হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬৫) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
429

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬৫)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৫০)
সিকদার ভিলায় ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো কুশল, সন্ধ্যা, তমালিকা, তরুনিমা। সেইসময় তরুনিমা শান্ত স্বরে বললো….

—“তোমরা গল্প করো আমি একটু পর তোমাদের সাথে আবারও জয়েন করছি।”

কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“কোথায় যাচ্ছো তুমি!”

—“উপরে!”

—“কিন্তু….!”

এই বলে তরু কুশলকে আর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। তমালিকা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন….

—“যেতে দাও ওকে জামাই বাবা। অরুর কথা মনে পড়ে গিয়েছে হয়তো ওর। তাই উপরে ওর রুমেই গেলো হয়তো। মেয়েটা আমাদের মাঝে আর না থাকলেও এই বাড়ির প্রতিটি কোণায় কোণায় ওর স্মৃতি মিশে আছে। তরু-অরুর খুনসুটির স্মৃতিগুলো চোখ বন্ধ করলে আজও চোখের সামনে ভেসে উঠে।”

সন্ধ্যা তমালিকা একহাত জড়িয়ে তার কাঁধে মাথা রেখে বললো….
—“আন্টি..জানি অরু আপুর শূন্যতা কেও কখনও পূরণ করতে পারবে না। কিন্তু আমি তো তোমাদের একজন মেয়ে বলো! আমাকে না হয় অরু আপু ভেবে নিও তোমরা।”

তমালিকা ঠোটে স্মিত হাসির রেখা ফুটিয়ে অন্য হাত দিয়ে সন্ধ্যার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। কুশন শান্ত স্বরে বললো….

—“আমার পক্ষে এখানে বসে তরুনিমার ফেরার অপেক্ষা করা সম্ভব না মা। আমি যাচ্ছি ওর কাছে। জীবন সঙ্গী হয়েছি যখন তখন জীবন সঙ্গীনীর সুখ-দুঃখ, ভালো-খারাপ সব রকম পরিস্থিতিতেই তার পাশে থাকতে হবে।”

এই বলে কুশল সোফা ছেড়ে উঠে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। কুশলকে উপরে যেতে দেখে তমালিকা একহাতে চোখের কোণায় জমে থাকা পানিটুকু মুছে ফেললেন।

(১৫১)
তাহিরের বাবা-মা রেবেকা তালুকদার ও তমিজ তালুকদার তাদের নিজ রুমে বিছানায় বসে আছেন। সেইসময় তাহির আর হুমায়রা একত্রে তাদের রুমে প্রবেশ করে। তাহির শান্ত স্বরে বললো…

—“মা-বাবা তোমাদের সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমার কথা বলার আছে।”

রেবেকা হাসিমুখে বললেন….
—“এখানে এসে আগে বোস তোরা। তারপর যা বলার বলিস!”

তাহির আর হুমায়রা বিছানায় গিয়ে বসে। রেবেকা আর তমিজ তাহিরের উপর শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রেখেছেন। তাহির শান্ত স্বরে বললো…
—“তরুনিমা সিকদারের কথা মনে আছে তোমাদের মা-বাবা!”

তাহিরের মুখে তরুর নাম শুনে রেবেকার হাসি মাখা মুখ মূহূর্তের মধ্যেই গম্ভীর হয়ে গেলো। তিনি তমিজের দিকে একপলক দেখে গম্ভীর স্বরে বললেন…

—“হঠাৎ ঐ মেয়ের কথা উঠালি কেনো তুই!”

—“মা-বাবা…শান্ত মস্তিষ্কে আগে আমার সম্পূর্ণ কথাগুলো শুনতে হবে তোমাদের।”

—“ঐ মেয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আবার বলছিস শান্তও থাকতে!”

