সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী #সাবিকুন্নাহার_সুমী #রাজনীতি+রোমান্টিক #পর্ব:১৬

0
279

#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#রাজনীতি+রোমান্টিক
#পর্ব:১৬
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
—-মধ্যরাতে নাদমানের গাড়ি এসে থামে তালুকদার বাড়ির গেইটের সামনে। নাদমানের গাড়ির শব্দ পেতেই দারোয়ান ধড়ফড়িয়ে বসা থেকে উঠে তাড়াহুড়ো করে গেইট খুলে দেয়।গ্যারেজের সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে পড়ে মাহিন তার সাথে তামিম ও গাড়ির দরজা খুলে বের হয়।
গাড়ির থেকে কিছুটা দূরে বাগানের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ায় দুজন।
বাগান থেকে ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে। তামিম তার নিঃশ্বাসের সাথে ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ টেনে নেয়। বাগানের অংশ থেকে শুরু করে তালুকদার বাড়ির বাহিরের অংশ কৃত্রিম আলোর জন্যে রাতের অন্ধকার গ্রাস করতে সক্ষম হয়নি।পুরো বাহিরটাই কৃত্রিম আলোতে জ্বলজ্বল করছে।
গাড়ির পিছনের সিটে তুলকালাম কান্ড চলছে।নাদমান তার পুরুষশালী শক্তপোক্ত হাত দিয়ে আনজারার দুই হাত আঁকড়ে ধরে রেখেছে।তামিমদের বাড়িতে পরপর নাদমান আর আনজারার দুইবার বিয়ে হওয়ার পর নাদমান আনজারাকে গাড়িতে উঠতে বললে আনজারা বেঁকে বসে।আনজারার এককথা সে গাড়িতে উঠবে না।নাদমান উপায় না পেয়ে অগত্যা আনজারাকে পাঁজাকোলা করে গাড়িতে বসায়।সেই থেকে আনজারা মুক্তহস্তে নাদমানকে কিল,ঘুষি দিয়েই চলছে নাদমানের শুভ্র পাঞ্জাবির একটা বোতাম ইতিমধ্যে আনজারা টানাটানি করে ছিঁড়ে ফেলেছে। নাদমান আনজারার হাত আঁকড়ে ধরার ফলে সে নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নাদমানের পুরুষালি হাতের সাথে নিজের শক্তিকে আনজারার তুচ্ছ মনে হলো। নাদমানের মুখশ্রী স্বাভাবিক।

আনজারা বজ্র দৃষ্টিতে নাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
~আমার হাত ছাড়ুন এমপি সাহেব। আমি কখনোই তালুকদার বাড়িতে যাব না।আমি কখনোই আপনার সংসার করব না।

নাদমান আনজারার হাত ছেড়ে দিয়ে আনজারার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকাল।কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
~ আমার সংসার করার জন্যই আপনার সৃষ্টি আনজারা।তালুকদার বাড়িতে আপনাকে কষ্ট করে যেতে হবে না।আপনার স্বামীই আপনাকে নিয়ে যাবে।

আনজারা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।
~আমি আপনাকে কখনোই স্বামীরুপে গ্রহণ করবো না।

নাদমান ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
~ধীরে ধীরে গ্রহণ করুন আমি অপেক্ষা করতে রাজি আছি।

আনজারা করুণ দৃষ্টিতে নাদমানের দিকে তাকাল।

মাহিন তামিমকে কনুই দিয়ে পেটে আঘাত করলো।তামিম বিরক্ত মুখশ্রী নিয়ে বলল,
~মাহিন তোর সমস্যা কিরে সবসময় এমন গুই*সাপের মতো মোচড়ামুচড়ি করিস কেন?

মাহিন তামিমের কানে ফিসফিস করে বলল,
~ আচ্ছা তামিম্মা নতুন ভাবি যদি সুয়ারেজকে বিয়ে করতো তাহলে নাদমান ভাই কি ছ্যাঁ*কা খাই*তো?

মাহিনের এমন বোকা প্রশ্নে তামিম কট*মট চোখে মাহিনের দিকে তাকাল,
~এসব উল্টাপাল্টা বকবক করলে তোর ঠোঁটে আমি শিওর একদিন কামড় বসিয়ে দিব মাহিন।

মাহিন লাজুক হাসল।
~তামিম আমি আজ শিওর হলাম তোর চরিত্রে সমস্যা আছে। তুই আমার মতো অবলা ছেলেটার ঠোঁট কাম*ড়ানোর চিন্তা করছিস ছিঃ!

