অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী সপ্তম পর্ব

0
254

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

সপ্তম পর্ব

ঘড়িতে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা, ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে সারাহ্। শা°স°ন°গাছায় কোনো এসি বাস পায়নি, তাই স্টেশন রোড বিআরটিসি কাউন্টারে চলে এসেছে সে। টিকেট কিনে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে লাগলো।

ফোন বের করে কল করলো বাবাকে।
“আসসালামু আলাইকুম, বাবা।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। গাড়িতে উঠছো?”
“না, বাবা। টিকেট কিনেছি।”
“আচ্ছা, গাড়িতে উঠে জানিও। আমি বাজারে আছি, পরে কথা বলবো।”
“আচ্ছা বাবা।”

জাহাঙ্গীর সাহেব ফোন রাখলেন। কাল মেয়েকে দেখতে আসবে সেসবের জন্য বাজার আর সবকিছু গোছানো উনার একার জন্য একটু কষ্টসাধ্যই বটে। তবুও নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন উনি।

সারাহ্ জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো। উঁচুনিচু রাস্তার অপরপাশের দোকানগুলোতে হঠাৎ করে দেখলো এক লোককে। চেনা লাগলো সারাহ্-র, কিন্তু ঠিক চিনতে পারলো না। ভালো করে দেখার জন্য ব্যাগটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল।

এরমধ্যে বাস চলে আসায় লোকটাকে আর দেখা হলো না সারাহ্-র। বাসে উঠে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে লোকটাকে আর দেখলো না সারাহ্, লোকটা নেই ওখানে। কপাল কুঁচকে মস্তিষ্কের মধ্যে আ°তি°পা°তি করে খুঁজতে লাগলো সে, যদি মনে পড়ে লোকটাকে কোথায় দেখেছে।

“এক্সকিউজ মি, আপনার ব্যাগটা একটু সরান।”

পাশে দাঁড়ানো লোকটার কথায় চমকে উঠে সারাহ্ দ্রুত ব্যাগটা সরিয়ে ফেলে। তাকিয়ে দেখে এই তো সেই লোকটা। এবারে মনে পড়ে সারাহ্-র। এই মানুষটাই তো তাকে দু°র্ঘ°ট°নার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল।

ইমতিয়াজ সিটে বসে ঘড়িতে সময় দেখলো। হঠাৎ সারাহ্-র দিকে চোখ পড়ায় দেখে সারাহ্ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ইমতিয়াজ কপাল কুঁ°চকে বলল,
“কিছু বলবেন?”
“আপনাকে আমি চিনি বোধহয়।”

ইমতিয়াজ একটু হাসলো। বলল,
“কি বলছেন আপনি এসব?”
“আপনি একবার রাস্তায় আমাকে সাক্ষাৎ মৃ°ত্যু থেকে বাঁচিয়েছিলেন। মনে আছে, ঢাবিতে? শ°হী°দ মিনারের সামনে?”

ইমতিয়াজ একটু অন্যমনস্ক হয়ে বলে,
“যদি এভাবে তাকেও বাঁচাতে পারতাম।”
“কাকে?”

ইমতিয়াজ চুপ করে অন্যদিকে তাকালো। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল,
“আমার স্ত্রীকে।”

সারাহ্ বুঝতে পারছে ইমতিয়াজের স্ত্রী হয়তো এই পৃথিবীতে নেই আর থাকলেও হয়তো অসুস্থ হয়ে আছে। বিষয়টা নিয়ে জানার আগ্রহ থাকলেও কিছু জিজ্ঞাসা করে না সে।

ইমতিয়াজ সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। সারাহ্ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“আপনার নামটা জানা হয়নি।”

ইমতিয়াজ চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
“সৈয়দ ইমতিয়াজ সৌরভ।”
“আমি সারাহ্ তাসনিম ঐশী।”

ইমতিয়াজ নিজে থেকেই বলল,
“কুমিল্লায় থাকেন?”
“হ্যাঁ, ভিক্টোরিয়া কলেজের কেমিস্ট্রি টিচার।”

