ফুলকৌড়ি (১৫) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
255

#ফুলকৌড়ি
(১৫)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

ইভানের হাসিখুশি সুদর্শন মুখখানা দেখতেই,যে কথাগুলো বলবে বলে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিলো,সেই সাজানো গোছানো কথাগুলো ভিতরের গিলে ফেললো নিভান।কন্ঠস্বর ভেদ করে ঠোঁট অব্দি নিয়ে আসলো না।হঠাৎই মন বলে উঠলো,তবে কি সে ইভানকে হিংসা করছে?সঙ্গেসঙ্গে মস্তিষ্ক বলে উঠলো,কখনোইনা।বাবার রক্ত আলাদা হলেও,ইভান মান্যতা তার জীবনের ভালো থাকার একেকটা অংশবিশেষ।তাদেরকে কোনোকিছুর বিনিময়ে কখনোই সে হিংসা করতে পারেনা।যে যতো প্রিয় জিনিসের বিনিময়ে হোক না কেনো,তাদের ভালো থাকার কাছে সেই প্রিয় জিনিস কিছুই না।হঠাৎই বুকের বা-পাশের যন্ত্রটায় ব্যথার টান অনুভব করলো।নতুনত্ব অনুভূতি।এই ব্যথার অনুভূতিটা জানা থাকলেও,নিজের মধ্যে কখনো অনুভব করেনি।সম্পর্কের কতো টানাপোড়েন চললো।নিজের কাছের মানুষগুলো থেকে কতো ব্যথার অনুভূতি পেলো।আপন মানুষ বিদায় নিলো।সেসবে ভীষন কষ্ট পেয়েছে সে কিন্তু এমন ব্যথার অনুুভব অনুভূতি হয়নি বুকের এই যন্ত্রটায়!তাহলে আজ কেনো এই ব্যথার উৎপত্তি!তবে কি?অদৃশ্য ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে নিজের মস্তিষ্কে যা ভাবতে চাইলো,সেই ভাবনাটা দূরীভূত করার চেষ্টা করলো নিভান।যেটা তার মন মস্তিষ্কজুড়ে শক্তপোক্তভাবে বাসা বাঁধতে চাইছে,তা হওয়ার নয়!এ কি টানাপোড়ন শুরু করলো তার মন মস্তিষ্ক!না চাইতেও তার সব ভাবনার শেষটা গিয়ে,সেই তাকেই জুড়ে ভাবতে বসে মন।যাকে সে ভাবতেই চাইছে না।তবুও কেনো তাঁকেই ঘিরে এই অনুভব, অনুভূতি, ভাবনা?

‘কিছু বলবে কি দাদাভাই?

ইভানের কথায় মূহুর্তেই নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো নিভান।মুখের আদলে সেই দৃঢ়তার ছাপ বজায় রেখেই বললো।

‘বিভিন্ন দেশের ভার্সিটিগুলোতে স্কলারশিপের আবেদন পত্র ছেড়েছে।তুমি এপ্লিকেশন করোনি?সময়তো আর বেশি নেই আবেদন করে ফেলা উচিত নয়-কি?

‘আমি তো দেশের বাহিরে পড়তে যেতে চাই-না।যেটা নিজের যোগ্যতায় হয়নি,সেখানে বাবা ভাইয়ের শত পরিশ্রমের টাকা নষ্ট করে নামীদামী ডিগ্রী নিতে চাইওনা আমি।আর এমনিতেও দেশের বাহিরে যেতে চাই-না আমি।সামনে বি-সি-এস পরিক্ষার জন্য প্রিপ্রারেশন নিচ্ছি।সেটাতেই সমস্ত মনোযোগ দেওয়ার ট্রাই করছি।

‘বাবার টাকা তোমার টাকা নয়-কি?তবে এরকম হেঁয়ালিপনা কথা কেনো বলছো?

দুর্বোধ্য হাসলো ইভান।বাবার টাকা!যেখানে সে নিজে উল্লেখ করলো,বাবা ভাইয়ের পরিশ্রমের অর্থ। সেখানে শুধু বাবার টাকা উল্লেখ করলো!দাদাভাই নিজেকে এখনো এতোটা পর ভাবে।হয়তো এবাড়ির কিছু মানুষের খোঁটা তার কঠিন মনকে আরও কঠিন করে দিয়েছে।মলিন হেসে সে বললো।

‘তবে কি সেই বাবার টাকা তোমার ছিলোনা?তুমি কেনো নাওনি।স্কার্লারশিপ পেয়েও,সুযোগ পায়ে ঠেলে দিলে।নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করলে যারজন্য?সেই ব্যবসাটা নিজে শ্রম দিয়ে পুনারায় দাঁড় করালে,সেই শ্রমের টাকা যদি তোমার নিজের না মনে হয়!তবে ভাইয়ের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের অর্থ কিকরে আমার অর্থ মনেহয়?সেই অর্থ কি শুধু আমার বাবার ভাবা উচিত?আর উচিত হলে-ও,আমি চাইনা সেই অর্থের ভাগিদার হতে।

শক্তপোক্ত চোয়াল আরও কঠিন্য রূপ নিলো নিভানের।
ইভানের যুক্তিসঙ্গত কথা তার মোটেও ভালো লাগিনি।দৃঢ় গলায় বললো।

