#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#রাজনীতি+রোমান্টিক
#পর্ব:১২
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ 🚫)
গত চারবছর এগারো মাস পূর্বে ক্ষণিকের জন্য নাদমান সাইক তালুকদার নামক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল আনজারার জীবনে।হুট করে একদিন আয়েশা বেগম হালকা আকাশী রংয়ের একটা শাড়ি আনজারার হাতে দিয়ে বলেছিল আজ তার বিয়ে।সে, যেন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে আসে । আনজারা মায়ের মুখে বিয়ে নামক শব্দটা শোনে স্ত’ব্ধ হয়ে গিয়েছিল । কয়েক মুহূর্তের জন্য, তার মনে হয়েছিল বৈবাহিক জীবনের সূচনা হলে তার স্বপ্নগুলো আর পূরণ হবে না।তার যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনেক ইচ্ছে। অনেক স্বপ্ন তার বাবা,মার পাশে দাঁড়ানোর।আনজারা সেদিন আয়েশা বেগমের পা জড়িয়ে ধরে কা’ন্না করে বলেছিল সে বিয়ে করবে না।কিন্তু, আয়েশা বেগম বলেছিল তার বাবা মাহমুদ সাহেব ছেলের মাকে কথা দিয়েছে,তাই তারা ওয়াদার বরখেলাফ করতে পারবেন না।যখন আনজারা, নাদমান এর মুখোমুখি হয়েছিল তখন প্রথম দেখাতেই আনজারা, নাদমানকে চিনতে পেরেছিল।আনজারার কলেজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এমপির সাথে নাদমানকেও দেখেছিল সে।
নাদমান যে একজন রাজনীতিবিদ আনজারা জানত।
সেদিন চরম অ’প’মা’ন করে নাদমানকে আনজারা ফিরিয়ে দিয়েছিল।সূচনা লগ্নেই সেদিন আনজারার জীবন থেকে নাদমান নামক অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েছিল।
আনজারা যখন নাদমান এর মুখোমুখি হয়েছিল তখন নাদমান সাভারের এমপি।
যখনই, দুজন মুখোমুখি হয়েছিল তখনই সূচনা হয়েছিল ঝ’গ’ড়া’র। অনুভূতিহীন আনজারার চিত্তে নাদমান নামক পুরুষটির কোন আনাগোনা ছিলনা।স্বল্প সময় দেখা হলেও ঝ’গ’ড়া ছাড়া দুজনের সুমধুর বাক্য বিনিময় হতো না।আনজারার মনে নাদমানের প্রতি কিঞ্চিৎ ভালোলাগা জাগ্রত হয়েছিল স্বর্ণভার জন্য শপিং করতে গিয়ে। সেদিন আনজারা নাদমানকে উপলব্ধি করেছিল মন থেকে। গম্ভীর, পরিপাটি পুরুষটি সেদিন মনখুলে কথা বলছিল তার সাথে। আনজারা মুগ্ধ নয়নে দেখেছিল নাদমান এর ঠোঁটের ফাঁকের অমায়িক হাসি।আনজারা মুগ্ধ হয়েছিল নাদমান এর উদারতায়। স্বর্ণভা, জেসমিনসহ তালুকদার বাড়ির প্রতিটি সদস্যের জন্য নাদমান শপিং করেছিল সেদিন।আনজারা মুগ্ধ নয়নে দেখেছিল নাদমানকে কোন এক মধ্য দুপুরে রোদে ঝ’ল’সে গিয়ে অসহায়, দুস্তদের সাহায্য করা অবস্থায়।কোন এক গোধূলিলগ্নে পথশিশুদের হাতে নাদমান তাদের পছন্দসই কাপড়-চোপড় কিনে দিয়েছিল। আনজারা সেদিন দূর থেকে দেখেছিল গ’ম্ভী’র পুরুষটি কতটা চ’ঞ্চ’ল,আর উদারমনা।
দিন দিন নাদমান নামক অ’স’হ্যকর পুরুষটি আনজারার চিত্তে জায়গা দখল করে নিয়েছিল।
