এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ২১

0
406

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২১

থমথমে মুখ নিয়ে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে আছে তার মা। নিরাশ চাহনী তার। মেয়েটা এমন আহত হয়ে বাড়ি ফিরবেন এটা তিনি আশা করে নি। বাহিরে ফজরের আজান দিচ্ছে। আদ্রিতা নিরাশ ভঙ্গিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,“কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো মা এবার তো রুমে যেতে দেও। শীত লাগছে।”

আদ্রিতার মা গালে হাত দিয়ে বললেন,
“পায়ের এমন অবস্থা কেমনে করলি আদু।”
“আরেহ মা এত ভাবছো কেন? কিছুদিন সময় দেও ঠিক হয়ে যাবো। হাল্কা একটু হাঁটতে পারলেই না হয় ডেকে পাঠিও তোমার সেই ইঞ্জিনিয়ার ছেলেকে।”

আদ্রিতার মা থমথমে কণ্ঠেই বললেন,“আর কি করার। আয় রুমে চল।”

আদ্রিতা উঠে দাঁড়ালো। মায়ের হাত ধরে খুব সাবধানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে গেল রুমে। যাওয়ার পথে জিজ্ঞেস করলো,
“রাফিন কি রুমে ঘুমোচ্ছে মা?”
“হুম।”
“আর বাবা?”
“সেও ঘুমাচ্ছে আজ খুব রাত করে বাড়ি ফিরেছিল।”
“ওহ আচ্ছা।”
“হুম। কিছু খাবি বানিয়ে দিবো?”
“না। এখন ঘুমাবো।”

আদ্রিতার মাও আর কিছু বললেন না। মেয়েকে রুমে বসিয়ে দিয়ে তিনি ছুটে গেলেন নিজেদের কক্ষে। নামাজ আদায় করতে হবে। স্বামী আর ছেলেকেও ডাকতে হবে।

আদ্রিতা ওয়াশরুমে ঢুকে হাল্কা একটু ফ্রেশ হয়ে গায়ে কম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। প্রচন্ড শীত করছে। পায়ের ব্যাথাটাও বড্ড পীড়া দিচ্ছে আবার। আদ্রিতা চোখ বন্ধ করে মনে করলো ফারিশের বলে যাওয়া শেষ কথাটা,
“আপনার চোখে আমি যা দেখি তা যদি সত্যি হয়। তবে আমাদের রোজ সাক্ষাৎ হবে।”

আদ্রিতা চোখ খুললো। কথাটা যেন পুরো তার হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছে। আদ্রিতা চোখে কি দেখলো ফারিশ! আদ্রিতার কোথাও গিয়ে মনে হয় সে ফারিশকে পছন্দ করে। তার উপস্থিতি তাকে আনন্দ দেয়। ভিতর থেকে ভালো লাগা সৃষ্টি করায়। তবে কি আদ্রিতা প্রেমে পড়েছে ফারিশের?’
হবে হয়তো। না হলে এত ভালো লাগছে কেন এখন! ইস! আদ্রিতা মিনমিনিয়ে হেঁসে উঠলো। একা রুমেও লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে। আদ্রিতা কম্বল দিয়ে মুখ ডাকলো। হঠাৎ তার মনে হলো কেউ বুঝি তার কানের পাশে মুখ নিয়ে বললো,
“আপনার লজ্জামাখা মুখশ্রী বড্ড সুন্দর ডাক্তার ম্যাডাম।”

আদ্রিতা চমকে উঠলো। দ্রুত মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে আশেপাশে চাইলো। অদ্ভুত ব্যাপার আশেপাশে কেউ নেই। আদ্রিতা দারুণভাবে চমকালো। সে কি হ্যালুসিনেশন করলো। কণ্ঠটা ফারিশের মতোই লাগলো। আর ডাক্তার ম্যাডাম সেও তো ফারিশই ডাকে। আদ্রিতা নিজের মাথা চেপে ধরলো। কি এক অদ্ভুত কান্ড। মনে মনে বললো,
“আদ্রিতা তুই তো গেছিস ফারিশ নামক যুবকের প্রেমেতে তুই চরমভাবে ফেঁসে গেছিস। প্রেমারোগে ধরেছে তোকে। আয় হায়।”

