ছায়া মানব ২ ৩০.

0
108

ছায়া মানব ২

৩০.
অহনার জ্ঞান ফিরতেই সে চারিদিকে আবছা দেখতে পেল। অন্ধকারে সবকিছু ছেয়ে গেছে। আচমকা কিছু পড়ে যাওয়ার বিকট শব্দ পেল। ভয়ে আঁতকে ওঠে। তুখোড় দৃষ্টি নিক্ষেপ করেও কাউকে দেখতে পেল না। তার হাত-পা বাঁধা নেই। আশেপাশেও নীরবতা বেশ। কে তাকে এখানে এনেছে? কার কী স্বার্থ তাকে নিয়ে? তাও আবার ক্ষতি না করে এভাবে ছেড়ে দিল। অহনা দ্বিধান্বিত! না! এই মুহূর্তে শুধু পালানোর চেষ্টা করতে হবে। বারতি ভাবনা মানেই সময় নষ্ট করা। অহনা হাতড়ে বেড়ালো কিছু একটা, যেটা অন্তত অন্ধকারে সাহায্য করবে। অমাবস্যা হ‌ওয়ায় রাতের নিজস্ব কোনো আলো নেই। আচমকা সে একপাশে আসতেই খুব শীত অনুভব করল। হঠাৎ করেই একটা দরজা খুলে যায়। অহনার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। তুষারপাত দেখে তার চক্ষু চড়কগাছ। এই দেশেতো তুষারপাত দূরে থাক, শীতের তাপটাও খুব কম। অথচ এখানে তুষার পড়ছে। ওপরটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আকাশ আছে কিনা তাও সন্দেহ জাগে। দাপটের সাথে কিছুটা বাতাস‌ও ব‌ইতে থাকে। প্রচন্ড শীত‌ও লাগে অহনার। একটু পরেই আলোর পরিমাণ কিছুটা বেড়ে যায়। অহনা তুষারের ছোঁয়া অনুভব করে। ইন্টারনেটে তুষারপাত নিয়ে হাজার ভিডিও। তা দেখেই মনে মনে সবসময় বাসনা ছিল, কখনো তুষারের সংস্পর্শে আসুক। সে জানে, এটা অনেকটাই অসম্ভব। তবুও চাইত। নিজ চোখে তুষারপাত দেখে অহনার আনন্দের সীমা পরিসীমা নেই। সে পালানোর কথা ভুলে যায়। দুহাত তুলে নৃত্য করছে সে। ভুলে যায় তার ফেরা, ভুলে যায় সব। এই জাদুর জগতেই ভীষণ আনন্দ লাগছে। পাহাড়ের মতো ঢালু দেখে আরো আনন্দ পায়। তার চুড়ায় উঠে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই মুহুর্তে আর শীত করছে না। প্রচন্ড আনন্দে সব ভুলে গেছে। এতদিনের স্বপ্ন আজ পূরণ হলো। এক পর্যায়ে ভাবল,‘এটা স্বপ্ন! বাস্তবে অসম্ভব।’ একটু পরেই ঘুম ভেঙ্গে যাবে এমনটা ভেবে খানিকটা কষ্ট লাগল। মনটাও খারাপ হয়ে যায়। তুষারের পতিত অবস্থার দিকে তাকিয়ে সে চোখ বন্ধ করল। প্রচন্ড শীতে দাঁত-মুখ খিঁচে আসে। আলোর পরিমাণ আরো কিছুটা বেড়ে গেল। অহনা চোখ খুলেই দেখতে পেল তার সম্মুখে একটি দরজা। সব কেমন সাদায় সাদায় পরিপূর্ণ! অহনা দরজা খুলতেই হাজার জোনাকি পূর্ণিমার চেয়েও বেশি আলো ছড়িয়ে দেয়। অহনা আনন্দে চিৎকার করে ওঠল‌। ভীষণ ভালো লাগছে জোনাকিদের দেখে। আত্মহারা সে। ছোট ছোট জোনাকিদের নিজের কাছে ডাকে পরম যত্নে। আঙুলের ডগা ছুঁইয়ে স্পর্শ করে তাদের কোমল দেহ। খুশিতে আত্মহারা মনে সে হাসে। তার খুব ইচ্ছে ছিল, জোনাকিদের সংস্পর্শে আসা। তাও যেন পূরণ হয়ে গেল। মনে মনে এই সুন্দর স্বপ্নের জন্য কৃতজ্ঞতা জানায় সে। কিন্তু কাকে জানাচ্ছে, বুঝতে পারল না। ঠোঁট উল্টে জোনাকির পিছু নেয়। জোনাকির সুক্ষ্ম আলোয় আবিষ্কার করে আরেকটি দরজা। অহনা আরো উত্তেজনা নিয়ে সেই দরজা পার হলো। সবটা তার কাছে রুপকথার মতো মনে হলো। রুপকথার চাঁদের বুড়ি সুতো কাটছে। কিছুটা কাছে গিয়ে দেখল, এটা কৃত্রিম। তবুও অহনার খুশি কমল না। কৃত্রিম হোক বা প্রাকৃতিক, তার খুশির কারণতো হলো। একপাশে দেখল একটা সাদা গাউন রাখা। সাদার ওপর সোনালি-রুপালি পাথর বসানো। যত্নে