তোমার_হতে_চাই part : 6 writer : Mohona .

0
126

#তোমার_হতে_চাই
part : 6
writer : Mohona

.

কনিকা : তোমরাই বলো।
প্রহর : ফুপ্পি… তোমরা সবাই ঠিক। কেউ ভুল নয়। কিন্তু কারসাথে আপিকে বেধে দিবে বলো তো? আপুর যোগ্য কাউকে কোথায় কিভাবে খুজে পাবে? কে আপির কাধে ভরসার হাত রাখবে? কার ওপর আপি বিশ্বাস করতে পারবো? আমরা বিশ্বাস করতে পারবো? কোথায় পাবো তাকে যাকে আপি ভালোবাসতে পারবে? কে আপির জীবনটা আগের মতো রঙ্গীন করতে পারবে বলো তো? আমরা সবাই তো একবার ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছিলাম। যেটার ফল আমরা সবাই ভোগ করছি। সাহসে কুলাচ্ছেনা আবারো একই ভুল করার। তবে হ্যা চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু সবথেকে বড় কথা আপি রাজী হবে কিনা?

.

আমেরিকাতে…
ইশিতা : এতো দেখি অদ্ভুত ক্যারেক্টার!
নিলা : অদ্ভুত ছিলো। কিন্তু যতোদিন ছিলো এই চৌধুরী বাড়িতে আনন্দ ছিলো। উৎসব ছিলো। সবাই ভীষন হাসিখুশি থাকতো । কিন্তু চলে গেলো আর সাথে করে সবসুখ নিয়ে চলে গেলো। এই যে ছোট কাকিমাকে দেখছো… সে কিন্তু এমন ছিলোনা । ভীষন প্রানবন্ত ছিলো।
ইশিতা : যদি রাগ না করো তবে ১টা কথা বলি বড়ভাবি?
নিলা : হামম বলো।
ইশিতা : মেরিন ভাবির কথা তো বললে যে পরাকীয়ার দোষ করেছিলো। তাইনা?
নিলা : হামম।
ইশিতা : পরকীয়াটা দোষের ছিলো। কিন্তু পরকীয়ার কারনটা কি দোষের ছিলো? তুমিই বললে ওদের দুজনকে কেমন জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছিলো। ওরা দুজনই হয়তো তবে বিয়েতে অখুশী ছিলো। তাহলে ওদের জীবনে নতুন করে আসাটা কি অস্বাভাবিক? মেরিন ভাবিও তো মানুষ ছিলো। তাইনা?
নীলিমা : মানুষ ছিলো । ঠিক। কি বললে নতুন করে ভালোবাসা কি ভুল কিনা? না ভুল নয়। কিন্তু বিয়ের পর অন্যকাউকে ভালোবাসা কোনোক্রমেই ঠিক না।
ইশিতা : সরি ছোট কাকিমা । কিন্তু… ওদের সম্পর্কটার কথাও একবার ভাবো । নীড় ভাইয়াও তো ভালোবাসেনি তাকে।
নীলিমা : বেসেছিলো আমার ছেলে ভালো। যথেষ্ট সম্মানও দিয়েছে ওকে। কিন্তু ওর দোষ ও কখনো নিজের ভালোবাসাটাকে প্রকাশ করেনি। আর ১টা স্ত্রীর উচিত সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা। ও সেই চেষ্টাটা করেনি। কোনোদিনো করেনি । শেষবারের মতো ওকে যখন প্রশ্ন করেছিলাম তখনও ও নীড়ের সাথে মানিয়ে নেয়ার , ভালোবাসার কথা বলেনি। নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতাম ওকে। মানলাম ওর পক্ষে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিলানা। ফাইন। ও আমাকে বিশ্বাস করে বলতে পারতো। কেনো এই পরিবারের বদনাম করলো?
নিলা : কাকিমা… আমরা কি কেউ বিশ্বাস করতাম যে ও অন্যকাউকে ভালোবাসে? আমরা তো ভাবতাম ও কেব বিয়েটা ভাঙার জন্যই এসব বলছে। তাইনা? কাকিমা ভাগ্যটা পরিহাস করেছে আমাদের সাথে। নির্মম পরিহাস।

.

