হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩৭) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
884

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩৭)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৯৪)
তরুনিমা আলমারী থেকে ওর নতুন কয়েকটা শাড়ি আর তার সাথে ম্যচিং করে জুয়েলারি গুলো বের করে বিছানার উপর সারিবদ্ধ ভাবে রেখেছে। বিছানার মাঝ বরাবর দাড়িয়ে শাড়িগুলোর উপর দৃষ্টি স্থির দেখে বামহাত কমোরে ও ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের নখ মুখে নিয়ে দাঁত দিয়ে কা*ট*তে কা*ট*তে বলছে…..

—“সবগুলো শাড়ি আর জুয়েলারিই তো আমার কাছে একই রকম সুন্দর লাগছে কিন্তু সব গুলো তো আর একসাথে পড়া সম্ভব না যেকোনো একটা বাছাই করতে হবে। কিন্তু কোনটা রেখে কোনটা যে পড়বো!”

তরুনিমা আর ভেবে না পেয়ে ঘাড় বাকিয়ে বেলকোনির দিকে একবার লক্ষ্য করতেই দেখে কুশল বেলকনিতে বসে এমন মনে ফাইল চেইক করছে। তরুনিমা বিরবিরিয়ে বললো…..

—“ওনার চিন্তাভাবনার মতোই কি ওনার পছন্দ ও ততোটাই সুন্দর হবে! ওনাকেই কি একটাবার বলবো এর ভিতর থেকে আমাকে একটা শাড়ি পছন্দ করে দিতে? হুম এটাই করতে হবে, তরু নিজের ভিতরে কাজ করা সব সং*কো*চ বোধকে কিছুসময়ের জন্য চাপা দিয়ে রেখে ওনাকে নিজের সমস্যার কথা বলেই ফেল।”

অতঃপর তরুনিমা জোরে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বেলকনির দিকে অগ্রসর হয়। বেলকনির দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে তরুনিমা আস্তে করে একবার গলা ঝাড়া দেয়। কিন্তু এতে কুশলের কোনোরূপ রেসপন্স তরু পায় না। পরমুহূর্তে একটু জোরের সাথে পরপর কয়েকবার গলা ঝাড়া দিতেই কুশল ভ্রু কুঁচকে তরুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো….

—“তোমার গলায় কিছু আটকে গিয়েছে নাকি?”

তরু কুশলের এমন প্রশ্নে অবাক হয়ে বললো…..
—“না তো!”

—“তাহলে বারবার এভাবে গলা ঝাড়া দেওয়ার কারণ কি?”

—“আ-আব-কিছু না, এমনিই করেছি।”

কুশল আর কিছু না বলে আবারও নিজের কাজে মনোনিবেশ করে। তরু চোখ ছোট ছোট করে কুশলের দিকে তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বললো….

—“এই খা*রুশ ব্যডার আজ হলো টা কি! এমনি সময় তো মুখে কিছু বলার আগেই বুঝে যেতো আমার এইটা প্রয়োজন ঐটা করতে ইচ্ছে হচ্ছে তাহলে আজ বুঝতে পারলো না কেনো? নাকি আমি নিজ থেকে ওনার সাথে কথা বলতে এসেছি জন্য ভাব নিচ্ছেন! হুহ…কি ভেবেছেন উনি ওনার এতো ভাব দেখার জন্য আমার হাতে অফুরন্ত সময় আছে? একদমই না। চল তরু যেই কাজের কথা বলতে এখানে এসেছিস সেটা বলে ফেল জলদী।”

পরক্ষণেই তরুনিমা বললো…

—“আব…শুনুন!”

কুশল তরুনিমার দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো….
—“হুম বলো!”

—“আজ সন্ধ্যায় বড় ভাবীর প্রেগন্যান্সির আনন্দে যে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে ঐ পার্টিতে আমি কোন শাড়িটা পড়বো সেটা সিলেক্ট করতে পারছি না। আপনার সাথে কিছুদিন ধরে থাকার পর আমার মনে হয়েছে আপনার চিন্তা-ভাবনা করে যেকোনো সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা অনেক ভালো। সেইরকম আপনার পছন্দ-অপছন্দও হয়তো সুন্দরই হবে। তাই আপনি কি আমাকে নির্দ্রিষ্ট একটা শাড়ি পছন্দ করে দিতে পারবেন?”

