#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#রাজনীতি+রোমান্টিক
#পর্ব:১০
(🚫দয়া করে করে কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ 🚫)
—রাজনীতিকে নিজের পেশা হিসেবে গ্রহণ করার পর নাদমানের যেমন অজস্র শুভাকাঙ্ক্ষী জন্ম নিয়েছে, তেমনি জন্ম নিয়েছে অজস্র শ*ত্রু ও।অধিকাংশ মানুষের ভালোবাসা আর দোয়ার পাশাপাশি অভি*শাপ ও পেয়েছে সে। একদল মানুষ উৎসাহ দিলে আরেকদল মানুষ তিরস্কার করেছে।রাজনীতির এই অঙ্গনে নাদমান এর জাত শ*ত্রু সুয়ারেজ সিকদার। মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অমায়িক হাসির,সুমিষ্ট কথার অধিকারী এই সুদর্শন পুরুষ কতটা হিংসা*ত্মক,আর জ*ঘন্য তা সাধারণ জনগণের অজানা। নাদমান সর্বদাই অস*হায় জনগণের পাশে নিজের সর্বস্ব দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। কোন মানুষ তার নিকট থেকে খালি হাতে ফিরে যায়নি। আর, সেখানে তার প্রতিপক্ষ সুয়ারেজ সিকদার রাজনীতির অপব্য*বহার করে চাঁদা*বাজিসহ বিভিন্ন অনৈ*তিক কর্মকান্ডে জড়িত। তার,দলের অধিকাংশ ছেলেপুলে ধর্ষ**ণসহ,বিভিন্ন জঘন্য**তম কেসের আ*সামি হয়েও তার নাম ব্যবহার করে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
নির্বাচনের সময় নাদমান সম্পূর্ণ সময় রাত,দিন খেটেখুটে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে। আর, সুয়ারেজ প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে মানুষের হাতে টাকা গুঁজে দিয়েছে তাকে ভোট দেওয়ার জন্য, যা ছিল এক এক প্রকার আইন বিরোধী জঘন্যত*ম কাজ।ঢাকা ১৯ আসনের এমপি হিসেবে জয়লাভ করার সর্বোচ্চ অবৈ*ধ পন্হা অবলম্বন করেছিল সুয়ারেজ। সুয়ারেজ এর জঘ*ন্য মন ধরেই নিয়েছিল জয় তার নিশ্চিত কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে সৎ পন্হায় বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে নাদমান সাইক তালুকদার। এমপি পদে জয়যুক্ত হওয়ার নয় মাসের মধ্যে সাভারের অনেক উন্নয়ন হয়েছে নাদমানের মাধ্যমে। এতদিন, সুয়ারেজ সিকদার রসিকতার মাধ্যমে নাদমানকে হুমকি দিয়েছে যা নাদমান স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে।আজ সুয়ারেজ এমন একজনকে নিয়ে নোং*রা হুম*কি দিয়েছে,যে কিনা নাদমানের আদরের একমাত্র বোন।নাদমান সর্বদাই ঠান্ডা মস্তিষ্কের, হাজার কটু*বাক্যেও তার মস্তিষ্কে রাগ স্পর্শ করতে পারে না। ঠান্ডা মস্তিষ্কে বিরাজমান ব্যাক্তিটির সম্মুখে তার বোনকে নিয়ে এহেন নোং*রা হুমকি দেওয়ায় তার মাথার দুইপাশের র*গ ফুলে উঠল।পুরো বদ*নে রাগ এসে হানা দিলো। নাদমান তার ড্রয়ারে রাখা লাইসেন্সকৃত রিভল*বার এর পাশে রাখা ছোট ধারালো ছু*রিটা দিয়ে দক্ষ হাতে সুয়ারেজ এর ঠোঁটে আ*ঘাত করল।নাদমান কাজটা এতো দ্রুত করল সুয়ারেজ নিজেকে রক্ষা করার সময়টুকু পেলনা।নাদমান রাগে ফুঁসছে।
~প্রকৃতির বিশুদ্ধ বাতাস তোর জন্য নি*ষিদ্ধ হয়ে যাবে সুয়ারেজ আমার পরিবারের দিকে চোখ তোলে তাকালে।