‘নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ছেলেখেলা করোনা ইভান।সুযোগ বারবার আসেনা।আর সুযোগ হাতছাড়া করলে, সেটার জন্য আফসোস সারাজীবন আওড়াতে হয়।ফালতু ভিত্তিহীন লজিক দেখিয়ে নিজের ক্যারিয়ার বরবাদ করারা চেষ্টা করো-না।এটা আমার নয়,সেটা ওর।এসব বাচ্চামি খেয়ালীপনা ছেড়ে নিজের ক্যারিয়ার কিভাবে ঠিকঠাক জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়,কিভাবে সফলতার চূড়ায় উঠা যায়,সেটা নিয়ে ভাবো।সেদিকেই ধ্যান দাও।তুমি এখন আর সেই অবুঝ বাচ্চা ছেলেটা নও।

‘আমার ক্যারিয়ার নিয়ে মোটেই ছেলেখেলা করছিনা আমি।যেটা তুমি করেছো!আর দ্বিতীয় কথা হলো,আমি দেশের বাহিরে যেতে চাইনা।এটাই ফাইনাল।সেটাতে যদি সামনে আমার দ্বারা কিছু না-হয় না-হলো।আমার আফসোস থাকবেনা।বাবা ভাইয়ের পরিশ্রমের অংশ না নিলেও,বসেবসে নাহয় সারাজীবন খেয়েই ধ্বংস করলাম।সারাজীবন খাবারটুকু দিয়ে এই ভাইকে পুষতে পারবেনা?

নিভানের কঠিন মুখাবয়ব দেখে শেষের বাক্যগুলো মজার ছলে বললো ইভান।মূহুর্তেই কপাল কুঁচকে গেল নিভানের।এই ছেলে কি তারসাথে ফাজলামো করছে?
সিরিয়াস কথার মধ্যে ফাজলামো শুরু করলো?যদিও এটা ইভান,কখন কোন মুডে থাকে বলাবাহুল্য।সেটা শুধু সেইই জানে আর তার মর্জির উপর ডিপেন্ড করে।নিভানকে কপাল কুঁচকে শান্ত নজরে তারদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মনেমনে দুর্বোধ্য হাসলো ইভান।তার চিন্তা মাথা থেকে দূরীভূত করে ভাইয়ের মাথায় অন্য চিন্তা ঢোকাতে মুখে মৃদু হাসি টেনে ফের বললো।

‘আমার ক্যারিয়ার নিয়ে কি আর বাচ্চামো করবো বলো?আমার ইচ্ছে অনুযায়ী ক্যারিয়ারে যদি সাফল্য না আসে।সাফল্য অর্জনে যদি আমি দূর্ভাগা হই,আমার বাপ ভাইয়ের কি আর কম আছে নাকি?যেটুকু আছে তাতেই আমার আর ফুলকৌড়ির খেয়ে-পরে দিব্যি চলে যাবে।আমরা দু’জনেই কিন্তু খুব একটা বেশি চাহিদার মানুষ নই।যে আমার বাপের আর ভাইয়ের আমাদের দুজনকে পুষতে খুব একটা কষ্ট হবে।সো আমার ক্যারিয়ার নিয়ে অযথা টেনশন নিও-না,যেটা নিয়ে টেনশন করার,সেটা নিয়ে খুব ভাবো।আর ভেবেচিন্তে সমাধানের ব্যবস্থা করো।বলা যায় না এটা হারিয়ে গেলে,তোমার জীবনে নিজের চাওয়া পাওয়া বলে আর কিছুই না থাকলো।

মুড়ে দাঁড়িয়ে দুষ্ট হেসে আবারও গলা ছেড়ে গান ধরলো ইভান।সিঁড়ির ধাপে ধাপে পা ফেলে নিজের গন্তব্যে চলে গেলো।তবে পিছনের মানুষটাকে তার বলা বাক্যে বিমূঢ় করে রেখে গেলো।এগুলো কি বলে গেলো ইভান?ইভান এক কথার ছেলে।বলেছে যখন এপ্লিকেশন সে করবে না।সেটা নিয়ে না ভাবলেও,ইভানের শেষের কথাগুলো ভাবালো নিভানকে।বিমূঢ় করে দিলো একটা কথায়,তার আর ফুলকৌড়ির দিব্যি চলে যাবে মানে?
মানেটা কি তবে আজ খোলাসা করে বুঝিয়ে দিয়ে গেল ইভান!বুঝিয়েই দিয়ে গেলো তবে?খোলা হাত মুঠো হয়ে এলো নিভানের।হাতের তালুতে শক্ত আঙুলের চাপে মূহুর্তেই চামড়ার রগগুলো ফুলেফেঁপে টনটনে হয়ে উঠলো।নিজের অনুভূতি গুলোকে ভিতরে মাটি চাপা দেওয়ার প্রয়াসে শক্ত হয়ে এলো লম্বা চওড়া দেহ।তবে মন,তাকে মানাবে কিকরে?তবে সত্যিই কি তার নিজের চাওয়া পাওয়া বলে আর কিছুই থাকলো না।হঠাৎই মস্তিষ্ক বলে উঠলো,একেমন অদ্ভুত অবুঝ ভাবনা তোর!


