#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
ঊনচত্বারিংশ পর্ব (৩৯ পর্ব)
এক দুই তিন করে পনেরো দিন পার হয়৷ দুলাল ফেরদৌসী হ°ত্যা মাম°লা°র চূড়ান্ত রায় আজ। প্রত্যেকটা টিভি চ্যালেনে লাইভ হচ্ছে। কি হবে, কি হবে করছে শুধু।
নার্গিস পারভিন খুব একটা টিভি দেখেন না। জাহাঙ্গীর সাহেব খবর দেখার সময় নিউজটা চোখে পড়ে তার৷ বিশেষভাবে আটকানোর কারণ না থাকলেও শাফিনের চেহারা দেখে থমকে যায় নার্গিস পারভিন। এ চেহারা সে ভুলবে না। ভ°য়ং°কর দ°স্যুর চেহারা। চোখেমুখে অদ্ভুত এক বিষ্ময় চলে এসেছে নার্গিস পারভিনের।
“কি হয়েছে, নার্গিস?”
জাহাঙ্গীর সাহেবের কথায় চমকে উঠে নার্গিস পারভিন বলেন,
“কিছু না।”
উনি উঠে তাড়াহুড়ো করে সামিহার রুমে চলে যায়। সামিহা বই পড়ায় ব্যস্ত ছিল। মাকে আসতে দেখে বলল,
“আম্মু?”
নার্গিস পারভিন থম মে°রে বসে রইলেন। শাফিন কি এতো সহজে মা°রা যাবে। যদি যায় তবে তো আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু যদি না যায়? তবে তো সারাহ্-র ঘোর বিপদ।
সামিহা মায়ের পাশে বসে বলল,
“আম্মু, কি চিন্তা করছো তুমি?”
“কিছু না, তুমি তোমার কাজ করো।”
সামিহা বিষয়টা নিয়ে আর ঘাটাঘাটি করলো না। সে চুপচাপ নিজের পড়া শুরু করলো। সে এখনো জানে না তানজিমের মামা খু°নের মামলায় গ্রে°ফ°তার হয়েছে।
অন্যদিকে আহনাফ ফোন ঘেটে যাচ্ছে কোথাও থেকে একটা সংবাদ আসুক শাফিন মা°রা গেছে বা তার মৃ°ত্যু°দন্ড দেয়া হয়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো পজিটিভ বা নেগেটিভ সংবাদ আসেনি।
কলরব আদালতে আছে। সেও জানতে চাচ্ছে তার বাবার খু°নির কি শাস্তি হবে। রি°মা°ন্ডে শাফিন সবকিছু স্বীকার করে নেয়ায় পুলিশ এসব নিয়ে আর তেমন কোনো তদন্ত করে না। যদিও উপরতলার হস্তক্ষেপ থাকায় তদন্ত হতোই না।
ইমতিয়াজ অফিসে আছে। সেখান থেকেই শাফিনের মৃ°ত্যু°দন্ডের খবর শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। মৃত্তিকারও একই অবস্থা। সবার একই দোয়া শাফিন যেন জীবিত বের না হয়।
শুধু একজন ভিন্ন রকম একটা দোয়া করছে। তার দোয়া,
“যে করেই হোক শাফিন সুস্থভাবে বের হয়ে আসুক।”
এ মানুষটি মমতাজ বেগম। তার ভাই কি জঘন্য অপরাধ করেছে তা মানতে সে নারাজ। তার ভাই ভালো থাকুক এটাই চান উনি।
সংখ্যাগরিষ্ঠের দোয়া কবুল হয়। শাফিনের ফাঁ°সি°র রায় হয়ে যায়। একাধিক মানুষ একত্রে বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ।”
______________________________________
ইফতারের পর ইমতিয়াজ মিউকোকে খাবার খাওয়াচ্ছে। মৃত্তিকা এসে বিছানায় বসে বলল,
“শাফিন যদি তবুও ছাড়া পায়?”
