#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#রাজনীতি+রোমান্টিক
#পর্ব:৮
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ 🚫)
—–সাইফুদ্দীন সিকদার এ-র অতি আদরে’র বোন আয়েশা বেগম। ছোট বেলা থেকে’ই একমাত্র বোনের প্রতি তার টান ছিল অগাধ। আয়েশা বেগম এর ছোট, বড় সকল আবদার পূরণ করার জন্যে, সাইফুদ্দীন সিকদার সর্বদা-ই সচেষ্ট ছিলেন। মাহমুদ সাহেব এর সাথে আয়েশা বেগম এর বিয়ে পারিবারিক ভাবে-ই হয়েছিল। আয়েশা বেগম এর বিয়ে-র দুইবছর পর তার বাবা মা*রা গিয়েছিলেন।আর, তার বাবা মা*রা যাওয়ার কয়েক বছর পর তার মাও মা*রা গিয়েছিলেন।বাবা,মা মা*রা যাওয়া’র পর আয়েশা বেগম-কে তাদের অভাববোধ করতে দেননি সাইফুদ্দীন সিকদার। দ্বিগুণ আদরে বোনকে আগলে রেখেছেন। যত’ই,থাকুক বোন স্বামীর বাড়িতে।দায়িত্ব পালনে কখনো-ই অবহেলা করেননি তিনি। নিজের সংসার, বোনের দায়িত্ব, রাজনীতি সবকিছু সামলিয়েছেন তিনি।সুয়ারেজ এর মা মরিয়ম বেগম এর সাথে। আয়েশা বেগম এর সম্পর্ক ছিল একদম বোনে’র মতো।মাসের অর্ধেক সময় আয়েশা বেগম আনজারা-কে নিয়ে ভাইয়ে’র বাসাতে-ই থাকতেন।এতে,মাহমুদ সাহেব কোন দ্বিমত পোষণ করতেন না।আনজারা আর সুয়ারেজ এর সম্পর্ক ছিল একদম বন্ধুর মতো।বয়সের ব্যবধান কিন্তু, কম নয় আনজারা থেকে সুয়ারেজ সাত বছরের বড়। সুয়ারেজ অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ার কারণে,আনজারা ভাবুক দৃষ্টিতে সুয়ারেজ এর দিকে তাকিয়ে থেকে মুখ চেপে হাসত।তারমতে , সুয়ারেজকে দেখতে বৃটিশদের মতো ।আয়েশা বেগম আর সাইফুদ্দীন সিকদার এর পারিবারিক মেল’বন্ধন আশেপাশে’র লোকজনের নিকট অতি প্রশংসনীয় ছিল। আয়েশা বেগম ও স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে- শান্তিতে জীবন যাপন করছিলেন। কিন্তু, ভাগ্য তাদের সহায় ছিলেন না।মাহমুদ সাহেব হঠাৎ করে-ই নি*খোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন।মাহমুদ সাহেব তখন, সদ্য কলেজ এ প্রফেসর পদে জয়েন করেছিলেন। তিনি কখনো রাত করে বাসায় ফিরতেন না।কিন্তু, একদিন অনেক রাত হওয়ার পরও মাহমুদ সাহেব এর বাসায় আসার কোন খবর ছিল না।আয়েশা বেগম বারো বছর বয়সী মেয়ে আনজারা-কে নিয়ে। মাঝরাত পর্যন্ত মাহমুদ সাহেব এর জন্য অপেক্ষা করেছিলেন।উপায়ন্তর, না পেয়ে “আয়েশা বেগম”,,, সাইফুদ্দীন সিকদার কে কল করে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলেছিলেন।সেই, রাতে-ই বোনের বিপ*দে সুয়ারেজ-কে সাথে নিয়ে তিনি ছুটে এসেছিলেন। বোনে’র অতিরিক্ত কান্না**কাটি স*হ্য করতে না পারায়।সাথে করে বোন-কে নিয়ে গিয়েছিলেন সিকদার বাড়িতে।
