এই_সুন্দর_স্বর্ণালী_সন্ধ্যায় #পর্বসংখ্যা_১৩

0
199

#এই_সুন্দর_স্বর্ণালী_সন্ধ্যায়
#পর্বসংখ্যা_১৩

কাছের মানুষগুলো কাছে থাকলে, কোনো ব্যথাই যেন আর ব্যথা দিতে পারে না। এ পৃথিবীতে দুঃখ নেই কার? কমবেশি সবাই তো আমরা দুঃখী। দুঃখে, কষ্টে জর্জরিত একেকজন। কিন্তু এই ব্যথা-বেদনাগুলো আমরা ভুলে যেতে পারি। জখম আমাদের তা ভুলিয়ে দেয়া হয়!
এ দুনিয়ায় সব মানুষই কষ্ট পায়, কিন্তু সেই মানুষটিই কষ্টের প্রখরতা টের পায় না যার কাছে কষ্ট ভুলিয়ে দেয়ার জন্য কেউ থাকে। থাকে কাছের মানুষ, আপন মানুষ।
চারুর বুক ভর্তি দুঃখ আর হতাশা মেটাতে তার পুরো পরিবার সচেষ্ট হলো। অন্তর্মুখী মেয়েটা কখনো কারো কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না। সারাক্ষণ অন্তরালে থাকে একা একা। তাই ওর কাছের মানুষগুলো নিজেরাই কাছে টেনে নিলেন। ফুপু গতরাতে ওর সঙ্গে ঘুমিয়েছেন। অনেকরাত পর্যন্ত চুলে বিলি কাটতে কাটতে পুরোনো দিনের গল্প করেছেন। সকালে রান্নাঘরে কাজ করতে থাকা মা – চাচীদের আড্ডায় ধরে শামিল করলো। বিকেলে ভাই-বোনেরা একসঙ্গে বসে মুভি দেখলো। ড্রইং রুমটার সোফা সরিয়ে মেঝেতে তোষক ফেলে, সামনে পপকর্নের বাটি নিয়ে বসে সবগুলো একত্রিত হলো। মুভি দেখার জন্য! হিন্দি ঘরানার একটা কমেডি মুভি দেখতে দেখতে হেসে গড়াগড়ি খেল ওরা। সে রাতটাও ওরা ক’ বোন একসঙ্গে থাকলো। বহুদিন পর ওরা একসঙ্গে এতো মিষ্টি সময় কাটালো। এতো এতো মানুষের সমাগমে থেকে নিজের ব্যথাটা ভুলতে বাধ্য হলো চারু। মন খারাপেরা দল বেঁধে পালালো। চুটিয়ে আড্ডা, হৈ-হুল্লোড় করতে করতে কেটে গেল প্রহর!

পরদিন আয়োজন করা হলো পিকনিকের। পিকনিক বলতে, সব ভাইবোনেরা মিলে রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করলো। যাতে বড়রা রইলো আমন্ত্রিত অতিথিদের ভূমিকায়!

