চুপিসারে (১৬) #রেহানা_পুতুল

0
209

#চুপিসারে (১৬)
#রেহানা_পুতুল

রফিক দেওয়ান ঘরে ঢুকেই সবাইকে শুনিয়ে বলল,
শ্রাবণের বিয়ে ঠিক করে এলাম। এই মাসের আটাশ তারিখ শুক্রবার মেয়ে দেখতে গিয়ে একবারেই কাবিন করে ফেলব।

আলহামদুলিল্লাহ বলে এগিয়ে এলো মোরশেদা। শ্রাবণের মত জানতে চাইলো। শ্রাবণ বলল,

মা তোমরা যা ভালো মনে করো। আমার কোন আপত্তি নেই। সমস্যাও নেই।

মোরশেদা আলহামদুলিল্লাহ বলে
স্বামীকে এসে ছেলের মত জানালো। রফিক দেওয়ান বলল,

তাহলে আমরা পাত্রীর জন্য একটা রিং কিনে ফেলি। নাকি বল তুমি?

আপনি মেয়েকে দেখেছেন? কিভাবে কি কিছুইতো জানি না। শ্রাবণের যদি পছন্দ না হয়?

শ্রাবণের পছন্দ না হলেতো রিং পরানো হবে না। আমি পাত্রীকে আগে দেখেছি বলে, ডিটেইলস স্ত্রীর সঙ্গে শেয়ার করলো তার বাবা।

আচ্ছা যা ভালো মনে করেন,তাই করেন।

সারথি চঞ্চল পায়ে নদীর রুমে গেলো। নদীর বিবর্ণ মুখের দিকে চেয়ে রইলো ড্যাবড্যাব চোখে। চোখ কপালে তুলে আশ্চর্য সুরে জিজ্ঞেস করলো,

আপু তোমার গাল কেন এত লাল? কে মারলো থাপ্পড়?

কে আবার? ভূতে মারছে ঘরে একা পেয়ে।
গোমড়া মুখে বলল নদী।

ভূতে মারছে মানে? বুঝলাম না?

ভূত হলো তোর বদমায়েশ ভাই।

সারথি তৎক্ষনাৎ ভোঁদৌড় দিলো নদীর সামনে থেকে। মায়ের কাছে গিয়ে চিকন গলায় বলল,

এই আম্মু শুনছ, নদী আপুর গাল ভাইয়া লাল করে দিয়েছে। দেখে আসো।

কি বলিস আজাইরা কথা। দেখিতো, বলে মোরশেদা নদীর সামনে গিয়ে ভালো করে নদীর দু’গাল দেখলো। নদীকে কিছুই বলল না। ছেলের রুমে গেলো। চনচনে সুরে বলল,

একটা বিয়ের উপযুক্ত মেয়ের গায়ে হাত তোলা উচিত হয়েছে তোর? লোকে শুনলে কি বলবে? বাইরের খবরদারি ঘরেও দেখাতে হবে তোর, নাহ?

কে বিয়ের উপযুক্ত মা?

নদী বিয়ের উপযুক্ত নয়? তার বয়স এখন কাঁটায় কাঁটায় উনিশ। দুই বছর পিছালো তার মাদ্রাসার জন্য।

বিয়ের উপযুক্ত একটা মেয়ের মিনিমাম কমনসেন্সের অভাব কেন? কিছু হলেই সুইসাইড করতে যায়। তাই চড় মেরেছি।

যত যাই হোক। এমন বাজে কিছু করবি না। মেয়েদের গায়ে দিবি না। এসব লোকে শুনলে তোরও বিয়ে হবে না। তারা ধরে নিবে মেয়েদের গায়ে হাত তোলা তোর কমন স্বভাব।

শ্রাবণ মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। মায়ের মুখে মুখে তর্ক করলো না। কথার প্রতিবাদও করলো না। মনে মনে বলল,এই নদীরে এনেতো আমি ভালই আপদ ডেকে আনলাম। ওর জন্য আমার ঝাড়ি খেতে হয় মা বাবার থেকে।

তার পরেরদিন নদী রেড়ি হয়ে নিলো। মোরশেদার কাছে গিয়ে বলল,

বড়াম্মু আমি নানাদের বাড়িতে যাবো। আম্মার জন্য মন পুড়ছে।

কিভাবে যাবি?

