সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী #সাবিকুন্নাহার_সুমী #রাজনীতি+রোমান্টিক #পর্ব:১৩

0
606

#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#রাজনীতি+রোমান্টিক
#পর্ব:১৩
(🚫কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ 🚫)
—দক্ষ হাতে চিরুনি দিয়ে স্বর্ণভার চুল আঁচড়িয়ে দিলো নাদমান।খুব সুন্দর করে দুই পাশে দুইটা বিনুনি করে দিয়ে মেয়ের কপালে চুমু দিলো সে।চুল আঁচড়ানোর পুরোটা সময় নাদমান খেয়াল করল স্বর্ণভা তার ফো’লা’ফো’লা গালগুলো ইচ্ছাকৃত আরো ফুলিয়ে রেখেছে। নাদমান বুঝতে পারলো স্বর্ণভার মন ভালো নেই। স্বর্ণভার মন ভালো নেই তা বুঝানোর জন্য ইচ্ছাকৃত এভাবে প্রায়ই গাল ফুলিয়ে রাখে।

নাদমান মেয়েকে কোলে নিয়ে বলে,
~আমার টিয়া পাখির কি মন খারা*প?সে কি বাবার সাথে রা*গ করেছে?

স্বর্ণভা বাবার গালে চুমু দিয়ে দুই হাত দুই দিকে প্রশস্ত করে বলে উঠল,
~পরী আন্টিকে আমি এতগুলো মিস করছি বাবাই।পরী আন্টি কেন আসেনা আমাদের বাড়িতে?

নাদমান মনে মনে বিড়বিড় করে বলে,
~তোমার পরী আন্টি অনেক নিষ্ঠু*র মামনি তাই সে আসে না।

স্বর্ণভা তার বাবার দিকে ফ্যাল*ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

নাদমান স্বর্ণভাকে হাসিমুখে বলল,
~আমরা কিছুদিনের মধ্যে তোমার আন্টির সাথে দেখা করতে যাব।

নাদমানের কথা শুনে স্বর্ণভার মুখ জ্বলজ্বল করে উঠল।

স্বর্ণভা নাদমানের কপালে আবারও চুমু দিয়ে বলল,
~বাবাই আমি ছোট বাবাই এর রুমে যাব।

~আচ্ছা মামনি সাবধানে যাবে। তোমার ছোট বাবাইকে একদম বির*ক্ত করবেনা।

স্বর্ণভা মাথা কাঁত করে বলে,
~আচ্ছা বাবাই।

বলেই, খাট থেকে নেমে রুম থেকে বের হয়ে চলে যায় স্বর্ণভা।
নাদমান তার মোবাইল বেড সাইড টেবিল থেকে নিয়ে আনজারার নাম্বারে কল দিলো।দূর্ভা*গ্যবশত নাদমান এর রবি সিম এর ব্যালেন্স শেষ। রবি সিমের নাম্বার আনজারা চিনে।নাদমানের অন্য নাম্বার আনজারার জানা নেই। নাদমান মুখে চ-কারান্ত শব্দ করে। গ্রামীণ সিমে আনজারাকে কল দিলো।
_________
আজ দুইদিন যাবৎ সুয়ারেজ সিকদার, আর তার খাছ চা*মচা নাদিমের জন্য আনজারা রাতে ঠিকঠাক মতো ঘুমাতে পারছেনা।কল দিয়ে একটাই কথা আপা আপনি কি করছেন? আপা আপনি রাতে খাবার খেয়েছেন?আনজারা ক্ষে*পে আছে। একবার দেখা হোক সুয়ারেজ সিকদার আর তার চা*মচার সাথে একদম জুতা*পেটা করবে সে।কি পেয়েছে মামাতো ভাই হয়েছে বলে একদম মাথাটা চিবি*য়ে খাবে তার ।আনজারার ভাবনার মাঝেই মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল।

আনজারা কল রিসিভ করে মোবাইল কানে ধরলো। বাজ*খাঁই কণ্ঠে আনজারা চেঁচিয়ে বলে উঠে,
~চৌষট্টি জেলার যে প্রান্তে থাকিস হারা*মজাদা তোকে ধরে এনে জায়গামতো লা*থি দিবো।

নাদমান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মোবাইল কান থেকে সরিয়ে নিলো। মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে চেক করল নাম্বার আনজারার কিনা।নাম্বারটা আনজারার নিশ্চিত হয়ে সে মোবাইল কানে ধরলো।

~আজকাল যাদুবিদ্যা চর্চা করছেন নাকি আনজারা?ঢাকার এককোণায় থেকে চৌষট্টি জেলা খোঁজে কাকে ধরে নিয়ে আসার কথা বলছেন?