মেয়ের নালিশ শুনেও চুপচাপ বসে আছেন ফাতেমা বেগম।এবাড়ির ছেলে বলতে উনার দূর্বলতার জায়গা।বিশেষ করে নাতীদের ক্ষেত্রে।সেখানে সেই নাতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ।তিনি আমলে নিলেন না। একমাত্র মেয়ে হওয়ার সুধাবে,মেয়েকে প্রচন্ড ভালোবাসেন।মেয়ের ভালোমন্দ কথা কাজে সঙ্গে দিতে বাধ্য হন।তাই
বলে নাতী আর মেয়ের মধ্যে হওয়া মলিন্যতার পক্ষ-বিপক্ষ করে কথা বলতে পারলেন না।বরংচ মেয়ের প্রতিই মনেমনে একটু অসন্তুষ্ট হলেন।কেনো ওই মেয়েটাকে সে এরকম খোঁটা দিয়ে কথা বলতে গেলো?এই একমাস যাবত মেয়েটা এবাড়িতে।কখনো তার অশোভন আচারন দেখেননি,চলাবলায় অশালীনতা পান-নি।নিজের নাতনিদের মতো হৈহৈ রৈরৈ করে কথাবার্তা বলতে শোনেননি।সবসময় শান্ত পদচারণে চলতে ফিরতে দেখেছেন।গায়ে মাথায় কি সুন্দর করে ওড়না দিয়ে ঢেকে ঢুকে চলাফেরা করে মেয়েটা।দেখলেই উনার কেমন ভালো লাগে।সেই মেয়েটার বিরুদ্ধে কথা বলতে যাওয়ার মানে হয়!দরকার ছিলো কি!আর-ও একটা সময় নিজের ছেলের দুরবস্থায় ওই মেয়েটার বাবা পরমআত্মীয়ের মতো সাহায্য করেছে।সেখানে সেই মেয়েটার সাথে কটু আচরন!এটা উনিও কাম্য করেন না।মেয়ের এই আচারন একটু-ও ভালো লাগলোনা উনার।যেকোনো কথাকাজে মেয়ের হয়ে সবসময় কথা বলেন তিনি।তবে এক্ষেত্রে কেনো জেনো মেয়ের সঙ্গ দিতে পারলেন না। বরং মেয়ের আচারনেই রুষ্ট হলেন তিনি।

‘তোমার কাজটা করা একদম ঠিক হয়নি।তোমার বড়ভাই জানলে কতোটা অসন্তুষ্ট হবেন বুঝতে পারছো?

আগুনের ঝলকানির ন্যায় ফুসে উঠলেন ডালিয়া বেগম।মা-ও এ-কথা বলছে।–আমি ভুল কি বলেছি?হ্যাঁ বলো?প্রথম রানী,তারপর নিভা….

ডালিয়া বেগমের কথা শেষ করতে দিলেন না ফাতেমা বেগম।কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বললেন।

‘ভুলে-ও নিভানের নাম মুখে নিও-না।অন্তত ওর বেলায় লাগাম টানো মুখে।নাহলে পরবর্তীতে কেউ ছোটো বড়ো কথা শুনালে,আমাকে বলতে পারবেনা।যার অগাধ পরিশ্রমের টাকায় এতো বিলাস-বহুল জীবনযাপন করছো,অন্তত তার বিরুদ্ধে কোনো কথাবলা অভিযোগ সাঝে না,না তোমার আর না এবাড়ির কার-ও।বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত করো ডালিয়া।আর কতোকাল অবুঝপনা করে চলবে,মেয়ে বিয়ে দিয়ে শ্বাশুড়ি হয়ে গেছো।এমন বিবেচনাহীন কথাকাজ আর তোমায় মানায় না।এবার একটু ভেবেচিন্তে কথাবার্তা বলা শেখো।

রাগ তো হলেন বিরক্ত হয়েও কথাগুলো মেয়ের বিরুদ্ধে বলতে বাধ্য হলেন ফাতেমা বেগম।ভিতরে ভিতরে জ্বললেও,আর কথা বাড়ালেন না ডালিয়া বেগম।আজ মা-ও উনাকে ছোটোবড় কথা শোনাচ্ছেন,বিষয়টাতে মনেমনে তিনি বেশ ক্ষুব্ধ হলেন।

নিজের রুমে চুপচাপ বসে আছে কৌড়ি।হঠাৎই একটু আগের ঘটনা ঘিরে মন খারাপ তার।সব সহ্য হলেও কারও খোঁটা সে সহ্য করতে পারেনা।সহ্য হয়-না তার।অথচ তার জীবটা এমন একটা পরিস্থিতিতে এসে ঠেকেছে সেখানে হয়তো খোঁটা ছাড়া সামনের দিনগুলো পার হবেনা তার।হঠাৎ মনেহলো, সে বাড়িতে থাকলে তো আর এসব শুনতে হতোনা,হবেওনা।আর না অন্যের ঝামেলা বা বাড়তি বোঝা হয়ে থাকতে হবে।নড়েচড়ে বসলো কৌড়ি।দাদীআপার সাথে কথা বলতে হবে।কথা বলার জন্য উদ্যোক্ত হতেই,মনে পড়লো।তার তো নিজস্ব কোনো ফোন নেই,তবে কার ফোন দিয়ে কথা বলবে সে?মান্যতা আপুতো তার রুমে এখনো ঘুমে।
আর মান্যতা আপু ছাড়া সহজে কার-ও ফোনে হাত দেয় না সে।দেওয়া হয়-না তার।দাদিআপার সাথে মাঝেমধ্যে কথা হয়,সেটা বড়মার ফোন থেকে।আর এখন যদি বড়মার কাছে ফোন চায়,দাদিআপার সাথে কথা বলার জন্য। নিশ্চয় তিনি বুঝে যাবেন।সে নিজ থেকে কেনো দাদিআপার সাথে কেনো কথা বলতে চাইছে।আর দাদিআপারও বিশেষ নিষেধাজ্ঞা আছে,যখন তখন ফোন দেওয়া।

