#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
দ্বাত্রিংশ পর্ব (৩২ পর্ব)
হাসপাতালের চেয়ারে শান্ত হয়ে বসে আছে তানজিম। দুইবোনের পর মা-বাবাও একই পথের যাত্রী হয়েছে, মৃ°ত্যুর সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। এই বয়সে ছোট ছেলেটা কিভাবে তা সহ্য করবে? কথায় বলে না, অল্প শো°কে কা°তর আর অধিক শো°কে পাথর। তানজিমের হয়েছে সে অবস্থা।
বাসায় ফিরে মমতাজ বেগম আর লুৎফর রহমানের অবস্থা দেখে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসে তানজিম। খবর পেয়ে অফিস থেকে ছুটে এসেছে ইমতিয়াজ ও মৃত্তিকা। বড়মণির জন্য মৃত্তিকার সে কি কান্না। ফুঁ°পিয়ে ফুঁ°পিয়ে অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে সে। তার মাথায় শান্ত হয়ে হাত বুলাচ্ছে ইমতিয়াজ।
তানজিম শাফিন সাহেবকে খবর দিয়েছে। উনি হাসপাতালে আসতেই মৃত্তিকা ইমতিয়াজের বাধা উপেক্ষা করে গিয়ে উনার কলার টে°নে বলে,
“আমার বড়মণিকে ওই মে°রেছে, ও কেন এসেছে এখানে। বের হও, যাও।”
মৃত্তিকার ধা°ক্কা শাফিন পড়ে গিয়ে আবারো উঠে দাঁড়ায়। ইমতিয়াজ ওকে সরিয়ে নিয়ে আসে। মৃত্তিকা ইমতিয়াজকে বলে,
“উনি বড়মণিকে পয়°জন দিয়েছে।”
ইমতিয়াজ ওর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বেশ শক্ত করে বলল,
“শান্ত হও, প্রুভ কি উনি পয়°জন দিয়েছে। এভাবে চিৎকার করে কিচ্ছু হবে না।”
মৃত্তিকা জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে কান্না নিয়ন্ত্রণ করে। ইমতিয়াজ ওকে চেয়ারে বসিয়ে বোতল থেকে পানি পান করায়। তারপর সে যায় আইসিইউর সামনে।
দুজনের পাকস্থলী থেকেই বি°ষ অপসারণ হয়েছে, কি বলে একে? ও হ্যাঁ, স্টোমাক ওয়াশ করা হয়েছে। তবুও বি°ষ°ক্রিয়া ভ°য়া°বহ থাকায় উনাদের দুজনের অবস্থাই আ°শং°কাজনক, বিশেষ করে লুৎফর রহমান বেশি ভ°য়া°বহ অবস্থায় আছে।
“ভাইয়া?”
তানজিমের শান্ত ডাকে ইমতিয়াজ তাকায়। তানজিম বলে,
“আপুকে নিয়ে তুমি চলে যাও।”
“প্রয়োজন নেই, মৃত্তিকা থাকুক। মায়ের এই অবস্থায় ওকে নিয়ে গেছে পাগলামি করবে।”
তানজিম আর কিছু বলে না।
অপরূপা হাসপাতালে এসেছে। সাধারণ একজন রোগীর সদস্য সেজে ওদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মৃত্তিকার চোখ ঠিকই ওকে দেখে নেয়। তবে তেমন কোনো সন্দেহের কারণ নেই।
______________________________________
ছোট ফুফু আম্বিয়া আর ফুপা জামিল এখনো আহনাফদের বাসায়ই আছে। সারাহ্-র শারিরীক অসুস্থতা দেখে আম্বিয়ার ঠিকই সন্দেহ হতে থাকে।
আজ সারাহ্ কলেজেও যেতে পারেনি। বমি করে করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার হওয়ায় আহনাফও কলেজ গ্যাপ দিতে পেরেছে। সকাল থেকে একটানা ঘুমাচ্ছে সারাহ্। অবশেষে খাবার খাওয়ার জন্য আহনাফ ওকে ডাকে।
“ঐশী, ঐশী (একটু থেমে) ওই সুন্দরী।”
সারাহ্ চোখ না খুলেই আহনাফের কাঁধে চা°পড় দেয়। আহনাফ হেসে ওর কপালে চুম্বন করে বলল,
“উঠো, কিছু খাবে।”
“ভালো লাগছে না।”
নিচুস্বরে কথাটা বলে আহনাফের গা ঘে°ষে শুয়ে পড়ে সারাহ্। আহনাফ ওকে টেনে তুলে বলল,
“খেতে হবে।”
সারাহ্ খোঁপা করতে গেলে আহনাফ বাধা দেয়। নিজে চিরুনি দিয়ে সুন্দর করে আঁচড়ে দিয়ে চুলে ক্লিপ লাগিয়ে দিলো আহনাফ। গ্লাস থেকে পানি ঠেলে নিজের হাত ভিজিয়ে সারাহ্-র মুখ মুছে দিয়ে বলে,
“খাবার আনছি।”
আহনাফ টেবিলের উপর থেকে স্যান্ডউইচের প্লেট আনে। সারাহ্-র সামনে প্লেট দিয়ে বলে,
“আমি বানিয়েছি।”
ঘুম অনেকটাই কে°টেছে তার। স্যান্ডউইচে কামড় দিয়ে বলল,
“বাসার কেউ দেখেনি?”
