হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(পর্বঃ ৩৮-ধামাকা~১) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
515

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(পর্বঃ ৩৮-ধামাকা~১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৯৬)
সিকদার ভিলার মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাহির কলিং বেল বাজানোর কিছুসময় পরই একজন কম বয়সী কাজের মেয়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে অবাক স্বরে প্রশ্ন করলো…

—“কাকে চাই?”

তাহির ওর স্থানে দাড়িয়েই একনজরে সিকদার ভিলার ভিতরটা দেখে কিন্তু ভিতরে ২য় কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি দেখতে পায় না। পরক্ষণেই তাহির শান্ত স্বরে বললো….

—“তরুনিমা সিকদার বাসায় আছেন?”

—“ছোট আপামনি! হেয় তো আর এই বাসায় থাকেন না।”

—“এই বাসায় থাকেন না মানে?”

সেইসময় পিছন থেকে তরুনিমার মা তমালিকা সিকদার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে কাজের মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন….

—“কে এসেছেন মিতু?”

কাজের মেয়ে মিতু তমালিকা সিকদার এর দিকে ঘুরে দাড়িয়ে বললো…
—“ছোট আপামনির খোঁজে একজন সুন্দর সাহেব আইছেন আম্মা। এর আগে তেনারে কখনও দেখি নি আমি।”

—“ভিতরে আসতে বল ওনাকে।”

মিতু তাহিরের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো…
—“ভিতরে আসেন সাহেব।”

তাহির ধীরপায়ে সিকদার ভিলার মূল দরজা পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়। তমালিকা সিকদার সিঁড়ি বেয়ে নিচে এসে তাহিরের সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে ভালো ভাবে লক্ষ্য করতেই ওকে চিনতে সক্ষম হন। মুহূর্তের মধ্যেই তমালিকা সিকদারের মুখের রং পাল্টে যায়। তিনি অত্যন্ত রাগ নিয়ে বললেন…..

—“তুমিই? আবারও আমাদের বাসায় আসার সাহস তোমার হলো কি করে? মিতু…দারোয়ানকে ডেকে এনে শীঘ্রী একে বাসা থেকে বের করে দে।”

তমালিকা সিকদার এর এহেনু কথায় মিতু অত্যন্ত অবাক হয়ে মনে মনে ভাবে…
—“আম্মাকে তো কখনও এভাবে রাগতে দেখি নি। কে এই সাহেবটি? যাকে দেখা মাত্র আম্মায় এতোটা ক্ষিপ্ত হইয়া উঠলেন?”

তাহির কাঁপা স্বরে বললো…
—“আন্টি…..আমাকে এভাবে বের করে দিবেন না। আমার অনেক কিছু বলার আছে আপনাদের।”

তমালিকা রাগী স্বরে বললেন….
—“একজন নি*কৃ*ষ্ট মানসিকতার খু*নি*র সাথে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। বেড়িয়ে যাও এই মুহূর্তে আমাদের বাড়ি থেকে।”

—“আমি কোনো খু*ন করি নি। বরং আপনারা আমাকে মি*থ্যে খু*নে*র দায়ে ফাঁ*সি*য়ে ছিলেন।”

—“৫বছর আগে আমার বড় মেয়ে অরুনিমাকে খু*ন করেছিলে তুমি আর সেদিন তোমাকে হাতে-নাতে ধরে পুলিশের হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিলো সেইদিনের কথা তুমি ভুলে গেলেও আমরা কেও ভুলি নি। তোমার জন্য আমি আমার আদরের বড় মেয়ে অরুকে সারাজীবনের মতো হারিয়ে ফেলেছি। নিজের বাবার ক্ষমতা প্রয়োগ করে আইনের আওতা থেকে কম শা*স্তি ভোগ করে তুমি মুক্তি লাভ করলেও আমাদের থেকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পড়া পর্যন্ত তুমি অ*ভি*শাপ ব্যতিত কিছুই পাবে না।

