অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী একত্রিংশ পর্ব (৩১ পর্ব)

0
439

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

একত্রিংশ পর্ব (৩১ পর্ব)

খুব ভোরে সারাহ্-র ঘুম ভা°ঙলো ফুফুর ডাকে। ফোনে সময় দেখে বুঝলো এখনো আযান দেয়নি। এখন কেন ডাকছে উনি, কোনো বি°পদ হলো না তো।

সারাহ্ উঠে গিয়ে দরজা খুলে। ফুফু ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলল,
“কিছু মনে করো না আমার আবার ভোরে চা খাওয়ার অভ্যাস তো।”

সারাহ্ জোরপূর্বক হেসে বলল,
“আমি বানিয়ে দিচ্ছি।”

চুলগুলো খোঁপা করে ওড়না দিয়ে শরীর ঢেকে সারাহ্ রান্নাঘরে যায়। ফুফুও পিছুপিছু গিয়ে দাঁড়ালো।

“আহনাফের মা নেই, শুনেছি তুমিও নাকি জব করো। সংসার সামলাও কিভাবে?”

সারাহ্ চায়ের পাতিল চুলায় বসিয়ে দিয়ে বলে,
“দুধ চা খাবেন নাকি লেবু চা?”

এক কথায় উনাকে এড়িয়ে গেল সারাহ্। ওর সংসার কিভাবে সামলায় বা কিভাবে সামলাবে তার কৈফিয়ত ও কাউকে দিবে না।

ফুফু গমগমে সুরে “আদা-লেবু চা” বলে চলে গেল। সারাহ্ মুচকি হাসে। চা বসিয়ে দিয়ে রুমে ফিরে আসে। আহনাফ ঘুমাচ্ছে। মাথায় হাত বুলিয়ে ওর মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে চোখের কোণায় চিকচিক করছে অশ্রুবিন্দু। রুমের লাইট বন্ধ, কিন্তু ডাইনিং এর লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ওড়নার কোণা দিয়ে চোখ মুছে দেয় সারাহ্।

“কি লুকাচ্ছেন আপনি? আপনাকে আমি এখনো কেন বুঝতে পারছি না?”

আহনাফের কপালে চুম্বন করে। আহনাফ ওকে জড়িয়ে ধরে গা ঘেষে শুয়ে পড়ে।

“তাহসিনার কাছে গিয়েছিলেন, প্রচুর ভালোবাসেন ওকে। ওর জন্যই মন খারাপ আপনার, কাঁদছেন আপনি?”

আহনাফ জেগে গেছে, কিন্তু চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভাণ ধরে রেখেছে। তাহসিনাকে নিয়ে সারাহ্-র মুখোমুখি ও হতে পারবে না। সারাহ্ আর কথা না বলে উঠে যায়। এরমধ্যেই আযানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
______________________________________

সকাল পৌনে সাতটা, আজকে মৃত্তিকা নাস্তা বানিয়েছে। অফিসে যেতে হবে তাই তাড়াতাড়ি উঠে রান্না সেরে ফেলে। ইমতিয়াজ ঘুমিয়ে কাঁদা। মৃত্তিকা সুন্দরমতো টেবিলটা সাজায়। বিড়ালটা ওর পায়ে পায়ে ঘুরছে।

“একদম টেবিল খারাপ করবি না। আমার কিন্তু কষ্ট হয়েছে বলে রাখলাম।”

আঙ্গুল তুলে কথাটা বলে রুমের দিকে তাকায় সে। ইমতিয়াজ এখনো উঠেনি। হাঁটু গেড়ে বসে বিড়ালকে বলে,
“ও তোর বাবা হলে আমি তোর মাম। সো, মামের কথা শুনে চলবি।”

মৃত্তিকা বেসিনের আয়নায় নিজেকে ঠিকঠাক মতো দেখে রুমে যায়। শান্ত সুরে ইমতিয়াজকে ডাকে,
“গুড মর্নিং।”

ইমতিয়াজ উঠে না। মৃত্তিকা গিয়ে ওর কানে সুরসুরি দেয়। ইমতিয়াজ নড়ে উঠে, মৃত্তিকা মুখ টিপে মুচকি হাসে। ইমতিয়াজ মৃদুস্বরে বলে,
“এই মিনা।”

