মেঘের_শহর #পর্ব_২৫ Saji Afroz

0
93

#মেঘের_শহর
#পর্ব_২৫
Saji Afroz
.

হুরায়রা কে শক্ত হতে বলল শহর। সে নরম মনের মেয়ে নয়। তবুও আজ এতটা ভেঙে পড়েছে। শহর তার কষ্ট অনুভব করতে পেরেছে। সে হুরায়রার উদ্দেশ্যে বলল-
নিজেকে শান্ত করো। পরে কি হবে তা পরেই দেখা যাবে। এখন মেঘ কে অন্ধকারে রাখা মোটেও ঠিক হবে না। তুমি ছলনাময়ী নয় মেঘা৷
.
চোখের পানি মুছতে মুছতে হুরায়রা বলল-
সাহস হচ্ছে না।
-বলার?
-হ্যাঁ। এসব মেঘ বিশ্বাস করবে? সে ভাববে আমি তাকে দূরে সরানোর জন্য বলছি।
.
কিছুক্ষণ ভেবে শহর বলল-
তুমি তাকে কিছু জানাতে না পারো। নিজের রাজ্যে তো নিতেই পারো?
.
হারায়রা অবাক চোখে বলল-
মেঘ কে নিয়ে যাব?
-এতেই সে সবটা সহজে বিশ্বাস করবে।
.
হুরায়রা ভাবছে। মেঘ কে নিজের রাজ্যে নিয়ে যাওয়া টা কি ঠিক হবে!
.
.
.
অন্তরা আহম্মেদ প্রচুর রেগে আছেন৷ রেগে থাকার কারণ টা মিন্নী বুঝতে পারছে না। সে মা কে কয়েকবার জিজ্ঞাসাও করেছে। তিনি কোনো জবাব দেন নি। হুট করে সাইয়ারা কে ডাকতে বললেন তিনি। সাইয়ারা কে নিয়ে মিন্নী এলে তিনি বললেন-
হুরায়রা মেয়েটা সুন্দর হতে পারে। কিন্তু বড়ই অদ্ভুত। তুমি আর সে তো একই ক্লাসে পড়। ওর সম্পর্কে কিছু বলো তো।
-চুপচাপ থাকে, কারো সাথে মিশেনা। কিন্তু ও ক্লাসের সবচেয়ে ভালো স্টুডেন্ট। আমার মতো বেশি বকবক করে লাভ কি? লেখাপড়ায় যদি গোল্লা পাই।
-আমার তো তোমার মতো বকবক করা মেয়েই পছন্দ।
.
কথাটি বলে থামলেন অন্তরা আহম্মেদ। তিনি ভেবেছিলেন সাইয়ারার কাছে হুরায়রার কোনো খারাপ তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। যা বলবেন মেঘ কে। কিন্তু সে তেমন কিছুই বলল না। মেঘ কে কিভাবে বলবেন তিনি, হুরায়রা মেয়েটাকে তার সুবিধার মনে হচ্ছে না!
মেঘ কে হাসিমুখে বাসায় ঢুকতে দেখে সাইয়ারা বলল-
গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে বাইরে খেলে হবে হবে না শুধু।
আমার দিকেও নজর রাখতে হবে।
.
মেঘ হেসে বলল-
একা খাইনি৷ তোমার জন্যও নিয়ে এসেছি।

.
একটা প্যাকেট তার হাতের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে মেঘ বলল-
এখানে চটপটি আছে।
-ওয়াও! বাট ডেইটে গিয়েও আমার কথা মনে রাখলেন?
-কারণ তোমার জন্যই হুরায়রা আমার কাছে ফিরে এসেছে।
.
মিন্নী প্রশ্ন করলো-
আপুর জন্য মানে?
-হুরায়রার বন্ধু কে সাইয়ারা জানিয়েছিল, সে বেড়াতে যাওয়ার পরে কি কি ঘটে। এবং আমি তাকে কতটা ভালোবাসি। তার বন্ধু এসব হুরায়রা কে জানায়। এসব শুনেই সে আমার কাছে ছুটে আসে।
-আসলো টা কোন দিকে?
.
মায়ের প্রশ্ন শুনে সকলে তার দিকে তাকালেন। অন্তরা আহম্মেদ বললেন-
হুরায়রা আসলো কোনদিকে? দরজা বন্ধ, জানালা বন্ধ। তুই বলছিস তুই দরজা খুলিস নি। তাহলে ওকে তোর রুমেই দেখা গিয়েছে কেনো?
.
