সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী #সাবিকুন্নাহার_সুমী #রাজনীতি+রোমান্টিক #পর্ব:১৫

0
313

#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#রাজনীতি+রোমান্টিক
#পর্ব:১৫
—রেষ্টুরেন্টে এর এক কামরায় আয়েশা বেগম চোখ, মুখ কুঁচ*কে বি*রক্ত মুখশ্রীতে তাকিয়ে আছে নাদমানের দিকে। থমথমে মুখশ্রীতে পাশের চেয়ারে বসে আছে মাহমুদ সাহেব।
পুরো কামরায় তারা তিনজন।পারসোনাল কথা বলতে যেন অসুবিধা না হয়।সেজন্য, নাদমান পারসোনালভাবে কামরাটা বুক করেছে।লোকসমাগমের মধ্যে তো আর পারসোনাল কথা বলা যায়না।
গত ছয়দিনে আয়েশা বেগমের কর্মকান্ডে মাহমুদ সাহেবের মনে হচ্ছে স্ত্রীকে সে বিয়ের পর থেকে একটু বেশিই প্রশ্রয় দিয়েছি।শুরুতেই তার লাগাম টানা উচিত ছিল।তাহলে, স্ত্রীর এসব কর্মকাণ্ড তার স*হ্য করতে হতো না। মেয়েকে ভাতিজার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য সে উ*ম্মাদ হয়ে গিয়েছে। উ*ম্মাদ না হলে কি কেউ বারবার আত্ম*হত্যার হুম*কি দিতে পারে!
মাহমুদ সাহেব সর্বদাই শান্তি প্রিয় মানুষ। ঝামে*লা থেকে নিজেকে দূরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেন তিনি। স্ত্রীকে সে প্রচন্ড ভালোবাসে।মাহমুদ সাহেবের ভ*য় হয়।আয়েশা বেগম যদি মেয়ের বিয়েকে কেন্দ্র করে কোন এক অঘট*ন ঘটিয়ে ফেলে! তখন, সে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।তাই,সে চুপচাপ স্ত্রীর সবকিছু স*হ্য করছেন।আনজারাও বিয়েতে রাজি তাই সে আয়েশা বেগমকে তার মতো ছেড়ে দিয়েছেন।

আয়েশা বেগম তি*রিক্ষি মেজাজ নিয়ে নাদমানকে বললেন,
~শোন,নাদমান মা হিসেবে আমি আমার মেয়ের একটা সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করি। তোমার সংসারে তা কোনভাবেই সম্ভব না। আমার মেয়ে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করবে, নাকি তোমার মেয়ের দেখভাল করবে?আবার, তোমাদের যৌথ পরিবার। তোমার সাথে আমি কোনভাবেই আনজারার সুখের চিন্তা করতে পারিনা।তাই,বাবা আমাদের আর বির*ক্ত করো না।তুমি তোমার রাস্তা মাপো।ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করো।আনজারাকে বিয়ে করার ইচ্ছে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।

আয়েশা বেগম কথা শেষ করে মুখ গোল করে নিঃশ্বাস নিলো।নাদমান প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।একজন সহজ,সরল মানুষের এতো দ্রুত পরিবর্তনে সে হতভ*ম্ব। সুয়ারেজ যে দারুণ ভাবে আয়েশা বেগমের মস্তিষ্ক আয়ত্ত করেছে নাদমানের তা বুঝতে বেগ পেতে হলো না।

মাহমুদ সাহেব এবার চুপ থাকতে পারলেন না।নাদমানকে মরিয়ম বেগমের এভাবে অপ*মান করাটা তার স*হ্য হলো না।

নাদমান কিছু বলবে তার পূর্বেই মাহমুদ সাহেব দাঁত কাম*ড়িয়ে বললেন,
~আয়েশা কথাবার্তার লাগাম টানো।

আয়েশা তাচ্ছি*ল্যের স্বরে বললেন,
~আপনি চুপ করেন আনজারার আব্বু।এত, যখন আমার মেয়েকে বিয়ে করার শখ জাগছে তাহলে যখন আমার মেয়েকে বিয়ে করার কথা ছিল তখন কেন করল না?যখন আমার মেয়ের ভালো জায়গা থেকে সমন্ধ আসছে, তখন কেন আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য উতলা হচ্ছে এই ছেলে?

নাদমান ফিচেল হাসল। সাবলীল তার কণ্ঠস্বর,
~আন্টি আপনার জন্য ঠান্ডা কিছু অর্ডার করবো?আজ সূর্য মামা মনে হয় সরাসরি আপনার মস্তি*ষ্কে তাপ দিচ্ছে? সেজন্য হয়তো আপনার মে*জাজের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঠান্ডা কিছু গলায় পড়লে মস্তি*ষ্কের তাপমাত্রা কমতে পারে।আপনি চাইলে মিষ্টি কিছুও অর্ডার দিতে পারি।আশা করি পরবর্তীতে আপনার মুখ থেকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বের হবে।

নাদমানের খোঁ*চা দেওয়া কথায় মাহমুদ সাহেব মুখ চেপে হাসলেন।

আয়েশা বেগম নাদমানের দিকে কট*মট চোখে তাকালেন,
~এই অস*ভ্য ছেলে আমাকে খোঁ*চা দিয়ে কথা বলো তোমার সাহস তো কম না!দুই টাকার এমপি হয়ে আমাকে খোঁ*চা দিচ্ছ!আমাদেরকে অনুরোধ করে ডেকে এনে অপমান করছো?

