#নিশীভাতি
#১৪তম_পর্ব
“শুনেছি আপনার বাবা ফিরে এসেছে। সে তো একবার হুমায়রার ঘরে পুরুষ পাঠিয়েছিলো বিশ হাজার টাকার লোভে। ভুল বলেছি?”
ফাইজানের কথায় স্তব্ধ হলো রাশাদ, সে কি করে জানে তার বাবা ফিরে এসেছে। বাবা ফিরেছে সে কথা বাড়ি এবং বাড়ির আশেপাশ বাদে কেউ জানে না। রাশাদের চোখের দৃষ্টি স্থির হলো, তীক্ষ্ণতা বাড়লো। সন্দিহার কণ্ঠে বললো,
“আপনি কি করে জানলেন?”
ফাইজান হাসলো। অস্বচ্ছ, চতুর হাসি। যে মানুষের হাসিতে স্বচ্ছতা নেই, সেই মানুষগুলো প্রচুর ভয়ংকর হয়। তাদের মস্তিষ্কে কি চলছে বোঝা মুশকিল। এমন মানুষকে বেশিরভাগ এড়িয়ে চলে রাশাদ। কারণ এবং মানুষকে ভরসা করা যায় না। ফাইজান তার হাসিমুখ অক্ষত রেখে উত্তর দিলো,
“নামের থেকে দুর্নাম ছড়ায় বেশি। আর আপনার বাবার দুর্নাম তো গ্রামজয়ী। সে ফিরে এসেছে সেটা জানা কি খুব কঠিন কিছু?”
“আমাদের মত ঠুংকো মানুষের প্রতি এতো সময় কেনো ব্যয় করছেন আপনি? কি মতলব?”
“আপনার বোনকে বিয়ে করা”
রাশাদের দৃষ্টি বলছে সে বিশ্বাস করে নি ফাইজানকে। ফাইজান তাতে অবশ্য খুব মাথা ঘামালো না। সে তার বক্তব্যের ধারা বজায় রাখলো,
“প্রথমে আমি হুমায়রার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী ছিলাম না। বলতে গেলে তার বয়স আর আমার বয়সের বিস্তর পার্থক্য। উপরন্তু আমার পেশা……নিশ্চয়তা নেই কখন কি হয়! কিন্তু আগ্রহ জাগলো যখন দেখলাম আমার মা তার প্রতি বেশ দূর্বল। আমার মা ব্যাতীত পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। তাই তাকে অখুশী করার মানে হয় না। একারণে আমি হুমায়রাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছি”
“এগুলো আমাকে বলছেন কেন? আমার কি লাভ এগুলো শুনে?”
রাশাদের ভারিক্কী স্বরে কাঠিন্য ছিলো। ফাইজান ফোঁশ করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। এবার কণ্ঠ নরম হলো কিছুটা,
“আমার সাথে বিয়ে না দিলেও আপনার তো হুমায়রাকে বিয়ে দিতেই হবে। আপনার দাদা যেভাবে উঠে পরে লেগেছে সে দেরী করবেন না বিয়ে দিতে। আর তার চাওয়া অযৌক্তিক নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এমন পাত্র কি আদৌ পাবেন সে হুমায়রার ভবিষ্যত নিশ্চিত করবে। আপনার বাবা-মা এর যে হিস্টোরি, তাতে ভালো সম্মন্ধ কি আদৌ আসবে? ধরে নিলাম, ছেলের সবটাই ভালো, কিন্তু হুমায়রার পরিণতি যে তার মার মতো হবে না কি ভরসা? আশাকরি আপনার অজানা নয় জুবাইদা কেনো পালিয়েছেন! হুমায়ররার পরিণত যে এমন হবে না কি ভরসা? হুমায়রাকে আমি সেই সব কিছু দেবার ক্ষমতা রাখি যেটা আপনিও পারবেন না”
রাশাদ চুপ করে রইলো। ফাইজান নম্র স্বরে বললো,
