অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী ত্রয়োত্রিংশ পর্ব (৩৩ পর্ব)

0
245

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

ত্রয়োত্রিংশ পর্ব (৩৩ পর্ব)

রাতের খাবার টেবিলে সাজাচ্ছে মৃত্তিকা। ইমতিয়াজ এসে চেয়ার টে°নে বসে ওর দিকে না তাকিয়েই বলল,
“পালিয়ে আসলে যে আর গেলে না?”

মৃত্তিকা চমকে উঠে তাকায়। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে মেয়েটা। ইমতিয়াজ মুখ টি°পে হাসে। তানজিম এসে বসতে বসতে বলল,
“ক্ষুধা লাগছে। খাবার রেডি?”

মৃত্তিকা কিছু না বলে মমতাজ বেগম আর লুৎফর রহমানের প্লেট সাজিয়ে নিয়ে যায়। শান্ত পরিবেশে খাওয়া দাওয়া শেষ হয়। তানজিম সব থালাবাসন ধুয়ে রেখে মৃত্তিকাকে বলে,
“আপু আমার কিন্তু মিডটার্ম এক্সাম শুরু রবিবার থেকে, সো আমি পড়বো আজকে সারারাত। ফজরের সময় ডেকে দিও।”

মৃত্তিকা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। শিল্পা ইউনুস, মৃত্তিকার পিএ ওকে কল দেয়ায় মৃত্তিকা কথা বলতে গিয়েও থেমে যায়।

“ম্যাম।”
“ইয়েস।”
“ম্যাম, আপনি একবার অফিসে আসলে ভালো হয়।”

মৃত্তিকা অবাক হয়। ইমতিয়াজ যেহেতু যাচ্ছে তাই ওর যাওয়ার কি প্রয়োজন।

“কেন শিল্পা?”
“ম্যাম, দুলাল স্যার আজ চারদিন হলো অফিসে আসে না আর উনার বাসা গিয়েছিলাম আজকে, উনারা জানিয়েছে উনি নাকি অফিসের কাজে জার্মানি গেছেন। কিন্তু এমন কোনো প্রোগ্রাম তো এখন নেই, আবার ইমতিয়াজ স্যার এটা নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।”

মৃত্তিকা কপাল কুঁচকায়। ইমতিয়াজ একটু আগে ওকে বলেছিল দুলাল ফেরদৌসী অফিসে আসে, তাকে হে°য় করে। তবে শিল্পা কেন বলছে দুলাল অফিসে আসে না?

“আচ্ছা, শিল্পা। আমি আসতে চেষ্টা করবো, না আসলেও অফিসের কাজ যেন বন্ধ না হয়।”
“ওকে ম্যাম।”

মৃত্তিকা রুমে এসে নক করে বলে,
“আসবো?”
“আসো।”

ইমতিয়াজের অনুমতি পেয়ে মৃত্তিকা ভিতরে প্রবেশ করে। ইমতিয়াজ বিছানায় শুয়ে বিড়ালটার সাথে খেলছিল। মৃত্তিকাকে দেখে রেখে উঠে বসে বিড়ালকে নিচে ছেড়ে দেয়।

মৃত্তিকা ওর মুখোমুখি বসে বলল,
“দুলাল ফেরদৌসী অফিসে আসে না কয়দিন?”

ইমতিয়াজ হেয়ালি করে বলে,
“এসেছিল, আর যেতে দেইনি।”
“মানে? আ°টকে রেখে মি°থ্যা ছড়িয়েছেন?”
বি°ভ্রা°ন্তি নিয়ে চোখ ছোট করে মৃত্তিকা।

ইমতিয়াজ হেসে বলে,
“বিশ্বাস রাখো। কথা জানবো যেহেতু বলেছি সো জেনেই ছাড়বো। (একটু থেমে) তোমার ওয়েতেই জানবো, চিন্তা নেই।”
“কোন ওয়ে?”
“থা°র্ড ডিগ্রি।”
বলে ইমতিয়াজ চোখ টিপ দেয়।

মৃত্তিকা চোখ বড় করে তাকিয়ে বলল,
“তারমানে তাকে আপনি মে°রেছেন? কোথায় আছে এখন?”
“শিল্পাকে জিজ্ঞাসা করলে এটার এন্সারও বুঝে যেতে।”
“আহা, ক্লিয়ার করুন।”