নাদমান বিড়বিড় করে বলল,
~তাহলে মাই হলো মেয়ের ঝগ*ড়া শিখানোর গুরু।কেউ কারও থেকে কম নয়। মেয়ে বলে মাথানষ্ট এমপি মা বলে দুই টাকার এমপি।এমপি হওয়াটাই মনে হচ্ছে আমার অ*পরাধ।

আয়েশা বেগম কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
~বিড়বিড় করে কি বললে?

নাদমান মাথা নেড়ে বলল,
~নাতো, আমি শুধু বললাম আমার বিয়েতে আপনাদের দাওয়াত রইলো।

আয়েশা বেগম মুখ ভেং*চি দিয়ে বললেন,
~এই, মাত্র না আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য ঢং করলে।এখন, আবার অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছো!তা কবে বিয়ে?

নাদমান টানটান হয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল,
~আপনারা যেহেতু নিজের মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিবেন না।তাহলে আমাকেই বিয়ে করতে হবে। আপনার মেয়ের যেদিন বিয়ে সেদিন আমার বিয়ে।

মাহমুদ সাহেব নিশ্চুপ ভঙ্গিতে দুজনের কথাবার্তা শোনছেন।

আয়েশা বেগম বিরক্ত মুখুশ্রীতে তাকিয়ে বললেন,
~আমার মেয়ের বিয়ের দিন তোমার বিয়েতে যাওয়ার সময় আমার হবে না। মেয়ের বিয়ে কত দায়িত্ব আমার।

নাদমান ঠোঁট একদিকে উঁচু করে হেসে বলল,
~সময় করে আসবেন আন্টি।আমার বউয়ের গলা জড়িয়ে কান্না*কাটি করতে হবে না।

আয়েশা বেগম কপাল কুঁচকে চেয়ার টেনে উঠে দাঁড়াল। নাদমানের সাথে ত*র্কে লিপ্ত আর হলো না।

মাহমুদ সাহেবকে তাড়া দিয়ে বললেন,
~আমি বাহিরে বের হচ্ছি।কাল মেয়ের গায়ে হলুদ আজ বেহুদা সময় ন*ষ্ট করলাম। আসো।

মাহমুদ সাহেব কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বললেন,
~অপেক্ষা কর আমি আসছি।

আয়েশা বেগম ধপাধপ পা ফেলে বের হয়ে গেলেন।

মাহমুদ সাহেব মলিন মুখে নাদমানকে বললেন,
~আমাকে মাফ করো বাবা তোমার আমানত আমি রক্ষা রাখতে পারলাম না।
______________

কাঁচা হলুদের উটকো গ*ন্ধ নাদমানের নিঃশ্বাসের সাথে নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করছে।হলুদের গ*ন্ধ নাদমানের এতোটা ও অস*হ্য লাগে না।তবে,এমুহূর্তে তার গ*ন্ধটা অ*সহ্য লাগছে। ।তার,সামনে গায়ে হলুদের বেশভূষা নিয়ে বসে আছে সুয়ারেজ। মুখের ফর্সা ত্বক আজ আর তার ফর্সা নেই হলুদ রংয়ের আবরণে তা ঢাকা পড়েছে।মুখে তার বিজয়ের হাসি। ভাবখানা এমন যেন যুদ্ধে জয় করে সিংহাসনে বসে আছে সে।আগামীকাল তাকে বিজয়ের মুকুট পড়ানো হবে।সেজন্য, পরাজিত রাজার নিকট আগাম সুখবর নিয়ে এসেছে। সুয়ারেজ দুই ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসল। নাদমান মনোযোগ দিয়ে কাগজে কলমের সাহায্যে লেখালেখি করছে।তার ধ্যান আপাতত সুয়ারেজে নেই।নাদমানের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সুয়ারেজ গলা খাঁকারি দিলো।

নাদমান চোখ তুলে তাকালো,
~যক্ষা হয়েছে তোর? হসপিটালে যা।পার্টি অফিসে এসেছিস কেন?