ইমতিয়াজ ঠোঁট উলটে মাথা নাড়ায়। সারাহ্ বলল,
“আপনার বাসা কুমিল্লায় নাকি ঢাকায়?”
“ঢাকায় থাকি, এখানে গ্রামে এসেছিলাম।”
“ওহ, আন্টি-আংকেল গ্রামে থাকে?”
“আমার বাবা-মা কেউ নেই।”

ইমতিয়াজের কথায় থমকে যায় সারাহ্। এভাবে প্রশ্নটা করা যে ওর উচিত হয়নি তা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। একটু অনুতপ্ততা নিয়ে বলল,
“সরি, আসলে..”

ওর কথার মাঝেই ইমতিয়াজ বলে,
“ইটস ওকে।”

ইমতিয়াজ আবারো চুপ করে। গ্রামে চাচার বাড়িতে গিয়েছিল সে। চাচা অসুস্থ, চাচী কল করে যেতে বলায় যেতেই হয়েছে ওকে। ওর বাবার মৃ°ত্যুর পর এই চাচাই ওর আর দেখাশোনা করেনি। ১৭ বছর, অনেক বেশি, নিজের পথ নিজে দেখ বলে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে। অর্থ না হোক, সাহস দেয়ার জন্যও কাউকে প্রয়োজন হয়। ইমতিয়াজ এমন কাউকেও পায়নি। অথচ আজ চাচার কথা শুনে না এসে পারেনি সে।
______________________________________

ব্যাগপত্র গোছাচ্ছে আফরোজা। আহনাফ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ওকে দেখছে। আফরোজা ওকে দেখে বলল,
“কিছু বলবি?”
“না, কিছু বললেও তো তুমি শুনবে না।”

আফরোজা ধুম করে ট্রলি ব্যাগটা বন্ধ করে বলল,
“কি শুনবো বল তো? বিয়ে করবি না, তাইতো?”

আহনাফ চুপ করে রইলো। আফরোজা নরম কন্ঠে বলল,
“আমি জানি তুই তাহসিনাকে ভুলতে পারিস নি, সহজে ভুলতে পারবিও না। কিন্তু একা কেউ বাঁচতে পারে না আহনাফ। সাথে কাউকে তো চাই।”

আহনাফ মাথানিচু করে চলে গেল। আফরোজার কোনো কথার জবাব দেয়ার ইচ্ছা ওর নেই।

রুমে এসে বিছানায় বসে পড়লো। এ কেমন পরীক্ষায় পড়লো সে? অন্য একজন নারীর বিচরণ হবে ওর জীবনে। কল্পনায় আনতেও কষ্ট হচ্ছে তার।
______________________________________

ইমতিয়াজ ঘুমিয়ে পড়েছিল, সারাহ্-র ডাকে ঘুম ভা°ঙলো। চমকে উঠে বলল,
“মিনা।”

সারাহ্-ও একটু ভ°য় পেয়ে গেল। ইমতিয়াজ ওর দিকে তাকিয়ে থেমে গেল, মিনা যে আসেনি।

সারাহ্ নিচুস্বরে বলল,
“টিকেট চেক করতে এসেছিল, আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন।”
“ওহ।”

ইমতিয়াজ কন্ডাক্টরকে ডেকে টিকেট দেখালো। সারাহ্ বলে,
“মিনা কি আপনার স্ত্রীর নাম?”

ইমতিয়াজ নিজের হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, তাহমিনা রহমান।”
“ওহ, কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করতে পারি?”
“জি, বলুন।”
“কি হয়েছিল উনার?”

