#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_২১+২২
আমি পিট পিট কইরা তার দিকে তাকাইলাম। সেও পিট পিট কইরা আমার দিকে তাকাইলো। তারপর যেই না চিক্কুর দিমু ওমনি সে মুখ চেপে ধরে বলল, শসসসসসস্।
ও আমার দিকে কেমন কইরা তাকাই আছে। চোখ গুলো আমারে তার কাছে টানতেসে। আমার অস্বস্তি লাইগা উঠল। ও আমার এলোমেলো চুলগুলা হাত দিয়ে কানের পাশে গুইজা দিয়ে আবার জাপটে ধরে চোখ বন্ধ করল। কি মুসিবত!!!! এখন কেউ চলে আসলে। আমি মনে মনে চিক্কুর দিতেসি, চেরি ফল…… ছাড় আমারে। কিন্তু কেন জানি এই বুকটাতে ইচ্ছা করতেসে সারা জীবন এভাবে রয়ে যাই। চেরি তোমার গায়ের গন্ধটা এত ভালো লাগে কেন? ইচ্ছা করতেসে জড়াই ধরে থাকি। না না, কি করতেসি আমি? এত দিন পর হঠাৎ এসে আমারে এত ভালো মানুষী দেখানোর কারন জানা লাগবো। চাঁদনির সাথে এতদিন থাইকা আমার কাছে আসছে। এত্ত সহজে আমি গলছি না বাছাধন। আমি তারে ঠেইলা উইঠা বসলাম। ও জিগাইল, কি হল? আমি রাগ দেখাইয়া কইলাম, আপনার সাহস তো কম না। আপনি আমার রুমে এসে আমার সাথে এক বিছানায় শুয়েছেন। তার উপর ঘুমের সুযোগ নিয়ে জাপটে ধরেছেন। সে আমার কথায় একটু ভ্রূক্ষেপও করল না। বলল, চাইলে আরো কিছু করতে পারি। দেখতে চাও? আমি তার থেইকা একশ হাত দূরে সইরা বললাম, কিছু করতে গেলে ঠেলে বিছানা থেকে ফেলে দিবো।
– সে তুমি যা ইচ্ছা করতে পারো।
সে আমার দিকে আগাইতেই আমি চিক্কুর দিয়া বিছানা থেকে নাইমা দরজা খুলে এক দৌঁড়ে পালাইলাম। তখনো সে রুমে বিছানায় শুয়ে শুয়ে হাসতেসে। বজ্জাত একটা।
.
.
.
.
খাবার টেবিলে সে সরাসরি আমার সামনে বসল। আমি না দেখার ভান কইরা নিজের পেয়ালায় তরকারি বাড়তে লাগলাম। খালু বলল, আচ্ছা, তোমাদের কি মার্কেটিং করা শেষ?
– না খালু।
– তাহলে তোমরা মার্কেটিং সেরে ফেলো। আমি বাকি কাজগুলো মোটামুটি সেরে ফেলেছি। নিমন্ত্রণও প্রায় হয়ে গেছে।
– আচ্ছা।
আমি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে চেরির দিকে তাকাইতেসি। হঠাৎ তার সাথে চোখাচোখি হইয়া গেল। আমি নিচের দিকে তাকাই খাইতে লাগলাম। চেরি কইল, আন্টি, ছোঁয়ার মনে হয় বেশি খিদে পেয়েছে। আমি চোখ সরু করে তার দিকে তাকাইলাম। মিষ্টি খালা হেসে বলল, তুমি বুঝলে কি করে? সে মুখের খাবার শেষ কইরা বলল, তখন থেকে আমার খাবারের দিকে বার বার তাকাচ্ছে তো তাই বললাম। আমার পাশ থেকে মুন কইল, আরে, ভাইয়া আপনার বেশি করে খাওয়া দরকার। কালকে কত কষ্ট করে চালের বস্তা কোলে নিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কয়দিন আগেই তো চালের বস্তা এনেছে। কালকে আবার নতুন চালের বস্তা আনল কেন?
