অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী ঊনত্রিংশ পর্ব (২৯ পর্ব)

0
388

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

ঊনত্রিংশ পর্ব (২৯ পর্ব)

“তোমাদের সম্পর্ক অটুট থাকুক।”

শরীফ কথাটা বলে মৃত্তিকার মাথায় হাত বুলাতে আসলে মৃত্তিকা সরে যায়। ইমতিয়াজের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।

শরীফ আসার কারণে একটু আগেই বাসায় তুলকালাম করেছে শাফিন সাহেব আর মমতাজ বেগম। ইমতিয়াজ বরাবরের মতো এবারেও চুপ, আহনাফ তো এসব বিষয় সম্পর্কে জানেই না।

মৃত্তিকা ইমতিয়াজের পিছনে দাঁড়িয়ে ওর পাঞ্জাবির হাতা মু°ঠ করে ধরে৷ এমন আচরণে ইমতিয়াজ একটু অবাক হয়।

শরীফ আর কিছু না বলে চলে যায়। মেয়ে এখনো তাকে ভ°য় পায় বা ঘৃ°ণা করে৷ ঠিক যেরকম ছোটবেলায় লুকিয়ে যেতো, তেমনি আজও লুকিয়েছে। তবুও শরীফ এটা ভেবে স্বস্থি পেয়েছে অন্তত মৃত্তিকা লুকানোর মতো কেউ তো আছে।

শরীফকে নিয়েই একের পর এক কথা বলে যাচ্ছে শাফিন সাহেব। তানজিম একপর্যায়ে বলে,
“মামা, এবারে থামেন। যথেষ্ট হয়েছে।”

মমতাজ বেগম ইমতিয়াজকে বলেন,
“গেস্টরুমটা এতোক্ষণ ধরে ঠিক করেছি, তোমাদের আজকে আর বাসায় যাওয়ার দরকার নেই।”

মৃত্তিকা এসে সোফায় গু°ম মে°রে বসে রইলো। ইমতিয়াজ বলল,
“মা, যেতেই হবে। (একটু থেমে) আসলে বাসায় বিড়ালটা একা তো।”

মমতাজ বেগম শাফিন সাহেবের দিকে তাকালো। শাফিন সাহেব মুচকি হেসে বললেন,
“বিদায় তো দিতেই হবে। আজ দেই বা কাল।”

সকলে একসাথে রাতের খাবার খেলো, তারপর বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠে। ইমতিয়াজ, মৃত্তিকা, লুৎফর রহমান ও তানজিম চলে গেলেও মমতাজ বেগম গেলেন না। উনি ভাইয়ের সাথে থাকবেন। আহনাফ ওদের সাথেই নিচে নামলো।

কথাবার্তা শেষে যাওয়ার সময় তানজিম ছুটে এসে আহনাফকে ধরে বলে,
“ভাইয়া, সাবধানে যাবেন। আজ রাতে অনেককিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”

আহনাফ চোখ কুঁচকে বলল,
“কি হবে?”

তানজিম পেছন ফিরে বাকিদের চলে যেতে ইশারা করে। ইমতিয়াজকে বলে,
“তোমরা যাও, আমি পড়ে আসবো।”

তারপর আহনাফের দিকে ফিরে ফিসফিস করে বলল,
“যে সত্যের জন্য মুখ খুলে আমার আপুরা মা°রা গিয়েছিল তা আমি জেনেছি। একটা খুনি পরিবারের সন্তান আমি, যারা নিজের মেয়েদেরও হ°ত্যা করতে দুবার ভাবে না।”

এক নিশ্বাসে কথাটা বলে দেয় তানজিম। আহনাফের মাথায় যেন হঠাৎ করে আকাশ ভে°ঙে পড়ে। খু°ন, খু°নি পরিবার সব কথা ছাড়িয়ে তাহসিনার পরিকল্পিত মৃ°ত্যু°র সংবাদ ওকে ভিতর থেকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে। তানজিমের দিকে নিষ্প্রাণ চোখে তাকিয়ে আছে।

নিজের চোখের কোণায় জমা পানিটুকু মুছে তানজিম বলল,
“এই র°ক্তে খু°ন ঘুরছে ভাইয়া। (একটু থেমে) তোমার বিয়েটাও ওদের পরিকল্পনার অংশ।”

