কথা দিলাম 🌸❤️ ||পর্ব ~ ১১|| @কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

0
166

কথা দিলাম 🌸❤️
||পর্ব ~ ১১||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

“দি, দি, দি, দি!”

“আরে, আরে পরে যাবো তো? কি করছিস টা কি বোন? ছাড় আমায়।”

“দিয়ারা! কি করছিস টা কি? দিদি পরে যাবে তো নাকি? মাথায় বুদ্ধি লোপ পেয়েছে নাকি খুশিতে?”

মায়ের ধমক খেয়ে দিয়ারা ছেড়ে দেয় সিয়ারাকে। তারপর জড়িয়ে ধরে বলে,

“আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে দি। ফাইনালি, ফাইনালি আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করার রাস্তা খুঁজে পেয়েছি।”

“মানে, কি বলছিস? তোর স্বপ্ন তো মডেল হওয়া বা অভিনয় করা।”

“হ্যাঁ। আর সেটাই হতে চলেছে এবার।”

“আমি কিছু বুঝতে পারছি না সিয়া। তোর বোনকে বোঝার ক্ষমতা তোরই আছে। কিসব অডিশন-ফডিশনের কথা বলছে বুঝছি না আমি।”

মায়ের এমন বিরক্তি মাখা গলার স্বর শুনে সিয়ারা বুঝলো মায়ের বিষয়টা পছন্দ হয়নি। বোনের দিকে তাকালে ও দেখে মায়ের এমন মুখের অভিব্যক্তি দেখে বোন মুখ কালো করে ফেলেছে।

“আচ্ছা তুই আমাকে খুলে বল তো বিষয়টা কি? কিসের অডিশন?”

“সিরিয়ালের নতুন মুখের খোঁজ চলছে দি। তুই বলেছিলি না একটা ইন্সটিটিউটে ভর্তি করিয়ে দিবি যেখানে অভিনয় শেখানো হয় এবং তারপর ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ দেওয়া হয়?”

“হ্যাঁ, বলেছিলাম তো।”

“ওসবের কোনো দরকারই পরবে না যদি আমি আগামীকাল অডিশন দেওয়ার পর সিলেক্ট হয়ে যাই। আগামীকাল আমাদের এদিকেই অডিশন নেওয়া হবে কিছু নতুন ছেলে মেয়েদের। সিরিয়ালে সাইড ক্যারেকটার মানে ওই পার্শ্ব চরিত্রের জন্য। এখন তো বেশির ভাগ কনটেন্টে দুটো, তিনটে করে জুটি থাকে। সেসব চরিত্রেও চান্স পেয়ে যেতে পারি।”

“বাহ, এটা তো বেশ ভালো খবর। মা, তুমি আর আপত্তি করো না। এই সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে গেলে কিন্তু পস্তাতে হবে?”

“তুই যা ভালো বুঝিস।”

“ইয়েস! মা রাজী। দি তুই যাবি তো আমার সাথে? প্লিজ দি!”

“আব, আচ্ছা ঠিক আছে যাবো।”

“থ্যাংক ইউ দি!”

দিয়ারা মনের আনন্দে নাচতে নাচতে নিজের ঘরে চলে গেল। ওদের মা এসে সিয়ারাকে বললো,

“তা মা? তুই কবে নিজের স্বপ্ন পূরণ করবি?”

মায়ের প্রশ্ন শুনে সিয়ারা মলিন হাসলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“আমার স্বপ্ন চিরকাল স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে মা। সেটা পূরণ হওয়ার আশা আর আমি করি না আমি। তুমি তো জানো সেটা ভালো ভাবে, এই নিয়ে কথা না বলাই বেকার। এখন আমি চাই আমার বোন জানো নিজের সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।”

“আমার ভাবতেই অবাক লাগে তুই দিয়ার সৎ দিদি। এমন ত্যাগ হয়তো নিজের দিদিও করতে দুবার ভাববে কিন্তু তুই একবারও ভাবিসনি। বোনের পড়াশোনার জন্য নিজের পড়াশোনাটা ছেড়ে দিলি আর স্বপ্নটাও…”

