#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#রাজনীতি+রোমান্টিক
#পর্ব:৭
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)
—–ধরণীর বুকে সূর্য তার নিয়ম অনুযায়ী পূর্ব আকাশে উঁকি দিয়েছে।নাবহানও প্রতিদিনের মতো তার চিরচেনা রুপে সকাল সকাল ছাদে এসেছে, ব্যায়াম করার জন্য। অফিসে যাওয়ার পূর্বে প্রতিদিন সকালে পোষা কবুতর গুলোকে খাবার দেওয়ার পর, সে হালকা ব্যায়াম করে। আজও সেই, নিয়মের পরিবর্তন হয়নি।কবুতরের খাঁচা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে কবুতরগুলো ডানা ঝাপটে খাঁচা থেকে বের হল।নাবহান বয়াম থেকে গম নিয়ে সেগুলো ছড়িয়ে দিল ছাদের মেঝে-তে । কবুতরগুলো বাকবাকুম শব্দ করে ডাকছে আর ঠোঁট দিয়ে ঠু*করে ঠু*করে খাবার খাচ্ছে। নাবহান সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে ছাদের একপাশের ছোট্ট রুমটাই প্রবেশ করল। সেখানে নাদমান, নাবহান দুই’ভাইয়ের জীম করার বেশ কয়েকটি সরঞ্জাম রাখা আছে। নাবহান সেখান থেকে ডাম্বেল উঠিয়ে বাহিরে আসল।ডাম্বেল ছাদের মেঝেতে রেখে, একটানে পরনের টি-শার্ট-টা খুলে ছাদের রেলিং এ রাখল।দুই হাত দিয়ে উঠিয়ে নিল ডাম্বেল।
দুই হাত দিয়ে ডাম্বেল উপর নিচ করার ফলে বলিষ্ঠ দুই বাহুর পেশীগুলো ফুঁলে ফেঁপে উঠছে। দীর্ঘ সময় ব্যায়াম করার পর দেহে তার ক্লা*ন্তি ভর করল।ডাম্বেল নিচে রাখতেই তার চোখ পড়ল পাশের ছাদে।বেশ কয়েকদিন যাবৎ সে খেয়াল করছে, এ সময়টাই একটা মেয়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকে।রো*গাপাতলা, মিষ্টি চেহেরা-র এক কিশোরী যে, নাবহানকে দেখার জন্য বারান্দায়, ছাদে দাঁড়িয়ে থাকে।মেয়েটা এই এলাকায় যে নতুন সেটা নাবহান প্রথম দিনই বুঝতে পেরেছিল।নাবহান রেলিং থেকে টি-শার্টটা নিয়ে পড়ল।নাবহান মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেল।নাবহানদে’র বিল্ডিং থেকে মেয়েটির বিল্ডিং বেশি দুরে নয়।তাই,নাবহানদের ছাদ থেকে সহজেই ঐ ছাদে রেলিং টপ*কে যাওয়া যায়। নাবহানকে দেখে মেয়েটার চোখে মুখে ভয় ভ*র করল।
নাবহান মেয়েটাকে গ*ম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করল,
~এই, মেয়ে বয়স কত তোমার?
নাবহান এর মুখে এই প্রশ্ন শোনে, মেয়েটি ভ*য় পেল।মাথা নত করে ধীর কন্ঠে বলল,
~১৮।
নাবহান হেসে বলল,
~আমার বয়স কত জানো মেয়ে?
মেয়েটি নত মাথায় উত্তর দিল।
~৩০
নাবহান ভ্রু কুঁচকে পুনরায় বলল,
~ভালোই ইনফরমেশন যোগাড় করেছ মেয়ে।তোমার বাবার নাম্বারটা দাও। কল দিয়ে বলি,তার মেয়ে যে পড়াশোনা বাদ দিয়ে।ছাদে,বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমাকে ফলো করে।
কাঁপা*কাঁপা কন্ঠে মেয়েটি বলল,
~ আমি আপনাকে ভালোবাসি।
নাবহান মেয়েটির কথা শুনে গা দুলিয়ে হেসে উঠল।
~তোমার থেকে বারো বছরের বড় আমি মেয়ে। তুমি আমাকে প্রপোজ করছ?এইটুকু, বয়সে তোমার সা*হস দেখে আমি অবাক হচ্ছি মেয়ে!