মৃত্তিকাকে কাছে নিয়ে আসে ইমতিয়াজ। বলে,
“হুশ, এতো কথা বলতে পারবো না।”

ইমতিয়াজের কথার ভাষায় হঠাৎ বিরাট এক পরিবর্তন। মৃত্তিকাও কথা বলে না, চুপটি করে মাথা নুইয়ে ফেলে।

ডানহাতের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে মৃত্তিকার ঠোঁটে স্পর্শ করে। ইমতিয়াজের টিশার্ট খা°মচে ধরে চোখে চোখ রাখে মৃত্তিকা, যেন বলতে চাইছে “পাগল করে দাও আমাকে।”

নিরব মৃত্তিকার চোখের ভাষা ইমতিয়াজ বুঝে ফেলে। আবারো এক হয় তাদের ওষ্ঠোধর জোড়া। এবারে ইচ্ছাকৃতভাবে আলো নিভিয়ে দেয় ইমতিয়াজ। অন্ধকারে নিরব কক্ষে দুজন নর-নারীর নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে, ক্রমশ কাছে আসছে দুজন। একই চাওয়া, একই পাওয়া, একই কথা বলার ইচ্ছা। কিন্তু দুজনে চুপ। ইমতিয়াজের হাতের স্পর্শে নিজের হু°শ জ্ঞান হারিয়ে বসেছে মৃত্তিকা। যেন মধ্যিখানের সব দুরত্ব আজকেই শেষ করবে সে।

ইমতিয়াজের ফোন বেজে উঠে। হঠাৎ শব্দে মৃত্তিকা সরে যায়, নিজেকে গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়। শরীফের নাম্বার দেখে ইমতিয়াজ রিসিভ করে।

“জি, বলেন।”
“দুলাল নেই এখানে, সম্ভবত পালিয়েছে।”

ইমতিয়াজ রেগে যায়। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
“বের হওয়ার উপায় কম, সে রাস্তা খুঁজছে বোধহয়। (একটু থেমে) আচ্ছা, আমি আসছি।”

ইমতিয়াজ ফোন রেখে উঠে শার্ট পড়তে পড়তে বলে,
“আমি একটু বাইরে যাচ্ছি, আসতে দেরি হবে বা রাতে নাও আসতে পারি।”
“যাচ্ছেন কোথায়? কে কিসের রাস্তা খুঁজছে?”
মৃত্তিকার চোখেমুখে কৌতুহল।

“ফিরে এসে বলছি।”
কথাটা বলেই ইমতিয়াজ বেরিয়ে গেল। মৃত্তিকা সদর দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়।

ইমতিয়াজ সোজা ফ্যাক্টরির গোডাউনে এসেছে। শরীফ এখানেই দাঁড়িয়ে আছে। ইমতিয়াজ এসে ধ°মকে উঠে বলল,
“আপনার এতো লোকজন কি শুধু মৃত্তিকার জন্য? একটা মানুষকে দেখে রাখতে পারেন না?”

শরীফ বলে,
“খুঁজে দেখছে ওরা।”

ইমতিয়াজ কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দুলালকে সে আর শরীফ মিলে চারদিন আগেই পা°কড়াও করেছে। বেঁধে রেখেছে ফ্যাক্টরির গোডাউনে, খাবার বলতে শুকনা মুড়ি আর পানি। আর নিয়ম করে তিনবেলা অ°সহ্য মা°র মেরেছে, তবুও সে এখনো মুখ বন্ধ করে রেখেছে।

ঘন্টা খানেক পর দুলালকে খুঁজে পাওয়া যায়। দুর্বল শরীরে বেশিদূর যেতে পারেনি। হাতপা বেঁধে এনে ফেলা হয়।

ইমতিয়াজ ঠোঁট উলটে শরীফকে বলে,
“আপনি ডাক্তার হয়েও মা°স্তা°নিতে সেরা।”
“শিখে না এসব, আমার মেয়েটা ভ°য় পাবে।”

ইমতিয়াজ মুচকি হাসে। একটু আগের মৃত্তিকার মলিন চেহারা মনে পড়ে তার। আবারো সেই লাজুক চোখের কথা ভেবে হাসি পায়।

দুলালের কথায় ঘোর কাটে,
“কতদিন আ°টকে রাখবে? বের কি আমি হবো না নাকি?”