“ওর লা°শ নিজ চোখে না দেখা পর্যন্ত ওকে আমি একবিন্দুও বিশ্বাস করি না। ভ°য়ং°কর এক অভিনেতা সে, নিখুঁত অভিনয়।”
মৃত্তিকা মাথা দুলিয়ে বলে,
“তা বুঝলাম, কিন্তু তাকে কে মা°রার চেষ্টা করেছিল?”
“তোমার বাবা, আর কে?”
ইমতিয়াজ স্বাভাবিকভাবে কথাটা বললে মৃত্তিকা চট করে বলে,
“উনি না।”
মৃত্তিকার কথায় ইমতিয়াজ তাকায় ওর দিকে। মৃত্তিকা মাথা নেড়ে বুঝায় সে ঠিক বলছে। ইমতিয়াজ ফ্লোরে বসে আছে, মৃত্তিকা বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে থেকে ওর দিকে ঝুঁকে বলে,
“উনি না, অন্যকেউ?”
ইমতিয়াজ ওর কাছে এসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বলল,
“সন্দেহ আছে কারো প্রতি?”
মৃত্তিকা ঠোঁট উলটে একটু ভেবে বলল,
“দুলাল হতে পারে, আবার অন্যকেউও হতে পারে। যাদেরকে আমরা চিনি না।”
“হতে পারে।”
কথা শেষে মৃত্তিকার মুখে হালকা ফুঁ দেয় ইমতিয়াজ। মৃত্তিকা চমকে উঠে সরে যায়। ইমতিয়াজ হেসে উঠে। মেয়েটা এখনো প্রচুর সংকোচে আছে, লজ্জা পায় বারে বারে।
কিছুক্ষণ পর মৃত্তিকা বলে,
“ইদের পর আপনি অস্ট্রেলিয়া যাবেন?”
“যাবো না।”
“কেন? কেন?”
ইমতিয়াজ উত্তর না দিয়ে মিউকোকে আদর করতে থাকে। মৃত্তিকা এসে ইমতিয়াজের পাশে বসে মিউকোকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বলে,
“যা ভাগ, সারাদিন শুধু বাবার কোল দখল করে বসে থাকা। বাবার কাছে মাম না আসলে ভাইবোন কপালে জুটবে না, ভাগ এখন।”
ইমতিয়াজ মুখ টিপে হাসছে। মৃত্তিকা ওর দিকে তাকিয়ে জিভে কা°ম°ড় দেয়। ইমতিয়াজ ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাছে এনে বলে,
“বাবার কাছে মাম চলে এসেছে।”
মৃত্তিকা ওর কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“অস্ট্রেলিয়া যাবেন না কেন? ট্রেনিং নিতে হবে না?”
“অস্ট্রেলিয়া গেলে মিউকোর ভাইবোন কিভাবে আসবে?”
মৃত্তিকা মাথা তুলে ওর দিকে তাকায়। ইমতিয়াজ অন্যদিকে তাকিয়ে হাসছে। মৃত্তিকা ওর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
“ফাজলামো না, সিরিয়াস।”
ইমতিয়াজ এখন বেশ গম্ভীর চেহারা করে বলল,
“শাফিন যতদিন বেঁচে আছে, ততদিন আমি তোমাকে একা রাখতে পারবো না।”
মৃত্তিকা হেসে দুহাতে ইমতিয়াজকে জড়িয়ে ধরে। মিউকো এসে আবারো ইমতিয়াজের গা ঘেষে শুয়ে পড়ে। ইমতিয়াজ একহাতে মৃত্তিকাকে জড়িয়ে ধরে, আরেকহাতে মিউকোকে আদর করে দেয়। মৃত্তিকা বেশ আরাম করে আধশোয়া হয়ে থাকতে থাকতে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। ইমতিয়াজ ওকে নিজের কোলে শুইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মৃত্তিকার চেহারার দিকে তাকায় সে। ছোটবেলা থেকে যু°দ্ধ করে বড় হওয়া মেয়েটার বাহিরটা শক্ত হলেও ভেতরে একদম ছোট বাচ্চার মতো।
“যতন করে সাজিয়ে রাখতে ইচ্ছা করে, পুতুল আমার।”