আহনাফের অবাকের পাল্লা আবারো ভারি হয়। ও তো নিজের বিয়ের কথা এখানে কাউকে বলেই নি। তবে তানজিম কি করে জানলো? প্রশ্নগুলো মনের মধ্যেই ঘুরতে থাকে, জবান যেন বন্ধ তার।

তানজিম একটা ঢোক গিলে, গলাটা ভা°রি হয়ে গেছে। চুল নেড়েচেড়ে বলল,
“ইমতিয়াজ ভাইয়া হয়তো কিছু জানে আর মিউকো আপুও।”

আহনাফ একটু দূরে চলে যায়। চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করে আবারো এগিয়ে আসে। তারপর বলে,
“খু°নি পরিবার মানে কি? কে কে আছে এর পেছনে?”

তানজিম চুপ করে থাকে। যেন কিছুই আর বলতে চায় না।

“তোমার মনে হয়না অ°ন্যায় হয়েছে জেনে চুপ থাকা আরো বড় অ°ন্যায়।”

আহনাফের কথার উত্তরে তানজিম বলে,
“প্রতি°বাদ করেও লাভ হবে না। (একটু থেমে) আর দুই একজনে এতো বড় কাজ করেনি, এখানে আরো অনেকে আছে।”

তানজিম হাত ঘড়িতে সময় দেখে বলে,
“তুমি সাবধানে থেকো, ওরা তোমার জীবনটাও নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করবে।”
তানজিম বাসার ভিতরে চলে যায়।

আহনাফের মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে একটা আওয়াজ বের হয়,
“তাহু।”

সে স্থির হয়ে গেছে। হয় পুরো পৃথিবী থমকে গেছে আর নাহয় পুরো পৃথিবীর মাঝে ও নিজে থমকে গেছে।
______________________________________

কিছুক্ষণ আগেই বাসায় এসে পৌঁছেছে ইমতিয়াজ ও মৃত্তিকা। ঘড়িতে এখন রাত দশটা। ইমতিয়াজ দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে বলল,
“বাসায় এমন কেউ নেই যে আপনাকে আদর আপ্যায়ন করে ভিতরে আনবে।”

মৃত্তিকা ভিতরে আসতে পা বাড়ালে ইমতিয়াজ নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়। মৃত্তিকা ওর দিকে তাকালে চোখের ইশারায় হাত ধরে ভিতরে আসতে বলে। মৃত্তিকা তাই করলো।

“আপনি কিন্তু মানসিকভাবে বেশ শক্ত একজন মেয়ে, তবুও তখন ভয়ে আমার পিছনে কেন লুকিয়েছেন?”

মৃত্তিকা কিছু বলে না। ইমতিয়াজ কি করে জানবে মৃত্তিকার জীবনে ভরসা করার মতো পুরুষ সে একাই। মৃত্তিকা যতই নিজেকে সামলাতে পারুক না কেন, সেও চায় কেউ তাকে আগলে রাখুক।

মৃত্তিকার হাত ধরে ওকে শোবার রুমে নিয়ে গিয়ে বলল,
“রেস্ট নিন আমি একটু আসছি।”

ইমতিয়াজ বেরিয়ে গেল। ডাইনিং এ মিউ মিউ শব্দ শুনে মৃত্তিকা সেদিকে যায়। বিড়ালটা টেবিলের উপর ঘুরে বেড়াচ্ছে। সদর দরজার দিকে তাকিয়ে বুঝলো ইমতিয়াজ বাইরে থেকে লক করে গেছে।

মৃত্তিকা বিড়ালটার গায়ে আলতো করে হাত বুলায়। একটু আদর করে আবারো রুমে ফিরে আসে।

ঘন কুয়াশায় পথ চলতে যেমন কষ্ট হয়, তেমনি অবস্থা মৃত্তিকার। পথ তো আছে কিন্তু দৃষ্টি সীমানার বহু দূরে মনে হচ্ছে। কে যে নিজের আসল চেহারা দেখাচ্ছে আর কে যে ভ°ন্ড তাই বোঝা মুসকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আয়নার সামনে গিয়ে হিজাব খুলে, শাড়ির আঁচলে দেয়া ভাঁজগুলো খুলে সমস্ত আঁচল মেলে দেয়। ছোট ছোট চুলগুলোতে হাত বুলায় সে। আয়নাতে দেখতে থাকে নিজেকে।

