#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ২৩
” ভিতর থেকে খালা সজীব কে দেখতে পেয়ে বললো এইতো আমার ছেলে সজীব এসে গেছে আয় বাবা ভিতরে আয় । ”
” মিতু দরজা থেকে সরে দাঁড়াল আর সজীব মিতুর চোখে চোখ রেখে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো । মিতু খাটের পাশে বসে আছে আর সজীব প্রথমে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এল । তারপর খালার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে বললো , আমি উপরে ছাঁদে যাচ্ছি রুমের মধ্যে তো অনেক গরম । কাজ শেষ করে আপনার কাছে মোবাইল দিয়ে তারপর আমি ওই বাসায় যাবো । এ কথা বলে সজীব রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর চোখ দিয়ে মিতুকে ইশারা করে গেল যার অর্থ হচ্ছে তুমিও ছাঁদে আসো । ”
রুমের মধ্যে সত্যি সত্যি অনেক গরম কারণ রুমে চুলোয় রান্না বসানো হয়েছে । তাই আগুনের তাপে রুমের সকল বাতাস গরম হয়ে গেছে আর তা ফ্যান এর বাতাসে কাজ হচ্ছে না । আরো কিছুক্ষণ পরে মিতু নিজের মোবাইলের রিংটোন একা একা চালু করলো তারপর হ্যালো হ্যালো করছে । পরে আবার বললো , নেটওয়ার্ক এত সমস্যা করে কেন ? এ কথা শুনে সজীব এর খালা বললো , ” তুমি তাহলে ছাঁদে গিয়ে কথা বলো আর সমস্যা নেই ছাঁদে পরিচিত সজীব আছে । ”
” মিতু মনে মনে বললো , এটাই তো আমি চাই । ”
ছাঁদের কিনারে দাঁড়িয়ে সজীব মোবাইল এর সেটিং নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে । মিতু ছাঁদে এসে আস্তে আস্তে সজীব এর কাছে গেল তারপর বললো , বিশ্বাস কর আমি জানতাম না এটা তোমার খালার বাসা যদি জানতাম তাহলে আসতাম না ”
” সজীব বললো , তুমি কিভাবে চেনো ? ”
” আমি তেমন চিনি না তবে রুমের মধ্যে লাল কালা ছাপার বোরকা পরা ভাবি তোমার আন্টির সাথে একই অফিসে চাকরি করে । ”
” ওহহ আচ্ছা আমি তো মনে করলাম যে আমাকে খুঁজতে চলে আসছো । তোমাকে দেখে আমি সম্পুর্ণ হতবাক হয়ে গেছি যেটা বোঝাতে পারবো না । ”
” আমিও ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমার পিছনে পিছনে এই বাসায় চলে আসছো কিন্তু যখন দেখলাম নাহার আন্টি তোমাকে তার ছেলে বললো তখন বুঝতে পারছি । ”
” আমি আজকে প্রথম চাকরি করে আসলাম । ”
” বৃষ্টি আপু যেই অফিসে চাকরি করে সেখানে ? ”
” হ্যাঁ ”
” আমি তার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম আপনি কি আমার আশা পুরন করবেন ? ”
” আগে আমার সাথে সম্পর্ক ভালো হোক তারপর নাহয় তোমার সাথে কথা বলিয়ে দেবো । ”
” আচ্ছা ঠিক আছে , আপনার সাথে না চাইতই তো দেখা হয়ে গেছে । ”
” হুম ঠিক বলছো , একটা প্রশ্ন করবো ? ”
” করুন । ”
” তুমি আমাকে কিছুক্ষণ আপনি করে বলো আবার কিছুক্ষণ তুমি করে বলো , ঘটনা কি ? ”
” আসলে আপনি করে বললে কেমন যেন কাছে কাছে মনে হয় না , আবার তুমি করে বললে কেমন যেন লজ্জা লজ্জা অনুভব করছি । ”