সুয়ারেজ সিকদার মুখ চেপে দাঁড়ানো থেকে বসে গেল। ঠোঁ*ট দিয়ে গলগলিয়ে তাজা র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে তার। বাহিরে সাংবাদিকদের ভিড় চিৎকার করলে তার মানসম্মান থাকবে না। এখনি, তাকে নিয়ে মিডিয়া জগৎ তোলপাড় হয়ে যাবে আর সে হবে সকলের সামনে হাসির পাত্র। তবুও সে,ব্যাথায়
কুঁ*কিয়ে উঠে। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নাদমানের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলল,
~আজ থেকে সুয়ারেজ সিকদার আর নাদমান সাইক তালুকদারের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ে পা দিলো।তোর পরিবারকে রক্ষা করিস আমার কু*দৃষ্টি থেকে।
নাদমান হাত বাড়িয়ে দিলো।
~কংগ্রাচুলেসন্স।
সুয়ারেজ পাঞ্জাবির পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ ঢেকে বাহিরে বের হয়ে গেলো।
*******
এক নতুন দিনের সূচনা হয়েছে। তালুকদার বাড়ির রান্নাঘর থেকে হাঁড়ি পাতিলের টংটাং শব্দ শোনা যাচ্ছে। সীমা তালুকদার, রাজিয়া তালুকদার ব্যস্ত হাতে সকালের নাস্তা তৈরি করছে।জেসমিন তৈরিকৃত নাস্তা এক এক করে টেবিলে রাখছে এখনি সকলে খেতে আসবে।নাইসা,সাহিম ডাইনিং এ বসে ঝিমাচ্ছে। নাবহান এর উপস্থিতে সাহিম তার দিকে তাকাল নাবহান এর পরনে টাওজার, টি-শার্ট। সাহিম চোখ কচলাতে কচলাতে নাবহানের দিকে ভালো করে দৃষ্টিপাত করল।
~বাহ!নাবহান ভাইয়া নতুন গেটআপে তোমাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে!
সাহিম এর কথায় নাইসা ও নাবহান এর দিকে তাকাল।
~সত্যি ভাইয়া এত দিনে তোমাকে মানুষ লাগছে।
নাবহান চেয়ার টেনে বসল।ভ্রু কুঁচকে তাকাল নাইসার দিকে।
~এতদিনে মানুষ লাগছে মানে? আমি কি এতদিন বনমানুষ ছিলাম?
নাইসা হাসল একহাত টেবিলে ভর দিয়ে তার উপর থুঁতনি রাখল।
~তাহলে তুমি মানছো তুমি এতদিন বনমানুষ ছিলে?
নাবহান অসহায় মুখে বিড়বিড় করে বলল,
একজন অর্ধেক শরীর দেখানো ব্যাটা মানুষ বলে আরেকজন বলে বনমানুষ ব্যর্থ জীবন আমার। নাবহান এর আজকাল ইচ্ছে হয় নিজের নাম নাবহান তালুকদার থেকে অপ*মান তালুকদার রাখতে।অফিসে তার বাবা তাকে কথায় কথায় কার্টুন দেখার জন্য অপ*মান করে,বাড়ির পাশের বেয়া*দব হাঁটুর বয়সী মেয়ে তাকে চিপা*চাপায় যা নয় তাই বলে অপ*মান করে, আজকে ছোট বোনটাও তাকে অপমান করল!
নাদমান এর আগমনে সকলেই থেমে গেল। একে একে ডাইনিং টেবিলে তালুকদার বাড়ির সকল সদস্য উপস্থিত হলো।আজ ডাইনিং এ তামিম ও উপস্থিত আছে। একসপ্তাহ জেলখানায় কাটানোর পর গতকাল রাতে নাদমান তাকে উকিল এর মাধ্যমে জেল থেকে বের করেছে। তামিম এর বহুদিনের ইচ্ছে পূরণ হলো জেলে যাওয়ার তার অনেক শখ ছিল।তার ভাষ্যমতে,একজন রাজনীতিবিদ জীবনে একবার জেলে না গেলে তার জীবনই বৃথা।জেলে যাওয়ার পর থেকে তার মনটা অনেক ফুরফুরা। তবে,তার একটা কথা ভেবে মনটা কেঁদে উঠে রাফান যদি তার সাথে জেলে যেতো তাহলে তার আনন্দের ষোলকলা পূর্ণ হতো।রাজিয়া তালুকদার আর সীমা তালুকদার তার বেশ যত্নআত্তি করে প্লেটে খাবার দিচ্ছে।
নয়ন তালুকদার তা দেখে বি*রক্ত হলো।তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলল,
~তা তামিম শ্বশুর বাড়িতে আদর যত্ন কেমন করল?
