সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী #সাবিকুন্নাহার_সুমী #পর্ব:১৭

0
325

#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#পর্ব:১৭
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
বেলা করে ঘুম থেকে উঠার বদ*অভ্যাস নাদমানের রুটিনে নেই। রাতে ঘুম হোক বা না হোক ফজরের সময় তাকে ঘুম থেকে উঠতেই হবে। কত রাত স্বর্ণভার জন্য নাদমান না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই ।গত পাঁচবছর যাবৎ পরিপূর্ণ ঘুম তার কমই হয়েছে।চোখে রাজ্যের ঘুম থাকা সত্ত্বেও মেয়ে সজাগ থাকার দরুণ তাকেও সজাগ থাকতে হয়েছে।পরিবারের কোন সদস্যের কাছে স্বর্ণভার দায়িত্ব দিতে নাদমানের ঢের অনিহা ছিল ।একরত্তি স্বর্ণভা যখন ঘুমাতো নাদমান তখন খাওয়া, গোসলের সময় পেত।সর্বদা তার একজোড়া কান সজাগ থাকতো। মেয়ে কি ঘুম থেকে উঠে গেল,মেয়ে কি কান্না করছে এসব সর্বদাই মস্তিষ্কে ঘোরপাক খেত নাদমানের। মেয়েকে কোলে নিয়ে রাত জেগে মাষ্টার্স ফাইনাল ইয়ারের পড়াও পড়েছে নাদমান। পরীক্ষার হলে পৌঁছানোর আগে রাজিয়া তালুকদার ভরসা দিত স্বর্ণভাকে সে আগলে রাখবে।মায়ের ভরসায় নাদমান পরীক্ষার হলে পৌঁছানোর সাহস পেত।স্বর্ণভার প্রতি নাদমানের এসব যত্ন নয়ন তালুকদারের নিকট আদিখ্যেতা মনে হতো।প্রায়ই খ্যাঁক খ্যাঁক করে কথা শোনাতো নাদমানকে।রাজনীতিতে পরিপূর্ণ ভাবে নিজেকে মনোনিবেশ করার পর তালুকদার বাড়ির প্রতিটি সদস্য স্বর্ণভাকে আগলিয়ে রাখতে শুরু করল। নাদমানের ভরসাস্থল হলো তার পরিবার।পুরনো কথা স্মৃতিচারণ করে হাসল নাদমান। এই ঘর একসময় তার আর তার কলিজার টুকরো তার নয়নের মধ্যমণি স্বর্ণভার ছিল। আজ থেকে এই ঘর,এই বাড়ি, পুরো তালুকদার বাড়িতে তার প্রেয়সীর পদচারণা থাকবে। তা ভেবেই নাদমানের মনে সুখ অনুভব হলো।এই,যে এই তার চোখের সামনে খাটে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকা রমণীটি তার সহধর্মিণী। গতকাল বিয়ে করে যাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে নিয়েছে। ঠান্ডা, শক্ত মেঝেতে শুয়ে নাদমান মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় আনজারার দিকে তাকিয়ে আছে। এই, যে আনজারা ঘুমোচ্ছে তাকে কত নিষ্পাপ, চমৎকার লাগছে অথচ জেগে থাকলেই ঝ*গড়া শুরু করে। নাদমানের মনে হলো কাল রাত থেকে তার চোখজোড়া একটু বেশিই লাগাম*হীন হয়ে গিয়েছে। চোখ জোড়া যে আনজারার দিক থেকে সরতেই চাচ্ছে না। কয় আগে ও তো আনজারাকে মনপ্রাণ,উজাড় করে ভালোবাসত।তখনতো, একবারের বেশি দুইবার কখনোই তাকায়নি।তাহলে, কাল রাত থেকে চোখ জোড়া এতো অস*ভ্যতা করছে কেন?এ কি কেবল বৈবাহিক বৈধতার বেড়াজালে আবদ্ধ হওয়ার জোরে। নাদমান হাসল।আনজারা বিছানার শুকনো জায়গা থেকে সরে গিয়ে ভেজা অংশে নিজের শরীর বিছিয়ে দিয়েছে।নাদমানের মন বলছে আনজারার ভেজা অংশে শুয়ে থাকলে ঠান্ডা লাগবে তাকে সরাতে হবে ।মস্তিষ্ক বলছে এখন সরাতে গিয়ে সজাগ হয়ে গেলে তোর বউ বাড়ি মাথায় তুলবে। এখনই বলবে চরি*ত্রহীন পুরুষ, মাথা নষ্ট এমপি, এক বাচ্চার বাপ হয়ে লজ্জা করলো না আমার শরীরে হাত দিতে। নাদমান মনকেই প্রাধান্য দিলো। মেঝে থেকে উঠে গিয়ে বিছানার সামনে দাঁড়াল।
আনজারার শরীর হাত দিয়ে ঈষৎ সরিয়ে দিতে গেলেই আনজারা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়।
নিজের শরীরে নাদমানের হাত দেখতে পেয়ে শাড়ির আঁচল টেনে লাফিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসল আনজারা।নাদমান এক ঝট*কায় নিজের হাত সরিয়ে নিলো।