” আচ্ছা ঠিক আছে নিচে যাও তাহলে । ”
” আপনি যাবেন না ? ”
” হ্যাঁ একটু কাজ আছে , প্লে স্টোর থেকে কয়েকটা সফটওয়্যার ডাউনলোড দিলাম এগুলো আপডেট হলে তারপর আসবো । ”
” তাড়াতাড়ি আসবেন আমরা কিন্তু চলে যাবো এখনই । ”
” আচ্ছা ঠিক আছে । ”
★★
বাসায় যাবার পথে সজীব উকিল সাহেবের কাছে কল দিয়ে রেকর্ডের কথা জানালেন । ফরিদ ভাইকে বলে যেভাবেই হোক রেকর্ড টা যেন উকিলের কাছে পৌঁছে যায় সেই ব্যবস্থা করতে বললো ।
বন্দরটিলা মোড়ে এসে রকির কাছে কল দিয়ে ওর জন্য দাঁড়িয়ে রইলো । রকি আসার পরে দুজনেই একসাথে বাসায় চলে গেল । সারাদিনের ক্লান্তি শেষে সজীব গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো কারণ নতুন নতুন সারাদিন দাঁড়িয়ে ডিউটি করা জেলের মধ্যে থাকার চেয়েও কষ্ট মনে হচ্ছে । বৃষ্টির সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভালো হতো কিন্তু বৃষ্টি হয়তো ঘুমিয়ে গেছে তাই মোবাইল হাতে নিয়েও কল করা হলো না । রাতের খাবার শেষ করে সজীব সুয়ে ছিল বৃষ্টি যখন কল দিয়েছে তখন এগারোটা বেজে গেছে । সজীব এর চোখে তন্দ্রা লেগে গেছে তবুও বৃষ্টির কল পেয়ে পঞ্চ ইন্দ্রিয় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বৃষ্টির সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করছে ।
” বৃষ্টি বললো , কি করো তুমি ? আমি তো ভাবলাম ঘুমিয়ে গেছো তাই কল দিতে চাইনি । পরে ভাবলাম একবার ছোট করে দিয়ে দেখি যদি চাতক পাখির মতো কেউ অপেক্ষা করে তাহলে তো তার ঘুম আসবে না । ”
” ঘুম সত্যি সত্যি এসেছে কিন্তু আমার সমস্ত শরীর মন প্রাণ জুড়ে তোমার অস্তিত্ব বিরাজ করে । তাই জাগ্রত কিংবা নিদ্রিত , ব্যস্ত কিংবা অবসরে , ক্লান্ত হয়ে কিংবা আবেশে , সুষুপ্ত কিংবা অর্ধনিদ্রীত যেই অবস্থায় থাকি না কেন সেই শরীরে তোমার উপস্থিত সর্বদা সবসময়ই কাম্য । তোমার আগমনে আমার প্রতিটি শিরায় শিরায় আনন্দ ঘুরে বেড়ায় । মনটা চঞ্চল হয়ে যায় , হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠে দ্রুত টিপটিপ করতে থাকে । ”
” এমন একটা মানুষের ভালবাসা আমার মতো নিঃশ্ব ভালবাসার ভিখারির বড্ড দরকার ছিল । কিন্তু আমি এতটাই অভাগা যে সেই ভালবাসাকে ইচ্ছে থাক্ সত্বেও আঁকড়ে ধরতে পারিনা । ”
” একটা কথা বলবো বৃষ্টি ? ”
” বলো । ”
” তোমার এই ভালবাসা গ্রহণ করতে না পারার না বলা কথা গুলো আমাকে বলতে পারো ? যাকে মন প্রাণ সবকিছু উজাড় করে দিয়ে তার ভালবাসার জন্য দিনরাত অপেক্ষা করি । সেই মানুষটা যদি তার বুকের গহীনে লুক্কায়িত কষ্ট রেখে ঘুমাতে যায় তবে আমিও যে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে শান্তি পাবো না । ”