তামিম নয়ন তালুকদার এর প্রশ্নে বোকাবনে গেল।সেতো বিয়েই করেনি শ্বশুর বাড়ি আসল কোথা থেকে?
তামিম বোকাবোকা হাসি দিলো।
~আংকেল আমিতো বিয়েই করেনি শ্বশুর বাড়ি কোথা থেকে আসবে?
নাদমান, স্বর্ণভাকে খিচুড়ি লুকমা তোলে খাইয়ে দিচ্ছে। তামিম এর বোকা প্রশ্নে নাদমান তার দিকে মনোযোগ সহকারে তাকাল।
উপস্থিত সকলেই মিটমিট করে হাসছে।
নয়ন তালুকদার বিরস*কন্ঠে বলল,
~এই বুদ্ধি নিয়ে রাজনীতি করো তোমরা?তোমাদের রাজনীতিবিদদের নিকট জেলখানাই তো শ্বশুর বাড়ি।
তামিম এবার বুঝতে পারল নয়ন তালুকদার এর খোঁচা দেওয়ার কথার মানে।
তামিম দুঃ*খী দুঃ*খী চেহারা করে নয়ন তালুকদার কে বলল,
~আংকেল আর কি বলি মনের ক*ষ্ট সকাল উঠে একটা কাঠবিস্কুট আর এককাপ রং চা খাওয়ার পর সারাদিন আর খাওয়ার ইচ্ছে হয়নি।
সকলেই, তামিম এর দিকে কৌতূহল এর দৃষ্টিতে তাকাল।
স্বর্ণভা তামিম এর দিকে তাকাল,
~তামিম চাচ্চু কাঠবিস্কুট খাব।
নাদমান গম্ভীরমুখে বলল,
~তামিম তোকে এসব উল্টা পাল্টা নাম বলতে নিষেধ করেছি।
~বাবাই আমি কাঠবিস্কুট খাব।
নাদমান, স্বর্ণভার মুখে শেষ খাবারের লোকমা তোলে দিয়ে তার কপালে চুমু দিলো।
~মামনি তুমি না গুডগার্ল আর গুড গার্লরা কখনো বায়না করে না।
স্বর্ণভা নাদমান এর কথায় মাথা নাড়াল।
~আমি আর বায়না করব না বাবাই।আমি তো গুড গার্ল।
বলেই, নাদমান এর কপালে চুমু দিলো।
নাদমান জেসমিনকে বলল স্বর্ণভাকে রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য। জেসমিন ও বিনাবাক্যে স্বর্ণভাকে নিয়ে গেল।
তামিম কাঁচুমাচু করছে যেখানে সেখানে ভুলভাল কথা বলা তার এক বদঅ*ভ্যাস।
কবির তালুকদার কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইল,
~তা,তামিম বাবা কাঠবিস্কুট এর নাম তো কখনও শুনলাম না।
তামিম লজ্জিত মুখে বলল,
~ইয়ে মানে আংকেল চিনি ছাড়া টোস্ট বিস্কুটকে আমি কাঠবিস্কুট বলি।
উপস্থিত সকলেই হাসল।রাজিয়া তালুকদার সকলকে থামিয়ে দিলেন,
~এত অনিয়ম কেন আজ? খাবার টেবিলে কথা বলা নিষেধকারী ব্যাক্তিরাও দেখি আজ কথার ঝুলি খুলে বসেছে।
বলেই, নয়ন তালুকদার এর দিকে তাকাল।কথাটা যে নয়ন তালুকদারকে ইঙ্গিত করে বলেছে সে ভালোই টের পেয়েছে।
খাবার শেষ করে সকলেই একেক করে টেবিল থেকে উঠে দাঁড়াল।
নাইসা,সাহিম নয়টার দিকে কলেজে যাবে।আর বাকি পুরষ সদস্যরা এখনি বের হবে অফিসের উদ্দেশ্যে।
নাইসা,সাহিমকে নাদমান থামিয়ে দিল।
~আজ থেকে নাইসা,আর সাহিম তোদের দুজনের সাথে গার্ড যাবে, কলেজে , কোচিং এ তাদের সাথে যাবি।কোন প্রশ্ন আমি শুনতে চাই না।
নাদমান এর আদেশে নাইসা,সাহিম দুজনেই দুজনের দিকে তাকাল। ভাইকে তারা মান্য করে তাই নাদমান এর আদেশ তারা সাধরে গ্রহণ করল।
নয়ন তালুকদার সহ উপস্থিত সকলেই অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে তাকাল নাদমান এর দিকে।
নাদমান সকলের উদ্দেশ্য বলল,
~আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে আশা করি কেউ প্রশ্ন করবেন না?
