#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#রাজনীতি+রোমান্টিক
#পর্ব:৫
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)
—-টিউশনি শেষ করে কোলাহলপূর্ণ শহরের ব্যস্ততম রাস্তা দিয়ে হাঁটছে মীরা।আশেপাশে গাড়ির হর্ণের তীব্র আওয়াজ শ্রবণগ্রন্থীতে পৌছাতেই মীরা বাববার কপাল জড়ো করছে।আশেপাশে তাকিয়ে বারবার কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটির উপস্থিত আছে কিনা পরোখ করে নিচ্ছে। টিউশনি শেষ করে এই রাস্তা দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য যাওয়ার সময়, প্রতিদিন মাহাদ তাকে বাইক নিয়ে ফলো করে। অতি সাবধানতার সাথে ফলো করলেও মীরা তাকে অনেক বার দেখেছে।যা, মাহাদের অজানা।আশেপাশে বারবার তাকিয়ে যখন মাহাদকে সে দেখতে পেলনা।তার হাঁটার গতি ধীর হল।সম্পূর্ণ পিছনে ঘুরে এদিকে-সেদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল মাহাদ আছে কিনা।পরোক্ষণে,মাহাদকে দেখতে না পেয়ে নিজের মনকে সান্ত্বনা দিল।হয়তো,কোন কাজে আটকে থাকার কারণে আজ আসতে পারে নাই।তার, আনমোনা হয়ে ভাবনার মাঝেই মাহাদ বাইক থামাল মীরার সামনে । মাহাদের হঠাৎ আগমনে মীরা ভ*য় পেয়ে পিছিয়ে গেল।হেলমেট পরিহিত অবস্থায় থাকলেও মীরা তাকে চিনতে ভুল করল না।এত পরিচিত একজন মানুষ যত রুপেই আসোক না কেন, তাকে চিনতে কি ভুল করা যায়?এতটা দূর্বল মস্তিষ্ক মীরার না।
মাহাদ হেলমেট খুলে মীরার দিকে তাকিয়ে বলল,
~ছোট ছোট চোখগুলোকে আলিফ- লায়লার ডা*কাত সর্দারের দূরবীন বানিয়ে কাকে দেখছিস?
মীরা থতমত খেয়ে মাহাদের দিকে তাকাল,সুঠাম দেহের,উজ্জ্বল ফর্সা ছেলেটি তার বড় বড় চোখ গুলো দিয়ে মীরার দিকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মীরা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
~রাস্তাঘাটে আজকাল বিশ্বসুন্দরের অভাব নেই। উঁকিঝুঁকি দিয়ে তাদের ঐ দেখছি।
মীরার কথা শোনে মাহাদ মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
~কতবড় লু*চ্চা মেয়ে! ভার্সিটিতে দেখে মন ভরেনা।
তাই,একটু বেশি সময় দেখার জন্য এতদূর ছোটে আসি আর,এই মেয়ে রাস্তার পরপুরুষকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখছে।
মাহাদ রো*ষ্ট কণ্ঠে মীরাকে বলল,
~দেখাদেখি শেষ হলে বাইকে উঠে বস।
মীরার মধ্যে একটা অস্ব*স্তি ভর করল,
একটা সময় মাহাদের বাইকে বসতে মীরার কোন জড়তা কাজ করতনা। কিন্তু, মাহাদ প্রপোজ করার পর থেকে বন্ধুত্ব সম্পর্কটাতে কেমন একটা জড়তা কাজ করে তার।
