,
“ঘটনা দেখো দেখি, আহারে মেয়েটা স্বামীকে খুঁজছে। (একটু থেমে) ইমতিয়াজ তোমাকে ভালোবাসে না?”
মৃত্তিকার কাছে আসতে আসতে বলে,
“ভালোবেসে স্পর্শ করেছে কখনো?”
মৃত্তিকা মনের ভ°য় চেহারায় আনার মেয়ে নয়। একজায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে আছে সে। শাফিনের গতি সুবিধার নয় বোঝা যাচ্ছে।
“তোমার মা কিন্তু আমার আপন বোন নয়, চাচাতো বোন। রাহা সুলতানা, নামটা আমার মা পরিবর্তন করে রেখেছে রিপা বেগম।”
মৃত্তিকা কপাল কুঁচকায়,
“চাচাতো বোন মানে?”
“ওর নয়মাস বয়সেই ওর বাবা-মা মারা যায়৷ ওর মা মানে তোমার নানীও কিন্তু মারা যাওয়ার সময় প্রেগন্যান্ট ছিল, তাহমিনার সাথে যা হয়েছে তার সাথেও সেটাই হয়েছিল। (জোরে হাসে) আমার বাবা সেদিন যা করেছে তাহমিনার সাথে তাই করেছি আমি।”
মৃত্তিকা ঘৃ°ণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। হঠাৎ মনে হলো শাফিন জেনেছে দুলালের আ°টকে রাখার কথা। নাহলে নিজে থেকে এতো কথা বলবে কেন?
মৃত্তিকা আন্দাজে একটা ঢি°ল ছুঁড়ে। জিজ্ঞাসা করে ফেলে,
“দুলাল কোথায়?”
শাফিন মাথা নেড়ে বলে,
“গুড কুয়েশ্চন, আমি নিয়ে গেছি। তোমার বাবা তাকে আটকে রাখতে পারেনি।”
শাফিন চেয়ার টে°নে বসে মুখ বাঁকিয়ে ব্য°ঙ্গ করে বলল,
“রিপাকে আমি বিয়ে করতাম, কিন্তু রিপা বিয়ে করে ওই শরীফকে। শরীফ রাগি মানুষ, তার রাগকে কাজে লাগিয়ে রিপার সংসার শেষ করেছি। (একটু থেমে) আজ তার মেয়ের সংসারও শেষ হবে।”
শাফিন উঠে দাঁড়ালে মৃত্তিকা ওর পায়ে লা°থি দেয়। গায়ের ওড়না খুলে শাফিনের গলায় পেঁ°চিয়ে ধরে শক্ত করে। শরীরের পুরো শক্তি দিয়ে টে°নে বলে,
“তুই ম°রে যা, সব ফে°ত°না ম°রে যাবে। অ°মানুষ, রাস্তার কুকুরও তোর চেয়ে ভালো। ম°রে যা, শাফিন ম°রে যা।”
শাফিন আর যাই হোক একজন পুরুষ। মৃত্তিকা তার শক্তির সঙ্গে পেরে উঠা কঠিন। বেশ অনেকক্ষণ দ°স্তাদ°স্তি হলো দুজনের মধ্যে। শাফিন ওড়নার প্যাঁ°চ খুলে মৃত্তিকার গালে চ°ড় বসায়। ক্লান্ত মৃত্তিকা মাটিতে লু°টিয়ে পড়ে, কিন্তু হার মানে না। চেয়ারের কোণায় লেগে কপাল ফুলে উঠে।
মৃত্তিকা উঠে দাঁড়ানোর আগেই শাফিন ওর গলা চেপে ওকে ফ্লোরের সঙ্গে মিশিয়ে বলে,
“নি°স্তার তোমার নেই মিউকো, মায়ের আদরের মৃত্তিকা।”
মৃত্তিকা তাকে ধা°ক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজেও সরে যায়। উঠে বেডরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেলে।
“এ শরীরে ইমতিয়াজের ছাড়া অন্যকেউ স্পর্শ না করুক। হে আল্লাহ্, আমাকে আমার স্বামীর জন্য পবিত্র রাখো।”
প্রাণপণে রবকে ডেকে যাচ্ছে মৃত্তিকা। কোনো একটা আলৌকিক ঘটনা ঘটে যাক, মৃত্তিকা নিজের সম্মানটুকু বাঁচাতে চাচ্ছে।
চলবে….