সীমা তালুকদার হেসে বলল,
~বাবা তোর সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা কখনো প্রশ্ন করেছি? তুই নিশ্চয়ই তোর ভাই, বোনের ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিস।
কবির তালুকদার ও স্ত্রীর কথায় সাঁই দিলেন।
নয়ন তালুকদার বিদ্রুপ করে বললেন,
~তাহলে তোমার রাজনীতির কুপ্র*ভাব আমার পরিবারের এর উপর পড়েই গেল?এককাজ করিস কবির, নাবহান তোরাও আজ থেকে বডিগার্ড নিয়ে বের হস এমপি নাদমান সাইক তালুকদার এর পরিবারের লোক তোরা চার পাঁচজন গার্ড নিয়ে চলাফেরা করা উচিত তোদের।
কবির তালুকদার, আর নাবহানের চোখাচোখি হলো।
নাদমান উঠে দাঁড়াল,
~ এমপি নাদমান সাইক তালুকদার এর বাবা হোন আপনি। আপনার ও উচিত গার্ড নিয়ে চলাফেরা করা। চিন্তা করবেন না দুইজন গার্ড এর ব্যবস্থা করে দিব।
নয়ন তালুকদার চুপসে গেলেল।উপস্থিত সকলেই মুখ টিপে হাসল।
******
প্রয়োজনীয় একটা কাজে ভার্সিটিতে এসেছিল আনজারা, কাজ শেষ করে ভার্সিটির গেইটে আসতেই আনজারার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল। মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল মাথা*নষ্ট এমপি নামটা জ্বলজ্বল করছে।কল রিসিভ করে কানে ধরতেই গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠে ভেসে আসল।
~রাস্তার এপাশে, আমার গাড়ির সামনে আসুন আনজারা।
বলেই নাদমান কল কেটে দিলো।আনজারা ঠোঁট উল্টিয়ে রাস্তার এপাশে আসার জন্য প্রস্তুতি নিলো।গাড়ির সামনে আসতেই ড্রাইভিং সিট থেকে নাদমান তার পাশের দরজা খুলে দিল।
~উঠে আসুন আনজারা।
আনজারার নাদমানের হঠাৎ গাড়ি নিয়ে আগমন বোধহম্য হলো না।
গাড়ির সিটে বসে আনজারা উৎকন্ঠা নিয়ে নাদমানকে প্রশ্ন করল,
~হঠাৎ গাড়ি নিয়ে আমার ভার্সিটির সামনে? কোন প্রয়োজন ছিল এমপি সাহেব?
নাদমান গাড়ির সিটে হেলান দিলো,
~প্রয়োজন তো নিশ্চয়ই আছে আনজারা তাইতো আসলাম। আপনার স্টুডেন্ট এর জন্য শপিং করব তাই ভাবলাম আজ আপনার পছন্দসই সব কিনি।
আনজারা চারপাশে তাকিয়ে দেখল নাদমানের বডিগার্ডরা আশেপাশে আছে কিনা কিন্তু, তাদের দেখলনা।
~আপনি এরকম বডিগার্ড ছাড়া চলাফেরা করছেন কেন এমপি সাহেব?