সুয়ারেজের মুখের হাসি উবে গেলো।

নাদমানের দিকে তাকিয়ে উপহাস করে বলল,
~ তোর প্রেয়সীর আগামীকাল আমার সাথে বিয়ে।তাই, তোকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এসেছি।তুই রাজি হলে তোর ক*ষ্টের ভাগিদার ও হতে পারি।

নাদমান লেখা বন্ধ করে কাগজের উপর কলমটা রাখলো।দুইহাত টেবিলের উপর রেখে হু হু করে হেসে ওঠলো,
~পড়াশোনার বাহিরে ব্রেইন তাহলে এতোদিনে সঠিক কাজে লাগিয়েছিস!যাক জেনে খুশি হলাম। তোর হবু বউ আমার প্রেয়সী এই তথ্যটা তুই উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিস।

সুয়ারেজ শিনা টান টান করে চেয়ারে হেলান দিলো।

নাদমানকে খোঁ*চা দিয়ে বলল,
~আমার আর আনজারার ফুলশ*য্যার খাট আনজারার প্রিয় ফুল রজনীগন্ধা দিয়ে সাজাবো ভাবছি।কিশোর বয়স থেকে মেয়েটাকে ভালোবাসি। তার,পছন্দকে তো প্রাধান্য দিতেই হবে।

নাদমান তাচ্ছি*ল্যের স্বরে বলে ওঠে,
~কিশোর কাল থেকে ভালোবেসেও আনজারার প্রিয় ফুলের নাম বলতে না পারায় তোকে আমি আকাশসম সমবেদনা জানাচ্ছি সুয়ারেজ। আনজারার প্রিয় ফুল শাপলা।

সুয়ারেজ নাক কুঁচকে তাকিয়ে আছে নাদমানের দিকে।

মনে মনে সুয়ারেজ বলে,
~শাপলাও একটা মানুষের প্রিয় ফুল হতে পারে!

সুয়ারেজ আমতা আমতা করে বলল,
~উঠিরে কাল বিয়ে আজ অনেক প্রিপারেশন নিতে হবে।৷ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের মাঝেই আসলাম তোর কাছে।

নাদমান নিশ্চুপ, ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে।

সুয়ারেজ তার হলুদ পাঞ্জাবির পকেট থেকে টেবিলের উপর একটা সি*গারেটের প্যাকেট রাখলো।চোখ দিয়ে নাদমানকে ইশারা দিয়ে প্যাকেট টা দেখিয়ে বলল,
~আগামীকাল থেকে এটা তোর কাজে লাগবে। যদিও তুই এখন আর স্মো*ক করিস না।তবুও ,একসময়ের অভ্যাস নতুন করে শুরু করিস।এক, দুইটা বিরহের গানও মুখস্থ করিস।আনজারার কথা মনে পড়লে বিরহের গানও গাইতে পারিস।
নাদমান ফিচেল হাসল।
___________
ড্রয়িংরুমে মাহমুদ সাহেব, আয়েশা বেগমের চিৎ*কার, চেঁচামে*চি শোনে দরজা খোলে আনজারা রুম থেকে বের হলো।মাহমুদ সাহেবের এক কথা সে আনজারাকে সুয়ারেজের সাথে বিয়ে দিবে না।আনজারা দরজার সামনে নির্বোধের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আনজারা কখনো তার বাবাকে তার সাথে, তার মায়ের সাথে উচ্চবাচ্য করতে দেখিনি।আর তার বিয়েকে কেন্দ্র করে বাবা,মায়ের এরকম ঝগড়া*ঝাটিতে সে বারবার হত*বিহ্বল হচ্ছে।

আয়েশা বেগম তর্কা*তর্কির এক পর্যায়ে বললেন,
~আমার ভাই এই প্রথম আমার নিকট একটা আবদার করেছে। আমি আপনার জে*দ এর কারণে তার আবদার তো ফিরিয়ে দিতে পারব না।সুয়ারেজের সাথে আনজারার বিয়ে দিতে আপনি রাজি না হলে আমি আত্ম*হত্যা করবো।

মাহমুদ সাহেব ফ্যালফ্যাল চোখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন। আনজারা দরজা থেকে দৌড়ে মায়ের উপর হামলে পড়লো।

মাকে জড়িয়ে ধরে বলল মলিন মুখে বলল,
~,আম্মু কেন এরকম নির্বো*ধের মতো আচরণ করছো?কেন এসব কথা বলছো?

আয়েশা বেগম মেয়েকে সরিয়ে দিয়ে বললেন,
~একদম অভিনয় করবি না।বাপ,মেয়ে আমার কথা চিন্তা করিস না। স্বার্থ*পর তোরা।