ইমতিয়াজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“রোড এ°ক্সি°ডে°ন্ট, মাঝ সড়কে আমার অনাগত সন্তানকে নিয়ে তার মা চলে গেল। একবার হাসপাতালে নেয়ার সময়টুকুও দেয়নি।”

সারাহ্ চেয়ে রইলো ইমতিয়াজের দিকে। বাইরের আলোকে দেখলো তার চোখদুটো চিকচিক করছে, নিশ্চয়ই পানি জমেছে। সারাহ্ বলল,
“সরি।”
“ব্যাপার না।”

ইমতিয়াজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“ঢাকায় কি কোনো বিশেষ কাজে যাচ্ছেন? (একটু থেমে) মানে রাত করে যাচ্ছেন তাই জিজ্ঞাসা করলাম।”
“আসলে ক্লাস ছিলো বলে সকালে যাওয়া হয়নি।”
“ওহ।”

ইমতিয়াজের কল আসায় ফোন বের করে দ্রুত রিসিভ করে,
“হ্যাঁ, তানজিম।”
“ভাইয়া, আম্মু কেমন যেন করছে? আপুদেরকে খুঁজছে আর প্রচন্ড কান্নাকাটি করছে।”

ইমতিয়াজ ভ°য় পেয়ে যায়।
“কি বলছো তুমি? এখন কোথায় আছে?”
“বাসায়ই আছে, কিন্তু আমরা কেউ সামলাতে পারছি না। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন।”
“আমি তো বাসে, কুমিল্লা থেকে আসছি। (একটু থেমে) আমি ডক্টর আরিফাকে জানাচ্ছি।”

ইমতিয়াজ কল কে°টে আরিফার নাম্বারে ডায়াল করে। কয়েকবার কল হলেও রিসিভ হয় না। চিন্তায় পড়ে যায় ইমতিয়াজ। গত দুইবছর ধরে আরিফার কাছের চিকিৎসারত আছেন মমতাজ বেগম। অবশেষে আরিফা রিসিভ করে আর ইমতিয়াজ উনাকে পুরো ঘটনা বুঝিয়ে বলে উনাকে তানজিমদের বাসায় যাওয়ার অনুরোধ করে।
______________________________________

পরদিন,
ভোর ভোর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আহনাফ ও তার পরিবারের সবাই। পরিবার বলতে তো আব্বাস সাহেব, আফরোজা, জুহাইব আর জাবের। মতিঝিলের কাছে সারাহ্দের বর্তমান বাসা। ওরা আগে মতিঝিলে ওর চাচার বাসায় যাবে, সেখান বিকালে থেকে সারাহ্-র বাসায় যাবে।

এদিকে সারাহ্-র বাসায় চলছে মহা আয়োজন। সামিহা ঘর গুছিয়ে রেখে তানজিমকে কল করে,
“তানজিম, আজকে আসবি না?”

তানজিম কান্না করছিল, নাক টে°নে বলল,
“আম্মু অসুস্থ সামি, আমরা হাসপাতালে।”

আচমকা উ°ত্তে°জ°নায় সামিহার ঠোঁটদ্বয় ফাঁক হয়ে গেল। সারাহ্-র দিকে একবার তাকিয়ে বারান্দায় চলে গেল। মমতাজ বেগমের অসুস্থতার ব্যাপারে সে জানে, যদিও পুরো কারণ জানে না।

“কোন হাসপাতালে আছিস? আমি আসবো।”
“না, আপুর আজ বিয়ে আর তুই আসবি।”
“বিয়ে না, দেখতে আসবে। পছন্দ হলে বিয়ে হবে। বাবা সামলে নিবে, আমি আসবো, আসবোই।”

তানজিমের নিষেধ শুনতে রাজি নয় সামিহা। তানজিম ওকে ঠিকানা বলতে বাধ্য হলো। আটটার দিকে জাহাঙ্গীর সাহেবের অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে গেল সামিহা।

এনআইএমএইচের কাছে এসে তানজিমকে কল করে। তানজিম এসে ওকে নিয়ে উপরে যায়। চারতলায় মমতাজ বেগমের সেশন চলছে। বাইরে অপেক্ষারত আছে তানজিম, ইমতিয়াজ ও লুৎফর রহমান। সামিহা উনাদেরকে সালাম দিয়ে তানজিমের কাছেই বসে রইলো।

“আন্টির এ অবস্থা কেন হয়েছে তানজিম?”