মেঘের রুমে গিয়েছে হুরায়রা! কথাটি শুনে একটা চাপা কষ্ট অনুভব করছে সাইয়ারা। আবার অন্তরা আহম্মেদের কথা ভাবাচ্ছেও তাকে।
.
এই প্রশ্নের উত্তর মেঘের কাছে নেই৷ সে বলল-
সত্যি মা আমি জানি না। হয়তো বা দরজা খোলাই ছিল। যা আমাদের খেয়াল নেই।
-তা হতে পারে। কিন্তু হুরায়রা সরাসরি তোর রুমে গিয়েছে৷ তাও দরজা বন্ধ করে বসে ছিল। বিষয় টা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি।
.
মেঘ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। অন্তরা আহম্মেদ বললেন-
জলদি ওর মা বাবা কে দেখা করতে বল। এভাবে বিয়ে ছাড়া মেলামেশা আমি করতে দিব না। তার উপর ওই মেয়ের লজ্জাশরম একটু কমই।
.
কথাটি বলে তিনি নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। তার পিছু নিলো মিন্নী।
মেঘ কে চিন্তিত দেখে সাইয়ারা বলল-
হতাশ হবেন না৷ আন্টির রাগ টা স্বাভাবিক। কিন্তু এতে আপনাদের বিয়েতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে না। হুরায়রার সাথে কথা বলে ওর ফ্যামিলির সাথে যোগাযোগ করুন। এতে আন্টির রাগও কমে যাবে।
.
মেঘ হ্যাঁ সূচক ভাবে মাথাটা নাড়লো। সাইয়ারা মুচকি হেসে বেরিয়ে পড়লো।
.
.
.
বাইরে থেকে খাওয়াদাওয়া সেরে বাসায় এসেছে জিকো৷ তার সাথে আছে মোখলেস। জিকো কে পৌছে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় সে বলল-
আসল কথাটায় তো বলা হয়নি।
-কি?
-আমাদের বিয়ের কথা। তুমি বাসায় জানাও। এক কাজ করো, জিকো কে আগে জানাও।
.
জিকো একটু ভেবে বলল-
বাসায় বাবা কে নিয়ে সবাই ব্যস্ত। আমি তাদের এখন এই বিষয়ে জানাতে চাচ্ছি না।
-তবে?
-বিয়ে টা করে ফেলতে চাই। কোনো আয়োজন ছাড়াই সাদাসিধা ভাবে। বাবা সুস্থ হলে না হয় জানাব?
-কিন্তু তোমার পরিবার এতে তোমার উপর রাগ করতে পারে।
-আমি তো এমনিতেই তাদের সাথে রাগ করে এখানে এসেছিলাম।
-তা ঠিক৷ তবুও…
-আপনার এতে সমস্যা আছে বা আপনার পরিবারের?
.
মোখলেস মুচকি হাসলো। তার হাত ধরে বলল-
তোমার কথা ভেবেই বললাম। মা বাবা কে ম্যানেজ করা কোনো ব্যাপার না।
-তাহলে দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করুন।
-তুমি যা বলো তাই হবে।
.
নবীন নিচে যাচ্ছিল। দরজার পাশে জিকো ও মোখলেস কে হাত ধরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল-
আমি কিছু দেখিনি।
.
মোখলেস চটজলদি জিকোর হাত ছেড়ে দিলো৷ তাদের পরিচয় করিয়ে দেয় জিকো। নবীনার সাথে কথা বলে বেরিয়ে যায় মোখলেস।
জিকোর মুখে বিয়ের কথা শুনে খুশি তে তাকে জড়িয়ে ধরলো নবীন। জিকো নীরবে দাঁড়িয়ে রইলো। ইচ্ছে করছে নবীনা কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। আজ যদি সে মেয়ে না হত, নিশ্চয় নবীনার প্রেমে পড়ে যেত।

.
.
.

সারারাত টা অস্থিরতায় কেটেছে মেঘের। হুরায়রার ফোন নাম্বারটাও নেওয়া হয়নি। বাসার ঠিকানাও সে জানে না। কিভাবে তার সাথে দেখা করবে? ইশ! কালকের মতো যদি আবারো হুরায়রা চলে আসতো!
শোয়া থেকে উঠে বসলো মেঘ। সবে মাত্র আকাশে সূর্যের আলো ফুটেছে। জানালার পর্দা টা সরাতেই একটা কাগজ উড়ে এল তার রুমে। মেঝের উপরে পড়লো কাগজ টি। মেঘ তা হাতে নিতেই বুঝলো, এটা একটা চিঠি।
চিঠি তে লেখা আছে-
আনন্দ নদীর পাড়ে চলে এস। আমি আছি সেখানে।
~হুরায়রা
.
