হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬৪) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
719

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬৪)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৪৯)
দরজায় কলিং বেল বাজতেই তমালিকা সিকদার গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখলেন দরজার বাহিরে হাসিমুখে তরু আর সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে আছেন। এতোদিন পর নিজের মাকে নিজের সামনে দেখামাত্র তরু ‘মা কেমন আছো তুমি?’ বাক্যটি উচ্চারণ করে তমালিকাকে জড়িয়ে ধরে। তমালিকা হাসিমুখে বললেন….

—“ওরে…ছাড়..ছাড়…পাগলী মেয়ে আমার। আমি অনেক ভালো আছি।”

তরু ওর মাকে ছেড়ে দিয়ে বললো….
—“মা…বাবা কোথায়? বাবাকে দেখছি না যে?”

—“তোর বাবার হঠাৎ জরুরী মিটিং পড়ে গিয়েছে। তাই অফিসে গিয়েছেন। এসে পড়বেন সন্ধ্যার ভিতর। জামাই বাবাজিকে দেখছি না যে! সে আসলো না?”

—“এসেছে মা। আমাদের নামিয়ে দিয়ে উনি গাড়িটা পার্কিং সাইডে রাখতে গিয়েছেন।”

সেইসময় সন্ধ্যা গাল ফুলিয়ে অভিমানের স্বরে বললো….
—“আমাকে তো কেও পাত্তাই দিচ্ছেন না। যেনো এখানে আমি নেই ই!”

সন্ধ্যার এরূপ কথা শুনে তরু আর তমালিকা দু’জনেই হেসে দিলেন। তমালিকা সন্ধ্যার সামনের গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর গাল আলতো ভাবে টেনে দিয়ে বললেন….

—“ইসস…অনেক বড় ভু*ল হয়ে গিয়েছে। আমার মিষ্টি মামনিটাকে তো আমি এতোসময় লক্ষই করি নি। আয় দেখি একটু জড়িয়ে ধরি তোকে।”

তমালিকার এরূপ কথা শুনে সন্ধ্যা সব ওর অভিমান দূরে সরিয়ে রেখে তমালিকাকে জড়িয়ে ধরলেন। এর মাঝেই পিছন থেকে কুশলের কন্ঠস্বর ভেসে আসে…..

—“শ্বাশুড়ি মা…বিয়ের পর এই প্রথম আপনার মেয়ের একমাত্র জামাই আপনাদের বাসায় এসেছে তাই এবার মেয়েকে সাইডে রেখে জামাইকে খুব ভালোভাবে আদর যত্ন করা শুরু করুন। মূলত জামাই আদর খাওয়ার জন্যই এসেছি আমি।”

তরু ঘাড় ঘুরিয়ে কুশলের দিকে তাকিয়ে ভেং*চি কাটলো। তমালিকা হাসিমুখে বললেন….

—“তা আর বলতে হয় জামাই বাবাজি! আমাদের তো কোনো ছেলে নেই। তাই তোমাকেই আমাদের নিজের ছেলে বলে করি। তোমার আদর-যত্নে বিন্দুমাত্র ত্রু*টি হয়ে দিবো না। এখন ভিতরে এসো তোমরা।”

অতঃপর ওরা তিন বাসার ভিতরে প্রবেশ করে।তমালিকা তরুকে উদ্দেশ্য করে বললেন….

—“তরু…জামাই বাবাজিকে রুমে নিয়ে যা। অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছিস তোরা। ফ্রেশ হয়ে রেস্ট কর। আমি তোদের জন্য রুমেই ঠান্ডা শরবত পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

তরুনিমা কুশলের সামনে হালকা ঝুঁকে ডান হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে হাসি মুখে বললো….

—“চলুন জামাই রাজা!”

কুশল গলা খেঁ*কড়ে হালকা কাশি দিয়ে বললো….
—“এখন নিজেকে সত্যিই রাজা বলে মনে হচ্ছে।”

ওদের এরূপ কান্ড দেখে তমালিকা আর সন্ধ্যা হাসতে থাকেন। কুশল আর তরু সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। তমালিকা সন্ধ্যাকে উদ্দেশ্য করে বললেন….

