এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ২২

0
491

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২২

পর পর দু’কাপ কফি খাওয়া শেষ আদ্রিতার। অথচ আরাফাতের এখনও আসার নামগন্ধ নেই। আদ্রিতা চরম বিরক্ত এতে। আদ্রিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আধঘন্টার মধ্যে না আসলে সে চলে যাবে। এমন ইরেসপন্সিবেল একটা ছেলেকে কি করে তার মামা পছন্দ করলো কে জানে। ভাবতেই অদ্ভুত লাগছে আদ্রিতার। আদ্রিতা তৃতীয়বারের কফির কাপে চুমুক দিলো। আশপাশ দেখলো। আচমকা বুকের মধ্যে ধক ধক করে উঠলো। কেউ বুঝি আসছে। যার সাথে আদ্রিতার সাক্ষাৎ নেই এক সপ্তাহ হবে। কিন্তু কি করে আসবে! ফারিশের কি এখানে আসার কথা! না তো। আদ্রিতা তাকিয়ে রইলো কফিশপের দরজার দিকে। সে যত আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে ততই যেন ধীরে ধীরে অস্থিরতা বাড়ছে। সেকেন্ডের কাটা হড়হড় করে ছুটছে। আদ্রিতা তার দৃষ্টি কফিশপের দরজার দিকে নিবদ্ধ রেখেই কফির কাপে চুমুক দিলো আবার। একটা ছেলের পায়ের পদধ্বনি শোনা গেল বুঝি। আদ্রিতা তার বুকে হাত দিলো। সত্যি কি সে এসেছে। সময় যত এগোচ্ছে ততই যেন আদ্রিতার আগ্রহ, অনুভূতি, অস্থিরতা তড়তড় করে বাড়ছে। কফিশপের দরজা খুললো কেউ। আদ্রিতা দেখলো। কালো কোট-প্যান্ট পরিধিত এক যুবক। আদ্রিতা কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে নিজের ফোনটা দেখলো। ছেলেটা আরাফাত। আদ্রিতার মনটা ভেঙে গেল। ফারিশ তো এলো না তাহলে এমন অস্থির লাগলো কেন আদ্রিতার। আরাফাত এগিয়ে আসতে লাগলো। আদ্রিতা তার দৃষ্টি সরালো। যার কারণে সে দেখতে পেলো না আরাফাত ঢোকার পরেই দরজা খুলে ঢুকলো প্রথমে আদিব এরপরে কালো মাস্ক আর হুডি পরিধিত ফারিশ।

আরাফাত মৃদু হেসে আদ্রিতার মুখোমুখি চেয়ারে বসলো। বললো,
“হাই আমি আরাফাত।”

আদ্রিতা কোনোরকমের হেসে বললো,
“আসসালামু আলাইকুম। আমি আদ্রিতা।”

শুরুতেই খানিকটা লজ্জা পেল আরাফাত। সালামটা তার দেয়া উচিত ছিল। আরাফাত লজ্জিত স্বরেই বললো,
“ওলাইকুম আসসালাম। আমি খুব দুঃখিত এতটা দেরি করার জন্য আসলে অফিসে একটু কাজ ছিল তাই আর কি।”
“ইট’স ওকে।”

কথাটা মুখে বললেও ভিতরে ভিতরে বললো,“তোর যখন এতই কাজ ছিল তাহলে আজ আসতে বললি কেন। খাটাশ বেডা।”

মিষ্টি হাসলো আদ্রিতা। ভিতরের কথা ভিতরের রয়ে গেল। আরাফাত বললো,
“কিভাবে কি শুরু করবো বুঝচ্ছি না। সত্যি বলতে আপনার যখন ছবি দেখেছিলাম তখনই আপনায় ভালো লেগেছিল। সামনাসামনি আপনি আরো সুন্দর দেখতে।”

