আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥ #পর্ব_৫+৬

0
202

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#পর্ব_৫+৬

নরম মনটা বলল, গাজরের হালুয়া বৌ ডাকো তবু আমার কাছে ফিইরা আসো। আমি মনরে ধমক দিয়া কইলাম, এখন পিরিতের সময় না। আগে আচ্ছা মতো ঝাঁটার বাড়ি তারপর পিরিত।

আমি গিয়াই কাপড়ের বালতিটা জোরে ছাদে রাখলাম। ওরা একবার আমার দিকে তাকালো। আমি না দেখার ভান করে কাউয়ার মতো গান গাওয়ার শুরু করলাম, কেউ কথা রাখেনি, ভালোবাসেনি……। আমি গান গাইতেসি আর কাপড় মেলতেসি। আমার গান শুনে হোক বা অনিচ্ছায় হোক, মেয়েটা কাছে এসে বলল, হাই, গাজরের হালুয়া। হোয়াটস আপ? আমি তাকে আগাগোড়া দেখলাম। মনে মনে কইলাম, নিজে তো শুঁটকি মাছের পোনা, আবার আমারে আসছে গাজরের হালুয়া ডাকতে। আমি বললাম, ফগরফ টগরফ গাট। মেয়ে আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে বলল, হোয়াট? আমি বললাম, জীবনে তিন গোয়েন্দা পড়নাই? মেয়েটা ক্রাশের দিকে তাকাল। আমি বললাম, বাঙালি?

– ইয়েস।

– তবে বাংলায় কথা বলো। অসব ঢঙের ইংলিশ এই দেশের খাঁটি মানুষ বোঝে না।

আমি কাপড় দিয়া নিচে নাইমা আসলাম। বাসায় ঢুকতে ঢুকতে কইলাম, ইংলিশ মারতেসে। তোর ভাগ্য ভালো যে ক্রাশ ওখানে ছিল, নাইলে বুঝতি এই ছোঁয়া কি জিনিস। আমার ক্রাশের লগে ঢলাঢলি বাইর করতাম। আমি বালতি রেখে মুখ গোমড়া করে বারান্দায় বসে রইলাম।

দুপুরে খাইতে গিয়া দেখি টেবিলে একটা বাটিতে টেংরা মাছের ঝোল। আমার আরেকটা বালুবাসা। আমি ভাত ছাড়াই খাইতে শুরু করলাম। আম্মা এসে আমার মাথায় চাটি মেরে বলল, আর কেউ খাবে না নাকি একাই সাবাড় করবি? আম্মাকে এডের স্টাইলে বললাম, এই স্বাদের ভাগ হবে না……। আম্মার আমার থেইকা বাটি কাইড়া নিয়া কইল, তোর স্বাদের খেঁতা পুড়ি। যা প্লেট নিয়ে ভাত বাড়। আমি মুখ কালো কারে ভাত বাড়তে বাড়তে বললাম, কখন রান্না করসো, দেখি নাই যে।

– দেখলে তো বিলাইর মতো আসি পাতিল খালি করে ফেলতি। আর দেখবি কেমনে আমি রানলে তো দেখতি।

– তাইলে?

– ভাবি দিয়ে গেল। আজকে নাকি কোন মেহমান এসেছে সে জন্য রান্না করেছে।

– ঐ শুঁটকি মাছের পোনার জন্য…

– কে?

– কেউ না। আমি মাছ খামু না। আমারে গোশত দাও।

– হঠাৎ তোর আবার কি হইল?

আমি গোশত, তরকারি আর ভাত নিয়া রুমে চলে আসলাম। ওরে টেংরা রে… তুইও ঐ শুঁটকির হইয়া গেলি!!! আমার এখন কি হপ্পে। মনের দুঃখ আর শ্যাষ হইল না। ক্রাশ তো আমার হইল না, টেংরাও আমার থেইকা চইলা যাইতেসে। ঐ শুঁটকি রে আমি ভর্তা বানাই খামু। আমার ক্রাশ… আমার টেংরা… আমি হাড্ডি চাবাইতেসি আর কানতেসি। এমন সময় আম্মা উঁকি দিয়া বলল, কিরে, কি হইসে তোর, এমন কুই কুই করতেছিস কেন? আমি চুপ করে বললাম, কিছু না আম্মা, হাড্ডির শব্দ। এইযে দেখো। আমি চাকুষ তাকে হাড্ডির শব্দ দেখাইলাম। যদিও হাড্ডি কুই কুই শব্দে ভাঙে না। তো কি হইসে মড় মড় করে ভাঙলেও তো টপিক ঘুইরা যাইবো।