সেটাকে রাখা হয়েছে আলনার মতো একটা জিনিসে। অহনা আগ্রহবশত সেটা পরিধান করল। ঠিক তার মাপের হলো। অহনা এই দীর্ঘ স্বপ্নে একজন রাজকুমারী হয়ে গেল। নিজের আনন্দচিত্তে সে চারিদিকটা ছুঁয়ে দিল। রাজা, রাজ্যপাঠ তার চোখের সামনে। নানা ধরনের কৃত্রিম পশুপাখি তার চোখের সামনে। অথচ সেগুলো নড়ছে। নিজেদের কাজে যেন ব্যস্ত তারা। অহনা একটি প্রজাপতিকে ছুঁয়ে দিল। প্রজাপতিটার ডানা থেকে এক প্রকার আলো বের হচ্ছে, সোনালি-সাদা সে আলো অহনার খুব ভালো লাগল। সে প্রজাপতিকে ডাকতেই তার ডাকে সাড়া দিয়ে কাঁধে এসে বসল। অহনা আদর করল সেটিকে। তৎক্ষণাৎ একটা নাম দিল ওর ‘তিতলি’। এমন নাম নির্বাচন করে সে নিজেও খুশি। কাঁধে সাদা প্রজাপতিকে নিয়ে সে চাঁদের দিকে এগোলো। ঠিক তার কাছাকাছি আসতেই যেন উচ্চভাগে কিছু আবিষ্কার করল। সে অন্য এক জগতে পৌঁছে গেল। আকাশের বিশালতা দেখে সে বেশ অবাক। তারকারা ঝিকমিক করছে। অনেক নক্ষত্র তাকে দেখতে এসেছে যেন। নক্ষত্ররা বুঝি নির্দিষ্ট রঙে রঙিন হয়? অহনা দেখল, হাজার নক্ষত্র হাজার রঙ ধারণ করেছে। যেন সে মহাকাশে আছে। হঠাৎ করেই একটি তারা খসে পড়ে অহনার দিকে। মুহুর্তেই সেটা মিলিয়ে যায়। যেন এক প্রকার ভ্রুম ছিল। অহনার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখাটা আরো প্রসস্ত হয়। তার কল্পনা এবং স্বপ্নের রাজ্য এক হয়ে গেল। আচমকা অন্ধকার নেমে আসে। সকল ভ্রুম কেটে গিয়ে মনে হলো কেউ তার দিকে এগিয়ে আসছে। মুহুর্তেই চারিদিকে অদ্ভুত এক প্রাণী আবিষ্কার করল। ভয়ঙ্কর দেখতে তারা। ভয়ে অহনার গলা শুকিয়ে আসে। অহনা চিৎকার করতেই ভুলে যায় যেন। সাদা থানে আবৃত এই ভয়ঙ্কর প্রাণী দেখে অহনা চিৎকার করে। অথচ শব্দ কারো কানে যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই একটা শব্দ কানে এলো অহনার,
‘আই ক্যান সি ইউ, ফ্রম বিহাইন্ড!
ইউ ক্যান হিয়ার মি ইন ইউর মাইন্ড!
রান সো ফাস্ট অ্যাজ ইউ ক্যান গো!
টাইম উইল ক্যাচ ইউ বিফোর ইউ নোও!
আর ইউ অ্যাফ্রেইড অব দ্য ডার্ক?
আর ইউ স্কার্ড?
আই’ম ইউ!’
অহনার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। চিৎকার করে সে বসে পড়ে। প্রাণীগুলো হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেল। কিন্তু চারিদিকে গা ছমছমে ভাব। আচমকা এমন মিউজিক তার সহ্য হচ্ছে না। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে পড়ে‌। ঘামছে অনবরত। এক পর্যায়ে ভয়ঙ্কর এক ছায়া তার দিকে এগিয়ে আসে। তাকে দেখতে বিচ্ছিরি রকমের লাগছে। অহনা তার মুখোদর্শন করতেই ভয়ঙ্কর রকমের চিৎকার করে।
আচমকা কোথা থেকে মাহতিম এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। অহনা মাহতিমের বুকে মুখ লুকিয়ে নেয়। মাহতিম কাউকে যেন বলল,‘বন্ধ করো এসব।’
সাথে সাথেই সব আত্মারূপ ছায়াগুলো উধাও হয়ে যায়। মাহতিম অহনাকে পাঁজাকোলে করে অন্য একটি ঘরে নিয়ে যায়। সে এখনো মাহতিমের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে। কাঁদছে ভীষণ। মাহতিম ওর থেকে হাত আলগা করতে চাইলেও পারল না। অহনা শক্ত করে ধরে আছে,
‘আমাকে ছেড়ে যেও না। আমার ভয় হচ্ছে খুব। তুমি চলে গেলেই ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। প্লিজ যেও না।’

