#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩৪)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(৮৯)
রূপগন্ঞ্জ গ্রামের সরকারী প্রাইমারি স্কুলের বিশালাকার মাঠের বটতলায় কুশল ও গ্রামের নামীগুণি, বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ মানুষরা চেয়ারে বসে আছেন। তাদের সামনে মাঝবরাবর মাটির উপর সাদা চাদরে মোড়ানো অবস্থায় সাদিকের মৃ*ত*দেহ রাখা হয়েছে। সাদিকে মৃ*ত*দেহের একপার্শে চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ও মেম্বার মহসিনকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হাঁটু ভাজ করে বসিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যপার্শে চেয়ারম্যানের ছেলে আরিফ ও মেম্বার এর ছেলে মুরাদকেও একই অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁদের থেকে কয়েকহাত দূরে একপার্শে সাদিককে ছু*ড়ি*কা*ঘা*ত করা চাষিটিকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যপার্শে ধ্ব*র্ষ*ণের শিকার হওয়া সেই চাষী ও চাষীর মেয়েকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের সবাইকে ঘিরে রূপগঞ্জ গ্রামের শতাধিক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। আর তাঁদের মধ্যে যেনো কোনোরূপ বি*শৃ*ঙ্ক্ষ*লার সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছে গার্ডসরা। পরক্ষণেই বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদের মাঝে আলতাফ নামের একজন সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..
—“সম্পূর্ণ ঘটনাই আমরা সকলে শুনলাম, প্রমাণ দেখলাম এবং বুঝলামও। আমজাদ আর মহসিনের ছেলেরা গ্রামের মেয়েদের উ*ত্ত্য*ক্ত করে এমন না*লি*শ চাষীদের থেকে এর আগেও আমরা বহুবার শুনেছিলাম। আর এই বিষয়ে গোপনে বৈঠকখানা বসিয়ে আমজাদ ও মহসিনকে নিজেদের ছেলেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কড়া ব্যবস্থা নিতেও বলেছিলাম। বেশ কয়েকবার সতর্ক করার পরেও বাবা হিসেবে আমজাদ ও মহসিন নিজেদের ছেলেদের কোনোরূপ শা*স*ন করেন নি যার ফলস্বরূপ মাত্র ১৫ বছর বয়সের নাবালিকা মেয়েকে ওদের ধ্ব*র্ষ*ণের শিকার হতে হয়। আল্লাহ হায়াত রেখেছিলেন জন্য মেয়েটি প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। নিজের ছেলের কু*কর্মকে ঢাকার জন্য মুবিন খানের মতো একজন নিম্ন মানসিকতার অ*মানুষের শরণাপন্ন হয়েছিলো আমজাদ। আমজাদের দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে মহসিন নিজের ছেলেকে শা*স্তি*র হাত থেকে বাঁচাতে আমজাদকে ব্লাকমেইল করে। অতঃপর আমজাদ মুবিন খানের কথানুযায়ী নিজের জমিতে কাজ করে ঐ গরীব চাষিকে তার মেয়েদের ইজ্জত ন*ষ্ট করার ভ*য় দেখিয়ে কুশল চৌধুরীর মতো স্বহৃদয়বান ব্যক্তিকে হ*ত্যা করার কথা বলেন। আর কুশল চৌধুরী এই ষ*ড়*য*ন্ত্রের হাত থেকে বেঁচে গেলেও তার জায়গায় প্রাণ হা*রা*ণ তারই বিশ্বস্ত পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সাদিক। এই অ*প*কর্মের মূল মাথা মুবিন খানকে তো ইতিমধ্যে পুলিশ জেল ব*ন্দী করেই নিয়েছেন। ২-১ দিনের মধ্যে তাকে কোর্টে পেশ করা হবে। আর যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে সে উপযুক্ত শা*স্তি ও পাবে। বাকি রইলো মহসিন, আমজাদ, ওদের