– এই চালের বস্তা সেই চালের বস্তা না।
মুন তাড়াতাড়ি খাবার শেষ কইরা কইল, কালকে গাড়িতে তো ভাইয়ার কোলে সেই আরামে ঘুম দিসো। তাতে ভাইয়ার পায়ের অবস্থা টাইট। তার উপর তোমারে কোলে নিয়ে রুমে দিয়ে আসছে। আমি ঐটার কথা বলতেছিলাম। আমি রাগে লজ্জায় লাল হই গেলাম। মুন এজন্যই বলার আগে আমার থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়াই কথাটা বলতেছিল। বইলাই কাইটা পড়ল। আমি কারো দিকে না তাকাইয়া চুপচাপ খাইয়া উঠে গেলাম। মুন বইনা, আমার ইজ্জত রাখলো না।
আমি রুমে গিয়া চিৎপটাং হইয়া শুয়ে পড়লাম। মুন দরজায় নক কইরা বলল, আসতে পারি? আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কইলাম, এত ঢঙ না করে ভেতরে আয়। মুন ঢুকতেই বললাম, কালকে কি হইসে বল তো। তোর জামাইর বন্ধু কালকে এখানে ছিল কেন? মুন চেয়ার টেনে আমার সামনে বসে বলল, কালকে তুই যে ঘুম দিছিস। আমরা কতো ডাকলাম। তুই তো ভাইয়ার কোল থেকে মাথাই সরাইতে চাইছিলি না। তারপর ভাইয়া তোকে কোলে করে রুমে এনে শুইয়ে দিল। উনি চলে যেতে লাগলে তুই হাত ধরে তাকে আর যেতে দিলি না। সে চলে যাওয়ার জন্য জোর করতেই তুই ঘুমের মধ্যে বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিয়ে বললি, সবাই আমাকে ফেলে চলে যায়। তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না। তাই বাধ্য হয়ে উনি তোর কাছে বসল আর তুই আবার তার কোল দখল করে ঘুমিয়ে গেলি।
– আ আ আ আমি এগুলা বলসি?
আমার গলায় কথা আটকাই যাইতেসি। আমি দেয়ালে মাথা পিটমু না দেয়ালটাকে কমু আজকে এই মাথা তোর সেটাই বুঝতেসি না। ঘুমের মধ্যে এত কাহিনী করে ফেলসি! ইস্! নিজেরে মনে হইতেসে একটা রাম ছাগল। নাহ্, তাতেও লিঙ্গ ভুল। আচ্ছা রাম ছাগলের স্ত্রী লিঙ্গ কি!? রাম ছাগলী না মহিলা রাম ছাগল। ভাব্বার বিষয়। ধুর ছাতা। এই চেরি আসতেই আমার সব ঘোলাই গেল। নাহ্, একে ভাগাইতে হবে, না হইলে আমি আগের মতো পাগল হই যামু।
.
.
.
.
.
দুপুরে সবাই মিইলা শপিংয়ে বাইর হইলাম। কত কি কেনা বাকি। বিয়ের শাড়ি গয়না। মুনের না আমার। ওর তো চিন্তা নাই। ওর সবকিছু রেদোয়ান ভাইরা আগেই কিনে ফেলসে। বিয়েতে কি পরমু সেটা এখনো ঠিক করি নাই। ভাবতেসি লেহেঙ্গা পরমু। আমি মুন রে নিয়া লেহেঙ্গার দোকানে গেলাম। সেখানে গিয়াই আমার মন লাফাইতে লাগল। এটা কিনমু না ঐটা কিনমু! আল্লাহ এতো সুন্দর ক্যান! ব্যস, পরীক্ষায় সব প্রশ্ন কমন পড়লে যেমন জগা খিচুড়ি পাকাই যাই, আমারও সেই অবস্থা হইল। কোনটা কিনমু ঠিকই করতে পারলাম না। তাই মুখ কালো কইরা খালি হাতে বাইর হই আসলাম দোকান থেকে। আজকের দিনটাই মাটি হই গেল। সানজিদা আপুর সাথে জুয়েলারির দোকানে গেলাম। আমি কিচ্ছু কিনতে পারলাম না। শেষে আমি খালি হাতেই বাড়ি ফিরলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি একটা প্যাকেট বিছানায়। আমি গিয়া খুলে দেখলাম একটা খয়রী রঙের ভারি সোনালী সুতায় কাজ করা লেহেঙ্গা। ঐ লেহেঙ্গা গুলা থেকেও সুন্দর। সাথে ম্যাচিং জুয়েলারিও আছে। এগুলা কার? কে দিল? মুন এসে বলল, কি রে নাস্তা করতে আয়।
– মুন, এগুলা কার?