চিঠি টি পড়ে মেঘের মুখে হাসি ফুটলো। সে চিঠিটায় চুমু খেয়ে তা টেবিলের উপরে রেখে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল। চটজলদি ফ্রেশ হয়ে আসলো সে৷ কিন্তু টেবিলের উপরে চিঠি টা নেই। সারারুমে খুঁজেও সে চিঠি পেল না।
এবার মেঘ একটু অবাক হলো। খুশি থাকার কারণে তার মাথায় এল না, এভাবে চিঠি টা কিভাবে তার রুমে এসেছে? এখন আবার গায়েবও হয়ে গেল!
এই উড়োচিঠি হুরায়রাই দিয়েছে তো?
.
নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেললো হুরায়রা। নিজের মুখে হাত ছুঁয়ে মুচকি হাসলো সে৷ একটু আগে মেঘ কোনো কাগজের গায়ে চুমু দেয়নি। দিয়েছে তাকে। সেই কাগজ হয়ে মেঘের কাছে ছিল!
.
একটু পরেই মেঘ চলে আসে আনন্দ নদীর পাড়ে। সকালে এই নদীর পাড়ের সৌন্দর্য যেন দ্বিগুন বেড়ে যায়। তবে নদীর পাড়ের সৌন্দর্য দেখার ইচ্ছে মেঘের নেই। সে হুরায়রা কে দেখে বলল-
ফোন নাম্বার না নেওয়াতে আফসোস করছিলাম।
-আমার ফোন নেই।
-বলো কি!
-হ্যাঁ।
-তবে কথা বলব কিভাবে?
-উড়োচিঠি দিয়ে।
-ভালো কথা মনে করিয়েছ। তুমি এটা কিভাবে দিলে?
.
হুরায়রা হাসলো। মেঘ বলল-
হাসছ যে?
-তোমাকে কেনো ডেকেছি জিজ্ঞাসা করবে না?
-কেনো?
-আমার পরিবার কে দেখানোর জন্য।
-ও তাই! তা কোথায় তারা?
-তার জন্য তোমাকে আমার রাজ্যে যেতে হবে।
-রাজ্য?
-হুম।
.
মেঘ বোকার মতো হুরায়রার দিকে তাকিয়ে রইলো। আজ হুরায়রা কে তার কাছে বড্ড রহস্যময়ী মনে হচ্ছে।
-যাবে না?
.
মেঘ হেসে বলল-
কেনো নয়?
-তবে চোখ দুটো বন্ধ করো।
-কেনো?
-আরে করোই না! আর আমি যতক্ষণ বলব না, ততক্ষণ খুলবে না।
.
মেঘ অবাক হয়ে হুরায়রার কথা শুনছে। হুরায়রা বলল-
ভরসা নেই আমার উপর?
-আছে।
.
মেঘের হাত ধরে হুরায়রা বলল-
তবে এবার চোখ বন্ধ করো।
.
মেঘ মৃদু হেসে বলল-
এভাবে হাত ধরে রাখলে সাত সমুদ্র, তেরো নদী পার হয়ে যেতেও রাজি। তুমি শুধু হাত ছেড়ো না।
.
হুরায়রার হাতটি চেপে ধরলো মেঘ।
প্রচন্ড বাতাসের শব্দ তার কানে ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে তার চারদিকে পুরো পৃথিবী টা ঘুরছে। মেঘ আরো শক্ত করে হুরায়রার হাত চেপে ধরলো। মুখ দিয়ে কোনো শব্দ তার বের হচ্ছে না। কি হচ্ছে তার সাথে!
ধীরেধীরে সব হালকা হয়ে আসলো। এখন আর এমন টা মনে হচ্ছে না। কোনো শব্দও সে পাচ্ছে না।
সে শুনতে পেল হুরায়রা বলেছে-
এবার চোখ খুলতে পারো।
.
মেঘ চোখ খুলে বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেল। এ কোথায় এল সে! যেখানে শুধু মেঘ আর মেঘ! চারদিকে ধবধবে সাদা, মনে হচ্ছে সাদা ধোঁয়ার রাজ্যে এসেছে সে!
পাশ ফিরে হুরায়রার দিকে তাকালো। তাকে দেখে চমকে উঠলো মেঘ। একটু আগেই তার পরণে সালোয়ার কামিজ ছিল। আর এখন সাদা গাউন!
তার হাত টা ছেড়ে মেঘ বলল-
এসব কি হুরায়রা? আমরা কোথায়?
.
হুরায়রা জানায়-
আমরা মেঘ রাজ্যে এসেছি।
.