দুই ছেলে আরিফ, মুরাদ আর সাদিককে ছু*ড়ি*কা*ঘা*ত করা চাষীটি। এদের সকলকেও পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হোক। পুলিশ ওদের কর্মনুযায়ী যে শা*স্তি দেওয়ার তা দিবেই। কিন্তু আমরা গ্রামবাসীরাও এদের ছেড়ে কথা বলবো না। এইমূহূর্তে আমজাদ ও মহসিনকে চেয়ারম্যান ও মেম্বার এর পদ থেকে ইস্তফা নিতে হবে এবং এতোদিন পর্যন্ত যতোজন গরীব কৃষকের পে*টে লা*থি মে*রে মে*রে তাদের জমি নিজেদের নামে করিয়ে নিয়েছে সেই সব জমির মালিকানা সেই কৃষকদের আবারও দিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও বাকি যতোটুকু জমিজমা থাকবে তা গ্রামে বসবাসরত একেবারেই গরীব-অসহায় মানুষদের নামে করিয়ে দিতে হবে। মহসিন ও চেয়ারম্যানের বাড়ি দুইটি যথেষ্ট বড় এবং নদী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত তাই বাড়িদুটোকে বণ্যার সময় উপকূলীয় গ্রামবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করা হবে। তাই বাড়ি দুটোর উপর থেকে মহসিন ও আমজাদের মালিকানা উঠিয়ে নিয়ে সরকারের নামে করে দেওয়া হবে। ভবিষতে আইনের নির্ধারণ করা শা*স্তি*র মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও যেনো মহসিন ও আমজাদ তার নিজ পরিবারকে নিয়ে ভুলেও যেনো আমাদের রূপগঞ্জ গ্রামে প্রবেশ করতে না পারে সেই বিষয়েও নি*ষে*ধা*জ্ঞা জাড়ি করা হলো। শা*স্তি*র বাকি অংশটুকু এবার আপনি জানিয়ে দিন আলী আহসান সাহেব।”
আলতাফের পাশেই চেয়ারে বসে ছিলেন আলী আহসান নামের মধ্যবয়সের আরেকজন পুরুষ মানুষ। আলতাফের কথা শুনে আলী আহসান সাহেব কুশলের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। কুশল ইশারায় আলী আহসানকে শা*স্তি*র বাকি অংশটুকু শুনিয়ে দিতে বললেন। অতঃপর আলী আহসান বললেন…….
—“এবার আসা যাক শা*স্তি*র প্রথম ধাপে। সমস্ত দলিলপত্র ইতিমধ্যে তৈরি করে রাখা হয়েছে। এখন প্রতিটি দলিলে ও ইস্তফা পত্রে আমজাদ হোসেন ও মহসিনকে সাক্ষর করতে হবে।”
সমস্ত দলিলপত্র হাতে নিয়ে কুশলের হাতের ডানপার্শে দাঁড়িয়ে আছেন এবায়দুল নামের মধ্যবয়সের একজন সহকর্মী। আমজাদ হোসেন ও মহসিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডসরা ওদের হাতে বাঁধন খুলে দিলে কান্না করতে করতে সমস্ত দলিলপত্রে ও ইস্তফা পত্রে সাক্ষর দেন তারা। সাক্ষর করা শেষ করে এবায়দুল আবার সমস্ত দলিলপত্র ও ইস্তফা পত্র দুইটি নিয়ে পূর্বের জায়গায় এসে দাঁড়ায়। আলী আহসান আবারও বললেন….
—“যে চারজন নাপিতকে ডাকা হয়েছে তারা সামনে এসে দাঁড়ান।”
আলী আহসানের ডাক পাওয়া মাত্র নাপিত চারজন ভি*র ঠেলে নিজেদের সরন্ঞ্জাম হাতে নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। আলী আহসান নাপিতদের উদ্দেশ্য করে বললেন…
—“আপনারা আপনাদের কাজ শুরু করুন।”
অতঃপর নাপিত ৪জন নিজেদের সরন্ঞ্জাম নিয়ে মহসিন, আমজাদ হোসেন, মুরাদ ও আরিফের সামনে গিয়ে বসে। বাক্স খুলে কাঁচি, ব্লে*ড বের করে মুহূর্তের মধ্যেই ওদের চারজনের মাথার সব চুল ফেলে দিয়ে নাঁড়িয়া বানিয়ে দেয়ার কাজ সম্পন্ন করে। অ*প*মা*নে, লজ্জায় ওরা চারজন মাথা নিচু করে শুধু চোখের পানি ফেলছে। এরপর ওদের চারজনের মুখে চুন-কালি মাখিয়ে গলায় ছেঁ*ড়া জুতোর মালা পড়িয়ে দেওয়া হয়। আলী আহসান সাহেব বললেন….