অনুভূতিহীন আনজারার মনে নাদমান নামক পুরুষটি অনিমিন্ত্রিতভাবে অনুভূতির জো’য়া’র তুলেছিল। আনজারা নিজের অনুভূতি দমিয়ে রেখেছিল । পরীক্ষা শেষ করে আনজারা যখন তালুকদার বাড়িতে স্বর্ণভাকে পড়াতে গিয়ে গুণে,গুণে তিন সপ্তাহ নাদমানকে একপলক ও দেখতে পায়নি তখন নাদমান এর জন্য আনজারার খা’রা’প লাগত।একটা নজর নাদমানকে দেখার জন্য আনজারার মন চঞ্চলা হতো।ধীরে ধীরে আনজারা উপলব্ধি করেছিল সে নাদমানের প্রতি দূ’র্ব’ল। আনজারার জীবনে অনিমন্ত্রিতভাবে প্রেম এসে হানা দিলো।আনজারা নাদমান এর শূন্যতায় ছটফট করতে লাগলো। আনজারার মনে জাগ্রত হলো এক গ’ম্ভী’র পুরুষের জন্য ভালোবাসা
দিনশেষে ভালোবাসা বিবেক নামক সত্তার নিকট প’রা’জি’ত।অ’প’রাধ’বোধ আনজারাকে বারবার গ্রা’স করছে।সে কিভাবে অন্য এক নারীর স্বামীর প্রতি মুগ্ধ নয়নে তাকাতে পারল? সে কিভাবে এক নি’ষি’দ্ধ পুরুষের প্রতি দূ’র্ব’ল হতে পারল? সে কিভাবে এতো বড় হী**ন কাজ করতে পারল? এসব চিন্তায় বিভোর আনজারা।সে কিভাবে অন্য নারীর ভালোবাসার পু’রু’ষকে মনপ্রাণ এক করে ভালোবাসতে পারল?আনজারার নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃ’ণা হচ্ছে।
~কিরে আনজারা কখন থেকে তোর মামা ডাকছে আর, তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস?
আয়েশা বেগম এর ডাকে আনজারার ধ্যা’ন ভাঙল।
সাইফুদ্দীন সিকদার একপ্রকার জো’রা’জো’রি করে আনজারা আর আয়েশা বেগমকে সিকদার বাড়িতে রেখে দিয়েছেন।আনজারার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে ছিল না এখানে থাকার।সুয়ারেজ সিকদার এর নোং’রা দৃষ্টির কবলে তার পড়ার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে নেই। কিন্তু, আয়েশা বেগম তো আর ভাতিজার নোং’রা রুপ জানেন না।তাই সে ও সাইফুদ্দীন সিকদার এর কথায় সিকদার বাড়িতে থেকে গেলেন।মাহমুদ সাহেব বাড়িতে চলে গিয়েছেন।
আনজারা বারান্দার দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আয়েশা বেগম এর ডাকে নড়েচড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় সে।
আয়েশা বেগম বি’র’ক্ত’মুখে বললেন,
~এখনো ঘুমাসনি মা?
আনজারা হেলেদুলে আয়েশা বেগমের নিকট আসল ম’লি’ন মুখে বলল,
~আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে আম্মু?
~শরীর খা’রা’প করছে মা?
~না,আম্মু তেমন কিছু না।
আয়েশা বেগম মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,
~আয় মা হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
নরম তুলতুলে বালিশে মাথা রেখে খাটে শুয়ে পড়ল আনজারা।আয়েশা বেগম ও মেয়ের পাশে বসলেন। আয়েশা বেগম পরম স্নেহে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
আনজারার মন বারবার বলছে নাদমান নামক পুরুষ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে হবে।দূর থেকে না হয় একতরফা ভালোবেসে যাবে নি’ষি’দ্ধ পুরুষকে।তবুও, সে অন্যের একান্ত পুরুষের দিকে চোখ তোলে তাকাবে না।
______________
নাদমান, তামিম বেশ রাত করে পার্টি অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে।ইদানীং, রাজনৈতিক বিভিন্ন ঝা’মে’লা’র কারণে খুব ব্যস্ত সময় পার করছে সে।নাদমান ফ্রেশ হয়ে নাইসার রুমে গেল স্বর্ণভাকে আনার জন্য।নাইসার রুমের সামনে আসতেই নাইসার গুনগুনিয়ে পড়ার শব্দ নাদমান এর কানে পৌছাল।
নাদমান দরজায় ক’রা’ঘা’ত করল।
~ভেতরে আসব নাইসা?