মাহাদ বির*ক্ত হয়ে মীরাকে বলল,
~এভাবে পিলারের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে বাইকে উঠে বস।
মীরা জড়*তা নিয়েই বিনা শব্দে বাইকে উঠে বসল।
বাইক চলল তার গন্তব্যে।মীরা ডুব দিল ভার্সিটির সেই প্রথম দিনগুলোতে। ভার্সিটিতে এডমিশন নেওয়ার কয়েকদিন পর-ই মাহাদ,আয়মান, আনজারা আর অহনার সাথে তার পরিচয় হয়েছিল।একই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট হওয়ায় একটা সময় পরিচয় রুপ নেয় বন্ধুত্বে।পরিবার এর পর বন্ধুমহল তার নিকট আরেকটি পরিবার। কিন্তু, থার্ড ইয়ারে উঠার পর মীরার প্রতি মাহাদের অতিরিক্ত কেয়ার মীরার মনে সন্দেহের উদ্বেগ ঘটায়।একদিন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই মীরাকে প্রপোজ করে বসে মাহাদ।যার, ফলস্বরূপ মাহাদের দুই গালে থা*প্পড় দেয় মীরা।এক বুক হতাশা নিয়ে আজও মাহাদ, মীরাকে ভালোবাসে।কিন্তু, মীরা তার দূর্বলতা অতি সযত্নে নিজের মনে লুকিয়ে রেখেছে যা মাহাদের অজানা।
কিছুদূর যাওয়ার পর মীরার ধ্যান হল। মাহাদ বাইক নিয়ে তাদের বাড়ির রাস্তার দিকে না গিয়ে অন্য রাস্তায় মোড় নিচ্ছে।
মীরা মনের শঙ্কি*ত অবস্থা নিয়ে মাহাদকে জিজ্ঞেস করল,
~কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
মাহাদ বিরক্ত হয়ে বলল,
~লাস্ট ওয়ান মান্থ যাবৎ আব্বু হাত খরচের টাকা দেয় না।তাই, ভাবলাম তোর চো*খ, কিড*নি, লি*ভার গুলো বিক্রি করে দিব।তোর মতো হৃদয়*হীনা এমনিতেও দুনিয়াবাসীর কোন কাজে আসবেনা।তাই, তোকে আমার কাজে-ই লাগাই।
মাহাদের মুখে এ-রকম ত্যাড়ামি উত্তর শোনে মীরা, মাহাদের পিঠে কয়েকটা ঘু**ষি দিল।বাইক এসে থামল একটা ফুচকার দোকানের সামনে। মীরা বাইক থেকে নামতেই দেখল ফুচকার দোকানের তিনটা চেয়ার দখল করে বসে আছে
আনজারা, আয়মান,অহনা। মাহাদ রাস্তার পাশে বাইক পার্কিং করে বাইকের চাবি হাতের আঙুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলল,
~দাঁড়িয়ে না থেকে ঐখানে গিয়ে বস।
দুজনে আসতেই আনজারা বলে উঠল,
~কোন রাজ্য পরিদর্শন করতে গিয়েছিলি?আসতে এত সময় লাগল?
মীরা কিছু বলবে তার পূর্বেই মাহাদ বলল,
~প্রশ্ন রাজ্য পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম।প্রশ্নবতী, প্রশ্ন করতে করতে আমার কান পঁচি*য়ে ফেলল।
অহনা পাশ থেকে বলে উঠল,
~প্রশ্নবতী কি মীরার নতুন নাম দিলি?
মীরা বসতে বসতে বলল,
~অহনা তুই ও শুরু করলি।
আয়মান পাশ থেকে সুর তুলল,
“আমার ভাঙ্গা তরী ছেঁড়া পাল
চলবে আর কতকাল?
