এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ০৯

0
469

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৯

অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিতা আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি আর চাঁদনীর দিকে। আর বাকিরা নিরাশ হয়ে এগিয়ে আসলো। আশরাফ বললো,
“কক্সবাজার যেতে তোর আবার কারণ লাগবে?”

আদ্রিতা বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বললো,“তাহলে আবার কি! কারণ ছাড়া কেন যাবো?”

মৃদুলের ইচ্ছে করছে আদ্রিতার গালে ঠাস করে একটা চড় বসাতে এই মেয়েটা বরাবরই কোথাও যাওয়ার কথা শুনলেই নাক মুখ কুঁচকায়। মৃদুল নিজেকে দমালো যথেষ্ট শান্ত স্বরে আদ্রিতার সোজাসুজি চেয়ারে বসে বললো,“দোস্ত ঘুরতে যামু। ঘুরতে। সমুদ্র বিলাসে খালি চিল হবে।”

আদ্রিতা নাক মুখ কুঁচকে বললো,“এত চিল করার কি আছে। সমুদ্রে দেখার মতো কি আছে খালি পানি আর পানি।”

আদ্রিতার কথা শুনে রনি বললো,“ওই পানি দেখতেই যাবো সঙ্গে তুইও যাবি।”

আদ্রিতা বললো,“আমার কাজ আছে। আমি যাবো না। তোরা যা?”

মৃদুল আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। সে আচমকাই আদ্রিতাকে ধমক দিয়ে বললো,
“ওই ছ্যামড়ি তোর কাজের কেতায় আগুন। এমন বাইরান বাইরামু যে জামাইর নাম মনে থাকবে না। এত ভাব নেস ক্যা।”
“আরে বাবা এতজন একত্রে যাওয়া যাবে নাকি?”
“খুব যাবে (চাঁদনী)
“সজল স্যারের সাথে কথা হয়েছে।” (মুনমুন)

আদ্রিতা অবাক হয়ে বললো,
“কি বললেন?”
“উনি রাজি হয়েছে তিনদিনের কথা বলেছিলাম কিন্তু দু’দিনের ছুটি দিয়েছে।” (রনি)

আদ্রিতা বেশ চমক খেয়ে বললো,“সত্যি দিয়েছে।”
মৃদুল বললো,“হুম দিয়েছে। আজ রাতের বাসে যাবো দশটার মধ্যে রেডি হয়ে থাকবি।”

আদ্রিতা বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
“এত দ্রুত।”
“হুম দ্রুত গিয়ে দ্রুত আসবো।” (আশরাফ)

সবার কথার মাঝে মৃদুল আচমকাই টেবিলের উপর মাথা এলিয়ে দিলো। বললো,“উফ্ দোস্তরা কবে যামু লাবনী বিচে? আমি খালি সমুদ্রের মইধ্যে চিত হইয়া ঘুমাইয়া থাকমু।”

মৃদুলের কথা শুনে সবাই হেঁসে ফেললো। চাঁদনী বললো,“তারপর একটা কাউয়া এসে তোর মুখে ইয়ে করে চলে যাবে। বেশ হবে।”

মুহুর্তের মধ্যে মৃদুলের মগজ এলেমেলো হলো। সে ধমকের স্বরে বললো,“এই মাইয়াডার মুখে কোনো ভালো কথা নাই। কাউয়া না বলে বলতি একটা মাইয়া এসে গায়ে পড়বে।”

রনি নাক মুখ কুঁচকে বললো,“ছিঃ দোস্ত এডি তুই কি কস?”

মৃদুল অবাক হয়ে বললো,“এখানে ছিঃর কি আছে?”