মৃত্তিকা জেগে থাকলে এ কথা কখনোই ইমতিয়াজ বলতে পারতো না। তবে এখন বলছে। মৃত্তিকার আড়ালে প্রকাশ করছে নিজের অনুভূতি।
______________________________________
দিন আগায়, এক সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। আজ রাতেই শাফিনের ফাঁ°সি হবে। তাই আজ পরিবারের মানুষজন তার সাথে দেখা করতে আসতে পারবে। দেলোয়ারা আজ প্রথমবারের মতো শাফিনের সাথে দেখা করতে এসেছে। সুরভিও সাথে এসেছে।
সুরভিকে দেখে এগিয়ে আসে শাফিন। সুরভি বলে,
“পরশুদিন আমার ডেলিভারির ডেইট দিয়েছে বাবা। তাহমিনা থাকতে পারতো আমার সাথে, তাহসিনাও থাকতো। রিপা আন্টি থাকতো, কিন্তু তুমি তা হতে দাওনি।”
সুরভির চোখ বেয়ে পানি পড়ে। ডানহাতের উলটো পিঠ দিয়ে মুছে নাক টে°নে বলল,
“আমার বাবুটাকে তার বাবা দেখবে আর শুধুই খরচ দিবে। কোলে নিবে না। (একটু থামে) তোমার কোলে প্রথম তুলে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি তা হতে দিলে না।”
সুরভি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। শাফিন অনুভূতিহীন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এসবে তার আদৌ কি কিছু আসে যায়?
“আমার সংসার আর স্বপ্নগুলো ধ্বং°স করেছো তুমি বাবা।”
সুরভি কথা বললেও দেলোয়ারা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে কোনো ভাষা নেই। এক নিরব, নির্জনতা ভর করেছে তার উপর। এতোবছর যার সাথে সংসার করেছে সে একটা অ°মানুষ। দেলোয়ারা বিশ্বাস করতে পারছে না। নিজের স্বামীকে অনেক ভালোবাসতেন উনি, যা এখন কেবলই ঘৃ°ণা।
“তুমি কিছু বলবে না, দেলোয়ারা?”
শাফিনের প্রশ্নে ঘৃ°ণায় চোখ সরায় দেলোয়ারা। সুরভির থেকে সে সবটাই জেনেছে। ঠিক কেমন আচরণ তাহমিনার সাথে করেছে তাও জানে। যদিও এখনো পুরোটা সে বিশ্বাস করেনি।
নিচুস্বরে একটা কথাই দেলোয়ারা বলে,
“আপনার ম°রা মুখটাও আমি দেখতে চাই না।”
______________________________________
সারাহ্ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। আহনাফের সাথে সকালেই ঢাকায় এসেছে সে। আব্বাস সাহেবও এসেছেন। মূলত জাহাঙ্গীর সাহেবের দাওয়াত রক্ষায় এসেছে সবাই।
আহনাফ এসে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে শার্টের কলার ঠিক করছে। বোঝা যাচ্ছে সে বাইরে যাবে। সারাহ্ আয়নার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বলল,
“কোথায় যাবেন?
“যাবো কোথাও।”
সারাহ্ ওর দিকে ফিরে বলল,
“এখন কেন, মাত্রই তো ইফতার করলেন।”
আহনাফ হেসে ওর দুগালে চুম্বন করে বলে,
“সমস্যা নাই, চলে আসবো।”
“কখন আসবেন?”
“সেহরির আগেই।”
সারাহ্ কপাল কুঁচকায়।
“সেহরির আগে মানে সারারাত বাইরে থাকবেন?”
আহনাফ হেসে পারফিউম দিয়ে বলল,
“চিন্তা করো না, মেয়ে নিয়ে থাকবো না।”
সারাহ্ ওর বুকে একটা হালকা ধা°ক্কা দেয়, আবার নিজেই শার্ট খা°ম°চে কাছে নিয়ে আসে। বলে,
“না গেলে হয় না?”