এভাবে, দিন গেল মাস গেল মাহমুদ সাহেব এর কোন সন্ধান পাওয়া গেল না।পুলিশ ও মাহমুদ সাহেব এর কোন সন্ধান দিতে পারলেন না।আনজারা বাবা-র চিন্তা-য় নাওয়া খাওয়া ঠিক মতো করত না।উনিশ বছরে’র সুদর্শন ছেলেটি’র আনজারা’র এরকম বে*হাল অবস্থা স*হ্য করতে খুব ক*ষ্ট হতো।সুয়ারেজ নানা ভাবে আনজারাকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করত।আয়েশা বেগম-তো স্বামীর শোকে পাগল**প্রায়।সাইফুদ্দীন বোনের এই দুর্দ*শা দেখে আড়ালে চোখের অ*শ্রু বিসর্জন দিতেন।মাহমুদ সাহেব এর নি*খোঁজ এর পাঁচমাস পর। একদিন রাত বারো টা’র দিকে সাইফুদ্দীন সিকদার এর মোবাইলে থানা থেকে কল আসল।সেদিন রাতে-ই কোনক্রমে একটা পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে থানার উদ্দেশ্য রওনা দেন তিনি ।পুলিশ জানা’ই মাহমুদ সাহেব অতিরিক্ত মা*দক সেবন করতেন। যার কারণে, তার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে গেছে। এবং, দীর্ঘদিন পতি*তাপল্লী-তে তার যাতায়াত ছিল। সাইফুদ্দীন সিকদার বোন জামাই সম্পর্কে পুলিশের নিকট থেকে এসব কথা শুনে।সেখানে-ই অ*জ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। মাহমুদ সাহেব এর জেল হয়েছিল কয়েকমাস এর।আয়েশা বেগম এক মূহুর্তের জন্যেও মাহমুদ সাহেবকে অবিশ্বাস করেনি।কিন্তু, আশেপাশের লোক সাইফুদ্দীন সিকদার কে ক*টাক্ষ করতে ভুলেনি।সকলে-ই, বাড়ি বয়ে এসে সাইফুদ্দীন সিকদার’কে নানা ধরনের তুচ্ছ*তাচ্ছিল্য করে যেত বোন জামাই এর জন্য।সাইফুদ্দীন সিকদার হিতাহি*তজ্ঞানশূন্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।আয়েশা বেগম’কে সে অন্যত্র বিয়ে দিবে।আয়েশা বেগমকে দিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন করাবে। মাহমুদ সাহেব এর সংসার আয়েশা বেগমকে করতে দিবেন না।সাইফুদ্দীন সিকদার যখন আয়েশা বেগমকে তার এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন।বিনাবাক্যে আয়েশা বেগম এক কাপড়ে সিকদার বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের জমানো কিছু সঞ্চয় দিয়ে। উকিল এর মাধ্যমে মাহমুদ সাহেব-কে জেল থেকে বের করেছিলেন।সেই সাথে ভাই-বোনের মধ্যে জমা হয়েছিল বিশাল বড় এক মান -অভিমানের পাহাড়। আয়েশা বেগম এর ভাইয়ের প্রতি জমা হয়েছিল ঘৃ*ণা। সাইফুদ্দীন সিকদার ও অভিমান করলেন বোনের প্রতি। যে বোনকে এত আদর করে বড় করেছে।সেই,বোন সামান্য এক সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে তাকে যদি ভুল বুঝতে পারে। সে,কেন বোনের প্রতি অভিমান করবে না?দশ দশটি বছর ভাই -বোন পরস্পরের থেকে মুখ ঘুরিয়ে ছিলেন।সেই, সাথে অভি*মান করেছিল আনজারাও তার মামা কেন তার বাবাকে ভুল বুঝল?কেন তাদের বিপদের সময় পাশে ছিল না তার মামা?
~এই,আয়েশা তরকারি পু*ড়ে যাচ্ছে। কি এমন ভাবনা’য় বিভোর তুমি?