বলেই, আয়েশা বেগম রুমে প্রবেশ করে বিক*ট শব্দে দরজা আটকিয়ে দিলেন। মাহমুদ সাহেবও ধপাধপ পা ফেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন।তখনই, আনজারা ক্লা*ন্ত দেহটাকে টেনে হিঁচড়ে রুমে নিয়ে গেল।মীরাদের বাসা থেকে এসে ভেবেছিল সে দুপুরে খাবে।বাপ,মায়ের অশান্তিতে রাত হয়েছে অনেক তারপর ও তার পেটে খাবার পড়েনি।আনজারা তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে সুয়ারেজকেই বিয়ে করবে। জীবনে চলার পথে সবসময় প্রতিবাদী হওয়া বেমানান।না চাইতেও আমাদের অনেক সময় আশেপাশের মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে প্রতিবাদী হওয়া হয়না।আনজারা মলিন হাসলো যাকে ভালোবাসে তার শরীরে অন্য নারীর ছোঁয়া আছে।সে অন্য এক নারীর স্বামী।আর,যে পুরুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবে।সে নারীকে সম্মান করতেই জানে না।একজন নোং*রা মনমানসিকতার লোক।

কারও হাত কাঁধে পড়তেই আনজারা বারান্দার গ্রীল থেকে হাত সরিয়ে পিছনে তাকালো।মরিয়ম বেগমকে দেখে আনজারা ভ্রু কুঁচকালো।বরযাত্রী তো আরও পরে আসবে এখন কেবল বিকাল।মরিয়ম বেগমের অনুরোধে বরযাত্রী রাতে আসবে। তার অনেকদিনের শখ তার ছেলের বিয়ে রাতে হবে।
আনজারা কণ্ঠে উৎকন্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করলো,
~মামি তুমি এখন এসেছো যে?

মরিয়ম বেগম হতা*শ চোখে তাকালেন। সে তার জীবনে এমন কাট*খাট্টা মেয়ে দেখেনি।এসেছে এসেছে তাই বলে মুখের উপর জিজ্ঞেস করবে!এখন কেন এসেছে?

মরিয়ম বেগম , আনজারার দিকে তাকিয়ে অসন্তোষ মুখে বলেন,
~তোমার মতো স্বাধীনচেতা মেয়ের এভাবে হুট করে বিয়েতে রাজি হওয়াটা কি মানায় মা?তোমার সাথে সুয়ারেজ যে সদাচারণ করে না সেটাতো আমি নিজের চোখেই দেখলাম। আমার ছেলে সকলের নিকট শুদ্ধ পুরুষ হলেও সে কেমন আমি জানি।নারীবা*জ না তবুও সবকিছুতে তার অতিরিক্ত।
আমি চাই না তোমার জীবনটা নর*ক হয়ে যাক।
তুমি একবার সবটা আয়েশাকে বলে বিয়েটা আটকাতে পারতে।
আনজারার চোখ মুখে কাঠি*ন্যের ছাপ।আজ তার কারও সহানুভূতি, উপদেশ স*হ্য হচ্ছে না সবকিছুতেই বি*রক্ত লাগছে।

আনজারা তাচ্ছি*ল্যের হাসি দিয়ে বলল,
~তুমি তোমার ননদ,নন্দাই এর নিকট গিয়ে ছেলের আসল রুপটা বলে দাও।দেখো তোমার ননদ এর পাগলা*মি কমে কিনা।

মরিয়ম বেগম দুইহাত উপরে তুলে বলল,
~তুমি মা ঘাড়ত্যা*ড়া তা আমার অজানা নয়।তবে,নিজের জীবন নিয়েও যে ঘাড়ত্যা*ড়ামি করবে আমার জানা ছিল না।
বিছানার উপর শাড়ি গয়না রেখেছি এগুলো নিয়ে রেডি হয়ে নিচে আসো।তোমাকে পার্লারে নিয়ে যাবো।

আনজারা কণ্ঠে উৎকন্ঠা নিয়ে বলল,
~মামি পার্লারের মহিলা বাসায় এসে সাজানোর কথা ছিলো।

~আসবে না।এতো প্রশ্ন না করে এসো।
______________
গাড়ির পার্কিং লটের সামনে পায়চারি করছে মরিয়ম বেগম। পঞ্চান্ন বছরের শাড়ি পরিহিত মহিলাটিকে এই সন্ধ্যা লগ্নে দারুণ সুন্দর লাগছে।দেখে বুঝার উপায় নেই তার বয়স পঞ্চান্ন, মনে হয় বয়স তার চল্লিশ। ধবধবে ফর্সা চামড়ার এই মানুষটির প্রতিটি অঙ্গে স্বর্ণের অলংকার তার সৌন্দর্য্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মরিয়ম বেগমের গায়ের রংটাই সুয়ারেজ পেয়েছে। আশেপাশে গাড়ির হর্ণে মরিয়ম বেগম কপাল কুঁচকে বির*ক্ত প্রকাশ করছে। আনজারাকে দু-ঘন্টা যাবৎ পার্লারের ভিতরে সাজানো হচ্ছে। কোমড়ের টনটন ব্যা*থার কারণে আনজারার জন্য অপেক্ষা করতে তার বির*ক্ত লাগছে।রাফান কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নিকোটি*নের ধোঁ*য়া উড়াচ্ছে।ড্রাইভারের পরিবর্তে রাফান গাড়ি চালিয়ে মরিয়ম বেগম আর আনজারাকে নিয়ে এসেছে পার্লারে।
রাফান আশেপাশে তাকিয়ে মানুষের পদচারণা দেখছে।
আবারও সিগারে*টে টান দিয়ে নাক, মুখ দিয়ে গলগলিয়ে ধোঁ*য়া বের করছে।রাফান ভাবছে আজকের পর হয়তো তার মালিক তাকে নি*মক হারা*মের তকমা দিবে।হয়তো কাল সকালেই লোক মুখে শোনা যাবে সুয়ারেজ সিকদার এর বিশস্ত সহযোগী রাফান তার মালিকের সাথে বিশ্বাস*ঘাতকতা করেছে। রাফান ফিচেল হাসল। ভাবনার মাঝেই তার মোবাইল রিংটোন বেজে উঠল। রাফান সিগা*রেটের আধপোড়া অংশটা পিচঢালা রাস্তায় ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেলে। প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে সুয়ারেজে ভাই নামটা জ্বলজ্বল করছে। রাফান কল রিসিভ করে,
~আর কত সময় লাগবে আসতে তোদের?

