নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_৩৫

0
435

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_৩৫

হৃদয়পুরে একটি এতিমখানা রয়েছে। সেখানেই সমুদ্রকে আসতে বলেছিলো আরভী। তাই বিকেল হতেই সমুদ্র নিজের বাইক নিয়ে বেড়িয়ে যায় এতিমখানার উদ্দেশ্যে।

এতিমখানায় পৌছাতেই সমুদ্র দেখতে পায় আরভী আজ শুভ্র রঙের শাড়ি পড়েছে। চুল গুলো উন্মুক্ত। যা বারেবারে বাতাসে উড়ে আরভীর চোখেমুখে বাড়ি খাচ্ছে। আর আরভী তা বিরক্ত সহকারে কানের পেছনে গুজে দিচ্ছে। ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক ও চোখে মোটা করে কাজল লাগিয়েছে মেয়েটা।

আরভীকে দেখে সমুদ্রের পা সেখানেই থেমে যায়। চারপাশের সব কিছু থেকে যেনো সাময়িক সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হারিয়ে যায় আরভীর মাঝে। দূর হতেই মনোমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকে আরভীর দিকে।
বক্ষপিঞ্জরে আবদ্ধ হৃদপিণ্ড নতুন নতুন ছন্দে আন্দোলিত হতে থাকে। ক্ষণে ক্ষণে বাড়তে থাকে হৃদযন্ত্রের ধুকপুকানি। আর সমুদ্র সেসব কিছুই স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে।

সেকেন্ড দশেক আরভীকে পরখ করে সমুদ্র আনমনে বলে উঠে,”আমার সর্বনাশিনী।”

হঠাৎ সমুদ্রকে দেখতে পেয়ে আরভী মিস্টি হেসে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে আসে। এমনিতেই আরভীর এই রুপে সমুদ্র নতুন করে আরভীর প্রেমে পড়েছে। তার উপর এই হাসি। সমুদ্রের ইচ্ছে হচ্ছে আরভীকে নিজের সামনে বসিয়ে রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা দেখে যেতে। ইশ! যদি সত্যি এমনটা করা যেতো! তাহলে কতই না ভালো হতো।
এসব ভেবে সমুদ্র ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরভীর মুখপানে। আশেপাশে কি ঘটছে আপাতত সেদিকে কোনো হুশ নেই সমুদ্রের। সমুদ্র তো ব্যাস্ত তার সর্বনাশিনীকে মন ভরে দেখায়।

আরভী সমুদ্রের সামনে এসে দাঁড়িয়ে সমুদ্রকে জিজ্ঞেস করে,”কি অবস্থা আপনার? আঘাত ঠিক হয়েছে?”

সমুদ্র প্রতিত্তোর করলো না আরভীর। সে তো একধ্যানে আরভীকে দেখায় ব্যাস্ত। প্রতিত্তোর করবে কেমন করে?
অপরদিকে সমুদ্রের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে আরভীর ছোট ছোট চোখ করে সমুদ্রকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। তারপর কিছু একটা বুঝতে পেরে রহস্যময়ী হেসে সমুদ্রের মুখের সামনে তুড়ি বাজাতে শুরু করে।

আরভীর তুড়ি বাজানোর শব্দে সমুদ্রের হুশ ফিরে। ডান হাত দিয়ে মাথা চুলকে দৃষ্টি মাটির দিকে নিক্ষেপ করে শুধায়,”এখানে আসতে বললেন যে? কি এমন সারপ্রাইজ দিবেন শুনি!”

“নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি তাই ভাবলাম এই ছোট বাচ্চাদের সাথে একটু সময় কাটাই।”

“নতুন জীবন!”

“হ্যাঁ আমাদের নতুন জীবন। আমি চাই না পুরোনো কোনো স্মৃতি আঁকড়ে ধরে সংসার জীবনে প্রবেশ করতে। সব ধূলো কণা পরিষ্কার করে জীবনের সাহিত্যের বইটাকে নতুন এক রুপ দিতে চাই।”

আরভীর কথায় সমুদ্র চমকে যায়। মাথা তুলে আরভীর দিকে তাকায়। আরভীর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে আরভী সত্যি বলছে নাকি মিথ্যে।
তবে অনেক ক্ষণ আরভীর চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেও কিছু বুঝতে পারলো না। ধূর্ততা ছাড়া কিছুই নজরে পড়ছে না।

