অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী ষট্ বিংশ পর্ব (২৬ পর্ব)

0
379

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

ষট্ বিংশ পর্ব (২৬ পর্ব)

“বাসায় কে এসেছিল, এশা?”

বাবার প্রশ্নে সামিহা ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে,
“কোনো এক রোমি আন্টি।”

জাহাঙ্গীর সাহেব ঠোঁট উল্টালেন। স্ত্রীর কোনো বান্ধুবীকে উনি চিনেন না। শব্দহীন হয়ে নিজকক্ষে প্রবেশের সময় নার্গিস পারভিনকে কারো সাথে কথা বলতে শুনেন,
“আমি ভুল না উনি ঢাকায় থাকার কথা না।”

ফোনের অপরপাশ থেকে রোমি বলেন,
“সিআইডির সাহায্য নেয়া উচিত। তোমার জামাই ঠিক কথা বলছে।”

“কি বলবো? আমার জন্মের আগের ঘটনা এটা, তারপর আমার শৈশব কালেও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমার বাড়ি এক জায়গায় আর এটা ঘটেছে আরেক জায়গায়। মানুষ আমাকে সুস্থ ভাববে?”

রোমি খন্দকার নিরব থাকেন। জাহাঙ্গীর সাহেব অপরপাশের কথা না শুনলেও নার্গিস পারভিনের কথা সবই শুনেছে। উনি দরজা ঠেলে ভিতরে আসেন। নার্গিস পারভিন “রাখছি” বলে কল কে°টে দেন।

“কিসব হচ্ছে? কি ঘটনা ঘটেছে?”

নার্গিস পারভিন শান্ত গলায় হেসে বলেন,
“তেমন কিছু না। আমার এক ফ্রেন্ড এসেছিল, ওর কিছু সমস্যা নিয়েই কথা হয়েছে, কিন্তু সমাধান হয়নি।”

জাহাঙ্গীর সাহেব বিষয়টা নিয়ে আর নাড়াচাড়া করেন না। আলতোভাবে মাথা নাড়েন।
______________________________________

পরদিন ভোরে,
স্বাভাবিকভাবেই গতরাতে ঘুমিয়েছিল ইমতিয়াজ। কিন্তু ঘুমটা ভাঙে তার অস্বাভাবিক ভাবে।

ভোর ভোর তানজিম ডাকছে,
“ভাইয়া, এই ভাইয়া।”

ইমতিয়াজ চোখ খুলে আশেপাশে তাকায়। সাধারণ একটা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে সে। কোথায় গেল ওই শুভ্র রহস্য?

লুৎফর রহমান পাশ থেকে বলল,
“তুমি ঢাকার বাইরে গেলে, ফিরেও এলে, এ°ক্সি°ডে°ন্ট করলে অথচ একবারও আমরা জানলাম না। চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।”

ইমতিয়াজ উঠে বসে বলল,
“তেমন কিছু হয়নি আমার, ঠিক আছি।”
“ঠিক নেই তুমি ভাইয়া। আমরা তো পুলিশ কে°ইসও করতে গেছিলাম, ভাগ্যিস করিনি।”

তানজিমের কথায় ইমতিয়াজ মাথা নাড়ে। বলে,
“মৃত্তিকা?”
“আপু বিশেষ কেবিনে, জ্ঞান ফেরেনি।”

ইমতিয়াজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর উঠে বেরিয়ে আসে। ভোররাত এখনো হয়তো ফজরের আযান দেয়নি। তবুও এখানে কত মানুষ। ওই শুভ্র দিনগুলোকে স্বপ্ন ভাবছে ইমতিয়াজ, হয়তো সে ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু তা তো বাস্তব, এক অচেনা বাস্তবে ছিল সে।

পাশ দিয়ে ডা. পল্লবী যায়। ইমতিয়াজকে দেখে আলতো হেসে চুপ থাকতে ইশারা করে চলে যায়।

মৃত্তিকার কেবিনের সামনে মমতাজ বেগম আর শাফিন সাহেব বসে আছে। ইমতিয়াজকে দেখেই মমতাজ বেগম উঠে এসে ওকে ধরে কান্না করে দেয়। শাফিন সাহেব বললেন,
“কেমন আছো?”