—“মিষ্টি মামনি…তুই আমায় সাথে আয়।”

সন্ধ্যা হাসিমুখে তমালিকার সাথে চলে গেলো।

লম্বাসময় পর তরুনিমা আর নিজের রুমে আসতে পারলো। বিয়ের করে এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে যাওয়ার পূর্ব মূহূর্ত পর্যন্তও প্রতিটা জিনিস যেভাবে যেই যেই স্থানে রেখে গিয়েছিলো এখন সেভাবে সেই সেই স্থানেই সেগুলো রাখা আছে। বেডের পিছনে তরুর হাস্যোজ্জ্বল একটা ছবি বিশালাকার ফ্রেমে বেঁধে টাঙিয়ে রাখাবস্থায় দেখতে পায় কুশল। কুশলের দৃষ্টি সেই ছবির উপরেই স্থির হয়। মুগ্ধ ওর সেই চাহনি। তরু বেডের অপরপ্রান্তে থাকা আলমারীর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আলমারির দুটো পাল্লা খুলতেই দেখে সেখানে এক সাড়িতে কুশলের পরিধান করার জন্য কিছু টি-শার্ট আর ট্রাউজার রাখা আছে। আরেকপ্রান্তে তরুর পরিধান করার জন্য জামা-কাপড়গুলো রাখা আছে। তরু ওর ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে কুশলের জন্য একসেট কাপড় বের করে কুশলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে কাপড়গুলো ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো….

—“দেখেছেন মা আপনার পরিধান করার জন্য নতুন জামা-কাপড় ও কিনে আলমারীতে গুছিয়ে রেখেছেন। আসার সময় তো তাড়াহুড়োর বশে আপনার পরিধানের জন্য কোনো কাপড় নেওয়ার কথা স্মরণ ই ছিলো না আমার। এখন ভাবছিলাম আপনি ফ্রেশ হয়ে কি পড়বেন! মা আমার সেই চিন্তা দূর করে দিলেন।”

কুশল তরুর দিকে তাকিয়ে ওর হাত থেকে কাপড়গুলো নিয়ে একটু ভাবের স্বরে বললো……
—“দেখতে হবে তো শ্বাশুড়ি মা টা কার!”

তরু ভেং*চি কে*টে বললো…
—“সবসময় নিজের গুণ-গান গাওয়া। মানে একটু সুযোগ পেলেই নিজের ঢোল নিজে পি*টা*নো*তে মিস করবেন না৷ শুনে রাখুন তিনি আপনার শ্বাশুড়ি মা হওয়ার আগে আমার মা হন। তাই এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ক্রেডিট শুধু আমার।”

কুশল কিছুসময় তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে মুখে কিছু না বলে টুপ করে ওর গালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে যায়। কুশলের আকস্মিক এমন কাজে তরু পুরো থ হয়ে যায়। পরক্ষণেই লজ্জায় তরুর গাল হালকা লাল বর্ণ ধারণ করে। ঠোঁটে লজ্জার হাসির রেখা ফুটিয়ে গালের সেই স্থানে হাত রেখে বললো….

—“অ*স*ভ্য কোথাকার।”

তরু ওর রুমের আসবাবপত্র গুলো আলতো হাতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে সেইসময় কুশল ওয়াশরুমের দরজা হালকা খুলে তরুকে বললো….

—“তরুনিমা…তোয়ালে টা দাও তো। তোয়ালে আনতে ভুলে গিয়েছি।”

কুশলের এরূপ কথায় তরু কিছুটা অবাক হয়। ভ্রু কুঁচকে চিন্তা করে…
—“ওয়াশরুমে তো একটা এক্সট্রা তোয়ালে থাকার কথা। মা তো সবসময় রাখেন। আজ হয়তো রাখতে ভুলে গিয়েছেন!”

এই ভেবে তরু আলমারী খুলে একটা তোয়ালে বের করে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করে ডান হাত বাড়িয়ে তোয়ালেটা এগিয়ে দেয়। কুশল তোয়ালে সমেত তরুর হাত ধরে হ্য*চ*কা টান দিয়ে ওকে ওয়াশরুমের ভিতরে এনে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। কুশলের আকস্মিক এমন কাজে তরু কিছু ভ*য় পেয়ে যায়। চোখ-মুখ খিঁ*চে বন্ধ করে রেখেছে সে। কুশল মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তরুর ভী*ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। তরুর সামনের কিছু চুল ওর মুখের উপর এসে পড়েছে। কুশল হালকা ফু দিয়ে সেই চুলগুলো সরিয়ে দেয়। তরু পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই দেখে সে কুশলের বাহুডোরে ব*ন্দী হয়ে আছে। তরু কুশলের চোখের দিকে তাকায় কুশলের এই চাহনী যেনো ওকে মে*রে*ই ফেলবে। তরুর হার্ট স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেক দ্রুত বিট করছে। কুশলের মুখশ্রী তরুর মুখের উপর বেশ সন্নিকটে থাকায় ওর গরম নিঃশ্বাস তরুর মুখের উপর আ*ছ*ড়ে পড়ছে। তরু কাঁ*পা গলায় বললো….

—“এ-এভাবে টেনে ভিতরে আনার মানে কি!”