– আমার তো না। তাহলে তোর হবে।
– কিন্তু কে রাখল?
– আম্মু হয়তো। তোর জন্য কিনেছে। খেয়াল করিসনি।
– হবে হয়ত। ( মনে মনে) যেদিন দোকান তেকে ওয়াশরুমে যাই তখনই বাির হইয়া বিছানায় প্যাকেট দেখি। উফ্, ম্যাজিক ম্যাজিক লাগতেসে। এবার থেইকা দোকান থেকে আইসা ওয়াশরুমে বইসা থাকমু।
– কিরে, আবার কি বাবতে বসলি? ছাদে আয়। আজকে ওখানে খাবে সবাই।
– হুম।
আমি সব গুছিয়ে ছাদে আইসা দেখলাম সেখানে সবাই আছে। চেরি ফলটাও যায়নি দেখছি। কেন যে এখানে পইড়া আছে। ইচ্ছে করতেসে ঘুষি মাইরা উগান্ডায় পাঠাই দি। আমি গিয়া বসলাম একপাশে। আকাশের দিকে তাকাইলে আব্বা আম্মার কথা মনে পড়ে। মুন কইল, তুই আকাশের দিকে এমন ড্যাব ড্যাব করে তাকাই আছিস কেন? ওর কথায় সবাই কথা বন্ধ কইরা আমার দিকে তাকাই। আমি জিগাইলাম, কি হইসে? সবাই আমার দিকে এভাবে তাকাই আছো কেন? সায়েম বলল, খালামনি, তুমি খালুর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকাই ছিলা তাই সবাই তোমার দিকে তাকাই আছে। আমি ভ্রূ কুঁচকায় কইলাম, তোর খালু কই থেকে আসলো? সে চেরি ফলের দিকে ইশারা করল। আমি মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করে কইলাম, বেকুব, ও কি আমার জামাই নাকি যে খালু ডাকতেছিস? মামা ডাক। মামা। আমি বললাম, আমি ওর দিকে তাকাবো কেন? সানজিদা আপু বলল, মুন যে বলল, তুই আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলি।
– হ্যাঁ, আমি তো আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখছিলাম। এমন করে বলছো যেন আমি আকাশ নামের কারো দিকে তাকাই ছিলাম।
– আমরা তো তাই ভেবেছিলাম।
– এখানে আকাশ নামের কেউ আছে নাকি!
সারা বলল, খালামনি তুমি খালুর নাম যে আকাশ জানো না? ফের খালু। এই দুইটারে শিখাইতে হইবো ও খালু না ও …… ওয়েট এ মিনিট। খালুর নাম আকাশ মানে? আমি চেরি ফলের দিকে তাকাইলাম। সে আমার দিকে কেমন কইরা তাকাই আছে। অন্যদের অবস্থাও একই। আমি মেকি হাসি দিয়া কইলাম, ইয়ে মানে… চা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আমি গরম করে আনি। ঠান্ডা চা আমি একদম খেতে পারি না। মুন পেঁচা মুখ করে বলল, এই জন্যইতো সব সময় তোকে চা দিলে তুই শরবত বানিয়ে খাস। এইরে… আমি এক দৌঁড়ে নিচে চলে এলাম। এই ছয় বছরে প্রথম জানলাম, চেরি ফলের নাম আকাশ। কেউ আমারে টুকা দাও, আমি বেঁহুশ হই।
.
.
.
.
.
