#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||বোনাস পর্ব||
১৮।
আহি মনোযোগ দিয়ে খাবারের মেন্যু দেখছে। আর তাজওয়ার আহিকে দেখতে ব্যস্ত। কতো মেয়ের সাথেই তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এমনকি দু’জন মেয়ের সাথে এখনো তার সম্পর্ক আছে। দু’জনের মধ্যে একজন ভালোভাবেই জানে তাজওয়ার এই সম্পর্কে আগ্রহী নয়। কিন্তু টাকার লোভে সে তাজওয়ারকে ছাড়ছে না। আর অন্য মেয়েটা বোকাসোকা প্রকৃতির। বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে মেয়েটিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিল তাজওয়ার। আহি দেশে আসার পর অনেক চেষ্টা করেছিল সম্পর্কটা শেষ করতে। কিন্তু ছিঁচকাঁদুনী মেয়েটা তাজওয়ারকে ছাড়া পাগলপ্রায়। হুট করে ছেড়ে দিলে মেয়েটা নিশ্চিত উল্টাপাল্টা কিছু করে বসবে। আর এই মুহূর্তে তার ঘাড়ে মামলা উঠলে আহির মনে জায়গা পাওয়া আরো দুষ্কর হয়ে পড়বে। তাই সে ভেবেচিন্তে প্রতিটা পদক্ষেপ নিচ্ছে। অন্যদিকে আহির সাথে তার কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই। তবুও তাকে মুগ্ধ হয়ে দেখে তাজওয়ার। কোনো মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে তাজওয়ার কখনো মুগ্ধ হয় নি। এমনকি কোনো মেয়েই আজ পর্যন্ত তাজওয়ারকে উপেক্ষা করতে পারে নি। চেহারায় মোটামুটি আকর্ষণ থাকলেও তাজওয়ার যে কাউকে তার কথা দ্বারায় সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করতে পেরেছে। বোকাসোকা মেয়েরা তার কথার জালে সহজেই আটকা পড়ে যায়। আর ধূর্ত মেয়েদের কাছে তাজওয়ার খানের টাকাটাই আকর্ষণের বিষয়বস্তু৷ কিন্তু আহি এসবের ঊর্ধ্বে। তাই হয়তো তাজওয়ার আহির মায়ায় পড়ে গেছে।
এমনিতেই সহজে পেয়ে যাওয়া কোনো কিছুর মূল্য নেই। মানুষের আগ্রহ দুর্লভ বিষয়ের দিকেই একটু বেশি।
(***)
আহি মেন্যু একপাশে রেখে তাজওয়ারের দিকে তাকালো। তাজওয়ার এখনো আহির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আহি তা দেখে বিরক্তির সুরে বলল,
“অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছি তুমি অসভ্যের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছো।”
তাজওয়ার বাঁকা হেসে বলল,
“অসভ্যের মতো তাকিয়ে থাকলে তুমি এই সভ্য রেস্টুরেন্টের পরিবর্তে কোনো হোটেল রুমে থাকতে।”
আহি তাজওয়ারের কথায় রেগে গেলো। সে উঠে চলে যেতে যাবে তখনই তাজওয়ার হাত ধরে বলল,
“তোমার কথার উত্তর দিলাম মাত্র। তুমি রেগে যাচ্ছো কেন?”
আহি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু তাজওয়ার এতো সহজে এই হাত ছাড়বে না। হঠাৎ একটা হাত এসে তাজওয়ারের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। তাজওয়ার ভ্রূ কুঁচকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির দিকে তাকালো। এদিকে হাত ঢিলে হতেই আহি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পাশ ফিরে দেখলো রাদ দাঁড়িয়ে আছে। রাদকে দেখে আহি বলল,
“তুই এখানে?”
তাজওয়ার আহির সম্বোধনে স্বাভাবিক হয়ে উঠে দাঁড়ালো। রাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি আহির ফ্রেন্ড?”
রাদ আহির দিকে তাকিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কে?”