‘কিচ্ছু হবে না। এসব মিথ্যে ছিল। কোনো আত্মা আসেনি তোমার কাছে।’

সাথে সাথেই অহনা মাহতিমকে ছেড়ে দিল। চারিদিকে তাকিয়ে দেখল একটা ঘর। সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে পুরো ঘর আলোকিত করা হয়েছে। একপাশে রয়েছে দোলনা, সেটাও গোলাপের সমারোহে তৈরি, অন্যদিকে একটা সুইমিং পুল, গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো সেখানে, ঝিকমিক করছে সমস্ত জিনিস। অহনা একবার মাহতিমের দিকে তাকাল। পুনরায় তাকাল চোখ ধাঁধানো সব আসবাবপত্রের দিকে। হাজার রকমের দামি আসবাব। সবকিছুতেই আভিজাত্যের ছোঁয়া। অহনা দ্রুত উঠে দাঁড়াল,
‘ছলনা করলে আমার সাথে?’

মাহতিম চমকিত,‘ছলনা করব কেন? তোমার কি পছন্দ হয়নি এসব? সব তোমার জন্য‌ই সাজানো হয়েছে।’

‘আমার জন্য ভূত ভাড়া করে নিয়ে এসেছিলে? আর একটু হলে প্রাণটা উড়ে যেত।’

মাহতিম অহনাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করলে সে দূরে সরে যায়। মাহতিম দুই মিটার দূরত্ব রেখেই বলল,‘আমি শুধু তোমার মনের ইচ্ছাগুলো পূরণ করতে চেয়েছি। কয়েকদিন আগে যখন তোমার ঘরে গেলাম। একটা দিনলিপি আবিষ্কার করি। সেটাতে তোমার কিছু স্বপ্নের কথা উল্লেখ ছিল। আমি সেগুলোই করার চেষ্টা করেছি। তোমার ইচ্ছের প্রথম লিস্টে ছিল তুষারের সংস্পর্শে আসা। মাঝখানের একটা পয়েন্ট ছিল ভূত দেখতে চাও তুমি। তাদের সাথে গল্প করতে চাও। তাই আমি তোমার সেই ইচ্ছাগুলো পূরণ করার চেষ্টা করেছি।’

অহনা মাথায় হাত দিয়ে বলল,‘আমি মরে যেতাম আর একটু হলে। উদ্ভট কিছু স্বপ্নের কথা লিখেছি ঠিক আছে। কিন্তু এসব পূরণ হবে না ভেবে। আমি কি জানতাম সব সত্যি করে দেবে তুমি?’