ক্যাম্পিং এ…
নীড় মেরিনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
মেরিন : একি… কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে ক্ষীরবাদুর?
নীড় কিছু না বলে হেটেই যাচ্ছে।
মেরিন : আমার লাগছে ক্ষীরবাদুর।
নীড় থেমে গেলো। মেরিনকে কাধে তুলে নিলো।
মেরিন : আরে ক্ষেপলে নাকি? নামাও আমাকে।
নীড় : এখন তো লাগছেনা। তাহলে সমস্যাটা কি?
মেরিন : আশ্চর্য মানুষ তো তুমি।
নীড় : হামম আমি আশ্চর্য ।
একটু দূর গিয়ে নীড় মেরিনকে একটা দোলনায় বসালো। লতাপাতা দিয়ে সাজানো।
মেরিন : দোলনা! এখানে দোলনা কোথায় থেকে এলো?
নীড় : আমি বানিয়েছি।
মেরিন : তুমি বানিয়েছো!
নীড় : হামম।
মেরিন : কিন্তু কেনো?
নীড় : তোমাক পছন্দ বলে।
মেরিনকে বসিয়ে নীড় দোল দিতে লাগলো।
নীড় : তোমাকে এখানে কেনো নিয়ে এলাম জানো?
মেরিন : উহু…
নীড় : তোমার সাথে কিছু কথা শেয়ার করতে।
মেরিন : কি কথা?
নীড় : একি দোলনা থামােলে কেনো পা দিয়ে ?
মেরিন : তুমিইনা বললে কথা বলতে চাও।
নীড় আবারো দোল দিতে লাগলো।
নীড় : হামম। চাই। তুমি দোল খেতে খেতে আমার কথাগুলো শুনবে। মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
মেরিন : হামম।
নীড় : আমাদের দেখা হয়েছিলো সেই ২০০১ এ । তাইনা?
মেরিন : হামম।
নীড় : আমি যখন মেডিকেলে চান্স। পেলাম কলেজ শেষ করলাম তবুও কিন্তু প্রায়ই আমাদের দেখা হতো। প্রকৃতপক্ষে ঝগড়া হতো। কখনো আমি কলেজের বাহিরে যেতাম আবার তুমি কখনো মেডিকেল যেতে। তাইনা?
মেরিন : হামম। সেগুলো কি ভোলার?
নীড় : তোমার কলেজ শেষ হলো। তবুও আমাদের দেখা-ঝগড়া কিন্তু শেষ হয়নি। চলেছেই।
মেরিন : হামম। হঠাৎ স্মৃতির পাতা উল্টাচ্ছো যে?
নীড় : কারন আছে। স্যারের ফেয়ারওয়েলের জন্য আবার কলেজে পা রাখলাম । সেই ৭দিনের মধ্যে একদিন… আমি তোমাকে কিস করি…
মেরিন ঘটনাটা কল্পনা করলো।
নীড় : সেটা আমার জীবনে প্রথমবার ছিলো। জানো আমি যতো রাগই করতাম বা যাই করতাম কখনো কারো সাথে এমন করিনি। তুমিই ছিলে প্রথম আর তুমিই ছিলে শেষ । তু্মি যথেষ্ট সুন্দরী। মাঝেমাঝে চোখ ফেরানো অসম্ভব হয়ে ওঠে। কিন্তু তোমাকে রূপ দিয়ে বিচার করতে ভালো লাগেনা। তোমার সবটাই আমার ভালো লাগে। সব মানে সব। কােনো মেয়ের নূন্যতম কাছে আমার যেতে ইচ্ছা করেনা। কোনোদিন করেওনি। কিন্ত তোমার কাছে যেতে বরাবরই ভালো লাগতো। খুব। বিশ্বাস করো আমাদের বিয়ের পর আমার অন্যরকম ভালোলাগা ছিলো । অন্যকাউকে নিজের স্ত্রী হিসেবে আমি কাউকেই মেনে নিতে পারতামনা। বিশ্বাস করো। তখন কারনটা জানতামনা । যখন কারনটা জানলাম , বুঝলাম তখন ইগোর , জেদের , বোকামোর কাছে অলরেডি হেরে গিয়েছিলাম।
নীড় এবার দোলনা থামালো। নীড় সামনে এলো । মেরিনের সামনে এসে বসলো হাটুগেরে। মেরিনের হাত নিজের হাতে নিলো। মেরিনের হাত ঘেমে ভিজে আছে। বুঝলো মেরিন ভীষন নার্ভাস।
নীড় : আই লাভ ইউ।
মেরিনের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো। তবে তা নিচে পরার আগে নীড় হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।
নীড় : আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো। খুব ভালোবাসো।
মেরিন উঠে দারালো। চুপচাপ এগিয়ে যেতে লাগলো। নীড় মেরিনের কাধে হাত রাখলো। মেরিন নীড়ের হাত সরালো। নীড় মেরিনকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
নীড় : চলোনা আমাদের ভালোবাসাকে পূর্নতা দেই।
মেরিন : ছারো আমাকে।
নীড় : না… আগে আমার কথার জবাব দাও।
মেরিন : আই সেইড লিভ।
নীড় : না…
মেরিন : ছারতে বলছি ছারো নীড়…
নীড় এবার ছেরে দিলো।
মেরিন : তোমার এতোবড় অসভ্যতামোর দায়ী আসলে তুমি নও। আমি।
নীড় : অসভ্যতামো?
মেরিন : হ্যা অসভ্যতামো। যেটা করেছো সেটা অসভ্যতামো। কোনো মেয়েকে তার অনুমতি ছারা টাচ করা যায়না ।
নীড় : আমি কি অন্যকেউ ?
মেরিন : কে তুমি আমার?
নীড় : আমি তোমার স… ক্ষীরবাদুর।
মেরিন : তুমি আমার কেউ না। কোনো সম্পর্ক নেই আমাদের এখন।
নীড় : কোনো সম্পর্ক নেই?
মেরিন : না নেই।
নীড় : বেশ তবে চলো সম্পর্ক গরি। চলো বিয়ে করে নেই।
মেরিন : হ্যাহ… ধর্ম কি তোমার আমার? হিন্দু , বৌদ্ধ নাকি খ্রিষ্টান?
নীড় : এসব কেনো বলছো বলো তো?
মেরিন : কারন আমরা মুসলিম আর এটা বাস্তব জীবন। হলিউড-বলিউডের কোনো ফিল্ম না। এখানে চাইলেই সব হয়না মিস্টার নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন। কথাটা মাথায় রেখো। ইউ আর কমিটেড নাও। হিয়ার জীবন তোমার জুরতে চলেছে। নিজেও ভালো থেকো আর মেয়েটাকেও ভালো রেখো।
বলেই মেরিন ছুটে চলে গেলে। চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পরছে।