ইমতিয়াজ হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“হ্যাঁ, সাদা কা°ফ°নে মুড়ে বের হলে হতে পারো। তবে যদি মুখ না খুলো তবে তাও পারবে না।”
“মুখ খুললেও মা°রবে?”
“মৃত্তিকাকে কেন মা°রতে চেয়েছিলে?”

দুলাল কঠিন কন্ঠে বলে,
“ভুল এটাই করেছিলাম আমরা। তাহমিনা আর তাহসিনার সাথেই কবরে গেছে সব সত্যটা, মৃত্তিকা তো কিছুই জানেনি। ওকে মা°রতে গিয়েই ভুল করেছি, সব আবারো জানাজানি হয়েছে।”

ইমতিয়াজের দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“তাহমিনা কিন্তু মৃত্তিকার থেকে বেশি চতুর ছিল, আর অতি চালাকের গলায় সবসময়…”

দুলালের গালে চ°ড় বসায় ইমতিয়াজ। শরীফকে বলে,
“ওকে পানি, খাবার কিছুই দেওয়া হবে না।”
______________________________________

পরদিন সকাল সকাল ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে আহনাফ ও সারাহ্। সারাহ্-কে একা রেখে আহনাফ আসতে পারবে না। আহনাফ চিন্তিত ওকে নিয়ে।

সারাহ্ ওর কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“এতো কি নিয়ে চিন্তা করেন?”

সারাহ্-কে একহাতে জড়িয়ে ধরে আহনাফ বলে,
“কিছু না।”

আহনাফ সামিহাকে কল দেয়। সামিহা রিসিভ করেই বলে,
“ভাইয়া, আপনারা কোথায় আছেন?”
“চান্দিনার কাছে, তুমি কি আজ বাসায় না?”
“হ্যাঁ, ভাইয়া। শুক্রবার কোথায় আর যাবো।”
“গুড, বাসায়ই থাকবা।”

আহনাফ ফোন রাখলে সারাহ্ বলল,
“হঠাৎ ঢাকায় কেন যাচ্ছি আমরা?”
“পড়ে বলবো।”

খুব একটা কষ্ট হয় না ওদের ঢাকায় পৌঁছাতে। মতিঝিল সারাহ্-র বাসায় এসে আহনাফ নার্গিস পারভিনের সাথে কথা বলতে যায়। জাহাঙ্গীর সাহেব বাসায় নেই। দুইবোন নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় ব্যস্ত।

নার্গিস পারভিন রান্নাঘরে কাজ করছেন। আহনাফ গিয়ে দরজায় নক করে ডেকে বলল,
“মা, কথা আছে একটু।”

উনি তো চমকে উঠেন। জামাই কিনা শেষে রান্নাঘরে এসে উনাকে ডাকছে।

“আসছি।”

নার্গিস পারভিন চুলা নিভিয়ে ড্রইংরুমে গেল। আহনাফ সোফায় বসেছে, উনিও বসেন। আহনাফ সরাসরি প্রশ্ন করে,
“সারাহ্-কে কেউ কেন কি°ড°ন্যাপ করতে চায়? কি জানেন আপনি?”

নার্গিস পারভিন চমকে উঠেন। উনার মেয়েকে কেউ অ°প°হরণ করতে চায়, এ ধরনের কথা শুনে হতবাক হন।

“জামিল আমাকে বলেছে কারণ আপনি জানেন, কি জানেন আপনি?”

নার্গিস পারভিন বুঝতে পেরেছেন কিছুই আর লুকানোর সময় নেই। পুরোনো ইতিহাসে টা°ন যেহেতু পড়েছে, তাই ইতিহাসের ইতি টা°নতেই হবে। আজ যদি উনি চুপ থাকেন তবে হয়তো উনার মেয়েকে হারাবেন।

আহনাফ নিচুস্বরে বলল,
“ঐশী প্রেগন্যান্ট মা, ও কিন্তু একা হারাবে না।”

নার্গিস পারভিন আরো চমকে উঠেন। খুশির সংবাদ শুনেও হাসবেন নাকি কাঁদবেন বুঝতে পারেন না। শান্তভাবে জবাব দেয়,
“সবটাই বলবো, কিন্তু সমাধান আমার কাছে নেই।”
“আপনি শুধু বলুন মা।”