আনজারা কপট রা*গ দেখিয়ে ঘুমঘুমু চোখে নাদমানকে বলে ওঠে,
~শরীরের উপর এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন কেন?

আনজারার কথা নাদমানের কানে প্রবেশ করেছি কি?নাদমান মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে আছে আনজারার ঘুমুঘুমু মুখুশ্রীর দিকে।এলেমেলো অগোছালো চুল,পাতলা ঠোঁট জোড়া,চোখের ঘন নেত্রপল্লব,ফর্সা অবয়বের দিকে নাদমান নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হ্যাঁ নাদমান সাইক তালুকদার আবারও তার সম্মুখে নারীটির প্রেমে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।

নাদমানের অশান্ত মন অস্ফুটস্বরে বলল,
~আমার এই চোখজোড়া যুগ যুগ আপনার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকলেও তারা তৃষ্ণার্তই থাকবে আনজারা।

আনজারা কট*মট করে বলল,
~চুপ করে আছেন কেন?

নাদমান নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।
~আপনি গ*র্তে পড়ে গিয়েছিলেন।আপনাকে দেখে আমার দয়া হলো তাই গ*র্ত থেকে তুলতে আসলাম।

আনজারা আহাম্মক বনে গেল।সে দিব্যি খাটে শুয়ে আছে আর এই লোক গর্ত কোথায় দেখল?

আনজারা কণ্ঠে তেজ নিয়ে বলে,
~সারারাত গুন্ডা*মি করে এখন আবার কোন ঢং শুরু করেছেন? দিব্যি খাটে ঘুমিয়ে ছিলাম আর আপনি বলছেন গর্তে পড়ে গিয়েছিলাম!

~বোকা আনজারা।সারারাত বুদ্ধি খাটিয়ে আমার জন্য গর্ত খুঁড়লেন আর এখন নিজেই সে গর্তে পড়েছেন।আমি দয়ালু মানুষ চোখের সামনে আপনার মতো এক নারীকে গর্তে পড়ে যেতে দেখলাম তাই উদ্ধার করতে আসছি।
তাও আবার যে সে গর্ত নয় পানির গর্তে পড়েছেন।

আনজারা বুঝতে বেগ পেতে হলো না সে যে বিছানার ভেজা অংশে শুয়ে আছে।

নাদমান যে তাকে খুঁচিয়ে কথা বলছে তাও বুঝতে সক্ষম হলো।
~আমি পানিতে পড়ে যাই না গর্তে পরে যাই আপনার সমস্যা কি?একদম আমার আশেপাশে আসবেন না।

নাদমান বিড়বিড় করে বলল,
~ভালো মানুষের দাম নেই।
_________________

স্বর্ণভা গতকাল রাতে রাজিয়া তালুকদার এর সাথে ঘুমিয়েছিল।বিছানা ভিজে থাকার কারণে রাজিয়া তালুকদার এর রুম থেকে নাদমান স্বর্ণভাকে আর নিয়ে যায়নি।সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই স্বর্ণভা বায়না ধরেছে নয়ন তালুকদার এর কাছে,
~ দাদুভাই বাবাইয়ের কাছে যাব।