মরিয়ম বেগম এর ডাকে আয়েশা বেগম অতীত থেকে ফিরে আসলেন।
চোখের পানি শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে, মরিয়ম বেগম এর দিকে তাকিয়ে বলল,
~ভাবি, তেমন কিছু না। রান্না শেষ সবকিছু নিয়ে আসছি। ভাইজান আর সকলকে বলো ডাইনিং এ বসতে।
মরিয়ম বেগম হাসি মুখে বললেন,
~এতবছর পর আসলাম কয় বসে গল্পগুজব করবে।তা,না করে রান্না নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছ।
আয়েশা বেগম বলল,
~রাতের খাবার শেষ করে গল্প করব।
মাহমুদ সাহেব ও অতীতের সবকিছু ভুলে সাইফুদ্দীন সিকদার আর সুয়ারেজ সিকদার এর সাথে নানা কথাবার্তা বলতে ব্যস্ত।যার অধিকাংশ-ই রাজনীতি রিলেটেড কথাবার্তা। সাবেক এমপি বলে কথা।আনজারা’র আজ স্বর্ণভা’কে পড়াতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি।সেই, বিকাল থেকে রাত হল আয়েশা বেগম এর সাথে সে সকল কাজ করছে। সুয়ারেজ সিকদার এর মনোযোগ কি আর গল্প আছে?তার, এক জোড়া চোখ এক নারীর দিকে আটকে আছে।চোখে’মুখে তার হাসি জ্বলজ্বল করছে। সুর্শন পুরুষটি’র চোখের পলক যেন পড়ছে’ই না।আনজারার দিকে মোহগ্রস্ত চোখে তাকিয়ে আছে সুয়ারেজ। অস্ফুটস্বরে সুয়ারেজ বলল,
~আমার কিশোর মনের বালিকা বধূ তুই ছিলি আনজারা। প্রস্তুত, থাকিস সুয়ারেজ সিকদার এর বধূ হওয়ার জন্যে।রাজা,রাণী হাতের মুঠো’য় এখন। রাজকন্যা-কে পেতে আর কতক্ষণ।
বলেই, হাসল সুয়ারেজ। একসাথে, সকলে রাতের খাবার শেষ করল আনজারাদের বাড়িতে।
******
—–রুমের ছোট্ট জানালাটা-র গ্রিল দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে মীরা।চোখ তার দূর আকাশে নিবদ্ধ। রুমের সাথে লাগোয়া কোন বারান্দা না থাকা-য় মন খারাপ এর সময় এখানে-ই সময় কাটা-ই সে। চোখের অ*শ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে তার।দুইদিন যাবৎ ভার্সিটি-তেও সে যাচ্ছে না। ঐ দিন মাহাদ এর গালে পরপর দুইটা থা*প্পড় দেওয়া-র পরেও, মাহাদ অট্টহাসি-তে ফেঁটে পড়ে।দুই গালে হাত বুলিয়ে মীরা’কে উদ্দেশ্য করে বলেছিল,
~আজ আমার কি হয়েছে মীরা বল-তো?আজ তোর এই হাতের থাপ্প*ড়েও আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
মীরা ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়েছিল।ক্যাম্পাসে-র সকল স্টুডেন্ট’রা যেভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিল। যেন,ফ্রীতে তারা কোন মুভি লাইভে দেখছে।এক মূহুর্তও মীরা আর ভার্সটিতে দাঁড়ায়’নি।ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা’র কারণে, টিউশনি থেকেও কিছুদিনে-র বিরতি নিয়েছে মীরা।আনজারা,আয়মান, অহনা,মাহাদ এই দুইদিন অসংখ্য কল দিয়েছে। কিন্তু, মীরা কারও কল রিসিভ করে-নি।উপায়ন্তর, না পেয়ে আনজারা,অহনা,আয়মান এসে দুপুরে-র দিক মীরা-র সাথে দেখা করে গিয়েছে। মাহাদ আর তার মধ্যকার ঝা*মেলা নিয়ে কেউ কিছুই তাকে জিজ্ঞেস করেনি।মাহাদ অসংখ্য কল দিয়েছে। কিন্তু, মীরা রিসিভ করেনি।কলিংবেল এর আওয়াজে মীরা নড়েচড়ে দাঁড়াল।বাসায় মীরা আর তার মা ছাড়া কেউ নেই। মীরা-র বাবার একটা মুদির দোকান আছে। সেখান থেকে রাতে বাসায় ফিরে।মীরা দরজা খুলতে বাহিরে বের হওয়ার পূর্বে-ই।মীরা-র মা শেফালী বেগম দরজা খুলে দিলেন। মীরা একটু দরজার সামনে এগিয়ে গেল। দরজা’র অপর পাশের ব্যাক্তিটিকে দেখে মেজা*জ বিগড়ে গেল তার। শেফালী বেগম হাসিমুখে মাহাদকে ভিতরে আসতে বলল।মাহাদ ও হাসিমুখে সালাম দিয়ে ভিতরে আসল।
শেফালী বেগম হাসিমুখে মাহাদকে বলল,
~তা বাবা এতদিন পর আন্টির কথা মনে পড়ল?