ভাগ্য সুসম্পন্ন হওয়ায়,কৌড়ির ভাবনার মাঝে হঠাৎই ফোন হাতে প্রবেশ করলেন নীহারিকা বেগম।ব্যস্ত হাতে কৌড়ির দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললেন।

‘কথা বল দাদিআপা ফোন দিয়েছে।

কৌড়ি হাতে ফোন নিতেই,নীহারিকা বেগম ব্যস্ত পায়ে সামনে এগোতেই থেমে গেলেন।কৌড়ি কানে ফোন চেপে ধরেছে দেখে চোখের দ্বারা কিছু ঈশারা করলেন।কৌড়ি বুঝে ফেললো সেই ঈশারা।অর্থাৎ তিনি নিষেধ করছেন একটু আগে ঘটা ঘটনাটা দাদিআপাকে না জানাতে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে কৌড়িও মাথা নাড়িয়ে আশ্বস্ত করলো,সে জানাবে বা।এমনিতেই সে কখনো জানাতো না।চলে গেলেন নীহারিকা বেগম।ফোনে মনোযোগ দিলো কৌ্ড়ি।

‘ও আপা কথা কইস না ক্যান?ভালো আছিস তুই?

নড়েচড়ে বসলো কৌড়ি।মনোযোগ দিল ফোনের অপর প্রান্তের মানুষটার কথায়।–‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুমি কেমন আছো দাদিআপা?

কৌড়ির আলাপনের জবাব দিয়ে আরও ভালোমন্দ কথা বলতে,জানতে থাকলেন তিনি।যা প্রায়সই ফোন দিলে তিনি জেনে থাকেন কৌড়ির থেকে। মা বাবা হারা এতিম নাতনী উনার।সব থাকতেও যে কারনে অন্যের আশ্রয়ে পাঠালেন।অন্যের আশ্রয়ে আশ্রিত হলো নাতনীটা।সেখানে মেয়েটা ভালো আছে কিনা সেটার বিষয়ে তো খেয়ালী থাকতেই হবে উনার।শুনেছেন ওবাড়িতেও নাকি উপযুক্ত দু’দুটো ছেলে আছে।যে ভয়ে মেয়েটাকে ওখানে পাঠালেন।সেখানে সেই জাতীয় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা নাতনীটা।তাদের চালচলন স্বভাব ব্যবহার কেমন?সেখানে উনার নাতনীটা ঠিকঠাক ভালো আছে কি-না,জানাটা যে দ্বায় উনার।না-হলে পরকালে ছেলের কাছে গিয়ে জবাব দিবেন কি-করে!আর এমনিতেই কৌড়ি উনার পরাণ।যে পরাণটাকে একটু স্বস্তি শান্তিতে বাঁচতে দেওয়ার জন্য, নিজের কাছ থেকে দূরে পাঠানো।পাঠাতে বাধ্য হলেন তিনি।তবে দূরে পাঠানোটা উনার মনেহয় স্বার্থক হয়েছে।ওবাড়ির মানুষগুলোর সম্পর্কে কৌড়ির থেকে তো সেই ধারণা হয়েছে উনার।মেয়েটা বরাবর ওবাড়ির মানুষগুলো সম্পর্কে ভালো ছাড়া খারাপ বলেনি।আর কৌড়ি যে সহজে উনাকে মিথ্যা বলবেনা,এটা উনি জানেন।আর নাতনী মিথ্যা বললে তিনি ধরতে পারেন।সেই শূন্য বয়স থেকে যে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন কি-না।

‘ও দাদিআপা,আমার না তোমার কাছে যেতে খুব মনে চাইছে।নিয়ে যাওনা আমারে।এমনিতেই তো সামনে পরিক্ষা তখন তো যেতেই হবে।আমাকে নিয়ে যাওনা তোমার কাছে,আমার না এখানে থাকতে একটুও ভালো লাগেনা।সবকিছু কেমন পরপর মনেহয়।এমনিতেই তো এখানে আমার কিছু বলে নেই।