মেয়েটি মাথা তুলে নাবহানে’র দিকে তাকিয়ে বলল,
~ত্রিশ বছর হলেই বা কি? আর বারো বছরের বড় হলেই বা কি?আমি আপনাকে ভালোবাসি।
নাবহান কপাল কুঁচকে বলল,
~নাম কি মেয়ে তোমার?
মেয়েটি ধীর কন্ঠে বলল,
~সাবিহা
নাবহান বলল,
~আবেগের স্রোতে গা ভাসিও না মেয়ে।সাঁতার কেঁটেও কূলের সন্ধান পাবে না।
~আমি সাঁতার জেনে-ই আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি নাবহান তালুকদার,কূল না হয় আপনাকে আঁকড়ে ধরেই সন্ধান করে নিব।
বলেই, সাবিহা স্থান ত্যাগ করল।মূহুর্তেই, নাবহানের দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেল সাবিহা।
নাবহান আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
~আমার বাবা বড় নি*ষ্ঠুর মেয়ে।তুমি কখনো-ই তোমার ভালোবাসা-য় সফল হবে না।তোমার উপন্যাসের সূচনা আমি হলেও সমাপ্তি আমি হতে পারব না।
*****
—-শুক্রবারে তালুকদার বাড়িতে এক রমরমা পরিবেশ গড়ে উঠে। সপ্তাহে ছয়টা দিন ব্যস্ততায় কাটে এ বাড়ির সকল পুরুষদের। শুক্রবার এ যত-ই ব্যস্ততা থাকুক না কেন সন্ধ্যায় তালুকদার বাড়ির সকল সদস্য উপস্থিত থাকবে-ই ।
কিচেনে রাজিয়া তালুকদার আর সীমা তালুকদার দুই জা মিলেমিশে সকলের জন্য সন্ধ্যার নাস্তা তৈরীতে ব্যস্ত।সোফায় আধশোয়া হয়ে টিভি দেখছে নাইসা। গভীর মনোযোগে সিরিয়াল দেখায় ব্যস্ত সে।রিমোট হাতে চ্যানেল চ্যাঞ্জ করবে তখন-ই তার হাত থেকে রিমোট ছুঁ মেরে নিয়ে যায় সাহিম।
নাইসা বির*ক্তমুখে সাহিমকে বলল,
~এভাবে রিমোট কে*ড়ে নিলি কেন?
সাহিম নাইসাকে পাত্তা দিল না। পায়ের উপর পা তোলে সোফায় বসল।
নাইসা এবার দ্বিগুণ ক্ষে*পে গেল।
~তোকে কিছু বলছি সাহিম? চুপ করে আছিস কেন?
সাহিম মুখের সামনে হাত নিয়ে হাই তোলে।
~আমি প্রতিদিন এই, সময় কোচিং এ থাকি। তুমি-তো প্রতিদিন এই সময় টিভি দেখ, সোআজ আমি বাসায় আছি। আজ আমি দেখব।
নাইসা আর কিছু বলল না।সত্যি-ই সাহিম তো বাসায় থাকে না।তাই, সে ত*র্কে লিপ্ত না হয়ে মলি*ন মুখে সোফায় বসে রইল।
সাহিম রাজ্য জয় করার মতো একটা হাসি দিল।নাইসা মুখ ভেং*চি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল।সাহিম এর আনন্দে পানি ঢেলে দিল নাবহান।
সাহিমে’র থেকে রিমোট নিয়ে বলল,
~চল,আজ দুজন একসাথে বসে জমিয়ে কার্টুন দেখব।
সাহিম এর কার্টুন দেখার বিন্দু ইচ্ছে না থাকলেও। নাইসার নিকট সে হাসির পাত্র হবে। এই,কথা চিন্তা করে, সেও কার্টুন দেখতে রাজি হল।কবির তালুকদার এক গাদা খেলনা নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল। আজ সকলে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত থাকায় জেসমিন দরজা খোলা রেখেছে।কবির তালুকদার ড্রয়িংরুমের সেন্টার টেবিলে সব খেলনা রেখে।জোরে জোরে হাঁক ছেড়ে জেসমিনকে ডাকল স্বর্ণভাকে নিয়ে আসার জন্যে।
কবির তালুকদার এর ডাকাডাকি-তে রান্নাঘর থেকে সীমা তালুকদার বের হয়ে এসে বলল,
~কি হয়েছে? এভাবে ডাকাডাকি করছেন কেন?বাড়িতে আগুন লাগছে?