নাইসা বই বন্ধ করে বলল,
~হ্যাঁ ভাইয়া আসো।
রুমের ভিতরে প্রবেশ করে স্বর্ণভার ঘুমন্ত মুখশ্রী দিকে তাকিয়ে নাদমান হাসল।মেয়েকে কোলে নিয়ে বের হওয়ার সময় নাদমান,
নাইসাকে গ’ম্ভী’র কন্ঠে বলল,
~অনেক রাত হয়েছে আর পড়তে হবে না।ঘুমানোর চেষ্টা কর।
নাইসা হাসল।
~ঠিক আছে ভাইয়া।
নাইসার রুম থেকে বের হওয়ার সময় নাদমান রাজিয়া তালুকদার এর মুখোমুখী হলো।
~স্বর্ণভা আজ থেকে আমার সাথে ঘুমাবে।
নাদমান জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকাল।
~কেন আম্মু?
রাজিয়া তালুকদার এর কা’ট’খো’ট্টা উত্তর।
~তুমি রাত-বিরেতে দেশসেবা করে বাসায় ফিরে এ ঘর ঐ ঘর মেয়েকে খোঁজে বের করে বাবার দায়িত্ব পালন করতে হবে না। ঘুমন্ত বাচ্চাটাকে শোয়া থেকে কোলে নিলে কান্না’কাটি করে।তাই,আমার সাথে ঘুমাবে। তোমার আর খোঁজে বের করতে হবে না।
নাদমান এর বুঝতে অসুবিধা হয়নি তার মা আজ ক্ষে’পে আছে। নাদমান নি’শ্চু’প হয়ে মার কথা শুনছে।রাজিয়া তালুকদার নাদমানের কোল থেকে স্বর্ণভাকে নিজের কোলে নিলো।
আবারও,রা’গা’ন্বি’ত স্বরে বললেন,
~ সামনের মাসে আমি তোমার জন্য মেয়ে দেখতে যাব।বয়স তো আর তোমার কম হলো না। এবার সংসারটা করো।ঐ মেয়ের জন্য আর কত অপেক্ষা করবে?এবার নিজের জীবন গুছিয়ে নেও।
নাদমানের মা কথা শেষ করে নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন। নাদমান ও ধীরপায়ে রুমে প্রবেশ করল।
নাদমান এর খাটের একপাশে স্বর্ণভার বই,খাতা ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় পড়ে আছে। বইখাতাগুলো গুছানোর সময় নাদমান খেয়াল করল খাতার একপাশে গোটা গোটা অক্ষরে নাদমান সাইক তালুকদার লেখা।নাদমান খাতাটা হাতে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করল। কেউ একজন আনমনে হয়তো তার নামটা খাতায় লিখেছে।হাতের লেখাটা তার সুপরিচিত।নাদমান এর মুখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। নাদমান হাসল।বিড়বিড় করে বলল,
~ কোন এক গোধূলিলগ্নে আপনার হাতে হাত রেখে পথ চলার তীব্র ইচ্ছেটা কি সন্নিকটে আমার চিত্তমহলের প্রেয়সী?