“ওফ মা! তুমি আবার শুরু করলে তো? আচ্ছা তুমি কি কখনও আমাকে বুঝতে দিয়েছো তুমি আমার সৎ মা? বুঝতে দাওনি তো? দুজনকে সমান চোখে দেখেছো। এমন কি বোনের থেকেও আমাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করো। তাহলে আমি কেন পারবো না? আমাদের সম্পর্কের নামটাই শুধু সৎ আর কিছুই না। এসব কথা ছাড়ো, আমার এবার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।”

“পরে খাবি, আগে যা স্নান করে আয়। বৃষ্টিতে ভিজে এতক্ষন বৃষ্টির জলগুলো শুকোলি। এইবার না ঠাণ্ডা লাগে।”

“ও কিছু হবে না। জানোই তো আমার অভ্যেস আছে। আসছি আমি স্নান সেরে।”

সিয়ারা স্নান করতে চলে যায়। স্নান সেরে, খাওয়া দাওয়া করে নিয়ে নিজের ঘরে জানলার কাছে গিয়ে বসে। বিছানা ঘেঁষেই জানলা সিয়ারার ঘরে। আবারও আকাশ কালো করে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। সাথে ঠাণ্ডা ঝোড়ো হাওয়া বইছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই সিয়ারার আধভিকের কথা মনে পরে গেলো।

“এই যাহ, ওনার ফোন নাম্বার তো আনা হলো না?”

“কার ফোন নাম্বার আনা হলো না দি?”

“আর বলিস না। আজকে একজনের সাথে দেখা হয়েছিল। ছেলেটা পুরোই পাগল…

সিয়ারা এক এক করে সব কিছু খুলে বললো দিয়ারা কে। সবটা শোনার পর দিয়ারা নেচে উঠে বললো,

“দি ছেলেটা সত্যি পাগল, তোর জন্য পাগল।”

“তুইও শুরু করলি? দ্বিতীয় দেখাতেই একবারে প্রেমে পাগল হয়ে গেলো বল? সব কিছুদিনের ভালোলাগা। কদিন পরেই এভাবে অন্য কাওকে পটাবে। একদমই বিশ্বাস করি না আমি এসব।”

“ঠিক আছে। আমার মন বলছে ছেলেটা ঠিক কোনো না কোনো ভাবে তোর সাথে যোগাযোগ করবে। আর যদি কপালে লেখা থাকে তাহলে দেখবি না চাইতেই যোগাযোগ হয়ে যাবে। আমার মনে হয় না ছেলেটা অমন হবে বলে।”

“ওরে আমার পাকুনি, যা ঘরে গিয়ে অডিশনের জন্য প্র্যাক্টিস কর।”

সিয়ারা একপ্রকার জোর করে বার করে দেয় বোনকে ঘর থেকে। তারপর নিজে নিজেই প্রথমে আধভিক এবং পরে বোনের কথাগুলো মনে করে লজ্জা পায়। সে ভাবতে না চাইলেও বার বার বেশি করে তাঁর মনে পরে যায় আধভিকের কথাগুলো। বিছানায় গিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে ওই কথাগুলো নিয়ে ভাবতে থাকে সিয়ারা। আর একসময় সেভাবেই ঘুমিয়ে পরে।

পরেরদিন,

“ড্যাড প্লিজ? আমাকে যেতে দাও।”

“আহ ভিকি! এতো উতলা হচ্ছিস কেন বল তো? এই তো হয়ে যাবে। নেক্সট!”

আভাস বাবু আজ স্বয়ং এসেছেন অডিশনের জন্য। কারণ ওনার সিরিয়ালের জন্যেই পার্শ্ব চরিত্র খোঁজা হচ্ছে বিশেষ করে। উনি চাইছেন নতুন মুখদের সুযোগ দিতে যাঁদের মধ্যে প্রতিভা আছে। তাই সাথে করে নিজের ছেলেকেও নিয়ে এসেছেন। যাকে ডেকেছিলেন তাঁর পারফরম্যান্স হয়ে যাওয়ার পর আধভিক আবার বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,

“এরমভাবে একজন একজন করে যদি অডিশন চলতে থাকে তাহলে আজকে সারাদিন কেটে যাবে আর আমি বেরোতে পারবো না। তুমি খুব ভালো ভাবেই জানো যে আজকে আমার বেড়ানোটা কতোটা ইম্পর্ট্যান্ট।”

“আরে, তুই শুধু শুধু বিরক্ত হচ্ছিস। বেশি বাকি নেই আর।”

“রিয়েলি? দ্যান শো মি!”