মাহাদ মাথা চুলকিয়ে হাসল,
~আন্টি পড়াশোনা’র চাপে তেমন সময় পাইনা। তাই, আর আসা হয়না।আম্মু আপনাদের জন্য বিরিয়ানি পাঠিয়েছে তাই নিয়ে আসলাম।
মাহাদ তার হাতের টিফিন বক্স এগিয়ে দিল শেফালী বেগম এর দিকে।শেফালী বেগম হাসিমুখে বিরিয়ানির বক্স হাতে নিল।
মাহাদ বলল,
~আন্টি বিরিয়ানি এখনই খেতে হবে। নয়তো নষ্ট হয়ে যাবে।
শেফালী বেগম বলল,
~তুমি বস বাবা।মীরা-কে আমি বিরিয়ানি প্লেটে দিচ্ছি।
মীরা সব কিছুই দেখল।
মীরা স্থান ত্যাগ করবে।এমন সময় মাহাদ মীরাকে ডাক দিল।
~এই মীরা তোর থেকে কয়েকটা সাবজেক্ট এর নোট নিতে এসেছি।
মীরা কট*মট দৃষ্টিতে মাহাদ এর দিকে এগিয়ে আসল। তে*জী কন্ঠে বলল,
~এখানে কেন এসেছিস?
মাহাদ নেশা**লো কন্ঠে ফিসফিস করে বলল,
~চোখের তৃষ্ণা মেটানো’র জন্য। আর,মনের দহ*ন কমানো’র জন্য আমার তোকে, প্রয়োজন ছিল। তাই এখানে এসেছি।
মীরা বিদ্রুপ করে বলল,
~তোর মতো একটা অসভ্য ছেলেকে আমার বন্ধু ভাবতেও ল*জ্জা করে।
মাহাদ চোখ টিপ দিয়ে, দুই হাত দিয়ে চুল ব্র্যাকব্রাশ করে বলল,
~তিন কবুল বলে স্বামী হিসেবে গ্রহণ কর। লজ্জা করবে না।তখন, না হয় একটু বেশি অসভ্য হয়ে, আমি তোর লজ্জা ভেঙে দিব।
মীরা’র মুখ হা হয়ে গেল।তার বাড়িতে এসে তাকেই এসব কথা বলছে!ঠোঁট***কাটা পুরুষ।
~ছিঃ ছিঃ বের হয়ে যা আমাদের বাসা থেকে এখুনি।
~ইশশশ, নতুন টিফিনবক্স কিনে রেষ্টুরেন্টে থেকে, এতগুলো টাকা খরচ করে বিরিয়ানি কিনে এনেছি।খালি মুখে যাওয়ার জন্যে?
~মিথ্যা*বাদী অস*ভ্য বিরিয়ানি নাকি আন্টি পাঠিয়েছে? তুই, এখুনি আমাদের বাসা থেকে বের হবি।বলেই,মাহাদকে টেনে*হিঁচড়ে বের করে দিল মীরা।দরজা বন্ধ করে পিছনে ফিরতে-ই
শেফালী বেগম মীরা’কে বিরিয়ানি’র প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
~প্লেটটা ধর।মাহাদ কোথায়?
~চলে গিয়েছে।
মীরা’র মা হা-হুতাশ করে বলল,
~এতদিন পর ছেলেটা আসল।কিছু মুখ না দিয়ে’ই চলে গেল।
*******
—–দলবল নিয়ে চায়ের দোকানের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে তামিম। দশ-বারো জন আজ তার সাথে এসেছে। সকলে’ই, নাদমান এর দলের লোক। তাঁর’ই, পাশের বেঞ্চ দখল করে বসেছে সুয়ারেজ সিকদার এর দলের ছেলেপুলেরা।আর, তাদের সাথে বসে আছে রাফান। বিকালের এই সময়টাতে চায়ের দোকানটাতে সিগা*রেট আর চায়ের অর্ডার এর হিড়িক পড়ে যায়।রাফান একটা দুধ চায়ের অর্ডার দিল।এত উচ্চস্বরে অর্ডার দিয়েছে তামিম ও শুনতে পেল।এখন সেও এগিয়ে গিয়ে চায়ের অর্ডার দিল।রাফান বিরক্ত হল,
চায়ের দোকানিকে বলল,
~এইযে,চাচা এই ভট*কার কাপে যে ছাঁকনি দিয়ে চা ঢালবেন। আমার কাপে ঐ ছাঁকনি দিয়ে চা ঢালবেন না।
চায়ের দোকানদার পড়ল মু*শকিল এ। তার দোকানে একটাই ছাঁকনি।
দোকানদার তিরি*ক্ষি মেজাজ নিয়ে বলল,
~আরেকডা ছাকনি কি আমি আকাশ থেইক্কা পারমু?