—“আমি মা*রি নি অরুনিমাকে।”

—“সেইরাতে আমরা অরুনিমার আ*র্ত*নাদ শোনামাত্র যখন বাগানের পিছনদিকে অরুনিমার কাছে পৌঁছেছিলাম তখন ওর পেট ও বুক থেকে অঝর ধারায় র*ক্ত*পাত হচ্ছিলো। অরুর পাশে বসতেই অরু ওর শেষ নিঃশ্বাস ত্যগ করার পূর্বে প্রাচীরের দিকে ওর র*ক্ত মাখা হাত দিয়ে ইশারা করে ২বার শুধু তোমার নামটাই উচ্চারণ করেছিলো। তার কিছুসময় পর তুমি ঐদিক থেকেই এসেছিলে আমাদের কাছে। আর তোমার হাতেই ছিলো সেই র*ক্ত মাখা ছু*ড়ি*টি। যেই ছু*ড়ি দ্বারা নৃ*সং*শ ভাবে আ*ঘা*ত করা মে*রে ফেলেছিলে তুমি আমার মেয়েকে। কি দো*ষ ছিলো আমার মেয়ের? তুমি আমার ছোট মেয়ে তরুনিমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য সবরকম সীমা অতিক্রম করে ফেলেছিলে তাই অরুনিমা তোমাকে একবার থা*প্প*ড় দিয়েছিলো। সেই থা*প্প*ড়ে হওয়া অ*প*মানের প্র*তি*শোধ নিতেই তুমি আমার মেয়েটাকে সেদিন মে*রে*ছিলে তাই না!”

—“আমাকে নিয়ে আপনাদের মনে অনেক বড় ভু*ল ধারণার তৈরি হয়েছে। অরুনিমা আমাকে সকলের সামনে থা*প্প*ড় মা*রায় আমার খারাপ লেগেছিলো ঠিকই কিন্তু সেই খারাপ লাগা থেকে এতো বড় অ*ন্যা*য় করার মতো নি*ম্ন মানসিকতা আমার কাজ করে নি কখনও। সব বাঁ*ধা অতিক্রম করে তরুনিমার সাথে সেইরাতে এঙ্গিয়েজমেন্ট হওয়ার কথা ছিলো আমার। তাহলে কেনো আমি অরুনিমার দেওয়া থা*প্প*ড়ের প্র*তি*শোধ সেইদিন নিতে যাবো একটাবার ভেবে দেখেছিলেন আপনারা? সেইরাতে আংটিবদলের কিছুসময় পূর্বে আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ ফোন কল আসায় আমি আপনাদের বাড়ির বাগানের পিছন সাইডে যখন গিয়েছিলাম তখন আমারই চোখের সামনে অরুনিমাকে ছু*ড়ি*কা*ঘাত করেছিলো আমার বয়সী অন্য একজন ছেলে। ছেলেটির চেহেরাও আমি দেখেছিলাম। সেইমূহূর্তে ছুটে অরুনিমার কাছে পৌঁছাতেই ওর খু*নি ছেলেটি প্রাচীরের দিকে দৌড় দেয়। আমি অরুনিমার কাছে বসে ওর য*ন্ত্র*ণা একটু কমতে পারে ভেবে ওর পেট থেকে ছু*ড়ি*টা বের করেছিলাম। অরুনিমা আমাকে কিছু বলার জন্য খুব চেষ্টা করছিলো কিন্তু বলতে পারে নি। শুধু হাত দিয়ে প্রাচীরের দিকে ইশারা করেছিলো। আমি কি করবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। ওকে ওভাবে রেখেই আমি প্রাচীরের দিকে ছুটে গিয়েছিলাম। কিন্তু আফসোসের বিষয় অরুনিমার খু*নি*কে সেদিন আমি ধরতে সক্ষম হই নি। সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলো। পরবর্তীতে আমি যখন আবারও ফিরে আসি তখন আপনারা পুরো সত্যটা যাচাই না করেই আমার হাতে ছু*ড়ি*টি দেখে ভেবে নিলেন আমিই অরুনিমাকে খু*ন করেছি। কোনোপ্রকার দো*ষ না করেও এতো বড় দো*ষে*র মালিক বানিয়ে আপনারা আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন৷ আমি অনেকবার এই সত্যটা আপনাদের সবাইকে বলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনোপ্রকার প্রমাণ না থাকায় আমার কথা আপনারা সেদিন কেও শোনেন নি। মি*থ্যে দো*ষের দায়ে আমাকে জে*ল খাটতে হয়েছে পাঁচ পাঁচটি বছর ধরে। আমি জানি আজও আমার বলা কথাগুলো হয়তো আপনার কাছে মি*থ্যে বানোয়াট বলেই মনে হবে কিন্তু একটা কথা বলে রাখছি অরুনিমার খু*নি*র চেহেরা আমার স্পষ্ট মনে আছে। ৫বছর আগে ওকে খুঁজে বের করার সময় ও সুযোগ আমি পাই নি ঠিকই কিন্তু এখন সেই সময় ও সুযোগ আমার আছে। খুব তাড়াতাড়িই আমি অরুনিমার আসল খু*নিকে খুঁজে বের করে নিজের উপর থেকে মি*থ্যে খু*নে*র দায় উঠিয়ে ফেলবো।”