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মাজেদা খাতুন।বললেন–আমার কাছে রাখার সুযোগ,নিরাপত্তা থাকলে,আমার ছেলেডা মরতে না মরতে তোরে কি আর আমি অন্যের আশ্রয়ে পাঠাইতামরে আপা।কেনো বুঝোস না,আমার ছেলেহীন তুই এখানে থাকলে ওই অমানুষটা তোর মতো ফুলকে ছিড়েখুঁড়ে নষ্ট কইরা দিতো।তোর বাপ মরছে তা কি আর মানতো,ওই রাতেই তোরে জোরজবরদস্তি করে বিয়া করতো।আমি পারতাম ওদের ঠেকাইতে?আর না ও মানুষ হইলে আমি তোরে আমার থাইকা দূরে রাখতাম?অন্যের আশ্রিতা হতে দিতাম কখনো?তুই চলে যাওয়ার পর ওই অমানুষটা আরও ক্ষেপেছে,বলেছে যেভাবে হোক ও তোরে তুলে নিয়ে আসবে।তারপর নিজের স্বাদ পূর্ণ করবে।কতোবড় জানোয়ার হইলে আমার সামনে দাড়াইয়ে চোখ রাঙিয়ে এসব কথা বলে।তারপরও তোরে আমার কাছে রাখার সাহস করি কিকরে আপা?আমি পারতাম ওই অমানুষটা থেকে তোরে আগলে রাখতে?হয়তো পারতাম,যদি তাের চাচা আমার ছেলেডা মানুষ হইতো।কি যে পেটে ধরছিলাম, অমানুষের ঘরে আরেকখান অমানুষ হইছে।এবার বল,
আমি কি আর ইচ্ছে করে আমার থাইকা দূরে পাঠাইছি তোরে আপা?ইচ্ছে করে পাঠাইনি।

শেষের বাক্যগুলোয় হাহুতাশ করে আওড়াতে থাকলেন মাজেদা খাতুন।কথাগুলো নীরবে শুনলো কৌড়ি।সে চলে আসার পর কি হয়েছে তার জানা নেই।তবে কি হতে পারে, কিছুটা হলেও আন্দাজ আছে।আর দাদিআপা যে তাঁকে সব খুলে বলবেনা,এটা-ও তার জানা।সে আদরের নাতনি হওয়ার সাথে সাথে ওই অমানুষটাও যে তার নাতী।কৌড়িকে চুপ থাকতে দেখে হঠাৎই মাজেদা খাতুন শুধালেন।

‘ও আপা,তুই হঠাৎ আমার কাছে আসবার জন্য পাগল হইলি ক্যান? ওবাড়িতে কেউ তোরে কিছু কইসে?

নিজের ভবিতব্যের উপর আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেললো কৌড়ি।জবাব দিলো–না দাদিআপা।কে কি বলবে আমাকে।এবাড়ির সবাই খুব ভালো।আর আমাকে-ও সবাই খুব ভালোবাসে।আমার এমনিতেই তোমার কাছে যেতে মন চাইছিলো,তাই বলছিলাম।তোমাকে কতোদিন দেখিনা বলোতো?যে তুমি আমার মাথায় হাত না বুলিয়ে দিলে রাতে ঘুম আসতো না।গালে তুলে না খাওয়ালে আমার খাওয়া হতোনা।চুল না আঁচড়িয়ে দিলে ওভাবেই এলোমেলো জটবেধে পড়ে থাকতো সব।সেই তোমাকে ছাড়া কতোদিন পেরিয়ে গেলো বলো তো?এখন আমাকে একা সব করতে হয়।তখন তোমাকে খুব মনে পড়ে,তোমার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে হয়।

কৌড়ির ভাঙা ভাঙা গলার কথাগুলো শুনে মাজদা খাতুন মন খারাপ করলেন।বৃদ্ধ মন কেঁদে উঠলো।তবে মেয়েটার কথায় ভেঙে পড়লে, দূর্বল হলে চলবে না।না হলেও মেয়েটা আর-ও দূর্বল হয়ে পড়বে।কৌড়ি ফের বললো।—ও দাদিআপা,আমাকে যেতে নিষেধ করছো।তবে তুমি আমার কাছে চলে এসো।আমরা দু’জন ছোটো একটা বাসা নিয়ে সেখানে দুজনে সংসার পাতবো।তবে আর কোনো সমস্যা থাকবেনা, ঝামেলা হবেনা।

এটা তিনি-ও ভেবেছিলেন মেয়েটার কাছাকাছি থাকার জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে নিজের অমানুষ নাতীর কথা ভেবেচিন্তে দমে রয়েছেন।কৌড়িকে আশ্বস্ত সরূপ বললেন।—আমারে আরও একটু সময় দে আপা।আমি নিশ্চয় তোর কাছে আইসা থাকবো।এখন একটু মানাইয়া গোছাইয়া থাক।যদিও পরের বাড়ী, নিজের বাড়ির মতোন থাকোন যায় না।তবুও।তুই আমার শান্তশিষ্ট খুব ভালো ফুলকৌড়ি না। মন খারাপ করে না আপা।সব ভালো হইবো দেখিস।

কৌড়ি আর কিছু বললোনা।নিঃশব্দে চোখের পানি পড়ে গেলো শুধু,তবে গলা স্বাভাবিক রেখে কথা বলার চেষ্টা করলো।নাহলে,তাকে ভালো রাখতে চাওয়া ফোনের ওপাশের বৃদ্ধা মানুষটা যে আরও মন খারাপ করবে।দুজনের মধ্যে আরও কিছুসময় কথা চললো।একটা সময় গিয়ে কথা শেষ হলো দু’জনের।ফোন রেখে এবার হুহু করে কেদে ফেললো কৌড়ি।তার একটা সুষ্ঠু সুন্দর পূর্ণ পরিবার থাকলে কি ক্ষতি হতো?কেনো এমন অভাগা হলো সে?আর এমনও কেনো হলো তার ভবিতব্য?কেনো?