রাফান বলল,
`~আমি পাশের দোকান থেকে এনে দিচ্ছি।
তামিম ফুঁ*সে উঠে বলল,
~চাচা এই পাটকাঠির কাপ থেকে আমার কাপ গুণে গুণে একহাত দূরে রাখবেন।
দোকানদার দুইজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
~তোমাগো কাছে চা ঐ বেঁচতাম না।যাও এহান থেইক্কা।
তামিম,,, রাফানকে বলল,
~দেখলি, আমাকে আর তোকে অপমান করল রাফাইন্না।
রাফান ও শার্ট এর হাতা ফোল্ড করে বলল,
~সেটাই-তো দেখলাম।
~চাচা আপনার সাহস হয় কি করে আমাদের দুজনকে অপমান করার?আপনি তামিম আহমেদ আর রাফান খন্দকারকে অপমান করেছেন!আমি এমপি নাদমান সাইক তালুকদার এর নিকট। আপনার এই অ*ত্যাচার এর কথা না*লিশ করবো।
দোকানদার আহাম্মক হয়ে তাকিয়ে রইল দুজনের দিকে।
এই না দুজন এখন ঝগ*ড়া করছিল!
*****
——আশুলিয়া’র রাস্তার অবস্থা খুবই শোচ*নীয়। রাস্তার অর্ধেকে’র ও কম কাজ শেষ হয়েছে।সেই, রাস্তা নাদমান পরিদর্শন করছে।আর,নির্মাণকারীদের সাথে রাস্তার বিষয়ে নানা ধরনের কথা বলছে।পাশে তামিম আর দুই জন বডিগার্ড। দুর্নীতি*হীন ভাবে সম্পূর্ণ কাজ যেন শেষ হয়। সেদিকে সর্বদাই সৎ নাদমান। দুপুরের তপ্ত রোদে শ্যামবর্ণ চেহারাটা ফ্যাকা*শে হয়ে গিয়েছে।
তামিম পাশ থেকে এসে বলল,
~ভাই স্বর্ণভা মামনি-কে নিয়ে আজ পার্কে যাওয়ার কথা ছিল।
নাদমান গম্ভীর কন্ঠে বলল,
~গাড়ি বের কর।আর,হ্যাঁ মিস আনজারাকে যাওয়ার সময় পিক করে নিস।
তামিম ভাবুক দৃষ্টিতে নাদমান এর দিকে তাকাল।
নাদমান তামিমকে বলল,
~মিস আনজারা যেহেতু আজ পড়াবে না।তাই, সে তার স্টুডেন্ট এর সাথে বেড়াতে যাবে।এভাবে, তাকানোর কিছু নেই।
তামিম ও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল।
বোকা তামিম কি আর কারও মনের খবর জানে?