তামিমের মুখ হা হয়ে গেল।মাঝে মধ্যে তার নিজেকে পা*গল মনে হয়।কথা বলেও তার শান্তি নেই।আজকাল সে বলে এক মানুষ ভাবে আরেক। মাহিন আর রাফানের অত্যাচারে হিমালয় পর্বতে গিয়ে নিজের ব্রেইনটাকে রেখে আসতে ইচ্ছে করে তামিমের।বরফের ছোঁয়া পেয়ে তার ব্রেইনটা ঠান্ডা হলেও হতে পারে।

নাদমান গাড়ি থেকে বের হলো।আনজারার পাশের দরজা খুলে দিয়ে বলল,
~গাড়ি থেকে বের হোন আনজারা।
আনজারার চোখের পানি মুছে নাক টেনে কাট*কাট কণ্ঠে বলল,
~আমি বের হবো না।গাড়ি থেকে এক চুল ও নড়ব না আমি।

নাদমান মৃদু হাসল। পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে মৃদুস্বরে বলল,
~একদিন আমার কোলে উঠেই বারবার কোলে উঠার ইচ্ছে হচ্ছে! তা কি আর করার আমার প্রেয়সী আপনাকে কোলে নিয়েই তালুকদার বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করি।

আনজারা মুখ দিয়ে কিছু বলবে তার পূর্বেই নাদমান আনজারাকে পাঁজাকোলে তুলে নিলো।আনজারা তার দুইহাত দিয়ে নাদমানকে কিল,ঘুষি দিতে শুরু করল। রাতের নিরবতায়,
এক মেয়েলি কণ্ঠের আর্তনাদ শোনা গেল।

দারোয়ান তাকিয়ে আছে তাদের দুজনের দিকে।এই মধ্যরাতে আনজারাকে দেখে সে অবাক হলো।আনজারার আজ বিয়ে দারোয়ান সে বিষয়ে অবগত। দারোয়ান কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গ্যারেজের সামনে উপস্থিত সকলের দিকে।
তামিম দাঁড়িয়ে না থেকে হেঁটে সদর দরজার কলিং বেল টিপ দিলো।মাহিন ও তার সাথে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালো।ঘুমঘুমু চোখে জেসমিন দরজা খুলে দিলো।
নাদমান আনজারাকে কোলে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে করতে জেসমিনকে বলল,
~বাড়ির সকলকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বল ড্রয়িংরুমে আমার জন্যে অপেক্ষা করতে।

জেসমিন মাথা নেড়ে বলল,
~আচ্ছা ভাইজান।
নাদমান আনজারাকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় নিজের রুমে প্রবেশ করল।
জেসমিন ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইল নাদমান আর আনজারার দিকে। তামিম জেসমিনকে পাশ কাটিয়ে সোফায় পা টানটান করে শুয়ে পড়ল।সারাদিন আজ সে অনেক পরিশ্রম করেছে।
মাহিন ও তামিমের পাশের সোফায় গিয়ে বসল।
_______________

নাদমান বিছানার উপর আনজারাকে বসিয়ে দিলো।একপলক আনজারার দিকে তাকিয়ে রইলো। গোলাপি বেনারসির আঁচলটা এলোমেলো হয়ে বিছানায় ছড়িয়ে রয়েছে।মুখের সাজগোছ ও অধিক কান্নার ফলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পরিপাটি চুল গুলো কপালে অগোছালো হয়ে পড়ে রয়েছে। কান্নার জলের সাথে কাজল গলে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়েছে। ঠোঁটের লিপস্টিক ঠোঁট থেকে শুরু করে পুরো থুতনিতে ছড়িয়ে পড়েছে। আনজারা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। নাদমানের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। প্রেয়সীর চোখের অশ্রু তার স*হ্য হচ্ছে না। সে তো কখনো এভাবে জোরাজোরি করে আনজারাকে বিয়ে করতে চায়নি।নাদমানের ইচ্ছে হলো নিজ হাত দিয়ে প্রেয়সীর চোখের পানি মুছিয়ে দিতে।নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে নাদমান হাত বাড়িয়ে আনজারার চোখের পানি মুছিয়ে দিতে গালে হাত রাখল। আনজারার বুকের ওঠানামার গতি অস্বাভাবিক দ্রুত। শ্বাসপ্রশ্বাস অস্বাভাবিক। আনজারা তড়িৎ গতিতে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো।নাদমানের খড়খড়ে গালে আনজারা তার নরম হাত দিয়ে আচমকা থাপ্প*ড় দিলো।আচমকা থাপ্প*ড়ে নাদমান স্তব্ধ হলো।মলিন চোখে তাকিয়ে রইল আনজারার দিকে। আনজারা শব্দ করে কেঁদে উঠল।নাদমান বহুপূর্বেই নিজের হাত আনজারার গাল থেকে সরিয়ে নিয়েছে।চোখের অশ্রু মুছে দেওয়ার ইচ্ছেটুকু তার অপূর্ণই রইল।