মৃত্তিকা সরে যায়। ঘুমের ঘো°রে ইমতিয়াজের মুখে মিনা নামটাই আসে। কিছুক্ষণ বসে থেকে মাথানিচু করে উঠে যাওয়ার সময় ইমতিয়াজ ওকে টেনে নিজের বুকে নিয়ে আসে। দুহাতে শক্ত করে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। প্রথমবারের মতো এতো কাছে দুজনে, ইমতিয়াজের এই স্পর্শটাও নতুন। মৃত্তিকার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, শরীরে এক অন্যরকম শিহরণের সৃষ্টি হয়।

ইমতিয়াজের ফোনে এলার্ম বেজে উঠলো, হাত বাড়িয়ে এলার্ম বন্ধ করে সে। মৃত্তিকা হাত সরানোর পরই তার ঘুম ভেঙেছিল। মিনার নাম মৃত্তিকার সামনে উচ্চারণ করেছে, মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে এটাই স্বাভাবিক। তাইতো কাছে টে°নেছে, কষ্টটা কিছু কমে যাক।

“মৃত্তিকা?”
বলে হাতটা আলগা করতেই মৃত্তিকা উঠে যায়। মাথানিচু করে বসে থাকে। লজ্জায় পালাতে তো পারবে না, ইমতিয়াজ যে এখনো হাত ধরে রেখেছে।

আড়চোখে ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“অফিস যাবেন না? নাস্তা করে নিন।”

ইমতিয়াজ উঠে বসে। বলে,
“ফ্রেশ হয়ে আসি।”

মৃত্তিকার মুখটা কাছে এনে বলল,
“একটু মানিয়ে নিও।”

ইমতিয়াজ উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। শক্ত মেয়েটাও প্রিয় পুরুষের স্পর্শ পেয়ে লজ্জাবতী হয়ে গেছে।

নাস্তা সেরে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয় আটটার কিছু পরে। মৃত্তিকার অফিসটা মিরপুরে৷ মগবাজার থেকে যেতে বেশ খানিকটা সময় লাগলো ওদের।

অফিসে গিয়ে প্রথমেই গেল মৃত্তিকার কেবিনে। দুইকাপ কফি এনে দুজনে মুখোমুখি বসে। মৃত্তিকা বলল,
“কলরবের বাবা, দুলাল ফেরদৌসী, প্রতিদিন অফিসে আসে। ৭৫ শতাংশ শেয়ার হারিয়েছে, পাগল প্রায় উনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি।”

ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,
“সে আবারো ওই চেষ্টা করবে। আর মামার বিষয়টাও আমাকে জানতে হবে।”

ঘাড় ঘুরিয়ে আবারো দরজার দিকে তাকায়। বলে,
“আমার চেয়ে আপনি ওদের কাছে বেশি যেতে পারবেন। (একটু থেমে) আর আপনি এমডির রেজিস্টার এসিস্ট্যান্ট ছিলেন, তাই বিজনেসের পাক ঝোঁ°ক ভালো বোঝার কথা। কি বলেন?”

ইমতিয়াজ মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনলো। তারপর বলল,
“হয়তো ঠিক বলছেন। কিন্তু যারা এভাবে ঠান্ডা মাথায় কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া সহজ বলে মনে করেন?”
“সহজ নয় তবে সম্ভব।”

ইমতিয়াজ মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়। মৃত্তিকা এবারে স্বাভাবিক সুরে বলল,
“তবে ডিসিশন ফাইনাল, আপনি অফিস সামলাবেন আর আমি বাসা।”

ইমতিয়াজ হেসে উঠে বলে,
“বাসায় সামলানোর কিছু নেই, আপনিও অফিসে থাকবেন।”
“আমি কি করবো?”

কফির কাপে চুমুক দিয়ে ইমতিয়াজ বলে,
“ধরে নেন আমার পার্টনার।”
“পার্টনার?”
“হুম, পার্টনার।”

দরজায় নক করে মৃত্তিকার পিএ শিল্পা ইউনুস প্রবেশ করে। মেয়েটা কম বয়সী, মিষ্টি করে হেসে বলল,
“ম্যাম, ইসরাত জাহান চলে এসেছে।”
“ওকে, আমি আসছি।”

শিল্পা চলে গেলে মৃত্তিকা ইমতিয়াজকে বলল,
“ইসরাত রাতে চলে যাবে, তো এর আগে আমরা ওর সাথে একটু ফ্যাক্টরি দেখে আসি?”
“হুম, চলুন।”
______________________________________

“আজ কলেজ অফ?”

