ফুলকৌড়ি (১৪) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
192

#ফুলকৌড়ি
(১৪)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

আগুনের একটুকরো ফুলকি জেনো ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ ছুঁড়ে দিলো মুখের উপরে।ঠিক এমনটা অনুভব করলেন ডালিয়া বেগম।আর-ও ব্যথিত হলেন,নিজের প্রিয় ভাইপো ইভানকে কথাটা বলতে দেখে।নিভান হলে নাহয় মানতে পারতেন কিন্তু ইভান!যদি-ও ইভান গালকাটা স্বভাবের।তাই বলে উনাকে এমন ধারার কথা বলতে পারলো?একটু-ও মুখে বাঁধলো না!আর কার সাথেই বা কার তুলনা করলো!নিজের আপন ফুপুর সাথে বাহিরের মানুষের তুলনা!অঙ্গারের ন্যায় শরীর জ্বলে উঠলো উনার।আলস্য ভঙ্গিতে এগিয়ে আসা ইভানের দিকে মূহুর্তেই কর্কশ কন্ঠে শব্দ ছুড়লেন।

‘তুই কার সাথে কার তুলনা করছিস ইভান?

সহসা উত্তর দিলো ইভান।—কেনো?মানুষের সাথে মানুষের তুলনা করছি।আপনি মনেহয় আপনার লেভেলের মানুষকে ছাড়া আর কাউকে মানুষ ভাবতে পারেন না।নাকি ইদানীং আপনার লেভেলের নিচের মানুষগুলোকে মানুষ ভাবা বন্ধই করে দিয়েছেন?যেখানে একই সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহ) সৃষ্টি আপনি,আমি, তারা সবাই।

মুখাবয়ব কঠিন্য করে ফেললেন ডালিয়া বেগম।ইভান এভাবে তারসাথে কথা বলতে পারেনা!মূহুর্তেই অগ্নিশর্মা ধূর্ত নজর ঘুরিয়ে আনলেন নিজের চারপাশটাজুড়ে। রান্নাঘরে চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে উনার দুই ভাবি।বুঝলেন উপস্থিত ব্যক্তিগুলো কেউ উনার পক্ষ নিয়ে কথা বলবেন না।তাই নিজের হয়ে নিজেই কঠিন গলায় প্রতিবাদ জানালেন।

‘আমি কিন্তু এবাড়ির হকদার।একমাত্র মেয়ে।বাহিরের মানুষের সাথে কিন্তু এভাবে আমার তুলনা চলেনা।আর তুলনা দিতে পারিসও না তুই!

ফুপুমনির সামনে সটান এসে দাড়ালো ইভান।নিস্প্রভ চোখে উনার দিকে চেয়ে বললো।-পারিনা বলছেন!কিন্তু কেনো? আপনি যদি এবাড়ির হকদার হয়ে থাকেন,তবে যাদের উদ্দেশ্য করে বিষাক্ত বানী গুলো বললেন,তারাও কোনো না কোনোভাবে এবাড়ির হকদার।রক্ত সম্পর্কিত না-হলেও,এবাড়ির আপনজন।তা না-হলে আপনার শ্রদ্ধেয় মৃত বাবা,ভাইজান,এবাড়িতে তাদেরকে থাকতে দিতেন না। রাখতেন না অযথা।

‘তুই এভাবে আমার সাথে কথা বলতে পারিসনা ইভান।

ফুপিমণির সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো ইভান।ধপ করে গিয়ে বসলো নাফিমের পাশের চেয়ারটায়।নাফিম খাওয়া বাদ দিয়ে মুখ ভার করে বসে আছে।নজর পড়লো সামনে বসা কৌড়ির পানে।মেয়েটা খাচ্ছেনা।শুধু হাত দিয়ে ভাত নেড়ে যাচ্ছে নীরবে।টুপ করে কয়েক ফোঁটা চোখের পানি প্লেটে পড়তেই,চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।চেয়ার সমেত ফুপুমনির দিকে ঘুরে বসলো সে।শক্ত গলায় বললো।