আনজারা কণ্ঠের মালিককে চিনতে ভুল করলনা।আনজারা বিরস*মুখে কিছু সময় নিশ্চুপ রইলো।নাদমান নামক ব্যাক্তিটিকে মন,মস্তিষ্ক থেকে সম্পূর্ণ রুপে আনজারা ভুলার চেষ্টা করছে।নিজেকে কোনভাবেই এই ব্যাক্তি থেকে সরাতে পারছেনা সে।আনজারা মনে মনে স্থির করলো।
এই, লোকের সাথে সে ভালোভাবে কথা বলবে না।

~কি হলো আনজারা ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি?

আনজারা তৎক্ষনাৎ কাট*কাট উত্তর দিলো,
~এতো রাতে কল করেছেন কেন?

~বলছি। তার আগে বলুন কল রিসিভ করে কাকে গালা*গাল করেছিলেন?

~একটা হা’রা*মজাদাকে।

নাদমান আচমকা কেঁ*শে উঠলো।

নাদমান প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল,
~আপনার স্টুডেন্ট আপনাকে খুব মিস করছে।
আপনাকে দেখার বায়না করছে।

আনজারা গভীর নিঃশ্বাস নিলো।নাদমান, স্বর্ণভাকে দেখার ইচ্ছে তারও করছে ।

আনজারা নিজের ইচ্ছেকে আশকা*রা না দিয়ে বলল,
~আমার সময় নেই এমপি সাহেব। ইদানীং খুব ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটছে।

~ভার্সিটি শেষ করে একঘন্টা ফুচকার দোকানে আড্ডা দেওয়া। বিকাল না হতেই বাড়ির ছাদে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার সময় আপনার ব্যস্ততা থাকে না আনজারা?

আনজারা মুখ হা হয়ে গেলো।
~আপনি আমার পিছনে গুপ্ত*চর লাগিয়েছেন?একজন বিবাহিত পুরুষ হয়ে আমার পিছনে গুপ্ত*চর লাগাতে আপনার বিবে*কে বাঁধা দিলো না?

নাদমান খাটের পিছনে হেলান দিলো।

~আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন আনজারা?আপনার বাড়ির সামনের প্রাইমারী স্কুলের নির্মাণ কাজটা এমপি হিসেবে আমিই দেখছি।সেখান থেকে আপনার বাসার ছাদ দেখা যায়।আর, ফুচকার বিষয়টা আন্দাজে ঢিল ছুঁড়লাম।

একজন গণ্যমান্য এমপি হিসেবে আপনার মতো ঝগ*ড়ুটে মহিলাকে ফলো করার জন্য গুপ্ত*চর লাগানোর কোন কারণ নেই মিস আনজারা।

আনজারা অপমা*নিত হয়ে কল কেটে দিলো। নাদমান হাসি মুখে মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে রইল।মোবাইল খাটে রেখে আনমনে দরজায় দৃষ্টি পড়তেই নাদমান খেয়াল করল। নাবহান দরজায় হেলান দিয়ে তী*ক্ষ্ম চোখে নাদমানের দিকে তাকিয়ে আছে।

নাদমান ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
~এভাবে কি দেখছিস তুই?

নাবহান চিৎ*কার করে বলল,
~তুই প্রেম করছিস?তুই কি তোর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছিস?নাকি পালিয়ে যাওয়া ভাবির সাথে?