এসব যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না মেঘ৷ সে চারপাশে তাকাতে লাগলো। হুরায়রা সামনের দিকে হেঁটে গেলে সেও তার পিছু নিলো।
লম্বা এক রাস্তা!
দুপাশে মেঘ আর মেঘ! মাঝখানে সাদা রঙ ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না।
মেঘের মনে হচ্ছে সে শূন্যে ভাসছে!
নিচে কোনো মাটি নেই। তবুও সে কিভাবে নিজেকে ঠিক রেখে চলাফেরা করছে বুঝছে না। তবে কি সত্যিই এটি মেঘের রাজ্য!
হুরায়রা রাস্তায় সোজা হেঁটে যেতে থাকলো। তার সাথে হাঁটতে হাঁটতে নানারকম প্রশ্ন করছে মেঘ। একটা প্রশ্নেরও জবাব হুরায়রা দেয়নি। সে নীরবে হেঁটেই যাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর থেমে গেল সে এক বিশাল গেইটের সামনে।
গেইটটিও মেঘের তৈরী। কেবল আকারেই গেইট বোঝা যাচ্ছে। দেখলে মনে হয় এর ভেতরে নিমিষেই প্রবেশ করা যাবে। কিন্তু মেঘ হাত রেখে বুঝলো, এমনটি নয়। এটি তাদের বাড়ির গেইটের মতোই শক্ত! ভেতর থেকে না খুললে প্রবেশ করা যাবে না।
কিন্তু হুরায়রা চোখের পলকেই ভেতরে চলে গেল।
মেঘ গেইটে জোরে জোরে আঘাত করে তাকে খুলতে বলল।
হুরায়রা গেইট খুলে বলল-
তোমাকে ভেতরে আনার জন্যই তো আমি আগে প্রবেশ করলাম।
.
মেঘ ভেতরে এসে বলল-
এসব কি হচ্ছে টা কি হুরায়রা?
.
প্রশ্ন টি করেই মেঘ থেমে গেল। তার সামনে অনেক মানুষ! কেউ কথা বলছে, কেউ হাসছে, কেউ বা কাজে ব্যস্ত।
সকলেই সাদা পোশাক পরিধান করেছে। এবং সকলেই অনেক সুন্দর! শুধু তাই নয়। অনেক মেঘের বাড়িও দেখতে পাচ্ছে সে।
মেঘ ধীরপায়ে সামনে এগিয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে চিৎকার করে বলল-
এই কোথায় এলাম আমি!
.
আশ্চর্য! এত জোরে চিৎকার করলো সে। তবুও কেউ তার দিকে তাকালো না। যা দেখে সে আরো অবাক হয়।
হুরায়রা বলল-
এরা কেউই তোমাকে বা আমাকে দেখছে না। আমরাই কেবল তাদের দেখছি।
.
এবার রাগ টা আরো বেড়ে গেল মেঘের। সে হুরায়রার অনেকটা কাছে এসে বলল-
এই কোথায় নিয়ে এলে তুমি আমায়?
-তুমি আমার মা বাবা কে দেখতে চেয়েছিলে।
.
মেঘ প্রশ্নসূচক দৃষ্টি তে তার দিকে তাকালে সে বলল-
আসো আমার সাথে।
.
হুরায়রার সাথে আরো কিছুদূর হাঁটলো মেঘ। বিশাল এক মেঘের তৈরী বাড়ির সামনে এল তারা। হুরায়রার সাথে সেই বাড়িতে প্রবেশ করলো মেঘ।
সাথে সাথেই দুজন মানুষের দেখা পায় তারা। যাদের দেখে হুরায়রা দুচোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়। সে নিজেকে স্বাভাবিক করে জানায়, এরা তা মা বাবা।
.
হুরায়রা সেখানে আর দাঁড়ায় না। মেঘের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। উপরে উঠার পর বারান্দায় একটি মেয়ের দেখা পায়। যার চেহারা অনেকটা তার মতোই। তাকে দেখিয়ে হুরায়রা বলল-
ও আমার ছোট বোন।
.
মেঘের মনে পড়ে যায়। আনন্দ নদীর পাড়ে হুরায়রা তাকে বলেছিল, তার ছোট বোন আছে। কিন্তু তার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছিল, সে ছিল একমাত্র মেয়ে।
এই কথাটি মনে থাকলে এত বড় ভুল টা মেঘের হত না। কষ্ট পেতে হত না সেই হুরায়রা কে।
.