.

মেরিন সবকিছু গোছগাছ করছে। আর চোখের পানি মুচছে বারবার।
মেরিন : কাল সকাল হতেই চলে যাবো। আর কোনোক্রমেই থাকা সম্ভবনা। এই ল’স্কুল থেকে অন্যকোনো ল’স্কুলে চলে যাবো । ফ্ল্যাটটাও ছেরে দিবো। একি… সাদা শার্টটা কোথায়?
মেরিন ব্যাগগুলো ঘাটলো। কিন্ত কোথাও পেলোনা ।
মেরিন : কি করবো এখন আমি? কোথায় পাবো?
সুইটি : হানি… হানি ।
হানি : ওয়াও হুয়াইট শার্ট! গিফ্ট ফর মি?
সুইট : নো। মেরিনের টেন্টে পেলাম । বোধহয় ভুল করে কারো এই শার্টটা ওর পোশাকটা চলে গিয়েছো।
হানি : যাক বাঁচালে আমায়।
সুইটি : এটা তোমার শার্ট?
হানি : আরেনা । এতোবড় শার্ট আমার কেনো হবে? আমি বলছি যে যদি মেরিন দেখতো অন্যকারো শার্ট ওর কাছে তাহলে আমাকে শেষ করে দিতো।
মেরিন : হানি… হানি…
মেরিন কন্ঠ শুনে হানি শার্টটা নিজের পেছনে লুকালো।
মেরিন : তোমরা দুজনই আছো দেখছি । ভালোই হলো। সুইটি তুমি কি আমার টেন্টে চিপস রাখতে গিয়েছিলে?
সুইটি : হামম।
মেরিন : তুমি কি ১টা সাদা শার্ট দেখেছো? আসলে ওটা আমার জন্য বেশ লাকি। তাই সবসময় ক্যারি করি। অনেকদিন ধরে আছে। দেখেছো?
হানি :এটাই কি সেটা?
মেরিন : হামম। থ্যাংকস হানি।
সুইটি। : সরি আসলে আমি ভেবেছিলাম অন্যকারোটা তোমার কাছে চলে গিয়েছে। তাই আমি…
মেরিন : ইটস ওকে।
নীড় এই ঘটনাটা দেখলো।
নীড় : শার্টটাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কোথায় যেনো দেখেছি? যদি আমি খুব বেশি ভুল না হই তবে এটা আমার শার্ট । যেটা আমি সেইরাতে পরেছিলাম। আমার এই শার্টটাকে ও আজও আগলে রেখেছে! ও নিয়ে এসেছিলো শার্টটাকে। আজও নিজের কাছে রেখেছে যেমন করে আমি ওর শাড়িটাকে… কেনো তবে এতো বাধা ! কেনো এতো বিধিনিষেধ?