“এভাবে হুটহাট কোথায় হারিয়ে যাচ্ছেন বলুন তো। তাড়াতাড়ি চলুন। ওদিকটায় সব বাচ্চারা আছে।” বলে আরভী হাটতে শুরু করে বাচ্চাদের কাছে যাওয়ার জন্য।
সমুদ্র নিজেও আরভীকে অনুসরণ করে হেটে চলেছে আরভীর পিছু পিছু।

হঠাৎ সমুদ্রের খেয়াল হলো। সমুদ্র নিজেও তো শুভ্র রঙের শার্ট পড়েছে আজ। সমুদ্র এবার একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আবার আরভীর দিকে তাকালো। কিভাবে মিলে গেলো দুজনের ড্রেস কোড? হয়তো মনের মিল। এই ভেবে সমুদ্র আবারও সামান্য হাসলো।

সমুদ্র আরভীকে অনুসরণ করে এতিমখানার পেছনের দিকে গিয়ে দেখলো বাচ্চারা রংবেরঙের বেলুন নিয়ে খেলছে। আর একটা ছেলে সবার হাতে চকোলেট দিচ্ছে। হয়তো আরভী এনেছে ওদের জন্য।

সমুদ্র ও আরভীকে আসতে দেখে বাচ্চারা আরভীর দিকে দৌড়ে যায়। সবাই একসাথে আরভীকে ঘিরে ধরে। গুটিকয়েক আরভীর হাত ধরে বায়না ধরে গান শোনানোর জন্য।
বাচ্চাদের এ বায়না শুনে আরভী আড় চোখে সমুদ্রের দিকে তাকায়। তারপর সমুদ্রের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে আদুরে কন্ঠে বলে উঠে,”এই যে তোমাদের এই ভাইয়াকে দেখছো না? সে কিন্তু দারুন গান করে। সবসময় তো আমার থেকে গান শুনো, আজ না হয় ভাইয়ার গান শুনি সবাই মিলে?”।

বাচ্চাগুলো এবার সমুদ্রের দিকে লক্ষ্য করে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে অচেনা এই মানুষটিকে। অচেনা এই মানুষটির কাছে গান শোনানোর আবদার করবে কি না তা ভাবতে থাকে। তবে বাচ্চাদের মাঝ থেকে এক ছটফটে স্বভাবের মেয়ে কোনো কিছু না ভেবেই সমুদ্র সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে,”তুমি গান গাইতে জানো?”

সমুদ্র মেয়েটির সামনে হাটু গেড়ে বসে গাল টেনে দিয়ে বলে,”হ্যাঁ, তোমরা শুনবে?”

“গাও তবে। আমরাও একটু শুনি তুমি কেমন গাইতে পারো।”

মেয়েটির কথায় সমুদ্র উচ্চস্বরে হেসে উঠে। কেমন বিজ্ঞ দের মতো করে কথা বলছে। কথার ধরনে মনে হচ্ছে সমুদ্রের অডিশন নিবে এরা।

সমুদ্র গান গাইবে বুঝতে পেরে এদের মাঝ থেকে এক ছেলে দৌড়ে ভেতর থেকে গিটার নিয়ে আসে। তারপর তা সমুদ্রের সামনে ধরে জিজ্ঞেস করে,”গিটার বাজাতে পারো?”

সমুদ্র হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে ছেলেটির থেকে গিটার নেয়। আরভীর চোখের দিকে গভীর চাহনি নিক্ষেপ করে গেয়ে উঠে-

“কাজল কালো দুটি চোখে
সে যখনি আমায় দেখে।
পড়েনা চোখেতে পলক
আর আসেনা কথা মুখে।”

এইটুকু গেয়ে সমুদ্র আরভীর দিকে এগিয়ে যায়। আরভীর সামনে দাঁড়িয়ে আরভীর চোখে চোখ রেখে আবার গেয়ে উঠে-

“ও হো হো কাজল কালো দুটি চোখে
সে যখনি আমায় দেখে।
ও পড়েনা চোখেতে পলক
আর আসেনা কথা মুখে।”

সমুদ্র যে গানের প্রতিটি লাইন আরভীকে উদ্দেশ্য করে গেইছে তা আরভী বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে। এভাবে বাচ্চাদের সামনে দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবে জিনিসটা বড্ড বেমানান লাগছে আরভীর কাছে। তাই আরভী সমুদ্রকে পাশ কাটিয়ে বাচ্চাদের মাঝে চলে যায়। এক বাচ্চার পেছনে দাঁড়িয়ে বাচ্চাটির গলা জড়িয়ে ধরে।

আরভীকে এভাবে পাশ কাটিয়ে যেতে দেখে সমুদ্র সামান্য হেসে নিজের গান চালিয়ে যেতে থাকে-

