হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
612

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৯)
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন সাগরিকা চৌধুরীর বড় ছেলে রায়হানুল চৌধুরী। ২৮ বছর পূর্বে যখন রায়হানুলের স্ত্রী রুবিনা চৌধুরীর সন্তান প্র’স’ব করার সময় হয়ে এসেছিলো সেইসময় তিনি ব্যবসার বিশেষ কাজে শহরের বাহিরে ছিলেন। পরবর্তীতে স্ত্রীর শ’ঙ্কা’জ’নক অবস্থার কথা জানতে পেরে দ্রুত গাড়ি ড্রাইভিং করে বাসায় ফেরার পথে ট্রাকের সাথে এ’ক্সি’ডে’ন্ট করে মাথায় গু*রু*তর আ*ঘা’ত পান। বড় ধরণের সা*র্জা’রির মাধ্যমে রায়হানুলকে প্রা’ণে বাঁ’চাতে সক্ষম হলেও পরবর্তীতে তিনি কো*মায় চলে যান। আর আজ দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ কো*মায় আছেন তিনি৷ ২৮ বছর পূর্বের সেই কালদিনে রুবিনাও সন্তান প্র’স’ব’কালীন সময় মৃ*ত সন্তানের জন্ম দিয়ে মা*রা গিয়েছিলেন। রায়হানুল কো’মা থেকে ফিরে আসবেন, আবারও পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন সেই আশা মনের ভিতর পুষে রেখে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন চৌধুরী বংশের সদস্যরা। রায়হানুলের চিকিৎসার যেনো কোনোরকম ত্রু’টি না হয় তাই তাকে হাসপাতালেই রাখা হয়েছে দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ। পরিবারের ছোট-বড় সদস্যরা মাঝেমধ্যে হাসপাতালে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে যান।

ঘড়িতে তখন রাত ১১ টা বাজে………
রায়হানুলের কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো কুশল আর তরুনিমা। ওদের সাথে রায়হানুলের চিকিৎসায় নিয়জিত থাকা ওনার বন্ধু খালেকুজ্জামান নামের একজন মধ্যবয়সের ডাক্তার ও ২জন মধ্যবয়সের পুরুষ নার্সও ছিলেন। দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ ওনারাই রায়হানুলের চিকিৎসা ও দেখাশোনার দায়ভার সামলিয়ে এসেছেন। তরুনিমা রায়হানুলের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে ওনার স্থির হয়ে থাকা মুখশ্রীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কুশল সোজা হয়ে দাড়িয়ে নম্রস্বরে ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..

—“খালেক আঙ্কেল আমি বড় বাবাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি।”

কুশলের এমন কথা শুনে খালেক অনেক অবাক হয়ে যায়। পাশাপাশি খালেকের চেহারায় চিন্তার ছাপ ও ফুটে উঠে। খালেক অবাক স্বরে বললেন….

—“কেনো কুশল বাবা হঠাৎ রায়হানুলকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলছো যে! আমরা তো চিকিৎসায় কোনো ত্রু*টি রাখি নি দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ওর দেখাশোনার দায়ভার ও আমাদের উপরেই বর্তে দিয়েছিলেন তোমার মা সাবরিনা চৌধুরী। আমরা নিষ্ঠার সাথেই সেই দায়িত্ব পালন করে এসেছি।”

কুশল স্বাভাবিক কন্ঠে বললো….
—“আপনাদের চিকিৎসা ও দেখাশোনার দায়িত্ব পালনে কতোটুকু নিষ্ঠা ছিলো তা নিয়ে আমি কোনো প্রশ্ন বা অভিযোগ উঠাচ্ছি না। একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষও যদি দীর্ঘসময় ধরে চারদেওয়ালের মাঝে ব*ন্দী হয়ে থাকে তাহলে সেও ধীরে ধীরে অ*সুস্থ হয়ে উঠবে। দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ বড় বাবা কো*মায় থাকায় এই হাসপাতালের চার দেওয়ালের মাঝেই ব*ন্দী হয়ে আছেন। তার মাঝে এতোগুলো বছরে একটাবারের জন্যও কোনো রকমের ইম্প্রুভমেন্ট আমরা কেও দেখি নি। তাই বড় বাবাকে আর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে রাখার প্রয়োজনও আমি মনে করছি না। আজ বড় বাবাকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবো। অতঃপর পরিবারের সকলের মাঝে থাকলে, খোলা-মেলা পরিবেশের মাঝে থাকলে যদি সামান্য তমোও ইম্প্রুভমেন্ট হয় ওনার মাঝে এটাই আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া হবে।”

—“কিন্তু , বিনা চিকিৎসায় রায়হানুলের শারিরীক অবস্থা বর্তমানের থেকে আরো বেশি খা’রা’প হতে পারে। কুশল বাবা, আমি তোমাকে অনেক বিচক্ষণ ছেলে বলেই মনে করি। তাই তোমার থেকে এমন সিদ্ধান্ত শোনার আশা আমি করি নি।”

কুশল খালেকের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো….
—“চিকিৎসা বন্ধ থাকবে এমন কথা তো আমি বলি নি আঙ্কেল।”

—“আমার এতো বড় হাসপাতালের দায়ভার ছেড়ে দিয়ে আমি রায়হানুলের চিকিৎসা করতে তোমাদের বাসায় গিয়েই বা থাকবো কি করে কুশল!”