আহনাফ মুচকি হেসে হাঁটু গেড়ে বসে সারাহ্-র পেটে হাত রেখে বলল,
“বাবা আমার, আম্মুকে সামলে রেখো। তোমার আম্মু কিন্তু অনেক ভীতু। সে বাবাকে মিস করে সারাদিন। গল্প করো আম্মুর সাথে।”
সারাহ্ ওর কান্ডকারখানা দেখে হাসে। আহনাফ মাথা উঠিয়ে সারাহ্-কে দেখে বলল,
“তোমার আম্মুর লজ্জাও কমে যাচ্ছে, দিনদিন বে°হা°য়া হচ্ছে আর আমাকেও তাই বানিয়ে দিলো।”
“ইশ, লজ্জাশীল ব্যক্তি আমার।”
আহনাফ ওর পেটে চুম্বন করে, সারাহ্ লাফিয়ে উঠে বলল,
“সরুন, কি করছেন?”
আহনাফ উঠে দাঁড়িয়ে হেসে বেরিয়ে যায়। সারাহ্ আয়নার দিকে ফিরে নিজের পেটে হাত রেখে বলে,
“বাবাটা বেশি দুষ্ট হয়েছে, একদম লাগাম ছাড়া।”
______________________________________
আহনাফ জেলে এসেছে। শাফিনের সাথে দেখা করাই উদ্দেশ্য। সুরভি আর দেলোয়ারা বের হলেই আহনাফ দেখা করতে যায়। ওকে দেখে শাফিন বাঁকা হেসে বলে,
“সারাহ্ ভালো আছে?”
উত্তর না দিয়ে আহনাফ পালটা প্রশ্ন করে,
“অপরূপা কে? আর জামিলের সাথে আপনার কি সম্পর্ক?”
শাফিনে হেসে বলল,
“অপরূপা মানে যে প্রচুর সুন্দরী, রূপবতী। একদম রূপকথার গল্পের রাজকুমারীর মতো। (নিচুস্বরে) তাহসিনার মতো।”
আহনাফ বুঝতে পারে অপরূপাকে শাফিন চেনে আর এখন শাফিনের মূল উদ্দেশ্য ওকে রাগানো। আহনাফ শান্ত মেজাজে বলল,
“আর জামিল?”
“বন্ধু, তোমার আর সারাহ্-র বিয়ের প্ল্যানটা ওই গাধাই দিয়েছিল। এতে সারাহ্ হাতে না থেকে হাতছাড়া হয়ে গেছে।”
আহনাফ চোখ বুলিয়ে শাফিনকে ভালো করে দেখে। তার মধ্যে মৃ°ত্যুর ভয় নেই, চিন্তা নেই। কেমন যেন অদ্ভুত এক চেহারা। আহনাফ আর কিছু না বলে বেরিয়ে যায়।
শাফিন পেছন থেকে চেঁ°চিয়ে উঠে বলে,
“সারাহ্ মানে তোমার আদরের ঐশীকে সামলে রেখো।”
আহনাফ পাত্তা না দিয়ে বাইরে চলে আসে।বাইরে তানজিম আর ইমতিয়াজের সাথে দেখা হয়। দুজনে একই উদ্দেশ্যে এসেছে। আহনাফ তানজিমকে বলে,
“তুমি ঠিক বলেছিলে বিয়েটা পরিকল্পিত। জামিল ফুপা এক সাথে জড়িত আছে।”
তানজিম মাথা নেড়ে বলল,
“হুম, আমার সন্দেহ হয়েছিল। তবে এখনো আমি কারণটা নিয়ে কনফিউজড।”
তানজিম বি°ভ্রা°ন্ত হলেও আহনাফ মোটেও নয়। নার্গিস পারভিনকে দুর্বল করার জন্যই সারাহ্-কে ব্যবহার করতে চেয়েছিল ওরা। কিন্তু এখন ওরা ব্যর্থ।
“ভাইয়া, মিউকোপু কোথায়?”
