তোকেই_ভালোবাসি #লেখনীতে_আমেনা_আক্তার_আখি #পর্বঃ৯

0
231

#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখনীতে_আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ৯

কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।শীতের শেষ,বসন্তের শুরু।কয়েকদিনে অনেক কিছু পাল্টেছে।কারো মন পাল্টেছে।লেগেছে প্রণয়ের রং।
ইফা,মিথিলা কলেজে গিয়েছে।আসতে দুপুর।হক বাড়িতে সবাই আজ ব্যস্ত।বিশেষ করে বাড়ির গিন্নিরা।তারা একেকটা পদ রান্না করতে ব্যস্ত।মিহু একবার নিচে উকিঝুকি মেরে আবার নিজ ঘরে চলে যায়।

মিথিলা আর ইফা দুপুরে বাসায় ফিরে।দুজন বাড়ি ঢুকেই সোজা মিহুর রুমে চলে যায়।মিথিলা মিহুর রুমের চারপাশ ভালো করে দেখে নিয়ে ইফার দিকে তাকিয়ে বলে,

“কিরে!এই মহিলা আবার কই গেল।বিয়ের কথা শুইনা আবার এখনি শ্বশুর বাড়ি চইলা যায় নাই তো।দেখছিস আমি ঠিকই বলি এই মেয়ে আমাদের মান সম্মান সব শেষ করে দিবে। হায় আল্লাহ!”

বলে মিথিলা কপাল চাপড়াতে লাগে।ইফা বিরক্তি সহিত মিহুর দিকে তাকায়।বিরক্তি নিয়ে বলে,

“এই তোমার এই ঘ্যাঁনঘ্যাঁন প্যানপ্যান অফ করো তো।মিহু আপু বাড়িতেই আছে।”

“আছে তো কই দেখা?!”

ইফা মিথিলার থেকে মুখ ফিরিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।মিথিলাকে আস্তে করে ডাকে।মিথিলা ইফার পিছন পিছন যায়।মিহু তখন বেলকনিতে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল।বেশ খানিক্ষন যেতে মিহু ফোন নামিয়ে পিছনে ঘুরে তাকায়।মিহু পিছনে ঘুরতে মিথিলা, ইফা শব্দ করে হেসে দেয়।দুজনের হাসি দেখে মিহু ভ্রু কুঁচকে তাকায়।মিথিলা বলে ওঠে,

“ইফা দেখছিস মানুষের কত প্রেম।আহা!এত প্রেম তারা রাখে কোথায়।”

“কাঁথার তলে মনে হয়!”

“না না আজকে থেকে আমি আর কাঁথা গায়ে দিব না!”

ইফা,মিহু দুজনে একসাথে বলে ওঠে,, “কেনো?”

“সুন্দর করে রেখে দিব যাতে প্রেমে পড়লে প্রেম ভালোবাসা সুন্দর করে ওই কাঁথার তলে রেখে দিতে পারি।”

ইফা আর মিহু দুজনে বোকা দৃষ্টিতে তাকায় মিথিলার দিকে।মিহু মুখটা কুঁচকে বলে,

“চলতো ইফা।এ মেয়ের মাথার তার ছিঁড়া!”

মিহু কথাটা বলে ঘরে চলে যায়।পিছনে ইফাও যায়।মিথিলা দুজনের যাওয়ার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।ও ঘরে ঢুকে মিহুর সামনে দাড়িয়ে বলে,

“এই তুই কি আমাকে পাগল বললি?”

“তোকে পাগল কখন বললাম।ইফু আমি ওকে একবারও পাগল বলেছি?”

ইফা মিহুর কথায় দুই দিকে মাথা নাড়ায়।মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলে,

“মিথু আপু।তুমি তো নিজেকে নিজে পাগল বলছ?যাক এতো দিনে তাহলে বুঝেছ যে তুমি পাগল।”

“ইফার বাচ্চা!”

মিথিলার চিল্লানি শুনে মিহু কান ধরে রাগী দৃষ্টিতে মিথিলার দিকে তাকায়।ইফা চোখ বড়বড় করে বলে,,

“এ মিথু ভেবেচিন্তে কথা বলছিস তো।মানে তুই কি আমার মান ইজ্জত পানিতে ডুবাতে চাস নাকি।আমার বাচ্চা কই থেকে আসবে।তওবা তওবা,ছি!”

মিথিলা এবার রেগে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।মিথিলা যেতে ইফা আর মিহু জোরে হেসে দেয়।দুজনের হাসির আওয়াজ বাইরে থেকে মিথিলা স্পষ্ট শুনতে পারে।ধুপধাপ পা ফেলে নিজের ঘরের দিকে আগায়।
মিথিলার ঘরের আগে ইয়াশের রুম।মিথিলা একবার ইয়াশের রুমে উকি মারে।যা ভেবেছিল ইয়াশ নােই বাড়িতে।তাই নিজের রুমে চলে গেল।নাহলে ইয়াশকে একটু জ্বালাতন করে আসত।

———————————————–

ভ্যাপসা গরমে শাড়ি পড়ে অতিষ্ট মিহু।তার মনে হচ্ছে শাড়িটা খুলতে পারলে ভালোই হতো।আবার একেতো শাড়ি পরিয়েছে তার উপর সাজ।এ নিয়ে মিহু মিথিলা আর ইফাকে তখন থেকে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে।ও তো আর প্রথমবার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সামনে যাচ্ছে না।তো এতো সাজানোর কি আছে।
মিহুর প্যানপ্যান শুনে মিথিলা ওর পাশে ধপাশ করে বসে মিহুর দিকে তাকিয়ে বলে,,,

“বইনা, তুমি কি বিয়েটা করতে চাচ্ছ না?”

“মানে?বিয়ে করতে চাইব না কেন?”