কবির তালুকদার বিরস*মুখে বলল,
~আহ, সীমা মুখ দিয়ে ভালো কথা আসে না তোমার? এসব কি কথা?
সীমা তালুকদার আর কবির তালুকদার এর কথোপকথন এর মাঝেই রাজিয়া তালুকদার বলল,
~আজ আবার স্বর্ণভার জন্যে কি কিনলে?
কবির তালুকদার হাসিমুখে বলল,
~আর, বলো না ভাবি।একটু বাহিরে গিয়েছিলাম। পথিমধ্যে, এত সুন্দর সুন্দর পুতুল, গাড়ি দেখে ভাবলাম স্বর্ণভার জন্য নিয়ে আসি।
স্বর্ণভা জেসমিন এর হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে নামল।পিছন পিছন নয়ন তালুকদার ও ড্রয়িংরুমে এসে উপস্থিত হলো।নাবহান টিভি অফ করে টানটান হয়ে বসল।সাহিম,নাইসাও সোফায় সুন্দর করে বসল। নয়ন তালুকদার সামান্য অনিয়ম দেখলেও খ্যাঁ*কখ্যাঁ*ক করে বাড়ি মাথায় তুলবে।তাই,তিনজন-ই ভদ্রভাবে বসল।স্বর্ণভা দুই হাত বাড়িয়ে দিল কবির তালুকদার এর সামনে। তিনি অতি’যত্নে নাতনীকে কোলে তুলে নিল।স্বর্ণভাও কবির তালুকদার এর গলা আঁকড়ে ধরল। কবির তালুকদার সোফায় বসে একে একে সব খেলনাগুলো স্বর্ণভার হাতে দিল।খেলনা পেয়ে সে তা নিয়ে খেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
নয়ন তালুকদার সোফায় বসল।জেসমিন, সীমা তালুকদার, রাজিয়া তালুকদার রান্না করা সকল নাস্তা এনে রাখল টেবিলে।নাদমানের অনুপস্থিতি-তে নয়ন তালুকদার তে*লে বেগুনে জ্ব*লে উঠে রাগান্বিত স্বরে বলল,
~তা,তোমাদের বে*য়াড়া, বেয়া*দব ছেলে কোথায়?সবাই উপস্থিত। সে, উপস্থিত নেই কেন? না, দেশ সেবা করতে এতই ব্যস্ত যে,আজকে শুক্রবার এর সময়টাতেও আমাদের সাথে থাকতে পারলনা?
“নাবহান”,,,ইতিমধ্যে নাদমান এর মোবাইলে দশটা কল দিয়েছে।কিন্তু, মোবাইল সুইচ অফ। ড্রয়িংরুমের সকলে-ই একে উপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছে।
নয়ন তালুকদার তাচ্ছি*ল্যের স্বরে আবার ও বলল,
~ এই ত্যাড়া*মি করার কারণে-ই হয়তো তোমার ছেলের সংসার হলো না। মেয়ে পালি*য়েছে।মেয়েটাকে তো কখনো-ই দেখিনাই।বিয়েটা ও তো গোপনে করেছে।মেয়েটা কে চিনলে বলতাম মা তুমি বড় ভাগ্যবতী এমন ছেলের থেকে রেহাই পেয়েছো।আমার মেনে নিতে কষ্ট হয় নাদমান নামক ছেলেটার জন্মদাতা আমি।
~মেনে নেওয়ার মনমান*সিকতা আপনার মধ্যে থাকলে, আজ আমার আর আপনার সম্পর্ক এমন তিক্ত*ময় হতো না।
ড্রয়িংরুমের সকলে-ই দরজার সম্মুখে নাদমান এর দিকে তাকাল।
কবির তালুকদার ভাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
~ভাইজান থাকুক না বাচ্চাদের সামনে এগুলো না বলাই ভালো।