নাদমান ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাল আনজারার দিকে।
~আমার জন্য চিন্তা হয় নাকি আপনার আনজারা?
আনজারা নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করল, সত্যিইতো সে হঠাৎ এই মাথা*নষ্ট এমপির কথা চিন্তা কেন করছে?
আনজারা নিজেকে স্বাভাবিক করল,
~চিন্তা কেন করব?আপনি একজন গণ্যমান্য রাজনৈতিক নেতা আপনার শ*ত্রুর অভাব নেই গার্ড না নিয়ে বের হওয়া আপনার জন্য ঝুঁকি।
নাদমান হাসল। আনজারা এই প্রথম নাদমানের হাসি দেখল। কি অমায়িক তার সামনে বসা ব্যাক্তিটির হাসি। নাদমান গাড়ি স্টার্ট দিলো।আনজারা আজ শত চেষ্টা করেও ঝগ*ড়ার মুডে যেতে পারছে না। গাড়ি কতক্ষন চালানোর পর নাদমান শপিংমলের আশেপাশে একটা নিরিবিলি স্থানে গাড়ি পার্ক করল এতটা সময় দুজনেই নিশ্চুপ ছিল ।
নাদমান চোখ বন্ধ করে গাড়ির সিটে হেলান দিলো।
~আনজারা।
আনজারা তৎক্ষনাৎ নাদমান এর দিকে তাকাল। আজ নাদমানকে তার নিকট এলোমেলো লাগছে। একদম অন্য রকম কেমন যেন অগোছালো।
নাদমান চোখ খুলে আনজারার দিকে অসহায় নেত্রে তাকাল।
~আনজারা একজন বিবাহিত পুরুষের অন্য কোন নারীর প্রেমে পড়াটাকে আপনি কি চোখে দেখেন?
আনজারা কর্কশ কন্ঠে কোন বনিতা ছাড়া উত্তর দিলো,
~এটাকে নিঃসন্দেহে আমি অন্যা*য় বলবো নিজের স্ত্রী থাকার পরেও অন্য নারীর প্রেমে পড়া একটা জঘন্য*তম কাজ। স্ত্রী থাকার পরেও পর*কীয়ায় লিপ্ত পুরুষের সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। এসব পুরুষ লোককে ক্রস*ফায়ার করে মে*রে ফেলা উচিত।
নাদমানের চেহারায় হতা*শা ভর করল।
আনজারাকে পুনরায় নাদমান জিজ্ঞেস করল,
~আপনি কখনো কারও প্রেমে পড়েছেন আনজারা?কাউকে গভীরভাবে ভালোবেসে ছুঁয়ে দেওয়ার তীব্র সাধ জাগে আপনার? কাউকে ভালোবেসে প্রতিনিয়ত তাকে হারিয়ে ফেলার ভয় হয়?তাকে ভেবে অজস্র রাত জেগে থেকেছেন কখনো? তাকে ভেবে গোছানো আপনিটা এলোমেলো হয়েছেন কখনো? আপনি কি এমন একজনকে ভালোবেসেছেন যার আপনার প্রতি কোন অনুভূতিই নেই, ভালোবাসাতো দূরের কথা? তার দৃষ্টিতে কখনো ভালোবাসা খুঁজেছেন?