নাদমান বি*রক্ত মুখশ্রী নিয়ে বলে উঠল,
~তুই আমার চোখের সামনে থেকে এখুনি দূর হবি নাবহান।

~এজন্যই তুই বিয়েতে রাজি হচ্ছিস না নাদমান?
একজন গণ্যমান্য এমপি হয়ে কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের মতো হেসেখেলে মোবাইলে কথা বলছিস!
দেশটা রসাতলে গেল।
__________
আনজারার পুরো মুখশ্রীতে স্বর্ণভা চুমু দিয়ে আঠালো করে ফেলছে। আনজারা ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছে।বাচ্চাটা যেন তাকে একটু বেশিই ভালোবাসে।আনজারাও স্বর্ণভার দুইগালে হাত রেখে কপালে চুমু দিলো।গাড়ির লুকিং গ্লাসে পুরো দৃশ্যটা নাদমান খেয়াল করল। গাড়ির পিছনের এই দৃশ্যটা দেখে নাদমান এতটাই মুগ্ধ হয়েছে যে তার মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে মাশাল্লাহ! নাদমানের অনুরোধে মনের বিরুদ্ধে আজ আনজারা ভার্সিটি শেষ করে স্বর্ণভার সাথে পার্কে দেখা করতে এসেছিল।

এখন,নাদমান তাদের নিয়ে আশুলিয়া যাচ্ছে।
~পরী আন্টি আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি।
আনজারা ন্যা*কামো স্বরে বলে,
~তাই?

~হুম আন্টি।

গাড়ি হঠাৎ ব্রেক কষে।নাদমান ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলে বের হয়ে বেক সিটের দরজা খুলে দিলো।নাদমান স্বর্ণভাকে কোলে নিলো।আনজারা গাড়ি থেকে বের হয়ে সামনের একটা বিল্ডিং এ বড় আকারে নেইম প্লেইট খেয়াল করল। যেখানে গোটা গোটা অক্ষরে শান্তি নিবাস বৃদ্ধাশ্রম লেখা। পরপর দুইটা গাড়ি এসে তাদের গাড়ির পিছনে থামল।গাড়ি থেকে পরপর কয়েকটা ছেলে নামলো।

তামিম ছাড়া সকলেই আনজারার নিকট অপরিচিত। আনজারা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নাদমানের দিকে তাকাল।

~আজ আমার মেয়ের জন্মদিন আনজারা।জন্মদিন পালন করা আমি পছন্দ করি না । তাই, আজ বৃদ্ধাশ্রমের সকলের সাথে স্বর্ণভা সময় কাটাবে।

আনজারা নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলনা।মুগ্ধ নয়নে তার সম্মুখের ব্যাক্তিটির দিকে তাকিয়ে রইল।
নাদমানের দৃষ্টি দলের ছেলেদের দিকে। নাদমানের কোল থেকে আনজারা স্বর্ণভাকে কোলে নিলো।

বৃদ্ধাশ্রমের ভিতরে সকলেই প্রবেশ করল।কেয়ারটেকার হাবিব সকলের সাথে কথা বলে তাদের ভিতরে নিয়ে গেল।চারশো বৃদ্ধ নর নারী একযোগে হৈ হৈ করে উঠলো নাদমানকে দেখে। সকলের কৌতুহল নাদমানের পাশে থাকা রমণীটিকে নিয়ে।

একজন তো নাদমানকে জিজ্ঞেস করল,
~নাত বউ তো বেশ সুন্দরী!

আনজারা অস্বস্তিতে পড়ে গেল।আনজারা স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
~দাদি আমি আপনার নাত বউ না।আমি নাদমান সাইক তালুকদার এর স্ত্রী না।

মহিলাটি নাদমানের দিকে উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকাল।
~উনি আনজারা। স্বর্ণভার টিচার।

মহিলা হাসিমুখে আনজারার থুতনি ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
~কিছু মনে করো না নাতনি আমি বুঝতে পারি নাই।

আনজারাও হাসি মুখে বিষয়টা সামলে নিলো।
তামিমকে কনুই দিয়ে মাহিন আ*ঘাত করল ।

তামিম বি*রক্ত মুখশ্রী নিয়ে মাহিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
~এমন কোষ্ঠ*কাঠিন্য রো*গীর মতো মোচড়া*মুচড়ি করছিস কেন?