‘আমি যেমন পারিনা,আপনার সাথে এভাবে কথা বলতে।তেমন আপনিও পারেন না এভাবে কাউকে ছোট করে কথা বলতে।সম্মান দিতে শিখুন,তবে সম্মাননা এমনিতেই পেয়ে যাবেন।এভাবে রাগ দেখিয়ে হুঙ্কার ছেড়ে চেয়ে পেতে হবেনা সম্মান।

কথাগুলো বলে ফুপুমনিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে মা’কে উদ্দেশ্য করে বললো—মা খেতে দাও আমাকে।

সুক্ষ অপমানে শুভ্র মুখখানা রক্তিম আভায় ছেয়ে গেল ডালিয়া বেগমের।আগুন ঝরা নজর দিয়ে আশপাশটা একবার দেখে নিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে গটগট করে চলে গেলেন তিনি।

দোতলার খোলা বারান্দার দাঁড়িয়ে আছে নিভান।সুগভীর,স্থির নজরটা তার ড্রয়িংরুম পেরিয়ে ডায়নিং স্পেসটায়।ফুফুমনির বলা তীর্যক বাক্য সে না শুনলেও,মেয়েটার হয়ে ইভানের বলা প্রতিটি বাক্য সে শুনেছে।অচেনা মেয়েটাকে যে ফুপুমনি তার চরিত্র বোঝাতে নিজের জবানের কটুবাক্য গুলো শুনাতে দ্বিধাবোধ করেন নি এটাও বেশ বুঝলো।তবে ফুপুমনিকে তার নখদর্পে।তাই সেসব বাদ দিয়ে আবার-ও ইভানকে বোঝার চেষ্টা করলো সে।মেয়েটার হয়ে ফুপুমনির বিরুদ্ধে গিয়ে,উনাকে কথা শোনানো!ইভান কি মেয়েটার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে?তবে কি মেয়েটাকে তার সত্যিই পছন্দ?নাহলে ফুপুমনিকে এতো কথা শোনালো কেনো?একটা সময় এই ফুপুমনির কুটনৈতিক বাক্যগুলো ঘিরে তাদের দু-ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল তৈরী হয়।দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্কের এই জড়তা,এই দুরত্ব সবকিছু ঘিরে ওই ফুপুমনি।যদিও ইভানের তখন অপরিপক্ক বয়স ছিলো।আর সেই বয়সে ফুপুমনি ব্রেনওয়াশ করার জন্য যে ছলাবলা কথাগুলো বলতো,ছেলেটার ব্রেন তা ভয়ঙ্করভাবে জড়িয়ে নিতো।তারপর শুরু হতে থাকলো,সম্পর্কের টানাপোড়েন।দুই ভাইয়ের মধ্যে কতো মধুর একটা সম্পর্ক,একটা নৈকট্য বন্ধন ছিলো।সেটা আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায়।যখন নিজ থেকে ইভান বুঝতে শুরু করলো,তখন সম্পর্কে এতো অবনতি এতো দুরত্ব চলে এসেছে,চেয়েও আর ইগোর খাতিরে কেউ আর সেই আগের মধুর বন্ধটাতে এগোতে পারিনি।সেই ইভান এখন নিজের সাথে সাথে,নিজের আপনজনদের ভালোমন্দটা-ও বুঝতে শিখেছে।তাদের হয়ে ভালোমন্দ স্ট্রেইট স্টেপ নেয় এবং নিচ্ছেও।

হঠাৎ নিভানের মস্তিষ্ক খেয়ালী হলো।তখন যে ইভান বললো,মেয়েটা তার আপনজনদের মধ্যে-ও একজন।তবে কি,তার মন ইভান আর ওই মেয়েটাকে ঘিরে যেটা ভাবছে।সেটারই ইঙ্গিত দিলো ইভান তার কথা-কাজে।
হঠাৎ আবার মনেহলো,এসব কি ভাবছে সে!যদি তাই হয়ে থাকে তবে তারও বা সমস্যা কোথায়?যদি সমস্যাই বা না থেকে থাকে তবে এমন আবোলতাবোল ভাবনা বারবার মন মস্তিষ্কে ঘুরছে,ভাবছেই বা কেনো?আর সেই ভাবনাতে ডুবে আছেই বা কেনো সে?কি হলো তার মনের,এমন অদ্ভুত অহেতুক ভাবনাতো কখনো ভাবনাতে আসিনি তার!এমন ভাবনা কখনো ভাবিওনি তার মন মস্তিষ্ক।তবে আজ কেনো?শুধু আজ তো নয়, ইদানীং মস্তিষ্কে ভাবনাগুলো কিলবিল করছে।সে তো প্রশ্রয় দিতে চাইছেনা,তবুও জবরদস্তি করে ভাবনাগুলো যেনো সেখানে নিজের জায়গা পোক্ত করে নিয়েছে।কি এক জ্বালা!কি এক যন্ত্রণায় নিভৃতে ভুগছে সে !কি নাম এ-জ্বালার, এই নিভৃতে পাওয়া যন্ত্রণার!