আমি চেরির ছবির দিকে তাকাই আছি। পুরান বাক্সটা আজকে ছয় বছর পর বাইর করলাম। চেরির স্মৃতি গুলা সব এখানে। আমার ডায়রীটা বাইর করলাম। খুলে পইড়া নিজেই হাসতে হাসতে শ্যাষ। তখন বাচ্চাদের মতো কত কিছুই না লিখসি ওরে নিয়া। কই না পাগল আসিলাম। ডায়রীটা থেকে একটা শুকনা গোলাপ পড়ল। আমি গোলাপটা হাতে নিয়া স্মৃতিতে ডুইবা গেলাম। চেরি গাছের প্রথম গোলাপ। চাঁদনির সাথে চেরিকে দেইখা রাগে গোলাপটা কাইটা নিয়া আসছিলাম। কি সুন্দর রঙ ছিল গোলাপটার! আমি ডায়রীটা একপাশে রাখতে একটা চাবির রিং চোখ পড়লো। চাবির রিংটা চোখের সামনে ধইরা ঘুরাইতে লাগলাম। নিজের হাতে লাল পুঁতি দিয়া একটা লাভ বানাইছিলাম। তার সাথে পাঁচটা রঙ বেরঙের ক্রিস্টাল টাইপ ঝুমকা। প্রত্যেকটাতে একটা করে অক্ষর খোদাই করে ‘CHOYA’ লেখা। ও যাতে বুঝতে না পারে তাই প্রত্যেকটা ক্রিস্টালে একটা করে অক্ষর। এটাকে দেইখা চোখ থেকে একটা ফোঁটা গড়ায় গিয়া চিবুকে জমলো। ওরে বার্থডে গিফট দিতে পারি নাই তাই সেদিন ওকে কলেজে এটা দিতে চাইছিলাম। কিন্তু কিন্তু …… আমি চাবির রিংটা হাতের মুঠোয় নিয়া বুকে জড়াই কানতেসি। ওখান থেকে চইলা আসার পর একবার ওরে দেখতে গেসিলাম। সিঁড়ি দিয়া উঠার সময় শুনতেছিলাম চাঁদনির সাথে চেরিফল তােদর বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে কথা বলতেছিল। তখন শুনছিলাম ও চেরির সাথে লন্ডন যাবে। আমি উঁকি মারতেই দেখলাম চাঁদনি ওকে জড়াই ধরে দাঁড়াই আছে। আমি সহ্য করতে না পাইরা দৌঁড়ে চলে আসছিলাম। সেই কান্নার প্রতিটা ফোঁটা শুধু চেরির নাম বলতেছিল। কিন্তু সে তো অন্য কারো। তবে আবার কেন মায়া বাড়াতে আসছে? আমি যে আর নিজেকে সামলাতে পারছি না।
চলবে…
#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_২২
সেই কান্নার প্রতিটা ফোঁটা শুধু চেরির নাম বলতেছিল। কিন্তু সে তো অন্য কারো। তবে আবার কেন মায়া বাড়াতে আসছে? আমি যে আর নিজেকে সামলাতে পারছি না।
মুন দরজা ধাক্কাইতেসে। আমি তাড়াতাড়ি সব ঢুকাই রাইখা ভালো করে চোখ মুছলাম। দরজা খুলতেই ও বলল, দরজা বন্ধ করে কি করছিলি?
– কিছু না। ওই আর কি।
– কান্না করছিলি?
– কই? না তো।
– ছোঁয়া, তুই হয়ত জানিস না। তুই একটা খোলা বইয়ের মতো। যাকে বাইরে থেকে পড়া যায়। এই ছয় বছরে আমি তোকে শুধুমাত্র ছয়বার কাঁদতে দেখেছি। তাও খালা খালুর মৃত্যুবার্ষিকীর সময়। এছাড়া আর দেখিনি। যে স্যারদের মার খাওয়ার পরও এক ফোঁটা চোখের জল ফেলেনি সে কাঁদলে কি টের পাওয়া যাবে না?
