#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_২৫/২৬
কথাটা শুইনা আমি সেই লেভেলের টাসকি খাইলাম। আমার আর চেরির বিয়ের কথা! তাও ছয় বছর আগে!
– ছোঁয়া তোমার মনে আছে তোমার জন্মদিনের আগের দিন আমরা তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম?
– জ্বি আন্টি।
– ঐ দিন আমরা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম। যেহেতু তুমি অনেক ছোট ছিলে তাই আমরা ওয়েট করতে চাইছিলাম। তোমার বাবা মা বলেছিলেন ভেবে দেখবেন। পরেরদিন সকালবেলা ফোন করে বলেছিলেন যে তারা বিয়ের প্রস্তাবে রাজি। এই ব্যাপারে তোমার খালা খালুও জানতেন। এখন তুমি যথেষ্ট বড়ো হয়েছ। তোমার নিজস্ব একটা মতামত আছে। তাই আজকে আমরা জানতে এসেছি, তুমি কি এই বিয়েতে রাজি? আমরা কি কথা আগাতে পারি?
আমি চুপ কইরা রইলাম। এই দিনটার জন্য এত বছর অপেক্ষা করসি। একটা ‘হ্যাঁ’ বললেই আমি আমার চেরি ফলকে নিজের কইরা পামু। কিন্তু মনটা যে বড্ড দোটানায় ফেলতেসে। সে যে কি চায় তা কিছুই বুঝতেসি না। কেন আমি সহজে হ্যাঁ বলতে পারতেসি না। বুঝতেসি না। আমি কইলাম, আন্টি, আমার আব্বু আম্মু চলে গেছে ছয় বছর। তারা সারাজীবন ব্যয় করেছে আমাকে ভালো রাখার জন্য। তাদের সিদ্ধান্ত কখনো ভুল হবে না। সেদিক থেকে হ্যাঁ বলতে পারি। কিন্তু আমার একটু সময়ের প্রয়োজন এটা নিয়ে ভাবার জন্য।
– বেশ তো, সময় নাও। আমাদের সমস্যা নেই। তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। উনি হচ্ছে আকাশের মামা।
আমি সালাম দিলাম। আন্টি বললেন, তুমি ভেতরে যাও, ছোঁয়া মা। আমি চইলা আসলাম। শাড়ি গয়না খুইলা বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে গেলাম। হাতে একটা গাজর। চিন্তার চাকা ঘুরতেসে। কেন আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারতেসি না। চার মাসের আবেগ না ছয় বছরের কেয়ার? আমি যতদূর জানি যে চেরিফল আমাকে ভালোবাসে না। তবে এই কয়দিনের আচরন অবশ্য অন্য কথা বলতেসে। আর লাভার ভ্যাম্পায়ার গত ছ’টা বছর বলসে যে সে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি তাকে কখনো দেখিনি। শুধু ফোনালাপ মাত্র। সব ইয়ারফোনের মতো প্যাঁচাই গেসে। যত খুলতে চাইতেসে জট লাগতেসে।
আমি ফোনটা নিলাম। এখনো লাভার ভ্যাম্পায়ার একবারও ফোন দেয় নাই। আমি ফোন দিলাম। ফোন বন্ধ। ঠিক আছে তো? এত ব্যস্ত যে ফোন বন্ধ!? আমি একের পর এক ফোন দিতে লাগলাম। একই কথাই বলতেসে। তাও ট্রাই করতে লাগলাম। ওদিকে সবাই বসার রুমে কথা বলতেসে। মুন একটু পরে এসে কইল, ছোঁয়া আন্টি তোকে ডাকছে। আমি ঘোমটা দিয়া বসার রুমে গেলাম। আন্টি আমাকে একটা বালা পরাই দিলেন। আমি বললাম, আন্টি, আমি তো এখনো সিদ্ধান্ত জানাইনি তাহলে…
– জানো এটা আমার শ্বাশুড়ি মায়ের। আজ তোমাকে দিলাম।
– কিন্তু কিন্তু ……
– কোনো কিন্তু না। আমি আসি মা।
ওনারা বেরিয়ে গেলেন। আমি ওনাদের চলে যাওয়ার দিকে তাকাই রইলাম। তাহলে কি ওনারা বিশ্বাস করেন আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হই যাবো। কিন্তু আমার মন কেন মানতে চাইতেসে না?