এই প্রথম তরুনিমার মুখ থেকে নিজের সামান্যতম প্রশংসা শুনে কুশল কিছুটা অবাক এর পাশাপাশি খুশিও হয়। ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো…..

—“হুম চলো, দিচ্ছি পছন্দ করে।”

কুশল বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তরুনিমার সাথে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ায়। কুশল বিছানার উপর রাখা শাড়িগুলো হাত বুলিয়ে একে একে দেখছে। কিছুসময় পর সবগুলো শাড়ির ভিতর থেকে গাড় নেভি ব্লু রংয়ের হাতের কাজ করা ফুলগুলোর ভিতর সাদা স্টোন বসানো একটা শাড়ি হাতে নিয়ে তরুর কাঁধ থেকে কমোর পর্যন্ত ফেলে ওর থেকে একহাত দূরে দাঁড়িয়ে কুশল তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে। তরুও কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই কুশল তরুর বাম হাত ধরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে ইশারায় ওকে আয়নার দিকে লক্ষ্য করতে বললো। তরু আয়নার দিকে লক্ষ্য করতেই কুশল হাসিমুখে বললো…..

—“আজকের পার্টিতে এই শাড়িটাই পড়িও।”

এই বলে কুশল রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরুর ঠোঁটে শান্ত হাসির রেখা ফুটে উঠে।

(৯৫)
তালুকদার ভিলায় গেইট থেকে কিছুটা দূরে রাখা তাহিরের নিজের গাড়ির ড্রাইভিং সিটের দরজাটি সে খুলতেই অপর পার্শের সিটে হুমায়রাকে বসে নিজের নখে নেইলপালিশ লাগাতে দেখে তাহির অবাক স্বরে বললো…

—“তুই এখানে কি করছিস?”

হুমায়রা নেইলপালিশ লাগানো নখ গুলোতে ফুঁ দিতে দিতে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললো….

—“অকালে চোখের সম্পূর্ণ পাওয়ার কি নষ্ট হয়ে গেলো নাকি তোমার?”

—“মানে?”

—“দেখছো না নখে নেইলপালিশ লাগাচ্ছি!”

—“হুম দেখছি তো।”

—“তাহলে আবার কি জিজ্ঞাসা করছো কেনো আমি এখানে কি করছি?”

হুমায়রার এমন উত্তরে তাহির দাঁতে দাঁত পি*ষে বললো…
—“আমার গাড়িটা কি তোর নখে নেইলপালিশ লাগানোর জন্য আমি কিনেছিলাম?”

—“গাড়িটা তুমি আসলে কেনো কিনেছো তা আমি জানি না। কিন্তু এখন গাড়িতে বসে নখে নেইলপালিশ লাগাতে আমার অনেক ভালো লাগছে।”

—“আমার গাড়ি থেকে এইমূহূর্তে নাম তুই। বাড়ির ভিতরে গিয়ে আমার রুম ব্যতিত অন্য যেখানে খুশি সেখানে বসে-শুয়ে-দাড়িয়ে থেকে তুই তোর নেইলপালিশ লাগা যা।”

—“উহুহহহ….আমি এখন বাড়ির ভিতরে যাবো না। আমার দুইপায়ের নখগুলোতে নেইলপালিশ লাগানো এখনও বাকি আছে। আর আমি এই গাড়িতে বসেই আমার কাজ সম্পন্ন করবো।”

—“তুই গাড়ি থেকে নামবি নাকি আমাকে তোর পা দুটোই কে*টে ফেলতে বলছিস!”

হুমায়রা ভ্রু কুঁচকে তাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো…
—“গাড়ি থেকে এইমূহূর্তে না নামলে তুমি আমার পা কে*টে ফেলবে?”

—“হুম ফেলবো।”

পরক্ষণেই হুমায়রা ওর পা দু’টো নিচ থেকে ড্রাইভিং সিটের উপরে রেখে হাত দিয়ে তাহিরকে নিজের পা গুলো ইশারা করে হাসি দিয়ে বললো….