সবাই হেঁসে দিলো। মৃদুল কিছুক্ষণ পর বিষয়টা বুঝতেই রনির পেটে একটা ঘুষি মেরে বললো,“শালা নোংরা।”

সবাই হেঁসে ফেললো। আদ্রিতাও হাসলো। তার এই বন্ধুবান্ধবের কান্ড দেখলে সে বরাবরই আনন্দ পায়। বিশেষ করে মৃদুল। তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবচেয়ে হাসিখুশি আর মিশুক টাইপের ছেলে। পুরো বন্ধুমহলটা এই ছেলেটাই মাতিয়ে রাখে বেশি।
—–
লাগাতার ফারিশের রুমে নক করছে আদিব কিন্তু ফারিশের কোনো হুস নেই। বেঘোর ঘুমে মগ্ন ফারিশ। সচরাচর ফারিশ দরজা আঁটকে ঘুমায় না কিন্তু কাল রাতে ঘুমিয়েছে। কাল নেশার ডোজটা বেশি হয়ে গেছিল তার। আদিব আবার দরজায় নক করলো। তাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। ফারিশের জন্য চিন্তা হচ্ছে। ঘড়িতে দুপুর বারোটা ছাড়িয়ে। এত বেলা অবদি ফারিশ ঘুমায় না। সেই কখন থেকে আদিব ডাকছে তাকে কিন্তু ফারিশের খবর নেই। আদিব আবারও দরজায় নক করলো। বললো,
“ভাই আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন,ফারিশ ভাই!’

এবার ফারিশ নড়েচড়ে উঠলো। আবারও কানে দরজা টাঁকানোর শব্দ কানে ভাসলো। ফারিশ আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো। গড়া খাগাড়ি দিয়ে বললো,“কি হয়েছে আদিব?”

এতক্ষণে ফারিশের কণ্ঠটা কানে আসতেই আদিবের দেহে প্রাণ ফিরে এলো। সে বললো,“ভাই আপনি ঠিক আছেন তো সেই কখন থেকে ডাকছি?”

ফারিশ তার চোখ মুখ ডলতে ডলতে বললো,“আমি ঠিক আছি।”

আদিব ওপাশ থেকেই আবার বললো,“ভাই গাড়ি কি রেডি করবো? কক্সবাজার কি আজ যাবেন?”

ফারিশ চটপট জবাব দিলো,
“হুম রেডি করো। দু’ঘন্টার মধ্যেই আমরা বের হবো।”
“আচ্ছা ভাই।”

আদিব চলে গেল। ফারিশ বিছানা সাতরে মোবাইলটা নিয়ে বললো,“কাজটা কি হয়েছে?”

উত্তরে অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটিও বললো,
“জি বস।”
“ঠিক আছে। রাত দশটা কি এগারোটার মধ্যে কক্সবাজার ঢুকবো কাল সকালেই ওর সাথে কথা বলবো। তোমরা ওর গায়ে কোনো হাত দিবে না। আমি আগে কথা বলবো।”
“ঠিক আছে বস।”

ফোন কাটলো ফারিশ। এবার তো সে জেনেই ছাড়বে তার সাথে ষড়যন্ত্র করছেটা কে? ফারিশ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঢুলতে ঢুলতে চলে গেল ওয়াশরুমের দিকে। লম্বা একটা সাওয়ার নিবে তারপর হাল্কা কিছু খেয়ে বেলা দু’টো কি আড়াইটার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। গাছ আর বিশ্বাসঘাতক দুটোর সাথেই কাল সকালে যোগাযোগ করবে ফারিশ।
—-
বিকেলের ফুড়ফুড়ে আলোতে নিজের রুমে ব্যাগপত্র গোছাচ্ছে আদ্রিতা। সে মাত্রই হসপিটাল থেকে এসেছে। বর্তমানে তার জায়গাটা ডক্তর সুস্মিতা সেন পালন করছেন। উনি একজন সিনিয়র ডক্টর। মূলত এই দু’দিনের ছুটিতে সেই আদ্রিতার দায়িত্ব পালন করবে। মহিলাটি যথেষ্ট ভালো আদ্রিতাকে খুব স্নেহ করেন। আদ্রিতাও পছন্দ করেন ওনায়। আদ্রিতার মা ভিতরে ঢুকলেন। মেয়েকে ব্যাগপত্র গোছাতে দেখে বললো,“কোথাও যাবি?”