অসহায় কন্ঠের অনুরোধ আহনাফের। তাহসিনার মতো আরো একটা প্রাণ ঝ°রবে, ওর ভালোবাসা টুপটুপ করে ঝ°রে পড়বে।

জাহাঙ্গীর সাহেব বাসায় আসলেন। আহনাফকে দেখে ওর সাথে কোলাকুলি করেন। নার্গিস পারভিন এখন আর কথাটা বলতে পারে না।
______________________________________

সন্ধ্যায় ইমতিয়াজ আবারো গোডাউনে আসে। এখন সঙ্গে মৃত্তিকাও এসেছে। শরীফ এখানে নেই, তবে তার দুজন লোক এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ইমতিয়াজ ওদেরকে বাইরে যেতে ইশারা করে।

সারাদিন পানি না খেয়ে দুলালের গলা ঠনঠন করছে। ঢোক গিলে বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে, কিন্তু তার চোখেমুখে অসহায়ত্ব।

মৃত্তিকা একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। ইমতিয়াজ তার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে বোতল খুলে পানি পান করে বলল,
“পানি খাবে?”
“হ্যাঁ।”
মাথা নেড়ে মলিন সুরে বলল দুলাল।

ইমতিয়াজ বোতলের পানি তার সামনে ঢালতে থাকে। জিভ বের করেও পানি মুখে নিতে পারে না দুলাল। ইমতিয়াজের এমনরূপ মৃত্তিকা আগে দেখেনি। এতোটা ভ°য়ং°করভাবে কাউকে কষ্ট দিচ্ছে সে।

পুরো বোতলের পানি ঠেলে ইমতিয়াজ বলে,
“একটুও ভিতরে যায়নি। আরেক বোতল আছে।”

আরেকটা বোতল এনে একটু দূরে রেখে বলল,
“একটা একটা করে কথা বলবে আর বোতলটা এগুবে। (একটু থেমে) শুরু করো।”

দুলাল মৃত্তিকার দিকে তাকালো। মৃত্তিকা মুখ ফিরিয়ে নেয়। এসব মানুষের কষ্ট প্রাপ্য। কর্মের ফল এগুলো। বিয়ের দিন একটা মেয়ের স্বপ্ন ধ্বং°স করার শা°স্তি এটা, স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে থাকতে চাওয়া মেয়েটার সুখকে শেষ করার শা°স্তি এটা, একটা মেয়ের থেকে তার প্রাণপ্রিয় মাকে কে°ড়ে নেয়ার শা°স্তি এটা।

“মুখ খুলবে না, তবে এটাও ফেলে দিই।”

ইমতিয়াজ বোতলটা ধরতেই দুলাল বলে,
“বলছি আমি।”
“বলো।”

ইমতিয়াজ দুলালের মুখোমুখি একটু দূরে বোতলটার কাছে বসে পড়ে। দুলাল আড়চোখে মৃত্তিকার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ওকে যেতে বলো।”

ইমতিয়াজ বোতলটা হাতে নিয়ে বলে,
“বলো, আমার এতো সময় নেই।”

দুলাল আর কোনো উপায় না পেয়ে বলা শুরু করে। মৃত্তিকাও মোবাইলের ভিডিও চালু করে।

“খু°নের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। এমনকি শাফিনও ছিল। রোড এ°ক্সি°ডেন্ট ছিল না ওটা, আলাদাভাবে খু°ন করে এ°ক্সি°ডেন্টের নাটক বানানো হয়েছে।”

মৃত্তিকা একহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। আলাদাভাবে খু°ন হলে কতই না কষ্ট পেয়েছে ওরা। ইমতিয়াজ ঢোক গিলে তাকিয়ে থাকে।

“শাফিন আর আমার একটা বিজনেস আছে। অন্ধকার জগতের বিজনেস সেটা৷
“কি বিজনেস? ড্রা°গস?”

