কথা দিলাম 🌸❤️ ||পর্ব ~ ১০|| @কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

0
167

কথা দিলাম 🌸❤️
||পর্ব ~ ১০||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আধভিক গাড়ি থেকে নেমে গেলে সোহম একবার গাড়ির ভিতর থেকে আওয়াজ দেয় জোরে,

“স্যার ভিজে যাবেন তো? ছাতা টা নিয়ে যান?”

আধভিকের তরফ থেকে কোনো উত্তর আসে না। সে একমনে দাঁড়িয়ে আছে। সোহম নেমে গিয়ে আধভিকের মাথায় ছাতা ধরে।

“হঠাৎ করে এভাবে নেমে গেলাম কেন বলুন তো বৃষ্টির মধ্যে? আর এভাবে ওদিকে কি…

সোহম কথা বলতে বলতে আধভিকের দৃষ্টি অনুসরণ করতেই দেখতে পেলো সেই মেয়েটি যে কি না শুটিং স্পটে ঢুকে পরেছিলো। মেয়েটি নিজের মতো করে বৃষ্টিতে ভিজছে, নাচছে। ওর সাথে কয়েকটা বাচ্চাও আছে। বৃষ্টির গতি জোর হতেই বাচ্চাগুলো বাস স্ট্যান্ডের ভিতর গিয়ে দাঁড়ায়। এটুকু দেখে সোহম আধভিকের দিকে তাকাতেই আধভিক ছাতাটা সরিয়ে দিয়ে বলে,

“গাড়িতে গিয়ে বসো।”

আধভিক উত্তরের অপেক্ষা না করে এগোতে শুরু করে। মেয়েটির অনেকটা কাছে এগিয়ে গেলে একটি বাচ্চার কথা শুনতে পায়।

“সিয়ারা দিদি, আর বেশি ভিজো না ঠাণ্ডা লেগে যাবে।”

“সিয়ারা!”

আধভিক মনে মনে আওরায় নামটা একবার। মুচকি হেসে সিয়ারার দিকে তাকালে দেখে, ওর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ও আপন মনে মাথা চিৎ করে, চোখ বন্ধ রেখে, দু পাশে দু হাত ছড়িয়ে রেখেছে। ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা।

“আরে আপনি কে? আপনিও কি দিদির মতো বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসেন নাকি?”

“দিদি দেখো, তোমার মত ওই দাদাটাও ভিজছে।”

বাচ্চাদের কথা শুনে সিয়ারা চোখ মেলে তাকায়। মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় দেখতে প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারে এটা কিছুদিন আগে শুটিং সেটে থাকা ছেলেটি।

“আপনি? আপনি এখানে কি করছেন?”

“আপনাকে দেখছি।”

“কি? আমাকে দেখছেন মানে?”

“হম, অনেক কষ্ট পাওয়ার পর আপনাকে খুঁজে পেয়েছি। কোথায় হারিয়ে গেছিলেন বলুন তো? কেউ খুঁজেই পাচ্ছিলো না আপনাকে। অবশ্য, হয়তো ভাগ্য ঠিক করে রেখেছিলো আমিই আপনাকে খুঁজে পাবো।”

সিয়ারা বিষয়টা বুঝতে না পারলেও হয়তো কিছুটা আন্দাজ করে মনে মনে হাসলো।

“এইভাবে ভিজবেন না, ঠাণ্ডা লেগে যাবে। ফিরে যান।”

কথা শেষ করে সিয়ারা পিছন ফিরে দু পা এগিয়ে গেলেই পিছন থেকে নিজের নাম শুনতে পায়।

“সিয়ারা! …. যাবেন না প্লিজ।”

সিয়ারা উপেক্ষা করতে পারলো না আধভিকের ডাক। আধভিকের দিকে ফিরে বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এই! তোরা দৌঁড় দে এবার। বৃষ্টিটা একটু ধরেছে। আমি যাচ্ছি আরেকটু পরে।”

সিয়ারার কথা শুনে বাচ্চাগুলো দৌঁড় দিলো। আধভিক বাচ্চাগুলোর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো সে সময় সিয়ারা বললো,

“বৃষ্টিটা কিছুক্ষণের জন্য থেমেছে। আবার জোরে আসবে। কি বলবেন বলুন জলদি?”

প্রশ্ন করতে করতেই সিয়ারা বাস স্ট্যান্ডের ভিতরে গিয়ে বসলো। আধভিক হেসে সিয়ারার পাশে বসে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো হাসি মুখে।

“আপনি কি শুধু তাকিয়েই থাকবেন?”