তাহিরের বলা কথাগুলো শুনে তমালিকা স্তব্ধ হয়ে যান। কেনো যেনো তমালিকার মন তাহিরকে আর দো*ষা*রোপ করতে সায় দিচ্ছে না। পরক্ষণেই তাহির শান্ত স্বরে আবারও বললো….

—“৫ বছর আগের ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটির জন্য আমি আমার জীবনের পাঁচ পাঁচটি বছর হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এখন আমি আবার জীবনের একটা সেকেন্ডও ন*ষ্ট হতে দিবো না। আমি খুব তাড়াতাড়ি আমার ভালোবাসার মানুষ তরুনিমাকে পুরোপুরি ভাবে নিজের করে নিতে চাই।”

তরুনিমাকে নিজের করে নিতে চায় তাহির এরূপ কথা শোনামাত্র কাজের মেয়ে মিতু অত্যন্ত অবাক হয়ে বললো….
—“কিন্তু সাহেব ছোট আপামনির তো বিয়া হইয়া গেছে একসপ্তাহের বেশি হইলো। আপনে তো আর তারে নিজের কইরা পাইবেন না।”

পিছন থেকে মিতুর কন্ঠে তরুনিমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা শুনে তাহির অবাক দৃষ্টি নিয়ে একপলক ওর দিকে তাকিয়ে আবারও তমালিকার দিকে দৃষ্টি স্থির করে। তাহির যেনো নিজের কানে শোনা এই তি*ক্ত কথাটি কিছুতেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না। তাহির কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তমালিকাকে বললো…..

—“আন্টি দয়াকরে আপনি বলুন উনি যা বললেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। তরুর বিয়ে হয় নি। এমনটা তো হতে পারে না, আর না এমনটা তো হওয়ার কথাও ছিলো না। তরুকে আমি কতোটা ভালোবাসি তা তো আপনি জানেন আন্টি। তরু অন্যকারোর হতে পারে না। আন্টি দয়াকরে সত্যিটা বলুন।”

তমালিকা সিকদার শান্ত স্বরে বললেন…..
—“মিতু মি*থ্যে কথা বলে নি তাহির। তরুনিমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে ১সপ্তাহের বেশি হলো। আর এটা সম্পূর্ণ সত্যি কথা।”

তমালিকার মুখে এরূপ কথা শোনামাত্র তাহির হাঁটু ভে*ঙে নিচে বসে পড়ে। মূহূর্তের মধ্যেই তাহিরের মাথার উপর যেনো বিনামেঘের বজ্রপাত হয়, হৃদস্পন্দিত হওয়া বন্ধ হয়ে যায় সাময়িক সময়ের জন্য।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here