নয়ন তালুকদার চুপচাপ খাবারে মনোযোগ দিল। বাকিরাও একে একে হাতে আলুর চপ উঠিয়ে নিল। নাদমান ও ফ্রেশ হয়ে যোগ দিল সকলের সাথে। বাপ-ছেলের ত*র্কের কথা সকলে নিমিষেই ভুলে গেল।
****
——তালুকদার বাড়ির স্টাডি রুমে আনজারা অ*সহায় মুখশ্রীতে স্বর্ণভার দিকে তাকিয়ে আছে। টেবিলের উপর একটা খাতা আর বই।স্বর্ণভা পিটপিট করে আনজারার দিকে তাকাচ্ছে। আনজারা,,,,স্বর্ণভা’র খাতার প্রায় বেশ কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখল।সে, হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছেনা।খাতার প্রায়ই বেশ কয়েকটা পৃষ্ঠায় উদ্ভট সব ফলমূল আঁকা।স্বর্ণভাকে পড়াশোনা নিয়ে সে কোন প্রকার চাপ দেয় না।তবুও, মেয়েটা ভালোই লিখতে শিখেছে স্বরবর্ণের দুইটা বর্ণ অ,আা।স্বর্ণভাকে হোমওয়ার্ক দেওয়া হয়েছিল।নাদমান বা নাবহান যে, সময় পাই সে স্বর্ণভা’কে পড়ায়।কিন্তু, আজ খাতায় এসব উদ্ভট ধরনের ফলমূল দেখে স্বর্ণভাকে আনজারা প্রশ্ন করল। এই, উদ্ভট ড্রয়িং কে করেছে? স্বর্ণভা সাথে সাথে বলল।কাল নাকি নাদমান আর নাবহান এগুলো এঁকেছে।স্বর্ণভার স্বীকারোক্তির পর, আনজারা খুব মনোযোগ দিয়ে ফলগুলো দেখল।এগুলোর নিচে আবার অতি সুন্দর করে ফলের নাম লেখা ।যেটা-র নিচে আম লেখা সেটাকে দেখতে,
কাকরুল এর মতো লাগছে।আর, যেটা-র নিচে কাঁঠাল লেখা সেটাকে কলার মতো লাগছে।আনজারা ভাবছে একজন গণ্যমান্য ব্যাক্তিত্বের এমপি কিভাবে এসব কু*কর্ম করতে পারে?আনজারা মোবাইল বের করে নাদমান এর মোবাইলে কল দিল।আনজারা যখন একের পর এক কল দিচ্ছে। নাদমান তখন মিটিং এ ব্যস্ত।আশুলিয়ার এক ভাঙ্গা রাস্তা সংস্করণ নিয়ে দলের লোকদের সাথে জরুরি মিটিং করছিল সে।বারবার মোবাইল কেটে দেওয়ার পর যখন কল আসছে নাদমান মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল পরিচিত নাম্বার।
নাদমান কল রিসিভ করে রাগ*মিশ্রিত কন্ঠে আনজারাকে বলল,
~কল কেটে দেওয়ার পরও কল দিচ্ছেন।এটা কোন ধরনের অস*ভ্যতা?
আনজারাও বা কম কিসে ফুঁ*সে উঠে বলল,
~ভালোই-তো সকলের সামনে হুতোম পেঁচার মতো ভাব ধরে থাকেন।আর,লোক*চক্ষুর আড়ালে এসব কু*কর্ম করে বেড়ান।
নাদমান ভ্রু কুঁচকে বলল,
~এগুলো কি ধরনের ভাষা?আমি আবার কি কু*কর্ম করলাম?
আনজারা তেজী কন্ঠে বলল,
~একদম মেয়েদের মতো ডং করবেন না।
নাদমান বলল,
~কি করেছি সেটা বলে, কল কাটুন। আমার মিটিং আছে।
আনজারা বলল,
~স্বর্ণভাকে হোমওয়ার্ক না করিয়ে কি সব উ*দ্ভট আঁকাআঁকি করেছেন?