“কি বলার ছিল সেটাই তো ভুলে গেছি তোমাকে দেখে।”

“নিজের নামটা নিশ্চয় মনে আছে?”

“হ্যাঁ? হ্যাঁ হ্যাঁ। আধভিক, আধভিক রায় চৌধুরী।”

“বাপ রে, কত বড় নাম। আসলে আপনি বড়লোক মানুষ তাই বড়ো নাম, ঠিকই আছে।”

“তুমি না হয় নামটা ছোটো করে দাও। তুমি যেমনটা চাইবে তেমনটাই হবে মিস সিয়া….

“মিসেস! মিসেস সিয়ারা।”

আধভিকের ঠোঁটের হাসির রেখাটা নিমিষে মিলিয়ে গেলো। নড়ে চড়ে সোজা হয়ে বসলো সে। স্থির দৃষ্টি ও থমথমে মুখ নিয়ে সিয়ারার দিকে তাকিয়ে বললো,

“তা হঠাৎ আমায় কেন খুঁজছিলেন মিস্টার রায় চৌধুরী? জরিমানা আদায় করবেন নাকি শুটিং স্পটে ঢুকে পরায়?”

আধভিক চোখ নীচের দিকে নামিয়ে না বোধক মাথা নাড়লো শুধু। সিয়ারা মুখ টিপে হাসছে যা আধভিকের চোখে পরছে না। সিয়ারা অপেক্ষা করছে কখন আধভিক তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করবে। অবশেষে বেশ কিছুক্ষণ পর অপেক্ষার অবসান ঘটলো তার।

“আপ..আপনার বিয়ে হয়ে গেছে?”

“কেন? বিয়ে না হলে প্রেম করতেন বুঝি?”

আধভিক চুপ করে রইলো যা দেখে সিয়ারা উঠতে নিলেই তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

“নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসতাম। হয়তো এখনও ভালোবাসবো, তবে এক তরফা।”

“আমার মত সাধারণ ঘরের মেয়ের সাথে আপনাকে মানায় না মিস্টার রায় চৌধুরী। আমি অতি সামান্য আর আপনি অসামান্য।”

সিয়ারার কথা শুনে আধভিক চটজলদি উত্তর দিলো,

“আমাদের সম্পর্কে কখনও স্ট্যাটাসের আঁচ আসতো না।”

সিয়ারা সামনে তাকিয়েই হাসলো। তারপর বললো,

“আমি মনে করি সবাই মানুষ। স্ট্যাটাস আমার কাছে বিষয় নয়। টাকা-পয়সা তো জোয়ার ভাটা। আজ আছে তো কাল নেই। আর স্ট্যাটাস চাইলেই মেইনটেইন করা সম্ভব। বিষয়টা কালচারের, পরিবেশের। আপনার কালচার আর আমার কালচারের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। আমি চাইলেই আপনার মতো চাল চলন করতে পারি যেটা আমি করবো না। আমরা মধ্যবিত্তরা যেকোনো পরিবেশে খাঁপ খাওয়াতে জানি। আপনি আমার মতো হতে না পারলেও আমি কিন্তু হতে পারবো। কিন্তু আমি আমার মতো, সাধারণ হয়েই থাকতে চাই। সুতরাং উঠি?”

“মানুষ চাইলেই সব পারে। আমি খাঁপ খাওয়াতে পারি কি না একবার যাচাই করেই দেখো।”

“আপনার আমার প্রতি যে আকর্ষণ আজ আছে, তা আগামী দিনে আর থাকবে না। তাই এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা না করাটাই ভালো।”

সিয়ারা উঠে চলে যেতে নিলে আধভিক সিয়ারার হাত ধরতেই সিয়ারা আধভিকের চোখে চোখ রাখে।

“আমি এইসব আবেগ, প্রেম-ভালোবাসা, আকর্ষণ এসবের অর্থ বুঝতাম না। আজও বুঝি না। শুধু বলতে পারি, তুমি আমার এমন অনুভূতি যা আমি আমার জীবনে প্রথমবার অনুভব করেছি। তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর প্রত্যেকটা মুহুর্তে এই অনুভূতি মনে করে আমি আনন্দ পেয়েছি। আবার এই অনুভূতি অনুভব করে কষ্টও পেয়েছি, কারণ তোমাকে আজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলার ভয়ে। আমি হলফ করে বলতে পারি, এই অনুভূতি কখনও মুছে যাবে না। তুমি না থাকলে এই অনুভূতি নিয়েই নিজের জীবনটা পার করে দিতে পারি আমি, ইটস স্পেশাল! ইটস ভেরি ভেরি স্পেশাল টু মি সিয়ারা। অ্যাকচুয়ালি ইউ আর স্পেশাল, দ্যা স্পেশাল ওয়ান অফ মাই লাইফ।