আদ্রিতা চোখ বন্ধ করলো। কম্বলটা শক্ত করে চেপে ধরে ডানদিকে ঘুরে আরাম করে ঘুমানোর চেষ্টা চালালো।”
—-
বেলা দুপুর বারোটা। ফারিশ বসে আছে পুলিশ স্টেশনের ভিতর এক পুলিশ অফিসারের সামনে। চোখ মুখ যথেষ্ট স্বাভাবিক। পুলিশ অফিসারের নাম ফারুক উদ্দিন। বয়সে পঞ্চাশ একান্ন হবে।”

ফারিশ বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে বসা। দৃষ্টি তার ফারুক উদ্দিনের চোখের দিকে। ফারিশের পাশেই আদিব দাঁড়ানো। তাকে বসার জন্য বললেও সে বসে নি। ভিতর থেকে বেশ ঘাবড়ে আছে। তবে প্রকাশে বোঝা যাচ্ছে না। ফারুক উদ্দিন একবার আদিবের দিকে তাকিয়ে ফারিশকে প্রশ্ন করলো,
“দু’দিন যাবৎ কোথায় ছিলেন?”

ফারিশের তড়িৎ উত্তর,
“কক্সবাজার। কেন আপনিও যাবেন নাকি?”

ফারুক উদ্দিন চোখ মুখ কুচকে ফেললেন ফারিশের পাল্টা প্রশ্নে। শক্ত কণ্ঠে বললেন,
“না।”
“তাহলে। আপনি কি বিয়ে করেছেন অফিসার সাহেব?”

কেঁশে উঠলো ফারুক উদ্দিন। চোখ মুখ কুঁচকে বললেন,
“কেন?”
“না বিয়ে করলে বউ নিয়ে কক্সবাজারে হানিমুনে যেতে পারেন ওখানের পরিবেশ হানিমুনের জন্য পুরো পারফেক্ট।”

ফারিশের কথা শুনে আশেপাশের পুলিশগুলো হা হয়ে গেল। ফারিশের ভঙ্গি স্বাভাবিক। ফারুক উদ্দিন আশেপাশে তাকিয়ে নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বললেন,
“আপনি কি এখানে মশকরা করতে এসেছেন?”
“আপনার কি আমাকে দেখে কমেডিয়ান মনে হচ্ছে।”
“আমার বয়স কত জানেন? এই বয়সে আমি হানিমুনে যাবো। আমার তো আপনার মতো ছেলেও আছে। ভবিষ্যতে তাকে পাঠাবো।”
“গুড আইডিয়া পাঠান। তবে আপনার যেহেতু আমার মতো ছেলে আছে তাহলে আপনার উচিত আমাকে তুমি করে বলা। আপনি আপনি করছেন কেন?”

ফারুক উদ্দিন কি বলবেন বুঝচ্ছেন না। ফারিশ বললো,“তবে আপনায় দেখে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না আপনার আমার মতো একটা ছেলে আছে। আমার তো মনে হয় আপনায় এখনও নতুন করে আবার বিয়ে দেয়া যাবে।”

ফারুক উদ্দিন হতভম্ব হয়ে গেলেন ফারিশের কথা শুনে। তাকে কি সত্যি ইয়াং লাগছে। কই আজ সকালেও তো তার বউ ‘বুইড়া খাটাশ’ বলে ডাকলো। ফারুক উদ্দিন নিজের মাথা ঝাড়লেন। এই ছেলে তাকে বিভ্রান্ত করার জন্য এসব বলছেন। ফারুক উদ্দিন নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠলেন,
“দেখুন,

ফারিশ পুলিশটিকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“আপনার দেখাদেখি বন্ধ হলে কাজের কথা বলুন কি জন্য ডেকেছেন আমায়?”

ফারুক উদ্দিন তব্দা খেয়ে গেলেন ফারিশের কথায়। এতক্ষণ কে দেখাদেখি করছিল। ফারুক উদ্দিন কিছু বলবেন তার আগেই পুলিশ স্টেশনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কিশোর নামের এক পুলিশ বলে উঠল,
“কিছুদিন আগে মাঝরাতে এক মাফিয়া হসপিটালে ঢুকেছিল আপনি কি তা শুনেছিলেন ফারিশ মাহমুদ?”