আমি আর আমার বন্ধু গাজর বিছানায় শুয়ে আছি। টপিক শুঁটকি। কে এই শুঁটকি, জানা দরকার। আমার ক্রাশে ভাগ বসাইতেসে। কতক্ষণ ভাবলাম। বাইরে তাকাই দেখলাম এখনও সন্ধ্যা হয় নাই। তার মানে ক্রাশ এখনও বাইরে খেলতেসে। আম্মা নিজের রুমে শুইসে। আমি গুটি গুটি পায়ে দরজা খুলে পাশের বাসায় নক দিলাম। আমি এদিক ওদিক উঁকিঝুঁকি মারতেসি এমন সময় দরজা খুলল। আমি কইলাম, আন…টি…। আমি চুপ করে গেলাম। আমার ক্রাশ আমার দিকে তাকাই আছে। আমি তো ভাবছি সে খেলতে চলে গেসে। আমার তার উপর প্রসুর অভিমান হইসে। মন চাইতেসে ওর দুই গালে চাইরটা চড় দিয়া আমি কাঁদি। আমি মুখ খোলার আগেই সে কইল, কেমন আছেন, গাজরের হালুয়া? আমি কইলাম, ভালো, চেরি ফল। সে মুখ সুচালো করে বলল, চেরি ফলটা আবার কে? আমি একটু উদাসভাব করে বললাম, আমার সামনে যে খাম্বা দাড়াই আছে সে। ক্রাশ কিছু বলার আগেই ভেতর থেকে মেয়েটা এসে বলল, কে এসেছে? আমি তাকে দেখে রাগে অন্ধ হই গেলাম। কইলাম, চেরির বউ গাজর আসছে৷ সরো। আমি দুইজনকে ঠেলে ভেতরে চলে গেলাম। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা বলল, মেয়েটা কি সাইকো? আমি ওদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাইলাম। খালি মন্ত্রটা জানতাম, পুইড়া ছাই হই যাইতো। আমি আন্টির রুমে গিয়া বললাম, আসবো?

– আরে ছোঁয়া যে, এসো।

– আন্টি আপনার রান্না সেই লেভেলের ভালো। আমি তো ফ্যান হয়ে গেলাম।

আন্টি হেসে বলল, এই জন্যই আমার কাছে আসা? আমি অভিমানী স্বরে বললাম, এমনিতে আসতে পারি না?

– তা পারো।

– তাহলে?

আন্টি বিছানায় বইসা ছিল। আমি গিয়া ওনার কোলে শুয়ে পড়লাম। বললাম, আন্টি, আম্মু বলছিল মেহমান এসেছে দেখে নাকি আপনি টেংরা মাছের ঝোল রান্না করেছেন। মেহমান কি ঐ মেয়েটা? আন্টি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, হুম। আমি জিগাইলাম, কে ও?