.
.
.
.
আরো দুইটা দিন চইলা গেল। আমি এখনো ডিসিশান নিতে পারলাম না। সারাদিন এক হাতে গাজর খাইতেসি আর আরেক হাতে ফোন। এই লাভার ভ্যাম্পায়ারের সমস্যাটা কি? সেই যে ফোন বন্ধ করসে আর খোলার নামই নাই। আমি এদিকে ডিপ্রেশনে থাম্বেলিনার মতো ছোটো হই যাইতেসি। আজকে মুন চইলা যাওয়ার কথা। ওরে বিদায় দিয়া সবেমাত্র আমি বিছানাই শুইসি। এমন সময় ও হাঁপাইতে হাঁপাইতে আইসা বলল, ছোঁয়া…। আমি ওরে দেইখা ভয় পাইয়া গেলাম। বিছানা থেকে উইঠা ওরে বসাই একগ্লাস পানি দিলাম। ও পানি খেয়ে গ্লাসটা আমার হাতে দিল। আমি গ্লাসটা রাখতে রাখতে কইলাম, কি হইসে? ও বলল, আকাশ ভাইয়ের এক্সিডেন্ট হইসে। সাথে সাথে গ্লাসটা স্লিপ কাইটা আমার হাত থেকে পইড়া ভেঙে টুকরা টুকরা হই গেল। মুন আরও কিছু বলার আগেই আমি ব্যাগ নিয়া দৌঁড় দিলাম বাইরে। মুন আমারে পিছন থেকে ডাক দিল কিন্তু আমার কানে কোনো ডাকই ঢুকল না।
শহরে ঢুকতেই খেয়াল হইল আমি আসলে কিছুই জানি না। শুধু এক্সিডেন্টের কথা শুইনাই দৌঁড় মারসি। কোথায় ভর্তি, কি অবস্থা, কেমন আছে কিছুই জানি না। আমার মতো গাধি আর কয়টা আছে? আমি ফোন বের কইরা মুনরে ফোন দিলাম। কল রিসিভ করতেই একগাদা ধমক শুনলাম। আমি মুখ বোঁচা করে বললাম, শোন না।
– কি শুনবো? কোনো কান্ডজ্ঞান আছে তোর। কিছু বলার আগেই দৌঁড়ে বের হয়ে গেলি।
– আসলে শুনেই ভয় পেয়ে গেছি। ও মানে তোর জামাইর বন্ধু কোথায় ভর্তি আছে?
– কি তখন থেকে জামাইর বন্ধু জামাইর বন্ধু করছিস। ক’দিন পরে সে তোর জামাই হবে।
– আচ্ছা বাবা, একটু ঠান্ডা হয়ে বল না, কোথায় আছে?
– আমি একটা ঠিকানা ম্যাসেজ করে দিচ্ছি। ওখানে যা। সেখানেই আকাশ ভাই আছে।
– আচ্ছা দে।
মুন একটা ঠিকানা ম্যাসেজ করল। আমি একটা রিকশা ধরাই চইলা গেলাম। গিয়া বেকুবের মতো দাঁড়াই রইলাম। এটা তো কোনো হাসপাতাল না। একটা বড় বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়াই আছি। কয়েকবার ঠিকানা মিলাইলাম। ঠিকই তো আছে ঠিকানা। এটা কার বাড়ি? আমি মুনরে ফোন দিয়া কইলাম, এটা কার ঠিকানা দিয়েছিস?