আদ্রিতা মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“হুম।”
“কোথায়?”
“কক্সবাজার।”
“হঠাৎ কক্সবাজার কেন?”
“একটু ডাক্তারির কাজেই দু’দিনের মধ্যে চলে আসবো।”
“ওহ। কিন্তু আমি যে কাল আরাফাতকে আসতে বলবো ভাবছিলাম?”

আদ্রিতা বেশ অবাক হয়ে বললো,
“আরাফাত কে?”
“ওই যে তোকে বলেছিলাম না তোর মামা তোর জন্য একটা ছেলে দেখেছে ওর নামই আরাফাত।”
“ওহ আচ্ছা কিন্তু আমার যে সময় হবে না মা। তুমি একটা কাজ করো ছেলেটাকে ফোন করে আর কিছুদিন পর আসতে বললো। আমি কক্সবাজার থেকে ফিরি তারপর।‘

আদ্রিতার মাও নিরাশ হয়ে বললো,“ঠিক আছে। আর কি করার।”

আদ্রিতার মা বেরিয়ে গেলেন। আদ্রিতা সস্থির নিশ্বাস ফেললো। ভাগ্যিস রাফিন বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথেই তাকে এই বিষয়টা বলেছিল নয়তো বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবে কথাটা বললে কখনোই তার মা যেতে দিত না। আদ্রিতার ফোনটা বেজে উঠলো। মৃদুল কল করেছে। আদ্রিতা ফোনটা তুললো। বললো,
“বল,
“তুই কি ব্যাগ গোছাতে শুরু করেছিস?”
“হুম।
“ঠিক আছে। আচ্ছা শোন রাত দশটার মধ্যে সায়দাবাদ থাকতে হবে। সাড়ে এগারোটার বাসে যাবো। টিকিট কাটা আছে তোকে তোর বাসা থেকে আমিই নিয়ে আসবো। আমি যাবার আগে বের হবি না।”

আদ্রিতা মৃদু হেঁসে বললো,
“ঠিক আছে।”

আচমকাই মৃদুল উত্তেজিত হয়ে বললো,
“উড়ে দোস্ত সমুদ্র বিলাস করমু।”

আদ্রিতা দাঁত বের করে হেঁসে ফেললো। বললো,
“করিস ছাগল। হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে করিস সমুদ্র বিলাস।”
“তা তো করমুই সঙ্গে তোগো নিমু দেখিস।”
“আচ্ছা তা না হয় পরে দেখছি।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”

ফোন কাটলো মৃদুল। এর পরপরই গ্রুপ কলে এলো সবাই। চাঁদনী আর মুনমুনের সমস্যা তারা কি পড়ে যাবে তা বুঝতে পারছে না। তাদের নাকি জামা নেই। মৃদুল এদের কথোপকথন শুনে বললো,
“মাইয়া মানুষের এই এক সমস্যা এরা কোথাও যাইতে নিলেই এদের জামা থাকে না।”

মৃদুলের কথা শুনে রনি আর আশরাফও বললো,“ঠিক কইছোস দোস্ত।”

রনি ছোট্ট স্বরে বললো,“চাঁদ, মুন তোরা সত্যি কিছু খুঁজে না পাইলে আমার একটা লুঙ্গি আর ফতুয়া পড়ে চল।”

চাঁদনী আর মুনমুন চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো রনির কথা শুনে। আর বাকিরা উচ্চস্বরে হেঁসে ফেললো।”

কথাটা মতো সায়দাবাদ থেকেই সরাসরি কক্সবাজার যাওয়ার বাসে উঠে পড়লো আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি, চাঁদনী আর আদ্রিতা। মৃদুল আবারও বললো,“উড়ে দোস্ত কক্সবাজার যামু সমুদ্র বিলাসে খালি চিত হইয়া শুইয়া থাকমু। উফ! খালি মজা আর মজা!’

অন্যদিকে ফারিশ সে প্রায় ঘন্টাখানেক আগেই পৌঁছে গেছে কক্সবাজার। মাথায় একটাই ভাবনা তার যড়যন্ত্র কারীকে খোঁজা?” ধরতে পারলে যেখানে পাবে সেখানেই খতম।”

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। দু’দিন দেরি করার জন্য দুঃখিত।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here