– আমার ছেলের বান্ধবী।

এমন সময় ক্রাশ বসার রুম থেকে বলল, আম্মু আমি চাঁদনীকে এগিয়ে দিয়ে আসছি।

– আচ্ছা যা।

আমি গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম। একটু পরে ওদের দেখা গেল। ওরা হেসে কথা বলতে বলতে হাঁটছে। আমি মনে মনে ভাবলাম, ছোঁয়া রে… তুই সত্যিই বাপ্পারাজ হয়ে গেলি। আমি বললাম, আন্টি আমি আসি। আন্টি বলল, একটু কিছু খেয়ে যা। আমি বললাম, না, আন্টি। আরেক সময়। আমি আসি। আন্টির রুম থেকে বের হয়ে হঠাৎ ক্রাশের রুমের দিকে নজর পড়ল। ভাবলাম, একটু ক্রাশের জগতে ঘুইরা আসি। যেই ভাবা সেই কাজ। ঢুকে পড়লাম চোরের মতো। চারপাশ পরিপাটি। আহা কি সুন্দর আমার চেরি ফলের রুমখানা!!! ঠিক চেরি ফলের মতো। দেয়ালে দেখলাম হ্যাঙ্গারে ক্রাশের কলেজ ড্রেস ঝুলছে। আমি গিয়ে ওটার কাছে দাঁড়াইলাম। তারপর জাপটে ধরে বললাম, যদি পারতাম তোমারে এভাবে নিজের কাছে বাইন্ধা রাখতাম। কিন্তু কপালে কি আছে? আমার মাথায় একটা জিনিস আইল। আমি বহুত খুঁইজা একটা ছোট কেঁচি নিলাম। তারপর ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে শার্টের শেষের বোতামটা কাইটা নিলাম। কি সুন্দর সোনালি বোতাম!!! রাগে ইচ্ছা করতেছিলো শার্টটাই কাইটা দি। কিন্তু দিলাম না। কেঁচিটা আগের জায়গায় রাইখা আমি তার টেবিল দেখতে লাগলাম। হঠাৎ একটা নীল ডায়রীর উপর নজর গেল। ভেতরে কলম রাখা। আমি ডায়রীটার ডালা খুইলা প্রথম পৃষ্ঠা উল্টাইলাম। ওখানের লেখা দেইখা আমার পুরা জগত থমকে গেল। একি লেখা!!!!!!

তুমি জানো না রে প্রিয়, তুমি মোর জীবনের সাধনা।
তোমায় প্রথম যেদিন দেখেছি, মনে আপন মেনেছি।

ফ্রার্স্ট লাভ♥

আমার ক্রাশেরও ফার্স্ট লাভ আছে! আমি কাঁপা হাতে পরের পেইজ উল্টাইলাম। সেখানে হেড লাইন, প্রথম দেখা। আমি মাত্র পড়মু এমন সময় ডায়রীটা উড়াইয়া নিয়া গেল। তাকিয়ে দেখি ক্রাশ দাঁড়াই আছে। আমি ধরা খাওয়া চোরের মতো আমতা আমতা করতেসি আর ও বলল, তুমি কোন সাহসে আমার ডায়রী ধরেছো? আমি পেছনে হাত রেখে বললাম, ইয়ে মানে……

– তোমার হাতে কি?

ও বলার সাথে সাথে হাতের মুঠা শক্ত কইরা কইলাম, কিছু না। তরপরই ভৌঁ দৌঁড় দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। সোজা নিজের রুমে। দরজা মাইরা চোখের কল ছেড়ে দিলাম। হায়রে!!! ক্রাশও কারো উপর ক্রাশ!!! ছোঁয়া তুই তো ফক্কা।
.
.
.
.
সন্ধ্যায় যখন রুম থেকে বাইর হইলাম তখন আব্বা আম্মা আমাকে দেইখা আঁতকে উঠলেন। আমারে চেনা যাইতেসে না। আমি তাদের দিকে তাকাই কইলাম, এভাবে কি দেখতেসো? তেঁতুল গাছের শাঁকচুন্নি? আম্মা বলল, কি হইসে তোর? কাঁদছিস কেন? আমি নাক টেনে বললাম, দুঃখে। আমার প্রিয় ফুল শুকিয়ে ঝরে গেছে। মৌচাক বানানোর আর মধু নাই। মৌচাক মধু শুদ্ধা কেউ চুরি কইরা নিয়ে গেছে। আব্বা আম্মা অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালেন। তাদের মাথায় কিছু ঢুকল না। আমার হেঁচকি উঠে গেল। আমি ঢক ঢক করে পানি খেয়ে গাজরের পুরো পলিথিনটা নিয়ে রুমের দরজা লাগাই দিলাম। ঢুকার আগে কইলাম, আমি ধ্যান করমু, রাতে ভাত খামু না। আমারে ডিস্টার্ব করবা না। তারপর দরজা বন্ধ। আম্মা আব্বারে কইল, মেয়েটার কি হইসে বুঝতেসি না। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়ে প্রেম করতেসে।

– আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু কে সেই ছেলে!!!!

আমি দরজা মেরে একটা গাজর ধুয়ে আবার ফ্যানের দিকে তাকাই আছি। ফ্যান ভন ভন করে ঘুরতেসে, তার সাথে আমার চিন্তার চাকাও। কি করা যায়? গাজরটা শেষ করে আয়নার সামনে দাঁড়াইলাম। নিজেকে বলল, না ছোঁয়া না, তুই এভাবে হারতে পারিস না। তোর চেরি কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে আর তুই হা করে দেখবি এ হতে পারে না। কিন্তু কি করা যায়?