আদ্রিতা কি বলবে বুঝতে পারছে না। মুখের ওপর হঠাৎ কেউ প্রশংসা করলে সে বেশ বিভ্রান্ত অনুভব করে। আরাফাত ওয়েটার ডাকলো। কফি অর্ডার করলো। আদ্রিতা খেতে থাকায় তার জন্য আর দেয় নি। আরাফাত প্রশ্ন করলো,
“তা আপনি কিসের ডক্টর যেন?”
“জি। সার্জারীর। মোটামুটি সব ধরনের সার্জারীই আমি করে থাকি।”
“ওহ আচ্ছা। নিশ্চয়ই সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকেন?”
“তা একটু থাকি। আপনি ইঞ্জিনিয়ার তো?”
“জি। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।”

ওয়েটার কফি নিয়ে আসলো। আরাফাত কফির কাপে চুমুক দিলো আর টুকিটাকি প্রশ্ন বললো। আদ্রিতাও বিনয়ের সাথে প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো।
—-
আদ্রিতার থেকেই খানিকটা দূরে মুখে মাস্ক, মাথায় হুডির টুপি মাথায় দিয়ে বসে আছে ফারিশ। তার সামনেই আদিব বসা। আদিব বললো,“কফি কি অর্ডার করবো ভাই?”

ফারিশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“করো। আর কফিশপের মালিককে বলো আমি এসেছি আধঘন্টার মধ্যে যেন কফিশপ খালি করে।”
“ঠিক আছে।”

আদিব উঠে দাঁড়ালো। হঠাৎই তার নজর গেল আদ্রিতার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে অবাক হয়ে বসে পড়লো নিজের চেয়ারে। ফারিশের নির্বিকার চাহনি। সে বললো,“কি হয়েছে?”

আদিব হতভম্ব স্বরে বললো,“ভাই আদ্রিতা ম্যাডামও এখানে আছে?”

ফারিশের মাঝে কোনো ভাবাক্রান্ত দেখা গেল না। তার তড়িৎ উত্তর আসলো,“তো। আর তাছাড়া আদ্রিতা ম্যাডামও বা কে?”

আদিব যেন আরেক দফা অবাক হলো এতে। যে মেয়ের সাথে ফারিশ ভাইয়ের এতবার সাক্ষাৎ তাকেই ভাই চিনতে পারছে না। আদিবের ভাবনার মাঝে ফারিশ আবার প্রশ্ন করলো,“কি হলো কথা বলছো কেন? আদ্রিতা কে?”

আদিব বিলম্বিত হলো। ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টি নিয়ে বললো,“ডাক্তার ম্যাডাম ভাই।”

ফারিশ যেন দারুণভাবে চমকালো। ফাইনালি সে জানলো ডাক্তার ম্যাডামের নাম আদ্রিতা। ফারিশ ঘুরে তাকালো। তার সম্মুখেই এক টেবিল পরে আদ্রিতা বসা। কারো সাথে কথা বলছে। ফারিশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আদিবের দিকে ঘুরলো। আদিব প্রশ্ন করলো,“এবার কি করবো ভাই?”

ফারিশ সময় নিলো না বেশি। তড়িৎ জবাব দিলো,“ সব ক্যান্সেল করো। জব্বার হোসেনকে কল করে বলো এবারের ডিল আমার অফিসে হবে। আজকেই রাত আটটায় হবে।”

আদিব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“আচ্ছা ভাই। আর গাড়ির মাল?”
“ওগুলো নিয়ে তুমি অফিসে চলে যাও। আমার এখানে কিছু কাজ আছে। আর হা এখানকার সিসিটিভি,,

পুরোটা বলা লাগলো না ফারিশের। আদিব মৃদু হেঁসে বললো,“বুঝতে পেরেছি। ভাই ভাবি কি পাবো এবার?”

