উধয়রনী #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-১২||

0
357

#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-১২||

১৭।
সূর্যোদয়ের আগমুহূর্তে আকাশটা তার অভূতপূর্ব রূপের প্রকাশ ঘটায়। নীরধর শব্দহীন তরঙ্গের খেলায় মেতে উঠে। তার ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায় লালচে আভা। যেই আভা নীরধরের রূপ ঝলসে দেয়। আহি মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,
“গগণের মেঘ আজ মিলেমিশে একাকার।
ভূমিতে বসে আমি তোমার ভাবনায় বেসামাল।
শিল্পী আজ রঙ হারিয়েছে, বে-রঙিন হাল তার।
তোমায় ছুঁতে এতো কারণ, তবে কেন হয়েছিলে আমার প্রিয় বর্ষাকাল?”

“একা একা কার সাথে কথা বলছো?”

রিজওয়ান কবিরের কণ্ঠ শুনে আহি চমকে উঠলো। পাশ ফিরে বাবাকে দেখে সে উঠে দাঁড়ালো। রিজওয়ান কবির আহিকে ইশারায় বসতে বললেন। আহিও চুপচাপ বসে পড়লো।

(***)

বাগানের বেঞ্চে রিজওয়ান কবির আর আহি পাশাপাশি বসে আছে। অনেকক্ষণ যাবত দু’জনই নীরব। আহি কখনোই তার বাবাকে অনর্থক বসে থাকতে দেখে নি। বাগানে বসলে তার হাতে পত্রিকা বা ফোন বা ল্যাপটপ যে-কোনো একটা থাকবেই। আজ তিনি হঠাৎ এমন শান্ত হয়ে কেন আহির পাশে বসে আছেন, এই প্রশ্নটাই এই মুহূর্তে আহির মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেকক্ষণ পর নীরবতা ভেঙে রিজওয়ান কবির বললেন,
“তুমি অনেকদিন পর দেশে এসেছো। বন্ধুদের সাথে কোথাও ঘুরতে যাও।”

আহি ভ্রূ কুঁচকে রিজওয়ান কবিরের দিকে তাকালো। তিনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“লিনাশার সাথে কথা হয়েছে?”

আহি মলিন হেসে বলল,
“সেই পরিস্থিতি তো আর নেই। আপনার জন্য আমি সবাইকে হারিয়ে ফেলেছি।”

“দেখো আহি, বন্ধুত্ব বলতে কিছুই নেই। সবাই শুধু প্রয়োজনে পাশে থাকে। তুমি নিজেই এর প্রমাণ দেখেছো। আমি কিছু করি নি। তোমার প্রিয় বান্ধবী যদি তোমার সাথে সম্পর্ক রাখতে না চায়, সেখানে আমার দোষ কোথায়?”

আহি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রিজওয়ান কবির বললেন,
“তুমি যদি মনে করো, কেউ তোমাকে ভালোবাসে, এটা তোমার ভুল ধারণা। এই পৃথিবীতে তোমাকে কেউ ভালোবাসে না। তোমার মা তোমাকে রেখেই চলে গেছে। গত চার বছরে একবারো তোমার খোঁজ নেয় নি। লিনাশার সাথে কতো বার দেখা হলো। সে কখনো তোমার কথা জিজ্ঞেস করে নি। আর তোমার সেই বন্ধু… কি নাম যেন? রিদমাম রাদ। শোনো আহি, ছেলেরা কখনো বন্ধু হয় না। সে নিশ্চয় কোনো লোভে পড়ে তোমার আগে-পিছে ঘুরছে।”

আহি দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুঠো করে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে লাগলো। রিজওয়ান কবির আবার বললেন,
“একমাত্র তাজওয়ার তোমাকে ভালোবাসে।”

আহি এবার রাগী স্বরে বলল,
“সে আমাকে ভালোবাসে না। তার পৃথিবীর সব মেয়েকেই ভালো লাগে। নিশ্চয় এর চেয়ে বেশি ভেঙে আপনাকে বলতে হবে না! আমি আপনার মেয়ে। কিন্তু আমার মনেই হয় না আমি আপনার আসল সন্তান।”

রিজওয়ান কবির বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“তুমি আমার সন্তান, তাই তোমার উপর অধিকার প্রয়োগ করতে পারছি। জীবন আমার কাছে বিজনেস ফিল্ড। যেখানে প্রফিট আমরা সেখানেই আমাদের সম্পদ ইনভেস্ট করি। তাজওয়ারকে বিয়ে করলে তুমি একাই কোটি কোটি টাকার মালিক হবে। সাথে আমিও সেই অংশের ভাগ পাবো।”

আহি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। রিজওয়ান কবির গম্ভীরমুখে বললেন,
“দুপুরের আগে তাজওয়ার এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।”

আহি ভ্রূ কুঁচকে বলল, “কেন?”