নজর আরও দৃঢ় হলো নিভানের।সেই দৃঢ় নজর পড়লো কৌড়ির মাথা নিচু করে খাওয়ার পানে।মেয়েটার মাথায় ওড়না টানা।বিধায় মুখ দেখাচ্ছে না।আর ওখানে যে তাকে ঘিরে,অতশত কতা হলো তবু্ও মেয়েটা মাথা উঁচু করে তাকায়নি।মেয়েটার কি খুব মন খারাপ?হঠাৎ মস্তিষ্ক সজাগ হলো,বললো।তুই আবারও মেয়েটার কথা ভাবছিস!উফফ!মস্তিষ্কের উপহাসের বানীতে ভাবনা সেখানেই ক্ষান্ত রাখল নিভান।মৃদুস্বরে মুখে আওড়ালো।

‘কেনো এলো এই যাদুময়ী তার জীবনে।

খাবার টেবিলে বসা মানুষগুলো চুপচাপ।মায়ের কাছে খাবার চাইলেও তিনি এখনো এখানে আসেননি। গুমোট পরিবেশ চনমনে করতে ইভাননাফিমকে উদ্দেশ্য করে বললো—এই পিচ্চু তুই এরকম না খেয়ে হুতুম পেঁচার মতো মুখ করে বসে আছিস কেনো?নাকি ছোটো-মা আজ খাইয়ে দিচ্ছে না বলে এরকম মুখ বানিয়ে বসে আছিস?

কোনো অভিব্যক্তি দিলো”না নাফিম।সে যতোই দুষ্ট থাকুক,কারও মন খারাপ দেখতে পারেনা।এমনি সময় মা বোনকে মহাবিরক্ত করলে বা জ্বালালেও,মা যখন মন খারাপ করে কোনো কিছু বলে,তখন সে কতো ভালো বাচ্চা হয়েযায়।তখন বিনাবাক্যবয়ে মায়ের সমস্ত কথা মানে।সেখান ফুপুমনির কথায় তার সামনে বসা মেয়েটাকে মন খারাপ করতে দেখে।তার মোটেও ভালো লাগিনি।এমনকি ফুলকৌড়িকে নীরবে কাঁদতে দেখে তার আরও বেশি খারাপ লেগেছে।তাই খাবার না খেয়ে চুপ হয়ে বসে আছে।এখন কারও কথা তার ভালো লাগছেনা।বাচ্চা ছেলেটার মনে বেশ ইফেক্ট পড়েছে কৌড়ির কান্না দেখে এটা বুঝতে পারলো ইভান।তার নিজেরই খাবাপ লেগেছে, খাবারের প্লেটে মেয়েটার চোখের পানি পড়তে দেখে,সেখানে নাফিমতো বাচ্চা ছেলে।মন তো খারাপ হওয়ারই কথা।নাফিম আর কৌড়ির মন থেকে ফুপুমনির কদর্য ব্যবহারটা দূরীভূত করতে সে বললো।