—“বেশ কা*টো তাহলে, দেখি কেমন পারো।”

হুমায়রার এমন কান্ডে তাহিরের এইমূহূর্তে ঠিক কি বলা উচিত তা সে বুঝে উঠতে পারছে না। পরক্ষণেই তাহির ধমকের স্বরে বললো……

—“পা নামা ইডিয়েট।”

তাহিরের ধমক শুনে হুমায়রার হাসি মুখ গ্যস বের হওয়া বেলুনের মতো চুপসে যায়। সাথে সাথেই নিজের পা ড্রাইভিং সিটের উপর থেকে নামিয়ে নেয় হুমায়রা। তাহির বুঝতে পেরেছে এই মেয়েকে কিছু বলা মানেই তা বৃ*থা। তাই তাহির ওকে আর কিছু না বলেই গাড়িতে উঠে বসে দরজা বন্ধ করে সিটবেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে তালুকদার ভিলার মূল গেইট দিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে আসে। হুমায়রা শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো…..

—“আমরা কোথায় যাচ্ছি!”

তাহির সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে গাড়ি চালাতে চালাতেই বললো….
—“তোর ভাইয়ের হবু বউকে দেখার জন্য তার বাসায় যাচ্ছি।”

—“এতোবছর ধরে আমি জেনে এসেছি আমার বাবা-মায়ের আমি ব্যতিত আর কোনো সন্তানই নেই। তাহলে আজ এই ভাই ডাউনলোড হলো কোন সাইড থেকে? আর এতো বড় একটা কথা বাবা-মা আমার থেকে লুকিয়ে গেলোই বা কি কারণে?”

হুমায়রার মুখে এমন কথা শুনে তাহির হাসবে নাকি কাঁদবে নাকি রাগবে তা সে বুঝতে পারছে না। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে তাহির বললো….

—“ছোট বেলা থেকেই খালা-খালু আমাকে তাদের ছেলের মতো আদর-স্নেহ-ভালোবাসা দিয়েছেন। আর আমি তো তোর কাজিন ব্রাদার হই। তাই আমার হবু বউই সম্পর্কে তোর হবু ভাবী হবে! এখন আমরা আমার হবু বউকে দেখতে তার বাসাতেই যাচ্ছি।”

হুমায়রা তাহিরের এরূপ কথা শুনে অন্যদিকে ঘুরে মুখ বাঁ*কিয়ে মনে মনে বললো….

—“দেখো না হাজার জন মেয়েকে দেখার জন্য তাদের বাসায় হাজার বার যাও তবুও সবশেষে তোমায় আমাকেই বিয়ে করে নিজের বউ বানাতে হবে হুম।”

বেশ কিছুসময় ধরে ড্রাইভিং করার পর তাহির অবশেষে নিজ গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গিয়েছে। সিকদার ভিলার মূল গেইটের সামনে গাড়িয়ে থামিয়ে দেয় তাহির। অতঃপর সিটবেল্ট খুলতে খুলতে হুমায়রাকে উদ্দেশ্য করে বললো…..

—“তুই গাড়িতেই বসে থাকবি, একদম নামবি না। আমি বাসার ভিতরে যাচ্ছি, কিছুটা সময় লাগবে কাজ সম্পন্ন করতে।”

—“আমাকেও সাথে করে ভিতরে নিয়ে গেলে কি সমস্যা হবে! আমি একা একা গাড়িতে বসে কি করবো?”

—“কিছুসময় আগে না বলছিলি তোর দুই পায়ের নখগুলোতে এখনও নেইলপালিশ লাগানো বাকি রয়ে গিয়েছে! এখন তুই তোর কাজ সম্পন্ন কর বসে বসে।”

এই বলে তাহির গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজা বন্ধ করে সিকদার ভিলার মেইন গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। হুমায়রা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাত্র।

দীর্ঘ ৫ বছর পর সিকদার ভিলায় পা রাখতেই তাহিরের চোখের সামনে ৫বছর আগের সুন্দর মুহূর্তগুলোর পাশাপাশি সেই বি*ভী*ষি*কা*ময় কাল রাত্রীর স্মৃতিগুলোও ভেসে উঠে। একটা রাত তার জীবনকে একমুহূর্তেই এলোমেলো করে দিয়েছে। দো*ষ না করেও দো*ষে*র মালিক হয়ে জেল খা*ট*তে হয়েছে পাঁচ পাঁচটি বছর ধরে। তাহির সিকদার ভিলার মূল দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে লম্বা করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে কলিং বেলে চাপ দেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ…….

(পরবর্তী পর্বে ধামাকা নাম্বার-১ আসতে চলেছে পাঠকমহল👻)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here