– তুই পৌঁছে গেছিস। ভেতরে যা।
এই বইলাই মুন ফোন কাইটা দিল। আমি ফোনটার দিকে বিরক্ত হই তাকাইলাম। এই মাইয়া আমারে কখনো কিছুর সবটা বলবে না। আমি গেটে নক করতেই দারোয়ান এসে কইল, কি চাই? কি বলমু? কিসুই তো বুঝতেসি না। কার বাড়ি, কে থাকে। কিছুই জানি না।
– আকাশ আছে?
– আপনি ছোঁয়া?
– জ্বি।
দারোয়ান গেট খুইলা দিল। আমিও ঢুইকা পড়লাম। বাড়িটার দিকে যাইতেই আমার পাঁচ মিনিট লাগল। এত বড় এটা কাদের বাড়ি? আমি দরজায় নক করতেই দেখলাম দরজা খোলা। আমি উঁকি মারলাম। দেখলাম আন্টি সোফায় বইসা আছে। আমি গিয়ে সালাম দিলাম। আন্টি হাইসা বললেন, আরে, ছোঁয়া যে। কি খবর?
– জ্বি আন্টি, ভালো। আমি শুনলাম, ইয়ে মানে ওর নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে।
– তা ছোটখাটো একটা হয়েছে। চেম্বার থেকে বাইকে করে আসার সময় বাইক উল্টে পড়ে গিয়েছিল।
– এখন কেমন আছে?
– আছে কোনো রকম। তুমি দেখে এসো।
– ইয়ে মানে যাবো?
– যাও। কয়দিন পরে তো চলেই আসবে। আজ গেলে কিই বা সমস্যা হবে।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু কইরা সিঁড়ি দিয়া উপরে গেলাম। উপরে গিয়া মনে হইল, আন্টিকে তো জিজ্ঞেস করা হই নাই চেরির রুম কোনটা। ধুর বাবা। কি যে করি। আমি রুমগুলাতে উঁকি মারতে লাগলাম। একটাতে দেখলাম কেউ বিছানায় শুয়ে আছে। চিনতে অসুবিধা হইল না। আকাশ বিছানায় শুয়ে আছে। আমি সাবধানে ঢুকলাম। দেখে বোঝা যাচ্ছে ঘুমাচ্ছে। আমি বিছানার কাছে গিয়া দেখলাম পায়ে আর মাথায় ব্যান্ডেজ। ইচ্ছে করল একবার ছুঁয়ে দেখি। পরে ভাবলাম, থাক, ঘুমাচ্ছে যখন ঘুমাক। ধরলে যদি জেগে যায়।
আমি ওর রুমটা দেখতে লাগলাম। সুন্দর গোছানো। দেয়ালে ওর বড়ো একটা ছবি টাঙানো। ইস্, কি হ্যান্ডসাম লাগছে। তবে সামনাসামনি তো আরও বেশি হ্যান্ডসাম। বলেই নিজের মুখ ঢাইকা ফেললাম। আমি সবকিছু ছুঁয়ে দেখতে লাগলাম। হঠাৎ একটা জিনিসে চোখ আটকে গেল। একটা নীল ডায়েরী। আমি হাতে নিতেই চিনতে পারলাম। এটা তো চেরির ডায়রী! যেখানে সে তার চাঁদনির স্মৃতি লিখে রাখসে। আমার মাথায় আগুন ধইরা গেল। ইচ্ছা করতেসে ডায়রীটা টুকরা টুকরা কইরা ফেলি। কিন্তু মন আমার মাথায় বরফ ঢাইলা বলল, কুল, ছোঁয়া কুল। একবার পইড়া দেখ কেমনে কি করসে। আর যাই হোক, আমার মতো লাভ স্টোরি রিডারের এতবড় একটা সুযোগ মিস করা ঠিক হবে না। মনে হইতেসে এই ডায়রীতেই সব রহস্য লুকাই আছে। আমি ডায়রীটা নিয়া রুম থেকে বাইর হই আসলাম। আসার সময় পড়ার রুমটা চোখে পড়ছিল। ওখানে গিয়া চেয়ারে পা তুইলা বসলাম। মনে হইতেসে কোনো জীবন কাহিনী পড়তে বসতেসি। যাহ হোক। আমি শুরু করলাম।