‘আমার কি মনে হয় জানিস!ভাবছি আজ ছোটোমাকেও বলবো আমার ভাবনার কথা?যে আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে সিরিয়ালে আগে দাদাভাইকে বিয়ে না দিয়ে তোকে আগে বিয়ে দেওয়া হোক।আমার মনেহয় তোর আগে বিয়ে প্রয়োজন।ভেবে দেখ দাদাভাই আর আমাকেতো কাওকে খাইয়ে দেওয়া লাগেনা,গোসল করিয়ে দেওয়া লাগেনা,ড্রেস পরিয়ে দেওয়া লাগেনা,ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া লাগেনা।অথচ এতো বড় দেড়ি ছেলে হয়ে তোকে সব করিয়ে দেওয়া লাগে।এখন বল কার বউয়ের প্রয়োজন?বিয়ে করার পর তো সেই ছোটোমাকে ভুলে বউয়ের উকালতি করবি।সেই বউ এসে পারলে,কষ্টসাধ্য করে এখন থেকে তোকে মানুষ বানিয়ে নিক।তোর পিছনে ছোটোমার এই অক্লান্ত পরিশ্রমের সুরাহাটা,আমি কতো ভেবেচিন্তে তারপর বের করেছি।দারুন আইডিনা না বলো ছোটোমা।

গলা চড়াও করে শেষের কথাটা স্বান্তনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো ইভান।এতোসময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও,ইভানের গলা পেতেই নড়েচড়ে দাঁড়ালেন তিনি।নীহারিকা বেগমকে থমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনিও চাইলেন ইভানের মতো পরিবেশ চনমনে হোক।যদিও জানেন,এই ঘটনা নিয়ে আরও ঘটনা ঘটবে তারপর ঝামেলা মিটবে।আদৌও মিটবে কিনা উনার জানা নেই।যা একখান ননদ উনার।তপ্ত শ্বাস ফেলে তিনিও গলা চড়াও করে বললেন।–তা যা বলেছিস?

এবার মুখ খুললো নাফিম।চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো নীহারিকা বেগমকে উদ্দেশ্য করে-বড়মা।ছোট দাদাভাই কিন্তু জ্বালাচ্ছে আমাকে।

‘ইভান চুপচাপ খেতে বোস।আমার মেজাজ কিন্তু বহুত খারাপ আছে! আর একটুও খারাপ করিস না?

ভদ্র ছেলে হয়ে গেলো ইভান।তবে সামনে বসা কৌড়িকে চুপচাপ দেখতেই মুখটা আর স্থির রাখতে পারলো-না। মায়ের তীক্ষ্ণ মেজাজের বানী ভুলে গিয়ে ফিসফিসানি গলায় বললো—এই ফুলকৌড়ি, তুমি খাবার না মুখে তুলে শুধু ঘেঁটে যাচ্ছো কেনো?তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।তোমার জন্য দাদাভাইও খেতে আসতে পারছে-না,যদি সে আসাতে তুমি আবার বিষম খেয়ে বসো।

তড়িৎ বিস্ময় নিয়ে মুখ তুলে চাইলো কৌড়ি।নিজেকে অনেক আগেই স্বাভাবিক করে নিয়েছে সে।তারজন্য সেই মানুষটা খেতে আসতে পারছেনা।মানেটা কি?আশেপাশে নজর দিলো কৌড়ি।কৈ,কোথাও তো কেউ নেই।তবে কি তারসাথেও ফাজলামো করছে ছেলেটা।নাফিমকে ক্ষেপিয়ে এবার তারপিছনে লেগেছে মানুষটা।কৌড়ির আশেপাশে চাওয়াচাওয়ি করতে দেখে বিষয়টা বুঝে ইভান ফের ফিসফিসিয়ে বললো।