বৌয়ের মতো সেজে গুজে একটা বন্দুক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। পাশের বাসায় নক করতেই ক্রাশ দরজা খুলল। আমি বন্দুক তার দিকে ধরে বললাম, চল। ক্রাশ ভয়ে আমার সাথে কাজি অফিস চইলা আসলো। রেজিষ্ট্রি কাগজে জোর কইরা তারে সাইন করাইয়া নিজেও সাইন করলাম। তারপর সেই বিখ্যাত হাসি হু হা হা হা হা……

ধুর! নিজের মাথায় নিজে চাটি মাইরা কইলাম, কি ভাবনা!!! আমি বন্দুক পামু কই? নাহ্, এই বুদ্ধি বাদ। তাহলে কি করা যায়?

আমি ছাদের দরজা মাইরা রেলিং এর উপর দাঁড়াই আছি৷ নিচে ক্রাশ, আন্টি, আব্বা, আম্মা সবাই দাঁড়াই আছে। আমি চিল্লাই কইতেসি, তুমি যদি আমারে বিয়া না করো, তো আমি নিজেকে শ্যাষ কইরা দিমু। ক্রাশ নিচ থেকে কইতেসে, না না, ছোঁয়া এমন করিও না। আমি তোমারেই ভালোবাসি। তুমি নাইমা আসো। তার কথায় নাইমা আসতেই সে থাপ্পড় মাইরা কইল, সাধে কি তোমারে গাজরের হালুয়া বলি?

আমি মাথা নেড়ে কইলাম, নাহ্, বুদ্ধিতে জঙ ধরসে। কিচ্ছু মাথায় আসতেসে না। আমি টেবিল থেকে খুঁজে ক্রাশের বোতামটা বাইর করলাম। সেটা দেখেই আমি বরফের মতো গলে গেলাম। বোতাম টাকে কয়টা কিস কইরা নাচতে লাগলাম। হঠাৎ বাঁধ সাধল বিছানার পায়া। ফলে উস্টা খাই পড়লাম।
চলবে…
#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ♥
#পর্ব_৬

আমি টেবিল থেকে খুঁজে ক্রাশের বোতামটা বাইর করলাম। সেটা দেখেই আমি বরফের মতো গলে গেলাম। বোতাম টাকে কয়টা কিস কইরা নাচতে লাগলাম। হঠাৎ বাঁধ সাধল বিছানার পায়া। ফলে উস্টা খাই পড়লাম।

পইড়াই ষাঁড়ের মতো চিল্লাইতে লাগলাম, ওরে বাবা গো, কোমর গেল গো। আব্বা আম্মা দৌঁড়ে এসে বলল, কি হইসে, ছোঁয়া? দরজা খোল। আমি সাথে সাথে চুপ করে গেলাম। বললাম, কিছু হয় নাই। আম্মা বলল, তুই দরজা খুলবি না দরজা ভাঙমু? আমি মুখ বাঁকা করে বিছানা ধরে উঠে দরজা খুললাম। সাথে সাথে আব্বা আম্মা রুমে ঢুকলেন। সন্দিহান কিছু না দেখে আব্বা বললেন, কি হয়েছিল? আমি বিছানায় বসে বললাম, বিছানার সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে গেসিলাম।

– এত বড়ো ধামড়া মেয়ে হইসে এখনও চলতে শিখে নাই। চোখগুলা কি হাতে নিয়ে হাঁটিস?

আব্বা আমার কাছে এসে বসলো। বলল, তুই কি প্রেম করছিস? আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, আবার এই কথা জিজ্ঞাসা করতেসো।

– তো কি করবে? যা শুরু করেছিস। সত্যি করে বল তো, কার প্রেম পড়েছিস?