______________
পূর্ব আকাশে সূর্য উঁকি দেওয়ার পরপর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ম’ষু’ল’ধা’রে রুপ নিয়েছে। সকাল আটটায় প্রকৃতি তার তান্ডবলীলা বন্ধ করেছে।আনজারা ছাতা হাতে বাড়ির গেইট থেকে বের হয়েছে ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্য। বাতাসে তার ওড়না উড়ছ।রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিল সে। তখন,একটা গাড়ি এসে থামল তার সামনে। পরিচিত গাড়িটিকে দেখে আনজারা ভ্রু কুঁচকে তাকাল। এখানে, এসময় এই গাড়িটিকে দেখে সে অবাক হলো। ড্রাইভিং সিট থেকে তামিম বের হয়ে আসল।তামিম আনজারার সামনে এসে হাসি দিলো।আনজারা কৌতূহলী দৃষ্টিতে তামিমের দিকে তাকিয়ে আছে।
তামিম তার প্যান্টের পকেটে দুই হাত রেখে আনজারাকে বলল,
~গাড়িতে উঠো বনু।
আনজারা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
~কেন?
~ভাই এর আদেশ তাই।
অনেকগুলো দিন পর প্রিয় মানুষটাকে দেখার তীব্র ইচ্ছে আনজারার মনে হুড়হুড় করে বেড়ে গেল। পরক্ষণে, নিজেকে দমিয়ে নিলো সে। যে দুরুত্ব সে নিজে করেছে। যে লোকটা অন্য কারও তাকে দেখার ইচ্ছে করা যে পা’প।
নিজের মনে পা’থ’র’চা’পা দিয়ে সে তামিমকে বলল,
~ভাইয়া আমার ভার্সিটিতে যেতে হবে। আমি আজ এমপি সাহেবের সাথে দেখা করতে পারবনা।
তামিম হাসিমুখে বলল,
~তা বললেতো হবে না বনু যেতে হবে।
আনজারা বি’র’ক্তিতে ‘চ’ কারন্ত শব্দ করল।
তামিমের জো’রা’জো’রি’তে অগত্যা ইচ্ছের বি’রু’দ্ধে
আনজারা দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন না করে গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশের দরজা খুলল।
তামিম চিৎকার করে উঠে আনজারাকে থামিয়ে দিলো।
আনজারা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
~এভাবে ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছেন কেন তামিম ভাইয়া?
তামিম তাড়াহুড়ো করে ব্যাকসিটের দরজা খোলে দিয়ে বলল,
~বনু পিছনের সিটে বসো।
আনজারা বিরক্ত মুখশ্রী নিয়ে পিছনে বসল।
তামিম বিড়বিড় করে বলল,
~আমার সাথে বসলে ভাই আমাকে জা’না’জা ছাড়া দা’ফ’ন করবে।
___________
তামিমের গাড়ি এসে থামল পুরানো এক বিল্ডিং এর সামনে। পরিবেশটা গা ছমছমে।
আনজারা তামিমকে বলল,
~এখানে নিয়ে এসেছেন কেন তামিম ভাইয়া। এটা কি দেখা করার জায়গা হলো?এই মাথা’নষ্ট এমপি কি কোনদিন শুধরাবে না?