হুরায়রা আবারো হাঁটতে থাকে। একটি তালাবদ্ধ রুমের সামনে এসে থামে সে। হুরায়রার এক ইশারায় অদ্ভুত ভাবে তালাটি খুলে যায়। সে মেঘ কে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
রুম টা দেখে মেঘের চোখ টা জুড়িয়ে যায়। রুমের মাঝখানে বিশাল এক খাট। তার পাশেই ছোট একটি টেবিল। দেয়ালের সাথে লাগানো মাঝারি আকৃতির ড্রেসিং টেবিল। তার পাশেই ওয়ারড্রব। রুমের চারদিকে রয়েছে বেশ কয়েকটি ফুলের টব। আর দেয়ালে হুরায়রার বেশ কয়েকটি ছবি!
সব গুলোই মেঘের তৈরী।
মেঘের ইচ্ছে করছে এই খাটের উপরে শুয়ে শান্তির একটা ঘুম দিতে। এক ধরনের মোহ কাজ করছে তার ভেতরে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলল-
এসব কি হচ্ছে হুরায়রা আমি কিছুই বুঝছি না। এমন একটা অদ্ভুত জায়গায় তোমার পরিবার থাকে?
-অদ্ভুত নয়। এটা মেঘের রাজ্য।
-অদ্ভুত নয় তো কি! এখানের সব কিছুই মেঘের তৈরী। আর আমরা যে দুটো মানুষ এসেছি এই মানুষ গুলোর কোনো খবরই নেই।
-এরা কেউই মানুষ নয়।

.
মেঘ থেমে গেল। তার চোখমুখে আঁধার নেমে এসেছে। এসব কি বলছে হুরায়রা!
মেঘ ঢোক গিলে বলল-
মানুষ নয়?
-নাহ।
-তাহলে?
-তুমি যেসব মেয়েদের দেখছ তারা মেঘপরী আর ছেলেরা জ্বীন।
-আর তুমি?
.
হুরায়রা নিশ্চুপ। মেঘ একই প্রশ্ন আবারো করলে সে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলল-
আমিও তাই।
-মানে তুমি মানুষ নও?
-নাহ।
.
মেঘ নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলো না।
জ্ঞান হারিয়ে ফেললো সে।
.
মেঘের জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে সে আবিষ্কার করলো তার ঘরেই। তার পাশে মা, মিন্নী ও সাইয়ারা কে দেখতে পেল। মেঘের জ্ঞান ফিরেছে দেখে তাদের মুখে হাসি ফুটলো।
মেঘ শোয়া থেকে উঠে বসে বলল-
আমি কি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম? কোথায় ওই মেঘের রাজ্য!
.
অন্তরা আহম্মেদ ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন-
এসব কি বলছিস তুই?
-মা আমি মেঘের রাজ্যে গিয়েছিলাম। আমার সবটা মনে আছে।
.
অন্তরা আহম্মেদ ছেলের গায়ে হাত দিয়ে দেখলেন, শরীর টাও গরম। হুট করে শরীর গরম কিভাবে হলো তিনি বুঝছেন না।
মেঘ আশেপাশে তাকিয়ে বলল-
হুরায়রা কোথায়?
-হুরায়রা এখানে কোথা থেকে আসবে?
-আমি এখানে কিভাবে এলাম?
-তুই তো এখানেই ছিলি। ঘুম থেকে উঠছিস না বলে ডাকতে এসেছিলাম। দেখলাম মেঝেতে পড়ে আছিস। সাইয়ারাও সেই মুহুর্তে এসেছে। সে তার খালুকে ডাক দেয়৷ তার সাহায্যে তোকে উপরে উঠাই আমরা। সাইয়ারার খালু তো ডাক্তারও আনতে গেলেন। তোর কি হয়েছে বল তো?
.
মেঘ কিছু বলল না। সে ভাবতে লাগলো, এসব কি হচ্ছে তার সাথে! আদৌ কি এসব ঘটেছে না কি স্বপ্ন দেখেছে সে। আর হুরায়রা যদি সত্যিই মানুষ না হয়!
নাহ, আর ভাবতে পারছে না মেঘ। মাথা ভার হয়ে আছে তার। মনে হচ্ছে শরীর থেকে মাথা টা এখুনি আলাদা হয়ে যাবে। মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে জোরে একটা চিৎকার দেয় সে। আবারো জ্ঞান হারায় মেঘ।
.
চলবে
.
বি:দ্র: এই গল্পটি শুরু করার আগে গ্রুপে বলা হয়েছিল, এটি ফ্যান্টাসি থ্রিলার।
সব কিছু খোলাসা করা হবে আজ থেকে। শেষ হয়ে আসছে মেঘের শহরে… 💞

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here