আমি দুইজনের দিকে তাকাই আছি। আমার আব্বা আম্মার লাভ ম্যারেজ। তাই মনে করতেসে আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি সুড়সুড় করে সব বলে দেবো। ওটি হচ্ছে না। আগে আমি ক্রাশকে পটামু, তারপর। কিন্তু ক্রাশ!!!!! আমি বললাম, ওসব কিছুই না। আসলে একলা একলা ভালো লাগে না। আর এখনো বিয়ে করারও বয়স হয় নাই। তাই নিজে নিজে সময় কাটাইতেসি। তোমরা যাও তো। আমি পড়মু।

আব্বা আম্মা হয়ত বুঝতে পারছে আমি কিছু কমু না। তাই হতাশ হয়ে বেরিয়ে গেল। আমি দরজা মেরে আয়নার সামনে গিয়া আমার চেইনটা খুলে বোতামটা লাগিয়ে আবার গলায় ঝুলাই দিলাম। বাহ্!!!! কি সুন্দর লাগতেসে। একেবারে পার্ফেক্ট হইসে আমারে। আমার ক্রাশের বলে কথা। আমি বোতামটা হাতের মুঠায় ধইরা টেবিলে বসলাম। ওটাতে একটা চুমু দিয়ে পড়ায় মনোযোগ দিলাম।
.
.
.
.
এর মধ্যে আরো এক সপ্তাহ অতিবাহিত হইল। আরেক শুক্রবার আসলো। আমি ঘুম থেকে হাই তুলতে তুলতে উঠলাম। আজকে আম্মা জাগায় নাই। তাইলে আজকে কোনো কাজ নাই। ফ্রেশ হয়ে ধীরেসুস্থে খাবার খাইলাম। আম্মার রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম আম্মা কার সাথে ফোনে কথা বলতেসে। আমি নিজের রুমে এসে একটা গল্পের বই নিয়ে বসলাম। আম্মা আমার রুমে উঁকি দিতেই আমি বললাম, আজকে কাপড় ধুইবা না? আম্মা আমার কাছে এসে বলল, হঠাৎ তোর কাপড় ধোয়ায় এত আগ্রহ?

– এতে আগ্রহের কি আছে? প্রত্যেক শুক্রবারই তো তুমি কাপড় ধোও।

মনে মনে কইলাম, প্রত্যেক শুক্রবারই তো আমার চেরি ফলের লগে ছাদে দেখা হয়। তাই প্রত্যেক শুক্রবার আমার ক্রাশ ডে। তাই এত আগ্রহ।