প্রথম পেইজের গানের কলিটা দেইখা একটা হাসি দিলাম। কি প্রেমটাই না ছিল তাদের! ছিল কেন বলতেসি। এখনো আছে। আমি পরের পৃষ্ঠা উল্টাইলাম। ঐদিন চেরি ফল আমার থেকে কাইড়া নিয়া গেসিল। আজকে যে করেই হোক আমি পুরাটা পইড়া শেষ করমু। আমি মনোযোগ দিয়া পড়া শুরু করলাম।
(ডায়রী)
♥ প্রথম দেখা:
গাড়ি করে যাচ্ছিলাম। প্রায়ই গান শুনতে শুনতে কলেজ যেতাম। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ড্রাইভার চাচাকে বললাম গান ছেড়ে দিতে। ড্রাইভার চাচা কি এক রোমান্টিক গান ছেড়ে দিল। আমার বিরক্ত লেগে উঠল। তবু কিছু বললাম না। চলুক, দেখি কেমন লাগে। নাহ্, সহ্য হচ্ছিল না। বাড়ি থেকে কলেজ যেতে আধা ঘন্টা লাগে। আমি এই আধা ঘন্টা একেবারে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে গেলাম। আমি মাত্র চাচাকে বলতে যাচ্ছিলাম, চাচা কালকে থেকে আর এমন গান দিবা না। হঠাৎ একটা জায়গায় চোখ আটকে গেল। আমাদের কলেজের পাশেই একটা ফুসকা দোকান আছে। সেখানে স্কুল ড্রেস পরা একটা মেয়ে ফুসকা খাচ্ছে আর ঝালে লাফাচ্ছে। আমার দেখে ভীষন মজা লাগল। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপারটা ছিল, মেয়েটাকে দেখে হঠাৎ করে আমার গাড়িতে চলা রোমান্টিক গানগুলো ভালো লাগতে শুরু করল। চাচা বললেন, কি হল আকাশ বাবা? নামবা না? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
– হুম।
আমি নেমে কলেজ গেটের কাছে দাঁড়িয়ে গেলাম। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটার ফুসকা খাওয়া দেখতে লাগলাম। হঠাৎ একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে এসে ওর জামা টেনে কি যেন বলল। ঐ মেয়েটা ছোট্ট মেয়েটার দিকে এমন মিষ্টি হাসি দিল যে আমার মনে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়ে গেল। লজ্জায় আমার কান অবধি গরম হয়ে গেল। আমি নিজের চিন্তায় ডুবে গেলাম। যখন মেয়েটার দিকে খেয়াল করলাম ততক্ষণে সে চলে গেছে। কোনদিকে গেছে সেটা আর খেয়াল করতে পারলাম না।
বাড়িতে এসে অনেকক্ষণ মেয়েটাকে ভোলার চেষ্টা করলাম কিন্তু কেন যেন মেয়েটার ঐ এক চিলতে হাসি আমার মনে গেঁথে গেল। আমি বিছানায় শুয়ে সেই হাসিতেই হারিয়ে গেলাম।
চলবে…
#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_২৬
বাড়িতে এসে অনেকক্ষণ মেয়েটাকে ভোলার চেষ্টা করলাম কিন্তু কেন যেন মেয়েটার ঐ এক চিলতে হাসি আমার মনে গেঁথে গেল। আমি বিছানায় শুয়ে সেই হাসিতেই হারিয়ে গেলাম। আমি বিকালে চা খেতে যাই। কিন্তু আজ কখন যে তার কথা ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা হয়ে গেল বলতে পারব না। আম্মু আমার জন্য নাস্তা এনে বলল, কিরে আজকে যাসনি যে? আমি অবাক হয়ে বললাম, সন্ধ্যা হয়ে গেছে! আম্মু হেসে বলল, কেন? খেয়াল করিসনি বুঝি?