নয়ন তালুকদার ইজি চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন।
স্বর্ণভার কণ্ঠ কর্ণগোচর হতেই তার মেজাজ বিগ*ড়ে গেল।খবরের কাগজ মুখের সামনে থেকে সরিয়ে স্বর্ণভার দিকে তাকালেন নয়ন তালুকদার।

আশেপাশে রাজিয়া তালুকদারকে দেখতে না পেয়ে ধম*কের স্বরে বললেন,
~এই বেয়া*দব পিচ্চি সকাল সকাল কানের সামনে প্যান প্যান করলে থাপ্প*ড় দিয়ে গাল লাল করে দিব।

স্বর্ণভা তার তর্জনী আঙুল দিয়ে কপাল ঘষল।ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
~দাদুভাই আমার বইয়ের মধ্যে একটা পাখি আছে ওর নাম পেঁচা। তোমাকে দেখতে ঐ পেঁচার মতো লাগছে।

জেসমিন রুমে এসেছিল স্বর্ণভাকে নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য।স্বর্ণভার কথা শোনে জেসমিন হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। তার ইচ্ছে হচ্ছে মেঝেতে গড়াগড়ি করে হাসতে।
নয়ন তালুকদার লজ্জা পেল। এইটুকু একরত্তি পুঁচকে তাকে পেঁচার সাথে তুলনা করল!

নয়ন তালুকদার গলা খাঁকারি দিয়ে জেসমিনকে বললেন
~এই বেয়া*দব হাসছিস কেন?

জেসমিন মুখ চেপে হাসি আটকে রেখে বলল,
~খালুজান আপনারে দেখতে সত্যি সত্যিই পেঁচা*র মতো লাগে।

নয়ন তালুকদার লজ্জায় মুখ নত করলেন।তাকে আজকাল নাবহান ছাড়া কেউই ভ*য় পাইনা।
___________________

নাদমান ছাড়া বাড়ির সকল পুরুষ লোক আটটার মধ্যে অফিসে চলে গিয়েছে। পার্টি অফিসে আজ তেমন কাজ নেই তাই নাদমান দেরি করে যাবে।মাহিন,তামিম সকালে নাস্তা করে পার্টি অফিসের টুকটাক কাজ আছে সেগুলো শেষ করার জন্য চলে গিয়েছে। স্বর্ণভাকে একবার রাজিয়া তালুকদার খাইয়ে দিয়েছে। এখন নাদমান তার প্লেট থেকে রুটি খাইয়ে দিচ্ছে। নাইসা,সাইম গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছে সকাল হতেই জেসমিন কাল রাতের সমস্ত ঘটনা তাদের দুজনের কাছে উগলে বলে দিয়েছে।নাইসার বিশ্বাস হচ্ছে না আনজারা তাদের ভাবি!তার ভাইয়া আবারও বিয়ে করেছে!

সাহিম নাইসার কানে ফিসফিস করে বলল,
~আমিও একদিন টুকুস করে বিয়ে করে নাদমান ভাইয়ের মতো বউ কোলে নিয়ে বাড়িতে এন্ট্রি নিবো।

সাহিম আফসোসের স্বরে বলল,
~ইশশশ কাল কেন যে ঘুমিয়ে ছিলাম। সজাগ থাকলে লাইভ দেখে প্রশিক্ষণ নিতে পারতাম।

নাইসা বলল,
~তাড়াতাড়ি খাবার শেষ কর।ভাবির সাথে দেখা করতে যাব।

সীমা তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। ধীরে ধীরে জায়গা থেকে সরে গিয়ে সাহিমের কান টেনে ধরে বলল,
~তোদের দুজনকে না নিষেধ করেছি খাওয়ার সময় কথা বলবিনা।

নাদমান এসবে মনোযোগ না দিয়ে জেসমিনকে বলল,
~আনজারার খাবারটা রুমে দিয়ে আসিস।

জেসমিন মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক ইশারা দিলো।
~আইচ্ছা ভাইজান।

রাজিয়া রান্না ঘর থেকে বের হয়ে জেসমিনের হাতে খাবারের প্লেট দিয়ে বললেন,
~আনজারাকে দিয়ে আয়।

স্বর্ণভা ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাজিয়া তালুকদার এর দিকে। আনজারা তো তার পরী আন্টির নাম।

এসব ভাবনা নিয়ে নাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
~বাবাই কার জন্য খাবার নিয়ে গেল আন্টি?