—“মা.. তরুনিমা আর ওর পরিবারের উপর অনেক রাগ তোমাদের মনে জমে আছে আমি সেটা মানছি। কিন্তু এই বিষয়ে ওদেরও কোনো দো*ষ নেই। ৫ বছর আগে পরিস্থিতি আমাদের এমন একটা মোড়ে দাঁড় করিয়েছিলো যে ওদের জায়গা থেকে ওদের মনে হয়েছিলো ওরা সঠিক। যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে। আমি আমার জীবন থেকে যে ৫টা বছর হারিয়ে ফেলেছি এখন রেশা-রেশি করলেই কি আমার জীবনে ঐ ৫টা বছর আর ফিরে আসবে? আসবে না তো! তাহলে এখন এসব ভেবে মাথা গরম করো না।”

—“কিন্তু…!”

হুমায়রা শান্ত স্বরে বললো….
—“খালামনি…তাহির তো ঠিকই বলেছে। যা হওয়ার তা হয়েই গিয়েছে। এখন আমাদের উচিত এসব নিয়ে যতো রাগ , ঘৃ*ণা আমাদের মনে জমে আছে সেগুলো মন থেকে পুরোপুরি ভাবে বের করে দেওয়া।”

রেবেকা আর কোনো প্রতিত্তুর করলেন না। তাহির বললো….
—“চৌধুরী গ্রুপ অফ কোম্পানির নাম তো শুনেছো তোমরা। ২০ বছর আগে সেই কোম্পানির CEO ছিলেন মি.রায়হানুল চৌধুরী।”

তমিজ কিছুটা ভাবুক স্বরে বললেন….
—“হুম..হুম..চিনি তো ওনাকে। সেইসময় ওনার কোম্পানির সাথে আমাদের কোম্পানির একটা প্রোজেক্টের বিষয়ে চুক্তি হয়েছিলো। সেই স্বার্থেই ওনার সাথে পরিচয় হয়েছিলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, আমাদের কোম্পানির সাথে চুক্তি করার কয়েকদিনের মাথায় ওনার গাড়ি এ*ক্সি*ডেন্ট হয়েছিলো। আর সেই এ*ক্সি*ডে*ন্টের কারণে তিনি মাথায় গু*রু*তর আ*ঘা*ত পেয়েছিলেন। আর কো*মা*য় চলে গিয়েছিলেন। এরপর চৌধুরী গ্রুপ অফ কোম্পানির সাথে আমি চুক্তিটা ভে*ঙে দিয়েছিলাম। পরে ওনাদের অবস্থা যে কেমন হয়েছে আর কে যে কোম্পানির দায়িত্ব নিয়েছিলেন সেসব নিয়ে আর খোঁজ নেওয়া হয় নি।”

তাহির বললো….
—“রায়হানুল চৌধুরী কোনো গাড়ি এ*ক্সি*ডে*ন্টের কারণে মাথায় গু*রু*তর আ*ঘা*ত পেয়ে কো*মায় যান নি বাবা। উনি আর ওনার স্ত্রী খুব বড় ষ*ড়*য*ন্ত্রে*র শিকার হয়েছিলেন।”

তমিজ অবাক স্বরে বললেন….
—“মানে!”

অতঃপর তাহির ২০ বছর আগে রায়হানুল ও তার স্ত্রীর সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বললো। সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে হুমায়রা আর রেবেকা দু’জনের চোখ বেয়েই অঝোর ধারায় নোনাজল গড়ে পড়ছে। তমিজ পুরোপুরি ভাবে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন। পুরো পরিবেশে পিন-প*ত*ন নিরবতা বিরাজ করে। তাহির দেওয়াল ভে*ঙে আবারও বললো….