– হুম।
– কোন কল্পনায় ডুবে গেলি যে খেয়াল করিসনি? খুলে বল তো।
আমি আমার আব্বু আম্মুর সাথে একেবারে ফ্রি। তাই সব খুলে বললাম। সব শুনে আম্মু মুচকি হেসে বলল, বাব্বা! আমার ছেলে তো দেখি প্রেমে পড়তে শিখে গেছে। আমি এক মুহুর্তে থমকে লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।
♥ দ্বিতীয় দেখা:
প্রায় দু’সপ্তাহ হয়ে গেল। আমি কিছুতেই ওকে ভুলতে পারলাম না। একটা হাসিতে সে আমাকে পাগল করে দিল। আমিও হাল ছাড়ার পাত্র নই। আমি তাকে খুঁজে বের করেই ছাড়বো। ওর গায়ে গার্লস স্কুলের পোশাক ছিল। আমি ঐ ক্লু দিয়েই শুরু করলাম। কলেজ শেষ করেই ওখানে চলে যেতাম। কিন্তু একটা দিনও ওর দেখা পেলাম না। যেন সে জেনেশুনেই আমি পৌঁছানোর আগেই বাসায় চলে যেত। তাই প্রত্যেকদিন মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতাম। আমি আসলেই আম্মু হাসিমুখে বলত, কি রে, আমার বৌমাকে পেলি না বুঝি? আমি আম্মুকে আনন্দে জড়িয়ে ধরতাম। এমন মা কয়জনের জোটে? আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলত, পাগল ছেলে আমার।
বছরের শেষ দিন বের হলাম বন্ধুদের সাথে। পুরো শহর আলোয় জ্বলজ্বল করছিল। বন্ধুরা বলল, মোহাম্মদীয়ার দোকানের চা নাকি সেই বিখ্যাত। যদিও এখান থেকে যেতে পনের বিশ মিনিটের হাঁটা রাস্তা। আমার কেন যেন যেতে ইচ্ছে করছিল না। আমি নানা বাহানা দিলাম না যাওয়ার জন্য কিন্তু রেদোয়ান কিছুতেই আমাকে ছাড়লো না। জোর করে নিয়ে গেল। দোকানে কিছুটা ভীড় আছে। আমি চা খাচ্ছি আর বাইরে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটা মেয়ের দিকে। হ্যাঁ, সেই মেয়েটা। আমি রেদোয়ানকে ম্যানেজ করে উঠে বের হয়ে এলাম। অনেকটা দূর থেকে ফলো করতে করতে গেলাম। সে তার বান্ধবীর সাথে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল। একটু পরে ও ওর বান্ধবী থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বাসার পথ ধরল। দশ মিনিট পর ও একটা পাঁচ তলা বাসায় ঢুকে পড়ল। আমিও দৌঁড়ে ঢুকলাম। দেখলাম ও সেই বাসার দোতলায় থাকে। আমি তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। বাসাটা থেকে বের হতেই একটা টুলেট চোখে পড়ল। বাসা ভাড়া দেওয়া হবে। এই সুযোগ। বাড়িতে এসেই আম্মুকে সব বললাম। আম্মু বলল, তুই যখন চাচ্ছিস তবে ঐ ভাড়া বাসাতেই আমরা ভাড়া উঠবো। আমারও আমার বৌমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে যাকে দেখে আমার ছেলেটা এমন পাগল হয়ে গেল।
♥ আমার সদ্য ফোঁটা ভালোবাসার লাল গোলাপ:
আমরা একসপ্তাহের মধ্যে নতুন বাসায় উঠলাম। ঠিক মেয়েটার বাসার সামনের বাসাটা। সব গোছগাছ শেষ হলে আম্মু আমাকে বলল, চল, বৌমাকে দেখে আসি। আমি তো শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। আমি তৈরী হয়ে নিলাম। আম্মুকে নিয়ে নক করলাম পাশের বাসায়। একজন আন্টি দরজা খুলল। আম্মু বলল, আমরা পাশের বাসায় নতুন এসেছি তাই পরিচিত হতে এসেছি। আন্টি আমাদেরকে ভেতরে বসালেন। বললেন, তারা তাদের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকেন। তখনই তিনি ডাক দিলেন, ছোঁয়া, এদিকে আয়।