রাজিয়া হাসলেন। সীমা সাহিমের কান ছেড়ে দিয়ে চেয়ার টেনে বসল।চোখাচোখি হলো দুই জা এর।তারা দুজনেই নিশ্চুপ। নাদমানের উত্তরের আশায় আছে তারা।সাহিম,নাইসা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

নাদমান বলল,
~তোমার মাম্মাম।

সবাই যেন এই উত্তরের আশায় ছিল।রাজিয়া মুখ গোল করে নিঃশ্বাস নিলো।
স্বর্ণভা আর ভাবল না খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।রাজিয়া সীমাকে তাড়া দিয়ে বললেন,
`~আনজারার জন্য শপিং এ যাব কয়েকটা শাড়ি,থ্রি-পিছ আর প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা করব।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।

নাদমানের বলতে ইচ্ছে করল দরকার নেই গত দুইবছরে তার প্রেয়সী জন্য ত্রিশটা শাড়ি তার পছন্দের সবকিছুই আলমারি ভর্তি স্টক করা আছে।নাদমান কিছু বললনা নিশ্চুপ খাবার খেল।
_____________________
আনজারার মন,মেজা*জ বিগ*ড়ে আছে। একদিকে আধভেজা শাড়ি পড়ে বসে আছে।আর,অন্যদিকে জেসমিনের বকবকানিতে তার মাথা*ব্যাথা করছে।নাদমান ছাড়া এই বাড়ির কোন সদস্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে তার বিবেক এ বাঁধা দেয়।আনজারার মন তিক্ততায় ছেয়ে গেল ভালোবাসার মানুষটার এহেন চরিত্রহীনতার রুপ মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তার।চরিত্র*হীনই তো এক স্ত্রী থাকাকালীন অন্য মেয়েকে তার মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করা পুরুষ তো চরি*ত্রহীনই।

জেসমিন এদিক সেদিক তাকিয়ে কণ্ঠে উৎকন্ঠা এনে বলে ওঠে,
~আনজারা আপা থুক্কু ভাবি আফনার লগে ভাইয়ের কতদিনের সম্পর্ক ছিল। এই বাড়িতে স্বর্ণভাকে পড়াতে এসেই কি দুজনের মন দেওয়া নেওয়া হয়েছিল?

আনজারা জেসমিনের দিকে তাকিয়ে ভাবল।তাদের দুজনের তো কোন ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল না। আর এই বাড়িতে স্বর্ণভাকে পড়াতে এসেই তো এক নিষি*দ্ধ পুরুষের প্রেমে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল সে।শুধু কি নিষি*দ্ধ পুরুষ? এক চরিত্র*হীন পুরুষ ও তো নাদমান সাইক তালুকদার। তাদের দুজনের তো মন দেওয়া নেওয়া হয়নি এটাতো একপাক্ষিক প্রেম।
আনজারা নিশ্চুপ। আনজারার অন্যমন*স্কতা দেখে জেসমিন আর তাকে বির*ক্ত করলনা।খাবারের প্লেট বিছানার উপরে রেখে দিয়ে বলল,
~ভাবি নয়টা বাজে আর দেরি কইরেন না।খাইয়া নেন।
_____________________

নাদমান স্বর্ণভাকে নিয়ে রুমে ঢুকল।আনজারার সামনে খাবার প্লেট দেখে কপাল কুঁচকে তাকাল। স্বর্ণভার মন আনজারাকে দেখে নেচে ওঠে। স্বর্ণভা নাদমানের থেকে নিজের আঙুল ছাড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে আনজারাকে জাপটে ধরলো। আনজারার দুই গালে তার পাতলা নরম তুলতুলে ঠোঁট দিয়ে চুমু দিলো ।আনজারাও স্বর্ণভাকে আঁকড়ে নিলো।স্বর্ণভাকে নিজের উরুতে বসালো।

স্বর্ণভা মুখ ঘুরিয়ে আনজারার দিকে তাকিয়ে বলল,
~আন্টি আজ থেকে তুমি আমার মাম্মাম?