“কিছু পেলে কিছু তো মানিয়ে নিতেই হবে। একটা ভালো পরিবেশ, ভালো ভবিষ্যত এই সব আমি যেহেতু আপনার বোনকে দিচ্ছি; সেহেতু আমার পেশার সাথে খানিকটা সমঝোতা করতে তো ক্ষতি নেই। কথা দিচ্ছি আমার পেশা কখনো আপনার বোনের সুখের বাধা হবে না। যদি হয় তবে আমি সেটার ব্যাবস্থা করবো”
রাশাদ স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ফাইজানের দিকে। মানুষটির মুখোভাব দেখে যে কেউ তাকে বিশ্বাস করে ফেলবে। কিন্তু রাশাদ তা করতে পারছে না। কারণ হুমায়রা তার একমাত্র পরিবার, পরম আদরের বোন। সবচেয়ে দামী, মূল্যবান সম্পদ তার। তাচ্ছিল্য ভরে বললো,
“নেতা মানুষ প্রতিশ্রুতি দেয় ভাঙ্গার জন্য”
“মানুষের পাঁচ আঙ্গুল যেমন সমান নয়, তেমন সব নেতার মনোভাবও সমান নয়। কথা দিচ্ছি আপনার বোনের ভবিষ্যত আপনার মায়ের মতো হবে না”
রাশাদ হিসেবের খাতায় চোখ তাক করলো। ব্যস্ততা দেখিয়ে বললো,
“ভেবে দেখবো”
ফাইজান কিছু সময় তাকে শান্তদৃষ্টিতে দেখলো। তারপর বলল,
“তাহলে আজ উঠি, আরেকটা কথা”
“কি?”
“বিয়েটা এই দু-তিন দিনের মধ্যেই হতে হবে। সামনে ইলেকশন, আমার কাজের চাপ বাড়বে। আমি বিয়ের পর দিন ই গ্রাম ছাড়বো”
রাশাদের উত্তরের অপেক্ষা করলো না ফাইজান। বেরিয়ে গেলো, প্রায় সাথে সাথেই। রাশাদ তার প্লাস্টিকের চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো। হুমায়রার নিষ্পাপ হাসিটা চোখের সামনে ভাসছে। এই হাসিটা অক্ষুন্ন রাখতে চায় সে। কিন্তু কি করে! ফাইজানকে বিশ্বাস করাটা কি বুদ্ধিমানের হবে!
*****
ঝিঁঝিঁপোকার ডাক কানে আসছে। বাতাসের নিস্তব্ধতায় অমলিন শান্তি। হুমায়রার ঘরের পাশের আমড়া গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে কালো আকাশটা। থালার মতো চাঁদ উঠেছে। রুপালি চাঁদ। সেই রুপালি সাদা আলো এসে পড়ছে পুকুরের ঘাটলায়। বাঁশ বাগান সেখানে। জোনাকি পোকার দল ভবঘুরের মতো ছুটছে সেই রুপালি জ্যোৎস্নায়। ইলহা দু চোখ মুদে দেখলো এই অকৃত্রিম সৌন্দর্য্য। ঘরে আলো নেই। বিদ্যুৎ গিয়েছে। পৌষের আগমনী বার্তায় ঘামহীন গরমটা এখন উবে গেছে। হুমায়রা ম্যাচের কাঠির ঘষায় আলো জ্বালালো। আলোতে ঈষৎ বিরক্তি এলো ইলহার মুখে, মৃদু স্বরে বলল,
“ভালোই লাগছিলো অন্ধকার”
“এটা গ্রাম ইলহা আপু, এখানে অন্ধকারে ঘরে গুইসাপ আসতে পারে”
“মানুষের থেকে ক্ষতিকর আদোতে কিছু আছি নাকি?”
আনমনেই কথাটা বললো ইলহা। হুমায়রা বুঝলো না। চেয়ারটা টেনে বসলো সে। বইটা খুলতে খুলতে বলল,
“কেমন লাগছে আমাদের গ্রাম?”
“মন্দ নয়, আসলে খুব ভালো”
“এখানে শহরের মত এতো ব্যবস্থা নেই, অসুবিধা হলে জানিও। আমি ভাইজানকে জানাবো”
“তোমার ভাইজানের কি তাতে কিছু আসবে যাবে?”