—“তরুনিমার সাথে রায়হানুল চৌধুরীর একমাত্র ছেলে রওনাক আজমাইন কুশলের বিয়ে হয়েছে কয়েকমাস হলো। কুশলের মায়ের খুনি আর ওর বাবাকে কো*মা*য়
রাখার পিছনে যে ৪জন দায়ী! ওর মেজো ও ছোট চাচা-চাচীরা তাদের মধ্যে ২জন ওর মেজো চাচা-চাচী কুশল ও ওর বোন সন্ধ্যাকে নিজেদের সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আসছেন ৮বছর বয়সে যখন কুশল কো*মা থেকে ফিরে আসে তখন থেকে। কিন্তু এই কাজ করার পিছনেও তাদের একটা লক্ষ্য আছে। কুশলের বয়স যখন ৩০ বছর পূর্ণ হবে তখন ও চৌধুরী পরিবার থেকে বড় অংশের সম্পত্তি মালিকানা লাভ করবে। সেই সম্পত্তিটুকুও নিজেদের নামে করে নিতে ওরা কুশল আর সন্ধ্যার বড় ধরনের ক্ষ*তি করতে দু’বার ভাববে না।”

হুমায়রা বললো….
—“ঐ অ*মানুষ গুলোকে তাদের আর কোনো ষ*ড়*য*ন্ত্রে সফল হতে দেওয়া যাবে না তাহির। এক এক করে ওদের সব কয়টাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শা*স্তি দিতে হবে।”

—“হুম…কুশল আজ সকালে আমায় কল করে এই সবকিছু বলেছিলো। আর আমার থেকে একটা সাহায্যও চেয়েছে সে। আর আমি ওকে বলে দিয়েছি যে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে ওর প্রতিটি পদক্ষেপে সহযোগিতা করবো।”

রেবেকা একহাতে নিজের চোখের পানি মুছে একটু কঠিন স্বরে বললেন…
—“না…এসবের কোনো দরকার নেই। ঐ অ*মানুষ গুলো ভিষণ নি*র্দ*য় আর সাং*ঘা*তি*ক। নিজেদের স্বা*র্থে সামান্য তম আ*ঘা*ত লাগলে ওরা আরো ভ*য়ং*কর হয়ে উঠবে। আর কোনো ভাবে ওরা যদি জানতে পারে তুই এসবের মাঝে জড়িত আছিস তখন ওরা তোরও অনেক বড় ক্ষ*তি করে দিবে। আমি আমার ছেলেকে এতো বড় ঝুঁ*কি*র মাঝে কিছুতেই যেতে দিবো না। কুশলের মা-বাবার সাথে ভিষণ অ*ন্যায় করা হয়েছে আমি মানছি আর এর জন্য আমার মনেও যথেষ্ট খা*রাপ লাগা কাজ করছে তবুও তোর এসবের মাঝে যাওয়ার কোনো দরকার নেই বাবা।”

তাহির শান্ত স্বরে বললো…
—“মা…আজ যদি কুশলের জায়গায় আমি থাকতাম! তখনও কি তুমি এই কথা বলতে পারতে!”

তাহিরের এরূপ কথা শুনে রেবেকা কয়েক সেকেন্ড এর জন্য থ*ম*কে গেলেন। তাহির আবারও বললো…

—“সৎ আর ভালো মানুষগুলোর বি*প*দের সময় তাদের পাশে দাঁড়ানোর তাদের সাহায্য করার শক্তি, সামর্থ্য থাকা স্বত্তেও তাদের পাশে না দাঁড়ালে আমাদের আর ঐ অ*মানুষগুলোর মাঝে পার্থক্য কি থাকবে বলো তো! ২দিন পর যখন জানতে পারবো আমাদের একটু সাহায্য না পাওয়ার কারণে ঐ অ*মানুষ গুলোর নি*র্ম*ম ষ*ড়*য*ন্ত্রে*র শিকার কুশল, নিলাদ্র, সন্ধ্যা আর তরুনিমাকে হতে হয়েছে তখন কি তোমার আমার মাঝে আ*ফ*সো*স কাজ করবে না! তখন আ*ফ*সো*স করেই বা কি হবে বলো! অ*ন্যায়*কারী ও অ*ন্যায় সহন*কারী দু’জনের আল্লাহর কাছে সমান অ*প*রাধী মা।”