আনজারা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো নাদমানের দিকে। আনজারার বলতে ইচ্ছে করল আমি মোটেই তোমার মাম্মাম না।তোমার মাম্মাম নিশ্চয়ই তোমার অস*ভ্য বাবার অত্যা*চারে সংসার ধর্ম ত্যাগ করেছে।

মনের কথা মনে রেখে মুখে বলল,
~আমি জানি না।নাদমান গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে তার প্রশান্তি ছেয়ে গেল। নাদমান এগিয়ে গিয়ে সাবধানে স্বর্ণাভাকে কোলে নিলো।

কপালে চুমু দিয়ে বলল,
~আজ থেকে আন্টিই তোমার মাম্মাম।

স্বর্ণভা খিলখিল করে হাসল।স্বর্ণভা নাদমানের নিকট অনুমতি নিলো।

~বাবাই নুসুমণির কাছে যাব।

নাদমান কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল।
~সাবধানে যাও।

স্বর্ণভা এক ছোটে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

আনজারা কট*মট দৃষ্টিতে নাদমানের দিকে তাকাল।
~আপনি আমাকে স্বর্ণভার মাম্মাম বললেন কেন?

নাদমানের নির্লিপ্ত উত্তর,
~আপনি আমার ওয়াইফ। স্বর্ণভা আমার মেয়ে তাহলে সম্পর্কে আপনিতো স্বর্ণভার মাম্মাম ঐ হোন।

আনজারা ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল।তার এই অস*ভ্য লোকের সাথে কথা বলতে মন চাই না। নাদমান কাভার্ডের সামনে এগিয়ে গেল।কাভার্ড খুলে মেরুন রঙের একটি শাড়ি হাতে নিয়ে আনজারার দিকে এগিয়ে গেল।

~শাড়িটা চেঞ্জ আসুন।আর চুপচাপ ভদ্রমেয়ের মতো খাবার খেয়ে নিন।
আনজারা বাজখাঁই কণ্ঠে বলল,
~আমি বাড়ি যাব।কেন আটকে রেখেছেন? কোন স্বার্থে এমন করছেন?

~খাঁচার পাখি ঠিকমতো পোষ না মানিয়ে তাকে খাঁচা থেকে মুক্ত করা উচিত নয় । বলা তো যায় না ডানা ঝাপটে পাখি যদি উড়ে চলে যায়।তাই পাখিকে মুক্ত করার রিস্ক নিতে চাচ্ছি না।
আনজারা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার সম্মুখের দন্ডায়মান শ্যামপুরুষের দিকে।

নাদমান শাড়ি আনজারার হাতে দিয়ে ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।

আনজারা শাড়িটির দিকে তাকিয়ে বলল,
~এই শাড়ি কার?

নাদমান ফিচেল হাসল।
~আমার ওয়াইফের।

আনজারার মনটা আবারও বিষাক্ত*তায় ছেয়ে গেল।সতি*নের শাড়ি পড়ার মতো দুর্ভাগ্য ও তার ছিল!

______________
আনজারা খাটের হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে। গুণে গুণে দুইদিন হয়ে গিয়েছে অথচ আনজারার মা,বাবা কেউই আনজারাকে একটা নজর ও দেখতে আসেনি। আনজারা তা ভেবেই বাবা,মার প্রতি অভিমান করেছে।আনজারা মনে মনে ভেবেই নিয়েছে বাবা,মা কারও সাথেই সে কথা বলবে না।তাদের জলজ্যান্ত মেয়েটাকে কিড*ন্যাপ করে ঐ চরিত্র*হীন পুরষটা বিয়ে করে নিলো অথচ তারা টু শব্দটি করল না!নাদমান ও আনজারার মোবাইলটা জব্দ করে রেখেছে।আনজারাকে কিড*ন্যাপ করে নাদমানের এভাবে হুট করে বিয়ের কারণটাও আনজারার বোধগম্য হচ্ছে না। আনজারার মন বলছে রাজনৈতিক শত্রু*তা থেকেই হয়তো নাদমান বিপক্ষদলের নেতার হবু বউকে এভাবে কিডন্যা*প করে বিয়ে করেছে।