আনজারা বাজখাঁই কণ্ঠে বলল,
~সম্পর্ক হালাল হতে না হতেই অধিকার খাটানো শুরু করেছেন!

নাদমান শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আনজারা দিকে।
~বিশ্বাস করুন আনজারা থা*প্পড় দিবেন জানলে আপনার গালে হাত রাখতাম না।
নাদমান নিজের অধর আনজারার অধরে ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
~দীর্ঘ চুমু খেতাম।
নাদমান এত দ্রুতই কাজটা করে যে আনজারা হতবাক, বিস্মিত।
আনজারা স্তব্ধ নেত্রে তাকিয়ে আছে নাদমানের দিকে।
আনজারা আবারও হাউমাউ করে কান্না শুরু করল।
~আপনি এতো ছিঁচকাদুনি কেন আনজারা? আমার মেয়ে ও তো এমন হুটহাট কান্না করে না।
আনজারা কান্নারত কণ্ঠে বলল,
~আমি আপনাকে পুলিশে দিব।
~আচ্ছা আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবেন।

নাদমান প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল,
~আপনি ক্লান্ত কাভার্ডে আপনার জন্য শাড়ি রাখা আছে। পছন্দমতো একটা শাড়ি নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। জেসমিনকে দিয়ে খাবার পাঠাচ্ছি। খাবার খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করে ঝগড়া করলে ক্লান্ত হবেন না।
_______________

পার্লারে গিয়ে যখন সুয়ারেজ দারোয়ান থেকে জানতে পারল আনজারা আরও দেড় ঘন্টা আগেই বের হয়ে গিয়েছে। তখনই, সুয়ারেজের সচল মস্তিষ্ক জানান দিলো আনজার তার খাঁচায় বন্দী হওয়ার আগেই নাদমানের চিত্তমহলে বন্দী হয়ে গিয়েছে। পাগলে*র মতো হন্নে হয়ে যখন নাদমানের মোবাইলে কল দিলো তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। তার বালিকা বধূ অন্য কারও বধূ হওয়ার জন্য কবুল বলে ফেলেছে। বাড়িতে পৌঁছে সকল অতিথি, সাংবাদিকদের অপমান করে বিদায় করে দিয়েছে সে।তার পরাজয়ের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ হোক তা সে আর চায়না।সকলকে বিদায় করে হিংস্র বাঘের ন্যায় ঘরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করে সুয়ারেজ। ।সম্পূর্ণ রাগ ঝাড়ে ঘরের জড়বস্তু গুলোর উপরে।
পরিপাটি, গোছানো রুমের ফ্লোরে আসবাব পত্র এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।ড্রেসিংটেবিলের ভাঙা কাঁচ মেঝেতে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে। ফুলের টব সহ ছোট খাটো শোপিসের স্থান হয়েছে মেঝেতে। ফুলশয্যা খাটের উপর ফুল ছিঁড়ে পড়ে আছে। সুয়ারেজ অতি রাগে এগুলোর উপর দক্ষযজ্ঞ চালিয়েছে।মারবেল মেঝেতে এক হাঁটুর উপর হাত রেখে অন্য পা ভাঁজ করে বসে আছে সুয়ারেজ। হাতে তাঁর জ্বল*ন্ত সিগা*রেট।সিগারে*টের ধোঁ*য়া কুন্ডলি আকারে পুরো রুমে ছড়িয়ে পড়েছে।পরনের শেরওয়ানি এলোমেলো হয়ে দরজার সামনে পড়ে আছে। স্যান্ডু গেঞ্জিটাও পরনে নেই।ফর্সা সুঠাম দেহের বিভিন্ন অংশে ঘাম গরিয়ে পড়ছে।সিগারে*টের টুকরো অংশ সুয়ারেজের আশেপাশে পড়ে আছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছাঁই।সুয়ারেজ অগ্নিচোখে খাটের দিকে তাকাল।আজ তার আর আনজারার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।এই সময় এই খাটে আজ তাদের মধুর সময় কাটানোর কথা ছিল। জয়ের মুকুট হিসেবে আনজারাকে নিজের সহধর্মিণী রুপে পাওয়ার কথা ছিল।অথচ,সে বারবার পরাজিত হচ্ছে। পরাজিত হচ্ছে ঐ নাদমান সাইক তালুকদার এর নিকটে।চাপানো দরজা ঠেলে সুয়ারেজের রুমের ভিতরে প্রবেশ করলেন মরিয়ম বেগম। ছেলের এহেন অবস্থা দেখে তিনি মোটেও বিচলিত হলেন না।এই আর নতুন কি প্রায়ইতো নে*শা করে এসে এমন ভাঙচুর করে। পায়ের শব্দ পেয়ে সুয়ারেজ চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকাল।