ছোঁয়া। আমার ভালোবাসার নাম ছোঁয়া……
আমার হাত থেকে ডায়রীটা পড়ে গেল। আমি থমকে বইসা রইলাম। চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়াই পড়ল। আনন্দের পানি। আকাশ, আকাশ আমাকে ভালোবাসতো!!!!!!! আমি তার ক্রাশ ছিলাম। আমি… আমি…। কি করব বুঝতে পারতেসি না। খুশিতে পাগল পাগল লাগতেসে। এতদিন জানতাম চাঁদনি ওর ক্রাশ তাই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ জানতে পারলাম ওই বোকা হাদাটা আমার উপর ক্রাশ খাইছিল। একবার বললোও না। আগে জানলে বগলদাবা কইরা নিজের কাছে রাইখা দিতাম। ভাইবাই হাসি পাইল আমার। আমি ডায়রীটা নিচ থেকে তুইলা আবার পড়া শুরু করলাম।
(ডায়রী)
ও আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল। হয়ত খেয়াল করেনি যে কেউ ওদের বাসায় এসেছে তাই যেভাবে ছিল ওভাবেই চলে এসেছিল। আমি ওকে দেখে পাগলের মতো তাকিয়ে রইলাম। সদ্য গোসল করে আসায় ভেজা লম্বা চুলগুলো থেকে একটু আধটু পানি পড়ছে। মুখের পাশের ছোট চুলগুলো লেপ্টে আছে। একটা হাঁটু পর্যন্ত লম্বা হালকা গোলাপী ফ্রক পরেছিল। ওকে ওকে…… অন্যরকম সুন্দর লাগছিল। ইচ্ছে করছিল ওকে একটু ছুঁয়ে দেখি। অনেকক্ষণ পানিতে থাকায় ওকে সাদা সাদা লাগছিল। আর ওর ঠোঁট জোড়া……
– এ্যাঁ…… ও খেয়াল করছিলো আমি যে ওড়না ছাড়া ছিলাম!!!!!!!!!!! ( মুখ সুচালো করে) হুহ্, ছয় বছর আগেও ব্যাটা লুচু ছিল। দেখো কিভাবে লিখেছে। ইস্!!!!!!!
আমি লজ্জায় লাল হই গেলাম। এরপর নিজেকে কন্ট্রোল করে কইলাম, নাহ্ এভাবে চললে আর পড়া লাগবে না।
(ডায়রী)
ও দৌঁড়ে ভেতরে চলে গেল। আমার ইচ্ছে করছিল ওকে আমার সামনে বসিয়ে রেখে সারাজীবন ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। ও এবার ওড়না পরে ভদ্র হয়ে এল। আমি লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না। ও আম্মুকে সালাম দিয়ে হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, আমাকে কেউ মেরেছে কি না। আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। আম্মু হেসে কারন জানতে চাইলে ও বলল, আমার গাল দুটো নাকি চেরি ফলের মতো হয়ে আছে। বলেই ও হঠাৎ লজ্জা পেয়ে গেল। আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। যদিও ও ফর্সা না। কিন্তু ওর লজ্জা পাওয়া মুখটা আমার পুরো হূদয়কে নাড়িয়ে দিল।
আমি বাসায় এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। বার বার ওর লাল হয়ে যাওয়া মুখটা ভেসে উঠল। আম্মু আমার কাছে এসে বলল, আমার বৌমাকে পছন্দ হয়েছে। দেখতে আসলেই কিউট। তবে এখন ওর বয়স কম। বাচ্চা মেয়ে। তাই ওকে সময় দেওয়া উচিত। কি বলিস?