*****
আনজারা স্বর্ণভাকে পড়ানোর জন্যই তালুকদার বাড়িতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছিল। তামিম তাকে পিক করে। একই,গাড়িতে পাশাপাশি সিটে বসলেও আনজারা আর নাদমান কথা বলে’নি।পুরো রাস্তা চুপচাপ ছিল দুজনে-ই । তালুকদার বাড়িতে গিয়ে তামিম যখন বলে আজ তারা স্বর্ণভাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।সেও যেন তাদের সাথে যায়।আনজারা প্রথমে দ্বিমত পোষণ করলেও।পরবর্তীতে, স্বর্ণভা কান্না*কাটি করলে আনজারা উপায়ন্তর না পেয়ে রাজি হয় যাওয়ার জন্য ।নাদমান প্রায়ই সময় পেলে মেয়েকে নিয়ে বাহিরে বের হয়।তামিম’সহ তারা শিশুপার্কে টিকেট কেটে প্রবেশ করল। বডিগার্ড সাথে আনেনি নাদমান। ভিতরে প্রবেশ করে তামিম গাছের নিচে জায়গা দখল করে বসলো।সে অনেক ক্লা*ন্ত।তার হাঁটার শক্তি নেই। নাদমান স্বর্ণাভকে কোলে নিতে চাইলে,সে কোলে উঠলনা।বরং নাদমান এর আঙুল আঁকড়ে ধরল। আনজারা তাদের থেকে কিছুটা পিছনে।” নাদমান”,,, স্বর্ণভা হাঁটা বন্ধ করার কারণে, আনজারা তাদের সমান সমান এসে দাঁড়াল। “স্বর্ণভা”,,, আনজারা’র হাতের আঙুল আঁকড়ে ধরল। মাঝে স্বর্ণভা দুই সাইডে আনজারা আর নাদমান। আনজারা আড়চোখে নাদমানকে পরোখ করলো।তার কেমন অস্বস্তি লাগছে এভাবে নাদমান এর পাশাপাশি হাঁটতে। তবুও, নিজের অস্ব*স্তি’কে পশ্রয় না দিয়ে নাদমান এর সাথে পায়ে পা মিলাল।নাদমান মনে মনে হাসল।আনজারা হাঁটার মাঝেই নাদমানকে ডাকল।
~এমপি সাহেব,একটা বিষয়ে কথা ছিল।
শীতল কণ্ঠে নাদমান বলল,
~বলুন।
আনজারা নিজের মনে মনে কথা গুছিয়ে নাদমানকে বলল,
~আপনার আর আপনার ওয়াইফ এর মাঝে কি নিয়ে দ্ব*ন্দ্ব জানতে চাই না।তবে,একটা কথা স্বর্ণভাকে তার মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত করবেন না।সব ঝা*মেলা মিটিয়ে তাকে তালুকদার বাড়িতে নিয়ে আসুন।
নাদমান আনজারা’র মতামতের প্রেক্ষিতে হ্যাঁ বা না কিছুই বলল না।
নাদমানে-র উত্তর না পেয়ে আনজারা বির*ক্ত হল।
তিরি*ক্ষি মেজাজ নিয়ে আনজারা বলল,
~আপনি আসলে একটা মাথা ন*ষ্ট পুরুষ’ই নন।আপনি একটা অস*হ্য পুরুষ। ভাবের এমপি। জনগণ এর ভোট চু*রি করে এমপি হয়েছে।ফা**লতু একটা লোক।
নাদমান ঠোঁটের কোনে হাসি বিদ্যমান রেখে, স্বাভাবিক কণ্ঠে আনজারাকে বললো,
~চিৎকার চেঁচামেচি করবেন না মিস আনজারা। আমার মেয়ের মনে প্রশ্নের উদয় হতে পারে?ছোট বাচ্চা-তো তার জানার আগ্রহ অনেক। আপনি নির্বোধ কেন?
” আনজারা”,,,,স্বর্ণভার দিকে তাকিয়ে দমে গেল। আনজারা নিজের রা*গ ঝাড়তে স্বর্ণভাকে নাদমান এর থেকে ছাড়িয়ে নিল।নিজের কোলে উঠিয়ে সামনে হাঁটতে লাগল।
নাদমান হাসল,
আমার রক্তের শিরায় শিরায় আপনার নাম প্রতিধ্বনিত হয় আনজারা । আপনি বিহনে আমার চিত্তের একাংশ প্রতিনিয়ত পুড়*ছে । কিন্তু, আমি আমার অনুভূতি প্রকাশে সর্বদাই অক্ষম। আমার আর আপনার পথ চলা নিঃসন্দেহে দুর্গম আনজারা।