– তুই তো নিজের কাপড় সব জমাই রাখিস। যা আজকে তুই ওগুলা নিজে ধুবি।

আমি কিছু না বইলা উঠে গেলাম। আলমারি থেকে খুঁইজা ময়লা কাপড় বাইর করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। আজকে কেন জানি প্রতিবাদ করতে মন চাইল না। হয়ত ক্রাশের সাথে দেখা করার লোভ সামলাইতে পারি নাই।
.
.
.
.
কাপড় ধুইতে ধুইতে হাত ব্যাথা হইয়া গেল। দুইটা ভারি বালতি টাইনা টাইনা পাঁচতলায় উঠে হাঁপাই গেলাম। বাপ রে! ক্রাশের চোটে ইচ্ছা মতো কাপড় ধুইসি। এখন অবস্থা টাইট। আমি ঘেমে নেয়ে একাকার। ছাদে বালতি দুটো রেখে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়া চোখ বন্ধ করে দাঁড়ালাম। নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কতক্ষণ দাঁড়াই ছিলাম জানি না। চোখ খুলে তাকাতেই সারা শরীরে হিম বয়ে গেল। আমার ক্রাশ দাঁড়াই আছে। যদিও আমার দিকে মনে হয় খেয়াল করে নাই। মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখতেসে। হাতে ডিএসএলআর ক্যামেরা!!!! ওয়া!!! হঠাৎ নিজের দিকে খেয়াল হতেই কেমন কেমন লাগল। ঘামে পানিতে পুরা ভিজে আছি। ইস্। আমি কোনোমতে কাপড় মেলে তাড়াতাড়ি যেতেই একটা বড় রকমের উস্টা খাইলাম। আমার মনে হল আমি পড়াতে পুরা বিল্ডিং হয়তো কাঁইপা উঠছে। আমি কি এতই মোটা!? কিছুক্ষণ এটা নিয়ে ভাইবা মাত্র চিৎকার দিমু, মা গো… সাথে সাথে মুখ চেপে ধরলাম। কোনোমতে দেয়াল ধরে উঠে হাঁটতে গিয়া বুঝলাম অবস্থা খারাপ। ভালোমতো পা মচকে গেসে। পেছনে তাকাইয়া দেখি ক্রাশ আমার দিকে তাকাই আছে। আমি মনে মনে কইলাম, সার্কাস দেখতেসে। আমি পইড়া গেলাম আর একটু তুলতেও আসলো না। আমি খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে তার আড়ালে গিয়া সিঁড়িতে বসে পড়লাম। মনে মনে চিৎকার করতেসি, আল্লাহ গো, কি দুনিয়া পাঠাইলা। পইড়া এত ব্যাথা পাইলাম। অথচ একটু আইসা জিজ্ঞেস পর্যন্ত করল না!!! আব্বা আম্মা, কি ব্যাথা!!! আমি মনে মনে চিল্লাইতেসি আর এমন সময় সে পেছন থেকে এসে বলল, পুরা রাস্তা মেরে বসে আছো কেন? সাইড দাও। আমি বেকুবের মতো তার দিকে তাকাই আছি। সে আবার ইশারা করে পা সরাতে বললে আমি পা সরাই দিলাম। সে সুড়সুড় করে নেমে গেল। আমার ইচ্ছা করতেছিল ডাক ছেড়ে কাঁদি। যাই হোক, এখন কাঁইদা লাভ নাই। নিচে তো যেতে হবে। আমি রেলিং ধইরা উঠতে গিয়ে আবার বইসা পড়লাম। প্রচুর ব্যাথা করতেসে। তাকাই দেখি কালো হয়ে ফুইলা গেছে। আল্লাহ গো, কি হইল এটা!!! এমনিতে ক্রাশের সামনে পইড়া ইজ্জতের ফালুদা, আর এখন পায়ের ব্যান্ড বেজে আছে। আমি আরেকবার চেষ্টা কইরা হাল ছেড়ে বসে রইলাম। হঠাৎ দেখি কেউ আমার দিকে হাত বাড়াই আছে। তাকাই দেখি ক্রাশ আমার দিকে তাকাই আছে। তারে দেইখাই আমার মনে লাড্ডু ফুটতে লাগল। সে কইল, এত বড় মেয়ে হয়েছে এখনও হাঁটতে শিখে নাই। আমি হ্যাবলার মতো বসে রইলাম। সে আবার কইল, আমি ছবির নায়ক না যে তোমাকে কোলে তুলে নিবো। আমার কাঁধে হাত রেখে উঠো। ও আমার সামনে ঝুঁকতেই আমি ওর কাঁধে হাত রেখে দাঁড়াইলাম। তাল সামলাতে না পেরে পইড়া যাচ্ছিলাম। রেলিং ধরে দাঁড়ালাম। মনে মনে বললাম, কি মানুষ রে ভালোবাসলাম!!! পড়ে যাইতেসি তাও একটু ধরতেসে না। যাগ্গে, অন্তত আসছে তো। সে আমাকে বাসার দরজার সামনে পৌঁছাই দিয়াই ছেড়ে দিল। আমি পড়ে যাইতে লাগলে দরজা ধরে দাঁড়ালাম। সে নিজের বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বলল, ভালো করে গোসল করো। ইস্, আমাকেও এখন গোসল করতে হবে। বলেই দরজা মেরে দিল। আমার রাগে মাথার চুল ছিঁড়তে মন চাইতেসে। আমি দরজায় নক করতেই আম্মা এসে দরজা খুলল। আমারে দেখে কইল, কি রে, বালতি কই?

– ছাদে। আমার পা মচকে গেছে। আনতে পারি নাই।

– কিভাবে মচকালো!!!? হাঁটতে তো পারিস না ঠিক মতো। ক্লাস এইটে পড়ে এখনও হাঁটতে জানে না।

– তুমি এখন এসব বলবা না আমাকে ঢুকতে দিবা?