“দেখেছে, তবে ফুপ্পি মনে হয় কিছু বুঝেছে।”
অর্ধেকটুকু খেয়ে সারাহ্ বলে,
“আর না। ভালো লাগছে না।”
আহনাফ জোর করে না। সারাহ্ শুয়ে পড়লে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সারাহ্ আহনাফের শার্টের কলার টে°নে কাছে এনে বলে,
“আজ পারফিউম দেননি?”
“না, তোমার অস্বস্তি হবে।”
“চিন্তা তো সব নিজের ছেলে-মেয়েদের জন্য।”
“সব না কিছুটা, সিংহভাগ তো তাদের মায়ের জন্য।”
সারাহ্ মনের অজান্তেই হেসে উঠে। নিজে থেকেই আহনাফকে কাছে নিয়ে আসে৷ আবার নিজেই লজ্জায় কুঁচকে যায়।
দরজা চাপিয়ে রাখা ছিল, পর্দা পুরোপুরি দিয়ে রাখা। পর্দা সরিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মিষ্টি মুহূর্তগুলো দেখে ফুপা জামিল। ফোন কানে নিয়ে বলে,
“সারাহ্ প্রেগন্যান্ট।”
“ঠিক এই ভ°য়টাই পেয়েছিলাম আমি।”
ফোনের ওদিকে থাকা অপরূপা জবাব দেয়।
জামিল পর্দা দিয়ে সরে আসার সময় হাতের ঘড়িটা দরজায় লেগে একটা মৃদু শব্দ হয়। জামিল দ্রুত জায়গা ত্যাগ করে। আহনাফ-সারাহ্ চমকে উঠে।
“কেউ এসেছিল নাকি?”
বলে আহনাফ উঠে যায়। দরজার ওপাশে কাছাকাছি কেউ না থাকলেও সদর দরজা দিয়ে জামিলকে বেরিয়ে যেতে দেখে।
“ফুপা এভাবে নক না করে রুমে এসেছিল?”
খুব ধীরে কথাটা বলে আহনাফ। কপাল তার কুঁচকে আছে।
______________________________________
রাত দশটা বেজে গেছে। হাসপাতালে এখনো বসে আছে মৃত্তিকা, তানজিম। ইমতিয়াজকে অফিসে যেতে হয়েছে। দুলাল ফেরদৌসী অফিসে এসেছেন, খবরটা পেয়েই যেতে হয়েছে। এখনো ফেরেনি।
অপরূপা মৃত্তিকার বিপরীতে একটা চেয়ারে বসে আছে। চোখেমুখে তার বি°ষন্নতা বিরাজ করছে।
শাফিন খাবার এনে তানজিমকে বলে,
“তোমরা খেয়ে নিবে আসো।”
“ক্ষুধা নেই মামা।”
নির্বিকার জবাব দেয় তানজিম।
“মিউকো?”
নামটা উচ্চারণের সাথে সাথেই মৃত্তিকা খাবারগুলো ছু°ড়ে ফেলে বলে,
“তোমার খাবার তুমি খাও, প্রয়োজনে রাস্তার কুকুরের মতো খাও। (একটু থেমে) কুকুরের থেকে কম নও তুমি।”
মৃত্তিকা হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। শাফিন রাগি চোখে কি°ড়মি°ড়িয়ে তাকায় ওর দিকে। তানজিমের চোখে বি°ষ্ময়। মৃত্তিকা বারবার শাফিনকে খুনি প্রমাণ করতে চাইছে কেন এটাই বুঝে উঠছে না তানজিম।
মৃত্তিকা রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ায়। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা বার বার ওর দিকে তাকাচ্ছে। মৃত্তিক জানে ওটা ওর বাবারই লোক।
শরীফ এসে মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“জামাই কোথায়?”