সকলে তো ওকে সুন্দরী বলে। ফর্সা গায়ের রঙ, উঁচু নাক আর হালকা-পাতলা ঠোঁট ওকে সুন্দরী করেছে। অনেকে তো ওকে পাকিস্তানি মেয়ে বলেও সম্মোধন করে।

দরজা খোলার শব্দ হয়। মৃত্তিকা শাড়ির আঁচল তুলে রুমের দরজার দিকে যায়। ইমতিয়াজ এসেছে, হাতে একটা ব্যাগ। যতটুকু বোঝা গেল এটা বিড়ালের খাবার।

মৃত্তিকা ভিতরে চলে আসলো। ইমতিয়াজ ডাইনিং এ বিড়ালকে খাবার দিচ্ছে। রুমের দরজা খোলা থাকায় দৃশ্যটা দেখা যাচ্ছে। মৃত্তিকা বিছানায় বসে চেয়ে রইলো সেদিকে।

ইমতিয়াজ এসে ওর মুখোমুখি বসে। মৃত্তিকা একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবারো দৃষ্টি সরায়।

“আপনি কি জানেন আপনাকে কে বা কারা হত্যা করতে চায়?”

ইমতিয়াজের সরাসরি প্রশ্নে মৃত্তিকা চেয়ে থাকে ওর দিকে। ইমতিয়াজ একটু সামনে এগিয়ে বলে,
“আপনার বাবাকে সন্দেহ করেছিলেন কিন্তু উনাকে তো এসবের সাথে যুক্ত বলে মনে হলো না।”

মৃত্তিকা এবারেও চুপ করে আছে। ইমতিয়াজের রাগ হয়৷ একটু ধ°ম°ক দিয়েই বলে,
“কথা কি কানে যাচ্ছে?”

মৃত্তিকা কান্না করে দেয়। মনে হলো অনেকক্ষণ কাঁদবে কিন্তু খুব দ্রুতই সে চোখ মুছে বলে,
“তিনটা খু°ন, আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম সবকিছুর জন্য বাবা দায়ী, কিন্তু আমি ভুল।”

ইমতিয়াজ খুব সিরিয়াস একটা চেহারা করে বসে বলল,
“তবে আপনি সবটাই জানেন?”
“না, সব জানি না। কিছুটা জানি, বাকিটা শুধুই অনুমান।”
“আপনার জানা আর অনুমান সবই বলুন।”

মৃত্তিকা কয়েকবার ঘনঘন ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করে,
“তাহসিনার বিয়ের আগেও আমি আর মাম বহুবার দেশে এসেছিলাম। কখনোই বড়মণি বা মামার বাসায় যাইনি। আমরা রোমি আন্টির বাসায় যেতাম। সেখানে উনারা আমার অগোচরে কোনো কিছু নিয়ে কথা বলতো। প্রচুর আগ্রহ থাকতো আমার তাদের কথায়, আমি লুকিয়ে শুনতে চাইতাম। বেশ কয়েকবার একটা নাম শুনেছি, রাহা সুলতানা।”

ইমতিয়াজ মনোযোগ দেয়। মৃত্তিকা আবারো বলে,
“কলরবের বাসায় গিয়েছিলাম আমি। বিয়ে ঠিক হওয়ার কয়েকদিন পরের ঘটনা এটা। কলরবের বাবা আমাকে দেখিয়ে কলরবের ফুপ্পির সাথে একটা কথা বলেছিল- ও হলো রাহার মেয়ে। কথাটা ফিসফিসিয়ে বলছিলো, যেন আমি না শুনি।”

মৃত্তিকা পাশের টেবিল থেকে পানি নিয়ে পান করে। ইমতিয়াজ বলে,
“এই রাহা সুলতানা কে? রিপা আন্টি?

মৃত্তিকা গ্লাসটা রেখে মাথা নেড়ে বলল,
“জানি না, এটা জানার জন্যই আমি দেশে থেকে যাই। কলরবের বাবাকে লুকিয়ে অনুসরণ করি। সব ক্ষেত্রে নয়, উনার অফিসেই বেশি অনুসরণ করতে পেরেছিলাম। তবে তেমন কিছুই জানতে পারিনি।”

মৃত্তিকা একটু থামে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“মামার বাসায় আমার উপর হা°ম°লা হয়েছিল। স্টোররুমে আমি সামিহা আর সারাহ্-র ফ্যামিলির ছবি দেখেছিলাম, রোমি আন্টির ফ্যামিলি ফটোও ছিল। (একটু থামে) জ্ঞান হারানোর আগে কলরবের বাবাকে আমি দেখেছিলাম, উনিই আমার উপর হামলা করেছিল। এতোটা আমি ভাবতে পারিনি।”