তামিম একটা দাঁত কেলানো হাসি দিলো।
~সামনের রাস্তার কাজ চলছে। সকাল থেকে ভাই রাস্তার কাজ দেখাশোনা করেছে।তাই এখানে দেখা করতে ডেকেছে।
তামিম, আনজারাকে একটা একতলা বিশিষ্ট পুরাতন বিল্ডিং এর ছাদে নিয়ে আসল।ছাদের মাঝখানে কয়েকটা ছেলের সাথে নাদমান চেয়ার দখল করে বসে আছে। নাদমান ছেলেগুলো সাথে কথা বলছে।ছেলেগুলো নাদমানের দলের। আনজারাকে দেখামাত্র ছেলেগুলো কথা থামিয়ে দিলো।এক এক করে স্থান ত্যাগ করল।নাদমান চেয়ারে বসার জন্য আনজারাকে ইশারা দিলো।আনজারার চোখ মেঝেতে নিবদ্ধ। সে মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করেছে। সে কোনভাবেই এই গ’ম্ভী’র, শ্যামপুরুষের দিকে তাকাবেনা।সে এক প্রকার চোখ মুখ খিঁচে বসে রইল।নাদমান, আনজারার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করল। আগের সে গুলুমুলু মুখশ্রী এখন অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছে। কাঁধ পর্যন্ত ছোট ছোট চুলগুলো এখন কোমড় ছাড়িয়েছে।মাথার ঘোমটা পড়ে যাওয়ায় লম্বা চুল নাদমান এর দৃষ্টিগোচর হলো।ফর্সা চেহারায় ঠোঁটের উপর কালো তিলটা আনজারার সৌন্দর্যের প্রতীক যেন।
নাদমান গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করল।
~গত একসপ্তাহ যাবৎ স্বর্ণভাকে পড়াতে যাচ্ছেন না কেন আনজারা? তামিম কল দিচ্ছে রিসিভ ও করছেন না।সমস্যা কি আপনার? ফাঁ’কি’বা’জি করেছেন কেন?
নাদমান নামক পুরুষটি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার জন্য আনজারা যে নিজেকে গুঁটিয়ে নিয়েছে।তা সে কোনভাবেই নাদমানকে বলতে পারবে না। আনজারা মনে মনে কথা গুছিয়ে নিলো।
নিজেকে স্বাভাবিক করে দৃঢ়কণ্ঠে বলল,
~ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনার অনেক চাপ।তাই এখন থেকে স্বর্ণভাকে আর পড়াতে পারবোনা। আপনি অন্য টিউটর খোঁজ করুন।
নাদমান তী’ক্ষ্ম চোখে আনজারার দিকে তাকিয়ে আছে।
~আপনি ঝ’গ’ড়ায় পারদর্শী।ঝ’গ’ড়া করার কোন প্রতিযোগিতা হলে আপনি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করতেন।তবে, মিথ্যা, আর অভিনয়ে আপনি একদমই পারদর্শী নন।আপনার উচিত সুয়ারেজের নিকট সকাল,সন্ধ্যা মি’থ্যা আর অভিনয়ের ক্লাস করা।আশা করি দুই-তিনদিনে এই গুণের জন্যও ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করতে পারবেন।
আনজারার আজ ঝ’গ’ড়া করার বিন্দু ইচ্ছে নেই।
দৃঢ়কণ্ঠে বলল,
~আমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে।
নাদমান এর অনুমতির আশা না করেই আনজারা দাঁড়াল।
নাদমানকে ম’লি’ন কন্ঠ বলল,
~এমপি সাহেব আপনার ওয়াইফকে আর দূরে সরিয়ে রাখবেন না। আপনার ওয়াইফকে তালুকদার বাড়িতে নিয়ে আসুন।
~হ্যাঁ আমিও সেটাই ভাবছি আনজারা বউটাকে এবার নিয়ে আসতে হবে।আমার বউকে নিয়ে আপনার যে পরিমাণ আ’হা’জা’রি খেয়াল করলাম। বউকে এবার কি’ড’ন্যা’প করে নিয়ে আসব।