” কথা দিচ্ছি তোমাকে একদিন হঠাৎ করে সবকিছু বলবো , আর সেই সময়টা খুব তাড়াতাড়ি হবে । মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এমন অপ্রত্যাশিত জীবন ছেড়ে দিয়ে তোমার হাত ধরে কোন এক নির্জন চরের মাঝে গিয়ে ছনপাতা দিয়ে ঘর তৈরি করি । সেখানে তুমি আমি ছাড়া আর কেউ থাকবে না , পৃথিবীর কোন চাহিদা সেখানে আমাদের মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়াবে না । কিন্তু নিজের পরিবারের কথা যখন মনে হয় তখন সবকিছু তুচ্ছ মনে হয় । সত্যি সত্যি যদি তোমার সাথে অনেক দুরে হারিয়ে যেতে পারতাম তাহলে সবুজ ঘাসের উপর তোমার বুকে মাথা রেখে রাতের আধারে জোৎস্না দেখতাম । ”
” তোমার পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি তো আমি দিলাম বৃষ্টি , তবুও কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো না ? ”
” আমাদের বাসার কাছে সেই মামুন নামের ছেলেটার কথা মনে আছে তোমার ? ”
” হ্যাঁ মনে আছে । ”
” সেও আমাকে পছন্দ করে , মাঝে মাঝে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই আমার কথা বলে । মা বাসায় এসে বাবার কাছে তার কথা বলে , মা বলে ” আমার সাথে যদি ওই ছেলের বিয়ে দিতে পারে তাহলে নাকি আমাদের আর কষ্ট থাকবে না । আমাকে গার্মেন্টসে চাকরি করতে হবে না , স্বামীর সাথে থেকে চট্টগ্রাম শহরে জমিদার গৃহিণী হয়ে যাবো । তুমি তো জানো চট্টগ্রামে বাড়ির মালিকদের জমিদার বলে ডাকা হয় তাই যে ব্যাক্তি দুটো রুম ভাড়া দিতে পারে সেও চট্টগ্রামে একজন জমিদার । কিন্তু মা যদি সত্যি সত্যি এমন সিদ্ধান্ত নেয় সেদিন না পারবো আত্মহত্যা করতে আর না পারবো অমন অপমান সহ্য করে বিয়েে পীড়িতে বসতে । ”
” তোমার পরিবারতো আমার ভালবাসার কথা জানে তাহলে তুমি যদি বলো যে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও তাহলে তো হয়ে যায় ৷ ”
” না হয়ে যায় না সজীব ! তুমি যেদিন প্রথম আমার এই বাসায় এসেছিলে সেদিন তো মায়ের সঙ্গে দেখা হয়নি তোমার । বাবার সাথেও দেখা হয়েছে ঠিকই কিন্তু কথা হয়নি তোমার । তুমি যাবার পরে যখন মা এলো তখন বাবাও জেগে ছিল , আমি তোমার আসার কথা তাদের কাছে বললাম । তখন মা এমন কিছু কথা বললো যে আমার নিজের তখন মনটা খারাপ হয়ে গেল । বাবা এমনিতেই স্পষ্ট কথা বলতে পারে না আবার তারমধ্যে তিনি অচল মানুষ তাই বাবার মতামত প্রধান্য লাভ করে না । মা সেদিন বললো , তুমি খুনের মামলার আসামী তাই তোমার সাথে আমার বিয়ে কখনও নাকি সম্ভব না । তাছাড়া তোমার পড়াশোনা সব বন্ধ হয়ে গেছে তাই এখন তোমার সাথে আমার জীবন জড়াতে দিবেন না । ”
” কিন্তু আমি তো নির্দোষ ! ”
” সেটা মা-বাবা সবাই বিশ্বাস করে কিন্তু একবার যে দাগ লেগে যায় সেটা আর নাকি মোছা যায়না । মা বললো , মামুন নামের ছেলেটা নাকি আমাকে বিয়ে করবে তাই সে তার বাবার কাছে সবকিছু বলে নাকি আমাদের বাসায় লোক পাঠাতে চায় । মহিলা মানুষ সবসময় একটু হঠাৎ করে বোঝালে বা লোভ দিয়ে তার মানসিকতা পরিবর্তন করা যায় । আমার মাও পরিবর্তন হয়ে গেছে তাই তিনি তোমার আগমন ভালো করে হজম করতে পারে নাই । ”