ভাবি শুধু একা বসিয়া….দয়াল
এভাবে চলবে আর কতকাল? (পুরো গান ইউটিউব থেকে শোনে নিবেন)
পাশ থেকে সুর মিলাল আনজারা,অহনা বেচারা মাহাদও বাদ পড়ল না।আয়মান গানটা যে মীরা আর মাহাদকে কেন্দ্র করে গাচ্ছে সেটা সে ঠিকই বুঝতে পারছে।তবুও, হাসিহাসি মুখে তাদের সাথে ঠোঁট মিলাল মীরা।বাদ পড়লনা ফুচকাওয়ালা ও।
******
পুরো রুমে এদিক -সেদিক কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে নাইসা।আজ তার কলেজে নবীনবরণ অনুষ্ঠান। অথচ, কোন ড্রেস ঐ তার পছন্দ হচ্ছে না।রাজিয়া তালুকদার মেয়ের রুমের এই অবস্থা দেখে কতক্ষণ, মেয়েকে বকাঝ*কা করলেন।নিজের একটা পিংক কালারের শাড়ি নিয়ে নাইসাকে পড়িয়ে দিলেন।রোগা,পাতলা,শ্যামবর্ণের নাইসার দেহে পিংক কালারের শাড়িটা বেশ মানিয়েছে।আয়নায় নিজেকে দেখে নাইসা অনেক খুশি হল।চেহারার সাথে মানানসই হালকা মেকআপ করার কারণে নাইসাকে বেশ সুন্দর লাগছে। রাজিয়া তালুকদার মেয়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে ভাবলেন, নাদমান, নাবহান,নাইসা তিনজনের গায়ের রংটাই হয়েছে তার মতো। আর কিছু ভাবতেই তার মন ভারী হয়ে আসল চোখের জমা হল অ*শ্রুকণা। নাইসা সম্পূর্ণ নিজেকে প্রস্তুত করে যখন সিঁড়ির নিকট আসল।স্বর্ণভা দৌড়ে নাইসার নিকট এসে বায়না ধরল।তাকেও নিয়ে যেতে হবে।গুলুমুলু মুখুশ্রীর ছোট্ট বাচ্চাটির চোখে পানি জমা হল।
নাইসার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
~নুসুমণি আমিও যাব তোমার সাথে। আমাকে নিয়ে যাবে?
নাইসা, স্বর্ণভাকে কোলে নিয়ে তার নরম গালে চুমু দিল।
~হ্যাঁ মামনি আমি তোমাকে নিয়ে যাব।
বলেই,নাইসা, স্বর্ণভাকে জড়িয়ে ধরল। স্বর্ণভার বয়সী বাচ্চাদের যেখানে বায়নার শেষ নেই।সেখানে চারবছরের এই বাচ্চাটির বায়নার খাতা শূন্য। কত ক*ষ্ট করে নাদমান ওকে একা হাতে বড় করছে। নিজ চোখেই-তো দেখছে একটু সময় পেলেই দৌড়ে পার্টি অফিস থেকে চলে আসে মেয়ের সাথে সময় কাটানোর জন্য। আর, এই বাচ্চা মেয়েটি বায়না ধরেছে।সে কি করে না নিয়ে যাবে।নাইসা নিজ হাতে কটন কাপড়ের আরামদায়ক একটা ফ্রক পড়িয়ে দিল স্বর্ণভাকে।চুল আঁচড়িয়ে ঝুঁটি করে দিল স্বর্ণভার চুলে।সাথে নিয়ে চলল আদরের ছোট্ট বাচ্চাটিকে।রাজিয়া তালুকদার সবটাই অবলোকন করে।তৃপ্তকর একটা হাসি দিলেন।
***
কলেজটাকে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। নাইসা নিজের হাত দ্বারা যত্নের সাথে স্বর্ণভার আঙুল ধরে রেখেছে। নাইসার বান্ধবীরা-তো শত শত চুমু দিয়ে স্বর্ণভার গাল আঠালো করে ফেলেছে। কয়েকজন আদর করছে। আর কয়েকজন বির*ক্ত হচ্ছে। সকলের এটেনশন স্বর্ণভার প্রতি হওয়ায়। তাদের বি*রক্ত মনোভাব তারা মনে মনেই রেখে দিল প্রকাশ করা কার সাধ্যি।এমপি নাদমান সাইক তালুকদারসহ,পুরো তালুকদার বাড়ির কলি*জার টুকরা স্বর্ণভা।স্বর্ণভাকে কোলে নিয়ে একটা চেয়ারে বসল নাইসা।স্বর্ণভার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে বেচারির নাজে*হাল অবস্থা।স্বর্ণভাকে কোলে নিয়েই নাইসা অনুষ্ঠান দেখায় মনোযোগ দিল। স্বর্ণভা আশেপাশে সব কিছু চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে।হঠাৎ, এই তার পরিচিত এক মুখের দিকে চোখ পড়ল। নাইসার কোল থেকে নেমে তার নিকট গেল।
নাইসা ও স্বর্ণভার পিছনে পিছনে গেল।
~ আসসালামু আলাইকুম আন্টি । আজ তুমি বিনুনি করেছ?