রেবেকা তাহিরের হাত ধরে বললেন…..
—“তোকে বাঁ*ধা দেওয়ার বা না করার কোনো মুখ আমার নেই। শুধু এতোটুকুই বলবো এসবের মাঝে তোর কিছু হয়ে গেলে সেই য*ন্ত্র*ণা আমি সহ্য করতে পারবো না বাবা।”

তাহির ওর মাকে শান্ত করতে বললো….
—“আমার কিচ্ছু হবে না মা। তুমি নিশ্চিন্ত থেকো, আর আমাদের জন্য দোয়া করো। সকল পা*পী আর অ*মানু গুলোকে যেনো এই দুনিয়ার বুক থেকে চিরতরের জন্য মুছে ফেলতে পারি আমরা।”

—“ইনশাআল্লাহ তোরা সফল হবি বাবা। আল্লাহ সবসময় তোদের তার হেফাজতে রাখুক।”

রেবেকার এরূপ কথাটুকু শুনে ওরা তিনজন একসাথে ‘আমিন’ শব্দ উচ্চারণ করে। তাহির বললো….

—“কিন্তু মা-বাবা…তোমাদেরকেও ছোট্ট একটা কাজের দায়িত্ব নিখুঁত ভাবে পালন করতে হবে যে!”

তমিজ বললেন…..
—“কি কাজ!”

—“নিলাদ্রের কথা বললাম না! কুশল ওর বাড়ির লোকদের সামনে নিলাদ্রকে আমার আপন ছোট ভাই হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।”

—“মানে!”

—“নিলাদ্র ঐ অ*মানুষ গুলোর সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারায় ওরা ওকে মে*রে ফেলার চেষ্টা করেছিলো। আল্লাহর রহমতে কুশল-তরুনিমা নিলাদ্রকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু নিলাদ্রের জীবনের ঝুঁ*কি আছে বুঝতে পেরে কুশল নিলাদ্রের মতো অন্য একজনের মৃ*ত দেহ জোগার করে তাদের সামনে নিয়ে গিয়েছিলো আর তাদের বিশ্বাস করিয়েছিলো যে নিলাদ্র মা*রা গিয়েছে। এ*ক্সি*ডে*ন্টে নিলাদ্র ওর মুখে বা*জে ভাবে আ*ঘা*ত পেয়েছিলো তাই ওর প্লাস্টিক সা*র্জা*রি করতে হয়েছে। এখন নিলাদ্র সম্পূর্ণ আলাদা চেহেরা পেয়েছে। সন্ধ্যা আর নিলাদ্র একে-অপরকে ভালোবাসে। ঐ অমানুষগুলোকে শা*স্তি দিতে নিলাদ্র অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। তাই সন্ধ্যার সাথে নিলাদ্রের বিবাহকার্য সম্পন্ন করা অতিব জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু ঐ অ*মানুষ গুলো ও দুনিয়ার সামনে নিলাদ্র মৃ*ত তাই ওদের সামনে যাওয়ার জন্য নতুন চেহারার অধিকারী নিলাদ্রের নতুন পরিচয়, নতুন পরিবারের প্রয়োজন। কুশল নিলাদ্রের নতুন নাম দিয়েছে সৌহার্দ্য তালুকদার। ২-৩ দিনের মধ্যে সন্ধ্যার সাথে সৌহার্দ্যের বিয়ের দিন তারিখ চূড়ান্ত করতে তোমাদের ওর বাবা-মা, আমাকে আর হুমায়রাকে ওর বড়ভাই-ভাবী সেজে ওর সাথে চৌধুরী মেনশনে যেতে হবে।”