তানজিম দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বলল,
“আপুদের কথা মনে করে কালকে অনেকক্ষণ চেঁচামেচি করেছে। তারপর হঠাৎ করেই জ্ঞান হারায়। (একটু থেমে) ডক্টর আরিফা বাসায় এসে মাকে দেখলেও সকালে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখানে নিয়ে আসা হয়। এখন সিনিয়র ডক্টর রিজভী উনার সেশন নিচ্ছে।”

সামিহা তানজিমের হাত ধরে বলল,
“চিন্তা করিস না সুস্থ হয়ে যাবে।”
“হুম।”
বলে তানজিম হালকা মাথা নাড়ালো।
______________________________________

দুপুরে আহনাফ কাকরাইল এসেছে। তাহসিনার কবরের কাছে কিছুক্ষণ কাটালো। তারপর তানজিমদের বাসায় গেল। বেল বাজাতেই ইমতিয়াজ এসে দরজা খুললো। মমতাজ বেগমকে নিয়ে কিছুক্ষণ আগেই বাসায় এসেছে ওরা।

আহনাফকে দেখে ইমতিয়াজ একটু অবাক হলো। বলল,
“আরে আহনাফ, কেমন আছো?”
“এইতো মোটামুটি আছি। আন্টি কেমন আছেন?”
“ভিতরে এসো।”

আহনাফ ভিতরে গেল। সোফায় বসতেই তানজিম আসলো।
“আহনাফ ভাইয়া, ঢাকায় হঠাৎ?”

ইমতিয়াজ ভিতরে চলে গেল। আহনাফ একটু ইতস্ততভাবে বলল,
“চাচার বাসায় এসেছি।”

বিয়ের কথাটা বলা হলো না আহনাফের। তানজিম জানলে হয়তো কষ্ট পাবে। ওর নিজেরও খারাপ লাগবে এতে। এমনিতেও উনাদের মানসিক অবস্থা ভালো নেই।

“আম্মু ভিতরে আছে, চলেন দেখা করবেন।”

মমতাজ বেগমের সাথে দেখা করলো, কথা হলো না। উনি শান্ত হয়ে গেছেন। এতোদিন পর উনার মনে হচ্ছে উনার মেয়েরা নেই, চলে গেছে। উনি বুঝতে পেরেছেন উনার ছোটবোন নেই, যে বোনের সাথে সুন্দর সময়গুলো কাটানো হয়েছিল সেই বোন। থেমে থেমে ঠোঁট কেঁপে উঠে উনার, কাঁদতে থাকেন। আবারো থামেন, কিছু ভাবেন। জীবন চলছে না উনার, যেন মৃ°ত্যু°র দিনক্ষণ গুণছেন।
______________________________________

বিকালের আগেই সারাহ্-কে সাজানো হলো। রোজ গোল্ড রঙের জামদানি শাড়ির সাথে স্বর্ণের ছোট ছোট গহনাগুলো বেশ ভালো মানিয়ে নিলো। মুখের হালকা মেকাপ আর চোখের গাঢ় কাজল যেকারো নজর কাড়তে বাধ্য হবে৷ হালকা গোলাপী রঙের হিজাব পড়ে নিলো সে।

সামিহা ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
“বাহ, কি সুন্দর লাগছে আমার আপুকে। এতোদিন এমন রা°ক্ষু°সির মতো লাগতো কেন?”
“কি?”

সারাহ্-র রাগ করা কথায় হেসে দিলো সামিহা। সারাহ্ আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে বলল,
“সকালে কোথায় গিয়েছিলি?”
“হাসপাতালে, তানজিমের মা অসুস্থ।”
“ওহ, কি হয়েছে আন্টির?”
“উনি মানসিকভাবে একটু অসুস্থ।”

সারাহ্ আয়না দিয়েই সামিহার চেহারার দিকে তাকালো। আশেপাশে এতো মানুষ আছে, অথচ একেকজনের একেক সমস্যা। না কেউ কারো সমস্যা বুঝে আর না কেউ কারো সমস্যার সমাধান করতে পারে।

সময় পেরিয়ে বিকাল সাড়ে চারটা বাজলো। আহনাফরা চলে এসেছে। ড্রইংরুমে কথা বলছেন সবাই। সারাহ্ রুমে বসে আ°ইঠা°ই করছে ওকে দেখার পর আহনাফের কি প্রতিক্রিয়া হয় তা দেখার জন্য।

অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ আসলো। সারাহ্কে নিয়ে ড্রইংরুমে গেল জাহাঙ্গীর সাহেব। আহনাফ ওকে দেখে আবারো মাথানিচু করলো, তেমন বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না।

সারাহ্ আড়চোখে তাকালো ওর দিকে। সাদা শার্ট, কালো ফর্মাল প্যান্ট, বামহাতের ঘড়ি আর শার্টের গোটানো হাতার কাছে থাকা চকচকে কালো তিল। সবকিছু মিলিয়ে এই সুদর্শন পুরুষকে মিস্টার পারফেক্ট লাগছে। সারাহ্ লাজুক হেসে মাথানিচু করলো।

আফরোজা সারাহ্-র সাথে এটাসেটা নিয়ে কথা বলল। আহনাফ বলল,
“আংকেল, কিছু মনে না করলে আমি উনার সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চাই।”
“হ্যাঁ, অবশ্যই। (সারাহ্কে বলল) সামিহার রুমে যাও।”

সারাহ্ একটু মাথা নাড়লো। সামিহার রুমে দুজনের কথা বলার ব্যবস্থা হলো। চেয়ার টেনে বসলো আহনাফ আর সারাহ্ বসলো খাটের একপাশে। সারাহ্-র বুকের ভিতর ডিপডিপ করতে লাগলো। কঠিন এক অনুভূতিতে আছে সে।

“আপনাকে আমার ছবি দেখানো হয়েছিল?”

আহনাফের সরাসরি প্রশ্নে সারাহ্ মাথানেড়ে বলল,
“জি।”
“আপনি আমাকে চিনতে পেরেছিলেন, তবে বলেননি কেন?”

সারাহ্ আহনাফের দিকে তাকালো। এ কেমন প্রশ্ন? চিনলেও কি বলবে সে? এইযে শুনছেন আপনার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা। তবে বাসায় না গিয়ে এখানেই দেখে ফেলুন। এসব তো আর বলা যায় না, তবে?

সারাহ্-র নিরবতায় আহনাফ বি°র°ক্ত হয়ে বলে,
“আপনার ইচ্ছায় বিয়ে হচ্ছে নাকি অনিচ্ছায়? (একটু থেমে) মানে মত আছে?”
“মত না থাকলে কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসতাম না।”
নিচুস্বরে জবাব দেয় সারাহ্।

আহনাফ জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলল,
“আমার মা নেই, বাসায় কোনো মেয়েই থাকে না। সবটা সামলে নিতে পারবেন?”
“আশা করি পারবো।”
“বিয়ের পর যদি বলি চাকরি করতে পারবেন না?”

সারাহ্ চঞ্চল চোখে ফ্লোরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
“ছেড়ে দিবো।”
“যদি বলি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না। তবে?”

আহনাফের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বলল,
“তবে তাকেই বিয়ে করুন।”

আহনাফ একবার ওর আপাত মস্তক দেখে উঠে বেরিয়ে গেল। ওর শেষের কথাটা নিয়ে ভাবছে সারাহ্। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। যদি সত্যি ও আহনাফের মনে জায়গা না পায়? আহনাফকে নিয়ে যে স্বপ্ন ও দেখতে শুরু করেছে তা কি সত্যি করতে পারবে না? হৃদয় গহীনে গড়ে তোলা ভালোবাসার তাজমহল কি শাহজাহান নিজ হাতে ভে°ঙে দিতে পারে?

প্রশ্নগুলো মনের মধ্যে আটকে রেখে আবারো ড্রইংরুমে যায় সে, বাবা যে তাকে ডাকছে। আহনাফ ওর দিকে তাকায়, দুজনের দৃষ্টি এক হয়। কিন্তু সারাহ্-র ডাগর চোখের ভাবের খেলা আহনাফ বুঝে না বা বুঝতে চায় না।

চলবে…..

(আহনাফ-সারাহ্ চলবে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here