দুলাল ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল,
“তারসাথে আরেকটা ভালো বিজনেস হলো নারী। দামী বস্তুর চেয়েও হাজারগুণ দামী। (ঢোক গিলে) তাহসিনার সাথেও একই কাজ করতে চেয়েছিল শাফিন, তাই ওর বিয়েটা সে মানতে পারেনি। (একটু থামে) বিয়ের দিন তাহসিনাকে উঠিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ব°দ°নাম দিতে চেয়েছিল। তাহমিনা জেনে গিয়েছিল আমাদের প্ল্যান, তাই এটা নিয়ে ঝা°মেলা করেছিল সে।”

ইমতিয়াজের মনে পড়ে বিয়ের আগের দিন তাহমিনা চিন্তিত ছিল, অন্যদিনের চেয়ে চুপচাপ হয়ে ছিল। ইমতিয়াজ ভেবেছিল বোনের বিয়েই তার কারণ। সে চোখ বন্ধ করে।

দুলাল বলে চলছে,
“তাই দুইবোনকে একজায়গায় শেষ করে দিয়েছে। (একটু থেমে) যা জানতাম সবই বলেছি, এখন একটু পানি দাও।”

মৃত্তিকা ভিডিও সেভ করে ফোন ব্যাগে রাখে। ইমতিয়াজ বোতল খুলে তাকে পানি খাইয়ে দেয়, তবুও হাত খুলে না। পানি পান করে দুইবার কাশি দেয় দুলাল।

ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়িয়ে মৃত্তিকাকে বলে,
“চলো, যাই আমরা। বাকিটুকু সে কাল বলবে।”

দুজনে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে, দুলাল আবারো বলে,
“বাকিটুকু হলো তাহমিনাকে মা°রার আগে রে°প করা হয়েছিল। ইমতিয়াজ, ইমতিয়াজ করে চিৎ°কার করেছিল সে। তাহমিনাকে মা°রা লাগেনি, অতিরিক্ত র°ক্ত°ক্ষরণে সে এমনিতেই মা°রা গেছে।”

ইমতিয়াজ থমকে দাঁড়ায়। যেন একমুহূর্তে পুরো পৃথিবী স্থির হয়ে গেছে। মৃত্তিকা চেয়ে রইলো ইমতিয়াজের দিকে। মানুষটা কিভাবে সহ্য করবে এটা?

“রে°পটা কিন্তু শাফিনই করেছে।”

মৃত্তিকা পিছিয়ে গিয়ে একটা কার্টুন বক্সের সাথে ধা°ক্কা খায়। মামা তার খারাপ, তাই বলে এতোটা?

ইমতিয়াজ ফিরে গিয়ে দুলালের নাকে মুখে এলোপাতাড়ি ঘু°ষি দেয়। নাকমুখ দিয়ে সমানে র°ক্ত পড়তে থাকে তার। ইমতিয়াজের মুখে একটাই কথা,
“এসব মি°থ্যা, বল মি°থ্যা এসব।”

শরীফ এসে এ অবস্থা দেখে ইমতিয়াজকে ধরে সরিয়ে আনে। র°ক্তা°ক্ত মুখ নিয়ে দুলাল বলে,
“সবটাই সত্য।”

ইমতিয়াজ শান্ত হয়ে গেছে। তাহমিনা ওকে ডেকেছিল, প্রাণপণে ডেকেছিল অথচ সে সারা দেয়নি।

“মিনার মৃ°ত্যু আমার জন্য হয়েছে।”
আপনমনে বিড়বিড় করে ইমতিয়াজ। তারপর দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সোজা বসে পড়ে।

শরীফ ধরার আগেই মৃত্তিকা দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরে ফেলে।
“নিজেকে ব্লেইম করবেন না।”
“আমি দোষী, আমাকে মে°রে ফেলো মৃত্তিকা। আমার সন্তান আমাকে ডেকেছে, আমার মিনা আমাকে ডেকেছে, আমি যাইনি তাদের কাছে।”

সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছে ইমতিয়াজ। মৃত্তিকা ওর মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে। এমন সত্য সহ্য করা কার পক্ষে সম্ভব? মৃত্তিকার দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে।

ইমতিয়াজ মৃত্তিকাকে সরিয়ে উঠে বাইরে চলে আসে। মৃত্তিকা পিছুপিছু আসলে বলল,
“এসো না তুমি, এই কাপুরুষের কাছে এসো না। যে তার স্ত্রী-সন্তানকে রক্ষা করতে পারে না, তার কাছে এসো না।”
একপ্রকার দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলো মৃত্তিকাকে।
______________________________________