নিজেকে তাহিরের ন*ক*ল বউ সেজে চৌধুরী মেনশনে যেতে হবে শুনে হুমায়রার হিঁ*চ*কি উঠে যায়। তাহির বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে হুমায়রাকে দেয়। হুমায়রা এক নিঃশ্বাস সবটুকু পানি পান করে। রেবেকা বিষয়টা নিয়ে কিছুসময় ভাবার পর শান্ত স্বরে বললেন…

—“হুম সবই তো বুঝলাম। কিন্তু চৌধুরী পরিবারের মেয়ের বিয়ে বলে কথা। সমাজের নামি-গুণি আরো ১০ জন মানুষও সেখানে উপস্থিত হবেন। তাদের মধ্যে কেওই যে তোর বাবাকে চিনবেন না এমন তো না! ব্যবসায়িক সূত্রে তোর বাবা তো কম মানুষজনদের উঠাবসা করেন নি তাই না! তখন কেউ যদি এটা জিঙ্গাসা করে যে আমাদের ছোট ছেলে আবার আসলো কোথায় থেকে ওকে তো এর আগে কেও দেখে নি, আবার তুই-ই বা কবে বিয়ে করে নিলি! কাওকে কেনো জানালাম না? তখন আমরা কি উত্তর দিবো!”

তাহির ভাবুক স্বরে বললো……
—“বলবে…সৌহার্দ্য একটু অন্যরকম স্বভাবের ছিলো। লোকজন এর মাঝে আসা বা তাদের সাথে এতো খোলাখুলি ভাবে মেলামেশা করা ছোট থেকেই পছন্দ করতো না। তাই অনেক ছোটতেই ওকে আমেরিকাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। সেখানে থেকেই বড় হয়েছে সে। ডাক্তারি পড়াশোনা কমপ্লিট করে কিছুদিন হলো দেশে ফিরেছে ব্যস।”

—“হুম..ঠিক আছে। কিন্তু আমার একটা ইচ্ছে আছে।”

—“কি ইচ্ছে বলো মা!”

রেবেকা একপলক তমিজ আর হুমায়রার দিকে তাকিয়ে বললেন….
—“সৌহার্দ্যকে নিজেদের ছোট ছেলে হিসেবে সকলের সামনে স্বীকৃতি দিতে আমার বা তোর বাবার কোনোরূপ আ*প*ত্তি নেই এ বিষয় তুই সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত থাকতে পারিস। কিন্তু আমরা চাই তুই আর হুমায়রা যে বিবাহিত এটা মি*থ্যে না হোক।”

তাহির অবাক স্বরে বললো…
—“মানে!”

—“মানেটা ভিষণ সহজ। দেখ বাবা…তুই, আমরা সকলেই জানি অনেক আগে থেকেই হুমায়রা তোকে পছন্দ করে নিজের জীবনসঙ্গী রূপে তোকে পেতে চায়। হুমায়রার বাবা-মায়ের ও হুমায়রার এই ইচ্ছে পূরণে সম্মতি আছে। আমি আর তোর বাবাও এটাই চাই যে তুই আর হুমায়রা এবার বিয়েটা করে নে। আমাদেরও তো যথেষ্ট বয়স হয়ে গিয়েছে, নাতি-নাতনীদের মুখে দাদু-দাদীমা ডাক শোনার অনেক ইচ্ছে হয়। তাই সন্ধ্যা আর সৌহার্দ্যের বিয়ের আগে পারিবারিক ভাবে হলেও তোর আর হুমায়রার বিবাহকার্য সম্পন্ন করতে চাই আমরা।”

নিজের মায়ের মুখে এরূপ ইচ্ছের কথা শুনে তাহির কি বলবে কি রিয়েক্ট করবে তা ভেবে পাচ্ছে না। হুমায়রা কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। কিছুসময় পর তাহির একপলক হুমায়রার দিকে দেখে বললো….