মৃত্তিকা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিচুস্বরে বলে,
“মামার উপর আমার সন্দেহ তীব্র।”

এবারে ইমতিয়াজ উঠে দূরে গিয়ে উলটো দিকে ফিরে দাঁড়ায়। অনেকক্ষণ রুমে নিরবতা বিরাজ করতে থাকে।

পিনপতন নিরবতা ছি°ন্ন করে মৃত্তিকা বলে,
“সুস্থ হওয়ার পরও আমি এজন্যই মামার বাসায় থেকেছি। মামা কারো সাথে কথা বলার সময় রাহা নামটা উচ্চারণ করেছে। কিন্তু আমার থেকে দূরত্ব রেখে চলেছে। (একটু থেমে) আমার মনে হয় মামের নামই রাহা।”

ইমতিয়াজ অন্যদিকে ফিরেই বলল,
“এখানে তাহমিনার দোষটা কোথায়?”

এই উত্তর মৃত্তিকার জানা নেই। ছাড়া ছাড়া কিছু ঘটনা জানে সে। সম্পূর্ণ ঘটনা জানতে চেয়েও এখনো জানতে পারেনি সে।

ইমতিয়াজ ফিরে তাকিয়ে বলল,
“কি দোষ ছিল আমার মিনার?”
ওর কন্ঠে ভূমি পর্যন্ত কেঁ°পে উঠবে হয়তো।

মৃত্তিকা কাঁ°পা কন্ঠে বলল,
“একটু বসুন, আমার কথা শেষ হয়নি।”

ইমতিয়াজ বসে না, তবে শান্ত থাকে। মৃত্তিকা ডানহাত দিয়ে বামহাত ঘ°ষতে ঘ°ষতে বলল,
“ক°ফি°নের ভিতরে আমার জ্ঞান এসেছিল, সজ্ঞানে ছিলাম অনেকক্ষণ। দুজনে কথা বলার সময় বলেছিল- সেদিন তাহমিনা আর তাহসিনার সাথে মিউকোকেও পাঠানো দরকার ছিল। রিপার মেয়ে রিপার সাথে চলে গেলে আর এতো ঝা°মেলা হতোই না। (একটু থেমে) ওরা প্রমাণ লো°পা°ট করছে, কিন্তু সেটা এই তিন খু°নের নয়। তার আগেও কোনো খু°ন হয়েছে।”

“পুরোনো খু°নের রেশ ধরেই নতুন কোনো খু°ন, সেটা ধামাচাপা দিতে আবারো…”

কথা শেষ না করেই ইমতিয়াজ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজায়। মনের এমন এক উথাল-পাতাল অবস্থা যা কাউকে বোঝানো যাবে না। রাগ, ক্ষো°ভ বেড়ে গেল হঠাৎ। ড্রেসিংটেবিলের উপরে থাকা সুগন্ধির বোতল মাটিতে ছুড়ে ফেলে। কাঁচের বোতল ভে°ঙে একাকার। এমন ঘটনায় মৃত্তিকা ঘা°ব°ড়ে যায়।

একে একে ড্রেসিংটেবিলের সবকিছু ফেলে দেয়। টেবিলের বইগুলোও ছুঁ°ড়ে ফেলে। ইমতিয়াজের এমন আচরণ মৃত্তিকা অচেনা। এতোটাই ঘা°ব°ড়ে গিয়েছে যে ওকে থামানোর মতো চিন্তা মাথায়ই আসছে না।

বি°ধ্ব°স্ত একটা রুমের মাঝে ইমতিয়াজ চেঁচিয়ে উঠে “তাহমিনা” বলে। জানলার গ্রিলসহ কেঁ°পে উঠলো শব্দে।
______________________________________

রাত একটার কাটা ছুঁইছুঁই, তবুও ঘড়িটা থামছে না। চলছে অবিরাম, রাত গভীর হচ্ছে।

আহনাফকে একের পর এক কল করছে সারাহ্। চিন্তায় চিন্তায় তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ঢাকা থেকে আসবে নাকি থাকবে তা এখনো জানে না। সেই যে ঢাকায় গিয়ে জানিয়েছিল তারপর আর কোনো কথা নেই।