ফুফুর কথায় সারাহ্ মুচকি হেসে জবাব দিলো,
“জি, আজ শনিবার।”
“শনিবার অফ।”
কথাটা উনি কয়েকবার বলেন।

আলেয়া খাতুনের সাথে রান্নার জোগাড়ে ব্যস্ত সারাহ্। ফুফু রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের কাজ দেখছে। সারাহ্-কে জিজ্ঞাসা করে,
“তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায়?”
“শরীয়তপুর।”

ফুফু ভ্রূ উঁচিয়ে ঠোঁট উলটে মাথা নেড়ে বলল,
“তো পড়াশুনা কোথায় করেছো? ঢাকায়?”
“জি।”
“অনার্স কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে?”
“ঢাবি, কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট।”
কাজ করতে করতে জবাব দেয় সারাহ্।

“তো ভিক্টোরিয়াতে কেন জব নিলে?”

সারাহ্ নির্বিকার চোখে উনার দিকে তাকায়। তারপর বলল,
“আম্মুর ইচ্ছা ছিল।”
“কারণ?”
“তা জানিনা, আম্মুর ইচ্ছা ছিল এটাই যথেষ্ট।”

সারাহ্ আবারো রান্নায় মন দেয়। খাবারের গন্ধে অস্বস্তি হওয়ায় ওড়নাটা নাকে মুখে বেঁধে কাজ করছে।

“এটা এভাবে বেঁধেছো কেন?”

এই মহিলা প্রচুর কথা বলে। সারাহ্ একটু বি°র°ক্ত হয়৷ এতো প্রশ্ন একটা ছোট বাচ্চাও বোধহয় করবে না।

আহনাফ সারাহ্-কে ডাকে,
“ঐশী? এই ঐশী, (একটু থেমে) ঐশী, রুমে আসো।”
“যাও, ডাকছে। জলদি যাও।”

ওড়না ঠিক করে সারাহ্ নিশব্দে বেরিয়ে যায়। রুমে গিয়ে আহনাফকে ধ°ম°ক দিয়ে বলে,
“কাজ নেই কোনো আপনার? এভাবে বাড়ি মাথায় তুলে ডাকাডাকি করছেন, বাড়িতে আরো মানুষ আছে।”
“বউকেই তো ডাকছি, বাইরের কাউকে তো ডাকিনি। রাগ করো কেন?”

আহনাফ হেসে বলে,
“রান্নাঘরে তোমার কষ্ট হচ্ছিল।”

সারাহ্ বিছানায় বসে বলল,
“একটু একটু হয়েছে।”
“এজন্যই ডেকেছি, রেস্ট নাও।”
“আপনার ফুপ্পি অনেক কথা বলে। কতকত প্রশ্ন?”

আহনাফ হেসে বলে,
“ঠিকই বলেছো, ফুপ্পি কথা প্রচুর বলে। তবে উনার মনটা কিন্তু অনেক সরল।”
“সেটা আমিও বুঝেছি, নাহলে ভোরে এসে কেউ চা চায় এভাবে।”

আহনাফ হো হো করে হেসে উঠে। সারাহ্ও আলতো হেসে উঠে যায়। আবারো সেই রান্নাঘরের কাজে মন দেয়। আহনাফ বই পড়ছে, এরমধ্যে কল আসে সারাহ্-র নাম্বারে।

আহনাফ ফোন হাতে নিয়ে আননোন নাম্বার দেখে রিসিভও করে,
“আসসালামু আলাইকুম।”

অপরপাশের নারী কন্ঠ বলে উঠে,
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম, নার্গিসের মেয়ের নাম্বার এটা?”
“জি, আপনি কে?”
“আসলে আমি নার্গিসের ফ্রেন্ড রাহা। ওর মেয়েকে দিন ফোনটা।”
“আমি ওর হাসবেন্ড, আমাকে বলুন কি বলবেন?”
“নার্গিসের নাম্বারটা দেয়া যাবে?”