সিয়ারা আর আধভিক দুজনে এক পলকে একে অপরের দিকে চেয়ে আছে। আধভিকের কথায় মগ্ন হয়ে কখন যে ও বসে পরেছে নিজের জায়গায় তার খেয়াল নেই। আধভিক এখনও সিয়ারার হাত ধরে আছে। সিয়ারা চোখ সরায় বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ পেয়ে। সামনে তাকাতেই দেখে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে।

“মিথ্যে কেন বললে, যে তুমি বিবাহিত?”

“বুঝতে পেরেছিলাম।”

“কি?”

“আপনার মনের কথাগুলো আপনার ব্যবহারে প্রকাশ পাচ্ছিলো। প্রথমে আপনি তে ছিলো বিষয়টা তারপর সেটা তুমি তে এলো। প্রথম দেখাতেই তো সোজা সাপ্টা কথা বলে দিলেন। এছাড়া মেয়েদের এই ক্ষমতাটা ভালোই আছে, কখন কোন ছেলে তাঁকে ঠিক কোন দৃষ্টিতে দেখছে সেটা তারা বুঝতে পারে।”

“আচ্ছা।”

সিয়ারা সামনের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে অনুভব করলো কেউ তাঁর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ পাশ ফিরাতেই দেখলো আধভিক হাত মুঠ করে কপালের পাশে ঠেকিয়ে রেখেছে, কুনই চেয়ারে ভর করে। নজর সিয়ারার দিকে স্থির এবং ঠোঁটে হাসির রেখা। সিয়ারা বেশ লজ্জা পেলো চোখে চোখ পরে যাওয়ায়।

“আব, আপনি একা এসেছেন?”

“কেন? তুমি কি আশা করেছিলে আমি পরিবার নিয়ে আসবো?…বিয়ের কথা বলতে?”

সিয়ারা চমকে উঠে আধভিকের দিকে তাকিয়ে বললো,

“বিয়ে? মাথা খারাপ হলো নাকি আপনার? প্রথম দেখার পর দ্বিতীয় দেখাতেই বিয়েতে চলে গেলেন? আমি কথাটা জিজ্ঞেস করলাম কারণ এই বৃষ্টিতে বাড়ি ফিরবেন কীভাবে একা তাই। আর আপনি বিয়ে অবধি চলে গেলেন?”

“হ্যাঁ, না যাওয়ার কি আছে? আমি কোনরকম সময় নষ্ট করতে চাই না। তোমার আমার সম্পর্কে যে ভুল ধারণা আছে সেটা মিটে গেলেই তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসবো।”

“বদ্ধ পাগল আপনি! আপনি চাইলেই আমি বিয়ে করবো? এতো সোজা?”

“তাহলে? তাহলে কি করতে হবে আমায়?”

“আপনি আমাকে কি দোকানের পুতুল ভাবছেন মিস্টার রায় চৌধুরী? যে, দেখলেন, দেখার পর পছন্দ হলো আর কিনে নিয়ে বাড়িতে সাজিয়ে রাখলেন? আমি কোনো পুতুল নই, আমি…

“আমার মনের রাণী! তুমি, আমার মনের রাণী। যে কি না প্রথম দেখাতেই আমাকে ঘায়েল করে দিয়েছে। আমি তাঁকে নিজের রাজ্যে নিয়ে গিয়ে মাথার মুকুট করে রাখতে চাই। সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আমার রাণীর উপর অন্যের নজর পড়ুক তা আমি চাইনা। কারণ নিজের সম্পদ নিয়ে লড়াই করতে ইচ্ছুক নই আমি। যেটা আমার, সেটা আমারই!”

“উফ! আপনি বাড়ি যান, বৃষ্টি ধরে এসেছে।”

“আর তুমি? তুমি যাবে না বাড়ি?”