মৃত্তিকা ছেলেটার দিকে ইশারা করে বলে,
“আপনার লোক জানায় নাই আপনাকে? (একটু থেমে) আর জামাই কি? ইমতিয়াজ বলেন।”
শরীফ হেসে বলে,
“আমার দোস্ত নাকি যে ইমতিয়াজ বলবো? আমার মেয়ের জামাই। অফিসে গেছে, আমি জানি।”
“মেয়ে আপনাকে মানে না আবার জামাই নিয়ে ডাকাডাকি।”
মৃত্তিকা রাস্তার দিকে নেমে গেলে শরীফ ওকে সরিয়ে এনে বলে,
“মায়ের মতো তুমিও চলে যেও না প্লিজ।”
মৃত্তিকা হাত সরিয়ে তাচ্ছিল্য করে বলল,
“মামকে যখন মা°রতেন, সি°গা°রেট জ্বালিয়ে ছ্যাঁ°কা দিতেন। তখন এই ভালোবাসা কোথায় ছিল? প্রতিরাতে যখন মাম চিৎকার করতো তখন প্রেম কোথায় ছিল?”
মৃত্তিকা ভিতরে যাওয়ার সময় ইমতিয়াজকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে দাঁড়ায়। ইমতিয়াজ শরীফকে লক্ষ্য করে।
“চলো।”
দুজনে ভিতরে চলে যায়। শরীফ বাইরে একা দাঁড়িয়ে থাকে।
সিঁড়ি দিয়ে উপরে যেতে যেতে মৃত্তিকা বলে,
“এবার আমি শিউর এসবে মামার হাত আছে। বড়মণির মতো শান্ত আর ভালো মানুষের সাথে কার শ°ত্রুতা থাকবে বলেন?”
ইমতিয়াজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমার মনে হচ্ছে এবারে একটা বড় ধরনের অ্যা°ক°শন নেয়া উচিত।”
“তারচেয়ে একরাতে আমার থা°র্ড ডিগ্রিতে এমনিতেই মুখ খুলবে।”
“মৃত্তিকা।”
ইমতিয়াজের কড়া ভাষা শুনে মৃত্তিকা থেমে যায়। ওকে একহাতে আগলে নিয়ে বলল,
“ধৈর্য রাখো, এতো অধৈর্য হলে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না।”
______________________________________
সকলে রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছে। সকল প্লেট-বাসন নিয়ে রান্নাঘরে ধুতে গেছে সারাহ্। আম্বিয়া গিয়ে বলে,
“আমি সাহায্য করি?”
সারাহ্ একটু সরে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি করে নিবো, আপনি চাইলে হেল্প করতে পারেন।”
আম্বিয়া হেসে কাজ করতে করতে বলে,
“প্রে°শার কমে কেন হঠাৎ?”
“জানি না।”
“আহনাফ বলল তো তুমি খাওয়া দাওয়া করো না, ঠিকমতো ঘুমাও না।”
সারাহ্ মুচকি হাসে। আহনাফ রুমে যাওয়ার সময় জামিলকে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে। আবারো নিজের ফোনে একটা ছবিও তুলে। জামিলের নজরটা খেয়াল করে আহনাফ রেগে যায়।
রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,
“ঐশী, এক্ষন রুমে আসো।”
সারাহ্ চমকে উঠে। আহনাফ এমন রাগ করে কখনো ডাকে না তো। সারাহ্ দ্রুত রুমে আসে।
“কি হয়েছে?”
আহনাফ দরজা লাগিয়ে দিয়ে সারাহ্-কে কাছে টে°নে এনে বলল,
“চুপ, একটা কথাও বলবা না। কাজ খালা এসে করবে, তোমার কিছু করা লাগবে না।”
“আহনা..”
সারাহ্-র ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে বলে,
“চুপ থাকতে বলেছি কিনা?”
“কেন রাগ হয়?”
আহনাফ দরজাটা একটু খুলে। সারাহ্-কে বলে,
“রুমে থাকবা, দরজার ওপাশে গেছো তো দেখবা কি করি?”
আহনাফ রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সারাহ্ বিছানায় গিয়ে বসে। আহনাফের এ ধরনের আচরণ ওকে বারবার অবাক করে।
“ফুপা, বাইরে যাবেন?”
আহনাফের ডাকে আব্বাস সাহেব বললেন,
“কেন আহনাফ? রাতের বেলা বাইরে কি?”