রোদ থেকে বাঁচতে বাগানের একজায়গায় সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে।তার নিচে বড় বড় দু’টো গর্ত করে, ইট বসিয়ে চুলো বানিয়েছে রান্না করবে বলে। রান্নার দায়িত্ব সৌভিক আর চারুর। আগেই বলেছি, সৌভিক ভীষণ গোছালো আর কর্তব্যপরায়ণ ছেলে। তার প্রতি অগাধ আস্থা তার ছোট – ভাইবোনদের। বাজারের দায়িত্ব পড়েছে কাব্য আর কবিরের উপর। তাদের স্ত্রীরা রান্নার সহযোগী। ইমা, ইরা এবং ঋতু অন্যান্য কাজে। সবাইকেই মোটামুটি কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। একমাত্র বাদ গেছে রিংকু – টিংকু। অতি আদরের ছোট দু’টি ভাই, তাদের জন্য কাজ মওকুফ। কিন্তু ভাইয়েরা ভালোবেসে কাজ থেকে রেহাই দিলে হবে কি? তারা নিজেরা তো মহা দেওয়ানী। অন্যরা খেটে মরবে আর ওরা আনন্দে ’তাইরে নাইরে না’ করতে করতে ঘুরবে? ভাই-বোনদের প্রতি এ অবিচার ওরা করবে কি করে? ওদের মানবিকতা বোধ আছে না?
তাই স্বেচ্ছায় তারা কাজে লেগে পড়লো। ইরা শরবৎ বানাচ্ছিল। দু’ জগ ভর্তি করে শরবৎ বানিয়ে ফ্রিজে রাখবে। বেলা একটু পরে গেলেই তো সকলে তৃষ্ণায় ছটফট করবে। মোক্ষম সময়ে যেন তড়িঘড়ি করে কিছু করতে কিংবা হা হুতাশ না করতে হয়, তার প্রস্তুতি আগে-ভাগেই নিচ্ছে। রিংকু – টিংকু এসে দাড়ালো ওরই কাছে। বললো,
— “আপা। দে সাহায্য করি।”
ইরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো,
— “কি করবি?”
— “এভাবে তাকাস কেন? সাহায্য করতে চাইছি।”
ইরা তবুও একইভাবে চেয়ে, তাই বললো,
— “সাহায্য মানে বুঝিস না? ইংরেজিতে বলে হেল্প। এইচ-ই-এল-পি। হেল্প!”
— “হেল্প মানে জানি আমি। মূর্খ নই। কিন্তু তোরা এখানে কেন? কি কুকীর্তি করবার মতলব?”
সন্দিহান গলায় বললো। টিংকু ভারী বিরক্ত হলো তাতে,
— “এই জন্যই মহিলা মানুষরে ভাল্লাগে না। সব জায়গায় খালি প্যাঁচ খোঁজে। আরে ভাই, হেল্প করতে আসছি। কি করতে হবে বল!”
ওদের কথায় আশ্বস্ত হলো কি-না বোঝা গেল না। ক্ষণিক নিশ্চুপ থেকে কুঞ্চিত ভ্রূ সোজা করলো ইরা। বললো,
— “হেল্প করতে চাইছিস ভালো। কিন্তু আমার কোনো হেল্প লাগবে না। আমি নিজেই করতে পারবো। তোরা বরং চুপচাপ দাড়া।”
নিজের কাজে মনোনিবেশ করলো। লেবুর রস ঢাললো জগে। বয়াম থেকে চিনি ঢালতে উদ্যত হয়েছে তখনই হঠাৎ ডাক পড়লো তার। বাড়ির ভেতর থেকে ঋতুর ডাক শোনা যাচ্ছে,
— “ইরা? তোকে ছোট চাচী ডাকছেন! জলদি আয়।”
কাজ থামিয়ে উত্তর করলো ইরা,
— “আসছি।”
বলেই ছুটে গেল ভেতরে। যাবার পূর্বে ভাইদের সতর্ক করতে ভুলে নি। কিন্তু ওর সতর্ক বার্তায় কি যায় আসে দু’ভাইয়ের? তারা তো অকাজ করতে সদা পারদর্শী। তাই চিনির বদলে শরবতে লবণ দিতে কার্পণ্য করল না। একদম বয়াম উপুড় করে পুরোটাই ফেলে দিলো জগের পানিতে। অকাজটা করেই টিংকু শয়তানি হাসি দিলো। ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো,
— “লবণের সংকেত কি বল তো, রিংকু?”
— “সোডিয়াম ক্লোরাইড!”
–“আর এটা কি তৈরি হলো?”
— “লবণ আর পানির সম্পৃক্ত দ্রবণ!”
— “আর এরই মাধ্যমে সম্পন্ন হলো আমাদের বৈজ্ঞানিক অভিযান। বুঝলি রিংকু, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের কিন্তু কোনো বিকল্প নেই। হরহামেশাই দরকার!
দু’ ভাই কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো। তারপর চুপ করে সটকে পড়লো ইরা আসবার আগেই!