ছোট বাচ্চার কন্ঠ পেয়ে সেদিকে তাকাল আনজারা।স্বর্ণভাকে দেখে অবাক হল। পাশে নাইসাকে দেখে বুঝতে পারল স্বর্ণভা,নাইসার সাথে এসেছে। আনজারা নিচু হয়ে স্বর্ণাভাকে কোলে তুলে নিল।
~আমার কিউট পরী দেখি,আমার হাওয়াই মিঠাই।
আনজারার মুখে এসব সম্বোধন শোনে স্বর্ণভা খিলখিল করে হেসে উঠল। সকালে এক প্রকার জোরজ*বরদস্তি করে আনজারাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে মাহমুদ সাহেব। বাবার অনুরোধে ভার্সিটি মিস দিয়েই বাবার কলেজের অনুষ্ঠান দেখতে এসেছে সে।
নাইসার দিকে তাকিয়ে বলল,
~কেমন আছো?
নাইসাও হেসে উত্তর দিল।
~আলহামদুল্লিহ আপু।আপনি কেমন আছেন?
আনজারা ও মুচকি হেসে উত্তর দিল।
~আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।
অনুষ্ঠানের পুরো সময়টা স্বর্ণভা,আনজারার কোলেই ছিল।
বিপ*ত্তি বাঁধল অনুষ্ঠান শেষ করে নাইসা যখন স্বর্ণভাকে নিয়ে বাসায় আসবে তখন।স্বর্ণভা আনজারার গ*লা আঁকড়ে ধরে আছে। সে কিছুতেই বাসায় যাবেনা।সে আনজারার সাথে থাকবে। নাইসা চকলেট, চিপস এগুলো কিনে দেওয়ার পরও স্বর্ণভাকে তার সাথে নেওয়ার জন্য রাজি করাতে পারলনা।আনজারাও অনেক বুঝাল কিন্তু স্বর্ণাভাকে রাজি করানো গেলনা।নাইসা যখন অতিরিক্ত জোরাজোরি করল তাকে কোলে নেওয়ার জন্য, স্বর্ণভা ঠোঁট উল্টিয়ে কা*ন্না করে দিল।এই, কান্না রুপ নিলো হেঁচকিতে।গুলুমুলু বাচ্চাটির এরকম অসহনীয় কান্না নাইসার জন্য পীড়া*দায়ক।
আনজারা নাইসাকে বলল,
~স্বর্ণভাকে নিয়ে যাচ্ছি। চিন্তা করার কোন কারণ নেই। তুমি পরে না হয় কাউকে পাঠিয়ে দিও,স্বর্ণভাকে নিয়ে আসার জন্যে।
নাইসা অস*হায় দৃষ্টিতে আনজারার দিকে তাকিয়ে বলল,
~ভাইয়া অনেক রা*গ করবে আপু।
~কিছু হবে না।আমি নিয়ে গেলাম হাওয়াই মিঠাইকে।
নাইসা উপায়হীন হয়ে বিনাবাক্যে স্বর্ণভাকে, আনজারার সাথে দিতে রাজি হল।
*******
পার্টি অফিস থেকে নাদমান আর তামিম ফিরেছে এগারোটা নাগাদ।দুইজনেই বেশ ক্লান্ত আজ। একনাগাড়ে, বেশ কয়েকঘন্টা দাঁড়িয়ে অসহায়, দুস্তদের মধ্যে কাপড় বণ্টন করার পর দুজনের-ই পা ব্যাথা*য় টনটন করছে।পার্টি অফিসে ফিরে আবার মিটিং ছিল নাদমান এর।একটুও শরীরটাকে আরাম দেওয়ার সময় হয়নি দুজনের।নাদমান স্ট্রং শরীরের, ক্লান্ত-তা তাকে গ্রাস করতে পারে না।কিন্তু, তামিম অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে,টেনে হিঁচড়ে দেহটাকে নিয়ে হাঁটছে তামিম। তামিমের বাবা,মা দুজনেই তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী গিয়েছেন।উনারা যতদিন না আসবে তামিম তালুকদার বাড়িতেই থাকবে। নয়ন তালুকদারসহ, তালুকদার বাড়ির প্রতিটি সদস্য তামিমকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। তাদের নিকট নাদমান, নাবহান, সাহিম যেমন তামিম ও তেমন। কলিংবেলে চাপ দিতেই জেসমিন দরজা খুলে দিল।
ড্রয়িংরুমে আসতেই নাদমান জেসমিনকে বলল,