নাদমান এর মুখ হাস্যজ্জ্বল হল। তবুও ,গম্ভীর মুখে বলল,
~এত ছোট বাচ্চাকে আপনি দুই দুইটা অক্ষর লিখতে দিয়েছেন।অথচ, এই বয়সে আপনি বিড়াল হাফপ্যান্ট পড়ে আন্টির কোলে চড়ে ফিডার খেতেন।
আনজারা দ্বিগুণ রেগে গিয়ে বলল,
~আপনি নির্ঘাত দুই নাম্বারি করে এমপি হয়েছেন।মাথা ন*ষ্ট পুরুষ। এসব আগে মনে ছিল না?যখন মেয়েকে পড়ানো-র জন্য আব্বুকে রিকুয়েষ্ট করেছিলেন।
বলেই, কল কেটে দিল।মোবাইল ছুঁড়ে টেবিলের উপর রাখল সে।স্বর্ণভা পিটপিট করে আনজারাকে আবারও দেখছে।
আনজারা স্বর্ণভাকে কোলে নিয়ে বলল,
~একদম আমার দিকে কিউট ভাবে তাকাবে না।
আনজারা’র কথা শোনে স্বর্ণভা খিলখিল করে হাসল।
নাদমান এর দিকে তামিম-সহ দলের সকলেই তাকিয়ে আছে। মিটিং শেষ করে নাদমান চেয়ারে বসল।
আনমনে বলল,
~আপনার দূরত্বে নিঃ*শ্বাস ব*ন্ধ হয়ে আসে আমার আনজারা।সারাদিন ব্যস্ততা-র পর যখন স্টাডি রুমে প্রবেশ করি।আমি প্রাণভরে নিঃশ্বা*স নিতে পারি।আমি পুরো রুমময় আপনার ঘ্রাণ পাই।বিভিন্ন অজুহাতে বাসায় গিয়ে আপনাকে আর আমার কলিজার টুক*রো-কে যখন একসাথে দেখি।আমার চোখ শীতল হয়ে আসে।আমি সত্যিই আনজারা মাথান*ষ্ট পুরুষ।
******
—-ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে বন্ধুমহল।চার হাত পা ছড়িয়ে আয়মান শুয়ে আছে ঘাসের উপর ।তার, একপাশে অহনা,মীরা অন্যপাশে,মাহাদ,আনজারা।মাহাদ বি*রক্ত স্বরে আয়মান-কে বলল,
~এমন বন জঙ্গ*লে চিৎ পটাং হয়েছিস কেন?
আয়মান ন্যাকা স্বরে বলল,
~দোস্ত আর মাত্র এক্সাম এর দশদিন বাকি।আমি কিছু পারি না রে দোস্ত।নির্ঘাত ফে*ল করব।
আনজারা পাশ থেকে বলল,
~অভিনয়ের মিথ্যা কত বলবি? প্রত্যেকবার না পড়েই ভার্সিটি টপার হোস তুই? আমাদের বল*দ পেয়েছিস?
আয়মান অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল সবার দিকে।
হাসি হাসি মুখে আনজারাকে বলল,
বলদ হবি কেন তুই? তুই না মেয়ে? গাভী হবি তুই।
“আনজারা”,,,, আয়মান এর হাতে একটা থাপ্প*ড় দিল।
আয়মান আহ করে শব্দ করল।
অহনা বিরস*কন্ঠে বলল,
~এই, আয়মাইন্নার নাটক না দেখে মাহাদ ঝালমুড়ি নিয়ে আয় তো।
মাহাদ বলল,
~টাকা নাই, পকেট ফাঁকা।
মীরা বারবার আড়চোখে মাহাদ এর দিকে তাকিয়ে দেখছে।
আনজারা পকেট থেকে একশো টাকা বের করে মাহাদকে দিল।
মাহাদ টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে মীরাকে বলল,
~বসে না থেকে আমার সাথে আয়।এতগুলো ঝালমুড়ির ঠোঙা দুই হাতে আনতে পারবো না।
মীরাও আর কথা না বাড়িয়ে মাহাদ এর সাথে চলল ।ঝালমুড়ি কিনে ফেরার পথে,মীরা অল্প অল্প করে ঝালমুড়ি মুখে দিচ্ছে।
বাকি, ঝালমুড়ি-র ঠোঙা পলিথিনে। যা, মাহাদ এর এক হাতে ঝুলছে। হঠাৎ মীরা কাঁচামরিচে কাম*ড় দিল।