সকাল থেকে নীহারিকা বেগমের মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে।হাতে দুরন্তপনায় কাজ চললেও,কথা পরিমানের তুলনায় কম বলছেন তিনি।বিষয়টা লক্ষ্য করলেন জাহিদ সাহেব।বুঝতে পারলেন,বিশেষ কোনো বিষয় নিয়ে স্ত্রীর মুড খারাপ হয়ে আছে।সারাদিনে কিছু না বললেও,রাতে খাবারের সময় তিনি জিজ্ঞেস করেই ফেললেন।—কি হয়েছে নীহারিকা?শরীর খারাপ নাকি অন্যকিছু হয়েছে তোমার?মুড এতোটা বিগড়ে আছে কেনো?

সারাদিনের ধৈর্যের বাঁধ বুঝি মূহুর্তেই চূর্ণ হলে উনার।গলায় ক্ষোভ নিয়ে বললেন– আপনার বোনকে আচার ব্যবহারে সাবধান হতে বলুন।মুখে লাগাম টেনে কথা বলতে বলবেন।সারাটাজীবন তার কটুবাক্য সবাই শুধু শুনে যাবে,আর তার এলেবেলে আচরণ সহ্য করবে!এমনটা কিন্তু আর চলবে না।এতোকাল সব মেনে নিয়ে চলতে দিয়ে আসলেও এবার কিন্তু তা আর আমি চলতে দেবো-না।মেনে নেবো না।আমার সংসারে এসব কিন্তু আমি আর সহ্য করবোনা।বহুত হয়েছে আর নয়।
আমাকে-সহ আমার ছেলেকে কম বলেনি।নীরবে সব সহ্য করেছি,কখনো ওর মতো হয়ে খারাপ কথা শোনাতে পারিনি।নীরবে সহ্য করতে হয়েছে আমাকে।এখন আবার ওই মেয়েটার পিছে লেগেছে।বয়স হয়েছে অথচ জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি সেই আগের মতোই রয়ে গেছে।লোপ পেয়েছে ছাড়া বৃদ্ধি পায়নি।সবকিছুর একটা সীমা থাকা উচিত।সীমা লঙ্ঘন হয়ে গেলে,পাপ কিন্তু বাপকেও ছাড়েনা।অন্যের পিছে লাগা বাদ দিয়ে নিজের মেয়ের কথা ভাবতে বলুন।

খাবার মুখে তুলতে ভুলে গেলেন জাহিদ সাহেব।নীহারিকা বেগমের তেজস্বী মুখের দিকে নির্বাক নজরে তাকিয়ে রইলেন।ডালিয়া এসেই শুরু করে দিয়েছে।এই মেয়ের স্বভাব ব্যবহার কি আর কখনো ভালো হবেনা।মনেমনে খুবই বিরক্ত হলেন বোনের আচারনে।নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে ঠান্ডা গলায় শুধালেন।—ডালিয়া কি বলেছে কৌড়িকে।

যদিও আন্দাজ করতে পারলেন,ডালিয়া কটুবাক্য হিসাবে কৌড়িকে কি বলেছে।তবুও শুধালেন।নীহারিকা বেগমও ক্ষুব্ধ হয়ে একে একে বর্ননা করলেন সকালের ঘটনা।তিনি বলতেন না,তবে সবকিছুর একটা সীমাবদ্ধ বলে জিনিস আছে তাইনা?সারাটাজীবন একটা মানুষ একই আচারন স্বভাবে কি-করে অটল থাকতে পারে!
সহ্য তিনিও কম করেননি।তবে সংসারে অশান্তির ভয়ে আর নিভানের মুখ চেয়ে সয়ে গেছেন সব।বিয়ের পর যে মেয়েদের বাপের বাড়িও পর হয়ে যায়,সেখানে তিনি ছিলেন বিধবা! আবার এক ছেলের মা।বাধ্য হয়ে সইতে হয়েছে উনাকে।তবে আর কতো!মুখ তো একটা সময় গিয়ে খুলতেই হতো।যদিও তিনি সেই স্বভাবের নন।বরং ছোটোজাকে আরও বেফাঁস বলা থেকে আঁটকে রাখেন, রাখার চেষ্টা করেন বরাবর।সেই উনারও ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।

‘তুমি শান্ত হও।অযথা প্রেশার বাড়িও না,আমি দেখছি।এখন আর নয় কাল ওরসাথে কথা বলে নিচ্ছি আমি।

‘কথা বলার সাথে সাথে,ওই মেয়েটার দাদি আপার পাঠানো কাগজপত্রগুলোও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখিয়ে দেবেন।আর বলবেন সবাই তোমার মতো মন মানসিকতার হয়না।বিবেচনাবোধও তোমার মতো নয় সবার।মেয়েটাকে এখানে শুধু শুধু অন্যের অন্ন,অর্থ ধ্বংস করার জন্য আশ্রিতা সরূপ পাঠানো হয়নি।ওই মেয়েটাকে দ্বায়ে পড়ে এখানে থাকলেও,অনাথ নয়।