~স্বর্ণভা কার রুমে ঘুমিয়েছে?আম্মু নাকি নাইসার রুমে?
জেসমিন ভ*য়ে ভ*য়ে নাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
~স্বর্ণভা বাসায় নেই।
নাদমান গম্ভীর কন্ঠে বলল,
~কি!কোথায় স্বর্ণভা?
নাইসা,নাবহান দুজনেই সোফা থেকে উঠে আসল
নাইসা মলিন মুখে ভাইকে বলল,
~আজ স্বর্ণভাকে নিয়ে কলেজ এর অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম।সেখানে গিয়ে আনজারা আপুর সাথে বেশ ভাব হয় ওর।পরে জোরাজোরি করেও আমার সাথে নিয়ে আসতে পারিনি।
নাদমান এর মধ্যে কোন ভাবাবেগ দেখা গেলনা।
স্বাভাবিক মুখশ্রীতে নাইসার দিকে তাকিয়ে বলল,
~তুই ঘুমিয়ে পড়। আমি স্বর্ণভাকে নিয়ে আসি।
আর তামিম তুই ফ্রেশ হয়ে, ডিনার করে নে।
তামিম ক্লান্ত মুখশ্রীতে নাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
ভাই আমি আসি আপনার সাথে, ড্রাইভার- তো বাসায় চলে গিয়েছে এতক্ষনে।
তামিমকে থামিয়ে দিয়ে নাবহান বলল,
~আমি যাচ্ছি। তুমি ডিনার করো।
নাদমান, নাবহান এর দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকাল।নাবহানের পরনে একটা থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট,আর টি-শার্ট। অফিস থেকে হয়তো এসে কেবলই গোসল করেছে।যার ফলে, চুল এখনো ভিজা নাবহানের।
নাবহান নিজের দিকে তাকিয়ে, নাদমানের দিকে তাকাল,
~এভাবে কি দেখছিস?শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছি নাকি?যে, জামাই সেজে যেতে হবে?যাচ্ছি-তো স্বর্ণভাকে আনতে।
নাদমান আর বাক্যব্যয় করলনা,নীরেট কণ্ঠে বলল,
~আয়।
গাড়ি এসে থামল আনজারাদের বাসার সামনে। গাড়িতে উঠার পূর্বেই নাদমান, মাহমুদ সাহেবকে বলেছিল তারা আসছে,স্বর্ণভাকে যেন রেডি করে রাখে।
নাবহান ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে নাদমানকে বলল,
~আমি একটু আশেপাশের দোকান থেকে সুখটান দিয়ে আসি।তাতে,মাহমুদ আংকেলকে কল দিয়ে বল মামনিকে নিয়ে আসতে।
নাদমান, নাবহানকে বলল,
~বেয়া*দব আমি তোর বড় ভাই। আমার সামনে বলছিস তুই সিগা*রেট খেতে যাচ্ছিস।
নাবহান বলল,
~আসছে বড় হতে।
নাদমান,নাবহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
~চোখের সামনে থেকে যা।
নাবহান,নাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
~চিরতা, একটা যাচ্ছি। তোর সাথে রসের আলাপ করার সখ নেই।
বলেই, হেলেদুলে চলে গেল।
পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল বের করে মাহমুদ সাহেবের নিকট কল দিল নাদমান। পাঁচমিনিট নিচে পায়চারি করার পর আনজারা, স্বর্ণভাকে কোলে করে নিয়ে আসল।আনজারার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে স্বর্ণভা।নাদমান ব্যস্ত হাতে কোলে নিয়ে নিজের কাঁধে মাথা রাখল স্বর্ণভার।
আনজারা নাদমানকে উৎকন্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করল,
~এমপি সাহেব আপনার ওয়াইফ এর নাম কি?আর সে কোথায় থাকে?