” তাহলে তুমি আমার সাথে চলো , আমরা চলে গিয়ে বিয়ে করে কিছুদিন পরে ফিরবো কিংবা তোমার পরিবারকে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকা নিয়ে যাবো । কারণ তখন মামুন নামের ছেলেটা কোন ঝামেলা করতে পারবে না । তবুও তুমি আমি প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে কিন্তু আমাদের ভালবাসার মাঝে পূর্ণতা দিতে পারি । ”
” সেটা আমি পারবো না সজীব , তোমার স্যার মানে আমার বাবা অমন শিক্ষা দেননি আমাকে । তাই বাস্তব যত কঠিনই হোকনা কেন সেটা আমি মানার সিদ্ধান্ত নিলাম । সেজন্য তোমাকে আমার জীবনে জড়িয়ে শুধু শুধু কষ্ট দিতে চাই না । ”
” হাহাহা হাহাহা হাহাহা । ”
” হাসছো কেন ? ”
” শুধু শুধু জীবনে জড়াতে চাওনা মানে কি ? আমি যে অনেক আগে থেকেই তোমার জীবনে জড়িত গেছি তুমি জানোনা ? ”
” জানি আমি , কিন্তু আমি তো তোমাকে আমার পক্ষ থেকে কখনো প্রতিশ্রুতি দি নাই । তবে মনের মধ্যে সম্পুর্ন স্থানটা তোমার জন্য রেখে দিলাম তাই সারাজীবন এই স্থানটা তোমার থাকবে । রাফসানের স্মৃতি গুলো এখন বেশি মনে পরে না কারণ তাকে আমি ভালবেসেছিলাম কিশোরী বয়সে । তাই তখন আবেগের দখল ছিল বেশি যার জন্য খুব কষ্ট মনে হতো , কিন্তু জীবনের গভীরতম কষ্ট গুলো উপলব্ধি করতে পারি নাই তখন । ”
” তাহলে আমার এত বছরের ভালবাসা শুধু ঘুমন্ত অবস্থায় মনের মধ্যে গলে পঁচে যাবে ? তোমার মনে যায়গা পাবে না কোনদিন ? তোমার সাথে পাশাপাশি হেঁটে অনেক দুর যাওয়া হবে না আর ? ”
” কে বলেছে তুমি আমার মনের মধ্যে নেই ? আমি তো তোমাকে বললাম সারাজীবন আমার মনের মধ্যে তোমার বসবাস থাকবে । আমি এখনো চেষ্টা করবো মা’কে বুঝিয়ে আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তোমার সাথে জীবনের বাকি অধ্যায়টা গড়ার । কিন্তু তবুও প্রকৃতি যদি তোমার সাথে এ জীবনের সুখের রাজ্য লিখে না থাকে তাহলে সারাজীবন তুমি আমার মনের মধ্যে চুপটি করে ঘুমিয়ে থাকবে । মনের সেই ঘুমন্ত তোমাকে গভীর রাতে জাগ্রত করে কান্নায় স্মরণ হবে । ”
” ওহহ আচ্ছা । ”
” একটা অনুরোধ আছে তোমার কাছে , বলতে পারো এটা আমার একটা অধিকার । ”
” কি ? ”
” তোমার ওই মনের মধ্যে থেকে আমাকে কখনো বিতাড়িত করে দিও না , কাউকে নতুন করে তোমার ভালবাসা দিও না । আমি যদি তোমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করি তবুও আমার সাথে রাগ করে এমনটা করবে না । কষ্ট পাবো ভিষণ কষ্ট পাবো । ”
” তোমার সাথে যদি ভালবাসার ঘর বাঁধতে না পারি তাহলে জীবন থেকে এই অধ্যায়টা বন্ধ করে দেবো কথা দিচ্ছি । তবে আমি বিশ্বাস করি একদিন সত্যি সত্যি তোমাকে পাবো কারণ জীবন এক বিরক্তিকর অধ্যায় তবুও পরবর্তী পৃষ্ঠা জানার জন্য আমরা শত কষ্টের পরেও পাতা উল্টে দেখি । ”