.

রাত ১টা…
সবাই ঘুম। নীড় হুট করে মেরিনের টেন্টে ঢুকে গেলো। দেখলো ওর শার্টটা বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে। মেরিন ওকে দেখে চোখের পানি মুছে নিলো।
মেরিন : ততুমি… চচ…
কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গিয়েছে। কথা বলতেই কষ্ট হচ্ছে।
মেরিন : চচলে যাও। চলে যাও। চলে যাও।
বলেই মেরিন কাঁদতে লাগলো। নীড় আর কিছু না ভেবে গিয়ে মেরিনের ঠোঁটজোরা দখল করে নিলো। মেরিন যতোই নীড়কে সরাতে চাইলো লাভ হলোনা। একটু পর্যায়ে মেরিন বুঝলো যে নীড়ও কাঁদছে। একটা পর্যায়ে নীড় মেরিনকে ছারলো। কিছুক্ষন অপলক তাকিয়ে রইলো। এরপর আবার মেরিনের ঠোঁট জোরা দখল করলো। মেরিনের বাধা যেনো নীড়ের শক্তি হয়ে উঠলো। ভাগ্যের খেলা আর প্রকৃতির নিয়মের কাছে দুজন আরো একবার হেরে গেলো।

.

সকালে…
নীড়ের ঘুম ভাঙলো। চোখ মেলে মেরিনকে আর পেলোনা। দ্রুত উঠে বসলো। দেখলো মেরিন নেই। ওর ব্যাগগুলোও নেই । কোনো রকমে শার্টটা গায়ে দিয়ে দ্রুত বের হলো।
নীড় : লালঝুটি কাকাতুয়া। লালঝুটি কাকাতুয়া।
নীড় অস্থির হয়ে মেরিনকে খুজতে লাগলো।
নীড় :হানি হানি … কা… মেরিন কোথায়?
হানি : ওতো চলে গিয়েছে।
নীড় : চলে গিয়েছে? ককোথায়?
হানি : ওর বাসায়।
নীড় মনেমনে : কি করে ফেলেছি আমি? কেনো করে ফেললাম? ও যদি নিজের কোনো ক্ষতি করে দেয়? না না না… আমাকে যেতে হবে। আমাকে এখনই যেতে হবে।

.