‘সরি! আমি বুঝতে পারিনি। এই দেখো কানে ধরলাম।’

অহনা পূর্ণ দৃষ্টি দিল মাহতিমের দিকে। তার গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, যার ওপর নীল পাথরের কারুকাজ। তবে সাদার মধ্যে তা চিকচিক করছিল। দীর্ঘ নেত্রযুগল আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেছে, শ্যামবর্ণের মুখটা ঝিলিক দিয়ে ওঠল, সুঠাম দেহ এবং শক্তিশালী চ‌ওড়া কাঁধের দিকে তাকাতেই অহনা ঢোক গিলল। বার কয়েক মাহতিমের ঠোঁটের দিকে তাকাল। জিভ দিয়ে সে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। পরপর‌ই নিজের মাথায় নিজে আলতো করে থাপ্পর দিয়ে বলল,‘সব বাজে চিন্তা।’

‘কিছু বললে?’

অহনা বলল,‘আমি বাড়ি যাব। এখানে কে এনেছে আমাকে?’

‘আমিই এনেছি, সারপ্রাইজ দেব বলে। আমার বন্ধু আশিশ সাহায্য করেছে। এই সব সাজাতে সেই সাহায্য করল।’

‘কীভাবে সম্ভব এসব?’

‘সব সম্ভব। তোমার জন্য অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারব।’

‘অথচ তুমি রুপের পূজারী। কোনো একদিন আমার রূপ নষ্ট হয়ে গেলে আমাকেও ভুলে যাবে।’

মাহতিম অহনার কাঁধ স্পর্শ করল। অহনা তাকে দূরে ঠেলে দিতে চাইলেও মাহতিম সরলো না। সে আরো শক্ত করে অহনাকে চেপে ধরল। তাকে দোলনার কাছে নিয়ে গেল। আদুরে গলায় বলল,‘বসো!’