” তুমি আমি এক অফিসে আছি সারাদিন তোমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আমার সময় পেরিয়ে যাবে । মন চাইবে ভালবাসা দিয়ে চোখের মণি করে রাখতে কিন্তু আবার নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে হবে । ”
” আমি জোর করবো না তোমাকে , তবে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে ভালবেসে যাবো অবিরাম অন্তহীন কেন্দ্রীভূত সুবিস্তীর্ণ দৃশ্যপথ দিয়ে । তোমার আমার জীবন টা এখন কোন সমীকরণে অবস্থান করে জানে বৃষ্টি ? ”
” কি ? ”
” মাইলের পর মাইল দুটো সমান্তরাল রেখা রেললাইনে বয়ে গেছে । তারা একে অপরের কতটা কাছাকাছি কিন্তু সামান্য একটু ফাঁকা আছে তাদের মাঝে । আর সেই সামান্য ফাঁকা স্থানটা তাদের আর কোনদিন শেষ হবে না । হাজার হাজার মাইল পথ এক সময় শেষ হয়ে যাবে কিন্তু তবুও তারা সেই শেষ গন্তব্যে পৌঁছলেও এক হতে পারবে না । ”
” অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমাবে কখন ? ”
” জানি না ”
” চোখ বন্ধ করে চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো নাহলে কাল সকালে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হবে । অফিসে গিয়ে ডিউটি করতে পারবে না তাই এখনই ঘুমিয়ে পরো বারোটা বেজে গেছে । ”
” ঠিক আছে চেষ্টা করবো তবে নিশ্চিত না , তুমি খেয়েছো রাতে ? ”
” হ্যাঁ , আচ্ছা ঠিক আছে শুভ রাত্রি । আগামীকাল সকালে দেখা হবে । ”
” ঠিক আছে শুভ রাত্রি । ”
★★
২৮ দিন পরে ।
সজীব চাকরি নেবার মাস খানিক পেরিয়ে গেছে , এর মাঝে তাদের কথা বর্ননা করার মতো অনেক কিছু ছিল । কিন্তু সবকিছুর কাছে না গিয়ে সংক্ষিপ্ত করে আপনাদের বলছি ।
খুলনা শহরে সজীব এর দিয়ে আসা সেই নাম্বার আর ফরিদ এর মাধ্যমে পাঠানো রেকর্ড দিয়ে তদন্ত করে পুলিশ প্রথমে একজনকে আটক করে । যাকে আটক করা হয়েছে তার মোবাইল নাম্বার দিয়ে কল করা হয়েছে কিন্তু কথা বলেছে আরেকজন । তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করার পরে সে আরো তিনজনের নাম প্রকাশ করে । পুলিশ তাদের মধ্যে একজনকে আটক করতে পেরেছে আর বাকি দুজন এখনো পলাতক । পলাতক দুজনের মধ্যে একজন হচ্ছে খালিশপুরের মাজহারুল সাহেবের ছেলে । মাজহারুল সাহেব খুলনা আয়কর অফিসের মধ্যে চাকরি করে । মোটামুটি অনেক টাকার মালিক । আটককৃত দুজনের মতে পুলিশ জানতে পেরেছে যে হাসপাতালে তুলিকে নাকি সেই মাজহারুল সাহেবের চক্রান্তে হত্যা করা হয়েছে । তিনি নিজের সন্তান ও মান সম্মান বাঁচাতে এমন ঘৃণিত কাজ করতে বাধ্য হয়ে গেছেন । বাকি দুজনকে আটক করার জন্য পুলিশ তৎপর চেষ্টা করে যাচ্ছে । তাদের আটক করার পরে বাকি প্রমাণ করার কাজ ।