কুশল ওর কমোরের পিছনে দু’হাত রেখে শান্ত স্বরে বললো…
—“আপনি বড় বাবার চিকিৎসা করতে না পারলেও আমাদের বিশেষ কোনো স’ম’স্যা’র সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে হয় না আমার। বড় বাবার চিকিৎসার জন্য আমি অন্য কোনো ডাক্তারের ব্যবস্থা করে নিতে পারবো।”

কুশলের এমন কথা শুনে খালেক দ্রুত কন্ঠে বলে উঠলেন….
—“না , তুমি এমনটা করতে পারো না।”

কুশল ভ্রু কিন্ঞ্চিত কুঁচকে নিয়ে বললো….
—“কেনো! করতে না পারার কি আছে?”

কুশলের প্রশ্নে খালেক কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গিয়ে বললো….
—“কারণ , রায়হানুলের চিকিৎসার দায়ভার দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ আমিই সামলে এসেছি তাই হুট করে ওর চিকিৎসার দায়ভার অন্য কাওকে দিয়ে দিলে তা আমার সম্মানের উপর আঙুল উঠানোর সমতুল্য হবে।”

কুশল ওর ঠোঁটে আলতো হাসি ফুটিয়ে বললো….
—“আঙ্কেল….আপনার বয়স তো কম হলো না। ১-২ বছরের মধ্যেই আপনাকে এই চিকিৎসালয় থেকে রিটায়ার্ড নিতে হবে। তখন আপনার অবর্তমানে বড় বাবার চিকিৎসার দায়ভার অন্য কাওকে দিয়ে দিতেই হবে। বড় বাবাকে সুস্থ করে তোলার জন্য অনেক চেষ্টা ও পরিশ্রম করলেন। আমার মনে হলো এবার আপনার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। আর কুশল চৌধুরী যখন কোনো সিদ্ধান্তে নিজের মনঃস্থির করে তখন দুনিয়া উ*ল্টে গেলেও সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হ’টে না। শেষ আরেকটা কথা বলছি, আপনার সম্মানের উপর আঙুল উঠানোর কোনো ইচ্ছে আমার নেই। দ্রুত বড় বাবাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাগজ রেডি করুন, আমার হাতে বেশি সময় নেই।”

কুশলের কথাগুলো শুনে খালেক আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলো না। অতঃপর খালেক আর কোনো উপায় না পেয়ে পুরুষ নার্সদের উদ্দেশ্য করে বললেন…..

—“তোমরা পেশেন্টের সবকিছু গুছিয়ে দাও।”

খালেক কথানুযায়ী পুরুষ নার্স দু’জন রায়হানুলের সব জিনিস পত্র গুছাতে শুরু করে। খালেক রায়হানুলের কেবিন কক্ষ থেকে বেড়িয়ে এসে নিজের এফ্রণের পকেট থেকে ফোনটা বের করে কাওকে কল করে।

(১০)
চৌধুরী বাড়ির বিয়ের আসরে সকলেই চি’ন্তিত মুখশ্রী নিয়ে বসে আছে। পরবর্তীতে কুশলকে আরো বেশ কয়েকবার কল করেও ফোন বন্ধ পেয়ে আরো বেশি হতাশ হয়েছে সকলে। সায়মন চৌধুরী পায়চারি করতে করতে রাগী স্বরে বললেন….

—“মানছি তরুনিমার মাঝে থেকে এখনও বাচ্চাসুলভ স্বভাবগুলো পুরোপুরি ভাবে কাটে নি কিন্তু কুশল!কুশলকে তো আমরা অনেক সিনসিয়র আর সুবিদ্ধিসম্পন্ন ছেলে বলে মনে করেছিলাম। তাহলে ও এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজ করতে পারলো কি করে!ওর থেকে অন্তত এমনটা আশা করি নি আমি।”

সেইসময় সাবরিনা চৌধুরী তমালিকা সিকদার আর তারেক সিকদারকে উদ্দেশ্য করে বললেন….