________________
পড়ার টেবিলে বসে হাত থেকে একপ্রকার ছুঁড়ে মোবাইলটা বিছানায় ফেলল মীরা।সন্ধ্যায় থেকে এই রাত বারোটা পর্যন্ত দুইশ মিসডকল দিয়েছে মাহাদ।এখন, হু’ম’কি’স্বরপ মেসেজ দিয়েছে। দুইমিনিটের মধ্যে দেখা না করলে বাসায় এসে ঝা’মে’লা করবে।মীরা বই বন্ধ করে চেয়ার টেনে পড়ার টেবিল থেকে উঠল।ধীরপায়ে হেঁটে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।মীরার রুমের জানালা থেকে রাস্তার একাংশ দেখা যাচ্ছে। মীরার চোখ আশেপাশে তাকিয়ে মাহাদকে খোঁজছে।মাহাদ সেই সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত রাস্তায় একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় মাহাদের অবয়ব মীরার নিকট স্পষ্ট। মীরার চোখের অ’শ্রু’ক’ণা গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল।
এই, পুরুষটাকে আ’ঘা’ত করতে তার হৃ’দ’য় কাঁ’পে।
মীরা কাঁপাকণ্ঠে বলে,
~আমাকে যে তোর স’ভ্য সমাজ মেনে নিবে না মাহাদ।
মীরার মোবাইলের রিংটোন আবারও বেজে উঠল।
মীরা চোখের পানি হাত দিয়ে মুছল। মোবাইল বিছানা থেকে উঠিয়ে কল রিসিভ করে বলল,
~অপেক্ষা কর আসছি।
মীরা বিনা শব্দে নিজের রুম থেকে বের হলো।মীরার বাবা,মার ঘরের সামনে গিয়ে দরজায় হাত রেখে চেক করল ভিতর থেকে দরজা আটকানো কিনা।ভিতর থেকে দরজা আটকানো নিশ্চিত হওয়ার পর পা টিপে টিপে বাড়ির মেইন দরজা খুলে বাহিরে বের হলো।বাড়ির সীমানা ছাড়িয়ে রাস্তায় মোড় নিতেই মাহাদকে দেখতে পেল সে।মাহাদ ও মীরাকে দেখতে পেয়ে গাছের হেলান ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল।মীরা তাকিয়ে আছে মাহাদের দিকে। সুদর্শন মুখশ্রীর পুরুষটির চুলগুলো এলোমেলো এবড়োথেবড়ো হয়ে কপালে পড়ে আছে।
ল্যাম্পপোস্টের আলোতে ফর্সা মুখের ঘাম জ্বলজ্বল করছে। কালো চোখের মণিতে ঘুম ঘুম ভাব।
মীরা আশেপাশে তাকিয়ে দেখল মানুষের অস্তিত্ব আছে কিনা।পুরো রাস্তা নিস্তব্ধ।
মীরা, মাহাদকে বা’জ’খাঁই গলায় বলে,
~এখানে দাঁড়িয়ে মশার কা’ম’ড় খেতে ভালো লাগছে তোর অ’স’ভ্য? আমার বাসার সামনে কেন এসেছিস?কেন আমার জীবনটাকে এভাবে জা’হা’ন্না’মে পরিণত করছিস?
~মশার কা’ম’ড় খাচ্ছি তোর কা’ম’ড়তো খাচ্ছি না।
মীরা দুইকদম মাহাদের দিকে এগিয়ে আসল।
তর্জনী আঙুল উঁচিয়ে বলল,
~আমার কা’ম’ড় মশার মতো সূক্ষ্ম হবে না।
মাহাদ প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে দুই ভ্রু উঁচিয়ে ঠোঁটে কা’ম’ড়ে হাসে।
~বিয়ের পর আমার সর্বাঙ্গে তোর কা’ম’ড়ের দা’গ’ই থাকবে। বিয়ের আগেই মশার সাথে হিং’সা করে আমাকে কা’ম’ড়া’নো’র প্রতিযোগিতা করিস না ।
মীরা স্তব্ধ। একটা মানুষ সাধারণ একটা কথাকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কিভাবে বা’জে ভাবে নিতে পারে?