ইমতিয়াজ কাঁচের জানলা ছাড়িয়ে ভিতরে মৃত্তিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মৃত্তিকার চেয়ে অনেক ভালো আছি।”
“এই কয়দিন কোথায় ছিলে?”

ইমতিয়াজ ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে পল্লবীকে দেখে বলে,
“এখানেই ছিলাম।”
“তোমার বাসায় কে ছিল ভাইয়া?”

পাশ থেকে কথাটা বলে তানজিম। ইমতিয়াজ তাকালে তানজিম আবারো বলে,
“আমি তোমার বাসায় গিয়েছিলাম, বাসা একদম সাজানো গোছানো ছিল।”

ইমতিয়াজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মি°থ্যা একটা কথা বলে দেয়,
“আমার বন্ধু ছিল।”

পুরো সত্য সে নিজেও জানে না৷ এখন সবাইকে বলা মানে মৃত্তিকার জীবনে আরো দুঃখ টে°নে আনা আর রহস্যটা অধরা থেকে যাওয়া। ওই জীবন্ত স°মা°ধী আর শুভ্রতার রহস্য যে তাকে খুঁজতেই হবে।

তানজিম ওকে টে°নে একটু দূরে এনে ম্যাসেজটা দেখিয়ে বলে,
“এটা কে দিয়েছে?”

ইমতিয়াজ কপাল কুঁচকে বলল,
“আমি না, আমার ফোনই তো আমার কাছে নেই।”

তানজিম মামা, মা আর বাবার দিকে তাকায়। এই পরিবারের উপর কার এমন নজর পড়লো।

তানজিম চলে যেতে নিলে ইমতিয়াজ ওকে বলল,
“এখন একটু চুপ থাকো, বিষয়টা কাউকে জানিও না।”
“কোনো সমস্যা ভাইয়া?”

ইমতিয়াজ তানজিমের কানের কাছে গিয়ে বলে,
“চুপ থাকতে বলেছি, চুপ থাকো। সবকিছুর সময় আসছে।”

ইমতিয়াজ চলে যায়। পল্লবীর কেবিনে গিয়ে দরজায় নক করে। পল্লবী বলে,
“আসো, ইমতিয়াজ।”

ইমতিয়াজ ভিতরে গিয়ে বেশ শক্ত কন্ঠে বলল,
“আমাদের ফোন থেকে আপনি সবাইকে ম্যাসেজ করেছেন?”

পল্লবী ড্রয়ার থেকে ফোন বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে,
“আপনা থেকে চলে গেছে।”
“হেয়ালি করবেন না।”
“ওকে, আমি দিয়েছি।”

পল্লবী নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বলল,
“ডা. পল্লবী মহৎ মানুষ, এটা সবাই জানে।”

ফজরের আযান শুনে ইমতিয়াজ আর কিছু না বলে চোখ কুঁচকে তাকিয়ে চলে যায়। এই মহিলা একটা রহস্যের কু°ন্ড°লী, এমনভাবে পাঁ°ক লেগেছে যে খুলে আসা কঠিন।
______________________________________

আজ বেশ তাড়াতাড়ি কলেজে চলে এসেছে আহনাফ ও সারাহ্। প্রায় সাড়ে সাতটায় কলেজে এসে হাজির, কিন্তু ক্লাস শুরু নয়টায়।

কলেজ গেইট ছাড়িয়ে ভিতরে আসতে আসতে সারাহ্ বলে,
“এতো তাড়াতাড়ি আসলে কেন?”

সারাহ্-র প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আহনাফ পালটা প্রশ্ন করে,
“ব্যাটমিন্টন খেলতে পারো?”