আনজারা মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
~এক শয়*তান থেকে রেহাই পেয়ে আরেক চরিত্রহী*নের বউ হওয়া কি তার ভাগ্য ছিল।দুইটাই মুখোশধারী কাপুরুষ।

আনজারার আকাশকুসুম ভাবনার মাঝেই দরজা ঠেলে রুমের ভিতরে ঢুকল নাইসা।হাতে তার একগাদা শুকনো কাপড়।আনজারার ধ্যান ভঙ্গ হলো। নাইসার দিকে তাকিয়ে মলিন হাসল।নাইসা এগিয়ে গেল কাভার্ডের সামনে। আজ পাশের কাভার্ডের দরজাও খোলা। নাইসার অনেক দিনের কৌতুহল পাশের কাভার্ডে তাকে কি এমন অমূল্য রত্ন আছে যে তার ভাই এটাকে তালাবন্ধ করে রাখত।আনজারা ভাবলেশহীন। নাইসার দিকে তার ধ্যান নেই। নাইসা স্বর্ণভার তাকে কাপড়গুলো রেখে কৌতুহল নিয়ে পাশের তাকের দরজা খুলল।নাইসার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল এতো এতো শাড়ি দেখে সে অবাক।এতো শাড়ি তার ভাই কখন কিনল?নাইসা কিছু একটা ভাবতেই খেয়াল হলো নাদমান যখন তাদের সকলের জন্য শপিং নিয়ে বাড়িতে আসত। তখন সর্বদাই একটা ব্যাগ নিজের সাথে করে রুমে নিয়ে যেত।নাইসা হাসল। বড় ভাইয়ের ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে সে আর ভাবলো না।

নাইসা এগিয় গেল আনজারার দিকে। নাইসা আনজারার পাশে বসে বলল,
~ভাবি চলো না ছাদে যাই।

আনজারার ও ঘরবন্দী হয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।

তাই সে নাইসার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল।
~চলো।

সাহিম দরজায় করাঘাত করে ভেতরে আসার অনুমতি চাইল।
~ভাবি আসব?

আনজারা মলিনস্বরে বলল,
~হুম।

সাহিম হিরো লুক নিয়ে এন্ট্রি নিলো।বয়স অল্প হলেও লম্বায় পাঁচফুট আট ইঞ্চির ফর্সা মুখশ্রীর এই ছেলের হাবভাব একদম বড়দের মতো।

নাইসা মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,
~এরকম সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছিস?দেখেতো মনে হচ্ছে তিনদিন যাবৎ গোসল করিস না।

সাহিম তার কপালে আসা চুল গুলো পিছনে ঠেলে দিয়ে। শার্টের কলার টেনে বলল,
~হিসাব ভুল হয়েছে। চারদিন যাবৎ গোসল করিনা।

সাহিমের কথায় আনজারা হুহু করে হেসে ওঠল।
_________________
নয়ন তালুকদার সকাল সকাল উঠেই মনঃস্হ করলেন নাবহানকে নিয়ে আজ বাড়ির বাহিরে হাঁটাহাঁটি করবেন।আজকাল তার বৈরাগী হওয়ার শখ জেগেছে। নাবহানটা ছাড়া কেউ তাকে আর ভ*য় পায় না।কেউ তাকে সম্মান করেনা।এমনকি পুঁচকে, একরত্তি স্বর্ণভাটাও তাকে পেঁচার সাথে তুলনা করে। নয়ন তালুকদার সিদ্ধান্ত নিলেন তার বন্ধুর মেয়ে বিদেশ থেকে আসলেই নাবহানের বিয়ে দিয়ে দিবেন।নয়তো বলা যায় না তার এই বাবা ভক্ত ছেলেটাও বিয়ে করে বউ নিয়ে হাজির হবে। পরক্ষণে, তিনি নিজেকে বকা*ঝকা করলেন তার নাবহান কখনোই তার অনুমতি ছাড়া এককদম পা ফেলে না।সে ছেলে কখনোই তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবেনা।ছেলের উপর তার অগাধ বিশ্বাস আছে। নাবহান রেডি হয়ে বাগানে বাবার জন্য অপেক্ষা করছিল। নয়ন তালুকদার আসা মাত্রই দুজন বের হলো।
নয়ন তালুকদার সামনে হাঁটছে নাবহান কিছুটা পিছনে হাঁটছে।

~নাবহান বাবুসোনা সেরেলাক খাবে?