ইলহা তাচ্ছিল্যভরা স্বরে কথাটা বলল। আজ দুইদিন হবে ইলহা এখানে। অথচ মানুষটি তার সাথে কথা তো দেখাও করে নি। খাবার সময় রাতেই দেখা হয়। আযানের পর যে বের হয় আসে এশা নামাযের পর। খাওয়া শেষে নিজ ঘরে চলে যায়। একটা মানুষ তার ভরসায় তার বাড়িতে এসেছে অথচ সেদিকে যেন কোনো গুরুত্ব নেই তার। অবশ্য ইলহা যে খুব একটা কিছু আশা করে আছে তা কিন্তু নয়। তবুও সে তো ঐ মানুষটিকে ভরসা করেই এখানে এসেছে। হুমায়রা হাসলো ইলহার কথায়। হাসিমুখে বললো,
“ভাইজান এমন ই, সে পরনারীর দিকে তাকায় না। একটু রক্ষণশীল চিন্তাধারার সে। তাই হয়তো আপনার সাথে কথা বলেন না। কিন্তু তার কিছু আসবে যাবে না এটা ভুল। আমার কাছে কিন্তু সে ঠিক ই আপনার খোঁজ নেয়”
“কি বলে?”
“আপনার ঘুমোতে সমস্যা হয় কি? খাওয়া ঠিক আসে কি না?”
“সেটা আমার কাছ থেকে কি জানতে পারে না?”
“হয়তো পারে, কিন্তু ভাইজান এমন ই”
“তোমাকে খুব ভালোবাসেন তোমার ভাইজান?’
“খুব”
“কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?”
হুমায়রার ঠোঁটে প্রশ্রয়ী হাসি। মৃদু স্বরে বললো,
“বলুন”
“তোমার মা কি সত্যি ই অন্য কারোর সাথে পালিয়ে গেছে?”
হুমায়রা চুপ করে গেলো। মিষ্টি হাসিটা ধোঁয়ার মতো উঁড়ে গেলো। ফর্সামুখখানায় মেদুর জমলো। আঁখিদ্বয় নত হলো। ইলহা বুঝলো সে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেছে। তাই সাথে সাথেই বলে উঠলো,
“তোমার হবু বরটা কিন্তু সুন্দর। আমি তাকে দেখেছিলাম পত্রিকায়। বেশ জনপ্রিয় বলবো”
হুমায়রা ফ্যালফ্যালিয়ে তাকালো। অবাক স্বরে শুধালো,
“সে পত্রিকাতেও আছে?”
“জানো না?”
“না—দেখি নি কখনো”
ইলহা চট জলদি নিজের মোবাইল বের করলো। কম গতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব কষ্টে বের করলো ফাইজানের প্রোফাইল। এগিয়ে দিলো ইলহার সামনে। উৎফুল্ল স্বরে বললো,
“দেখো”
ফাইজান সত্যি সুন্দর দেখতে। সাদা পাঞ্জাবী, কালো মুজিব কোট, চোখে চশমা। মুখশ্রীতে রুক্ষ্ণতা নেই, এমন পুরুষ হয়তো যেকোনো নারীর হৃদস্পন্দন বাড়াতে সক্ষম। ক্লাসেও তার চর্চার অভাব নেই। কিন্তু কেনো যেনো হুমায়রার মোটেই তাকে পছন্দ হয় না। খুব স্বাভাবিক গলায় সে ইলহাকে বলল,
“মানুষের বাহিরের সৌন্দর্য্য ই সব? মানুষটি দেখতে সুন্দর কিন্তু ভেতরটা কালচিটে পড়া”
“কি?”