মাহিন তী*ক্ষ্ম চোখে আনজারা আর নাদমান এর দিকে তাকিয়ে আছে।

~তামিম ব্যাপার কি বলতো, ভাই কি এই মেয়ের প্রেমে পড়ল নাকি?তাহলে, আমাদের না দেখা ভাবির কি হবে?
তামিম বির*ক্ত কণ্ঠে বলল,
~তোর এতো চি*ন্তা করতে হবে না। ঐটা ভাইয়ের বিষয় ভাই সামাল দিবে।
__________
আনজারা গভীর দৃষ্টিতে নাদমানকে পর্যবেক্ষণ করছে।একজন পলিটিশি*য়ান হওয়া সত্ত্বেও নাদমান এর মধ্যে কোন অহং*কার বোধ নেই।কি সুন্দর ভাবে গ*ম্ভীর পুরুষটি সকলকে ভালোবেসে, আন্তরিকতার সাথে কথা বলছে। সকলের হাতে তাদের জন্য আনা উপহার তুলে দিচ্ছে।

আনজারা অস্ফুটস্বরে বলে উঠল,
~আপনার মধ্যে এতো মুগ্ধতা কেন এমপি সাহেব?

আনজারার কনিষ্ঠ আঙুল আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্ণভা। আনজারার মনে একটা বিষয় দারুণ ভাবে খচ*খচ করছে।
আজ স্বর্ণভার জন্মদিন কিন্তু নাদমানের মুখশ্রী মলি*ন! মেয়ের জন্মদিনেই কারও মন খা*রাপ থাকে?
হঠাৎ নাদমান আনজারার দিকে তাকাল। চোখাচোখি হলো পরস্পরের।আনজারা চোখ সরিয়ে নিলো।

নাদমান হেঁটে এসে স্বর্ণভাকে কোলে নিয়ে বলে,
~চলো মামনি আমাদের বাসায় ফিরতে হবে।

আনজারা দাঁড়িয়ে আছে। এমন একটা ভাব যেন তার যাওয়ার কোন তাড়া নেই। এই বৃদ্ধাশ্রম এসে আনজারার মন শীতলতায় ছেয়ে গিয়েছে।আজকের দিনটা সত্যিই তার জীবনে এক সেরা মুহূর্ত ছিল। নাদমান আনজারার অন্য*মনস্কতা খেয়াল করল।

আনজারার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গলা খাঁ*কারি দিয়ে গম্ভী*র কন্ঠে বলল,
~আপনাকে কি পালকিতে উঠিয়ে গাড়ির সামনে নিয়ে যেতে হবে আনজারা?

আনজারার আজ ঝ’*গ’ড়া করার ইচ্ছে ছিল না।কিন্তু,নাদমানের খোঁ*চা দেওয়া কথা তার স*হ্য হলো না।

আনজারা ক্ষে*পে গিয়ে বলে উঠল,
~আপনি একটা রসক*ষহীন অস*হ্যকর লোক। মিনিমাম কৃতজ্ঞতা বোধ আপনার মধ্যে নেই।দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে অপ*মান করছেন।

আনজারা ধপা*ধপ পা ফেলে গেইট দিয়ে বের হয়ে গেল। নাদমান ঠোঁট টিপে হাসল। এই, মেয়েটাকে রাগি*য়ে দিতে বেশ লাগে তার।নাদমান আচমকায়
নিজের প্রতি অবাক হলো আজকের দিনেও সে হাসছে!

তামিম অবাক চোখে আনজারার গমন দেখল।

নাদমানের নিকট গিয়ে কণ্ঠে উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
~ভাই এভাবে লাফিয়ে চলে গেল কেন?

নাদমান তামিমকে পাত্তা দিলো না।

শীতল কণ্ঠে বলল,
~গাড়ি বের করতে বল মাহিনকে।
__________

তালুকদার বাড়ির সদর দরজার কলিং বেল টিপে দাঁড়িয়ে আছে সাবিহা।এতোগুলো মাসে তালুকদার বাড়ির প্রতিটি সদস্যদের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠেছে। তবে, নাইসার অনুরোধে আজই প্রথম সরাসরি বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করবে সে।এতোদিন বাগানেই গল্পগুজব করে চলে যেত।কোনদিন নাবহানের মুখোমুখি সে হয়নি।জেসমিন দরজা খুলে দিলো।

~সাবিহা যে!কেমন আছো?