আব্বাস সাহেব বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছেন। আহনাফ চলে আসবে এমন চিন্তা নিয়ে দশটায় উনি রুমে চলে গেছেন।

সারাহ্ কি করবে বুঝতে পারছে না। চিন্তিত সারাহ্ শেষে কান্না শুরু করে দেয়। ফ্লোরে বসে হাঁটুতে দুইহাত দিয়ে মাথা নুইয়ে কাঁদছে সে।

এদিকে আহনাফ কাকরাইল এসেছে। গো°র°স্থানে রাতে লোকে ভ°য় পায়, আসতে চায় না। আহনাফ এসে বসে আছে। এক নিস্তব্ধতার মাঝে আহনাফের নিশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।

তাহসিনার দুর্ঘটনার পর নিজেকে যতটা সামলে নিয়েছিল আজকে তার চেয়ে বেশি এলোমেলো হয়ে গেছে সে। ফোনটা যে অনবরত কাঁ°পতে কাঁ°পতে থেমে গেছে সে খেয়াল ওর নেই।
______________________________________

ঘর পরিষ্কার করেছে মৃত্তিকা। ইমতিয়াজ বিছানায় বসে আছে। হাত কে°টে গেছে, গাল আর গলার দিকেও ক্ষ°ত হয়েছে। মৃত্তিকা বাধা না দিলে হয়তো আরো বড় ধরনের কিছু হতে পারতো।

ইমতিয়াজের হাতে ব্যা°ন্ডে°জ লাগাচ্ছে মৃত্তিকা। এতোক্ষণ সে কাছে ঘেষতে দেয়নি। এখন নিরব। মৃত্তিকা স্যাভলন লাগানো তুলা নিয়ে গালে লাগাতেই ইমতিয়াজ ব্য°থায় একটু নড়ে উঠলো।

“সরি, আস্তে আস্তে দিচ্ছি।”

কথাটা বলে খুব আলতো হাতে স্যাভলন লাগায় মৃত্তিকা। ব্যা°ন্ডে°জ লাগাতে গেলে ইমতিয়াজ বাধা দেয়। মুখে বলে,
“লাগবে না।”

মৃত্তিকা ব্যা°ন্ডে°জ রেখে দিলো। সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখে চুপচাপ রুমে একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে। ইমতিয়াজ ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
“তখন আপনি আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলেন।”

মৃত্তিকা বলতে চাচ্ছে, কিন্তু ইমতিয়াজের যা প্রতিক্রিয়া তাতে এখন কথা বলতেই ভ°য় পাচ্ছে সে।

ইমতিয়াজ বুঝতে পারে মৃত্তিকা ওকে ভ°য় পাচ্ছে। ইমতিয়াজ শান্ত গলায় বলল,
“এখানে এসে বসুন।”

মৃত্তিকা এসে ইমতিয়াজের পাশে বসলো। ইমতিয়াজ বলল,
“ইনসাফ বলে একটা কথা ইসলামে আছে৷ জানেন তো বাবা আমাকে সবসময় ইনসাফের কথা বলতো। স্ত্রীদের প্রতিও ইনসাফ আছে। (একটু থামে) ভয় পাবেন না, জা°নো°য়ারের মতো ব্যবহার আপনি পাবেন না। একটু আগের ঘটনা আমার রাগের ফল। আপনি রাগের কারণ নন।”

মৃত্তিকা একটা ঢোক গিলে বলল,
“যদি সত্যি আমার মামা এসবে যুক্ত থাকে?”

মৃত্তিকার চোখে কোণা দিয়ে গড়িয়ে পড়া জলটুকু ইমতিয়াজ মুছে দিলো। মৃত্তিকা চোখ তুলে তাকায় ওর দিকে।

সত্যি তো হলো ইমতিয়াজ মৃত্তিকাকে ভালোবেসেছে, নিজ ইচ্ছায় স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেছে। তার অর্থ তো এই নয় যে সে তাহমিনাকে ভুলে গেছে।

একাধিক স্ত্রীর প্রতি কিভাবে ইনসাফ করতে হয় তা নিয়ে অনেক কোরআনের আয়াত ও হাদিস জানা আছে ইমতিয়াজের। কোরআন-হাদিসকে কি কেউ ভুল বা মি°থ্যা বলতে পারবে? জীবন তো কোরআনের আলোতেই সাজাতে হবে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here