মাহাদ ঠোঁট টিপে হাসে।মীরার মুখে ফুঁ দিয়ে বলে,
~সন্ধ্যায় তোকে দেখার জন্য মনটা অস্থির হয়েছিল তাই তোর বাসার সামনে এসেছি পা’ষা’ন বেডি।আর,বিয়েতে রাজি না হলে এমনিতেই তোর জীবনকে জা’হা’ন্না’মে পরিণত করব।
_____________
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নারায়ণপুর গ্রামের ক’র্দ’মা’ক্ত রাস্তায় হঠাৎ ব্রেক করল নাদমানের গাড়ি।গাড়ি থেকে নাদমান সহ তামিম,শফিক বের হলো।তামিম গ্রামের সতেজ পরিবেশে চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিলো।
শফিক,, তার তর্জনী আঙুল উঁচিয়ে নাদমানকে ইশারা দিয়ে বলল,
~ভাই এখান থেকে কয়েক কদম হাঁটলেই সামনে মিজানের বাড়ি।
শফিকের কথায় নাদমান রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখল।
তামিম পাশ থেকে তে’জী কণ্ঠে বলল,
~ভাই দেখলেন শা’লা ঢাকা ছেড়ে এতগুলো বছর এখানে আ’ত্ন’গো’প’ন করে ছিল।আর সারা শহর শা’লাকে খুঁজেছি।
নাদমান শীতল কন্ঠে বলল,
~শফিক তাড়াতাড়ি চল। আবার ঢাকা ফিরতে হবে। আগামীকাল আমার ত্রাণ বিতরণ করতে হবে। আবার, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও আছে।
____________
ভা’ঙা:চো’রা এক টিনের ঘরে এক বৃদ্ধা মহিলার সামনে চৌকিতে বসে আছে নাদমান। শফিক, তামিম ঘরের বাহিরে।
নাদমান শীতল কন্ঠে মহিলাকে প্রশ্ন করল,
~মিজান আপনার কে হয়?
গ্রামের সহজ সরল মহিলা শহুরে ছেলের মুখে প্রশ্ন শুনে।সব সত্য উগলে দিতে শুরু করল।
~আমার স’ৎ পোলা।
নাদমান কিছু একটা ভেবে বলে,
মিজান কেন আ’ত্ন’হ’ত্যা করছে?
ভয়াতুর কণ্ঠে মহিলাটি বলে,
~পোলাডার হডাৎ জানি কি অইল? সারাডাদিন নে’শা করতো।নে’শা করতে করতে পা’গ’ল অইয়া গেল।রাইতের পর রাইত বাইত আইতো না।একদিন বেইন্নালা ঘর থেইক্কা বের অইয়া দেহি আমগো আম গাছডায় ফাঁসি দিছে।
নাদমান আশাহত হয়ে বলে,
~ওতো তিন-চারবছর পূর্বে ঢাকা ছিল।হঠাৎ এখানে আসল কেন?
মহিলা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
~মাইনষের আঁতের কথা কেমনে কমু।আমার লগে কোনদিন বালা কইরা কতা কইছে?
নাদমান আর কিছু বলল না।চি’ন্তি’তমুখে বলল,
~আপনার একা একা এখানে থাকার দরকার নেই। আমাদের সাথে ঢাকা চলুন। ভ’য় পাবেন না খালা। আমি আপনার ছেলের মতো।
~ভা’তা’র এর ভিটা ছাইড়া কোনহানো যামুনা আমি।
নাদমান হাসল,
~খালা আপনার যখন ইচ্ছে হবে আমার লোক না হয় এখানে নিয়ে আসবে।এখন,আর দ্বিমত না করে রেডি হন।আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি।
নাদমান ঘর থেকে বের হলো।শফিক, তামিম উৎকণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
~কিছু তথ্য জানতে পারলেন ভাই?
~না।
শফিক হ’তা’শ মুখে বলে,
~আমরা কি মরীচিকার পিছনে ছুটছি ভাই?
নাদমান নিশ্চুপ অযথা ব্যখ্যা দেওয়ার তার কোন ইচ্ছে নেই।
তামিম পাশ থেকে হাসিমুখে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলে,
~শফিক তুই হয়তো ভুলে গিয়েছিস। নাদমান সাইক তালুকদার কখনো মরীচিকার পিছনে ছুটে না।
চলবে —–
(#নোটবার্তা:১ গল্প দুইদিন পরপর দেওয়া হবে।
#নোটবার্তা:২ নাদমান এর অতীত জানার আগ্রহ আপনাদের সকলের আছে।একটু ধৈর্য্য দারণ করুন সব জানতে পারবেন।
আজকের পর্ব সম্পর্কে মতামত জানাবেন)