হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
605

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১১)
সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় উঠা মাত্রই কুশল তরুকে নিজের কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে শান্ত স্বরে বললো…

—“এবার সাবধানে হেঁটে রুমে এসো। আশা করছি এখন এই সমান জায়গায় পরে গিয়ে শরীরের কোনো অংশ ভে*ঙে ফেলবে না।”

তরু চোখ ছোট ছোট করে কুশল এর দিকে তাকিয়ে বললো….
—“আপনি এমন ভাবে বলছেন যেনো আমি ইচ্ছে করেই পরে যাই আর শরীরে ব্যথা পাই!”

—“সেটা তুমিই জানো কি করো তুমি।”

কথাটি বলেই কুশল ওর রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। তরু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে কুশলের যাওয়ার পানে কিছুসময় তাকিয়ে থেকে বললো….

—“এই খা’রু’শের সাথে এখন থেকে এক রুমে থাকতে হবে আমায়! ব্যডা তো আগে আগেই নিজের রুমে চলে গেলো। তারমানে তো উনি বিছানায় শুয়ে পড়বেন। এই খারুশের সাথে বাধ্য হয়ে রুম শেয়ার করলেও বিছানা শেয়ার করতে পারবো না আমি। তরু এভাবে বাঁশের খুঁটির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত রুমে যা আর বিছানাটা দখল করে নে।”

এই বলে তরু দু’হাতে লেহেঙ্গার দু’পাশ তুলে ধরে দ্রুত পায়ে কুশলের রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। কিছুসময় পর তরু রুমের ভিতর প্রবেশ করতেই দেখে কুশল রুমের ভিতরে নেই। তরু কুশলের রুমটা ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে দেখে। রুমের ভিতর রাখা সব আসবাবপত্র ও জিনিসপত্র খুব পরিপাটিভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা রয়েছে। আলিশান বিছানার ডানপার্শে একটা মাঝারী সাইজের হেলানো সোফা রাখা রয়েছে। একজন মানুষ একটু কষ্ট করলেই সেখানে ঘুমাতে পারবে। তরু বিছানা থেকে একটা বালিশ আর কম্বল নিয়ে সেই শোফার উপর রাখতে নেয়। সেইসময় কুশল তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসে। পরণে তার একটা কালো রংয়ের হাফ হাতা টি-শার্ট আর কালো রংয়ের একটা ট্রাউজার রয়েছে। কুশলের উজ্জ্বল শ্যম শরীরে কালো রংটি একটু বেশিই মানিয়েছে। পরক্ষণেই কুশল তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো….

—“অতোটুকু সোফায় শুয়ে আরাম করে ঘুমাতে পারবে না। বর্তমানে আমি তোমার স্বামী হই তাই আমার থেকে আলাদা ভাবে নিরাপত্তা নেওয়ার প্রয়োজন নেই তোমার। নির্দ্বিধায় বিছানায় শুয়ে ঘুমাতে পারো।”

তরু ভ্রু যুগল কুঁচকে কুশলের দিকে তাকিয়ে বললো…..
—“আপনাকে কি একটা বারের জন্যও আমি বলেছি যে এই সোফায় আমি ঘুমাবো!”

—“তাহলে বালিশ, কম্বল এসব ওখানে রাখছো কেনো?”

—“এই সামান্য বিষয়টুকুও আপনার মাথায় ঢুকছে না।”

কুশল তোয়ালেটি চেয়ারের উপর রেখে বিছানার দিকে অগ্রসর হতে হতে বললো……
—“আমি অনেক ক্লান্ত তরুনিমা, এখন আর নিজের বিষয় নিয়ে ম*ন্দ কথা শোনার ইচ্ছে আমার নেই।”

তরু দ্রুত স্বরে বললো…..
—“এই আপনি ওখানেই দাঁড়িয়ে যান। বিছানায় উঠবেন না একদম।”

কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“বিছানায় উঠবো না মানে! বললাম তো আমি অনেক ক্লান্ত। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে, কথা না বাড়িয়ে আমাকে ঘুমাতে দাও আর নিজেও ঘুমিয়ে পড়ো।”

—“বললাম তো আপনি বিছানায় উঠবেন না।”

কুশল তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো….
—“তাহলে এখন তুমি আমায় কি করতে বলছো! বিছানায় না উঠলে আমি ঘুমাবো কোথায়?”