“তার চলে যাওয়া
ফিরে একটু চাওয়া
এই বুকেতে ঝড় তুলে যায়।
যার ছবি এই মন এঁকে যায়
যার কথা ভেবে দিন কেটে যায়
সে কি জানে শুধু তাকে
ভালোবাসে আমার হৃদয়।
যার ছবি এই মন এঁকে যায়।”

সমুদ্র গান গাইতে গাইতে আবার আরভীর দিকে এগিয়ে যায়। আরভীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে আর গাইতে থাকে-

বলব কবে তাকে ডেকে
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
করেছে পাগল আমাকে
ওগো তোমার ওই মিষ্টি হাসি।”

শেষ লাইনটি গেয়ে সমুদ্র আরভীর সামনে দাঁড়িয়ে বুকের বা’পাশে হাতে রাখে। পেছনের দিকে যেতে যেতে গাইতে থাকে-

“ও হো হো বলব কবে তাকে ডেকে
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
করেছে পাগল আমাকে
ওগো তোমার ওই মিষ্টি হাসি।”

এইটুকু গেয়ে সমুদ্র সেই মেয়েটির সামনে হাটু গেড়ে বসে, যে একটু আগে জিজ্ঞেস করেছিলো সমুদ্র গান গাইতে জানে কিনা। সমুদ্র মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর গানের বাকি লাইন টুকু গেয়ে উঠে-

“কবে জানবে তুমি
কবে বলব আমি
কেউ আছে গো তোমার আশায়।
যার ছবি এই মন এঁকে যায়
যার কথা ভেবে দিন কেটে যায়
সে কি জানে শুধু তাকে
ভালোবাসে আমার হৃদয়।”

সমুদ্রের গান শেষ হলে সবাই একসাথে করতালি দিতে থাকে। বাচ্চারা বেশ খুশি হয়েছে সমুদ্রের গান শুনে। আর খুশি হবে নাই-বা কেন? সমুদ্র যে চমৎকার গান গাইতে জানে।

“তুমি তো ভালো গান জানো। আরেকটা শুনাও না প্লিজ।”

বাচ্চারা সবাই বায়না ধরলো আরো একটি গান শোনার জন্য। কিন্তু আরভী সবাইকে বাধা দিয়ে বললো,”তোমরা খাবারের ওখানে যাও। একটু পরেই খাবার দিবে। খাওয়া শেষ করে আমরা আবার গান শুনবো কেমন?”

আরভীর কথায় বাচ্চারা প্রথমে আপত্তি জানালেও শেষে আরভী অনেক ভাবে বুঝিয়ে তাদের এখান থেকে পাঠিয়ে দেয়।
সমুদ্র ঠিক বুঝলো না আরভী কেন হুট করে সবাইকে এখান থেকে পাঠিয়ে দিয়েছে। আরভীর দিকে প্রশ্নাত্মক চাহনি নিক্ষেপ করতেই আরভী হেসে বললো,”আপনাকে সারপ্রাইজ দিবো বলেছিলাম না? সময় এসে গেছে আপনাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার।”

সমুদ্র স্হির চোখে তাকায় আরভীর দিকে। এতো ভালো ব্যবহার, এতো আয়োজন যে সমুদ্রের জন্য না তা সমুদ্র জানে। তবু মনের মধ্যে কোথাও একটা আশার প্রদীপ জ্বলছে। কি সাক্ষ্যে এই আশার প্রদীপ তা জানে না সমুদ্র। শুধু মন বলছে কর না আশা, সত্যি হবে হয়তো।

এরই মাঝে দুজনের মাঝে উপস্থিত হয় আরো একজন লোক। যে কিনা আরভীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটা সমুদ্রের মোটেও পছন্দ হলো না। আরভীর পাশে অন্য কেউ দাঁড়িয়ে আছে তা মনের সহ্য হলো না। কিন্তু সমুদ্র তখনও জানতো না আরভী এতো বড় এক সারপ্রাইজ দিবে সমুদ্রকে। যে সারপ্রাইজের কথা জেনে হয়তো বাক শূন্য হয়ে যাবে সে।

অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সেই মূহুর্ত চলে আসে যখন আরভী সমুদ্রকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বলতে শুরু করে।

আরভী সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে সমুদ্রকে কটাক্ষ করে বলে,”মিস্টার সমুদ্র মুনতাসিন, মিট মাই ফিয়ন্সি পিয়াস। আর পিয়াস, সমুদ্রের কথা তো তোমাকে আগেই জানিয়েছি আমি।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here