আনজারার নিঃশ্বাস ঘন হলো, মনের মধ্যে এক অ*স্থিরতা হানা দিলো।সেতো কাউকে নিয়ে কোনদিন ভাবেই নি।প্রেম নামক কঠিন অধ্যায়ে সে কখনো পা রাখার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি।হারাম অধ্যায়ে কেন সে পা দিবে? কারও জন্যে মনে ভালোবাসা,সূক্ষ্ম অনুভূতিও জাগ্রত হলে সোজা
সে তার আব্বুকে জানিয়ে সেই পুরুষকে বিয়ে করে ফেলবে।
আনজারা নাদমান এর এতগুলো প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত এক উত্তর দিলো,
~কারও জন্যে মনে সূক্ষ্ম অনুভূতি জাগ্রত হলেও তার নামে কবুল বলে তার বউ হয়ে যাব।
~আপনার অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার পূর্বে আপনাকে ভালোবেসে কাঙাল হওয়া মানুষটার যেন সর্ব*নাশ না হয়ে যায় আনজারা।
আনজারার অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে নাদমান এর দিকে তাকাল। নাদমান গাড়ি স্টার্ট দিলো মনোযোগ তার ড্রাইভিং এ। আনজারার মনে কিছু প্রশ্নের কারণ ঘুরপাক খাচ্ছে।
******
পরীক্ষা শেষ আয়েশা বেগম বেশ কয়েকদিন যাবৎ স্বর্ণভাকে তাদের বাড়িতে আনার জন্য আনজারার আশেপাশে ঘ্যানঘ্যান করছে। এতদিন স্বর্নভাকে দেখতে না পেয়ে আনজারার ও স্বর্ণভার জন্য খা*রাপ লাগছিল।তাই, আজ রাজিয়া তালুকদার এর অনুমতি নিয়ে স্বর্ণভাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছে।আয়মান, মাহাদ,মীরা,অহনারাও বেশ কয়েদিন যাবৎ বায়না করছিল নাদমান সাইক তালুকদার এর আদুরে কন্যাকে দেখার জন্য। তারা,সকলে আনজারার রুমে আড্ডা দিচ্ছে তাদের একমাত্র আকর্ষণ স্বর্ণভা।
আয়মান স্বর্ণভার গাল ধরে টান দিলো।স্বর্ণভা বির*ক্ত হলো।
আয়মান আফসোস এর স্বরে বলল,
~এমপি নাদমান সাইক তালুকদার এর এত কিউট, গুলুমুলু একটা রাজকন্যা আছে জানতামই না।
অহনা বিদ্রুপের হাসি হাসল।
~সাভারের মেয়রের নাম কি সেটা আধও তুই জানিস?সারাদিন বইয়ে মুখ গুঁজে রাখলে জানবি কি করে? এইযে,এখানে আড্ডা দিচ্ছিস মন তো শুধু তোর বই বই করছে।তুই আবার এমপি নাদমান সাইক তালুকদার এর মেয়ে আছে কিনা সেটা, না জানার কারণে আফসোস করিস।
আয়মান অহনার চুল ধরে টান দিলো।
~একদম নজর দিবিনা পরীক্ষায় রেজাল্ট আমার খা*রাপ আসবে।
স্বর্ণভা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আয়মান আর মীরার দিকে । তারা কি বলছে তা সে বুঝতে পারছে না, তবে ওরা যে ঝগ*ড়া করছে তা সে বুঝতে পারছে।
~তোমরা কি সাহিম চাচ্চু আর নুসুমণির মতো ঝ*গড়া করছো?
আয়মান, অহনা কথা থামিয়ে স্বর্ণভার দিকে তাকাল।
মীরা আয়মান আর অহনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
~তোরা যেখানে সেখানে ঝামে*লা করিস বাচ্চাদের সামনে চুপচাপ থাকতে হয় জানিস না?
আনজারা স্বর্ণভাকে কোলে নিল।
~না হাওয়াই মিঠাই ওরা এভাবেই, কথা বলে ওরা পঁ*চা।
আনজারা, স্বর্ণভার কপালে চুমু দিলো।
তোমার ক্ষিধে পেয়েছে?