মনের মধ্যে জন্মানো এতোদিনের কিছু ক্ষোভ ক্রোধ মিশিয়ে আরও কিছু কথা বললেন নীহারিকা বেগম।তা নীরবে শুনে গেলেন জাহিদ সাহেব।কি বলবেন তিনি, বোনের স্বভাব সম্পর্কে তিনি অবগত।আর এই নারীটা, এই সংসারে এসে তো কম সহ্য করেনি।সহজে কখনো মুখ খোলেনি,উনার কাছে নালিশ জানায়নি,কোনোকিছু প্রকাশ করেনি।নীরবে সয়ে গেছেন। তবে তিনিতো জানেন বোনের সম্পর্কে।কিছু কিছু সময় সেসব কথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন, কিছু কিছু সময় নীহারিকার কথা শুনে চুপ থেকেছেন।আজ সেই নারীটা ক্ষুব্ধ হয়েছে।নিশ্চয় বিষয়টা অধৈর্য্যর পর্যায়ে চলে গিয়েছে ব্যাপারটা।নাহলে এতোটা ক্ষুব্ধ তো কখনো হয়না এই ধৈর্য্যশীল শান্ত নারীটা।

রোজকার মতো সকালের এই সময়টা বাড়িটা ফাঁকা।খাবার খাচ্ছিলো কৌড়ি।মৌনতার স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলে তাকে কলেজে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।বিগত সপ্তাহ ধরে কলেজ যাওয়া আসা করছে সে,কলেজে কিছু চেনা পরিচিত সল্প সংখ্যক মুখ হয়েছে।তবে মৌনতার সাথে কলেজে যাওয়ার আসার সুযোগ সুবিধা থাকলেও, যাওয়া আসা হয়না তার।কেননা,মৌনতার ক্লাস হয় দুই শিফটে।সকাল সাড়ে আটটা থেকে বারোটা অব্দি একটা শিফট।তারপর থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত একটা শিফট।মৌনতা সকালের শিফটে ক্লাস করে।বিধায় তাকে স্কুলে বের হতে হয় সাড়ে সাতটার দিকে।আর কৌড়ির কলেজ শুরু হয় দশটায়।বিধায় অত সকালে মৌনতার সাথে যাবার কোনো মানেই হয়না।তাই সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও মৌনতার সাথে যাওয়া আসা কোনোটাই হয় না।এই নিয়ে মেয়েটার মন খারাপের শেষ নেই।মন খারাপ তারও হয়,তবে কি আর করার।

প্রথম কয়েকদিন কলেজে যাওয়া আসায় একটু অসুবিধা হলেও এখন আর সমস্যা হয়-না।রাস্তাটা খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করে নিতে পেরেছে সে।সোজা রাস্তা।কলেজের সামনে থেকে সিএনজিতে উঠলে সোজা মোড়ের মাথায় এসে নামিয়ে দেয়।আর সেখান থেকে বাড়ি দু’মিনিটের রাস্তা।বিগত সপ্তাহে যাবার সময়টা মান্যতা আপুর সাথে গেলেও,আসার সময়টা প্রায় ইভান ভাইয়া নিয়ে এসেছে তাকে।আবার ছুটির আগের দিন সে একা এসেছে।আজ মান্যতা আপুর সকালের দিকে একটা ক্লাস থাকায়, আজ সকাল সকাল চলে গিয়েছে সে।যাবার আগে অবশ্যই জিজ্ঞেস করে গিয়েছে,কৌড়ি একা-একা যেতে পারবে কি-না? কৌড়ি বলেছে পারবে।আর না পারলে নীহারিকা বেগম বলেছে, বাড়ির গাড়িতো আছে।কৌড়িকে পৌঁছে দেবে।
তাই আজ কলেজে যাবার জন্য সবার শেষে পড়ে গিয়েছে সে।

‘মা,আমাকে খেতে দাও।

ভারিক্কী পরিচিত গলার স্বরটা শুনতেই প্লেটে হাত থেমে গেলো কৌড়ির।মূহুর্তেই জড়তা অস্বস্তি ঘিরে ধরলো তাকে।সেদিনের পর থেকে মানুষটাকে সেভাবে আর ভয় পায়না সে।তবে সংকোচ দ্বিধা রয়েই গেছে।মানুষটা আশেপাশে থাকলে সেটা খুবই গাঢ়ভাবে কাজ করে।হয়তো ইভান ভাইয়ার মতো মানুষটা খোলামেলা মনের হলে,এই জড়তা-সংকোচ কাজ করতোনা।দেখা সাক্ষাৎ বা কথা হয়না বললেই চলে।আর এই ধরনের গম্ভীর মানুষের সামনে সত্যি বলতে,কৌড়ির চলতে ফিরতে, কথা বলতে ভিষণ দ্বিধা হয়।এবাড়িতে আসার
প্রথম প্রথম তো ইভান ভাইয়ার সামনেও আড়ষ্টতা কাজ করতো,কিন্তু তার যেচে যেচে কথা বলা, চাঞ্চল্যে স্বভাব সেই আড়ষ্টতা দূর করে দিয়েছে।

‘কি হলো!থেমে আছো কেনো,খাচ্ছো না কেনো?