“অবশ্যই তোমার সাথে সময় কাটানোর জন্য। এছাড়া আর কোনো কারণ তো থাকবে না।”

“বাবা, আমি ওর সাথে সেইফ না।”

“আই ডোন্ট কেয়া’র। সেইফ হও বা না হও। তোমার ডেস্টিনি তাজওয়ার খানই হবে।”

(***)

আড়মোড়া ভেঙ্গে সামনে তাকাতেই আহি চিৎকার করতে যাবে তখনই তাজওয়ার লাফিয়ে এসে আহির উপর উঠে তার মুখ চেপে ধরলো। আহি চোখ বড় বড় করে তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে রইলো। তাজওয়ার আহিকে ছেড়ে আহির পাশে শুয়ে পড়তেই আহি ধাক্কা দিয়ে তাজওয়ারকে বিছানা থেকে ফেলে দিলো। তাজওয়ার মেঝেতে শুয়ে পায়ের উপর পা তুলে দু’হাত মাথার পেছনে দিয়ে বলল,
“ঘুমন্ত আহিকে দেখে আমার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। যাও আরেকটু ঘুমাও। আমি তোমাকে আরেকটু ভালোভাবে দেখবো।”

আহি বিছানার উপর দাঁড়িয়ে কোমড়ে দুই হাত রেখে চোখ ছোট করে তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে রইলো। তাজওয়ারের ঠোঁটে হাসি। আহি চেঁচিয়ে ডাকলো,
“চাঁদনি! চাঁদনি…”

তাজওয়ার আহিকে চেঁচাতে দেখে আহির বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লো। আহি লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে রাগী কন্ঠে বলল,
“তোমার এতো বড় সাহস, তুমি আমার রুমে আমার পারমিশন ছাড়া ঢুকেছ?”

“তোমার রুমে, তোমার মনে, এককথায় তুমি মানেই নো পারমিশন।”

এদিকে চুনি আহির ডাকে দৌঁড়ে তার ঘরে ঢুকে তাজওয়ারকে বিছানায় দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো। আহি চুনির চাহনি দেখে বলল,
“তুমি এভাবে কি দেখছো? আর এই ছেলে আমার রুমে কিভাবে ঢুকেছে?”

চুনি উত্তর দেওয়ার আগেই তাজওয়ার বলল,
“চাঁদ, তুমি যাও। আমি আমার মিসেসকে এক্সপ্লেইন করছি।”

তাজওয়ারের মুখে চাঁদ সম্বোধন শুনে চুনি সপ্তম আকাশে উঠে গেলো। সে যাওয়ার আগে নিচু স্বরে বলল,
“স্যার, আপনে ভালো ইংরাজি বলেন। আপনে ঘরে আইলে আমার লগে ইংরাজিতে কথা বইলেন। আমি ইংরাজি ছাড়া কিছু বুজি না৷ আপনেরে ইংরাজিতে একশো দিলাম।”

আহি চেঁচিয়ে চুনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোমার ভাংরেজির বিজ্ঞাপন শেষ হলে এখান থেকে যাও।”

চুনি মুখ ছোট করে বলল, “আফাই তো ডাকলেন।”

তাজওয়ার মাথা নেড়ে বলল,
“একদম ঠিক। তুমি নিজে ডেকেই মেয়েটাকে বকে দিলে। আর ভাংরেজি মানে কি?”

আহি বলল, “ভাঙা ভাঙা ইংরেজি।”

“বাহ, তুমি কি শব্দ আবিষ্কারও করো না-কি?”

“এসব এপার-ওপারের কথা রেখে উত্তর দাও, এখানে কিভাবে এসেছো?”

তাজওয়ার গম্ভীরমুখে বলল,
“আমার ইয়াং মাদার-ইন-ল আমাকে তোমার রুমের চাবি দিয়েছিল। এখন থেকে চাবিটা আমার কাছেই থাকবে। আমার যখন ইচ্ছে আমি তখন তোমার কাছে চলে আসবো।”

“আমি দোয়েল ভাবী নই। তাই আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টাও করবে না।”

আহির কথা শুনে তাজওয়ারের মুখটা লাল হয়ে গেলো। সে আহির বিছানা থেকে উঠে তার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। আহি শক্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তাজওয়ার হুট করে আহির গালে তার অধর ছুঁয়ে দিতেই আহি চমকে উঠলো। সে পিছু যেতে নিবে তখনই তাজওয়ার তার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
“আমি সরওয়ার খান নই। আমি তাজওয়ার খান। আর তুমি রক্ষিতা নও। তুমি আমার অভিমান।”