“এমনিই বাবা, একটু হাঁটতে যেতাম আরকি। ভাবলাম ফুপাকে নিয়ে যাই।”
আব্বাস সাহেব হাসলেন। বলেন,
“ওহ, জামিল যাও।”
আহনাফ আগে আগে বেরিয়ে গিয়ে কল দিলো ওর ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ুয়া এক ছাত্রকে। তাকে কয়েকজন এলাকার ছেলে আর ব্যাট নিয়ে এদিকে আসতে বলে আহনাফ ফোন রাখে।
জামিল বেরিয়ে এসে বলল,
“কোথায় যাবে?”
আহনাফ মুখ টি°পে হেসে বলে,
“সামনেই।”
কুমিল্লা শহরে রাতেও লোকজন চলাচল করে। আহনাফ মেইনরাস্তা ছেড়ে খোলা মাঠের দিকে যায়। মাঠে ছেলেগুলো অপেক্ষা করছে। আহনাফকে দেখে হাত নাড়া দেয়।
“ওরা কারা?”
“আমার স্টুডেন্ট।”
আহনাফ গিয়েই এক ছেলের হাত থেকে ব্যাট নিয়ে জামিলের পায়ে বা°রি দিয়ে ফেলে দেয়। বেশ জোরেই দুই তিনটা বা°রি দিয়ে ফেলে।
“এসব কোন ধরনের অ°সভ্যতা আহনাফ?”
আহনাফ আবারো জামিলের পায়ে বা°রি দিয়ে বলল,
“ঐশীর দিকে বারবার তাকানোর সাহস কেন করছো তুমি?”
“বউ প্রেগন্যান্ট বলে এতো কেয়ার?”
আহনাফ বসে তার মুখে কয়েকটা ঘু°ষি দিয়ে দেয়। জামিলের ফোন বেজে উঠে। জামিল ধরার আগেই আহনাফ ছোঁ দিয়ে ফোন নিয়ে ছেলেগুলোকে ইশারা করে ওকে আটকাতে।
অপরূপা নামটা দেখে রিসিভ করলে অপরপাশ থেকে নারী কন্ঠ বলে উঠে,
“ছবিটা ভালো এসেছে। লাস্ট কাজ, সারাহ্-কে উঠিয়ে নিয়ে আসো।”
আহনাফ জামিলের দিকে রাগি চোখে তাকায়। অপরূপা বলে,
“শুনতে কি পারছো না আমি কি বলছি?”
“ঐশীর দিকে নজর দিও না, ফলাফল খারাপ হবে।”
আহনাফ কল কে°টে জামিলকে বলে,
“কে এটা?”
জামিল হেসে বলল,
“জানতে পারবে না, আহনাফ। তোমার স্ত্রী আর বেবিকে বেশিদিন দেখতে পারবে না। তাহসিনার কাছেই পাঠিয়ে দিবো।”
তড়তড় করে রাগটা বেড়ে যায় আহনাফের। জঘন্যভাবে মা°রে জামিলকে। নিজেও হাতে ব্য°থা পায়। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে ফিরে আসে।
আবারো ফিরে গিয়ে বলল,
“কেন করছো এসব?”
“তোমার শাশুড়িকে জিজ্ঞাসা করো।”
আহনাফের মনে পড়ে তানজিমের সেই কথা, তোমার বিয়েটাও পরিকল্পিত। সারাহ্-র শোনা সেই কথা আর নার্গিস পারভিনের অস্বাভাবিক আচরণ।
দ্রুত বাসায় আসে আহনাফ। আব্বাস সাহেব ওকে একা দেখে জিজ্ঞাসা করে,
“জামিল কোথায়?”
আহনাফ দুই আঙ্গুল তুলে বলল,
“স্মো°কিং করছে।”
আহনাফ রুমে চলে যায়। সারাহ্ ফোনে কোনো একটা ভিডিও দেখছে। আহনাফ রুমে আসায় ফোন রেখে বলল,
“কোথায় গিয়েছিলেন?”
আহনাফ এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। সবকিছু এখনো ওর কাছে অগোছালো। এলোমেলো থাকাটাই স্বাভাবিক।
সারাহ্ বলল,
“কি হয়েছে?”
সারাহ্-র দিকে তাকিয়ে ওর গালে হাত রেখে বলল,
“আমি জানি না কি আমার কি হয়েছে।”
“কোথায় গিয়েছিলেন?”
“মিস করছিলে খুব?”