হিং*স্র, লালচোখে মরিয়ম বেগমের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল,
~এতো বড় বিশ্বাসঘা*তকতা কেন করলে?কেন আমার থেকে আমার ভালোবাসাকে ছিনিয়ে ঐ নাদমান কু***ত্তার বাচ্চার হাতে তুলে দিলে ।কেন?আন্সার মি।

মরিয়ম বেগম তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন,
~আনজারা কখনোই তোর ভালোবাসা ছিল না। যা ছিল সবটাই মোহ,জে*দ।অন্যের ভালোবাসাকে ছিনিয়ে আনার জে*দ।এক সুন্দরী নারীর রুপের প্রতি মোহ।যে পুরুষ তার ভালোবাসার নারীকে সম্মান দিয়ে কথাই বলতে পারে না। সে পুরুষ সে নারীকে পাওয়ার কোন অধিকার নেই।

সুয়ারেজ পৈশাচিক হাসি দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। মরিয়ম বেগমকে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলো সুয়ারেজ। মরিয়ম বেগম তাল সামলাতে না পেরে কাঁচের টুকরোর উপর পড়ে গেলেন।কাঁচের ছোট ছোট টুকরো মরিয়ম বেগমের দেহের বিভিন্ন অংশে ঢুকে পড়ল।মরিয়ম বেগম ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করলেন। সাইফুদ্দীন সিকদার দৌড়ে সুয়ারেজের রুমে প্রবেশ করলেন।দ্রুত মরিয়ম বেগমকে আঁকড়ে ধরে উঠালেন।আহত স্থান থেকে গলগলিয়ে রক্ত বের হচ্ছে মরিয়ম বেগমের।তীব্র ব্যা*থায় কুঁকিয়ে উঠছেন তিনি।সুয়ারেজে ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে।দুই ঠোঁটের ফাঁকে সিগা*রেট রেখে পকেট থেকে লাইটার বের করে সিগা*রেটে আগু*ন ধরিয়ে বাবা,মার মুখের উপর ধোঁয়া ছাড়ে।সিগারে*টের উঁটকো গ*ন্ধে সাইফুদ্দীন সিকদার, মরিয়ম বেগম কেঁশে ওঠে।

সাইফুদ্দীন সিকদার কণ্ঠে তেজ এনে বললেন,
~আজ মনে হচ্ছে আমি সত্যিই তোমার মতো এক অমানুষের জন্ম দিয়েছি।রাজনীতির সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে আমার চরিত্রে দাগ লাগে নি।কিন্তু, তোমার মতো অমানুষের জন্য আমি আজ সত্যিই কলংকি*ত।তোমার মা আমার ভাগ্নিকে যোগ্য ছেলের হাতে তুলে দিয়েছে।আমি আজ সত্যিই আমার স্ত্রীর জন্য গর্বিত।
সাইফুদ্দীন সিকদার মরিয়ম বেগমকে আঁকড়ে ধরে ধীরপায়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।