“আমি ঠিক চলে যাবো। আপনি যান। বৃষ্টি জোরে আসলে ভিজে ভিজে যেতে হবে।”

আধভিকের মুখটা ছোটো হয়ে গেলো চলে যাওয়ার কথা শুনে। দুই থেকে তিন সেকেন্ড চুপ করে থাকার পর হঠাৎই বলে উঠলো,

“কিন্তু আমি তো এখানকার রাস্তা চিনি না। তোমাকে দেখতে পেয়েই চলে এসেছি। কোনদিক থেকে এসেছি, কীভাবে এসেছি খেয়াল পরছে না এখন।”

“কি? আপনি আমাকে দেখলেন আর উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে চলে এলেন? হে ভগবান!”

আধভিক ক্যাবলা হেসে মাথা চুলকে বললো,

“কি করবো বলো? তোমাকে অনেক খোঁজার পর যে পেয়েছি।”

সিয়ারার বেশ হাসি পেলো আধভিকের কথা শুনে ও অবস্থা দেখে। হাসি চেপে রেখে জিজ্ঞেস করলো,

“বাড়ির ঠিকানা নিশ্চয় মনে আছে?”

“হ্যাঁ।”

“গুগল করে নিন। চললাম।”

“কিন্তু…

সিয়ারার উত্তর শুনে আবারও হতাশ হয়ে পরলো আধভিক। সে ভেবেছিলো সিয়ারা তাঁকে হেল্প করবে কিন্তু নাহ, সে তো চলেই গেলো। মনটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ওভাবেই ওখানে বসে রইলো আধভিক। হঠাৎ সামনে হর্ণের আওয়াজে সামনে তাকাতেই দেখলো সিয়ারা স্কুটি নিয়ে বসে আছে।

“এভাবে তাকিয়েই থাকবেন নাকি বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দেবেন কোনটা? বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা নেই নাকি? আপনার না থাকলেও আমার কিন্তু প্রবল ইচ্ছা আছে নিজের বাড়ি যাওয়ার তাই জলদি উঠে বসুন নাহলে আমি…

আধভিক সিয়ারা কথা শুরু করতেই উঠে দাঁড়ায় এবং কথা শেষ করার আগেই এসে বসে পড়ে সিয়ারার স্কুটিতে। সিয়ারা হেলমেট দিলে সেটা পরে নেয় এবং সিয়ারা বলে,

“অ্যাড্রেস বলুন। আশেপাশেই থাকেন নাকি?”

“হ্যাঁ।”

আধভিক সিয়ারাকে নিজের বাড়ির ঠিকানা বলে না। বাড়ির কাছের একটা পরিচিত শপিং মলের নাম বলে। তাই সিয়ারার অসুবিধাও হয় না চিনতে। শপিং মলের কাছে পৌঁছতেই আধভিক কায়দা করে নিজের বাড়ি অবধি নিয়ে আসে সিয়ারাকে। বাড়ির সামনে আসতেই সিয়ারা একটু অবাক হয়, কারণ একটা কমপ্লেক্স এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। পর মুহূর্তে মনে পরে আধভিক একজন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড মানুষ, একজন প্রোডিউসারের ছেলে। আসার সময় সবটাই বলেছে সে নিজের ব্যাপারে তাই এসব তো স্বাভাবিক।

“চলো।”

“হ্যাঁ?”

“ভিতরে চলো।”

“না, না আজ নয়। অন্য কোনো দিন। আজকে আমাকে যেতে হবে, বাড়িতে মা আর বোন অপেক্ষা করছে। অনেকটা দেরী হয়ে গেছে এমনিতেই। পরবর্তী সময়ে দেখা হলে নিশ্চয়ই আসবো। আপনি গিয়ে স্নান সেরে ফেলুন নাহলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে।আসলাম।”

সিয়ারা একনাগাড়ে কথাগুলো বলে চলে গেলো তাড়াতাড়ি করে স্কুটি নিয়ে। সিয়ারার যাওয়ার দিকে আধভিক এক মনে তাকিয়ে থাকলে কমপ্লেক্সের সিকিউরিটি গার্ড ওকে জিজ্ঞেস করে,

“স্যার বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে আবার। ভিতরে যাবেন না?”