রাফান স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
~এইতো ভাই ভাবির শেষ হলেই রওনা দিবো।

সুয়ারেজ তে*জী কণ্ঠে বলল,
~এতো সাজার কি আছে? তাড়াতাড়ি ওকে বাড়িতে নিয়ে যা।বরযাত্রী রওনা দিবে এখন।

~আচ্ছা ভাই

সুয়ারেজ বলল,
~আচ্ছা রাখছি।

কল কেটে সুয়ারেজ খাটে বসে।আর কয়েকমুহূর্ত পরই সে বরযাত্রী নিয়ে বের হবে। নাদমানকে নিয়ে যতই উপহাস করুক না কেন,সুয়ারেজের এখন আ*তংকে গলা শুঁকিয়ে আসছে।অস্থি*র লাগছে তার ।নাদমানকে বিশ্বাস নেই চোখের পলকে আনজারাকে নিজের করে ফেলতে পারে। সুয়ারেজ চুল খাম*চে ধরেছে। দুইজন বডিগার্ড পাঠানো উচিত ছিল তার মায়ের সাথে। এখন নিজের বোকা*মির জন্য নিজেকেই সে গাল*মন্দ করছে।মায়ের কথামত তাকে একা পাঠানো উচিত হয়নি তার।এতো প্ল্যান করে আনজারাকে সে বিয়ে করবে আজ।এখন তার চিন্তা হচ্ছে তীরে এসে তরী যেন ডুবে না যায়।সুয়ারেজ কল করে ড্রাইভারকে বললো গাড়ি বের করতে। সে আনজারাকে যে পার্লারে নেওয়া হয়েছে সেখানে যাবে।
________________
আনজারা সাজগোজ শেষ করে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।মরিয়ম বেগম আনজারাকে আপাদমস্তক দেখলেন। আনজারার মাথায় জর্জেটের গোলাপি ওড়না।পরনে কারুকার্যখচিত গোলাপি রংয়ের বেনারসি।দুই হাতে স্বর্ণের বালা,হাতে,কানে,নাকে,গলায় স্বর্ণের অলংকারে আনজারার বউ সাজ পরিপূর্ণতা পেয়েছে। মরিয়ম বেগম হাসলেন।

মনে মনে বিড়বিড় করে বললেন,
~ছেলেটার পছন্দ আছে।একদম মানানসই সবকিছু কিনেছে আনজারার জন্য।

মরিয়ম বেগম আনজারার থুতনিতে আঙুল ছুঁয়ে বললেন,
~সুখী হও মা।

আনজারার মুখ না মলিন, না হাসিখুশি পুরো চেহারায় কাঠি*ন্যের ছোঁয়া। যেন সে ভুল করেছে বেশ করেছে।
আনজারা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে।

রাফান একটা জুস এর বোতল আর স্যান্ডুইচ মরিয়ম
বেগমের হাতে দিয়ে বললেন,
~খালাম্মা আপনার কথামতো ভাবির জন্য খাবার এনেছি।

আনজারা কটম*ট দৃষ্টিতে রাফানের দিকে তাকাল।
~বিয়ে না হতেই ভ্যা ভ্যা করছেন কেন?