সুগভীর পানির দিকে দেখছে মেরিন ।
মেরিন : কি অদ্ভুত নিয়তি আমার… যার ভালোবাসা পেয়ে সবথেকে সুখী হওয়ার কথা তার ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে অপবিত্র মনে হচ্ছে। প্রথমদিন ওকে দেখার পরই যদি ফিরে যেতাম… তাহলে আজকে এই দুর্গতি হতোনা । জানি আত্মহত্যা মহাপাপ । কিন্তু আমার কাছে অন্যকোনো পথ খোলা নেই। সরি মামা-বাবা-আম্মু।
বলেই মেরিন পানিতে ঝাপ মারতে নিলে কোথায় থেকে যেনো নিহাল এসে ওকে ধরে ফেলল।
মেরিন : বববাবা…
নিহাল : আমাকে বাবা ডাকবেনা । আমি তোমার বাবা নই। মানবতার খাতিরে বাঁচালাম। গট ইট।? কি মনে করো নিজেকে শুনি? ভালো স্ত্রী না হলেও এতোদিন জানতাম , ভাবতাম যে তুমি অন্তত ভালো মেয়ে। আজকে সেই ধারনাটাও পাল্টে গেলো। এখন তুমি তোমার বাবার কাছে যাবে। নাে নো তোমাক একা ছারা যাবেনা। তোমার বাবা-মামাকে ফোন করি । তারা এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।
নিহালের এই কথাগুলোর মধ্যে মেরিন স্নেহ খুজে পেলো । হাসছে মেরিন।
নিহাল : এই মেয়ে তুমি হাসছো কেনো?
মেরিন : কারন তুমি আমার বাবা টু।
নিহাল : বলেছিনা আমাকে বাবা বলে ডাকবেনা । তোমার বাবার নাম্বার বলো।
মেরিন : বলতে পারি । তবে আমার ১টা শর্ত আছে।
নিহাল :আমাকে তুমি শর্ত দিচ্ছো?
মেরিন : হামম । না হলে দিলাম ঝাপ।
নিহাল : এই মেয়ে পাগলামি বন্ধ করো। তুমি দেখছি একটুখানিও পাল্টাওনি।
মেরিন : হিহি।
নিহাল : কি শর্ত বলো। বলে উদ্ধার করো।
মেরিন : আমার শর্ত এই যে আজকে আমরা বাবামেয়ে সারাদিন ঘুরবো। খুব ইনজয় করবো।
নিহাল ভ্রু কুচকে তাকালো।
নিহাল : বলেছিনা বাবা ডাকতে না।
মেরিন : আমি তো ডাকবোই । শোনা না শোনা তোমার ব্যাপার।যাই হোক শর্তে রাজী নাকি না ? না হলে দিলাম ঝাপ।
নিহাল : এই দারাও। একদম দারাও । তুমি কি বলো তো?
মেরিন : আমি লা… মেরিন বন্যা খান।
নিহাল : মেরিন বন্যা খান!
মেরিন : হামম মেরিন বন্যা খান।
নিহাল : তুমি এখনো মেরিন বন্যা খান কেনো?
মেরিন : তো কি থাকবো? মাথাটা পুরোই গিয়েছে তোমার।
নিহাল মনেমনে : বিয়ে হয়নি? নাকি বিয়ের প্রয়োজনই পরেনি!
মেরিন : এখন বলো তো রাজি কিনা?
নিহাল : হামম।
মেরিন : প্রমিস?
নিহাল : আগে তুমি প্রমিস করো যে শর্ত মানলে তুমি কখনো সুইসাইড করবেনা?
মেরিন : প্রমিস। নাও ইউর টার্ন।
নিহাল : প্রমিস।
মেরিন নিহালের হাত ধরে গোলগোল ঘুরতে লাগলো।
নিহাল : আরে আরে করেকি করেকি। ছারো । পরে যাবোতো দুজনই।
মেরিন : পরবেনা গো বাবা পরবেনা।
নিহাল : আজব পাগলের পাল্লায় পরলাম তো।
মেরিন খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
নিহাল মনেমনে : এতো নিষ্পাপ যে বাচ্চার হাসি সে বাচ্চা অমন করে আমার ছেলেকে ধোকা কি করে দিতে পারে!
মেরিন : কি ভাবছো এখন?
নিহাল : কিছুনা।
মেরিন : চলো ফাদার ডিয়ার আমরা ঘুরি।
নিহাল : আবারো গোলগোল ঘুরবো!
মেরিন : আরে নারে বাবা টু।

.