– আরে ধুর, চোখে কিছু পড়েছে হয়ত। তাই পানি চলে এসেছে।
ও হঠাৎ আমাকে ওর বুকের মাঝে জড়াইয়া ধরল। আমি অবাক হতেই ও বলল, তুই জানিস, তুই মিথ্যে বললে তোকে কত বোকা লাগে। নে, আমার বুকে তোকে আশ্রয় দিলাম। এবার যত খুশি কেঁদে নে। কেন যেন আমার খুব কান্না পাইল। না চাইতেই আমার শরীর কান্নার ধাক্কায় কাঁইপা উঠল। আমি নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলাম। মুন বলল, বোকার মতো কাঁদছিস কেন জানতে পারি? আমি চুপ করে ওর বুকে মুখ গুঁইজা দিলাম। মনে মনে বললাম, থাংকু, মগন। আমাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য। আমার যে একটা আশ্রয়ের খুব প্রয়োজন ছিল। আমি চুপ করে আছি দেইখা ও আর কিছু বলল না।
রাতে খাবার সময় চুপচাপ খাইতে বসলাম। আকাশ কোথায় বসেছে সেটা খেয়াল করি নাই। আমি সামান্য কটা ভাত নিয়া নাড়াচাড়া করতে লাগলাম। মিষ্টি খালা খেয়াল কইরা বলল, কি রে, ছোঁয়া। তখন থেকে কি ভেবে চলেছিস? খাচ্ছিস না যে।
– হুম?
আমি কোনোমতে দুইটা খাইয়া উঠে গেলাম। ভালো লাগতেসে না কিছুই। ফ্রেশ হইয়া শুয়ে পড়লাম। এগারটার দিকে কারেন্ট হঠাৎ চইলা গেল। বাইরে বাতাস ছুটতেসে। আমি চোখ বন্ধ কইরা শুয়ে শুয়ে বাতাসের শো শো আওয়াজ শুনতেসি। আমার মনেই তো ঝড় চলতেসে। মুন এখনো রুমে আসে নাই।
একটু পরে রুমে কারো উপস্থিতি টের পাইলাম। মুন হবে। চারদিক অন্ধকার। কিছুই দেখা যাইতেসে না। ওরে বললাম, আমার ফোনে চার্জ নাই। তোর ফোনে ফ্ল্যাশটা অন করিস তো। আমি আবার চোখ বন্ধ করলাম। হঠাৎ মনে হল মুন আমার পাশে এসে বসল। কেন যেন মনে হইতেসে এটা মুন না। কে তাহলে? মিষ্টি খালা? না তাহলে? হঠাৎ আমার মনে ভয় ঢুইকা গেল। অন্ধকারে থাকা ব্যক্তিটা আমার খুব কাছে ঝুঁকে পড়ল। যেন অন্ধকারেও আমাকে দেখতে পাইতেসে। আমি তার নিঃশ্বাসের শব্দ খুব কাছ থেইকা শুনতে পাইতেসি। আচমকা সে আমার কপালে একটা চুমু দিয়া দিল। আমি শিউরে উঠলাম। আমি জানি এটা কে। তার গায়ের গন্ধটা আমাকে জানান দিয়া দিসে। আমি অন্ধকারেই তাকে ঠেলে সরাইয়া দিয়া মুনকে ডাকতে লাগলাম। মুন এসে বলল, কি হয়েছে? ভয় পেয়েছিস? ওর ফোনের আলোয় দেখলাম রুমে কেউ নাই। আমি ইতস্তত কইরা বললাম, ইয়ে মানে… তোর বরের বন্ধু কোথায় রে?
– আকাশ ভাই?
– হুম।
– সে তো অনেকক্ষণ হল নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। কেন?
– না এমনি। (মনে মনে) তবে কি এটা আমার মনের ভুল?
– কি হয়েছে বল তো।
– আরে বাবা, রাত হয়ে গেছে। ঘুমাবি তো। আয়।
– হুম আসছি।
হঠাৎ ওর ফোন বাইজা উঠল। আমি মুখ কালো কইরা কইলাম, বাপরে কত প্রেম! ঝড়ের রাতেও বউকে ভুলতে পারে না। মুন মুখ সরু কইরা কইল, তুই কি করে বুঝলি। আমি বিজ্ঞের মতো চেহারা কইরা আবার বিছানায় শুইতে শুইতে কইলাম, এত রাতে এমন ঝড়ের সময় তোরে কে আর ফোন দিবো? সে আমার দিকে তাকাই ভেটকাইলো। আমি শুইয়া পড়লাম। ও চইলা গেল কথা বলতে বলতে। আমি আবার অন্ধকারে পইড়া রইলাম। বাইরে বিদ্যুৎ চমকাইতেসে। আমি চোখ মেইলা শুইয়া আছি। গায়ের কাঁথাটা গলা অবধি মুড়ে ছাদের দিকে তাকাই আছি। এত বড়ো মনের ভুল কি করে হইতে পারে?