“তো সাজাতে দিচ্ছ না কেন?”

মিথিলা একবার নিজের পরনে জামদানি শাড়িটা দেখে নিয়ে, আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের মেকাপ দেখে বলে,

“দেখ তারা আমাকে আগেও দেখেছে।আর আকদ তো হয়েই আছে।বিয়ে না হওয়ার কথা আসছে কোথা থেকে।আর এভাবে সাজাচ্ছিস বা কেন?মা তো শুধু শাড়ি পরাতে বলেছে।তোরা মাদবারি করিতেছিস কেন?বেয়াদ্দপ,আমার জীবনটা ঝালাফালা করে দিল দুইটায়!”

“এই অফ যাও!আমরা লাভ ছাড়া কোনো কাজ করিনা।সাজাতে দেও এবার।”

“এই তোদের আমাকে সাজিয়ে কি লাভ?”

এবার ইফা বলে ওঠে,, “সেটা তোমার উনিকে জিজ্ঞেস করে নিও!”

ইফা কথাটা বলতে মিথিলা হেসে দেয়।সাথে ইফাও হাসে।মিহু এবার রাগী দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকায়।দুজনকে ঠেলে বের করে দেয় রুম থেকে।রুমের দরজা আটকিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে লজ্জামিশ্রিত হাসে।

———————————————–

মিথিলা প্রায় একঘন্টা ধরে ড্রইংরুমে বসে আছে।কিন্তু না যার জন্য বসে আছে সে যেন আসছেই না।মিথিলাকে এতক্ষণ ধরে বসে থাকতে দেখে রুকমা হক এগিয়ে এসে বলেন,,

“মিথু মা,তোর কি কিছু লাগবে।অনেকক্ষণ ধরে বসে আছিস এখানে।”

মিথিলা রুকমা হকের দিকে তাকিয়ে দাত বের করে হাসি দিয়ে বলে,, “না না মেজো মা আমার কিছু লাগবে না।আমিতো, আমিতো ভাইয়াদের জন্য অপেক্ষা করছি।”

“ওহহ! আচ্ছা ওনারা কাছাকাছি চলে এসেছে আপা বলল।আচ্ছা থাক।”

“হ্যাঁ!বলতে তো পারছি না তোমার ছেলের জন্য অপেক্ষা করছি।”

শেষের কথাটা বিরবির করে বলে।আরো কতক্ষণ বসে থাকতে কলিংবেল বেজে ওঠে।রান্নাঘর থেকে রুকমা হক দরজা খুলে দিতে বলে মিথিলাকে।মিথিলা ফটাফট উঠে দরজা খুলে দেয়।ভেবেছিল ইয়াশ হবে কিন্তু না মিহুর শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসেছে।মিথিলা মিষ্টি হেসে সবাইকে ভিতরে আসতে বলে।
সবাইকে বসতে বলে মিথিলা রান্নাঘরে তিতলি হককে বলতে যায়।তিতলি হক তাদের জন্য শরবত এবং কিছু মিষ্টি নিয়ে পরিবেশন করে।ততক্ষণে ইকবাল হক,মিনহাজ হোক নিচে নেমে পড়েছেন।মিথিলা সবাইকে দেখে নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।তখন সামনে মিহুর দেওর রিফাত এসে দাড়ায়।মিথিলা প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে তাকে সালাম দেয়।রিফাত সালামের উত্তর দিয়ে বলে,,

“কেমন আছো?”

মিথিলা মুখে হাসি টেনে বলে,, “জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো,ভাইয়া।আপনি?”

রিফাত নাক মুখ কুঁচকে বলে,, “ভাইয়া! দেখো মিথিলা আমি তোমার ওয়ান ইয়ার সিনিয়র তাই বলে ভাইয়া, আপনি এসব কি?”

“সিনিয়র তো সিনিয়র ই তাইনা।আর আপনি আমার বড় তো ভাইয়া বলবো না তো কি বলব?”

“নাম ধরে ডাকতে পারো।”

মিথিলা এবার ভ্রু গুটিয়ে বলে,, “সরি ভাইয়া আপনাকে আমি নাম ধরে ডাকতে পারব না।”

“কেন?”

“বারণ আছে!”

“কে বারণ করেছে।”

“আমার উনি।”

কথাটা বলে মিথিলা লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে।মাথা নিচু করে বলে,,

“আসলে আমার উনি বলেছে।উনি বাদে আর সব ছেলেকে ভাইয়া ডাকতে।আর যদি ভাইয়া ডাকতে বারণ করে তাহলে চাচা ডেকে দিতে।তাহলে ভাইয়া আমি কি এখন আপনাকে চাচা ডাকব?”

মিথিলা প্রশ্নটা করে ভ্রু নাচার।রিফাত টাস্কি খেয়ে বলে,,

“তাই বলে চাচা!আর তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে।”

“হ্যাঁ আছে তো।”

“ওহহ!”

“আচ্ছা ভাইয়া বায়,পরে কথা হবে।”

রিফাত ভোতা মুখ করে বলে,,”হ্যাঁ হ্যাঁ বায়।যাও”

মিথিলা রিফাতের পাশ কেটে নিজের রুমের দিকে যায়।মাঝপথে গিয়ে হেসে দেয়।কি গাধাটা না বানালো।আর যা বলেছে সবটা মিথ্যেও তবে বলেনি।তার তো প্রিয় মানুষ আছে।মিথিলা নাচতে নাচতে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল।ইয়াশের রুমের সামনে যেতে রুমের ভেতর থেকে গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসে।মিথিলা দাড়িয়ে যায়।কি করবে ভাবতে থাকে।

চলবে, ইন শা আল্লাহ 🍁

#তোকেই_ভালোবাসি
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122116347122106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here