তানজিমের কথায় ইমতিয়াজ আশেপাশে তাকায়। মৃত্তিকা ওর পাশেই ছিল কিন্তু এখন নেই। ইমতিয়াজ অন্য দিকে দেখতে থাকে। অবশেষে মৃত্তিকাকে ভিতরে যেতে দেখে ইমতিয়াজও যায়।
শাফিনের কাছে গিয়ে মৃত্তিকা বলে,
“মিজানের পা°ল্লার কথা ভেবেও তো তোমার শুধরে যাওয়া উচিত ছিল। কিভাবে দাঁড়াবে আল্লাহ্-র সামনে? কবরের আ°যা°ব কিভাবে সহ্য করবে?”
কথা বলতে বলতে মৃত্তিকার কন্ঠ কেঁপে উঠছে।
হিসাবের খাতা নিয়ে একবার বসে দেখো আমাদের পা°পের বোঝা ঠিক কতটা। যেন মনে হয় সমস্তটা জীবন পা°প করেই কাটিয়ে দিয়েছি। গুনাহ করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছি যে এখন গুনাহ করলেও তা নিয়ে ভাবনার সময় আমাদের নেই।
ইমতিয়াজ চলে আসায় শাফিন বলে,
“তোমার বউ স্বেচ্ছায় আমার কাছে এসেছে।”
মৃত্তিকা পিছনে তাকায়। ইমতিয়াজ ওর হাত ধরে শাফিনের দিকে তাকিয়ে মৃত্তিকাকে বলল,
“চলো।”
শাফিন হেসে বলল,
“দুলালের যে ভিডিওটা করেছিলে সেটা আদালতে দেখাও নি কেন?”
“সেটা আদালতের জন্য না, সেটা শুধুমাত্র তোমার জন্য।”
ইমতিয়াজ মৃত্তিকাকে নিয়ে বাইরে চলে আসে। প্রচুর মানুষের ভীড় এখানে। মৃত্তিকার হাত বেশ শক্ত করে ধরে হাঁটছে। মৃত্তিকা ঘাড় ঘুরিয়ে বারবার শাফিনের দিকে তাকাচ্ছে। শাফিনের আচরণ আর কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে সে তার বের হওয়ার সব বন্দোবস্ত করে ফেলেছে।
বাইরে এসে ইমতিয়াজ তানজিমকে বলল,
“মৃত্তিকাকে নিয়ে বাসায় যাও, তানজিম।”
“আর আপনি?”
“ওর ফাঁ°সির পর আসবো।”
“আমি আপনাকে ছাড়া যাবো না।”
ইমতিয়াজ আড়চোখে একবার তানজিমের দিকে তাকায়। তারপর বলে,
“মৃত্তিকা, যা বলছি করো। এখানের পরিস্থিতি যেকোনো সময় যা খুশি হতে পারে।”
“আপনি থাকলে আমিও থাকবো।”
“যাও।”
ইমতিয়াজ এবারে ধ°ম°ক দেয়৷ ধ°ম°কে কাজ হয়, মৃত্তিকা চলে যেতে রাজি হয়।
উবার কল করে মৃত্তিকা আর তানজিমকে বাসায় পাঠিয়ে দেয় ইমতিয়াজ। কিছুদূর গিয়েই মৃত্তিকা গাড়ি থেকে নেমে তানজিমকে বলে,
“ইমতিয়াজকে জানাবে না আমি নেমে গেছি, বাসায় যাও।”
“কিন্তু আপু..”
ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই মৃত্তিকা ধ°ম°ক দেয়,
“যা বলছি তাই, বাসায় যাও। বড়মণি আর খালু একা ওখানে।”
মৃত্তিকা হাঁটা শুরু করে। তানজিম ড্রাইভারকে বলে,
“ভাইয়া চলুন।”
গাড়ি চলতে শুরু করলে তানজিম ইমতিয়াজকে কল দেয়।
“ভাইয়া, আপু নেমে গেছে গাড়ি থেকে।”
“এই মেয়েটা? আচ্ছা, তুমি বাসায় যাও, আমি দেখছি।”
ইমতিয়াজ ফোন রেখে আহনাফকে বলল,
“একটু অপেক্ষা করো, আমি আসছি।”
ইমতিয়াজ মৃত্তিকাকে খুঁজতে যায়৷
এদিকে মৃত্তিকা ফেরার পথে কারাগারের সামনের সড়কে অপরূপাকে দেখে। কালো চাদর গায়ে জড়ানো মেয়েটাকে আলাদা করে চেনার কারণ এই চাদরটাই। এখন বেশ গরম পড়েছে, চাদর দেয়ার অবশ্যই বিশেষ কোনো কারণ আছে।
মৃত্তিকাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অপরূপা বলে,
“কি দেখো?”