‘দোতলার দিকে তাকাও,তোমার চাওয়াচাওয়ির উত্তর সেখানে মিলে যাবে।

সেকেন্ড দেরী করলোনা কৌড়ি।মূহুর্তেই ঘাড় উঁচিয়ে দোতলার দিকে তাকালো।সুগভীর,তীক্ষ্ণ নজরজোড়ায় আঁটকে গেলো নজর।লম্বা চওড়া মানুষটাকে সটান হয়ে স্থির নজরে তারদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বুকের মধ্যে থাকা যন্ত্রটা মূহুর্তেই ছলকে উঠলো,শিরশিরানি দিয়ে গায়ের সমস্ত লোমকূপ কাটা দিয়ে সজাগ হলো।এদিকেই তাকিয়ে ছিলো মানুষটা!কৌড়িকে তাকাতে দেখেও নজর কিঞ্চিত সরালোনা নিভান।সেভাবেই ত্রিশূল নজরে তারদিকে তাকিয়ে রইলো।নজর নামিয়ে নিলো কৌড়ি।খেতে মোটেই ইচ্ছে করছেনা তার।তবে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর খাবার ফেলে চলে যাওয়া শোভনীয় দেখাবেনা।তাই না চাইতেও প্লেটে থাকা অল্প খাবারগুলো টপাটপ গালে তুললো।সেটা দেখে মৃদু হাসলো ইভান।এই মেয়েকে যে সে দাদাভাইয়ের বউ করবে বলে ভাবছে।এতো ভয় পেলে এই মেয়ে দাদাভাইয়ের সাথে সংসার করবে কি-করে?তবে আর যাই হোক,বউকে ভালোবাসবে দাদাভাই ভিষন।আর সেই ভালোবাসায় এই ভয়,এই দ্বিধাবোধ কোথায় পালিয়ে যাবে।কৌড়িকে নিয়ে দাদাভাইকে সে ভাবতো না।তবে দু-ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক মধুর না হলেও, দাদাভাইয়ের নজর পড়তে যে তার ভুল হয়নি।আর এখন পিছনে না তাকিয়েও বুঝতে পারছে,ওই দোতলার বারান্দায় দাঁড়ানো মানুষটার ভিতরে চলছেটা কি?চলুক একটু।সারাজীবন নিজেকে আর নিজের অনুভূতিগুলোকে, আপনজনদের থেকে আড়াল করে এসেছে।এবার দেখা যাক কতোসময় আড়ালে রাখতে পারে নিজের অনুভূতি।সব সম্পর্কের অনুভূতি একই রকম হয়না।কিছু সম্পর্কের অনুভূতি নিজেকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেয়।ইভান,দেখতে চায় সেই জ্বালানো পোড়ানো অনুভূতি কতক্ষণ দমিয়ে, চাপিয়ে রাখতে পারে তার ওই সহনশীল ধৈয্যধারী দাদাভাই।সাবজেক্ট ফর ফুলকৌড়ি।

তাড়াহুড়ো করে খেয়ে,কোনোরূপ এদিক ওদিক না তাকিয়ে মাথা নিচু করে চলে গেছে কৌড়ি।ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে সেটা নীরবে অবলোকন করলো নিভান।মা ডাকা সত্ত্বেও খেতে যায়নি সে।ক্ষুধা লাগা সত্ত্বেও ডায়নিং টেবিলে গিয়ে কেনো বসতে ইচ্ছে করেনি,জানা থাকলে-ও মানতে রাজী নয় সে।তাই ড্রয়িংরুমে বসে মায়ের কাছে চাওয়া কফির অপেক্ষা করছিলো।তন্মধ্যে কৌড়িকে মাথানিচু করে শব্দহীন পায়ে চলে যেতে দেখলো।সোফায় হেলান দিয়ে বসে নজর হাতের নিউজপেপারে হলেও মনোযোগ তার সেই শব্দহীন চলে যাওয়া রমনীর পানে ছিলো।এখনো নজর নিউজপেপারে হলেও,মনোযোগ পড়ে আছে অন্যকোথাও।সেখান থেকে কিছু সময় পরে ইভানের খাওয়া শেষ হলো।খাওয়া শেষ হতেই উঠে দাঁড়ালো সে।
দুষ্ট হেসে ড্রয়িংরুমের দিকে এগোতে এগোতে,গলাছেড়ে গান ধরলো।

‘তোমাকেই চাই শুধু তোমাকেই চাই।আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই।

গানের কলিটা আওড়াতে আওড়াতে ড্রয়িংরুমের মধ্যে দিয়ে ধীরপায়ে এগোচ্ছিলো ইভান।সিঁড়ির গোড়া পর্যন্ত যেতে পারলোনা,জলদগম্ভীর গলায় পিছে থেকে ডাক এলো তার।মূহুর্তেই গলার স্বর ধীর হয়ে এলো।দাঁড়িয়ে পড়লো সে।মুখে ফুটলো দুষ্টমিষ্টি হাসি।সেই গলার ফের ডাকে পিছে ফিরলো সে।

‘তোমার সাথে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ন কথা আছে আমার,ইভান।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here