~আলহামদুলিল্লাহ আপু আপনি?

~আমিও ভালা আছি।ভিতরে আসো।

ভিতরে এসে সাবিহা ড্রয়িংরুমে সকলকে দেখে অমায়িক হাসি দিলো।সীমা তালুকদার সোফায় বসে ছিলেন।

সাবিহাকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন,
~কেমন আছো মা?এতোদিন পর আন্টিদের দেখার ইচ্ছে হলো?

সাবিহা হাসিমুখে বলল,
~আলহামদুলিল্লাহ আন্টি ভালো আছি।

রাজিয়া তালুকদার বললেন,
~সোফায় বসো মা।

সাবিহা হাসিমুখে বলল,
~আন্টি নাইসা কোথায়?ও আসতে বলেছিল।

রাজিয়া তর্জনী আঙুল উঁচিয়ে ইশারা করল,
~দোতালা ডানপাশের রুমটা সাবিহার।

সাবিহা সিঁড়ি দিয়ে দোতলার করিডোরে এসে দাঁড়াল। চিন্তি*ত মুখশ্রীতে সে দাঁড়িয়ে আছে। ডানপাশে অনেকগুলো রুম কোনটা নাইসার সে কি করে জানবে?সাবিহা ডানপাশের প্রথম রুমটায় প্রবেশ করল।
_______
নাবহান সদ্য গোসল করেছে। সপ্তাহে সবকয়টা দিন তার ব্যস্ততায় কাটে।পারিবারিক ব্যবসা হলেও নয়ন তালুকদার তাকে তিল পরিমাণ সহানুভূতি দেখায় না।আজ শুক্রবার তাই সে পুরোদমে ফ্রী। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে কেবলই বাসায় ফিরে গোসল করেছে সে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সাবিহাকে দেখে একটা অমায়িক হাসি দিলো নাবহান । প্রথমে সে ভ্রম ভেবেছিল কিন্তু যখন টের পেল সাবিহা সত্যিই তার সামনে তার রুমে। নাবহান লাফিয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়। সাবিহা হ*তভম্ব, পাথরের ন্যায় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সাবিহা চিৎকার দিতে গেলে নাবহান দৌঁড়ে গিয়ে সাবিহার মুখ চেপে ধরল।

সাবিহার কানে সামনে ফিসফিস করে বলল,
~এই মেয়ে আমার রুমে তুমি কি করছো?

সাবিহা গোঙাচ্ছে। নাবহান মুখ চেপে ধরার কারণে সে কথা বলতে পারছে না।

নাবহান, সাবিহার মুখ ছেড়ে দিয়ে ভয়া*তুর কণ্ঠে বলল,
~এই, মেয়ে তুমি কি আমাকে মারা*র প্ল্যান করেছো?

নাবহান ছোট একটা তোয়ালে পড়ে আছে নিচে।সাবিহার ল*জ্জায় ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক করে তার মধ্যে লুকিয়ে থাকতে।

নাবহান ধম*কের স্বরে বলল,
~আমার রুমে তুমি কি করছো?

সাবিহা ল*জ্জামুখশ্রী নিয়ে বলল,
~বলছি তার আগে কাপড় পড়েন।

নাবহান নিজের দিকে তাকাল।
~ন্যাকামী করবেনা পিচ্চি আমাকে ছাদে তুমি বহুবার খালি শরীরে দেখেছো।এখানে কেন এসেছো? তা আগে বলো।

~আমি নাইসার কাছে এসেছি।

~তোমার না এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। তুমি পড়াশোনা বাদ দিয়ে এখানে কি করছো?