আধভিক জোর করেই আভাস বাবুর সামনে থেকে ল্যাপটপ টা ঘুরিয়ে নেয়। এতক্ষন আভাস বাবু ল্যাপটপটা নিজের সামনে করে রেখেছিলেন। আধভিক যতবার জানতে চেয়েছে ততবার উনি বলেছেন “বেশি বাকি নেই।” সিসি টিভি ক্যামেরা তে বাইরে ওয়েটিং রুমের ফুটেজ দেখতেই আধভিক কটমট করে তাকালো আভাস বাবুর দিকে। আভাস বাবু আমতা আমতা করতে শুরু করেছেন ইতিমধ্যে।

“আচ্ছা? তো তুমি কি জানো বেশ বলেছিলে এতক্ষণ ধরে? বেশি বাকি নেই?”

“ই..ইয়ে.. এরা কিছুক্ষণ আগেই এসেছে।”

“ওহ রিয়েলি? তো এদের মধ্যে কে কে এসেছে কিছুক্ষণ আগ… সিয়ারা?”

আভাস বাবুকে প্রশ্ন করতে করতে আধভিক ল্যাপটপের দিকে চোখ ফেরাতেই ওর চোখ স্থির হয়ে গেলো একজনের উপর। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

“আরে? সত্যি তো? এটা তো ওই মেয়েটা? বাপ রে! ঝড়ের গতি তে চলে গেলো। কি যে পেয়েছে মেয়েটার মধ্যে কে জানে।”

আভাস বাবু বেশ বিরক্ত হয়ে কথাটা বললেন। পরমুহুর্তে আবারও সিসিটিভি ফুটেজের দিকে তাকিয়ে দেখলেন মেয়েটি নিজের পাশের মেয়েটিকে কিছু বোঝাচ্ছে। একটু ভালো ভেবে পর্যবেক্ষণ করলেন মেয়েটিকে।

“অস্বীকার করতে পারছি না, আমার ছেলের পছন্দ আছে। মেয়েটি দেখতে বেশ সুন্দর। বলা যায় অপরূপ সুন্দরী। যেমন গায়ের দুধে আলতা রং তেমন ঘন কালো একছেয়ে লম্বা চুল। চোখগুলো বেশ টানা টানা, নাকটা খুব টিখালো না আবার চ্যাপ্টাও না। মুখের সাথে মানান সই। উচ্চতাও খুব একটা খারাপ না, ৫.৬ তো হবেই।”

আভাস বাবু কিছু একটা ক্যালকুলেট করলেন মনে মনে তারপর মৃদু হেসে বললেন,

“আজ ভিকি বাড়ি আসলে বলবো খোঁজ নিতে। মেয়েটি অভিনয় জানে না কি? জানলে আমার ছেলের জীবনের নায়িকার সাথে সাথে ওর সিনেমার নায়িকাও করে নেবো। আমার ছেলেও তো হিরোর থেকে কম নয়। উঁচু লম্বায় ছয় ফুট, বাদামি গায়ের রং। যাকে বলে, চকলেট স্কিন টোন, আজকাল কার মেয়েরা যা পছন্দ করে। এতদিন হিরোইন পছন্দ হয় না বলে অজুহাত দিয়েছে। এইবার আর পারবে না বরং নিজেই করতে চাইবে। ব্যাপারটা ভালো হবে, রিল লাইফ আর রিয়েল লাইফে একটাই নায়িকা। হা হা হা!”

[আমি এইভাবে নায়ক নায়িকার চেহারার বর্ণনা দেইনা। প্রথম গল্প দুটোয় দিয়েছিলাম তারপর অতটা দিইনি। এইবার বিষয়টা রঞ্জিত করলাম কারণ এটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে। নায়ক, নায়িকা সুন্দর না হলে পরবর্তী প্লটের সাথে গল্প মিলবে না। তাই বলে এটা ভাববেন না যে অসুন্দর হলে কেউ চান্স পায় না ইন্ডাস্ট্রিতে। আমি আমার গল্পের সুবিধার্থে সৌন্দর্যটা বেছে নিয়েছি, আগামী পর্বগুলি প্রকাশ পেলেই তা বুঝতে পারবেন। ধন্যবাদ।]

“এই দি? আমার না খুব নার্ভাস লাগছে বুঝলি তো?”