ফারিশ তড়িৎ জবাব দিল না। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে মৃদু হেঁসে বললো,“দেখি।”

আদিব হাসলো। তার খুশি লাগছে। আদিব মিনিট চার কফিশপে থেকে কিছু কাজ সেরে আদ্রিতার অগোচরে বেরিয়ে গেল। কিছু ইশারা করে গেল ফারিশকে। ফারিশ ইশারা বুঝতেই তার মুখের মাস্ক খুলে পকেটে পুড়লো। মাথায় দেয়া টুপিটা সরিয়ে চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করলো। জায়গা পাল্টে বসলো আদিব বসা চেয়ারে। সেখান থেকে সরাসরি আদ্রিতাকে দেখা যায়। ফারিশ বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে বসলো। মেন্যুকার্ড দেখলো একটু। এরপর উচ্চস্বরে আওয়াজ করে বললো,“ওয়েটার।”

আচমকাই ফারিশের কণ্ঠের মতো কারো কণ্ঠ ঠেকতেই আঁতকে উঠলো আদ্রিতা। তড়িৎ চাইলো সামনে। সঙ্গে সঙ্গে ব্রাউন কালার হুডি পরিধিত ফারিশকে বসা দেখতে পেয়ে আপনাআপনি হাসি ফুটে উঠলো আদ্রিতার। তার মানে তখনকার অনুভূতি ভূয়া ছিল না।’

ওয়েটার ফারিশের কাছে এসেই জিজ্ঞেস করলো,
“কি খাবেন স্যার?”

ফারিশ বেশ মনোযোগ দিয়ে মেন্যুকার্ড দেখলো। আশেপাশ কোথাও দেখলো না। ভাবখানা এমন সে আদ্রিতাকে দেখে নি। ফারিশ খালি খালি কতক্ষণ মেন্যুকার্ড দেখে বললো,
“এক কাপ ব্লাক কফি।”
“ওকে স্যার।”

ওয়েটার চলে গেল। ফারিশ চুপচাপ বসে মোবাইলে হাত দিলো। ফারিশ এতক্ষণ পর আন্দাজ করতে পারলো কফিশপে ঢোকার সময় তার এমন অস্থির লাগছিল কেন!’

রাগে গজগজ করছে আদ্রিতা। এই মুহূর্তে তার একমাত্র রাগের কারণ হলো ওই সামনে ভাব নিয়ে বসে থাকা ফারিশ। কারণ ফারিশ তাকে এখনো দেখে নি। ভাবখানা এমন যেন এতবড় কফিশপে সে ছাড়া আর কেউ নেই। আদ্রিতার রাগ লাগছে ছেলেটা তাকে দেখছে না কেন! আদ্রিতার মতে কোনো মানুষের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে কোনো না ভাবে দেখতে থাকা মানুষটি আঁচ পেয়ে যায় কেউ তাকে দেখছে। বিষয়টায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি পারদর্শী হয়। তারা বেশিভাগ সময়ই ভীড়ের মধ্যেও বুঝতে পারে কোন ছেলে তাকে দেখছে। আদ্রিতা ফারিশকে দেখার পর থেকেই তার দিকে তাকানো। অথচ ফারিশের হুস নেই। রাগে আদ্রিতার মেজাজ বিগড়াচ্ছে। আরাফাত শেষ কফিকাপে চুমুক দিয়ে বললো,“অনেক তো কথা হলো এবার বলুন আপনার আমাকে কেমন লাগলো?”

আদ্রিতার তড়িৎ উত্তর,“ভালো না।”
আরাফাত তব্দা খেল খানিকটা। নিজেকে সামলে বললো,“জি।”

আদ্রিতার হুস আসলো। এতক্ষণ পর মনে পড়লো সে এতক্ষণ বসে কারো কথা শুনছিল। আদ্রিতা তড়িঘড়ি করে বললো,“আমি খুব দুঃখিত।”

আরাফাত বললো,“বিয়েতে কি হ্যাঁ বলা যায় এখন?”