ভারিক্কী গলার বাক্যগুলো তাকে ঘিরে বুঝতেই চোখ বন্ধ করে মাথা আরও নুইয়ে ফেললো কৌড়ি।হা পায়ের নড়নচড়ন থেমে গলো মূহুর্তেই,পুরো শরীর জেনো অবশ অবশ লাগলো।হৃৎস্পন্দন জেনো তার গতিধারা ছেড়ে আরও দ্বিগুণ হারে লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে থাকলো।নিজের বেহালদশা অনুধাবন করে নিভানকে মনেমনে প্রবোধন করতে লাগলো,কৌড়ি।জিজ্ঞেস করার কি দরকার ছিলো?তিনি এখানে এসেছেন এটা কি কম পড়েছিলো!

কৌড়ির নীরবতা,তাকে দেখে অকারণে এই নুইয়ে পড়া হঠাৎই নিভানকে রাগিয়ে দিলো।বুঝে আসেনা,তাকে দেখলে মেয়েটা এরকম অদ্ভুত আচারন করে কেনো?অথচ নাফিম আর ইভানের সাথে কি চমৎকার বন্ডিং তার।ইভানের নামটা মস্তিষ্কে ধরা দিতেই,কৌড়ির উপর অকারণে রাগ জেনো দ্বিগুণ চড়াও হলো নিভানের।কারণ ছাড়া ধমকে উঠে বললো।

‘এই সমস্যা কি তোমার,আমি সামনে এলেই তোমার কি হয়?সবার সামনে তো ঠিকঠাকই থাকো।আমি কি অদ্ভুত প্রানী,যে আমি দেখা দিলেই তোমার শুরু হয়ে যায়।হয়তো নুইয়ে পড়ো না-হলে লুকোচুরি খেলা শুরু করো।হোয়াই?টেল মি?হোয়াট ইজ ইয়োর প্রবলেম?

আচমকা ঘাড় উঁচু করে নিভানের মুখের দিকে তাকালো কৌড়ি।কাটকাট আদলের পরিপাটি শ্যামবর্ণ গম্ভীর মুখখানা দেখতেই বুক ধুকপুক করে উঠলো তার।হঠাৎ মানুষটা তার উপর রেখে গেলো কেনো বুঁজে আসলো না।বিধায় সব অনুভূতির উর্ধ্বে গিয়ে আচমকা মাথা উঁচু করে তাকিয়ে পড়েছে সে।ভারা দিঘির টলটলে সচ্চ জলের ন্যায়,ডগর ডগর নয়নজোড়া,নিজের নয়নে বাঁধা পড়তেই ক্ষোভিত গলার স্বর থেমে গেলো তার।ক্রোধিত নজর হয়ে গেলো শীতল।হৃদস্পন্দন থেমে গেলো নিভানের।জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়ার মতো নেশাধরানো দু’টো নজর।

‘কি হলো,হঠাৎ ওর উপর রেগে গেলি কি কারনে?কি করেছে ও?এভাবে বকছিস কেনো?

নিভানের চড়াও গলা শুনতেই রান্নাঘর থেকে ছুটে একপ্রকার ছুটে এসে কথাগুলো বলবেন নীহারিকা বেগম।হঠাৎ ছেলে কৌড়ির উপর রেগে গেলো কেনো?মেয়েটা তো চুপচাপ খাচ্ছিলো,তবে নিভানের কি হলো?কৌড়ি আগেই মাথা নিচু করে নিয়েছিলো।মায়ের কথার উত্তর না দিয়ে বড়বড় কদম ফেলে সামনে এগিয়ে গেলো নিভান।খোলা চোখে-ও ভেসে বেড়াতে থাকলো একটু আগের ডাগরডাগর সচ্চ টলটলে আঁখি যুগল।রাগমিশ্রিত মৃদুস্বরে মুখে বিড়বিড়ালো সে।

‘উফ,এই মেয়ে তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিবে।

অথচ নীহারিকা বেগম পিছে থেকে ডাকতেই থাকলেন কিন্তু কানে তুললো না নিভান।বড়বড় পা ফেলে চলে গেলো সে।ড্রয়িংরুম পার করতেই ইভানের সাথে দেখা হলো তার।মিটমিটিয়ে হাসছে ছেলেটা।হাসিটা জেনো কোনো ক্রমেই সহ্য হলোনা।দিল, কলিজা,সব জ্বালিয়ে দিলো।মনেহলো তাকে কেউ উত্তাপ্ত আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তার সবকিছু ছারখার করে দিচ্ছে।নিঃশেষ করে দিচ্ছে তাকে।

চলবে….

নেক্সট তো, দেরী হোক বা তাড়াতাড়ি এমনিতেই আমি দেবো।সুতারাং প্লিজ কেউ নেক্সট নাইস,এগুলো না লিখে,আমি যেমন আপনাদের জন্য লিখি আপনারাও তেমন আমার জন্য দুকলম লিখে আমাকে উৎসাহিত করুন।

ভালোবাসা ও ধন্যবাদ আমার শুভাকাঙ্ক্ষী সবাইকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here