নিখিলকে কেউ কোনো কাজ দেয় নি। সে মেহমান মানুষ, তাকে দিয়ে কাজ করানো যায়? তাছাড়া তারা এতোগুলো ভাইবোন যেভাবে কাজ ভাগ করে নিয়েছে তাতে ওর কষ্ট করবার কোনো প্রয়োজন নেই। তথাপি হাত গুটিয়ে থাকাটা নিখিলের পছন্দ হলো না। সে রান্নার জায়গায় বসে চারুর সহযোগিতা করবার জন্য বেশ কয়েকবার অনুরোধ করলো। কিন্তু সৌভিক কিংবা চারু কেউই তাতে রাজি হলো না। ওরা দু’জনে একসঙ্গে চুলোর সামনে বসে। গুটুর-গুটুর করে গল্প করছে, মাঝে মাঝে হাসছে। অদূরে বসে এই দৃশ্য দেখে অন্তর জ্বলে যাচ্ছে নিখিলের! অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো সে।
কিয়ৎক্ষণ পর ইমাকে ডাক দিলো চারু,
— “এ্যাই, ইমা? বাংলা ঘর থেকে কিছু খড়ি নিয়ে আয় তো!”
ইমা সম্ভবত আশেপাশে ছিল না। কিংবা বড়’পার ডাক শুনতে পায় নি। একটু পর সৌভিক ফের ডাকলো। কিন্তু এবারও ফলাফল শূণ্য। অগত্যা চারু বললো,
— “ভাইয়া? তুমি থাকো। আমি এনে দিচ্ছি।”
বলে নিজেই উঠে দাড়ালো লাকড়ি আনবার উদ্দেশ্যে। সৌভিক বাঁধা দিতে চাইলো। চারুর প্রতি তার বিশেষ দুর্বলতা আছে। বললো,
— “না, না। আমি যাই। তুই বস।”
— “তুমি থাকো তো। আমি যাবো আর আসবো।”
চারু এগোলো। নিখিলের চাতকী মন যেন এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল এতক্ষণ। সে চট করে উঠে চারুর কাছে এলো,
— “কি লাগবে আমাকে বলুন না? আমি এনে দিচ্ছি।”
চুলোর জ্বাল ঠিক করছিল সৌভিক। কথা শুনে বন্ধুর দিকে ফিরে তাকালো। অদ্ভুত দৃষ্টিতে। সে দৃষ্টিতে খানিক ক্রোধ আর বিরক্তি মিশে। নিখিল বুঝেও পাত্তা দিলো না। সৌভিককে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চারুর পানে চেয়ে রইলো,
— “এতক্ষণ ধরে রিকোয়েস্ট করছি। আপনারা কিন্তু একটা কথাও রাখেন নি। এবার না বললে হবে না। বলুন, কি দরকার?”
— “সাহায্য তো আমিও করতে চেয়েছি। আমাকে সুযোগ দিলি কই?”
মাঝখান থেকে বলে ওঠে সৌভিক। তার দৃষ্টি এখন ঘুরে চারুর উপরে নিবদ্ধ। মেয়েটা পড়লো বিপাকে। সে কি করবে?
হাসলো অপ্রস্তুত ভাবে
— “তোমরা এমন করছ কেন? বললাম তো আমি করে নিবো।”
— “কিন্তু আমি…”
সৌভিক কিছু বলবার জন্য মুখ খুলতেই চারু অপ্রসন্ন গলায় ডাকে,
— “ভাইয়া, প্লিজ? সকাল থেকে খাটছ। তোমাকে আর কষ্ট দিতে চাইছি না।”
এবারে নিখিল নিজের আর্জি জানায়,
— “সৌভিক না হয় খুব খেটেছে, আমি তো খাটি নি। আমাকে করতে দিন। অন্তত এই একটি কাজ করে বলতে পারবো, পিকনিকে আমার অবদানও তুচ্ছ নয়।”
বলেই হাসবার চেষ্টা করলো। ওর এতো আন্তরিক আচরণ দেখে আর না করতে পারলো না চারু। কে জানে, এ যাত্রায় ‘না’ বললে হয় তোমন খারাপ করবে। এই সুন্দর সোনালী দিনটায় কেউ মনে কষ্ট নিয়ে থাকুক সে চায় না। মুচকি হেসে সায় দিলো।