সারাহ্ মাঠের দিকে তাকায়, কতগুলো ছেলে মেয়ে ওখানে ব্যাটমিন্টন খেলছে। সে মাথা নাড়ে,
“হ্যাঁ, পারি।”

আহনাফ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে,
“ওকে, ব্যাগ রেখে মাঠে আসো।”

সারাহ্ চোখ কুঁচকে বলল,
“কলেজ মাঠে আমি এখন ব্যাটমিন্টন খেলবো?”
“আমি না আমরা, তাড়াতাড়ি যাও।”

আহনাফ নিজের ব্যাগটা এক ছাত্রের হাত দিয়ে টিচার্স রুমে পাঠিয়ে দেয়। শার্টের হাতা গু°টাতে গু°টাতে গিয়ে ব্যাট নিয়ে খেলতে শুরু করে।

সারাহ্ ব্যাগ রেখে এসে কলেজের বারান্দায় দাঁড়ালো। আহনাফ ওর দিকে কর্ক ছুঁড়ে বলে,
“আসো, দেখি তুমি কেমন খেলতে পারো।”

সারাহ্ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। আহনাফ সবাইকে বলে,
“ম্যাডামকে একটু জায়গা দাও, দেখি শুধু বিক্রিয়াই লিখতে জানে নাকি খেলতেও পারে।”

পাশ থেকে এক ছেলে বলে,
“স্যার, আপনার সাথে পারবে না।”

আহনাফ কলার টে°নেটু°নে বলল,
“সেটা আমি জানি।”
“ভাব কম নেন ফয়েজ স্যার।”
সারাহ্ একটু জোরে কথাটা বলে গিয়ে ব্যাট হাতে নেয়।

দুজনে খেলা শুরু করে। আহনাফ সারাহ্-র থেকে বেশ লম্বা হওয়ায় ওর একেকটা শট ছোটখাটো সারাহ্-র মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।

সারাহ্ রাগ করে তাকায় ওর দিকে। আহনাফ বাম চোখ টিপে বলে,
“ম্যাডাম, বেশি উঁচু হচ্ছে।”
“এসব ঠিক না, ফয়েজ স্যার।”

আহনাফ হাঁটু গেড়ে দুহাত মেলে বসে বলল,
“এবারে চলবে।”

সারাহ্ লজ্জা পেয়ে যায়। এতোগুলো স্টুডেন্টের সামনে এমন এক ব্যবহার আহনাফ করছে যে কোনো স্ত্রীই লজ্জায় পড়বে। ছেলে মেয়েগুলো বেশ হাসাহাসি করছে। সারাহ্ ব্যাট রেখে চলে গেল। এই লোকই তো বোর্ডের সামান্য কথা লেখায় ওকে বকেছিল।

আহনাফ সবাইকে বলে,
“ম্যাডামের সমস্যা আছে নাকি মাথায়?”

ছাত্রছাত্রীরা আবারো হাসছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আহনাফেরও আর খেলা হলো না। সারাহ্-র পর সেও চলে যায়।
______________________________________

দুইদিন পেরিয়ে যায়৷ মৃত্তিকার জ্ঞান ফিরেছে গতরাতে। মমতাজ বেগম কথা বলতে চাইলেও মৃত্তিকা কথা বলেনি, বরং চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল।

দুপুরের পর ইমতিয়াজ মৃত্তিকাকে দেখতে এসেছে। তার ডানহাত এখনো গলায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। চেয়ার টে°নে পাশে বসে সে। মমতাজ বেগম বাইরে গেছেন অনেকক্ষণ হলো।

মৃত্তিকা চোখ খুলে ইমতিয়াজকে দেখে, সে আপন মনে ফোন দেখছে। মৃত্তিকা নিচুস্বরে বলল,
“কেমন আছেন?”

ইমতিয়াজ ওর দিকে তাকায়।
“ভালো।”

হাঁটুতে বামহাতের কনুই দিয়ে ভর রেখে সামনে ঝুঁ°কে ইমতিয়াজ বলে,
“আপনার এই অবস্থা কে করেছে জানেন কিছু?”