আদ্রিতা সরাসরি তাকালো আরাফাতের দিকে। তড়তড় করে বলে উঠল,“না। আসলে আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। ও এখানেই কফিশপে আছে। আপনি চাইলে আমি আপনার সাথে দেখা করাতে পারি। ওই যে আমাদের সামনে বসা ছেলেটি।”

আরাফাত পুরো কথা শুনেই পিছন ঘুরে চাইলো। ফারিশকে দেখলো। আদ্রিতা দ্রুত বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। উত্তেজিত দেখাচ্ছে তাকে। বোঝাই যাচ্ছে প্রচন্ড রাগ করেছে। আরাফাতও বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আদ্রিতা আটপাঁচ কিছু না ভেবেই ফারিশের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ালো। রাগী রাগী কণ্ঠে বললো,“এই যে মিস্টার বখাটে।”

ফারিশ এতক্ষণ পর কফির কাপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আদ্রিতার দিকে তাকালো। অবাক হয়ে বললো,“আপ…

পুরো কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই আদ্রিতা ফারিশের কাছাকাছি গিয়ে হাত ধরে আরাফাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,“উনি আমার বয়ফ্রেন্ড আরাফাত। খুব শীঘ্রই আমরা বিয়ে করছি।”

ফারিশের কাঁশি উঠলো আদ্রিতার কথা শুনে। এই মেয়ে বলে কি! আরাফাত কি বলবে বুঝতে পারছে না! কতক্ষণ হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থেকে নিজের হাত এগিয়ে দিল ফারিশের দিকে। বললো,“শুভ কামনা আপনাদের জন্য।”

ফারিশ হাত মেলালেও মুখে কিছু বললো না। তার কথা বুঝি বন্ধ হয়ে গেছে। আদ্রিতা এবার ফারিশের থেকে সরে এসে বললো,“প্লিজ মাকে এগুলো বলবেন না। বলবেন আপনার আমাকে পছন্দ হয় নি। আসলে আমি চাচ্ছি আর এক মাস পর মাকে এগুলো জানাতে। বয়ফ্রেন্ডের বিষয়টা আপনায় আগে জানানোরই ইচ্ছে ছিল কিন্তু মায়ের জন্য বলতে পারি নি।”

আরাফাত মৃদু হাসলো। বললো,“আচ্ছা সমস্যা নেই। ভালো থাকবেন। আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো।”

আদ্রিতাও মিষ্টি হেঁসে বললো,“আমারও।”
আরাফাত আর দাঁড়ালো না চলে গেল। তার মনে হচ্ছে তার থেকে ফারিশকেই আদ্রিতার সাথে বেশি মানিয়েছে। আরাফাত কফিশপ থেকে বের হতেই আদ্রিতা রাগী রাগী চেহারা নিয়ে এগিয়ে আসলো ফারিশের দিকে। ফারিশ তখনও চুপচাপ বসা। আদ্রিতা বললো,“কফিশপে আসলে যে একটু আশেপাশে তাকাতে হয় জানতেন না।”

ফারিশ সরাসরি তাকালো আদ্রিতার দিকে। জবাবে বললো,“সত্যি তাকাতে হয় জানতাম না তো।”

আদ্রিতা কি বলবে বুঝতে পারছে না। ফারিশ বললো,“আমরা কি সত্যি বিয়ে করছি?”

আদ্রিতা থতমত খেল প্রশ্নে। তখন রাগের বসে কি সব বলে দিয়েছে। ভাবতেই এখন লজ্জা লাগছে। ফারিশ আবার বললো,“উত্তর কিন্তু পেলাম না।”

আদ্রিতা নিচু হলো। ফারিশের চোখে চোখ রেখে বললো,“আপনি বলেছিলেন আপনি আমার চোখে যা দেখেন তা যদি সত্যি হয় তবে আমাদের রোজ সাক্ষাৎ হবে। অথচ গত সাতদিন যাবৎ আমাদের সাক্ষাৎ নেই। এতে প্রমাণ কি হয় ফারিশ আমার চোখের ভাষার সত্যিটা পড়তে পারে নি।”

আদ্রিতা সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আর কিছু বলতে পারছে না। তার ভীষণ লজ্জা লাগছে। আদ্রিতা যেতে নিলো। ফারিশ উঠলো। আদ্রিতার হাত টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আদ্রিতা চোখ বন্ধ করলো এতে। ফারিশ তার কানের কাছে নিজের ঠোঁটখানা নিয়ে ফিস ফিস করে বলে উঠল,
“ফারিশের প্রেমের রাজ্যে আপনাকে স্বাগতম ডাক্তার ম্যাডাম।”

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here