নীড় উন্মাদের মতো মেরিনকে খুজছে। অদ্ভুত ভয় মনের মধ্যে মেরিন নিজের কোনো ক্ষতি না করে ফেলে। দিশেহারা হয়ে গিয়েছে।
চিনি: মিমি…
মেরিন : ও ডিয়ার লাভ। উম্মাহ।
চিনি : উম্মাহ।
নিহাল একবার চিনিকে দেখছে একবার মেরিনকে দেখছে।
নিহাল মনেমনে : এই বাচ্চাটাকে একদম ছোটবেলার ওর মতো । এটা আমার নাতনী নয়তো! হতে পারে। আর এই কারনেই হয়তো মেরিন আর বিয়ে করেনি।
চিনি : মিমি এটা কে?
মেরিন : বাবা টু ।
চিনি : তাহলে আমার কি হয়?
মেরিন : দাদুভাই।
নিহাল যেনো আরো পাকা প্রমান পেলো ।
নিহাল মনেমনে : দাদুভাই বলল। তারমানে আমার ধারনাই ঠিক।
মেরিন : এখনো বাসায় ফিরোনি কেনো?
চিনি : ফিরছিলাম তো। চমা খেতে ইচ্ছা করলো তো তাই ড্রাইভার আংকেলকে বললাম গাড়ি থামাতে।
মেরিন : এখন চুপচাপ বাসায় যাবে।
চিনি : তুমি চলোনা।
মেরিন : যাও আমি আসছি।
চিনি চলে গেলো।
নিহাল : ওর নাম কি বয়স কতো?
মেরিন : নাম চিনি বয়স সাড়ে চার। কেনো?
নিহাল : ও আমার নাতনী। আর তাই তুমি বিয়ে করোনি। তাইনা?
মেরিন : আল্লাহ… তোমরা কি বলো তো? ১মিনিট।
মেরিন ব্রাউনীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুকে দেখালো ওদের তিনজনের ছবি।
মেরিন : তোমরা না টু মাচ।
নিহাল : মানুষ মাত্রই ভুল।
মেরিন : হামম। মানুষ মাত্রই ভুল। যাই হোক দুপুরের খাওয়া শেষ। এখন তোমার দুপুরের মেডিসিন।
নিহাল : মেডিসিন নেই।
মেরিন : বললেই হলো মেডিসিন নেই? দুপুরে তোমার হার্টের মেডিসিন ছিলো।
নিহাল : আমি বললাম যে আমার কাছে এখন মেডিসিন নেই।
মেরিন : নাম বলো কিনে আনছি।
নিহাল নাম বলল।

.

সন্ধ্যা ৭টা..
নিহাল আর মেরিন কথা বলছে। দিনটা আজকে মেরিনের মনের মতোই কেটেছে। সেই স্নেহ আবার পেলো নিহালের কাছ থেকে। নিহালও যেনো সব ভুলে গিয়েছে। ওর মনে হচ্ছে এটা তো সেই ছোট্ট নিষ্পাপ মেরিনটাই। ভীষন মিষ্টি আর দুষ্টু।
মেরিন : জানো বাবা টু তোমাকে লাফিং বুডঢা লাগছে।
বলে নিজেই হাহা করে হাসতে লাগলো। নিহালও হাহা করে হাসতে লাগলো।
মেরিন : তুমি ১টা স্যান্টাক্লস বাবা।
নিহাল : আর তুমি ১টা রসগোল্লা বাচ্চা। আমার সোনা মেয়ে।
তখন কোনোক্রমে নীড় হাজির হলো।
নীড় : কি করবো ? কোথায় যা…
নীড় মেরিকে দেখতে পেলো। ওর সাথে কেউ আছে সেটা দেখতে পাচ্ছে কিন্তু কে সেটা না। কেবল দেখলো দুজন হাহা করে হাসছে। নীড়ের মাথায় রাগ উঠে গেলো। কারন সারাটাদিন ও মেরিনকে খুজেছে কি করবে কি না করবে ভেবে। সারাটাদিন ওর কি গিয়েছে সেটা কেবল ওই জানে। সকাল থেকে এক ফোটা পানি পর্যন্ত মুখে দেয়নি। উন্মাদের মতো খুজেছে। অথচ মেরিন এখানে আনন্দেই আছে।
নীড় : আমার সারাটাদিন কি গেলো… আর তুমি…
নীড় রেগে আগুন হয়ে মেরিনের সামনে গেলো। ওকে দার করিয়ে ঠাস করে ১টা থাপ্পর মারলো।
নীড় : আই জাস্ট হেইট ইউ। গট ইট? আই জাস্ট হেইট ইউ…
নিহাল : নীড় তুমি এখানে…
কন্ঠ শুনে অবাক হয়ে পেছনে ঘুরলো নীড়।
নীড় : বাবা তুমি!
নিহাল : হ্যা আমি।
নীড় দ্রুত পিছে ঘুরলো। কিন্তু মেরিন নেই।

.

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here