বেলা দেড়টা নাগাদ রান্না-বান্নার পর্ব শেষ হলো। ততক্ষনে সব ক’টা ক্ষিদের জ্বালায় কুপোকাত! ঐতিহ্য রক্ষার্থে থালার উপর কলাপাতা নিয়ে অধৈর্য হয়ে বসে। সৌভিক চুলো থেকে হাড়ি নামাতেই ওরা ছুটে গেল। পরিবেশনের ধার ধারে নি কেউ। চটপট যে যা পারছে তাই নিচ্ছে তুলে। হৈহৈ করতে করতে প্লেট পূর্ণ করে ফিরে আসছে নিজ আসনে।ওদের ভীড় কমলে ধীরে – সুস্থে বোল নিয়ে এগোলো চারু। বড়দের পরিবেশন করতে হবে। সৌভিকও বসে গেছিল ভাইদের সঙ্গে। চারুকে কাজ করতে দেখে প্লেট রেখে উঠে এলো। কাজ তো চারুও কম করে নি। তবে তাকে রেখে কেন নিজে খেতে বসা?
কিন্তু এগিয়ে যেতেই দেখলো ইতোমধ্যে নিখিল চলে এসেছে চারুর কাছে। সবাই কাজ করে ক্ষুধার্ত হয়েছে। তাই খাবার প্রস্তুত হতে না হতেই যে যারটা নিয়ে হামলে পড়েছে। কিন্তু নিখিল তেমন কাজ করবার সুযোগ পায় নি। তাই তার অত খাওয়ার তাড়া নেই। এই ফাঁকে সে হাজির তার অব্যক্ত প্রিয়তমার কাছে, তার সহযোগিতার জন্য!
— “গোশতের বোলটা আমায় দিন, চারুলতা। আমি নিচ্ছি।”
— “আরে আপনি কেন এলেন! মেহমান মানুষ, খেতে বসুন।”
চারু বাঁধা দিতে চায়। নাছোড়বান্দা নিখিলের জবাব,
— “আপনারা আমাকে কি পেয়েছেন বলুন তো? মেহমান বলে কি কিচ্ছুটি করতে পারি না? আপনি তখন থেকে কাজ করছেন। সাহায্য করতেও দিচ্ছেন না। এ-তো ভারী অন্যায়। অন্যদের সুযোগই দিচ্ছেন না।”
সেই মুহূর্তে সৌভিক এসে দাড়ায়। ওকে দেখেই চারু বলে উঠলো,
— “আরে ভাইয়া, তুমি এলে যে? কিছু লাগবে?”
— “না। না। তোর কাছে এলাম। দে দেখি, কি করতে হবে।”
নিখিল ফট করে বললো,
— “তোকে আর কিছু করতে হবে না, দোস্ত। অনেক করেছিস। এবার যা, আরাম করে খা।”
নিখিলের উপস্থিতি কেন যেন মানতে পারছিল না সৌভিক। হয় তো, চারুর প্রতি ওর ভালোলাগার কথা জানে বলেই। আবার একই ব্যাপার ঘটছিল নিখিলের সঙ্গেও। বন্ধুবর সৌভিক এবং চারুর প্রতি তার আধিপত্য তার অসহ্য লাগছিল। সৌভিক বললো,
— “করেছি তো কি হয়েছে? বাড়ির ছেলেরা কাজ করবে তাই স্বাভাবিক। তুই অতিথি মানুষ। গিয়ে বসে পর। আমরা সামলে নিবো।”
এদের আচরণে চারু হতবাক। সকাল থেকে খেয়াল করছে এই দু’টো মানুষ তার পেছনে লেগেছে! সে যা করছে, করতে চাইছে সবকিছুতে তাদের আগ্রহ। তাকে সাহায্য করতে যেন এরা দু’জনই মুখিয়ে। সৌভিকের আচরণ ওর কাছে পরিচিত। সে বরাবরই এমন করে। ওর প্রতি অতি স্নেহশীল। কিন্তু তার বন্ধু নিখিল? সে এমন আচরণ করছে কেন!
সে অস্বস্তি নিয়ে বলে,
— “তোমরা যাও, প্লিজ। ভাইয়া? তোমাকে কিছু করতে হবে না। খেতে বসো। আমার একটু বাকি আছে কাজ, একাই করে নিবো। সমস্যা হবে যা। আর নিখিল সাহেব আপনিও যান। এমনই অনেক দেরি হয়েছে। আর দেরি করবেন না। প্লিজ।”
— “কিন্তু…”
— “কোনো কিন্তু নয়। যান।”
নিখিল দিরুক্ত করতে চাইলেও আর শোনে না। দুজনকেই পাঠিয়ে দেয়। তারপর নিজের কাজ গুছিয়ে নেয়। মহিলা মহলের দিকটায় পরিবেশন করতে গিয়ে তাদের সঙ্গেই খেতে বসে। পরমযত্নে বড় ফুপু ধরে খাইয়ে দেন ওকে। হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠে সব!

কিন্তু এতসবের মাঝেও ওর মনের ভেতর কাঁটার মত খচখচ করে কি যেন। সে ছোট বাচ্চা নয়। অবুঝ – নাদান নয়। তার সঙ্গে কে কেমন আচরণ করছে সেটা বুঝবার ক্ষমতা তার আছে। এবং সেই আচরণের পেছনে কার কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে তাও সে অবগত। পরিপূর্ণ অভিজ্ঞ একজন নারী সে। তার প্রতি একজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষের ব্যবহার, কথাবার্তা, চাহনি যদি নাই বুঝে — তবে সে নারী হলো কি করে?
আর বুঝেই সে অবাক হচ্ছে। নিখিল সম্পর্কে কৌতুহল হচ্ছে। ছেলেটা কিছু জানে কি? সব জানবার পর তার প্রতি আগ্রহী হবার তো কোনো কারণ নেই!

চলবে___অপেক্ষা করুন আগামী পর্বের জন্য, আর পেজে লাইক ফলো দিয়ে কমেন্ট করে রাখেন বাকি পর্ব পোস্ট করেই কমেন্ট বক্সে দিয়ে দেবো লিংক।

#মৌরিন_আহমেদ

#এই_সুন্দর_স্বর্ণালী_সন্ধ্যায়
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122111588804106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here