—“আরিফ আর মুরাদকে এবার হাত-পা বাঁধা অবস্থাতেই পুরো স্কুলের মাঠ হাটুতে ভর দিয়ে নাকে খড় কে*টে পার করতে হবে। প্রতি বার নাক দিয়ে খড় কা*টা শেষে বলতে হবে জীবনে আর কখনও ছোট-বড় কোনোরকম পা*প কর্মে লিপ্ত হবো না।”
পরক্ষণেই আলী আহসানের কথানুযায়ী আরিফ ও মুরাদ হাঁটুতে ভর দিয়ে পুরো স্কুল মাঠ নাকে খড় কে*টে কে*টে পার করে। অতঃপর ওদের ৪জনকে এবং ঐ চাষিকেও পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আলতাফ সাহেব উপস্থিত সকল গ্রাম বাসীদের উদ্দেশ্যে বললেন….
—“রূপগন্ঞ্জ গ্রামে বসবাসরত ছোট-বড় সকল মানুষই তো দেখলেন নামীগুণি, অত্যাধিক টাকা-পয়সার মালিক হওয়া স্বত্ত্বেও ওরা কেউই পা*প*কর্ম করার পর উপযুক্ত শা*স্তি*র হাত থেকে রেহাই পেলো না। শা*স্তি*র পাশাপাশি নিজের বাড়ি, জমিজমা সর্বস্ব হারাতে হলো ওদের। তাই এরপর থেকে কেউ কোনোরূপ পা*প*কর্ম করার পূর্বে ওদের বর্তমান অবস্থার কথা একবার হলেও চিন্তা করবেন। কারণ ভবিষ্যতে আপনারা বা আমরাও যদি কোনোরূপ পা*প কর্ম করি তাহলে আমাদের ও শা*স্তি*র হাত থেকে কেও বাঁচাতে পারবে না। আমরা আমাদের কর্ম অনুযায়ী ইহকাল ও পরকালে যথাযথ ফল অবশ্যই ভোগ করবো।”
সেইসময় ভিড়ের ভিতর থেকে একজন মহিলার কন্ঠস্বর ভেসে আসে….
—“সকলেই তাদের কর্মানুযায়ী শা*স্তি পেয়ে গেলো কিন্তু ঐ গরীব চাষীর মেয়ের ন*ষ্ট হয়ে যাওয়া ই*জ্জ*ত তো আর সে ফিরে পাবে না। কয়েকবছর পর যখন ঐ মাইয়া বিয়ের বয়সী হবে তখন ওকে বিয়ে করবে কে?”
মহিলাটির এরূপ কথা কুশল সহ বাকি বয়োজ্যষ্ঠ সকল গুণিমাণী ব্যক্তিরাও শুনতে পারেন। গ্রাম বাসীদের মাঝে এই কথা নিয়ে ইতিমধ্যে শোরগোলও শুরু হয়ে গিয়েছে। ধ্ব*র্ষ*ণে*র শিকার হওয়া সেই নাবালিকা মেয়েটি ভ*য়ে তার বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। কুশল ওর ডান উপরের দিকে হাত উঠাতেই উপস্থিত সকলেই নিরব হয়ে যায়। কুশল সকলকে উদ্দেশ্য করে শান্ত স্বরে বললো….