.
.
.
.
সাগরের গর্জন শোনা যাচ্ছে। আমার পায়ে ঢেউ আছড়ে পড়তেসে। আমি মুখে লজ্জা টাইনা দাঁড়াই আছি। চেরি আমার মুখ তুইলা বলল, ছোঁয়া, তোমাকে আগে অনেকবার বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বলতে পারিনি।
– কি চেরি ফল?
– আসলে তোমার ঐ শুঁটকি মাছের পোনার জন্য বলতে পারিনি।
– শুঁটকি মাছের পোনা!? মানে ঐ চাঁদনি?
– হুম।
– তুমি কবে থেকে তাকে এই নামে ডাকো?
– যবে থেকে তুমি আমার জীবনে এসেছ। ছোঁয়া, আই…
– আই…!?
– আই লাভ…
আমি বালুর দিকে তাকিয়ে লজ্জায় তাকাই আছি। লজ্জামাখা কন্ঠে কইলাম, আই লাভ…!?
হঠাৎ চাঁদনি ওর দিকে দৌঁড়াই আইসা কইল, আই লাভ ইউ আকাশ। আমি রাইগা তারে লাথি মাইরা উগান্ডায় পাঠাই দিয়া আবার মুখ লাল করে কইলাম, তুমি কি যেন বলতেছিলা চেরি ফল?
– ছোঁয়াকি বাচ্চি, উঠবি না পানি ঢালমু?
– এ্যাঁ, চেরি ফল! এটা কি ধরনের কথা!? হঠাৎ তোমার কন্ঠ এমন মেয়েলি হয়ে গেল কেন?
হঠাৎ একগাদা পানি আইসা গায়ে পড়ল। আমি চিল্লাই কইলাম, চেরি ফল……। এ্যাঁ!!!! আমি তো ভাবসি আমি সাগরের পানিতে পইড়া গেসি। কিন্তু আমি বিছানায় আসলাম কেমনে! পাশে তাকাই বুঝতে পারলাম এখুনি বিনা মেঘে বজ্রপাত হবে।
– ছোঁয়া, তুমি কি শান্তিতে ঘুমাতেও দিবি না?
আমি অবাক হওয়ার ভান কইরা কইলাম, কি হইসে? রিদি কোমরে হাত রাইখা বলল, ঘুমের মধ্যে কেউ এভাবে লাথি মারে? বাপ রে! কি লাথি! আমাকে বিছানা থেকেই ফালাই দিছিস। আরেকটুর জন্য কোমরটা ভাঙ্গে নাই। তুই স্বপ্নে কাউকে লাথি মারছিলি নাকি?
– ই…… না না। লাথি মারতে যাবো কেন? আমি তো রোমান্স করছিলাম।
– ও, লাথি মেরে রোমান্স করছিলি!?