~আমি এসএসসিতে চার সাবজেক্ট এ ফেল করেছি।সামনের বছর এইচএসসি দিবো।

নাবহান যেন আকাশ থেকে পড়ল।বাপকে এতো ভ*য় পাওয়ার পরেও সে ভেবেছিল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করবে।এখন, মনে হচ্ছে তা কস্মিনকালেও সম্ভব না। এক তো হাঁটুর বয়সী মেয়ে আরেকতো পরীক্ষায় ফেল করেছে। তার,বাপের পা ধরে বসে থাকলেও এই মেয়েকে তার বউ হিসেবে মেনে নিবেনা।নাবহানের চুপসা*নো মুখ দেখে সাবিহার ইচ্ছে করছে মেঝেতে গড়াগড়ি করে হাসতে।

নাবহান দাঁতে দাঁত কাম*ড়ে বলে,
~আমার রেজাল্ট সম্পর্কে তোমার ধারণা আছে পিচ্চি।

সাবিহা দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বলে উঠে,
~আপনি যতই ভালো রেজাল্ট করেন আর যতই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট হোন না কেন?বিয়ে তো চার সাবজেক্ট এ ফেল করা এই আমাকেই করবেন।

বলেই, সাবিহা রুম থেকে বের হয়ে করিডোরে
আসে।নাইসার সাথে তখনি সাবিহার দেখা হয়।

নাইসা হাসি দিয়ে বলে,
~তোমার এখন আসার সময় হয়েছে সাবিহা? পড়তে পড়তে আমি বির*ক্ত হয়ে গিয়েছি। চলো তোমার সাথে আড্ডা দেই।

সাবিহা হাসল।
~চলো।

সাবিহার হাত ধরে নাইসা তাকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।

নাবহান বির*স মুখশ্রী নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। তোয়ালে খুলে যেতেই তা সে হাত দিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করল।

নয়ন তালুকদার গলা খাঁকারি দিলে নাবহান তার দিকে তাকাল।

~এভাবে মৃগি রো*গীর মতো কাঁপছ কেন? এই এক ইঞ্চি কাপড়টা পাল্টিয়ে নিচে আসো।

নাবহান বির*সমুখে বলে,
~জ্বি আব্বু।
______________

ভার্সিটি শেষে হেঁটে বাড়িতে আসার সিদ্ধান্ত নিলো আনজারা।
তীব্র বর্ষনে রাস্তার বিভিন্ন অংশে পানি জমা হয়ে আছে। এই, অংশে এখনো হয়তো এমপির চোখ পড়ে নাই। বৃষ্টির কারণে আজ গাছের পাতার সবুজ রংটা একটু বেশিই গাঢ় দেখাচ্ছে ।এই,ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে ও গাড়িগুলো তাদের রাজত্ব দেখাতে কোন কার্পণ্য করেনি।আনজারা ধীরে ধীরে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে।জমে থাকা বৃষ্টির পানির উপর দিয়ে একটা গাড়ি দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় বৃষ্টির জমে থাকা নো*রা পানি দিয়ে আনজারাকে ভিজিয়ে দিয়ে যায়।আনজারা একবার নিজের দিকে তাকায়।তার, গোলাপি রংয়ের থ্রি -পিছের অর্ধেক অংশই ভিজে গিয়েছে। আনজারা একটা বি*শ্রী ভাষায় গা*লি দিলো।

গাড়িটির দিকে তাকিয়ে রা*গান্বিত স্বরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,
~দুইটা চোখ থাকার পরেও যখন দেখে গাড়ি চালাবি না।তাহলে, তোর চোখ দুইটা আমাকে দিয়ে যা।
পাড়ার মোড়ের ছেলেদের দিয়ে দিবো গুলতি খেলার জন্য।

তীক্ষ্ম চোখে আনজারার দিকে তাকিয়ে আছে নাদমান। এই,অংশের রাস্তার খুবই দুর*বস্থা। জনজীবনে ভোগা*ন্তির যেন কমতি নেই। তাই,দলের ছেলেদের নিয়ে রাস্তা দেখার জন্য এসেছিল সে ।কয়েক মাস পরেই সরকারি ফান্ডের অর্থ দিয়ে এই রাস্তা নির্মাণের জন্য মিটিং করবে সে।নাদমান কয়েক কদম হেঁটে আনজারার পাশে দাঁড়ায়। তামিম, মাহিনও নাদমানকে অনুসরণ করে তার পাশে দাঁড়ায়। বাকি ছেলেদের তামিম ইশারা দিয়ে আসতে নিষেধ করে।

~একজন প্রফেসরের মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বি*শ্রী ভাষায় গালা*গাল দিচ্ছে! বাহ্!