“এটা তো স্বাভাবিক বোন। এতো লোক এসেছে অডিশনের জন্য। কিন্তু তুই একদম স্ট্রং থাক, দেখবি ঠিক পারবি।”

দিয়ারা একবার ঝুঁকে সব লোকগুলো দেখে সোজা হয়ে বসলো আর বড়ো নিশ্বাস নিল এবং ছাড়লো। সিয়ারা সেটা দেখে সামান্য হাসলো আর নিজের ঘড়ির দিকে তাকালো। তাকাতেই মনে মনে ভাবলো,

“ইশ, আজকে মনে হয় আর যাওয়া হবে না। অনেকটা দেরী হয়ে যাবে। আচ্ছা আধভিক তো ওখানেই আমাকে দেখেছিলো, ও কি একটু মনে করে ওই জায়গায় আসতে পারবে না? ধুর, এসেই বা কি হবে? আমি তো টাইমে পৌঁছতেই পারবো না। ধুৎ, ভালো লাগছে না।”

সিয়ারার মুখে বিরক্তি প্রকাশ পেতে দেখে দিয়ারা ভ্রু কুঁচকে নিলো।

“দি? তোর কি এখানে বসে থাকতে ভালো লাগছে না? প্রবলেম হচ্ছে কোনো?”

“আরে না না। তেমন কিছু না। আসলে আজকে তো আর এনজিও তে যাওয়া হবে না, বাচ্চাগুলো অপেক্ষায় থাকবে তাই ভাবছিলাম।”

“ওহ হো, তুই জানিয়ে দে ফোন করে।”

সিয়ারা হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে ফোন বার করলো। মেসেজ করার কথা ভুলে গিয়ে সে আবার আধভিকের চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো। সে মনে মনে ভাবছে, “কিছু তো আছে ছেলেটার মধ্যে, যার জন্য প্রথম দেখাতেই, কথা বলাতেই অনেকটা প্রভাব ফেলেছে আমার উপর।” আধভিকের কাছে দ্বিতীয় দেখা হলেও সিয়ারার কাছে সেটা প্রথম দেখা কারণ সেদিন সে ঠিকভাবে দেখেনি আধভিককে। কোনরকম কাটিয়ে এসেছে বিষয়টা।

“সিয়ারা!”

সিয়ারা নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে বসেছিলো। চেনা পরিচিত কণ্ঠ, বলা যেতে পারে কাঙ্ক্ষিত কণ্ঠস্বর কানে আসতেই সিয়ারা চোখ সোজা করে তৎক্ষণাৎ পাশ ফিরে তাকালো। অবাক হয়ে গেলো আধভিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। নিজের অজান্তেই উঠে দাঁড়িয়ে পরলো।

“আধভিক আপনি? এখানে?”

“হোয়াট আ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ! আমি ভাবতেও পারিনি তোমাকে এখানে খুঁজে পাবো। সিরিয়াসলি? আমাকে আর খুঁজতেই হলো না। আমি ভেবেছিলাম গতকাল যেখানে দেখা হয়েছিল সেখানে গিয়ে খোঁজ করবো তোমার।”

“আমিও…

“দি?”

দিয়ারার ডাকে সিয়ারার হুঁশ ফেরে। নাহলে সে বলেই দিতে যাচ্ছিলো সেও ওখানে আগে আগে গিয়ে অপেক্ষা করতো আধভিকের। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বলে

“আব, দিয়া উনি আধভিক…

“আধভিক রায় চৌধুরী, সন অফ আভাস রায় চৌধুরী।”

“হেই! আমাকে চেনো তুমি? হোয়াট’স ইউর নেম?”

“দিয়ারা সান্যাল। আপনি এখনকার বিখ্যাত প্রোডিউসারের ছেলে হন, আমার যেহেতু অভিনয় নিয়ে ইন্টারেস্ট আছে তাই খবর রেখেছি।”

“গ্রেট! তুমি অডিশন দিতে এসেছো?”

“ইয়াহ!”

“আসো আমার সাথে। সিয়ারা, কাম!”