– হুম।
আমি রাজি হয়ে গেলাম। আসলেই ওর বয়স কম। আমি ওর জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে রাজি আছি।
আমি মন খারাপ কইরা বললাম, আকাশ…… আমি আমি …… ক্ষমা করে দিও আমায়। তোমাকে ভুল বোঝার জন্য। ক্ষমা করে দিও।
(ডায়রী)
♥ প্রপোজাল:
আমি কলেজ যাওয়ার জন্য আটটার আগে রেডি হয়ে দরজার কাছে গিয়ে বসে থাকতাম। কখন ও বের হবে। কিন্তু ও বের হতো সাড়ে আটটায়। যখন আমি বের হতাম। কয়দিন এভাবেই চলল। আমি ভাবলাম, ওর স্কুল তো আটটায়। ও সাড়ে আটটায় বের হয় কেন? তবে আমার ভালোই লাগতো। ওর দুটো চোখ দেখে দিনটা শুরু করলে দিনটা কেন যেন ভালো যেতো। হঠাৎ ওর সাড়ে আটটায় যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। আমিও ওকে আড়াল থেকে দেখতে লাগলাম। শুক্রবার একটা কারনে ছাদে গিয়েছিলাম। একটু পরে দেখলাম ও এক গাদা ভেজা কাপড় নিয়ে হাজির। আমি না দেখার ভান করে রইলাম। তবে ওর কান্ড দেখে হাসি পাচ্ছিল। একই কাপড় বার বার মেলছিল। একটু পরেই ও সব কাপড় দিয়ে চলে যেতে লাগলে ডাক দিলাম। ওয়াই ফাই নেয়ার বাহানায় ওর সাথে কথা বললাম। তখনই বুঝলাম আমার মিষ্টি বউটা ভীষণ দুষ্টু। আমাকে পাসওয়ার্ড দেওয়ার বদলে I love you বলে চলে গেল। আমি অবাক হওয়ার ভান করে আবার জানতে চাইলাম। ওর মুখ থেকে আবার I love you শুনে যেন আমার পুরো পৃথিবীটাই রঙিন প্রজাপতির মতো উড়তে লাগল। বুঝলাম ছোঁয়াও আমাকে একটু একটু পছন্দ করে ফেলেছে। এমন সময় নিপা খালা এসে ঝামেলা করে দিল। আম্মুর কাছে এসে রসিয়ে রসিয়ে কত কথা বলল। নিপা খালাকে দেখে ছোঁয়া তখনই দৌঁড়ে নিচে চলে এল। আমি বাসায় ঢুকতেই আম্মু হেসে বলল, কিরে বৌমা থেকে প্রপোজ পেয়ে গেলি নাকি? আমি হেসে বললাম, তোমার বউ মা ভীষণ দুষ্টু। এখন ব্যাপারটা সামাল দিতে হবে নইলে নিপা খালা সারা দুনিয়ায় রাষ্ট্র করে বেড়াবে। আমি আর আম্মু গিয়ে ব্যাপারটা মিটমাট করে এলাম।
আমি ডায়রীটা বুকে জড়িয়ে নিয়া বললাম, চেরি তো ভালোই সেয়ানা। আমার তাকে প্রপোজ করতে বয়েই গেছে। কিন্তু করে তো ফেলছিলাম। কি আর করা।
(ডায়রী)
♥ প্রথম ভালোবাসার রান্না:
আমার সেদিন ফুটবল টুর্নামেন্ট ছিল। আমার টিম খেলায় জিতে ছিল। আমি হাসিমুখে ঘরে ঢুকতেই দেখি ছোঁয়া এসে বসে আছে। টেবিলে গাজরের হালুয়া। আমার সবচেয়ে ফেবারেট খাবার। আম্মু বলল, ছোঁয়া নাকি নিজে বানিয়েছে। আমি তো মহা আনন্দে গিয়ে পেয়ালাটা নিয়ে নিলাম। সে হঠাৎ বলল, চলে যাবে। আমি একচামুচ খেয়ে বুঝে ফেললাম, প্রথম রান্না করেছে আর ইচ্ছা মতো চিনির জায়গায় লবন ঢেলেছে। আমি তাকে সুন্দর মতো একটা বাঁশ দেওয়া প্রশংসা করতেই সে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল। ভাবলাম বেশি হয়ে গেল নাকি?