“কালচিটে পড়া”
ইলহা সশব্দে হেসে উঠলো। কতদিন পর হাসলো জানা নেই। হাসতে হাসতেই বললো,
“এমন কিন্তু প্রায় হয় যাকে আমাদের অপছন্দ, তাদের জন্যই দূর্বলতা তৈরি হয়। দেখবে এই নেতাসাহেবকেই তুমি চোখে হারাবে”
“কখনোই না। অমন নির্জীব মানুষের সাথে থাকা যায় নাকি”
হুমায়রার সাথে ঠিক কতটা সময় কথা বললো ইলহা মনে নেই। তবে মন খুলে কথা বলার চেয়ে শান্তির আর কিছুই হয় না।
********
সকালের কাঁচা সোনা রোদ চিকচিক করছে কচি ঘাসে লেপ্টে থাকা শিশিরকণায়। মৃদু ভরের গন্ধে মম করছে ধরণী। শীতল সমীরে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। কল চাপার শব্দে ঘুম ভাঙলো ইলহার। গায়ে পাতলা নকশী করা কাঁথা। হুমায়রা এখনো ঘুমে। মেয়েটি ঘাপটি মেরে আছে। ইলহা নিজের কাঁথাটা হুমায়রার গায়ে দিয়ে দিলো। মেয়েটিকে পুতুলের মত লাগছে। শান্ত, স্থির, বুঝদার একটা মেয়ে। কে বলবে তার জীবনে এতোটা কষ্ট! ইলহা বাহিরের দিকে তাকালো। আজ অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে উঠতে। নামাযটা কাজা পড়তে হবে। ইলহা ওড়নাখানা টেনে বের হলো ঘর থেকে। পাদুকাজোড়া পড়লো না। শিশিরভেজা মাটিতে হাটতে ইচ্ছে করছে না। কলপাড়ে গেলো সে মুখ হাত ধুতে। কলপাড়ে যেতেই পা আটকে গেলো। রাশাদ তখন কলের দিকে মুখ করে গোসলে ব্যস্ত। তার উন্মুক্ত শ্যাম পিঠ থেকে পানি চুয়ে চুয়ে পড়ছে। ইলহার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল রক্তের স্রোত বয়ে গেলো। শুভ্র গাল লালচে হয়ে উঠলো মুহূর্তেই। খুব করে বুঝলো একটা মস্ত ভুল হয়ে গেছে। তার হুমায়রার ঘরের পেছনের কলপাড়ে যাওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু ওখানের নিস্তব্ধতায় তার ভয় হচ্ছিলো। ভেবেছে এখানে আতিয়া হয়তো কাপড় ধুইছে কিন্তু রাশাদকে এখানে এভাবে দেখবে কল্পনাতীত ছিলো। কিছুসময় লাগলো তার নিজের ধাতস্থ হতে। ধাতস্থ হতেই যেই পেছনে ঘুরলো তখন ই রাশাদের ভারী গলা কানে এলো,
“কে?”
“সরি, আমি বুঝতে পারি নি এখানে আপনি গোসল করছেন”
ইলহার চিকন কণ্ঠ শুনতেই সেদিকে ফিরে তাকালো রাশাদ। ঝট করে মাথায় পানি ঢেলেই উঠে পড়লো ভিজা শরীরে। খুব শীতল স্বরে বললো,
“এখানে আমি গোসল করি, আশা করি আগামীতে ভুল হবে না। হুমায়রার কলখানায় যাবেন। ওখানে পর্দার ব্যবস্থা করা”
ইলহার লজ্জা বাড়লো। ছুটে পালালো যেনো সে। চোখের সামনে এখনো ভাসছে রাশাদের উন্মুক্ত পিঠ, কানে বাজছে তার ভারী স্বর। এক মানুষের এতো রুপ কেনো? কই হাসপাতালে তো এতো কঠিন ছিলো না, না সেরাতে বাসে। তবে এখন এতো কাঠিন্যের কি মানে?