“আমার এক ফ্রেন্ড ছিল, রিপা। দেখা হয়েছে বহু আগে। মূলত এসব ঘটনা ওর জীবন থেকে শুরু হয়েছে আর শেষটা হয়েছে কলেজে।”

নার্গিস পারভিন, জাহাঙ্গীর সাহেব আর আহনাফ তিনজনে ছাদে এসেছে কথা বলতে। মূলত আহনাফ সারাহ্-কে কোনো চিন্তায় এখন ফেলতে চায় না বলেই এখানে এনেছে উনাদের। একটু আগের কথাটা নার্গিস পারভিনই বলেছেন।

“কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে অনার্স করেছি আমি। রিপাও ওখানে পড়েছে। রিপার গ্রামের বাড়ি ছিল খুলনায়, কিন্তু পড়াশুনা কুমিল্লায়। (একটু থামে) একসময় ওর পরিবার কুমিল্লা শিফট হয়, ওর ভাই এক চরিত্র°হীন লোক ছিল।”

আড়চোখে জাহাঙ্গীর সাহেবের দিকে তাকায়। নিচুস্বরে বলেন,
“আমার অন্য দুই ফ্রেন্ড শুধু তার খারাপ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রাণ হারায়। কিন্তু বিষয়টা তখন খু°নের মতো লাগেনি, বরং আ°ত্ম°হ°ত্যা লেগেছে। তার প্রায় দশবছর পর রিপা আমাকে জানায় এসব খু°ন। ও নিজে তার ভাইয়ের থেকে গোপনে শুনেছি আর ওর আসল নাম নাকি রিপা ছিলই না, রাহা সুলতানা ছিল ওর নাম।”

নার্গিস পারভিন দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। মাথা নেড়ে বলেন,
“দুনিয়া গোল রিপা বারবার আমার আর রোমির সাথে দেখা করতো, কয়েকটা প্রমাণও দিয়েছিল রোমিকে। এই যেমন কিছু সন্দেহজনক ফটোগ্রাফ আর ভিডিও, যদিও আমি তা দেখিনি। শেষবার যখন সে ঢাকায় আসে তখন আমাকে বলেছিল ওরা আমাদের কথা জানতে পারলে খারাপ হবে। সাবধানে থাকতে। আমার মনে হয় সারাহ্-র উপর এরই প্রভাব।”

জাহাঙ্গীর সাহেব রেগে গিয়ে বলেন,
“এতোদিন আমাকে জানাও নি কেন?”

আহনাফ শান্তসুরে বলে,
“মা, আপনি হয়তো কোথাও ভুল। এর সাথে সারাহ্-র কি সংযোগ আর আমার কি সংযোগ?”
“সারাহ্ আমাকে একটা কথা জানিয়েছিল একবার, ও এয়ারপোর্টে যা যা শুনেছে তা নিয়ে। তখনও আমার এটাই মনে হয়েছিল।”

জাহাঙ্গীর সাহেবের কপাল কুঁচকে আসলো। বললেন,
“এটা মনে হওয়ার কোনো বিশেষ কারণ?”
“রিপার ভাই হয়তো জানতো রিপা আমাদের সাথে দেখা করে।”

আহনাফ মাথা নেড়ে না বোঝায়। এসব বিষয় আর সারাহ্-র বিষয়টা ওর আলাদা লাগছে। আবারো জিজ্ঞাসা করে,
“জামিলের সাথে রিলেটেড কোনো ঘটনা আছে?”

নার্গিস পারভিন একটু ভেবে বলেন,
“জামিল নামের কাউকে আমি চিনি না, তবে রিপার ভাইয়ের নাম শাফিন ছিল।”
“শাফিন?”
“হ্যাঁ।”

আহনাফ চমকে উঠে। রিপা, শাফিন নামদুটোই তার চেনা। এরা তাহসিনার খালা আর মামা নয়তো? তবে তো তানজিমের কথাই ঠিক, সবকিছুই পরিকল্পিত। তার অর্থ তানজিম আরো অনেক কিছু জানে।

চলবে…..

(রহস্য আরো বাকি আছে, সবেমাত্র জালের দুইটা সুতা কে°টেছে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here