ফারিশ পিছন ঘুরে চাইলো। অল্প বয়সী এক পুলিশ অফিসার। বোঝাই যাচ্ছে নিউ এসেছে। ফারিশ কথাটা শুনলেও উত্তর দিলো না। পুনরায় ফারুক উদ্দিনের দিকে ঘুরে বললো,
“মাফিয়া। শুনেছিলাম বোধহয়।”

কিশোর এগিয়ে এলো। ফারিশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,“আমাদের ধারনা সেই মাফিয়া আপনি ছিলেন?”

ফারিশ উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো। শব্দ হলো অনেক। যেন অনেক বড় হাস্যকর কথা ছিল এটা। কিশোর তার পানে তাকিয়ে। ফারিশ বললো,
“আপনার ধারনা হলো ওই মাফিয়া আমি আর ঠাস করে আমায় ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।”
“একটা মেয়ে আপনার নামে অভিযোগ করেছিল?”
“যে করেছিল পরে সে তার ভুল বুঝতে পারে। যে রাতে মাফিয়া এটাক হয় সে রাতে আমার এক্সিডেন্ট হয়। আমি হসপিটাল যাই। মেয়েটি ভুল বুঝে।”
“ভুল বুঝে নাকি আপনি ভুল বুঝান।”

ফারিশ আবারও হাসে। বলে,
“কে কাকে কি বুঝিয়েছে তা বুঝতেই পারছি।”
“আমরা আপনার একটা ট্রাক পেয়েছি।”
“পেতেই পারেন আমার অসংখ্য ঔষধ ডেলিভারি করার ট্রাক আছে। ট্রাকে কিছু পেয়েছেন?”
“পাওয়া যায় নি তবে আমি শিওর আপনি সরিয়েছেন।”

ফারিশের বিরক্ত লাগছে। কপাল চুলকে প্রশ্ন করলো,“আপনার কাছে কোনো প্রমাণ আছে আমি মাফিয়া?”

কিশোর চুপ। তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। ফারিশ আর কিছুর অপেক্ষা করলো না। আচমকা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আদিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,“চলো আদিব।”

কিশোর বললো,
“আমাদের জিজ্ঞেসাবাদ শেষ হয় নি।”

ফারিশ এগিয়ে গেল কিশোরের দিকে। কিশোরের কলাট ঠিক করতে করতে বললো,“যেদিন কোনো প্রমাণ নিয়ে ডাকবেন ওইদিন জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আমার সময়ের মূল্য আছে আপনার হয়তো নেই। ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।”

ফারিশ চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে ভাব নিয়ে পুলিশ স্টেশন থেকে বের হলো। কিশোর রাগ ভরা মুখশ্রী নিয়ে ফারিশের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে জানে এই ছেলেটাই মাফিয়া মাদকদ্রব্যসহ অনেক বেআইনি কাজ করে ছেলেটি কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ধরতে পারছে না। এছাড়াও ফারিশের ওপর একটা রাগ আছে কিশোরের।
—-
মাঝপথে কেটে গেল সাতদিন। কফিশপে বসে আছে আদ্রিতা। অপেক্ষা করছে আরাফাতের জন্য। ফাইনালি সে তার মামার ঠিক করা ছেলে আরাফাতের সাথে দেখা করতে এসেছে। তার পায়ের চোট মোটামুটি কমেছে। একা একা হাঁটতে পারে। আদ্রিতা তার হাত ঘড়িটা দেখলো। বিকাল চারটা বাজে। এই আরাফাত এখনো আসছে না কেন? আদ্রিতার বিরক্ত লাগছে।’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আমি জানি আজকের পার্টটা খুব ছোট হয়েছে। আসলে শরীর ভালো নেই। দু’দিন যাবৎ গল্প দেই নি আজও না দিলে কেমন হয়। তারওপর কিছু পাঠককে বলেছি আজ দিবো তাই ছোট করে দিলাম। ইনশাআল্লাহ পরবর্তী পর্ব বড় করে দিবো। রিচেক দেয়া হয় নি। ভুল থাকতে পারে এর জন্য আমি দুঃখিত]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here