—“বিয়ে না হতেই আপনাদের মেয়ে আমার এতো দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন ছেলেকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বানিয়ে ছাড়লো। না জানি বিয়ের পর ওর সাথে থাকতে থাকতে ছেলেটাকে আরো কতো কথা শুনতে হবে।”

তমালিকা কিছু বলতে নিলে তারেক তাকে থামিয়ে দিয়ে ইশারায় প্রতিত্তুর করতে না করে। কামিনী নিজের লম্বা চুলের বিনুনিটি ঘাড়ের ডান পার্শে নিয়ে হাত দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন….

—“মেজো ভাবী একদম ঠিক কথা বলেছেন। এর আগে কখনও কুশলকে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজ করতে দেখি নি আমরা। আপনাদের মেয়ের সংস্পর্শে আসতে না আসতেই ওর মাঝে এমন পরিবর্তন। না জানি ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে।”

কামিনীর এমন কথায় তমালিকার শরীর রাগে জ্ব’ল’ছে। স্বামীর নি’ষে’ধ মান্য করতে হচ্ছে জন্য সব রাগ নিজের মধ্যেই হজম করে নিতে হচ্ছে তমালিকাকে। ওদের আরো কিছুসময়ের কথোপকথনের মাঝেই কুশল আর তরু রায়হানুলকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে নিয়ে বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়। কুশল আর তরুর সাথে রায়হানুলকে দেখামাত্রই সাগরিকা, কামিনী, রিজভী, সায়মন, সাবরিনা চৌধুরী সকলেই যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন। কারোর মুখে খুশির ছাপ ফুটে নেই। ফুটে আছে শুধু অবাক আর চিন্তার ছাপ। কামিনী ওনার স্বামী রিজভীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে কপালের উপর চিন্তার ভাজ ফেলে ফিসফিসিয়ে বললেন….

—“তোমার ভাতিজা হঠাৎ বড় ভাসুরকে বাসায় নিয়ে আসলেন কেনো গো?”

রিজভী শুকনো ঢোক গিলে বললেন…
—“কুশল যেই কাজই করে তার পিছনে বড় কোনো উদ্দেশ্য থাকে। হুটহাট কোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ছেলে সে নয়। জানি না বড় ভাইয়াকে বাসায় নিয়ে আসার পিছনে কুশলের উদ্দেশ্য কি রয়েছে। তবে কেনো জানি না আমার মন ভিষণ কু ডাক ছাড়ছে।”

কামিনী জোর পূর্বক নিজের মুখে হাসি ফুটিয়ে বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে বললেন….
—“নিজের মনকে সংযত রাখো আর চেহেরা থেকে চিন্তার ছাপ কাটিয়ে হাসি হাসি মুখে থাকো। নয়তো বাকিদের মনে আমাদের এমন চাল-চলন নিয়ে স’ন্দে’হ জাগবে।”

সাগরিকা চৌধুরী স্তব্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন কুশল, তরু আর রায়হানুলের দিকে। পরক্ষণেই সায়মন চৌধুরী কুশলকে উদ্দেশ্য করে বললেন….

—“কাওকে কিছু না জানিয়ে গুরুজনদের থেকে অনুমতি না নিয়েই তুমি বড় ভাইজানকে বাসায় নিয়ে আসলে কেনো কুশল?”

কুশল ওর কমোরের পিছনে দু’হাত রেখে সায়মনের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো…
—“কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বা কোনো কাজ করার জন্য আমি কারোর থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না তা আপনি খুব ভালো করেই জানেন।”

সকলের সামনে কুশলের বলা এমন কথায় সায়মন বেশ অ’প’মা’নিত বোধ করে প্রতিত্তুর করতে নিলেই সাবরিনা তাকে থামিয়ে দিয়ে হাসিমুখে ওদের দিকে অগ্রসর হতে হতে বললেন….

—“আহা তোমরা বাবা-ছেলেতে এভাবে কথা বলে নিজেদের মাঝে মনোমালিন্যের সৃষ্টি করো না তো। কুশল বাবা তুমি যা করেছো একদম ঠিক কাজ করেছো। এই পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকেন ই বা কতোদিন! বড় ভাইজান কো*মায় থাকার কারণে হাসপাতালের চার দেওয়ালের মাঝেই নিজের জীবনের এতো গুলো বছর কাটিয়ে দিলেন। এখন জীবনের বাকি সময়টুকু না হয় নিজের বাসায় পরিবারের সাথে থেকেই কাটিয়ে দিবেন। কুশল বাবা, তুমি বড় ভাইজানকে একেবারের জন্যই হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে এনেছো তো?”

কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“হুম বড় বাবাকে হাসপাতাল থেকে একেবারের জন্যই ছাড়িয়ে এনেছি।”

—“আচ্ছা , অনেক সময় তো পেরিয়ে গেলো এখন না হয় তোমাদের বিবাহকার্য শুরু করা যাক!”