“যার কাছে এক নারী রক্ষিতা, তার কাছে অন্য নারী অভিমান হতে পারে না।”

“সব নারীকে ভালোবাসা যায় না। ভালো একজনকেই বাসা যায়।”

“আমি তোমার মতো অসভ্য লোকের ভালোবাসা চাই না।”

“তোমাকে চায়তে কে বলেছে? আমি চাইলেই হলো। এখন ঝটপট তৈরী হয়ে নাও।”

“হবো না।”

তাজওয়ার কপালে আঙ্গুল ঘষে বলল,
“আমি তো তোমাকে সরাসরি জোর করতে পারবো না। তবে ভিন্ন পন্থায় আমার ইচ্ছে পূরণ করেই ছাড়বো। তখন তোমার বাবা যদি কারো ক্ষতি করে বসে, তার জন্য তুমি আর তোমার বাবা দায়ী। আমি এর মধ্যে নেই।”

(***)

আহিকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাজওয়ারের সাথে বের হতে হলো। গাড়িতে উঠেই তাজওয়ার আহির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। আহি এক নজর ড্রাইভারের দিকে তাকালো। ড্রাইভার মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। তবুও আহির ইতস্ততবোধ হচ্ছে। সে বিরক্ত মুখে তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে রইলো। তাজওয়ার আহির দিকে তাকিয়ে বলল,
“এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবো। তখন আশেপাশে কে আছে, কে নেই, এসব পরোয়া করবো না।”

আহি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিয়ে বাইরে তাকালো।আর তাজওয়ার মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো।
থেমে থেমে গাড়ি চলছে। মাঝে মাঝে হালকা জ্যামে পড়ছে। হঠাৎ গাড়িটা ঘুরে সেই রাস্তার মোড়ে ঢুকলো যেই মোড়ে অনেক বছর আগে আফিফের এক্সিডেন্ট হয়েছিল। আহির শরীর হঠাৎ কাঁপতে লাগলো। সে এক দৃষ্টিতে সেই স্থানটির দিকে তাকিয়ে রইলো যেখানে আফিফের শরীরটা নিথর পড়েছিল। তাজওয়ার মাথা তুলে আহির দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি ঠিক আছো?”

আহি তাজওয়ারের কাছ থেকে সরে বসে বলল,
“তুমি একটু দূরে থাকো। আমার দম বন্ধ লাগছে।”

তাজওয়ার গাড়ির কাচ নামিয়ে দিয়ে বলল,
“হাওয়া আসলে ভালো লাগবে।”

আহি ব্যস্ত রাস্তার দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইলো। তাজওয়ার আহির কোনো সাড়া না পেয়ে সোজা হয়ে বসে ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

……………………………….

দু’মাস পর সুস্থ হয়ে আফিফ চারুশিল্পে ক্লাস করতে এলো। এই দু’মাস ছিল আহির কাছে দুই যুগের সমান। সে আফিফা বেগমের নম্বরে প্রতিদিন কল দিয়ে আফিফের খবর নিতো। আফিফা বেগমের এই উষ্ণতা ভালোই লাগতো। তিনি আহির অগোচরেই আহিকে পছন্দ করে ফেললেন। কোনো এক অচেনা মেয়ে তার ছেলের জন্য এতো চিন্তা করছে, ভাবতেই তার আনন্দ হচ্ছিলো। তিনি প্রতিদিন আফিফকে বলতেন,
“আজ মিষ্টি মেয়েটা কল দিয়েছে। তোর কথা জিজ্ঞেস করেছে।”

আফিফ কোনো উত্তর দিতো না। সে এতোটুকুই আন্দাজ করেছে এই মেয়েটা হয়তো সেই মেয়ে, যে তাকে চিরকুট দিয়েছিল, তার ছবি এঁকেছিল, আবার তার জন্য এক জোড়া স্যান্ডেল কিনেছিল, আর কিছুদিন আগেই মেয়েটা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। আফিফ মায়ের কাছে শুনেছে মেয়েটার মা এসে হাসপাতালের বিল দিয়ে গেছেন। আফিফের যখন রক্তের প্রয়োজন ছিল, তখন তারা দাতা জোগাড় করে এনেছিল। আফিফ এখন ভালোভাবেই জানে মেয়েটা তার সাথেই চারুশিল্পে ক্লাস করে। কিন্তু মেয়েটা কে, সেটা আফিফ এখনো জানতে পারে নি। তবে তার জানার আগ্রহটা ঠিকই বেড়ে গেছে। তাই আজ সে মেয়েটা কে তা জানার জন্য ক্লাস শেষে ক্যানভাস নিয়ে চারুশিল্পের মাঠে চলে গেলো। সেখানে বসেই রঙ মাখাতে লাগলো।
এদিকে আহি আফিফকে আজ মাঠে দেখে অবাক হলো। সে ধীর পায়ে তার দিকে এগুতেই আফিফ হঠাৎ পাশ ফিরতেই তাদের চোখাচোখি হয়ে গেলো। আফিফ আহিকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। কিন্তু আহি এখনো স্থির হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আফিফ কেন দৃষ্টি সরাচ্ছে না, সেই প্রশ্নটাই এই মুহূর্তে আহির মনে ধাক্কা খেতে লাগলো। এভাবে আফিফ তাকিয়ে থাকলে সে তো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। আহির চারপাশ কেমন যেন ঘোলা ঘোলা লাগছে। মনে হচ্ছে তার শরীর থেকে কিছু একটা বের হয়ে যেতে চাইছে। আহি নিজেকে স্বাভাবিক করে আফিফের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“আপনি সেদিন আমার কাছে একটা ক্যালিগ্রাফি বিক্রি করেছিলেন, মনে আছে?”