বাসে করে যাবো।

দরকার কি এত ঝক্কি ঝামেলা করে যাওয়ার। শ্রাবণকে বল বাইকে এক টান মেরে দিয়ে আসবে।

লাগবে না বড়াম্মু।

রফিক দেওয়ান শুনতে পেয়ে ঘরের ভিতর থেকে বলল,

নদী মা। শ্রাবণ দিয়ে আসুক। আমি বলে দিচ্ছি শ্রাবণকে। পরিস্থিতি ভালো না দেশের। তুমি একা যাওয়া সমীচীন হবে না।

নদী শ্রাবণের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। কিভাবে যাবে সে। আবার চাচাকেও বলতে পারছে না কিছু।
কিছুক্ষণ পর শ্রাবণ উঠানে বাইক স্ট্রাট দিয়ে নদীকে ডাকলো।

নদী ধূসর মুখে শ্রাবণের পিছনে বসলো তাকে না ধরেই। পুরো পথ দুজন কোন কথা বলল না। নদীর মামাদের ঘরে কিছুক্ষন বসে রুবিনার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো শ্রাবণ। অল্পস্বল্প নাস্তা করে নিলো। নদীর মা অনুরোধ করে শ্রাবণকে বলল,

বাবা নদীর দিকে খেয়াল রেখো।এখন তোমরাই ওর অভিভাবক। চালচলনে,কথাবার্তায় ভুলত্রুটি হতেই পারে।

চাচী এসব কোন বিষয় না। সবচেয়ে বড় কথা হলো ওকে একটু বকলেই মরতে যায়। বুঝেন এবার। তাহলে কি ওকে আমি বকতে পারব না? এটা ওকে একটু বুঝিয়ে দিবেন।

রুবিনা তড়িতেই নদীকে ডাক দিলো। নদী এলে তিনি কড়াসুরে জিজ্ঞেস করলেন,
কিরে, কি শুনলাম তোর নামে?

নদী অবাক চোখে চাইলো মায়ের দিকে। বলল,
কি শুনলে তুমি?

শ্রাবণ তোদের পরিবারের সবার বড়। ও চেয়ারম্যান। ঘরে বাইরে ওর সম্মান আছে। বড় ভাই হিসেবে তোকে শাসন করার অধিকার ওর আছে। কিছু বললেই নাকি মরতে যাস?

নদী লজ্জা পেলো মায়ের কথায়। শ্রাবণের উপর ক্ষেপে গেলো। তবুও দাঁতে দাঁত পিষে চুপ করে রইলো।

রুবিনা বলল, ও কিছু বললে শুনিস। পাগলামো করিস না মা। ও কি তোর খারাপ চায়? সে তোর শক্রু? মনে রাখিস আমার পরেই শ্রাবণ তোর অভিভাবক এবং তার বাবা মাও।

নদী ধুপধাপ পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো নাক মুখ লাল করে।
তার কিছুক্ষণ পরেই শ্রাবণ চলে গেলো। যাওয়ার সময় নদীকে জিজ্ঞেস করলো,

আমি কবে নিতে আসবো তোকে?

আসতে হবে না। আমিই যেতে পারবো।
মুখ কালো করে বলল নদী।

চলে আসিস। তোর কলেজে ভর্তির ডেট শুরু হয়ে যাবে। আবার আমার বিয়ে সামনে। তুই আনন্দ ফূর্তি করবি না?

নাহ বলে নদী সরে গেলো। শ্রাবণ বাইক চালিয়ে চলে গেলো।

নদী ও তার মা রাত জেগে জেগে নানান গল্প করে। আশাহত জীবনে তাদের আশা জাগানিয়া গল্প যেনো ফুরোয় না। একমাত্র মেয়ে নদীই রুবিনার বেঁচে থাকার অবলম্বন। সকল আনন্দের উৎস। আজকাল নদীকে নিয়ে রুবিনার দুঃশ্চিন্তাও ঘনীভূত হচ্ছে ঘন মেঘের মতন। পিতা হারা মেয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র কিভাবে খুঁজে বের করবে সে। কে নিবে এই দায়িত্ব। এক সপ্তাহ নদী মায়ের কাছে রইলো। এরপর চলে এলো বড় চাচার বাড়ি।

আসার পরেরদিনই শ্রাবণ নিজে গিয়ে নদীকে একটি স্বনামধন্য সরকারি কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলো। যদিও নদী তার আগে আপত্তি করলো কিছুটা। সে শ্রাবণকে উদ্দেশ্য করে বলল,

আমি জালালউদ্দিন কলেজে ভর্তি হবো ভাইয়া।

কেন? প্রেম করার জন্য?

নদী বিরক্ত হলো। বলল,
এটা কেমন কথা?

এটাই খাঁটি কথা তোর জন্য। নয়তো এই নষ্ট কলেজে ভর্তি হতে চাচ্ছিস কেন?