সরাসরি এমন প্রশ্নে আহনাফের কপাল কুঁচকে যায়। সারাহ্-র নাম্বার যে যোগাড় করতে পারে সে সারাহ্-র মায়ের নাম্বার যোগাড় করতে পারলো না।

আহনাফ সহজ ভাষায় বলে,
“এমনি ওমনি অপরিচিত কাউকে দেয়া যাবে না।”
“বললাম তো আমি রাহা।”
“কিন্তু আমি আপনাকে চিনি না।”
“তবে এই নাম্বারটা নার্গিসকে দিয়ে বলবেন রাহার নাম্বার।”

কল কে°টে যায়। আহনাফ ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কপালের ভাঁজ আরো গভীর হয়।

সুন্দরী এক রমনী ছিল ফোনের ওপাশে, তার দেহের গড়ন যেকোনো পুরুষের নজর কাড়তে বাধ্য। নামটাও তার মতই সুন্দর, অপরূপা।

সে ফোন রেখে শাফিনকে বলে,
“চিন্তা করতে পারো নার্গিসের মেয়েকে বিয়ে করে আহনাফের মতো ছেলের এতো কথা হয়েছে?”

শাফিন মাথা নেড়ে বলল,
“একটা বিষয় কনফার্ম, আহনাফ রাহাকে চেনে না।”

অপরূপাও মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়। শাফিন বলে,
“তবে চিন্তার কারণ মৃত্তিকা, ও রাহা সম্পর্কে শুনেছে।”

অপরূপা ধ°ম°ক দিয়ে বলে,
“তোমার কারণেই হয়েছে এটা। আমি কোনো বিপদে পড়তে চাই না।”

শাফিন অপরূপার গাল চে°পে ধরে বলল,
“চুপ, আমার উপরে হুকুম কম চালাও।”

শাফিন আবারো গিয়ে আগের জায়গায় বসে বলে,
“লুৎফরের মনে বোধহয় সন্দেহ জন্মেছে। এর একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”
“করে ফেলো। আর দুই মেয়েকে একসাথে হাতে রাখতে পারলে নার্গিস এমনিতেই দুর্বল হবে।”

কথা শেষে অপরূপা জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তার কল্পনায় তার কাজে কোনো ভুল নেই, সে সঠিক। আত্নীয়স্বজন, মায়া-মহব্বত এসবের স্থান ওর হৃদয়ে নেই। টাকার জন্য সে সব করতে পারে, বাবার বয়সী শাফিনকে বিয়েও করতে পারে। এ বিয়েটা দেলোয়ারার অগোচরে করেছে শাফিন। অপরূপাকে আলাদা বাসায় রেখেছে।

“মৃত্তিকাকে তুমিই শান্ত করো, শাফিন। তোমার ওয়েতে শান্ত করো ওকে। নার্গিসের জন্য তো আরিফা আর আমি যথেষ্ট।”

শাফিন বিছানায় আরাম করে বসে বলল,
“আরিফা সাহায্য করবে?”
“এটাই শেষ সাহায্য। এই মাসেই প্রত্যেকটা প্রমাণ শেষ করে দাও।”
“তাড়াহুড়ো করো না, আগে তানজিম আর সামিহার বিয়েটা দেয়া উচিত।”

অপরূপা কপাল কুঁচকে বলল,
“কেন ওরা মেয়ে দিবে মমতাজের বেকার ছেলেকে?”
“প্রস্তাব নিয়ে যাবো, ভালো করে বুঝিয়ে বলবো এখন বিয়ে হোক আর ওরা পড়াশুনা চালিয়ে যাক। পড়া শেষে সংসার শুরু করবে।”

অপরূপা মুখ বাঁ°কিয়ে মাথা নাড়ে। শাফিন বুদ্ধিমান, তবে মাঝেমাঝে তার বোকামির জন্যই পুরোনো ঘটনা নতুন করে উঠে এসেছে আর ওদের নতুন নতুন খু°ন করে আবারো সেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে হচ্ছে।
______________________________________

রবিবার সকালে তাড়াতাড়ি কলেজে আসে সারাহ্ ও আহনাফ। কলেজে কোনো একটা মিটিং থাকায় আহনাফকে তাড়াতাড়ি আসতে হয়েছে আর সারাহ্ও সাথে এসেছে। কলেজে এসে শুনলো মিটিং ক্যান্সেল।