রাফান দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বলল,
~কতক্ষণ পরেই তো ভাবি হবেন।

মরিয়ম বেগম দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
~আহ্ চুপ কর।

মরিয়ম বেগম, আনজারার দিকে স্যান্ডুইচ এগিয়ে দিয়ে বললেন,
~বিকাল থেকে কিছু খাওনি এই স্যান্ডুইচ আর জুসটা খেয়ে নাও।আজ সারারাতে কখন পেটে খাবার পড়ে বলা যায় না।গাড়িতে উঠে দ্রুত খাবারটা খেয়ে নাও।
আনজারা বলল,
~ঠিক আছে।
________
গাড়ি তার আপনগতিতে ধোঁয়া উড়িয়ে শাঁই শাঁই চলছে। আনজারা স্যান্ডুইচ আর জুস খাওয়া শেষ করে।খাবার খাওয়ার কয়েক মিনিট পর আনজারা সিটে হেলান দিয়ে ঘুমে তলিয়ে পড়লো। মরিয়ম বেগম আনজারার মাথাটা তার কাঁধে রাখলেন। আগলে নিলেন আনজারাকে।
মরিয়ম বেগম হাসলেন। পিছনে তাকিয়ে দেখলেন কাঙ্ক্ষিত গাড়িটা তাদের পিছনে আসছে কিনা।নাদমানের গাড়ি পিছনে দেখে মরিয়ম বেগম ফিচেল হাসলেন।

রাফানকে বললেন,
~তাড়াতাড়ি গাড়ি চালা।

রাফান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে উৎসুক কণ্ঠে বলে
~খালাম্মা বেহুঁ*শ হয়ে গিয়েছে?

মরিয়ম বেগম মলিন হেসে বললেন ,
~হুম।

রাফান বলল,
~জুসের সাথে চেত*নাশক মিশিয়েছি।একঘন্টা বেহুঁ*শ হওয়ার নিশ্চিত গ্যারান্টি আছে।

মরিয়ম বেগম বললেন,
~তাড়াতাড়ি গাড়ি চালা বকবকানি বন্ধ করে।

_____________

এসির ঠান্ডা হাওয়ার মধ্যে ও সুয়ারেজ ঘামছে। একঘন্টা যাবৎ দীর্ঘ জ্যামে তার গাড়ি আটকে আছে।অস্থির*তা তাকে গ্রা*স করছে। সুয়ারেজ অনবরত একবার মরিয়ম বেগম একবার রাফানের মোবাইলে কল করছে। আনজারার নাম্বার ও বন্ধ।তিনজনের নাম্বারই বন্ধ। সুয়ারেজ শেরওয়ানির বোতাম খোলে গাড়ির সিটে হেলান দিলো। ড্রাইভার বারবার সুয়ারেজের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।সুয়ারেজের ভ*য়ে গলা শুঁকিয়ে আসছে। তার,বারবার মনে হচ্ছে আজ কোন অঘ*টন ঘটবেই।একদিকে জ্যাম অন্যদিকে আনজারা সহ বাকি দুজনের নাম্বার ও বন্ধ। একসাথে তিনজনের নাম্বার বন্ধ হওয়ায় চিন্তা, অস্থিরতা সুয়ারেজের মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সুয়ারেজের অস্থি*রতা দেখে মধ্যবয়স্ক ড্রাইভার ভাবলো।সুয়ারেজের হয়তো প্রকৃতি ডাকছে।

ড্রাইভার তার সরল মনে সুয়ারেজকে বললেন,
~স্যার সামনে পাঁচ মিনিট হাঁটলে একটা পাবলিক টয়*লেট আছে।আপনি পায়খা*না করলে যেতে পারেন।

সুয়ারেজের চোয়াল শক্ত হলো।ড্রাইভারের কথা শোনে চটে যাওয়া মে*জাজ আরও চটে গেলো।রা*গে হিতাহিত*জ্ঞানশূন্য হয়ে সুয়ারেজ ড্রাইভারের নাক বরাবর ঘু*ষি দিলো।

`~হারা*মির বা*চ্চা ফাইজ*লামি করছিস?তোকে আমি বলেছি আমার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন আছে।

ড্রাইভার ভয়ে থরথর করে কাঁ**পতে লাগলো।চোখের কার্নিশে জমা হলো অশ্রু।
_____________
রাফানের গাড়ি ব্রেক কষে তামিমদের বাড়ির সামনে। রাফান মনে মনে দুঃ*খ প্রকাশ করে বলে,
~শেষ পর্যন্ত এই ভট*কার বাড়িতেও নিমন্ত্রণ ছাড়া আমাকে আসতে হলো।শা*লার তো একটা বোনও নাই যে এই সুযোগে লাইন মারবো।

রাফানের গাড়ির পিছনে এসে থামলো নাদমানের গাড়ি। পরপর গাড়ির দরজা খোলে বের হলো তামিম,মাহিন,নাদমান। ঘুটঘুটে অন্ধকার জানান দিচ্ছে ধরণীর বুকে রাতের আগমন ঘটেছে।নাদমান পকেট থেকে মোবাইল বের করে মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করলো।
রাফান ও ড্রাইভিং সিটের দরজা খোলে বের হলো। মরিয়ম বেগম আনজারার মাথাটা সিটে হেলান দিয়ে গাড়ি থেকে বের হলো।মরিয়ম বেগম বের হতেই নাদমান ছুটে আসল তার নিকটে।তার পেছন পেছন মাহিন,তামিম ও আসলো

নাদমান চিন্তিত স্বরে বলল,
~আন্টি সব নিরব কেন?আনজারার কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে না কেন?