সুয়ারেজ পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল,
~ভালোবাসার মানুষকে ছিনিয়ে নেওয়ার কষ্ট নাদমান তুইও উপভোগ করবি।
_______________
ড্রয়িং রুমে প্রায় সকলে উপস্থিত। তামিম,মাহিন গেস্টরুমে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।জেসমিন রাজিয়া তালুকদারের রুমে স্বর্ণভার সাথে ঘুমিয়ে আছে।নাদমান টান টান হয়ে সোফায় বসল। ইতিমধ্যে জেসমিন আগ বাড়িয়ে বানোয়াট কাহিনি বাড়ির সকলের সামনে বলা শেষ। সকলকে ঘুম থেকে জাগিয়ে একটা কথাই বারবার বলেছে বড় ভাইজান আনজারা আপাকে কোলে করে নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। নয়ন তালুকদার রক্ত*চোখে তাকিয়ে আছে নাদমানের দিকে। কবির তালুকদারের মুখ জ্বলজ্বল করছে। সীমা,রাজিয়া করুন চোখে একবার নয়ন তালুকদারের মুখপানে তাকাচ্ছে তো আরেকবার নাবহান আর কবির তালুকদারের মুখপানে।নাবহানের মনে আনন্দে মাদল বাজছে।নাদমান ছাড়া তার বাপকে কেউ জব্দ করতে পারে না।

নয়ন তালুকদার বাজখাঁই কণ্ঠে বললেন,
~ আনজারার আজ সুয়ারেজের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তাকে এ বাড়িতে এনেছো কেন?

নাদমান কণ্ঠে গাম্ভীর্য এনে বলল,
~আমার স্ত্রী সেজন্যে এনেছি।

নয়ন তালুকদার বাজখাঁই কণ্ঠে বললেন
~তুমি পাগ*ল হয়েছ? অন্যের বাগদত্তাকে নিজের স্ত্রী বলছো?

নাদমানের স্বাভাবিক উত্তর,
~ভালোবাসি আনজারাকে আব্বু অন্যের সাথে কিভাবে সহ্য করি। তাই কিড*ন্যাপ করে বিয়ে করেছি।

কবির তালুকদার ঠোঁট টিপে হাসলেন।নাবহান এর মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেল।সে এতোদিন একটু টের পেল না তার ভাই আনজারাকে ভালোবাসে!সীমা তালুকদার আর রাজিয়া তালুকদার এর কিছু একটা মনে পড়তেই চোখে অশ্রু আসলো।ভয়ে তাদের শরীর কাঁপছে।

নয়ন তালুকদার বজ্র কণ্ঠে বললেন,
~কাল সকালে তুমি, তোমার মেয়ে, তোমার স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবে।তোমার মতো কুলাংগারের মুখ যেন আর না দেখি।
একবার বউ ছাড়া বাচ্চা নিয়ে হাজির হলে, আজ পর্যন্ত তোমার প্রথম স্ত্রীকে আমরা দেখেনি।আজ আবার অন্যের বাগদত্তাকে বিয়ে করলে। কি পেয়েছো তুমি? কাল সকালে তোমাদের চেহারা যেন আমি না দেখি।

নাদমানের ঠোঁটের এককোণে হাসি ফুটল
~আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন আব্বু এই বাড়িটা আমার। তাই,এই বাড়ি থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন বোধ করছিনা।আর, আমি নাহিয়ান তালুকদার না যে আপনার এককথায় বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।

নয়ন তালুকদার চুপসে গেলেন।অসন্তোষ চোখে ছেলের দিকে তাকালেন।
নাদমান গা দুলিয়ে হেসে বলল,
~ স্মৃতিচারণ করছেন? তা অনুভূতি কেমন আব্বু?

_____________

হাঁটু ভাঁজ করে তাতে মুখ ডুবিয়ে খাটে বসে আছে আনজারা। পরনে সে গোলাপি বেনারসিই শোভা পাচ্ছে। সেই সন্ধ্যায় একটা স্যান্ডুইচ আর জুস খেয়েছিল আনজারা। ক্ষুধায় শরীরে তার বিন্দুমাত্র শক্তি অবশিষ্ট নেই। কান্নার ফলে গলা ও শুঁকিয়ে আসছে তার।তামিমদের বাসায় বিয়ের পর খাবার দেওয়া হয়েছিল তাকে সেটাও জেদ করে খায়নি আনজারা। চোখে ঘুম ও হানা দিয়েছে।দরজার নব ঘোরার সাথে সাথে আনজারা মাথা তুলে তাকায়।সীমা,রাজিয়া, ভিতরে প্রবেশ করে।সীমা তালুকদারের হাতে খাবারের প্লেট। রাজিয়া তালুকদার খাটের উপর পা তুলে বসে।সীমা বেড সাইড টেবিলে খাবারের প্লেট রেখে তিনিও খাটের কিনারা দখল করে বসেন।আনজারার মুখশ্রীর নাজেহাল অবস্থা। রাজিয়া আনজারার মাথায় হাত রাখলেন। আনজারার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~তোমার জন্য খাবার এনেছি মা। হাতমুখ ধুয়ে খাবারটা খেয়ে নাও।
আনজারা হু হু করে কান্না করে ওঠল।
কান্নারত কণ্ঠে বললেন,
~আন্টি আমি বাসায় যাব।