“কিছু না।”
অপরূপা রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে বলল,
“চাদর দিয়েছি তাই দেখছো?”
“হুম।”
মৃত্তিকা জোরপূর্বক হাসে।
অপরূপা চাদর খুলে গুছিয়ে ডানহাতে ঝুলিয়ে নিয়ে বলে,
“মাঝেমাঝে নিজেকে লুকাতে হয়, আবার মাঝেমাঝে প্রকাশ্যে আনতে হয়।”
অপরূপা অন্যদিকে চলে যায়। মৃত্তিকা কয়েক মুহূর্ত ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আবারো নিজের পথে হাঁটে৷
ইমতিয়াজের কাছে এখন ধরা না দিয়ে শাফিনের সাথে দেখা করে। শাফিন ওকে দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল,
“কি ব্যাপার? আবার আসলে যে?”
মৃত্তিকা আশেপাশে তাকিয়ে তাড়াহুড়া করে বলে,
“তাহমিনার সাথে ওরকম আচরণ কেন করেছো? শুধুই কি সত্য জানার জন্য নাকি আরো কোনো কারণ আছে?”
শাফিন এগিয়ে এসে লোহার বেড়াজালে হাত রেখে বলল,
“তোমার মায়ের দুই ফ্রেন্ডের সাথেও এই আচরণ করেছিলাম, (ফিসফিসিয়ে বলে) তুমি গ°র্ভে থাকতে তোমার মায়ের সাথেও একই কাজ করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলাম।”
মৃত্তিকা রাগে গ°জ°গ°জ করতে করতে বলল,
“এখানে তাহমিনার সাথে কি সম্পর্ক? শুধু অন্তঃসত্ত্বা ছিল বলে?”
শাফিন মাথানিচু করে হালকা মাথা ঝাকিয়ে মুখে “চু, চু” মতো একটা আওয়াজ করে। তারপর হাসিহাসি মুখে বলে,
“অনেক কিছু এখনো তোমার জানা বাকি। যা দুলাল জানতোই না। বেচারা শুধু ব্যবসা বাঁচানোর জন্য আমার সাথে ছিল।”
মৃত্তিকা কপাল কুঁচকে চোখ ছোট করে। শাফিন বলে,
“নিজেকে সামলে রেখো, আর মনে রেখো যে শাফিনকে এতোবছরে কেউ শা°স্তি দিতে পারেনি তাকে সামান্য ফাঁ°সির দড়ি কিছুই করতে পারবে না।”
মৃত্তিকার মাথায় খু°ন চেপে বসে। লোহার ছোট ফাঁক দিয়ে ডানহাতের তিন আঙ্গুল ভিতরে ঢুকিয়ে শাফিনের ফতুয়া ধরে হেঁচকা টা°ন দেয়। হঠাৎ করে টা°ন পড়ায় শাফিনের মাথা লোহায় বা°রি খায়। পরপর দুবার টা°ন দিতেই দুজন মহিলা কন্সটেবল এসে মৃত্তিকাকে সরিয়ে নেয়।
শাফিনের কপালের মাঝ বরাবর কে°টে গেছে, র°ক্ত ঝরছে সেখান থেকে। মৃত্তিকা এখনো রাগে ফোঁ°সফোঁ°স করছে।
মৃত্তিকা জোর গলায় বলে,
“মনে রেখো শাফিন, সিংহী কিন্তু শি°কার করে সিংহ নয়।”
চলবে….
যারা গল্প পড়েন তারা আমার গ্রুপে জয়েন হতে পারেন। গ্রুপের লিংক-
https://m.facebook.com/groups/857071541835418/?ref=share&mibextid=NSMWBT