আফিফ ভ্রূ কুঁচকে কিছু একটা ভেবে বলল,
“হ্যাঁ, মনে পড়েছে।”

“আমার মায়ের ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তার জন্মদিনে তাকে গিফট করেছিলাম।”

আফিফ মৃদু হাসলো। আহি নিজেও মনে মনে হাসলো। সে কি সুন্দর করে মুখের উপর বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলে দিলো, আর আফিফ বুঝলোই না? আহি সেখানে আর দাঁড়ালো না। আফিফ যদি বুঝে যায় চিরকুটের মেয়েটা আহি? তাই নিজের আবেগ দমিয়ে রেখে সোজা সামনে চলে গেলো। চলে যাওয়ার সময় তার বার-বার ইচ্ছে করছিলো পেছন ফিরে তাকাতে। কিন্তু পিছু ফিরলেই সে ধরা খেয়ে যাবে। তাই সে হেঁটে চলে গেলো। সেদিন যদি আহি পিছু ফিরতো তাহলে দেখতে পেতো, আফিফ নামের প্রিয় পুরুষটি এক দৃষ্টিতে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিল।

(***)

আহি বাসায় এসে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। তার ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। আজ আফিফ তার দিকে তাকিয়েছে। ইশ! এর চেয়ে চমৎকার মুহূর্ত হয়তো আহির জীবনে খুব কম এসেছে। আহি তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে তালা দেওয়া বক্সটি খুললো। পলিথিনে মুড়ানো আহির সেই জামা, যেখানে আফিফের রক্তের অস্পষ্ট দাগ এখনো বর্তমান। সালমা ফাওজিয়া জীবাণু ছড়াবে সেই ভয়ে জামাটা ধুয়ে দিয়েছিলেন। জামা ধুয়ে দেওয়ায় আহি দুই দিন খাওয়া-দাওয়া করে নি। শেষে সেই জামাটার গায়ে অস্পষ্ট যেই দাগ রয়ে গিয়েছিলো, ওটাকেই শেষ সম্বল করে আহি জামাটা বক্সে রেখে দিয়েছিল। এখন আহি সেই জামাটা পরেই ইজেলে নতুন ক্যানভাস বসালো। আর বসে পড়লো আজকের মুহূর্তটার ছবি আঁকতে।

খোলা মাঠে বসে একটা ছেলে ছবি আঁকার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তার পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর ছেলেটা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে।

ছবিটা এঁকেই আহি বলল,
“এআর, এই ভালোবাসার নাম কি দেওয়া যায়?”

নিজের প্রশ্নে নিজেই হাসলো আহি। গানের সুরে বলল,
“রানী কো রাজা সে পিয়ার হো গেয়া…
পেহলি নাযার মে পেহলা পিয়ার হো গেয়া..
দিল জিগার রানী গায়েল হুয়ে
তেরে নাযার দিলকে পার হো গেয়া…
রানী কো রাজা সে পিয়ার হো গেয়া।”

…………………………….

আহির চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তেই তাজওয়ার তার গা ঘেঁষে বসলো। আহি চোখ মুছতে যাবে তখনই তাজওয়ার বলল, “কেন কাঁদছো?”

আহি তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার একা থাকতে ইচ্ছে করছে। একটু সরে বসলে খুশি হবো।”

তাজওয়ার সরে বসতেই আহি আবার বাইরে তাকালো আর মনে মনে বলল,
“এআর, তুমি আমার জন্য ছবি হয়েই থাকবে। আর সেই ছবির নাম হবে রানীর অস্পর্শে রাজা।”

চলবে-

(আগামীকাল একটা বোনাস পর্ব দেবো। সময় বলছি না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here