সারাহ্ ওর বুকে একটা ধা°ক্কা দিয়ে বলে,
“ধুর।”
______________________________________
একসপ্তাহ পেরিয়ে গেল। মমতাজ বেগম আর লুৎফর রহমান সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে এসেছে। মৃত্তিকা উনাদের বাসায়ই আছে। উনাদের সেবাযত্ন করার মতো কেউ তো নেই এখানে। তানজিম যদিও এতে রাজি ছিল না, তবে তেমন একটা বাধাও সে দেয়নি।
রাত সাড়ে আটটা, অফিস শেষে ইমতিয়াজ বাসায় আসে৷ আগের চাকরি ছেড়ে দিয়ে কোম্পানির কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দিচ্ছে সে। রমজানের পর ট্রেনিংয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়া যাবে সে।
বেল বাজালে তানজিম এসে দরজা খুলে। ইমতিয়াজ ভিতরে যায়। তিনরুমের বাসায় তাহমিনার সাথে ইমতিয়াজ যে রুমে থাকতো সেখানেই দুইদিন ধরে থাকছে মৃত্তিকার সাথে। বিষয়টা স্মৃ°তিতে আ°ঘা°তের মতো হলেও শক্ত মানসিকতার ইমতিয়াজ এসব সহ্য করতে পারে। দিনটুকুই কেবল থাকা হয়, রাতে মৃত্তিকা মমতাজ বেগমের সাথেই সাথে আর লুৎফর রহমান থাকে তানজিমের সাথে।
ইমতিয়াজ ফ্রেশ হয়ে আসে। মৃত্তিকা এসে জিজ্ঞাসা করে,
“দুলাল ফেরদৌসীর কি খবর?”
ইমতিয়াজ শার্ট খুলতে খুলতে বলল,
“কি আর হবে? আমাকে হেয় করার যত প্রকার উপায় আছে সব কাজে লাগাচ্ছে।”
মৃত্তিকা গিয়ে ওর শার্টের বোতামগুলো একে একে খুলে দেয়। শার্টটা হ্যাংগারে ঝু°লিয়ে দিয়ে বলে,
“কি বলে আবার?”
“কি আর? ওই বউয়ের কোম্পানিতে আছো। (একটু থেমে) আই ডোন্ট কেয়ার, যা খুশি বলুক।”
মৃত্তিকা ফিরে তাকিয়ে আলতো হাসলো। বলে,
“হাতমুখ ধুয়েছেন?”
“হুম।”
মৃত্তিকা বেরিয়ে যেতে নিলে ইমতিয়াজ বলল,
“মামা এসেছিল?”
“এসেছিল, দুপুরে একগা°দা গিলে গেছে।”
“কেইসটা ক্লোজ করে দিয়েছে, সমস্যা দুধটা মেয়াদ উত্তীর্ণ ছিল এটা বলেছে।”
মৃত্তিকা এগিয়ে আসে।
“দুধ মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ছানা কে°টে যায়।”
“সমস্যা তাদের কে বোঝাবে?”
হঠাৎ লোডশেডিং হলো, কিন্তু জেনারেটর চালু হলো না।
“জেনারেটরের আবার কি হলো?”
মৃত্তিকা ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বা°লালো। ইমতিয়াজ ফোনটা খাটে ছু°ড়ে ফেলে মৃত্তিকাকে কাছে টা°নে। দুজনে কাছাকাছি, নিশ্বাসটুকুও মিলেমিশে একাকার। একই চাহিদা, একই আবেগ দুজনের। মৃত্তিকার কেঁপে উঠা ওষ্ঠোধর প্রথমবারের মতো কোনো পুরুষের ওষ্ঠের স্পর্শে সিক্ত হয়। দুরত্বটুকু শেষ করার ইচ্ছায় দুটো মন যখন পাগল হয়ে উঠে তখনই মমতাজ বেগম মৃত্তিকাকে ডেকে বলে,
“মিউকো, লাইট জ্বা°লিয়ে দিয়ে যাও।”
মৃত্তিকা সরে আসতে চাইলে ইমতিয়াজ ওকে আরো কাছে নিয়ে নেয়। আবারো মমতাজ বেগম ডাক দিলে ইমতিয়াজ হাতের বাঁধন হালকা করে, মৃত্তিকা উঠে চলে যায়।
চার্জার লাইট জ্বা°লিয়ে মমতাজ বেগমের রুমে দিয়ে মৃত্তিকা রান্নাঘরে চলে আসে। নিজেকেই যেন লজ্জা লাগছে তার।
চলবে….
(ভি°লেনদের সাথে পরিচিত হন, রহস্য ধীরে ধীরে সামনে আসবে। ধৈর্য রাখুন। ভালোবাসা)