রাতে আম্মুকে বললাম, ওকে তোমার রান্নার ট্রেনিং দেওয়া লাগবে বিয়ের পরে। না হলে এভাবে সারাজীবন লবন গাজরের হালুয়া খেতে খেতে বয়রা হয়ে যাবো। আম্মু আমার কথা শুনে হাসলেন।
আমি এই জায়গাটা পড়ে থাইমা গেলাম। মনে মনে কইলাম, দাঁড়া বিয়ার পর লবন গাজরের হালুয়া না নিমের পাঁচন দিয়া গাজরের হালুয়া রান্না কইরা খাওয়ামু। নিমের কথা ভাইবা নিজেই মুখটা বাঁকা কইরা ফেললাম।
(ডায়েরী)
♥বৃষ্টিভেজা তুমি:
পরদিন ঠিকই আবার চলে এল আম্মুর কাছে রান্না শিখতে। ভালোই গাজরের হালুয়া রান্না করেছে আজ। আমি খেলতে গিয়েছিলাম। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায় চলে এসেছিলাম। ভাগ্যিস এসেছিলাম। না হলে মিষ্টি মুখটা দেখতেই পেতাম না। ফ্রেশ হয়ে এসে ওকে একটু খেপালাম। তাতে মুখ ভার করে পেয়ালায় থাকা গাজরের হালুয়া এক চামুচ খেয়ে বলল, আন্টি আমি যাই। আমি গাজরের হালুয়া নষ্ট করার বাহানায় ওর থেকে পেয়ালাটা নিয়ে নিলাম। ও আমার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে রইল। আমার হঠাৎ খেয়াল হল, ওকে দেখেছিলাম আজকে জামা রোদে দিয়ে এসেছে। এখন বাইরের যা অবস্থা, যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি চলে আসবে। কথা বলার বাহানায় বুঝিয়ে দিতেই ও এক দৌঁড়ে ছাদে চলে গেল। আম্মু বলল, আমারও নাকি কিছু কাপড় ছাদে। ব্যস, আমিও চলে গেলাম ছাদে। গিয়ে দেখি বৃষ্টি চলে এসেছে। ও বাচ্চাদের মতো বৃষ্টিতে ভিজছে। ইচ্ছে করছিল ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলি, ছোঁয়া, তোমার মাঝে কি আছে যা আমাকে চম্বুকের মতো টানে? হঠাৎ খেয়াল হলো, যেভাবে ভিজছে, জ্বর না হয়ে যায়। আমি বলল, আগে কি বৃষ্টি দেখো নাই? ও আমাকে দেখেই লজ্জা পেয়ে জামা নিয়ে এক দৌঁড়ে নিচে চলে গেল। আমি হেসে ফেললাম। কারণ বউটা আমার যে জামাকে বৃষ্টি থেকে বাঁচানোর জন্য এসেছিল সেই জামাটাই ভিজিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমিও আমার ভেজা কাপড় নিয়ে চলে এলাম। ফলে আমাকেও ভিজতে হলো।
আম্মু আমাকে দেখে বলল, কি রে এমন ভিজেছিস কেন? ইস রে, যা তাড়াতাড়ি চেঞ্জ কর। ঠান্ডা লেগে যাবে। আমিও জামা চেঞ্জ করে ফেললাম। কিন্তু লাভ হল না। সর্দি ধরে গেল। আমার সামান্য ভেজায় এই অবস্থা তাহলে ছোঁয়ার কি অবস্থা কে জানে।
♥ দুষ্ট বউয়ের জ্বর:
আমি সকালে আম্মুকে বললাম, তুমি একটু দেখে এসো। আম্মু এসে বলল, ওর জ্বর হয়েছে। মেয়েটা আসলে বাচ্চা। আমি মনে মনে বললাম, আমার কাছে একবার আসুক তারপর ইচ্ছা মতো ওকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবো। হি হি হি……। তারপর জ্বর হলে একসাথে নাপা এক্সট্রা খেয়ে কাঁথা গায়ে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকবো।
চলবে…