ঝালে মীরার মুখ রক্তিম হল।সে মুখ গোল করে নিঃশ্বাস নিতে লাগল।মীরার এ-রকম রক্তিম চেহারা দেখে মাহাদ এর হৃৎস্প*ন্দন উঠা নামা করছে। হঠাৎ-ই মীরাকে টান দিয়ে গাছের আড়ালে নিয়ে গেল।মীরাকে এতদিন এত কাছে পেয়েও মাহাদ যা করে নি।আজ হঠাৎ-ই তা করে ফেলল।মীরার অধরে নিজের উষ্ণ অধর স্পর্শ করল। ঘটনা এত দ্রুত ঘটল মীরা মস্তি*স্ক ও হ্যাঁং হয়ে গেল।মীরা স্ত*ব্ধ। বিশ্বাসের এত বড় অমর্যাদা করল মাহাদ।দু-ফোঁটা অ*শ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল।
অস্ফু*টস্বরে মীরা বলল,
~তোকে কখনো-ই ক্ষমা করব না মাহাদ।এত বড় বিশ্বাস**ঘাতকতা।
মাহাদ ভাবলেশ*হীন ভাবে বলল,
~লিপবাম এর ফ্লেভারটা ভালো ছিল।
মীরা রক্তি*ম চোখে মাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ঘৃণা*য় তার শরীর কাঁপছে। মাহাদ ফিসফিস করে বলল,
~কিস*টা দীর্ঘ হলেও পারত। তাহলে,তোর লিপ এর টেস্ট উপভোগ করতে পারতাম।
পরপর মাহাদ এর গালে মীরা দুইটা থাপ্প*ড় দিল।পুরো ভার্সিটি ক্যাম্পাস এর স্টুডেন্টদের মনোযোগ তাদের দিকে।
*****
——মাহমুদ সাহেব ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। গ*রম গর*ম ধোঁ*য়া উঠা চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে, আর আয়েশা বেগম এর সাথে নানা ধরনের কথাবার্তা বলছেন। কলেজ থেকে এসে বিকালে স্ত্রী,মেয়ের সাথে গল্পগুজব করা মাহমুদ সাহেব এর এক বিশেষ অভ্যাস। আসরের নামাজ পড়ে আনজারাও এসে বসল তাদের পাশের সোফায়।
আয়েশা বেগম আনজারাকে বলল,
~চা দিব তোকে?
আনজারা বলল,
~না,আম্মু তালুকদার বাড়িতে যাব।
মাহমুদ সাহেব মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলল,
~কষ্ট হচ্ছে পড়াতে মা?
আনজারা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
~না আব্বু।
আয়েশা বেগম হাসি দিয়ে বলল,
~বাচ্চাটা-কে নিয়ে আসিস একদিন।
~আচ্ছা আম্মু।
কলিংবেলের আওয়াজে সকলের মনোযোগ দরজার দিকে গেল।আনজারা বসা থেকে উঠতেই,আয়েশা বেগম তাকে থামিয়ে দিল।নিজেই, বসা থেকে উঠে দরজা খুলে দিল। দরজার সামনে অবস্থানরত মানুষগুলোকে দেখে আয়েশা পাথরের ন্যায় থমকে গেল। চোখের অ*শ্রু গুলো গাল বেয়ে মূহুর্তেই গড়িয়ে পড়ল।দশবছর পর সহোদর বড় ভাইকে নিজ বাড়ির চৌকাঠে দেখে সকল অভি*মান ভুলে জড়িয়ে ধরল ভাইকে।হাউ*মাউ করে বাচ্চাদের মতো কা*ন্না শুরু করল আয়েশা বেগম । আয়েশা বেগম এর কা*ন্নার আওয়াজ শুনে মাহমুদ সাহেব, আনজারা দরজার নিকট আসল।চোখের সামনে সাইফুদ্দীন সিকদার, সুয়ারেজ সিকদার আর তার মা মরিয়ম বেগমকে দেখে অবাক হল। এতগুলো বছর রাস্তা ঘাটে দেখা হলেও সাইফুদ্দীন সিকদার তাদের সাথে কথা বলত না।স্বামীর নিষেধাজ্ঞার কারণে, মরিয়ম বেগম ও তাদের এড়িয়ে চলত।সুয়ারেজ ছাড়া কারও সাথেই যোগাযোগ ছিল না তাদের।
সাইফুদ্দীন সিকদার বোন-কে জড়িয়ে ধরে কা*ন্না করছে আর বারবার বলছেন,
~বোন আমাকে ক্ষমা কর।
আমি ভুল করেছি বোন।আমাকে ক্ষমা করে দে।
চলবে—–
(নোটবার্তা:গল্প দুই দিন পর পর দেওয়া হবে। একদিন পর পর বা রেগুলার দেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না।
আজকের পর্ব সম্পর্কে আপনাদের মতামত প্রকাশ করবেন দয়া করে। ভুল ত্রুটি অবশ্যই কমেন্ট এ লিখবেন)