এটা বাড়ি থেকে কাছে তাই। ভাড়া কম যাবে। এস এ কলেজ ত দূরে। যাতায়াত খরচ বেশি যাবে।

তাতে তোর প্রবলেম কি?

আমি টাকা কোথায় পাব? আমার আম্মা এত ভাড়া দিতে পারবে?

চাচী দিতে হবে না। বাকিতে একটা যানবাহন ঠিক করে দিবো আমি। তোর সামর্থ্য যেদিন হবে,তখন সেই ড্রাইভারকে শোধ করে দিস। ওকেহ?

বলল ভরাট কন্ঠে বলল শ্রাবণ।

কোন যানবাহন? রিকসা? না অটো?

সেটা যেদিন কলেজে প্রথম যাবি। সেদিনই দেখবি।

আচ্ছা ঠিক আছে।

নদী গানের ক্লাসে নিয়ম করে যাচ্ছে, আসছে। এখন গানের স্কেল ধরতে পারে। সুর,তাল,লয়,ছন্দ ঠিকঠাক হচ্ছে। কন্ঠ চড়ায় নিতে পারে। নামাতে পারে। কয়েক ঘরানার গানও গাইতে পারে নদী এখন। বাড়িতে সকাল বিকাল গানের রেওয়াজ করছে সে। কারণ কলেজ চালু হয়ে গেলে আর অত ফুরসৎ মিলবে না।

একদিন বিকেলে নদী গানের রেওয়াজ করছে। এমতাবস্থায় শ্রাবণ বাইরে থেকে এসেই শুনতে পেলো নদীর সুরেলা সুর।

“চোখের ভিতর স্বপ্ন থাকে,
স্বপ্ন বাঁচায় জীবনটাকে।
তুমি আমার স্বপ্ন হাজার, বুকেরই নি:শ্বাস।
তোমায় নিয়ে যায় কি ধরা, বাজীর কোন তাস।”

এই প্রিয় গানটা নদীর কন্ঠে শুনতে পেয়ে শ্রাবণের হৃদয়টা দুলে উঠলো। সে নিরব পায়ে নদীর আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো। নদী দুচোখ বন্ধ করে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে একের পর এক গান গেয়েই যাচ্ছে। গান গাওয়া শেষ হলে নদী চোখ মেলে তাকালো। ঘাড় ঘুরিয়ে নিতেই দেখলো, শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে বুকের উপরে দুহাত গুঁজে। তার দৃষ্টি নদীর মুখপানে স্থির হয়ে আছে মৌন পাহাডের মতো। নদী অপলক চোখে শ্রাবণকে দেখছে এই প্রথম। কালো জিন্স, নেভি ব্লু কালারের শার্ট ও গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে শ্রাবণকে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে। তার শার্টের একটা বোতাম খোলা। হাতে কালো চেইনের ঘড়ি। ঘাড় অবধি চুল, ও লম্বা গড়নের মুখে শ্রাবণকে এত সুন্দর লাগে,নদী এর আরে কখনো এটা উপলব্ধি করতে পারেনি।

কিরে এমনভাবে চেয়ে আছিস কেন আমার দিকে? নাকি বহুবছর পরে আমাকে দেখলি?

শীতল গলায় বলল শ্রাবণ।

আপনিওতো এমনভাবে চেয়ে আছেন আমার দিকে মনে হয়,এই প্রথম আমাকে দেখলেন?

আমিতো তোর গান শোনার জন্য তাকিয়েছিলাম এতক্ষন।
পরে বউ চলে এলেতো এভাবে তাকালে মাইন্ড করবে।

আপনাকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে। আমি তাই তাকিয়েছিলাম।

ওমা! তাইনাকি নদী? তারমানে আজকের আগে সবসময় আমাকে দেখতে অসুন্দর লাগতো?

সেটা নয় ভাইয়া। আমি এর আগে আর এমন করে আর চাইনি।

শ্রাবণ নদীর পাশে এসে বসলো। বলল,
তোর গানের ইমপ্রুভমেন্ট হচ্ছে নদী।

দোয়া করবেন ভাইয়া আমার জন্য।

আমি চেয়ারম্যান মানুষ। আমার দোয়ার ভিজিট দিতে হবে। রাজী?

যেমন? দুষ্টমিষ্ট হেসে বলল নদী।

বললে দিবি?

হুম দিবো।

তাহলে আমার রুমে আয় একটু।

শ্রাবণ তার রুমে চলে গেলো। শার্ট খুলে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে গেলো। নদী পিছন থেকে ডাক দিলো।
ভাইয়া কি বলেন?

তুই কি আমাকে বেশী ভয় পাস?