আহনাফকে মাঠে হাঁটতে দেখে সারাহ্ টিচার্স রুম থেকে বেরিয়ে এসে বলল,
“মিটিং?”
“ক্যা°ন্সে°ল হয়েছে।”

সারাহ্ হাসতে হাসতে মাঠে এসে বলে,
“আহারে, সকালে উঠে কি জলদিই না এসেছেন। বেচারা।”

আহনাফ হাত নেড়ে বলল,
“রসমালাই খাবা? আদি মাতৃভান্ডারের রসমালাই।”
“কোথায় এটা?”
“গেলেই বুঝবা।”

দুজনে কলেজের সামনে থেকে অটোরিকশা নিলো। আহনাফ অটোতে বসে চালককে বলল,
“মামা, প°দুয়ার বাজার, মাতৃভান্ডারের সামনে চলেন।”

অটো চলতে শুরু করে। সারাহ্ আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলে,
“জায়গার নাম কি?”
“প°দুয়ার বাজার।”

সারাহ্ একটু হাসে। প্রায় একবছর হতে চলল সে কুমিল্লা থাকে, কিন্তু এখানের তেমন কোনো জায়গা সে চিনে না।

আহনাফ বলে,
“তুমি গোমতী পাড়ে যেতে চেয়েছিলে না? এই শুক্রবারে নিয়ে যাবো।”

সারাহ্ খুশি হয়ে ওর হাত ধরে কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“সত্যি তো? আবার কোনো অজুহাত দিবেন না?”
“একদম সত্যি।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা মাতৃভান্ডারে পৌঁছে যায়৷ ভাগ্য ভালো থাকায় ভিতরে বসার জায়গা পায়।

আহনাফ বলে,
“সকাল বলে ভী°ড় কম, বিকেলে আসলে তো ওই রাস্তা পর্যন্ত লাইন থাকে।”

অল্প করেই রসমালাই কিনলো। আহনাফ সারাহ্-কে খাইয়ে দিয়ে বলে,
“অতিথি আর অতিথির মাকে আপ্যায়ন করতে হবে তো।”
“ব°মি হলে কে সামলাবে?”
“এই বান্দা আছে তো এখনো।”
______________________________________

এক এক করে তিনদিন কেটে যায়। সকাল সাতটা, তানজিম ভার্সিটিতে চলে গেছে। লুৎফর রহমান দোকানে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। মমতাজ বেগম দুধের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,
“খেয়ে নাও।”
“রাখো।”

বেডসাইড টেবিলে দুধের গ্লাস রেখে মমতাজ বেগম ডাইনিং এ গিয়ে নিজের গ্লাসে দুধ ঢাললেন। লুৎফর রহমান দুধ অর্ধেকটুকু খেতেই অসুস্থ বোধ করা শুরু করে। গলায় যেন কিছু একটা আটকে গেছে, নি°শ্বাসটা যেন বুকেই থাকতে চাচ্ছে। কয়েকবার জোরে নিশ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হতে চায়।

“মমতা..”

মমতাজ বেগমকে ডাক দেয়ার শক্তিটুকু তার নেই। বিছানায় বসে খেতে খেতে ওখানেই পড়ে গেল। নি°শ্বাসের পরিমাণ ক্রমাগত কমছে।

মমতাজ বেগমেরও একই দশা। চেয়ার থেকে নিচে পড়ে ছ°টফ°ট করতে করতে উঠে টেবিলের উপর থেকে নিজের ফোনটা নেয়। তানজিমের নাম্বারে ডায়াল করে।

তানজিম রিসিভ করে বলে,
“আম্মু, মাত্রই তো আসলাম।”
“তানজিম বাসায় আ.. আসো।”

শীতল কন্ঠে কথাটা বলে শান্ত হয়ে যায় মমতাজ বেগম। তানজিম কয়েকবার “আম্মু, আম্মু” বলে ডাকলেও সারাশব্দ আসে না। ফোন রইলো টেবিলে আর মমতাজ বেগম ফ্লোরে গ°ড়াগ°ড়ি খেতে খেতে শান্ত হয়৷ মুখের কো°ণা দিয়ে সাদা ফেনা জাতীয় কিছু বেরিয়ে আসে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here