স্বর্ণভা মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বলল।
মাহাদ পুরোটা সময় নিশ্চুপ থাকলেও এখন আনজারাকে বলল,
~এই কি*প্টুস কখন এসেছি এক কাপ চা ও দিলিনা, এক কাপ গরম গরম চা দে।
আনজারা মাহাদ এর মাথায় হালকা চাপড় দিয়ে বলল,
~পেটুক আসার পর থেকে কত কি খেলি তার পরেও অপ*বাদ দিচ্ছিস।
~হ্যাঁ দিচ্ছি চা দে তাড়াতাড়ি।
আয়মান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখলো।
~দোস্ত আমার একটা কাজ আছে যেতে হবে।
অহনা বলল,
~আমিও যাব ড্রপ করে দিস।
ওরা বিদায় নিয়ে চলে গেল। আনজারা,, মাহাদ আর মীরার নিকট স্বর্ণভাকে দিয়ে ওর জন্য নুডলস রান্না করতে গেল।
স্বর্ণভাকে মীরা উরুতে বসিয়ে পুরো মুখশ্রীতে চুমু দিলো।মাহাদ অসহায় নেত্রে তাকিয়ে আছে এভাবে ওর সামনে কাউকে চুমু দিলে ওর লো*ভ লাগে না?
মাহাদ, মীরার কানে ফিসফিস করে বলল,
~তোর বাচ্চা ভালো লাগে?
মীরা স্বর্ণভার গালে চুমু দিল।
~হ্যাঁ, এতো কিউট বাচ্চা কার না ভালো লাগে?
মাহাদ,মীরার কানের নিকট এগিয়ে গেল।মাহাদ এর তপ্ত নিঃশ্বাস মীরার গালে আঁচড়ে পড়ছে। স্বর্ণভা খাট থেকে নেমে গেল, ছোট ছোট কদম ফেলে দরজা দিয়ে রুম থেকে বের হল।
মীরার সেদিকে খবর নেই, আবেশে চোখ বন্ধ করল সে।ভালোবাসার মানুষ এতটা নিকটে আসায় সে লজ্জা পেল।
মাহাদ ফিসফিস করে বলল,
~চল বিয়ে করে ফেলি আমার আর তোর এরকম কিউট একটা বাবু আসবে।প্রসেসিং কিন্তু বিয়ের রাত থেকেই শুরু করবো।
মীরা মাহাদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো
~অস*ভ্য,ঠোঁটকা*টা পুরুষ।বন্ধু নামের ক*লংক তুই। আজ থেকে তোকে আমার আশেপাশে যেন না দেখি।
মাহাদ হাসল,
~বন্ধু নামের ক*লংক হলেও স্বামী নামের ক*লংক হবো না দেখে নিস তুই। তোর কিউট বাচ্চার বাবা হব আমি।
******
ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য গেইট পেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে আনজারা একটা ছেলেকে দেখল,এতদিন তাড়াহুড়োর জন্য ছেলেটাকে ধরতে পারেনি। বেশ কয়েকমাস এই ছেলেটা তার আশেপাশে ঘুরঘর করছে এমনকি তালুকদার বাড়ির অনুষ্ঠানেও এই ছেলেকে দেখেছে তার আশেপাশে। এতদিন পাত্তা দেয় নি।আনজারা হাঁটতে লাগল কৌশলে আজ সে ছেলেটাকে ধরবে। আনজারা হাঁটে ছেলেটাও হাঁটে।আনজারা দাঁড়ায় ছেলেটাও দাঁড়ায়। আনজারা হুট করে পিছনে ঘুরে এসে ছেলেটার কলার টেনে ধরে দুই গালে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দুইটা থা*প্পড় দিলো,
~সমস্যা কি তোর ছেলে বেশ কয়েকমাস যাবৎ আমার সামনে দিয়ে চড়ুই পাখির মতো ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে উড়াউড়ি করছিস?
ছেলেটা অনুনয় করে বলল,
~আপা আমারে ছাইড়া দেন।
আনজারা ধম*ক দিলো।
~আগে বল ফলো করছিস কেন? উদ্দেশ্য কি তোর?
~আপা আমি কইতে পারুম না।
আনজারা আরেকটা থা*প্পড় দিলো।
আশেপাশের লোক তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
~তুই বলবি তোর বাপ এসেও বলবে নয় আজ গণপিটুনি খাবি।
~আপা আমারে ছাইড়া দেন আমার ছোট ছোট গার্লফ্রেন্ড গুলো আমার শোকে মা*রা যাবে।
চলবে—–
(গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক তাই দয়া করে বাস্তবতার সাথে কেউ মিলাবেন না।আজকের পর্ব কেমন হয়েছে কমেন্টে লিখবেন)