চিকন মেয়েলী ন্যাকাস্বর শোনে নাবহান তড়িৎ গতিতে পিছনে তাকাল।

সাবিহাকে দেখে নাবহান দুই কদম পিছিয়ে গেল।চুপসানো মুখ নিয়ে বাবার দিকে তাকাল। সাবিহা দাঁত চেপে হাসছে।সুঠামদেহের শ্যামবর্ণের পুরুষটির এরকম ভয়া*তুর মুখশ্রী দেখে সাবিহার গড়াগড়ি করে হাসতে ইচ্ছে করছে।নাবহান চোখ রাঙিয়ে ইশারা দিলো এখান থেকে যাওয়ার জন্য।
সাবিহা, নাবহানকে পাত্তা না দিয়ে,
তার সামনে আসা চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে হেলেদুলে নয়ন তালুকদার এর কাছে গেল।

~আসসালামু আলাইকুম আংকেল।

নাবহান আল্লাহ আল্লাহ করে গলা শুঁকিয়ে ফেলছে।এই হাঁটুর বয়সী মেয়েটাকে সে যমের মতো ভয় পায়।নাবহানের গতকাল রাতের কথা মনে পড়তেই শরীর কাঁ*পা শুরু হয়ে গেল।সাবিহা নাবহানকে গতকাল রাতে কল দিয়ে বলেছিল।

~আমাকে আই লাভ ইউ যদি না বলেন আমি আংকেলকে বলবো আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করেন।

নাবহান ভয় পাচ্ছে এখন যদি সত্যি সত্যি নালিশ দেয়।
নয়ন তালুকদার সালামের উত্তর দিলেন।

হাসিমুখে বললেন,
~সাবিহা যে! এতো সকাল সকাল কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

সাবিহা হাসিমুখে আড়চোখে একবার নাবহানেকে দেখো নিলো।

রসিয়ে রসিয়ে বলল,
`এইতো আংকেল নাবহানের জন্য একটা সেরেলাক আর ফিডার কিনতে যাচ্ছি।

নাবহান খুঁক খুঁক করে কেঁশে ওঠল।নয়ন তালুকদার ছেলের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালো।নয়ন তালুকদার সাবিহা আর সাবিহার আব্বু ছাড়া তাদের পরিবারের কাউকেই তেমন চিনেন না।

সাবিহার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
~নাবহান কি তোমাদের বাড়ির কোন বাচ্চার নাম?

নাবহান বিড়বিড় করে বলল,
~মিথ্যা*বাদী একটা চৌদ্দগোষ্টির মধ্যেও নাবহান বলে কেউ নেই ওর বাবা।

সাবিহা দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বলল,
~জ্বি আংকেল। বাবা ভক্ত এক ফুটফুটে বাচ্চা।

নাবহান বিড়বিড় করে বলল,
~কতবড় সাহস মেয়ের! আমাকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সাবিহা বিদায় নিয়ে আবারও হাঁটা শুরু করল। যাওয়ার আগে ভ্রু উঁচিয়ে ঠোাঁট নেড়ে ইশারা দিয়ে বলল,
~ফুটফুটে বাবু।
নয়ন তালুকদার নিজ ধ্যানে হাঁটতে শুরু করলেন। এইবারের মতো বেঁচে যাওয়ায় নাবহান দুই হাত তুলে আল্লাহর নিকট হাজারো শুকরিয়া আদায় করল।
___________________