তাজওয়ার আহির পাশে দাঁড়িয়ে তার কাঁধে হাত রাখতেই রাদ ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। তাজওয়ার আহির দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি আহির উড বি হাজবেন্ড।”
আহি তাজওয়ারের হাত সরিয়ে দিয়ে রাদের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“মোটেও না। এ হচ্ছে উড়ে এসে জুড়ে বসা শকুন।”
তাজওয়ার আহির কথা শুনে তার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকালো। আহি তাজওয়ারের দৃষ্টি উপেক্ষা করে রাদের হাত জড়িয়ে ধরে বলল,
“চল, আমরা অন্য কোথাও গিয়ে বসি। বাবা আমাকে জোর করে এই লোকটার সাথে পাঠিয়েছে। আমার একদম ইচ্ছে ছিল না।”
তাজওয়ারের হাত মুঠো হয়ে এলো। সে আহিকে এক ঝটকায় নিজের কাছে টেনে এনে চাপা স্বরে বলল,
“তুমি বদ্ধ ঘরে আমাকে শত অপমান করো, আমি কিচ্ছু বলবো না। কিন্তু বাইরের মানুষের সামনে এমন ব্যবহার আমি একদম সহ্য করবো না।”
রাদ থমথমে কন্ঠে বললো,
“জোর করে কিছু পাওয়া যায় না মিস্টার ডট ডট ডট।”
তাজওয়ার আহিকে ছেড়ে দিয়ে রাদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আই এম তাজওয়ার খান৷ মাইন্ড ইট। এন্ড ডোন্ট ডেয়া’র টু টাচ মাই লেডি।”
“মিস্টার ডট, ওপস সরি। মিস্টার তাজওয়ার খান, সি ইজ মাই ফ্রেন্ড। ইনফ্যাক্ট ভেরি ক্লোজ ফ্রেন্ড। সো ইউ ডোন্ট ডেয়া’র টু টাচ মাই ফ্রেন্ড উইদাউট হার পারমিশন।”
তাজওয়ার আর রাদ দু’জনেই রাগী দৃষ্টিতে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আহি শক্ত করে রাদের হাত চেপে ধরলো। কারণ রাদ রাগ নিয়ন্ত্রণ করে হয়তো আজকের দিনটা ভুলেও যেতে পারে। কিন্তু তাজওয়ার এই দিনটা মনে রেখেই রাদের উপর হামলা করতে দু’দন্ডও ভাববে না। হঠাৎ লাবীবের আগমনে থমথমে পরিবেশটা জেগে উঠলো। তাজওয়ার স্বাভাবিক হয়ে আহির পাশে বসে পড়লো। রাদ আর লাবীব তাদের মুখোমুখি বসেছে।
লাবীব এক গাল হেসে আহিকে টিটকারি দিয়ে বলল,
“ওই পলস, তুই একদিনেই আস্ত একটা টাল পটিয়ে ফেলেছিস!”
আহি চোখ বড় বড় করে লাবীবের দিকে তাকালো। তাজওয়ার কপাল ভাঁজ করে জিজ্ঞেস করল,
“টাল মানে?”
“মালের সভ্য সমার্থক শব্দ।”
তাজওয়ার হালকা হেসে বলল,
“এই শব্দ কি তুমি আবিষ্কার করেছো?”
“ইয়েস। জিনিয়াস না আমি?”
“ভীষণ।”
রাদ চাপা কন্ঠে লাবীবকে বলল,
“তোর মাথায় কি গোবর আছে?”
“আরেহ, দুলাভাইয়ের সাথে একটু মশকরা না করলে জমে না।”
“দুলাভাই না, এ বাংলাদেশের টপ ক্রিমিনাল সিরাজ খানের ছেলে।”
লাবীব চেঁচিয়ে বলে উঠলো, “কি?”
তাজওয়ার আর আহি লাবীবের দিকে অবাক চোখে তাকালো। লাবীব মাথায় হাত দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে তাজওয়ারকে বলল,
“শ্রদ্ধেয় দুলাভাই, আপনি কি আমার নাম জানেন?”
তাজওয়ার মাথা নেড়ে বলল,
“না, তুমি বললেই তো জানবো।”
লাবীব আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ। আমি চলি দুলাভাই। অনেক কাজ আছে আমার।”
লাবীব লাফিয়ে উঠে চলে গেলো। রাদ আহির দিকে তাকিয়ে রইলো। তাজওয়ার রাদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোমার বন্ধু তো চলে গেছে। তুমিও এখন যেতে পারো। আসলে আমাদের একটু প্রাইভেসি দরকার।”
অনিচ্ছাসত্ত্বে এবার রাদকে উঠতে হলো।
(***)
মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে রাদের। কি দরকার ছিল লাবীবের লাফিয়ে চলে আসার? এখন তার আহিকে বাধ্য হয়েই একা ছাড়তে হলো! রাদ নিচে নেমে লাবীবের কান মলে দিয়ে বলল,
“ওই মদন, চলে এলি কেন?”
লাবীব কানে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
“চলে আসবো না? গুম হয়ে যাবো না-কি! জানিস না, ওরা মানুষ গুম করে দেয়।”
“আহিকে নিয়ে একসাথে বের হতাম। আর ওই ছেলের সাথে আহিকে একা ছাড়ার কোনো মানেই হয় না। আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো। যতোক্ষণ আহি বাসায় যাবে না, ততোক্ষণ ওর পিছু নিবো।”
লাবীব মুখ ছোট করে বলল,
“ভাই, এই আহি কি জিনিস রে!”
রাদ ভ্রূ কুঁচকে বলল, “কি জিনিস মানে?”
“ওর পুরো চৌদ্দগোষ্ঠি ক্রিমিনাল। এই মেয়ে কোথা থেকে পদ্মফুল হয়ে সেই গোবরে জন্ম নিলো, বুঝলাম না।”
রাদ বিরক্তির সুরে বলল,
“তুই কিছু বুঝবিও না। তোর মতো মাথা মোটা যেখানেই যাবে, সেখানেই একটা না একটা ভেজাল করে আসবে।”
চলবে-