—“ওর বয়স মাত্র ১৫ বছর। বিয়ের বয়স হতে যথেষ্ট দেড়ি আছে। আমাদের সকলের উচিত ওর সাথে হওয়া দূ*র্ঘ*টনাটিকে নিয়ে এতো ঘা*টা*ঘা*টি না করে ভু*লে যাওয়া। ও ভালোভাবে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। তারপর যোগ্য ছেলে খুঁজে ওর বিয়ের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আমি নিবো। পরবর্তীতে আর কখনও যদি আপনাদের কারোর মুখ থেকে এই বিষয়ে একটাও উল্টোপাল্টা কথা বের হয় আর সেই কথা যদি আমার কান পর্যন্ত পৌঁছায় তাহলে তার বা তাদের উপযুক্ত শা*স্তি*র ব্যবস্থাও আমিই করবো। আলতাফ চাচা, আলী আহসান চাচা আপনারা সকলে মিলে উপযুক্ত সৎ, সুশিক্ষায় শিক্ষিত, ভালো মানসিকতার ২জন ব্যক্তিকে বাছাই করে নতুন ভাবে গ্রামের চেয়ারম্যন ও মেম্বার পদে নিয়োজিত করবেন।”
আলতাফ সাহেব বললেন….
—“ঠিক আছে, বাবা। এবার সাদিকের জানাজা করার পর ওর দাফনকার্যও যে সম্পন্ন করতে হবে।”
কুশল চেয়ার ছেড়ে উঠে সাদিকের লা*শে*র কাছে গিয়ে ওর মাথা পাশে বসে মুখের উপর থেকে সাদা চাদরটি সরাতেই দেখে ওর বুজে যাওয়া শীত মুখশ্রী ফ্যকাসে বর্ণ ধারণ করেছে। কিছুসময় সাদিকের দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রাখে কুশল। অতঃপর আগের ন্যয় সাদা চাদরটি দিয়ে ওর মুখটি ঢেকে দেয়। পরমূহূর্তে উপস্থিত সকল মহিলা ও বাচ্চারা স্কুল মাঠ ত্যগ করে। চারজন গার্ড স্কুলের পাশে অবস্থিত মসজিদ থেকে লাশ পরিবহনের জন্য লোহার খাটিয়াটি নিয়ে এসে সাদিকের লাশ তার উপর শুইয়ে রাখে। অতঃপর ইমাম সাহেব, কুশল ও গ্রামের সকল পুরুষ সদস্যরা মিলে সাদিকের জানাজা পর্ব শেষ করে। কুশল খাটিয়ার সামনের একপাশ নিজের কাঁধের উপর তুলে নেয়, খাটিয়ার বাকি তিন মাথা ৩ জন গার্ড নিজের কাঁধে তুলে নেয়। এরপর কবরস্থানে নিয়ে গিয়ে সাদিকের দাফনকার্যও সম্পন্ন করা হয়। অতঃপর সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়। কুশলও গার্ডসদের নিয়ে বাগান বাড়িতে ফিরে আসে।
চলবে ইনশাআল্লাহ……….
(বি-দ্রঃ আগামী মাসে আমার অনার্স ১ম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। গল্প এখন এমন পর্যায়ে আছে যে তাড়াহুড়ো করে কয়েক পর্বে শেষ করে দেওয়াও সম্ভব না। যদি করতে যাই তাহলে গল্পটি পুরোপুরি ভাবে খাপছাড়া হয়ে যাবে। তখন না আমি লিখে শান্তি পাবো আর না আপনারা পড়ে শান্তি পাবেন। তাই আমার পাঠকমহলদের একপ্রকার অনুরোধ করেই বলছি আপনারা ধৈর্য নিয়ে গল্পটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আমি আমার পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি ও চালিয়ে যেতে চাচ্ছি। তাই গল্পটি আমি ১ দিন পর পর পোস্ট করবো। আপনারা দয়াকরে রাগ বা বিরক্ত হবেন না। যেহেতু সামনে আমার ফাইনাল পরীক্ষা তাই আমার বিষয়টাও আপনারা বুঝতে পারবেন এই আশাই করছি আমি।)