নাদমান কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
~সাইকোলজির স্টুডেন্ট হয়ে জার্নালিস্ট হওয়ার শখ জাগার কারণ কি আনজারা মাহমুদ? আমার সম্পর্কে জানার এত আগ্রহ কেন আপনার?
আনজার কাঠকাঠ কন্ঠে বলল,
~আপনার সম্পর্কে জানতে যাব কেন? আপনার ওয়াইফ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি?
নাদমান মুচকি হাসল,আনজারার দিকে তাকিয়ে বলল,
~সে আমার চিত্তমহলে আছে। চিত্ত অর্থ কি জানেন আনজারা ? “হৃদয়” সে আমার হৃদয় মহলে সর্বদাই বিচরণ করে,সে আমার চিত্তমহলের প্রেয়সী।আর,কোন একদিন কাবিন নামাতে তার নাম আপনাকে দেখাব।
আনজারা সন্দেহ নিয়ে নাদমানকে বলল,
~আমি সাইকোলজির স্টুডেন্ট আপনি জানেন কিভাবে?
~এটা জানা কি খুব কঠিন কিছু? আপনি একজন সাধারণ জনগণ। আপনার পরিবার আমার পরিচিত সেই সুবাদে জানি।নিজেকে এত স্পেশাল ভাবার কারণ নেই।
আনজারা বিরক্ত হয়ে বলল,
~আপনি একটা অসহ্য*কর মানুষ। জনগণ কোন গুণ দেখে আপনাকে ভোট দিয়েছে আমার জানার খুব আগ্রহ।
নাদমান বলল,
~এত এত মানুষের মাঝে গুণে গুণে আপনার আর আপনার ভাই সুয়ারেজ সিকদার এর নিকটই অস*হ্যকর হলাম।দুনিয়ায় কি মানুষের বড্ড অভাব পড়ল নাকি?
ওদের কথা কাটাকা*টির মাঝেই নাবহান আসল।আনজারা পায়ের শব্দ পেয়ে নাবহানের দিকে তাকাল। আনজারা নাবহানকে দেখে অবাক হলনা।সে আগেই শুনেছে এমপি নাদমান সাইক তালুকদার এর জমজ ভাই আছে।
তবুও, নাবহানের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
~এভাবে রাত বিরাতে দুজনকে একসাথে দেখলে মানুষ ভূ*ত ভেবে বেঁহু*শ হয়ে যাবে অসহ্য*কর।
বলেই আনজারা গটগট পায়ে স্থান ত্যাগ করল।
নাবহান অবাক, আনজারার এমন ব্যবহার তার বোধগম্য হলোনা।
নাদমানকে প্রশ্ন করল,
~এমন করল কেন?
নাদমান বলল,
~তেমন কিছু না আমার উপর রা*গ না ঝেড়ে তোর উপর ঝাড়ল।
চলবে–
(রিচেক করি নাই।ভুলত্রুটি কমেন্ট করে বলবেন।আজকের পর্ব কেমন হয়েছে মন্তব্য প্রকাশ করবেন)
(