সীমা মলিন কন্ঠে বললেন,
~যাবে মা কয়েকদিন পরই তুমি যাবে।এখন হাতমুখ ধুয়ে আস।আমি খাবার খাইয়ে দিচ্ছি।

রাজিয়া বললেন,
~জেসমিনকে দিয়ে শাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি ঐটা পরে নিও।
আনজারা হাতমুখ ধুয়ে খাবার খেল।নাদমানের সাথে রাগ করে তার পরিবারের মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করার কোন মানে নেই।

_______________

আনজারা পাতলা আরামদায়ক একটা সুতির কাপড় পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।ত্রিশ মিনিট পরই ফজরের আজান দিবে।ঘুমে তার চোখ ঢুলুঢুলু করছে।ফজর নামাজ পড়েই সে একবারে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিলো।আচমকা একটা কথা মস্তিষ্কে হানা দিতে আনজারার ভয়ে শরীর কেঁপে ওঠল।নাদমান যদি তার সাথে একই বিছানায় ঘুমাতে চায়।আনজারা কিছু একটা ভেবে এদিক সেদিক তাকাল।বেড সাইড টেবিল থেকে পানির জগ নিয়ে বিছানার একপাশে পানি ঢেলে দিলো যেন নাদমান খাটে শোতে না পারে।পিছনে দাঁড়িয়ে পুরো দৃশ্য দেখে নাদমান হাসল।

অস্ফুটস্বরে বলল,
~বোকা আনজারা।
নাদমান হেলেদুলে আনজারার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল,
~আমার মেয়েকেও কি আপনার পাশে নিয়ে ঘুমাবেন না আনজারা?অপরা*ধী আমি আমার মেয়েটাকে শা*স্তি কেন দিচ্ছেন?

আনজারা ঘাড় ঘুরিয়ে নাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
~পর্যাপ্ত জায়গা আছে আমার আর স্বর্ণভার জন্য। আজকের দিনটাই তো দুপুর আমি চলে যাব।এই বাড়ি আপনি আর আপনার স্ত্রীর মাঝখান থেকে।

নাদমান তীক্ষ্মচোখে আনজারাকে পরোখ করল। মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
~আমার জীবন থেকে আল্লাহ না চাইলে কেউ কোনদিন আপনাকে আলাদা করতে পারবেনা আনজারা।এমনকি আপনিও না।তাই,আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুলেও মাথায় আনবেন না।

আনজারা ফ্যালফ্যাল চোখে নাদমানের দিকে তাকিয়ে আছে। আনজারা তাকিয়ে আছে তার ভালোবাসার মানুষটার দিকে ঘৃণা*র চোখে।
________________

মুয়াজ্জিনের উচ্চকণ্ঠের ফজরের আজান ভেসে আসছে। ড্রয়িংরুমের ফ্লোরে বসে আয়েশা বেগম ভর্ৎ*সনা করছে নাদমানকে।মাহমুদ সাহেবের মন ফুরফুরা।তার বোকা স্ত্রী নাদমানের ঐ দিন রেষ্টুরেন্টের দেওয়া ইঙ্গিত বুঝতে পারে নাই। মেয়ের তার যোগ্য ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে ভেবেই সে প্রাণখোলা হাসল।আয়েশা বেগম আড়চোখে স্বামীকে হাসতে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠলেন,
~মেয়েটাকে ঐ এক টাকার এমপি কিড*ন্যাপ করে বিয়ে করেছে।আর আপনি থানায় না গিয়ে এখানে দাঁত কেঁলিয়ে হাসছেন?

~আহ্ আয়েশা দুপুরে মেয়ের জামাইয়ের বাড়িতে কি কি মিষ্টি নিয়ে যাব,সেটা চিন্তা না করে থানায় যাওয়ার কথা ভাবছো?অদ্ভুত মহিলা তুমি!

চলবে ——–
(আজকের পর্বে ও মাহাদ,মীরা,বন্ধুমহল,নাবহান, সাবিহাকে আনতে পারলাম না। পরবর্তী পর্বে ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব সকলকে আনার জন্য। আজকের পর্ব সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে ভুলে যাবেন না)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here