মরিয়ম বেগম ফিচেল হাসলেন,
~পুরোপুরি রুলস মেনে ছেলের হবু বউকে কিড*ন্যাপ করেছি।

নাদমান কণ্ঠে উৎকন্ঠা নিয়ে বলল,
~মানে?
মরিয়ম বেগম মাথার ঘোমটা টেনে বললেন,
~খাবারের সাথে অজ্ঞা*ন হওয়ার ঔষধ মিশিয়েছি।সে খাবার খেয়ে বেহুঁ*শ হয়ে গাড়িতে পড়ে আছে।

নাদমান বিচলিত কণ্ঠে বলল,
~খুব কি দরকার ছিল অচে*তন করার আন্টি?

মরিয়ম বেগম ভ্রু কুঁচকে বলল,
~আলবাত দরকার ছিল। নয় এই মেয়ের যা কণ্ঠস্বর চিৎকা*র, চেঁচা*মেচি করে কানটা আমার ঝালাপালা করে দিতো।

তামিম পাশ থেকে বলল,
`~পৃথিবীর আপনিই মনে হয় একমাত্র মা যে কিনা ছেলের বউকে কিড*ন্যাপ করেছেন!

মাহিন পাশ থেকে দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বলল,
~আমি নিশ্চিত আন্টি এবছর গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে আপনার নাম লেখা হবে।

রাফান উৎসাহ নিয়ে বলল,
~আমি কি তাহলে কিডন্যা*পারের তকমা পাবো।

মরিয়ম বেগম বললেন,
`~কিডন্যা*পারের তকমা পাবি কি না জানি না।তবে, নিমক হারা*মের তকমা পেতে পারিস এটা নিশ্চিত।

রাফান মাথা চুলকিয়ে হাসল।

তামিম বলল,
~তবুও তোর কপালে জে*ল নেই রাফাইন্না।

রাফান কট*মট দৃষ্টিতে তাকাল তামিমের দিকে।

মরিয়ম বেগম দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
~আমাদের যেতে হবে নাদমান। এতক্ষণে, আমাদের লাপাত্তা হওয়ার খবর নিশ্চিত সুয়ারেজের কানে পৌঁছে গিয়েছে।

নাদমান কণ্ঠে গাম্ভীর্য এনে বলল,
`~আপনার ননদের মেয়ের গলা*য় ছুরি ধরলেও কবুল বলবে না আন্টি।তাই ক*ষ্ট করে আপনার গলায় ছুরি ধরতে হবে এতে তাড়াতাড়ি আমার বিয়েটাও হবে।আপনারাও সুয়ারেজের তোপের মুখ থেকে বাঁচতে পারবেন।
______________

তামিমের মা,মরিয়ম বেগম আনজারাকে ধরাধরি করে গাড়ি থেকে বের করে। আনজারাকে তামিমের রুমে শোয়ানো হয়।

নাদমান তাদের পেছনে এসে রুমে প্রবেশ করে বলল,
~ আন্টি জ্ঞান ফিরাতে হবে আনজারার।

মরিয়ম বেগম নাদমানকে বলল,
~আমি আমার গলা*টাকে দান করতে যাচ্ছি বাবা।তোমরা থাকো।
________
তামিমের মা জগ থেকে হাতের আঁজলায় অল্প পানি নিয়ে আনজারার চোখে,মুখে ছিটিয়ে দিলো।পরপর কয়েকবার পানি ছিটিয়ে দেওয়ার পর আনজারা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়।ধীরে ধীরে সোজা হয়ে বসে আশেপাশে তাকিয়ে অচেনা রুমে অপরিচিত একজন মহিলাকে দেখে কপাল কুঁচকে অস্ফুট স্বরে বলল,
~আমি কোথায়?

নাদমান তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে। এতসময় সে সুযোগ তার হয়নি।গোলাপি বেনারসি,বউয়ের সাজে আনজারাকে একদম বউ বউ লাগছে।

নাদমান হাসল,
~আনজারা তো বউই তার বউ হবে আজ।

তামিমের মার মনে হলো কোন এক সাদা পরী বউ সেজে তার সামনে বসে আছে। চোখমুখে তার মুগ্ধতা।মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আনজারাকে
তামিমের মা বললেন,
~আমাদের বাসায় মা।

আনজারা বিরক্ত হয়ে বলল,
~আপনি কে?আর আমি এখানে কিভাবে এসেছি?মামি কোথায়?

~আমি বলছি আপনি এখানে কিভাবে এসেছেন।

পরিচত গম্ভীর কন্ঠ পেয়ে আনজারা নাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
~আপনি?

নাদমানের নির্লিপ্ত উত্তর,
~আপনাকেসহ আপনার মামি,রাফানকে কিড*ন্যাপ করা হয়েছে।

আনজারা চিৎকা*র দিয়ে বলল,
~কি!কি বলছেন এসব?কিড*ন্যাপ কেন করা হয়েছে আমাদের?