আনজারা পিছনে ফিরে তাকাল।তার সম্মুখে শুভ্র পাঞ্জাবির উপর মুজিব কোর্ট পরিহিত পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চির গম্ভীর পুরুষটিকে দেখে সে বির*ক্ত হলো।এই, লোককে সে ভুলার জন্য মনে প্রাণে আপ্রাণ চেষ্টা করছে।অথচ,ঘুরে ফিরে এই নাদমান সাইক তালুকদার এর সাথেই তার দেখা হচ্ছে।
আনজারা নিশ্চুপ।

~এখানে দাঁড়িয়ে কার সাথে ঝ*গড়া করছেন?

~বলছি তার আগে আপনার ওয়ালেট দেন।

নাদমান ভ্রু কুঁচকে আনজারার দিকে তাকাল। আশেপাশের লোকজনও তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। দলের ছেলেপুলে একদৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহিনের যেন সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তামিম ভাবলে*শহীন। এই,আর নতুন কি তাদের দেখা হওয়া মানেই ঝামে*লা।

নাদমানের কণ্ঠে উৎকন্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করল,
~ওয়ালেট দিয়ে কি করবেন?

~দিতে বলছি দেন।

নাদমান তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে ওয়ালেট হাতে নিলো।আনজারা ছুঁ মেরে ওয়ালেটটা তার হাতে নিলো।ওয়ালেট থেকে একশো টাকার একটা চকচকে নোট হাতে নিলো।ওয়ালেট নাদমানের দিকে বাড়িয়ে দিলো।নাদমান শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনজারার দিকে। নাদমান ওয়ালেট আনজারার হাত থেকে নিয়ে তার পাঞ্জাবির পকেটে রাখল।

~নাকে সরিষা তেল দিয়ে ঘুমিয়ে না থেকে রাস্তাঘাট ঠিক করেন।আজ জনগণ আপনার মতো ফা*লতু লোককে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করেছে বলে গাড়ি চালক আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে গেলো।একশো টাকা দিয়ে ডিটারজেন্ট কিনবো।

নাদমান তাকিয়ে আছে। মাঝেমধ্যে আনজারাকে তার পা*গল মনে হয়।

মাহিন পাশ থেকে বলে উঠল,
~আপা বিশ টাকা দিয়ে যান একটা সি*গারেট কিনবো।
আনজারা এমনই ক্ষে*পে ছিলো। মাহিনের কথা শুনে তাকে একটা থা*প্পড় দিয়ে ধপাধপ পা ফেলে চলে গেল।

মাহিন গালে হাত দিয়ে কণ্ঠে অসহায়ত্ব নিয়ে বলে,
~ভাই।

নাদমান কণ্ঠে গা*ম্ভীর্য এনে তামিমকে বলে,
~তামিম আজ সারাদিন মাহিন বেড রেস্ট এ থাকবে। আর,আগামী একমাস ওর সিগা*রেট খাওয়া বন্ধ।

বলেই, নাদমান দলের বাকি ছেলেদের সাথে গিয়ে কথাবার্তা বলতে লাগল।
~দেখলি তামিম ভাই সত্যিই এই মেয়ের প্রেমে পড়েছে।ভাইয়ের সামনে আমাকে থাপ্প*ড় দিলো ভাই প্রতিবাদ করল না।ভাইকে নিশ্চয়ই এই মেয়ে তা*বিজ করেছে।আমাদের ভদ্র, সভ্য ভাই এই উরুন*চন্ডির প্রেমে পড়ল!