আমি অনেক কষ্টে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ঢুকলাম ভেতরে। সবার উপর রাগ হইতেসে। বিশেষ করে আমার এই অকম্মা পা দুইটার উপর। যখন তখন খালি উস্টা খায়। আম্মা বাম দিয়ে গেল। আমি ওটা না লাগাই ওয়াশরুমে চলে গেলাম। গায়ে বালতি বালতি পানি ঢালতেসি আর ভাবতেসি, আমার গায়ের গন্ধ এত বাজে যে তারে গোসল করতে হবে!!! আজকে ঢইলা আমি সব গন্ধ দূর করমু। যদি আমার গায়ে এক ফোঁটাও গন্ধ থাকে তো আমার নামও… ধুর বাবা, টুলে বইসা গোসল করা যায় নাকি! সাত নাম্বার বার বালতি পুরানোর সময় আম্মা বাইরে থেকে ডাক দিয়া বলল, কি রে ছোঁয়া বেঁচে আছিস নাকি? আমি চিল্লাই জিগাইলাম, হঠাৎ মরতে যামু ক্যান?

– না, তোর কাকের গলা শুনতে পাচ্ছি না তো তাই ভাবলাম। এখন বের হ। তখন থেকে তো খালি পানি ঢালার আওয়াজ শুনতেসি।

আমি মুখ বাঁকা করে শেষ বালতির পানি গায়ে ঢেলে বের হলাম। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবতেসি কি করা যায়। আম্মা এসে জিগালো, বাম লাগাইছিস?

– ও, ভুলি গেসি।

– তোর যে কি মনে থাকে! এই বয়সে যদি এমন ভুলে যাস বুইড়া বয়সে কি করবি? দেখি পা। ইস্ রে, কেমনে পড়ছিস? আল্লাহই ভালো জানেন। পুরা কালো হয়ে গেছে৷ ধর এখন বাম লাগা, আমি বরফ আনি। তোর আব্বু আসলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।

আমি ভালো মেয়ের মতো বাম লাগাই বরফের শ্যাক দিতে লাগলাম। দুপুরে খাওয়া শেষে লুকিয়ে ছাদের দিকে রওনা দিলাম। আম্মা জানলে আমারে ফালাই পিটবো। অনেক ভাইবা একটা ব্যাপার মাথায় আসছে তাই গেলাম ছাদে। গিয়ে দেখি আমি তখন ঠিকই দেখসি। ক্রাশের জন্মদিনের শার্টটা শুকাইতে দিসে। আমি গিয়া দেখলাম ওটা শুকাই চকচক করতেসে। আমি চোরের মতো এদিক ওদিক তাকাই শার্টটা ডাকাতি করলাম। জামার মধ্যে ঢুকাই পা টিপে টিপে নামলাম। এখনো পায়ে ভীষণ ব্যাথা। অনেক কষ্টে রুমে গিয়া দরজা মারতেই আম্মা কইল, ছোঁয়া, কই গেসিলি এই পা নিয়ে?

– ছাদে গেসিলাম। একটা ইম্পর্টেন্ট জিনিস রাখি আসছিলাম। ওটা আনসি।

আমি জামার উপর শার্টটা পরলাম। সাদা শার্ট। বুক পকেটের জায়গায় নীল সুতা দিয়ে অল্প কাজ করা। আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই নিজেকে দেখতে লাগলাম। কলারটা নাকের কাছে টেনে ধরতেই একটা মিষ্টি সুবাস নাকে লাগল। আহা!!! আমার ক্রাশের গায়ের গন্ধ তো জোস। বিয়ার পর ক্রাশরে একেবারে জড়াই ধইরা ঘুম যামু। ইস্!!! ভাইবা লজ্জায় মুখ ঢাইকা ফেললাম। শার্টটা পরে নাচতে লাগলে পাটা মনে করিয়ে দিল, আমি কিন্তু রেগে আছি। আর নাচা গেল না। আমি শার্টটা পইরাই বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ক্রাশের গায়ের সুগন্ধে আমার চোখে ঘুম চইলা আসলো।
.
.
.
.
ঘুম ভাঙল সন্ধ্যার পরে। উইঠা মাত্র বিছানা থেকে নামতে যামু এমন সময় বসার ঘরে হাসির শব্দ শুনতে পাইলাম। নামতে গিয়ে টের পেলাম পায়ের ব্যাথা এখনো কমে নাই। তাকাই দেখি এখনো কালো হই আছে। কোনমতে খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে দরজা খুলতে যামু তখনই গায়ের দিকে নজর পড়ল। আয় হায়!!! ক্রাশের শার্ট এখনো গায়ে।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here