কুশল তরুর কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে যায়। তরু চোখ খিঁ*চে আবার বন্ধ করে দু’হাতে নিজের ওড়নার নিচের অংশ মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। কুশল তরুর কানে ফিসফিসিয়ে বললো….

—“বউকে বউয়ের মতো করে আদর করতে মন ব্যকুল হয়ে উঠেছে ভিষণ।”

কুশলের এরূপ কথায় তরুর নিঃশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়। কুশল তরুর কানের লতিতে হালকা ভাবে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিতেই তরু ওর দু’হাত কুশলের উন্মুক্ত বুকের উপর রেখে ধা*ক্কা প্রয়োগ করে নিজের থেকে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতে নিলে কুশল তরুর এক হাত ধরে হ্য*চ*কা টান দিয়ে নিজের উন্মুক্ত বুকের উপর এনে ফে*লে। কুশল একহাতে তরুর দু’হাত ধরে ওর কমোরের পিছনে ঠেকিয়ে রাখে। কুশল আর তরুর মাঝে এখন মাত্র কয়েক ইন্ঞ্চির দূরত্ব আছে। কুশল ঘোর লাগা কন্ঠে বললো….

—“এভাবে বাঁ*ধা দিয়ে দূরে সরিয়ে আর য*ন্ত্র*ণা দিও না বউ। আমার তোমাকে প্রয়োজন…ভিষণ ভাবে প্রয়োজন। আমি তোমাকে পুরোপুরি ভাবে নিজের করে পেতে চাই। আমার য*ন্ত্র*ণা কমাতে আমাকে সাহায্য করো প্লিজ…!”

তরু পুরোপুরি ভাবে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে যেনো। ওর সম্পূর্ণ শরীর অসার হয়ে এসেছে। চোখ বন্ধ রেখে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে সে৷ কুশল তরুর কপালে আর দু’গালে আলতো ভাবে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে ওকে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। তরু সঙ্গে সঙ্গে দু’হাতে কুশলের গলা জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লুকায়। তরুর সম্মতি আছে বুঝতে পেরে কুশলের ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। কুশল তরুকে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে বিছানার কাছে এসে ওকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তরু এখনও চোখ বন্ধ করে আছে। কুশল তরুর উপর কিছুটা ঝুঁকে বললো…..

—“চোখ মেলো বউ…তাকাও আমার দিকে!”

তরু চোখ মেলে তাকায়। কুশল যেই না তরুর ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে নিজের ওষ্ঠদ্বয় মিলাতে নিবে এমন সময় ওদের পিছনে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সিকদার বাড়ির কাজের
মেয়ে ললিতা শরবতের ট্রে হাতে রাখা অবস্থায় উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্রুততার স্বরে বললো….

—“আমি কিছু দেখি নি…কিছু দেখি নি আমি!”

ললিতার কন্ঠ শোনা মাত্র কুশল আর তরুর ধ্যন ভা*ঙে। কুশল দ্রুততার সাথে তরুর উপর থেকে সরে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে পরে। তরু বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। কুশলের দিকে তাকাতেই কুশলের চুপসে যাওয়া মুখশ্রী দেখে তরু শব্দ করে হেসে উঠে। তরুর হাসি শুনে কুশল তরুর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো….

—“তোমাকে তো আমি পরে দেখে নিবো। আমার মু*ডে*র দফা-রফা অবস্থা দেখে খুব হাসি পাচ্ছে তাই না! হাসি বের করবো।”

এই বলে কুশল দ্রুত কদমে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে যায়। তরু কোনো ভাবেই নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। শোয়াবস্থা থেকে উঠে হাসতে হাসতে বললো….

—“ললিতা…ভিতরে আয়।”

ললিতা ভিতরে এসে কুশলকে দেখতে না পেয়ে বললো….
—“ভু*ল সময়ে এসে গিয়েছি বুবু! এরপর থাইকা দরজা আটকাইয়া রাইখেন।”

তরু নিজের হাসি থামিয়ে বললো….
—“মাথায় দিবো একটা গা*ট্টা। পুঁ*চ*কে মেয়ের পাঁকা পাঁকা কথা। ট্রে টা ওখানে রেখে যা।”

ললিতা শরবতের ট্রে টা বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে মিটমিটিয়ে হেসে বললো….
—“দুলাভাই লজ্জা পাইছেন তাই না বুবু!”

তরু হাসি দিয়া মাথা উপর নিচ নাড়ায়। ললিতা আর কিছু না বলে হাসি মুখে দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ………….

(দিলাম ওদের রোমান্সে এক বালতি পানি ঢেলে😝🤣)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here