আগে বেশী পেতাম। এখন চলতে চলতে কমে আসতেছে।

গুড় বালিকা। এখন আমার মাথার কাছে এসে বোস। তারপর আমার মাথাটা ভালো করে টিপে দে। চুলগুলোও টেনে দে। প্লিজ। ভারি মাথা ধরেছে।

নদী গাইঁগুঁই শুরু করলো। তারপর বলল,

এটা সারথিকে দিয়ে করান। ভাইয়া প্লিজ আমি পারব না। সমস্যা আছে। ভুল বুঝবেন না।

তুই কি ছলনাময়ী? কথার বরখেলাপ করছিস?

যা ইচ্ছা ভাবেন বলে নদী চলে গেলো রুম থেকে।

দিনদিন একরোখা হয়ে যাচ্ছিস কেন নদী? তোকে পিষে ফেলব আমি মনে রাখিস।

এদিকে নদীর কলেজে যাওয়ার প্রথম দিন শ্রাবণ বাইকে করে দিয়ে এসেছে।

তার আগে নদী জিজ্ঞেস করলো,

আপনি না আমার জন্য যানবাহন ঠিক করবেন বলছেন ভাইয়া?

এই যে এটাই তোর জন্য বাকিতে কন্টাক করেছি। ভাড়া জমতে থাকুক।

নদী ভ্রু নাচিয়ে শ্রাবণকে বলল,

বুঝলাম না?

বুঝে কি লাভ হবে? বাইকের তেলের টাকা দিতে পারবি? আছে সঞ্চিত কিছু?

নদী গাল ফুলিয়ে বসে গেলো বাইকের পিছনে।

আরুর স্কুল বন্ধ। তাই বড় চাচার বাড়িতে এলো আড্ডা দেওয়ায় জন্য। নদী, আরু,সারথী মিলে রজ্জুলম্ফ খেলছে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠানের একপাশে। সুরমা ওদের খেলা উপভোগ করছে কাজের ফাঁকে ফাঁকে।
শ্রাবণ বাজার থেকে পায়ে হেঁটে বাড়িতে আসছে। কাছাকাছি এসেই দেখতে পেলো পাশের বাড়ির ছাদ থেকে অপরিচিত দুটো যুবক ছেলে তাদের উঠানের দিকে ঠায় চেয়ে আছে। শ্রাবণ বাড়ির ভিতরে পা রেখেই বুঝতে পারলো কারণ। সে দেখলো নদী লাফিয়ে লাফিয়ে রজ্জুলম্ফ খেলছে। ওড়নাবিহীন তার বুকের আকর্ষণীয় গোলাপ দুটো উঠানামা করছে দ্রুত গতিতে। সেই ছেলেগুলো নদীর বুকের সেই উদ্দাম নৃত্য দেখছে কামুক চোখে।

শ্রাবণের মেজাজ প্রচণ্ড বিগড়ে গেলো। বের হয়ে গিয়ে সেই ছেলেদের ধরে নিয়ে এলো লোক পাঠিয়ে। তাদের দিয়ে কয়েক ঘা মারলো এবং আচ্ছামতে শাসিয়ে দিলো। এ নিয়ে পরবর্তীতে টু শব্দটিও কেউ করলো না শ্রাবণের বিপক্ষে।

সেই রাতে শ্রাবণ নদীকে নিজের রুমে ডেকে নিলো। বলল,

চাচী কিন্তু আমাকে তোর উপর অধিকার দিয়ে রেখেছে। জানিসতো। বুকে সবসময় ওড়না দিয়ে রাখবি। বিয়ের পর জামাইকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে দেখাস।

শ্রাবণের মুখে এমন নিলজ্জের মতো ঠোঁটকাটা কথা শুনে নদীর নাকের ডগা লজ্জায় রক্তিম হয়ে গেলো।
পা ঘুরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

এই নদী.. এই..

পিছন দিয়ে শ্রাবণের ককর্শ ডাক নদী শুনেও না শোনার ভান করে রইলো।

আজ শুক্রবার। নদীসহ সবাই তৈরি হয়ে নিয়েছে শ্রাবণের জন্য মেয়ে দেখতে যাবে বলে। রজতের আসার কথা থাকলেও কোন এক কারণে রজত আসেনি।

পাত্রীর বাড়িতে সবাই পৌছালো। খাওয়া দাওয়ার পর্ব সেরে নিলো। শ্রাবণ মেয়েকে আংটি পরাতে যাবে,অমনি মেয়ের বড়বোন বাধা দিলো। বলল,

দুঃখিত। থামেন বলছি। এইমাত্র পাত্র সম্পর্কে আমরা কিছু বাজে মন্তব্য শুনলাম প্রমাণসহ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here