নাদমান হেসে বলল,
~আপনাকে বিয়ে করবো তাই।আমার বাচ্চার আম্মুর দরকার তাই।আমার বউ দরকার তাই।

আনজারা হতভ*ম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে নাদমানের দিকে। তামিমের মা রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছে। দুজকে একা ছেড়ে দেওয়া উচিত।
আনজারা মস্তি*ষ্ক কাজ করছে না।সে কি মানুষ চিনতে ভুল করল?সব পুরুষের ঐ কি নারী দে*হের প্রতি লো*ভ?নাদমান ও কি তাহলে এতোদিন ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে ছিলো?সে কি ভুল মানুষকে ভালো বাসলে?নানাধরণের প্রশ্ন ম*স্তিষ্কে ঘোরপাক খাচ্ছে আনজারার।
আনজারা নাদমানকে ভালোবাসলেও কয়েক সেকেন্ডে ভালোবাসা রুপ নিলো ঘৃণা*য়।

আনজারা তেজী কন্ঠে বলল,
~কখনোই তোকে বিয়ে করবো না ঠক*বাজ।তোর স্ত্রী থাকার পরেও তুই কেন আমাকে বিয়ে করবি?একজনকে ঠ*কিয়ে অন্যজনকে কেন বিয়ে করবি?

নাদমান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।
~একজন পুরুষের চারটি বিয়ে করা জায়েজ আছে।আমি তো কেবল দুইটা করছি।

আনজারা খাট থেকে উঠে নাদমানের পাঞ্জাবির কলার ধরে বলল,
~চরিত্র*হীন ঠক*বাজ তোকে আমি বিয়ে করবো না।কখনোই না ।

বিয়ে করতে আপনি বাধ্য আনজারা। নিজের মামির লা*শ চোখের সামনে দেখতে না চাইলে ভালো মেয়ের মতো আমার সাথে আসেন
আনজারা কান্নারত কণ্ঠে বলল,
~মামী কোথায়?

~এইতো মাহিন তার গলায় ছু*রি ধরে রেখেছে।

নাদমান মাহিনকে ডাকলে মাহিন মরিয়ম বেগমকে সাথে করে রুমে নিয়ে আসে।

মরিয়ম বেগম আঁকু*তি করে বলল,
~মা রাজি হয়ে যাও।
আনজারা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাদমানের দিকে।
অসহায় কণ্ঠে নাদমানকে সে বলল,
~মামিকে ছেড়ে দেন।
নাদমান হাসলো,
~ছেড়ে দিবো আপনি বিয়েতে রাজি হয়ে যান।

~কেন এমন করছেন? কেন অন্যের সংসারে আমি যাব?

নাদমানের স্বাভাবিক উত্তর,
~আমি চাই তাই।

মরিয়ম বেগম বারবার বলছেন মা রাজি হয়ে যাও।আমি বাঁচতে চাই মা।
আনজারা মামির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
কাজীকে নিয়ে তামিম, রাফান,তামিমের বাবা রমের ভিতরে আসলো।
কাজী নাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
~বলো বাবা কবুল।

নাদমান হাসিমুখে তিনবার বলে,
~কবুল

আনজারা চিৎকার করে বলে,
~বেহাই*য়া,কু*ত্তা,নির্ল*জ্জ পুরুষ হাসতে হাসতে কবুল বলতে তোর লজ্জা করল না।

সবাই অবাক চোখে আনজারার দিকে তাকিয়ে আছে।
কাজী আহাম্মক বনে গিয়েছে।
নাদমান হেসে বললো,
~আপনিও নির্লজ্জের মতো তিনবার কবুল বলেন নয়তো আপনার মামির লা*শ দেখবেন।

কাজী আনজারার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~বলো মা কবুল।

আনজারা বাজখাঁই গলায় বলল,
~তোদের সবকয়টার নামে আমি থানায় কমপ্লিন করবো।

কাজী নাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
~ তোমার বউকে চোখে চোখে রেখো বাবা কোনদিন না তোমাকে বালিশ চাপা দিয়ে মে*রে ফেলে।

উপস্থিত সকলেই ঠোঁট টিপে হাসল।

নাদমান গম্ভীর কন্ঠে বলল,
~হুমকি না দিয়ে কবুল বলুন।

নাদমান কাজীকে আদেশ দিলো।
~বিয়ে পড়ানো শুরু করুন চাচা।
কাজী বললো,
~বলো মা কবুল।

আনজারা বাজখাঁই কণ্ঠে বলল,
~আমি বলব না।

নাদমান গম্ভীর কন্ঠে মাহিনকে বলল,
~মাহিন গলায় ছু*রি ঢুকিয়ে দে।
আনজারা অস্ফুট স্বরে বলল,
~ কবুল
নাদমান বলল,
~চাচা আবারও বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।

চলবে,—-

(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন। রিচেক করা হয়নি ভুল হলে কমেন্টে লিখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here