আধভিক সিয়ারা ও দিয়ারাকে নিয়ে আভাস বাবুর ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। ওনাকে গিয়ে বলে,

“তুমি তোমার সিরিয়ালের জন্য সাইড অ্যাকট্রেস খুঁজছিলে না? নাও খুঁজে দিলাম।”

আভাস বাবু প্রথমে খুশি হলেন এই ভেবে হয়তো আধভিক সিয়ারার কথা বলছে। কিন্তু উনি যে ভুল ভাবছিলেন তা বুঝতে পারলেন যখন আধভিক বললো,

“সিয়ারা, চলো আমার সাথে।”

“এক মিনিট আধভিক। আমি এইভাবে আমার বোনকে সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে দিতে পারিনা। আমার সাথে আপনার পরিচয় আছে বলে ওকে সুযোগ দেওয়া হবে এটা আমি হতে দেবো না।”

“কিন্তু দি…

“না দিয়া। তুই এখানে অডিশন দিতে এসেছিস তো? অডিশন দিয়েই সুযোগ পাওয়ার হলে পাবি নাহলে নয়। নিজের যোগ্যতা দ্বারা সুযোগ অর্জন করার সাফল্যই আসল সাফল্য। স্যার? আপনি যেমন অডিশন নিচ্ছিলেন তেমন নিন। ক্ষমা করবেন আপনার কাজে ডিস্টার্ব করার জন্য।”

এতক্ষণ আভাস বাবু আর আধভিক সিয়ারার কথা শুনছিলেন। ওনারা দুজনেই বুঝলেন সিয়ারা যেমন নিজে লোভী বা স্বার্থপর নয় তেমন নিজের বোনকেও সেই শিক্ষাই দিতে চায়।

“ফাইন। তুমি যেটা চাইছো সেটাই হবে সিয়ারা। কিন্তু অডিশন তো তোমার বোন, আই মিন দিয়ারা দেবে। সো তুমি এখানে থেকে কি করবে? এখনও অনেক দেরী আছে ওর টার্ন আসতে। তুমি আমার সাথে চলো, দরকার আছে আমার।”

“মানে টা কি? আমি এভাবে বোনকে একা ফেলে… বোন আমি একটু আসছি…

সিয়ারাকে একপ্রকার টানতে টানতে নিয়ে চলে গেলো আধভিক। ঘটনাচক্রে উপস্থিত দুজনেই অবাক। আভাস বাবু সিয়ারার কথা মতো দিয়ারাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বললে ওর বেশ রাগ হয় সিয়ারার উপর।

“আমাকে এখানে বসিয়ে রেখে নিজে চলে গেলো। কি সুন্দর চান্স টা পেয়ে যাচ্ছিলাম তা না, সব জায়গায় মহানগিরি। ধুর, থাকো এখানে এবার ঘণ্টার পর ঘন্টা বসে।”

অন্যদিকে,

“কি করছেন টা কি? ছাড়ুন আমার হাত.. আধভিক!”

বেশ অনেক্ষণ ধরে সিয়ারা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলো, ছাড়তে বলছিল হাত তবুও আধভিক কথা শুনছিল না। বাধ্য হয়ে সিয়ারা জোরে আধভিকের নাম ধরে ডাকতেই আধভিকের পা জমে যায়। হাতটা ছেড়ে সিয়ারার দিকে ফেরে সে। চোখ বন্ধ করে নেয়। আস্তে করে বাম হাত পকেটে গুঁজে ডান হাত বুকের বাম পাশে, হৃদয়ের উপর রাখে। ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাতেই সিয়ারা জোরে একটা শ্বাস নেয়। মনে মনে বলে,

“বাপ রে, এভাবে কে তাকায়? কি মারাত্মক চাহুনি।”

আধভিক ওভাবেই মুচকি হেসে বলে,

“উফ, বুকে এসে লাগলো ডাকটা। এই প্রথম নিজের নামটা শুনে একটা অন্যরকম অনুভূতি হলো।

“আপনার মাথায় সমস্যা আছে জানেন তো?”

“আগে ছিলো না। এখন হয়ে গেছে।”

“ধুর! এইভাবে টেনে কেন নিয়ে আসলেন ওখান থেকে? লোকে দেখলে কি ভাববে?”

“কি আবার ভাববে? কে কি ভাবলো না ভাবলো তার ধার আধভিক রায় চৌধুরী ধারে না। চলো।”

“কোথায় যাবো?”

আধভিক সিয়ারার কাছে চলে এলো। ওর দিকে ঝুঁকে পরে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে বললো,

“যেখান থেকে আমাদের পথ চলা শুরু হয়েছে।”

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here