মৃত্তিকা সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“শ°ত্রুদের যদি চিনতে পারতাম, তবে আজকে ভালোই থাকতাম।”

ইমতিয়াজ সোজা হয়ে বসে। মৃত্তিকা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
“মৃ°ত্যু সহজ নয়, এরচেয়েও বেশি কষ্ট আমার মাম পেয়েছে।”

ইমতিয়াজের হৃদপিণ্ডের কাঁ°পুনি বাড়ে। মৃত্তিকার মাম তো একা ছিল না সেদিন। তাহমিনা যে সাথে ছিল।

মৃত্তিকা ক্যা°নো°লা লাগানো হাতটা ইমতিয়াজের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ওটা দু°র্ঘ°টনা ছিল না, মামকে ইচ্ছা করে মে°রেছে ওরা। ভালো মানুষ থাকায় তাহসিনা আর তাহমিনাকে একই পথের যাত্রী হতে হয়েছে।”

ইমতিয়াজ উঠে যেতে নিলে মৃত্তিকা ওর হাতের উপর হাত রাখে। ইমতিয়াজ থেমে যায়। মৃত্তিকার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।

“আমি এতোটা ভালো মানুষ নই, (একটু থামে) আর ভালো হতেও পারবো না।”

ইমতিয়াজ ওর হাতের দিকে চেয়ে থেকে বলল,
“হয়তো আপনিও ভালো মানুষ, নাহলে এভাবে কেউ মা°রতে চাইতো না।”

মৃত্তিকা হাতটা সরিয়ে নেয়। ঘাড় না°ড়াতে এখনো কষ্ট হয় তার। তবে নিজের ব্য°থাগুলো থেকে বেশি ব্য°থা মামের জন্য পাচ্ছে সে।

ইমতিয়াজ একটু বসে থেকে উঠে যায়। মৃত্তিকা আবারো চোখ বন্ধ করে। দরজার বাইরে এসে কান্না করে দেয় ইমতিয়াজ। জীবন ওর সাথে এই খেলাটা কেন খেললো?
______________________________________

সাড়ে তিনটায় ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়েছে তানজিম ও সামিহা। শেষ কয়েকদিন তানজিম খুবই চুপচাপ আছে, জরুরি কথা ছাড়া বাড়তি কোনো কথা নেই। ইমতিয়াজ-মৃত্তিকার হারিয়ে যাওয়ার গল্প সামিহাকে শুনিয়েছে, অসুস্থতার কথাও বলেছে। কিন্তু তার এমন নিরবতায় সামিহা কষ্ট পাচ্ছে।

তানজিম বাসায় যাওয়ার পথ ধরলে সামিহা এসে ওর একহাত জড়িয়ে ধরে বলল,
“তানজিম, চল আজকে মিউকোপুকে দেখতে যাই।”
“আজ না অন্য দিন।”
নির্বিকার হয়ে জবাব দেয় তানজিম।

তানজিমের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“রেগে আছিস?”
“না।”
“তবে চুপ কেন?”

তানজিম থেমে গিয়ে বলল,
“নিজের পরিবারের মানুষগুলোকে বিশ্বাস হচ্ছে না আমার। দুজন মানুষ হুট করে নিখোঁজ আর আমার ফ্যামিলি হাত পা গু°টিয়ে ছিল। (একটু থেমে) বাবা একটু খুঁজেছে তবে মামা তো চেষ্টাও করেনি।”

সামিহা কপাল কুঁচকায়। পারিবারিক অশান্তিতে আছে বেচারা। তানজিম হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“মিউকোপু মামার বাসা থেকে গা°য়েব হয়েছিল, কিন্তু মামা বিষয়টা গায়ে মাখেনি।”
“তানজিম, এতো চিন্তা করিস না প্লিজ।”
“চিন্তাই করতে পারছি না আমি।”

উঁচু ফুটপাতের ধারে বসে পড়ে তানজিম। হাত দিয়ে মুখে ঢেকে বসে থাকে। সামিহা পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“তানজিম, বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করিস না। মানুষ দেখছে।”

তানজিম কিছুক্ষণ এভাবে বসে থেকেই বলে,
“তুই চলে যা সামি। আমার সাথে আর মিশবি না।”
“কেন?”