*****
আজ অনেক দিন পর নাদমান তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরেছে। তামিম ও তার সাথে তালুকদার বাড়িতে এসেছে।নাদমান স্বর্ণভা’কে রাতের খাবার খাইয়ে নিজেও খেল।মেয়ের মাথায় খুব যত্ন সহকারে তেল দিয়ে সুন্দর করে, চুলে দুইটা বিনুনি করে দিল।স্বর্ণভা খাট থেকে নেমে দৌড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে, দাঁড়িয়ে নিজেকে ঘুরে ফিরে পরোখ করল।নাদমান ও মেয়ে’র পাশে এসে দাঁড়াল।নিচু হয়ে স্বর্ণভা’র কপালে চুমু দিল।স্বর্ণভাও নাদমান এর দুই গালে চুমু দিল।
নাদমান এর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বলল,
~বাবাই, আমি দেখতেও পরীর মতো। আন্টি দেখতে ও একদম পরীর মতো সুন্দর ।আন্টি পরী আর আমি পরীর বাচ্চা।
বলেই, মুখে হাত দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল।
নাদমান মেয়ের কথা শুনে কপাল কুঁচকালো।স্বর্ণভা’র মস্তিষ্ক এই ধরনের চিন্তা ভাবনা আসার কথা নয়।নিশ্চয়’ই, স্বর্ণভার সামনে এই বিষয়ে কেউ কিছু বলেছে।
নাদমান হাঁটু গেড়ে নিচে বসল।স্বর্ণভাকে স্নেহময় কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
~তোমাকে কে বলেছে এই কথা?স্বর্ণভা চোখ ছোট করে কিছু একটা চিন্তা করে বলল,
~ছোট বাবাই
নাদমান মুখ গোল করে নিঃশ্বাস ছাড়ল।নাবহানকে’ই তার স*ন্দেহ হয়েছিল।তার, সন্দেহ তাহলে ঠিক’ই আছে। নাদমান মনে মনে আফসোস করল।ভাইটা তার কবে যে পরিবর্তন হবে।নাদমান মেয়েকে কোলে তুলে নিল।খাটে শুইয়ে দিল স্বর্ণভাকে। স্বর্ণভাকে বিছানায় শুইয়ে দিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে স্বর্ণভা ঘুমিয়ে গেল।তখনই,নাবহান হন্তদন্ত হয়ে স্বর্নভাকে ডাকতে ডাকতে নাদমান এর রুমে প্রবেশ করল।
~স্বর্ণভা মামনি তুমি কোথায়?
ভিতরে প্রবেশ করে নাবহান দেখল স্বর্ণভা ঘুমিয়ে পড়ছে। নাদমান ইশারা দিল আস্তে কথা বলার জন্য।নাবহানও ইশারা দিয়ে বুঝাল সে বারান্দা’য় তার জন্য অপেক্ষা করছে। নাবহান গিয়ে নাদমান এর বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসল। থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টের পকেট থেকে সিগা*রেট বের করল।সি*গারেট এর প্যাকেট থেকে সিগা*রেট বের করতে’ই নাবহান এর হুঁশ ফিরল।স্বর্ণভা ঘুমিয়ে আছে ওর নিঃশ্বাস নিতে ক*ষ্ট হতে পারে। পুনরায়, সিগা*রেট পকেটে রেখে দিল।নাদমান এসে পাশের চেয়ারে বসল। একটা খাম ছুঁড়ে দিল নাবহানের দিকে।
নাবহান খামটা হাতে নিয়ে,
নাদমানকে জিজ্ঞেস করল,
~এটা কি?
নাদমান বলল,
~লাভ লেটার।
নাবহান কিছুটা ঝুঁকে এসে বলল,
~আসতাগফিরুল্লাহ নাদমান তুই বিবাহিত পুরুষ। তোর বাচ্চা আছে। তুই আমাকে ভাই হিসেবে ভালো বাসতে’ই পারিস।তাই, বলে লাভ লেটার দিবি! ছিঃনাদমান ছিঃ।
নাদমান কপাল কুঁচকে বলল,
~থাপ্প*ড় দিব ফালতু।পাশের বাসার মেয়ে দিয়েছি তোকে।
নাদমান লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল।
~কি! কতবড় সাহ*স মেয়ের আমার লেটার তোকে দিয়েছে!
~নাটক করিস না হাদা*রাম।মেয়ে দেয়নি ওর সাঙ্গুপাঙ্গু তুই ভেবে হয়তো আমাকে দিয়েছে।
নাবহান ঝট করে চিঠিটা খুলল।চিঠি চোখের সামনে ধরল।
~বাপের প্যান্টের পকেটে লুকিয়ে থাকা হত*চ্ছাড়া ব্যাটা মানুষ। ছাদে আসিস না কেন?
চলবে—-
(রি-চেক করা হয়নি ভুল ত্রুটি কমেন্ট বলবেন। সবাই বেশি বেশি করে কমেন্ট আর রিয়েক্ট করবেন)