কুশল আর তরুনিমা একে-অপরের দিকে একপলক তাকিয়ে সাথে সাথেই দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিলেন। পরক্ষণেই কুশল রায়হনুলের হুইচেয়ারের দুইপাশ ধরে মন্ঞ্চের সামনে এনে থামিয়ে দেয়। তারপর কুশল মন্ঞ্চে উঠে নিজ আসনে বসে পরে। তরুনিমাও মন্ঞ্চে উঠে নিজ আসনে বসে পরে। অতঃপর সমস্ত রকম নিয়ম-কানুন মেনে কুশল-তরুর বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়। বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়ে গেলে সকলেই বিয়ের আসরের স্থান ত্যগ করে চৌধুরী মেনশনের ভিতরে প্রবেশ করে।

দু’জন পুরুষ সার্ভেন্টকে রায়হানুলকে তার নিজ কক্ষে যত্নের সহিত শুইয়ে দিয়ে আসার হুকুম দেয় কুশল। সাগরিকা চৌধুরী শান্ত স্বরে বললেন….

—“কনক দাদুভাই তুমি অনন্যা দিদিভাইকে নিয়ে এবার নিজের রুমে যাও। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম করো তোমরা।”

সাগরিকা চৌধুরীর কথানুযায়ী কনক আর অনন্যা নিজেদের রুমে চলে যায়। ওরা চলে যেতেই সাগরিকা চৌধুরী আবারও বললেন….

—“কুশল দাদুভাই তুমিও তরু দিদিভাইকে নিয়ে নিজের রুমে যাও। আর বাকিরাও যার যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম করো।”

অতঃপর ধীরে ধীরে সকলেই ড্রয়িংরুমের স্থান ত্যগ করে নিজ নিজ রুমে চলে যায়। সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় পরনে থাকা ভাড়ি লেহেঙ্গাটি দু’হাতে উঁচু করে ধরে হাঁটার চেষ্টা করেও বারবার পায়ের সাথে বে’জে যাওয়ায় তরুর হাঁটতে ভিষণ ঝা’মে*লা হচ্ছিলো। কয়েকটা সিড়ি পার করতেই লেহেঙ্গার সাথে পা বে*জে তরু প*ড়ে যেতে নিলেই পিছন থেকে কুশল বা’হাতে তরুর কমোর জড়িয়ে ওকে ধরে নেয়। ভ’য়ে তরু কিছুসময়ের জন্য নিজের চোখ-মুখ খিঁ’চে বন্ধ করে নিয়েছিলো। পরক্ষণেই নিজে শূন্যে ভেসে আছে এমন ভাব উপলব্ধি করতেই তরু চোখ মেলে তাকায়। চোখ মেলে তাকাতেই তরু দেখে কুশল তাকে পাজাকোলে তুলে নিয়েছে। তরু ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে বললো…..

—“এই আপনি আমাকে কোলে নিয়েছেন কোন সাহসে! নামান বলছি।”

তরুর কথায় কুশল কোনো গুরুত্ব না দিয়ে ওকে কোলে নেওয়া অবস্থাতেই একের পর এক সিঁড়ির ধাপ পেড়িয়ে উপরে উঠতে শুরু করে। তরু আবারও বললো…..

—“ভালো হচ্ছে না কিন্তু, আপনাকে আমি আমায় নামিয়ে দিতে বললাম তো। আমার কথা কি আপনার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না?”

কুশল নিজের দৃষ্টি সামনের দিকে স্থির রেখে কদম ফেলতে ফেলতে শান্ত স্বরে বললো…..

—“সন্ধ্যার পর একবার প’রে গিয়ে কমোরে বেশ আ’ঘা’ত পেয়েছিলে, আমার উপর থাকা রাগের কারণে তখন ঔষধ ও লাগাও নি। একটু আগে আবারও লেহেঙ্গার সাথে পা বেজে প*রে যেতে নিয়েছিলে, আমি ছিলাম বিধায় তোমাকে প’রে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে নিতে পেরেছি। এখন নামিয়ে দেওয়ার পর আবারও যদি লেহেঙ্গার সাথে পা বে*জে প’রে যেতে নাও তাহলে কিন্তু আমি আর তোমাকে ধরতে যাবো না। তখন এতো উঁচু থেকে নিচে প’রে গেলে তোমার শরীরের কয়টা হা’ড় যে ভে*ঙে যাবে তা তুমি গুণে শেষ করতে পারবে কি! এর থেকে ভালো হয় ছ’ট’ফ’ট না করে নিজের মুখটা বন্ধ রাখো। আমি সারাজীবন ধরে তোমাকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো না। সঠিক সময় হলে ঠিকই নামিয়ে দিবো।”

কুশলের কথাগুলো শুনে তরু আর কোনো প্রতিত্তুর না করে শুধু মুখ বাঁ’কা’য়।

চলবে ইনশাআল্লাহ………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here