তানজিম ধ°ম°কে উঠে বলে,
“চলে যা বলছি।”

তানজিমের এলোমেলো কথা গুছাতে পারলো না সামিহা। বরং ওর কথার ঢংয়ে কষ্ট পেল। নিরবে চলে গেল সে। তানজিমকে শান্ত করার পরিবর্তে আরো অশান্ত করে দেয় ছোট মেয়েটা।
______________________________________

“ঐশী, আজকে একটু পাস্তা করো তো।”
“যাচ্ছি যাচ্ছি।”

মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় এসেই কথাটা বলে আহনাফ। সারাহ্ সবে নামাজ সেরেছে। জায়নামাজ রেখে চুল আঁচড়াতে নিলে আহনাফ বলল,
“অনেক সুন্দর লাগছে, এখন তাড়াতাড়ি যাও। আমার ক্ষুধা লাগছে।”
“আহা, ফয়েজ।”

সারাহ্ কোনোমতে চুলগুলো খোঁপা করে রান্নাঘরে এলো। পাস্তা সিদ্ধ বসিয়ে অন্য চুলায় হোয়াইট সস বানাতে শুরু করলো।

আব্বাস সাহেব এসে রান্নাঘরের দরজা দাঁড়ায়। সারাহ্-র কাজের ক্ষি°প্র°তা কিছুটা আহনাফের মায়ের মতো। রান্নাঘর নিজের মতো করে গুছিয়েছে।

সারাহ্ দরজার দিকে না তাকিয়েই বলল,
“ফয়েজ, রান্না চলছে। তুমি একটু ওয়েট কর। সবকিছুতে অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো।”

আহনাফ মাত্র ডাইনিং এ এসেছে। আব্বাস সাহেব হেসে বলেন,
“আমি ফয়েজ, তবে আব্বাস ফয়েজ।”

সারাহ্ জিভ কা°ম°ড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে। আহনাফ শব্দ করে হেসে দেয়। আব্বাস সাহেব ড্রইংরুমে গিয়ে টিভি ছেড়ে বসেন।

সারাহ্ কপাল চা°প°ড়ে বলে,
“দেখা তো লাগে।”

আহনাফ এসে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আহারে, বাসার নিরীহ বউটার শশুড়ের সামনে উলটা কথা বেরিয়েছে।”
“সরুন।”

আহনাফ সরে না। সারাহ্-র ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে চুমো দিয়ে বলে,
“জলদি খাবার দাও।”

সারাহ্ ওকে ধা°ক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে,
“আমাকে খেয়ে ফেলেন, রান্না করতে দিচ্ছে না আবার বলে জলদি খাবার দেও।”

আহনাফ হো হো করে হেসে বলল,
“তোমাকে খেলে আমি সারাদিন কাকে বি°র°ক্ত করবো।”

আহনাফ ড্রইংরুমে চলে আসে। কিছুক্ষণ পর নাস্তা সাজিয়ে নিয়ে সারাহ্ও এখানে আসে। আব্বাস সাহেবের হাতে বাটি দিয়ে বলল,
“বাবা, নিন।”

তিনজনে একসাথে খেতে বসে। আব্বাস সাহেব একচামচ খাবার মুখে নিয়ে বলল,
“রোজার রান্নার হাত অনেক ভালো ছিল।”

সারাহ্ উনার দিকে তাকিয়ে বলে,
“রোজা কে?”

আব্বাস সাহেব আলতো হেসে বলেন,
“তোমার শাশুড়ী আম্মা, রোজার নামের সাথে মিলিয়ে আফরোজার নাম রাখা হয়েছে। মেয়েটা পুরো মায়ের মতো। আর তুমিও রোজার মতোই সংসার গুছাতে পেরেছো।”

সারাহ্ মুচকি হাসে। আহনাফ বলে,
“গুছাতে গিয়ে তোমার ছেলেকে পাজেল করে নাজেল বানিয়ে ছেড়েছে।”

সারাহ্ চোখ পাকিয়ে তাকায় ওর দিকে। আহনাফ মনের সুখে খাচ্ছে। আব্বাস সাহেব ওদের অবস্থা দেখে হাসেন।

চলবে…..

(রহস্য একদিনে আসেনি, একদম উপন্যাসের প্রথম লাইন থেকে রহস্য ছিল। তাই একেবারে রহস্য উন্মোচন হবে না, একটু ধীরেসুস্থে সব সত্য প্রকাশ্যে আসবে।)
(পাঠকের অনুরোধে পর্বের নাম্বার লেখার পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয়েছে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here