নাদমান চোখমুখে গাম্ভীর্যতা নিয়ে মেঝেতে বিছানা করছে।তবে মনে তার হাহাকার চিৎ*কার করে গলা ফাটিয়ে তার সাধুবাবা সাধুবাবা আমায় একখান তাবিজ দেন।আমার ঘরে আমি মেম্বার আমার বউ চেয়ারম্যান গানটা গাইতে ইচ্ছে করছে। এইযে, তার সদ্য বিয়ে করা বউ তার বাচ্চাকে নিয়ে এত বড় একটা খাট দখল করে রেখেছে।আর,সে এই ঘরবাড়ির মালিক হওয়া সত্ত্বেও এই শক্ত মেঝেতে বিছানা করছে ঘুমানোর জন্য।স্বর্ণভা ঘুমিয়ে পড়েছে। আনজারা পাতলা কম্বল দিয়ে স্বর্ণভার শরীর ঢেকে দিলো।নাদমান আড়চোখে পুরো দৃশ্যটা দেখল।আনজারা এতো সহজে স্বর্ণভাকে মেনে নেওয়ার বিষয়টা তাকে প্রশান্তি দেয়।নাদমান টানটান হয়ে মেঝেতে করা বিছানায় শোয়ে পড়ল।ঘরের উজ্জ্বল বাতির আলো তার চোখে পড়ছে।গত পাঁচদিন যাবৎ রাতে বাতির সুইচঅফ করা নিয়ে আনজারার সাথে বহুবার কথা কাটাকাটি হয়েছে নাদমানের। নাদমান ঘুটঘুটে অন্ধকার ছাড়া ঘুমাতে পারেনা।

নাদমান গলা খাঁকারি দিয়ে আনজারাকে বলল,
~আজ অন্তত লাইটের সুইচটা অফ করি।

আনজারা কাটখোট্টা উত্তর দিলো,
~লাইট অফ করলে কি আপনার চুমু খেতে সুবিধা হবে? চরি*ত্রহীন,কাপু*রুষ।

নাদমান আহাম্মক বনে গেলো। সে না হয় একদিন ছোট্ট একটা চুমু তার বউকে দিয়েছে তাই প্রতিদিন খোঁটা দিতে হবে ?

আনজারা থেমে আবার ও বলল,
~নিজের প্রতিপক্ষের সাথে লড়াইয়ে না পেরে আমাকে কিড*ন্যাপ করে বিয়ে করেছেন। তা আপনার প্রথম ওয়াইফকেও কি এভাবে বিয়ে করেছেন?

নাদমান ফোঁস করে নিশ্বাস ছেড়ে শোয়া থেকে উঠে বসে।তার বউয়ের ঝগড়ুটে গুণ সম্পর্কে সে জানে। এখন কি আন্দাজে অপবাদ দেওয়ার গুণটাও রপ্ত করেছে?নাদমান স্বর্ণভার দিকে তাকাল মেয়েটা তার পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।

নাদমান দাঁত কাম*ড়ে হিসহিসিয়ে বলল,
~আমার সুস্থসবল কানটাকে দয়া করে রেহাই দেন।আপনার মাইকের মতো কণ্ঠস্বরে পাশের রুমের নাবহানের ও কানের পর্দা ফেটে গিয়েছে হয়তো।

আনজারা শাড়ির আঁচল টেনে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল।

কট*মট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
~আপনি আমাকে অপমান করছেন?

~না,প্রশংসা করেছি।এখন দয়া করে আমাকে ঘুমাতে দেন।
________________

পার্টি অফিসের কাঠের চেয়ারটাই বসে আছে নাদমান।ওয়েটিং রুম থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। তামিমের কণ্ঠস্বরও শোনা যাচ্ছে। নাদমান অফিসরুম থেকে বের হয়ে ওয়েটিং রুমের সামনে আসতেই একজন বৃদ্ধ লোক দৌড়ে এসে নাদমানের পা আঁকড়ে ধরল। নাদমান দ্রুত তাকে পা থেকে দুই হাত দিয়ে সরিয়ে দাঁড় করালো।লোকটি হাউমাউ করে কান্না করছে।

নাদমান উৎকণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
~কি হয়েছে চাচা?

লোকটি ক্রন্দনরত অবস্থায় নাদমানকে বলল,
~আমার মেয়েটা আটমাসের গর্ভবতী। আমার মেয়ের জামাই মেয়েটাকে আধ*মরা করে বাড়িতে রেখে গিয়েছে। একলক্ষ টাকা যৌতুক না দিলে নাকি মেয়েটাকে তালাক দিবে।

চলবে________
(গঠনামূলক মন্তব্য চাই। আর ভুলত্রুটি কমেন্টে দয়া করে লিখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here