—“কেনো এই যে এই সোফায়, আপনি এখানে ঘুমাবেন আর আমি বিছানায় ঘুমাবো৷”

—“হোয়াট! ওতোটুকু সোফায় কোনো মানুষ ঘুমাতে পারে নাকি?”

—“সেটা দেখার বিষয় তো আমার না। আপনি একটু আগে বললেন না আপনি আমার স্বামী হন তাই আপনার থেকে আলাদা ভাবে নিরাপত্তা নেওয়ার প্রয়োজন আমার নেই! আপনি হয়তো একটা কথা ভুলে গিয়েছেন তাই কথাটি আপনাকে মনে করিয়ে দেই। আপনার আর আমার বিয়ে স্বাভাবিক ভাবে হয় নি। আপনি খুব ভালো করেই জানেন আপনাকে আমি দুই চোক্ষে স’হ্য করতে পারি না। দুই বংশের সম্মান ও সম্পর্ক রক্ষার কথা চিন্তা করেই বাধ্য হয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি। বাধ্য হয়ে আপনার সাথে রুমও শেয়ার করতে হচ্ছে। কিন্তু এই চারদেওয়ালের ভিতরে না আছে কোনো সম্পর্কের চিন্তা আর না আছে কোনো বংশ মর্যাদার চিন্তা। তাই এই চারদেওয়ালের ভিতর আপনি আমার উপর নিজের স্বামীর অধিকার খাটানোর চেষ্টা ও আমার উপর হুকুম চালানোর চেষ্টা ভুল করেও করবেন না। যতোসময় আপনি আমার পাশাপাশি থাকবেন ততোসময় আমি নিজেকে নিজের কাছে সবথেকে বেশি অনিরাপদ বলে মনে করি।”

তরুনিমার মুখে এই কথাগুলো শুনে কুশল এর চেহারায় রাগ ও বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠে। কুশল নিজের কমোরের পিছনে দু’হাত রেখে শান্ত স্বরে বললো…..

—“বিয়েটা স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভিক যেভাবেই হোক না কেনো হয়েছে। তাই ইসলামিক শরিয়ত ও আইনত নিয়ম মাফিক চারদেওয়ালের ভিতরে বা বাহিরে তোমার উপর নিজের জোর খাটানোর সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে মিসেস. তরুনিমা চৌধুরী। নারীরা পুরুষের শক্তির নিকট অত্যন্ত দূর্বল। আমি চাইলেই এই মূহূর্তে তোমার উপর নিজের শারিরীক শক্তি প্রয়োগ করে নিজের অধিকার বুঝে নিতে পারি। কেও আসবে না তোমার নিকট সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। আগামীকাল সকালেও যদি তুমি তোমার উপর আমার শারিরীক অধিকার খাটানো নিয়ে কারোর কাছে অভিযোগ করতেও যাও কেও তোমার কথা শুনবে না। শুনলেও পরমুহূর্তে তোমাকেই এমন অভিযোগের জন্য কড়া কথা শুনাবে। কিন্তু একটা কথা কি জানো! কোনো নারীর দূর্বলতা জানার পর তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তার উপর নিজের অধিকার খাটানোর মতো জ*ঘ*ন্য ইচ্ছে শক্তি আমার মধ্যে কাজ করে না। আমি সর্বদাই সব বয়সের নারীদের সম্মান করি। এটাই আমার সুশিক্ষার মাঝে পরে। তুমি আমার সাথে এক বিছানায় থাকতে কমফরটেবল ফিল করো না এটা আমাকে ভালো ভাবে বললেই পারতে। ফ্রেশ হয়ে নিশ্চিন্ত মনে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমি সোফাতেই এডজাস্ট করে নিবো।”