– রিদি…
কি কমু বুঝতেসি না। আমি তাইলে স্বপ্ন দেখতেছিলাম। ফোনের লক স্ক্রিন টিপতেই দেখলাম বেচারা কবেই মইরা ভেটকাই গেসে। আমি ফোন চার্জে দিয়া ওপেন করলাম। সর্বনাশ! বিশটার উপর কল! কারো কিছু হইল নাকি। তাড়াতাড়ি মিসকল লিস্ট চেক করতেই আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। ব্যাটা বাটপারটা ফোন করসিলো। ভালো হইসে ফোন বন্ধ ছিল। তবে একটা জিনিস অদ্ভুত লাগতেসে। লাভার ভ্যাম্পায়ার এই ছয় বছরের একটা দিনও ফোন করতে ভুলতো না। আর এখন তার কললিস্ট চেক করলে ইরিগুলার দেখা যায়। ম্যাসেজও তেমন দেয় না। এত ব্যস্ত!? থাক গে। আমার কি। মুন আবার শুইতে যাইতেছিল। আমি টাইনা তুইলা কইলাম, উঠ, সাতটার উপর বাজে। উনি এখন আবার শুইতেসে। যা ফ্রেশ হয়ে আয়। ইস্, বিছানাটাও ভিজাই ফেলছিস। এগুলা রোদে দিতে হবে। উঠ। ওকে জোর কইরা ওয়াশরুমে পাঠাই দিলাম। আমি বিছানার চাদরটা তুইলা ফেললাম। তারপর দুইজনে ফ্রেশ হয়ে ধরাধরি করে বিছানার তোশক ছাদে দিয়ে আসলাম। নাস্তা করে সবেমাত্র চেয়ারে বসলাম এমন সময় মিষ্টি খালা ডাক দিয়া বলল, ছোঁয়া, তোর মেহমান এসেছে। আমার মেহমান! কে হতে পারে!? আমি ভদ্র হইয়া বসার রুমে গিয়া অবাক। তারপর খুশিতে বত্রিশটা দাঁত বাইর কইরা মনে মনে কইলাম, আমার প্রিয় শ্বাশুড়ি আম্মা!
আমি মুখ হাসি টাইনা বললাম, কেমন আছেন আন্টি? আন্টি হাইসা বললেন, আরে ছোঁয়া। এসো আমার পাশে বসো। আমি গিয়া বসলাম। উনি বললেন, এই ছয় বছরে কত বড়ো হয়ে গেছো। তবে মুখটা আগের থেকে দেখতে মিষ্টি হয়েছে। আমি লজ্জায় মাথা নিচু কইরা বইসা রইলাম। আঙ্কেল জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছো, ছোঁয়া মা?
– আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আঙ্কেল। আন্টি, এই ছয় বছরে তো একবারও খোঁজ নেন নাই। আমি রাগ করসি।
– কে বলেছে নেইনি? তোমার খালার সাথে আমার প্রত্যেক দিন কথা হতো।
– আমার সাথে তো আর কথা বলেননি।
আন্টি হেসে আমাকে বুকে টাইনা নিলেন। আমি চোখ বন্ধ করে রইলাম। মনে হইতেসে অনেকদিন পর আমি আম্মুর বুকে মাথা রাখসি। কি যে ভালো লাগতেছিল। হঠাৎ কেউ বলল, খালি ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলে হবে? আমি কি দোষ করেছি? তাকাই দেখি আকাশ দাঁড়াই হাসতেসে। আমার কেন জানি লজ্জা লাগতেছিল। আমি উঠে বসে বললাম, আন্টি, আজকে থাকতে হবে কিন্তু। আমি কত কিছু রান্না শিখেছি। আজকে বানিয়ে খাওয়াবো। আকাশ মুখ গোমড়া করে বলল, আমি দুইটা দিন আছি, আমাকে একটু রান্না করে খাওয়ায় নাই। সারাদিন ফোন টিপতো। এখন আম্মু আব্বু আসছে আর উনি রান্না করবেন। আমি মুখে রাগ টাইনা বললাম, আমি আজাইরা অতিথিদের জন্য রান্না করি না। আমি আসছি আন্টি। আমি ভেংচি কাইটা ভেতরে চইলা আসলাম। আকাশের মুখে তখনও হাসি।
আমি নাস্তা আনতে আনতে শুনতে পাইলাম মিষ্টি খালা বলতেসে, আমিও জানি। আপা আমাকে ফোনে বলেছিল। ওরা রাজি ছিল। কিন্তু এখন ছোঁয়া বড়ে হয়েছে। ওর মতামতেরও প্রয়োজন।
– অবশ্যই। আমাদের দিক থেকে হ্যাঁ। এবার শুধু আপনাদের মতামত।
– তাহলে মুনের বিয়েটা যাক তারপর।
আমি রুমে ঢুকতেই সবাই মুন আর রেদোয়ানের বিয়া নিয়া কথা বলতে শুরু করল। আমি নাস্তা দিয়া হাসি মুখে একপাশে দাঁড়াইলাম। ভাবতেসি কি নিয়া কথা বলতেছিল? কোথায় আমার মতামত প্রয়োজন। বুঝলাম না।
চলবে…