অফিসে সজীব আর বৃষ্টির ভালবাসা সত্যি সত্যি রেললাইনের মতো চলছে । দুজন দুজনকে কত ভালবাসে কিন্তু একসাথে এক যায়গা থেকেও কেউ কাউকে আবদ্ধে বাধতে চায় না । তবুও দুজনের একটা পরিতৃপ্তি হচ্ছে সারাক্ষণ কাছাকাছি পাশাপাশি চলা । বিগত এই ২৮ দিনের মধ্যে লাইনে মোটামুটি সবাই ওদের কথা জেনে গেছে । সালমা আক্তার সজীব কে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে কিছু কিছু সত্য কথা জেনে নেয় । কিন্তু সবাই তো আর সত্যি কথা বিশ্বাস করে না , তাই লাইনের মধ্যে বা পাশের আরো দু একটা লাইনেও জানাজানি হয়ে গেছে । অনেকে বৃষ্টির কাছে এসে মাঝে মাঝে বলে যে ” তোমাদের দুজনকে বেশ মানিয়েছে । ” হঠাৎ করে এসে কেউ আবার সজীব এর প্রশংসা করে বৃষ্টির সামনে । বৃষ্টি চুপিচুপি একটা পরিতৃপ্তির হাসি দেয় কারন সে সজীব কে জানে ।
|
|
আজকে লান্সের ঘন্টা খানিক পরে একটা বিশাল ঝামেলা আরম্ভ হয়ে গেল । বৃষ্টি মেশিনে সমস্যা থাকার কারণ তার সামনে অনেক কাজ জমা হয়ে গেল ৷ লাইনের সামনে কাজ যাচ্ছে না আর টার্গেট কমে যাচ্ছে তাই সুপারভাইজার এসে বৃষ্টির সঙ্গে চেচামেচি আরম্ভ করলো । বৃষ্টি প্রথম প্রথম ভালো করে বোঝানোর চেষ্টা করলো যে তার মেশিনে সমস্যা হচ্ছে । কিন্তু সুপারভাইজারকে টার্গেট কম হবার জন্য এপিএম স্যার অনেক গালাগালি করে । যার জন্য তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল , তাই বৃষ্টির সাথে উল্টো পাল্টা ব্যবহার করতে লাগলো ৷ বৃষ্টির ও উল্টো পাল্টা ব্যবহার শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেল তখন সেও সুপারভাইজারের মুখে মুখে তর্ক শুরু করে দিল । কথার মধ্যে সজীব এর প্রসঙ্গ চলে এল আস্তে আস্তে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেল । আর সুপারভাইজার চিৎকার দিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো যে বৃষ্টি নাকি ইচ্ছে করে কাজ বন্ধ করেছে । কারণ সে নাকি কাজ রেখে সারাক্ষণ সজীব এর দিকে তাকিয়ে থাকে । ঠিক সেই মুহূর্তে ফ্লোরে আসলো অফিসের জিএম স্যার , তিনি চিৎকার চেচামেচি দেখে বৃষ্টিকে আর সুপারভাইজারকে নিজের চেম্বারে যেতে বলে বেরিয়ে গেল । সমস্ত লাইনের মধ্যে সেই মুহূর্তে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে । কাজের সাবজেক্ট চাপা পরে গেল কিন্তু সজীব আর বৃষ্টির সম্পর্কটা সুপারভাইজার তখন সবার সামনে তুলে ধরলো ।
চলবে…
আইডি নিয়ে খুব ঝামেলার মধ্যে দিন যাচ্ছে । যেকোনো সময় হয়তো ডিজেবল হয়ে যাবে । তাই আমাকে যেন খুব সহজেই খুঁজে পান সেজন্য আমি আমার ব্যাক্তিগত একটা পেজ চালু করেছি । আমার লেখালেখির বিগত ৯ মাসের সকল গল্প সেখানে পোস্ট করা হয়েছে । যদি আমার প্রতি আপনাদের ভালবাসা থাকে এবং আমাকে হারাতে না চান তাহলে আমার পেজে লাইক দিয়ে ফলো করে সাথে থাকুন ।
পেজ লিঙ্ক। https://www.facebook.com/কাব্য-সজীব-এর-গল্পসম্ভার-102083094739922/
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)