—“ঠিক আছে…তোমাদের এই ইচ্ছে আমি পূরণ করবো। আগে সৌহার্দ্য আর সন্ধ্যার বিয়ের দিন তারিখ চূড়ান্ত করার কাজ সম্পণ্ন করতে হবে তারপর পারিবারিক ভাবে আমার আর হুমায়রার বিবাহকার্য সম্পন্ন হবে।”

তাহির যে এতো সহজে বিয়ের বিষয়ে সম্মতি জানাবে হুমায়রা তা কল্পনাও করতে পারে নি। অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে সে। তমিজ আর রেবেকার চেহারায় একরাশ খুশির ছাপ স্পষ্ট হয়।

(১৫২)
সিঁড়ি বেয়ে উপরে অরুর রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে কুশল লক্ষ্য করে তরুনিমা ওর বড় বোনের সকল জিনিস ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। কুশল নিরবতা বজায় রেখেই অরুর রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। তরু কুশলের উপস্থিতি টের পেয়েও ওকে কিছু বলে না। কুশল অরুর বেডের একপার্শে রাখা একটা বই রাখার টেবিলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে কিছুটা কৌতুহলের সাথে টেবিলের ড্রয়ার খুলে। সেখানে থেকে কুশল একটা ধুলো জমা ডায়েরি বের করে হাতে নেয়। তরু পিছন ঘুরতেই কুশলের হাতে অরুর ডায়েরি দেখে দ্রুততার স্বরে বললো…

—“খুলবেন না ওটা।”

আকস্মিক তরুর কন্ঠে নি*ষে*ধা*জ্ঞা বাক্যটি শুনে কুশল কিছুটা ভ*র*কে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ওর হাত থেকে অরুর ডায়েরিটা মেঝেতে পড়ে যায়। কুশল ডায়েরিটা উঠাতে উঠাতে বললো….

—“সরি…সরি…আমি জানতাম না এটা খোলা নি*ষে*ধ।”

—“আপু কখনও আমাকে এই ডায়েরিটা খুলে পড়তে দেয় নি। এটাতে কি আছে জানতে অনেকবার ওকে অনেক প্রশ্ন করেছিলাম কিন্তু প্রতিবারই শুধু একটাই জবাব পেয়েছিলাম এটা তার পারসোনাল বিষয়। আর আমি যেনো ভুলেও এই ডায়েরিতে হাত না দেই। এরপর আমি আর কখনও এই ড্রয়ার খুলি নি। আপু মা*রা যাওয়ার পরেও না। ডায়েরিটা আগের জায়গাতেই রেখে দিন।”

কুশল ডায়েরিটা উঠিয়ে আগের স্থানে রাখতে নিলে ডায়েরির ভিতর থেকে একটা ৬-৭ ইন্ঞ্চি লম্বা ও চওড়া সাইজের ছবি মেঝেতে পড়ে যায়। ছবিটা উল্টো হয়ে পড়ায় কুশল বা তরু কেওই এটা বুঝতে পারছে না কিসের ছবি এটা! কুশল স্বাভাবিক ভাবেই মেঝের উপর থেকে ছবিটা উঠায়। ছবির উপরে ভিষণ ধুলো জমে থাকায় চেহারাগুলো বোঝা যাচ্ছে না। কুশল ডায়েরিটা টেবিলের উপর রেখে পকেট থেকে রুমাল বের করে ছবিটির উপর থেকে ধুলোগুলো পরিষ্কার করে। পরিষ্কার হওয়ার পর ছবিতে থাকা মানুষটিকে দেখে কুশল অতন্ত্য অবাক হয়ে যায়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ…….

(কাল ব্য*স্ত ছিলাম তাই পর্ব দিতে পারি নি। আজ ২পর্বের সমান একটা বিশাল পর্ব দিলাম। ১৯৪০+ শব্দ আছে এখানে। আর আইডিয়া করতে পারবেন কি কুশলের হাতে যে ছবিটা আছে ছবিটা আসলে কার? করতে পারলে বলুন দেখি কার কার আইডিয়া সঠিক হয়।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here