তামিম, মাহিনের আরেকটা গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,
~এটা তোর অতিরিক্ত কথা বলার জন্য দিলাম।

মাহিন দুই গালে হাত দিয়ে বলে,
~রাফাইন্নার হাতে যদি তোকে মার না খাওয়াতে পারি। আমার নামও মাহিন না।
___________

দলের ছেলেদের সাথে নাইট ক্লাবের এক সুসজ্জিত রুমে ডিভানে গা এলিয়ে বসে আছে সুয়ারেজ। সামনের সেন্টার টেবিলে বিভিন্ন দেশের নামকরা ব্র্যান্ডের রেড*ওয়াইন সুসজ্জিত। সুদর্শন পুরুষের চোখ দুটো লাল।রাগে তার মাথার দুইপাশের র*গ দপদপ করছে।মেঝেতে তার খাছ চাম*চারা বসে আছে। রাফান ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
সুয়ারেজ সিকদার একটা বি*শ্রী ভাষায় গা*লি দিলো নাদমানকে।
চিৎকার করে বলতে লাগলো।
~রাজনীতির মাঠ,নির্বাচনে সব জায়গায় ঐ কু*ত্তার*বাচ্চা আমাকে পরাজিত করেছে।এখন আমার রাজনীতির ক্যারিয়ার শেষ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।আমার ক্লাব,ম*দের গোডাউন সবকিছুর তথ্য পুলিশকে জানিয়ে দিলে আমার ক্যারিয়ার শেষ।শা*লা সাভারের আনাচে কানাচে আমার অবৈ*ধ ব্যবসার ঘাঁটি খোঁজে বেড়াচ্ছে।

রাফান সুয়ারেজের দিকে তাকিয়ে আছে। কৌতুহল আর শখের বশবর্তী হয়ে সে এই রাজনীতিতে পা রেখেছিল। পরবর্তীতে, পেটের দায়ে এই সুয়ারেজের আন্ডারে কাজ করা শুরু করেছিল।এখন, এতো অন্যা*য়,অপ*রাধ দেখে মাঝেমধ্যে তার পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে ।

রাকিব ক্ষে*পা কণ্ঠে বলল,
~ভাই একবার অনুমতি দিন ঐ শালা*রে পুঁ*তে দেই।

রাফান, রাকিবের কথা শুনে কোনক্রমে হাসি আটকে রাখল।

মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
~নাদমান সাইক তালুকদারকে নাকি ওরমতো চুনোপুঁটি পুঁ*তে দিবে।শা*লা নে*শার ঘোরে কি বলছে এসব?

সুয়ারেজ ডিভান থেকে উঠে রাকিবকে একটা লাথি দিয়ে বাজখাঁই কণ্ঠে বলে,
~নাদমানকে মা*রার হলে আগেই মা*রতাম।ওকে মারা যাবে না।শা*লাকে বুদ্ধি দিয়ে ঘায়েল করতে হবে। তোরা শুধু ওর দিকে নজর রাখ।এখন চোখের সামনে থেকে যা।
সকলেই,ধীর পায়ে রুমের বাহিরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো।সুয়ারেজ অনিককে থামিয়ে দিয়ে বাকিদের ইশারা দিলো বের হওয়ার জন্য। অনিকের বুকটা ভ*য়ে ধড়ফড় করছে।
সুয়ারেজ নেশা*লো কণ্ঠে বলে,
~আনজারার ইনফরমেশন তুই আমাকে গত চারমাস যাবৎ ঠিক ঠাক ভাবে দিচ্ছিস না।আজ সব বল ও কোথায় যাই?কি করে?

অনিক এই ভয়*টাই পাচ্ছিল।আনজারা ঐদিন থাপ্প*ড় দেওয়ার পর সে একমাস সাবধানতার সাথে ফলো করলেও। পরবর্তী মাসগুলো এতো এতো গার্লফ্রেন্ড সামলাতে গিয়ে অনিক আর আনজারাকে ঠিক মতো ফলো করে না।
~চুপ করে আছিস কেন?
অনিক নিজেকে বাঁচাতে মি*থ্যা বলা শুরু করে।
~ভাই, ভাবি প্রায়ই এমপির সাথে ঘুরতে যায়।

চলবে ——
(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন। ভুল গুলো কমেন্ট লিখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here