তরুনিমা স্তব্দ দৃষ্টি নিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে ওর বলা কথাগুলো শুনলো। কুশল সোফার কাছে এসে দাঁড়িয়ে তরুর সামনে তু’রি বাজাতেই তরুর ধ্যন ভেঙে যায়। তরু কুশলের দিকে একপলক তাকিয়ে কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে উঠে বসে। কুশল ওর ট্রাউজারের পকেট থেকে ফোনটা বের করে সোফায় বসে ফোন স্ক্রোলিং করতে শুরু করে। কিছুসময় পর ওদের দরজায় নক করার শব্দ হলে কুশল শান্ত স্বরে বললো…

—“ভিতরে আয় সন্ধ্যা।”

কুশলের কন্ঠ শুনামাত্র সন্ধ্যা ওদের রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। তরুনিমা সন্ধ্যার দিকে তাকাতেই দেখে সে হাতে করে কিছু সাধারণ সালোয়ার-কামিজ-ওড়না নিয়ে এসেছে। সন্ধ্যা কাপড় গুলো বিছানার উপর রাখতে রাখতে বললো….

—“ভাবী এই ভাড়ি লেহেঙ্গা পড়ে তো ঘুমাতে পারবে না তুমি। আমি আমার নতুন কিছু সালোয়ার-কামিজ নিয়ে এসেছি। ফ্রেশ হয়ে এগুলোর মাঝে একটা পড়ে নাও।”

তরুনিমা শান্ত স্বরে সন্ধ্যাকে প্রশ্ন করলো…..
—“আমার জন্য এতো রাতে এতো গুলো সাধারণ কাপড় কি তুমি স্বইচ্ছায় নিয়ে আসলে নাকি তোমাকে নিয়ে আসার জন্য কেও বলেছে সন্ধ্যা?”

তরুর এমন প্রশ্ন শুনে সন্ধ্যা কুশলের দিকে তাকায়। তরুও সন্ধ্যার দৃষ্টি লক্ষ্য করে কুশলের দিকে তাকায়। কুশল ফোনের উপর নিজের দৃষ্টি এমনভাবে স্থির করে করে রেখেছে যেনো সে ব্যতিত এই রুমজুড়ে এই মূহূর্তো আর কোনো মানুষের উপস্থিতি নেই। কুশলকে বালিশ, কম্বল নিয়ে সোফায় বসে থাকতে দেখে সন্ধ্যা যা বোঝার তা ঠিকই বুঝতে পারে। সন্ধ্যা কুশলকে যথেষ্ট ভয় পায়। তাই তরুর প্রশ্নের কোনো প্রতিত্তুর না করেই তৎক্ষনাৎ ওদের রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরুনিমা বিছানা থেকে নেমে কাপড় গুলো হাতে নিয়ে আলমারির খুলে সেখানে রাখতে রাখতে বললো….

—“আমার বিষয় নিয়ে এতো চিন্তা করার কিংবা আমার প্রতি এতো সহানুভূতি দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই আপনার। আমার কিসে সুবিধা হবে আর কিসে অসুবিধা হবো তা আমি নিজেই বুঝে নিতে পারবো।”

তরুর এমন কথাগুলো যে কুশলের উপর কোনো প্রভাব ফেলে নি তা কুশলকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কুশল তরুর কথার কোনো প্রতিত্তুর না করে বালিশ ঠিক করে কম্বল গায়ে জড়িয়ে ওভাবেই কষ্ট করে শুয়ে পড়ে। তরু আর কিছু না বলে এক সেট জামা হাতে নিয়ে আলমারি বন্ধ করে ওয়াশরুমে চলে যায়। বেশ কিছুসময় ধরে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে তরুনিমা ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে দেখে সোফার বাহিরে মেঝেতে কুশলের একটা পা আর একটা হাত ঝুলে আছে। কুশলকে দেখেই তরু বুঝতে পারছে এতো ছোট সোফায় শোয়ার জন্য ভিষণ বেগ পেতে হচ্ছে কুশলকে। তরু সে বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে বিছানায় উঠে নিজের মতো শুয়ে পড়ে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here