“হম, কত তাড়াতাড়ি সময়টা চলে গেলো।”

“সে না হয় দেখা করার সময় গেছে কিন্তু কথা বলার সময় তো যায়নি। আপনি না হয় ফোনে কথা বলে নেবেন।”

সিকিউরিটি গার্ড আধভিকের অবস্থা বুঝে মুচকি হেসে পরামর্শ দিলে আধভিকের ভালো লাগলেও মনে পরে যায় সে সিয়ারার নাম্বার নেয়নি। নিজের সব কিচ জানালেও সিয়ারা সম্পর্কে কিছুই জানা হয়নি তাঁর।

“ওহ শিট! এটলিস্ট ফোন নাম্বার টা তো চাওয়া উচিত ছিল আমার? ওকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দে সব কিছুই মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। শিট! আবারও হয়তো হারিয়ে ফেললাম ওকে আমি।”

আধভিকের কথা শেষ হতেই বৃষ্টি শুরু হয়। ধীরে ধীরে গতি বাড়তে থাকে বৃষ্টির, তাই ভিতরে চলে যায় আধভিক। কলিং বেল বাজানোর সাথে সাথেই দরজা খুলে দেন আভাস বাবু। আধভিক কিছু না বলে মনমরা হয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালে আভাস বাবু জিজ্ঞেস করেন,

“কি হয়েছে ভিকি? তোমাকে এত মনমরা লাগছে কেন? সোহম যে জানালো তুমি সেই মেয়েকে খুঁজে পেয়েছো। তাহলে?”

“আবার হারিয়ে ফেলেছি ড্যাড।”

“সে কি? আবার হারিয়ে ফেলেছো? কিন্তু কি করে?”

“আমি এতক্ষন ওর সাথে ছিলাম। ও আমাকে আমার বাড়িতে ড্রপ অবধি করে দিয়ে গেলো কিন্তু আমি ওর থেকে না ফোন নাম্বার চেয়েছি না ঠিকানা।”

আধভিকের কথা শুনে আভাস বাবু বিড়বিড় করে বললেন,

“এতোটাই মগ্ন ছিলে মেয়েটির ভাবনায় যে আসল কাজই ভুলে গেছো। হায় হায়, এ কী দশা হলো আমার ছেলের, তাও আবার একটা মেয়ের জন্য? সব চোখের সামনে ঘটছে তাও বিশ্বাস করতে পারছি না।”

“একা একা যখন কথা বলবে ঠিক করেছ তখন আমাকে দাঁড়াতে বললে কেন? আমি ঘরে যাচ্ছি। ভালো লাগছে না কিছু।”

“এই রে, রাগ করছো কেন? শোনো, তুমি ওর সাথে যেখানে দেখা করেছো সেই জায়গাটা মনে আছে তো?”

“হ্যাঁ।”

“পরেরদিন ওই জায়গায় গিয়ে ওর ছবি নিয়ে একটু খোঁজ করে দেখো। আশা করছি পেয়ে যাবে।”

“ইয়াহ! রাইট! একদম ঠিক বলেছো ড্যাড। এটাই করতে হবে। লাভ ইয় ড্যাড, লাভ ইউ সো মাচ!”

আধভিক আভাস বাবুকে জড়িয়ে ধরে ওনার গালে একটা চুমু দিয়ে দৌঁড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। আভাস বাবু নিজের জায়গায় থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আধভিকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ বাদে নিজের হাত নিয়ে গাকের সেই জায়গায় রাখলেন যেখানে আধভিক চুমু দিয়েছে।

“আমার ছেলে তো দেখছি প্রেমে পাগল হয়ে গেছে। এইজন্যেই বলে, কোনো কিছু এইভাবে অতিরিক্ত আত্ম বিশ্বাস নিয়ে বলতে নেই। খুব বলত, এসব প্রেম ভালোবাসা তে বিশ্বাস করি না। ওসব আমার দ্বারা হবে না। এখন? এখন কি হলো? হঠাৎ করেই প্রেমে লাট্টু হয়ে গেলে তো? কিন্তু এখন এটা বলতে গেলেই বলবে, “ড্যাড, প্লিজ? এইসব প্রেম ভালোবাসা আমি বুঝি না। আমার মেয়েটাকে চাই মানে চাই! আমার জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ওকে আমি আমার পাশে চাই।” উফ! জেদ বলি হারি।”

আভাস বাবু নিজের ঘরের দিকে এগোতে এগোতে আরেক দফা ভাবলেন,

“যখন জড়িয়ে ধরলো মনে হলো ওর পুরো শরীর ভিজে। তাহলে নির্ঘাত বৃষ্টি তে ভিজেছে। ওহ হ্যাঁ, সোহম তো বললো মেয়েটাকে বৃষ্টি তে ভিজতেই দেখেছে আর ছুটেছে। যে কি না বৃষ্টির কথা উঠলেই নাক সিঁটকাত। কি অবস্থা বাবা, যেগুলো পছন্দ করত না এখন সেগুলোই করছে আমার ছেলে। কি জানি আরও কত কি দেখতে হবে।”

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here