অহনা বসতেই মাহতিম তার হাঁটুর কাছে বসল। তার হাতদুটো বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,‘হ্যাঁ! আমি রূপের পূজারী। তবে একজনের‌। যেদিন প্রথম তোমাকে দেখি, সেদিন হয়ত অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দেখা। তুমি কথা শুনিয়ে মাঝরাস্তা থেকে চলে গেলে। আমার হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। যে চোখ দেখেছি তা আর ভুলতে পারিনি। সারারাত ভেবেছি সেই চোখের কথা। তোমার সেই মৃদু রাগান্বিত চোখ আমাকে ভেতর থেকে পঙ্গু করে দিল। তোমার ঠোঁটের স্পর্শ পেতে চাইলাম। বেহায়া মনকে শান্ত করলাম একগাদা কাজ করে। তারপর যখন জঙ্গলে দেখা পেলাম, নিজেকে খুব খুশি মনে হলো। কিন্তু তোমার অদ্ভুত ব্যবহারে কিছুটা আহত‌ও হলাম। মনে হলো, তোমাকে জয় করা যুদ্ধের চেয়ে কম কিছু নয়। সেদিন আমার নজরে পড়েছিল অস্বাভাবিক কিছু। সেটাও মানছি আমি। বৃষ্টিতে ভেজা তোমার শরীরের দিকে আমার নজর গিয়েছিল। নিজেকে বেসামাল লাগছিল। কখনো কোনো মেয়েকে এমন অবস্থায় আশা করিনি আমি। তাই কিছুটা রেগেও গেলাম। কারণ বেপরোয়া মনকে শান্ত করতে পারছিলাম না। তোমার শরীর, মন সব আমার ভালো লেগেছে। প্রথম দেখায় হয়ত রূপটাই চোখে পড়ল। পরবর্তীতে তোমার মনের ছোঁয়া পেলাম‌। পবিত্র সে ছোঁয়া। যখন‌ই তোমার কাছে যাই, আমার হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। নিজেকে উদাসীন লাগে। ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে গভীরভাবে। কিন্তু না, নিজেকে দমিয়ে রাখলাম ভালোবাসি বলে। কারণ ভালোবাসায় শুধু সুন্দর মনটাকে চাই আমি। মনটাকে জয় করতে পারলে পরশটাও আপনাআপনিই পেয়ে যাব। এখনো তুমি বলবে আমি রূপের প্রেমে পড়েছি? এটাই ঠিক। আমি তোমার রূপের প্রেমে পড়েছি। এতে ভুল কীসের? পৃথিবীতে এতো রূপের মেয়ে থাকতে শুধু তোমার রুপেই আটকালাম আমি। ক‌ই অন্য কোনো সুন্দরী মেয়েকে দেখেতো আমার চোখ আটকে যায়নি! তাকে দেখেতো হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হয়নি! সবার চোখ আলাদা। তোমাকে আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমার চোখে তুমি সুন্দর, তাই প্রেমে পড়েছি। তুমি জানো, আমি ইউরোপে ছিলাম দুই বছর। সেখানকার খৃস্টান একটা মেয়ে। নাম প্রমি ম‌ইসেস। মেয়েটা সেখানকার সবচেয়ে সুন্দরী নারী। তাকে দেখে যেকোনো পুরুষের কামুকতা জেগে ওঠে। তাকে দেখে কেউ নিজেদের সামলে রাখতে পারেনা। আমার সহপাঠী, সহপাঠী বললে ভুল হবে, আমার বন্ধু আশিশ সেই মেয়েটার সাথে রাত কাটিয়েছে। আরো অনেকে আছে। আমার তাকে ভালো লাগেনি। কারণ আমি প্রেম উপলব্ধি করিনি। সুন্দরী সে সবার কাছে হলেও আমি তার রুপে মুগ্ধ হতে পারিনি। একদিন বিকেলেই সে আমার সাথে দেখা করে। আশিশের সাথে থাকায় প্রমি ম‌ইসেস আমাকেও দেখেছে। সে এসেছিল তার প্রস্তাব নিয়ে। কিন্তু আমার তীব্র ঘৃণা হয়েছিল তাকে দেখে। কেন জানি না মেয়েটাকে নিজের কাছেও সহ্য করতে পারলাম না। তার মতো ভাবনাহীন সুন্দরী নারী দুটি ছিল না। অথচ আমার কাছে তার রুপ ভালো লাগেনি। মেয়েটা প্রথম কারো প্রত্যাখ্যান পেয়ে বেশ অবাক হয়েছিল। তাও বলবে, আমি তোমার রূপ ক্ষয়ে গেলে দূরে সরিয়ে দেব? পৃথিবীর সূচনালগ্ন হতেই পুরুষ নারীর রুপে মুগ্ধ হয়। রূপ দেখেই ভালোবাসা হয় নিরানব্বই ভাগ পুরুষ ও নারীর মধ্যে। কিন্তু এই রুপের ভালোবাসা থেকেই একসময় মনের ভালোবাসা শুরু হয়। যেটা তারা বার্ধক্য পর্যন্ত নিয়ে যায়। তখন পৃথিবীর আরো সুন্দরীর সন্ধান পেলেও তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। যার চোখে যাকে সুন্দর লাগে সেই সুন্দর রুপের অধিকারী। আমার কাছে তেমন তুমি। তোমাকেই আমার চোখে মায়াবতী মনে হয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারীটি মনে হয়। আর কাউকে কখনোই সেই স্থান দিতে পারব না। যতটা ভালবাসি তোমায়, ততটা আর কাউকে পারব না। তোমাকে ছাড়া অন্য কারো কথা কল্পনাও করতে পারিনা আমি। আমি তোমার সারাজীবনের সঙ্গী হতে চাই। আমৃত্যু ভালোবাসতে চাই। এই ভালোবাসা রূপ ক্ষয়ে গেলেও থাকবে। সত্যি বলছি, আমি তোমাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি। এই ভালোবাসা অফুরন্ত! কখনোই হারাবে না। হারিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন এলেই সেটা প্রাকৃতিক নিয়মে হবে। মৃত্যু যেটাকে বলি! কেউ রেহাই পাবে না। তুমি কি আমার কথা বুঝেছ আহি? নামটা নিজে দিলাম, ছোট করে। সত্যি করে বলবে, আমাকে ভালোবাসতে পারবে? কথা দিলাম কখনো তোমার গায়ে একটা আঁচড়‌ও লাগতে দেব না। ভালোবাসা দিয়েই মুড়িয়ে রাখব। হৃদয়ের মনিকোঠায় রাখব যতন করে। বলো, ভালোবাসবে? স্থান দেবে আমায় তোমার হৃদয়ে? যতটা ভালোবাসা দিলে তুমি নিজেকে আমার মাঝে হারিয়ে ফেলবে তার থেকেও বেশি দেব। গ্রহণ করবে? বলোনা, ঠাঁই দেবে আমাকে?’

বর্ধিতাংশ রাতেই দেব….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here