*******
দিবাকালের মধ্যভাগ। রোদের তেজ এখনো আগের মত। হালকা শীত নেমেছে ধরণীতে। এবছর হয়তো শীত পড়তে দেরি হবে। খেঁজুরের গুড়ের অপেক্ষায় হাড়ি বাধা প্রতিটা গাছে। কাঁচা রাস্তার দুপাশে সরিষা ফুলের হলদেটে রং ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হুমায়রা ক্ষেতের পাশ দিয়ে হাটছিলো। আজ নসীবন বাজারেই নামিয়ে দিয়েছে। বাজার থেকে বাড়ির পথটা তাই সে হেটেই যাবে। ক্ষেতে মাঝেরর এই পথটা বেশ প্রসস্থ। সামনের মাসে এটা পাকা রাস্তা হবে। জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি নিয়ে প্রথমে আইল হলো এখন কাঁচা রাস্তা, এরপর পাকা রাস্তা। গ্রামের শহুরে ধাঁচ চলে এসেছে। হলদেটে সরিষার ক্ষেতগুলো দেখতে দেখতে হাটছিলো হুমায়রা। তার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটালো তীক্ষ্ণ হর্ণ। পেছনে তাকাতেই ফাইজানের গাড়িটি নজরে পড়লো। হুমায়রা সরে দাঁড়ালো যেনো চলে যায়। কিন্তু গাড়িটা গেলো না। বরং দাঁড়িয়ে রইলো, এবং হর্ণ দিলো। হুমায়রা অবাক হলো। তখন ই কালো কাঁচ নামিয়ে ফরিদ হাসি মুখে বললো,
“গাড়িতে উঠেন ভাবী”
ফরিদের মুখে ভাবী শব্দটি ভাবনাতীত ছিলো। হতভম্ব স্বরে বললো,
“জি?”
“গাড়িতে উঠুন”
বলেই সে প্রাণবন্ত হাসলো। হুমায়রা অপ্রস্তুত হলো। খুব নম্রস্বরে বলল,
“অপরিচিত মানুষের গাড়িতে আমি উঠতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না”
ঠিক তখন ই গাড়ির দরজা খোলা হলো। লম্বা, সুঠামদেহী মানুষটি দাঁড়ালো ঠিক তার সামনে। খুব নরম স্বরে বললো,
“মা আপনাকে আমার সাথে যেতে বলেছে”
“বাড়িতে চিন্তা করবে”
“আমি আপনার ভাইজানের সাথে কথা বলে নিয়েছি”
হুমায়রা তাকিয়ে রইলো ফাইজানের মুখপানে। মানুষটির মুখখানায় আজ রুক্ষ্ণতা নেই। বরং ঠোঁটে লেপ্টে আছে মৃদু হাসি_______
*******
কাওছার বেশ অদ্ভুত আচারণ করছে। সে এখন মদ খায় না, জুয়া খেলে না। ঘরেই থাকে সারাক্ষণ। বাজার হতে শুরু করে সব ই সেই করে। ব্যাপারটা অবাককর। কিন্তু সত্যি হয়েছে। দুপুরের খাবারের পর সে পিতার ঘরে আসলো। শামসু মিঞা তখন হুক্কা টানছিলেন। তাকে দেখে দৃষ্টি সরু হলো তার। কাওছার একটু রয়ে সয়ে বসলো। মুখে হাসি লেপ্টে শুধালো,
“আব্বা, শরীর কেমন?”
“হুম, ভালা। কিছু কইবি?”
“হ, কইতাম। কিন্তু ক্যামনে কমু, বুঝতেছি না”
“মুখ দিয়া ক”
কাওছারের কন্ঠ নরম হল। খানিকটা অনুতপ্ত স্বরে বলল,
“আমার মতো পাপীর মইরে যাওয়া উচিত”
“জানা কথা, নতুন করে কি কইবি তাই ক”
কাওছার আমতা আমতা করলো। ঠিক তখন হন্তদন্তের মতো দাদার ঘরে প্রবেশ করলো রাশাদ। তার চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। চোয়াল শক্ত। কঠিন স্বরে বললো,
“সকালে আপনে বাজারে গেছিলেন?”
কাওছার থতমত খেলো। অপ্রস্তুত গলায় বললো,
“হ”
রাশাদ কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। পরক্ষণেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শান্ত গলায় বললো,
“এই শুক্রবার ই হুমায়রার বিয়ে, দাদা আপনি ফাইজান ইকবালকে খবর দেন”………………
চলবে
[মুসলিম পাড়ার দুটি বাড়ি, নাম শান্তিকানন এবং সুখনীড়। কিন্তু সেখানে অশান্তির বাস আর সুখের ছিটেফুটেও নেই। আছে শুধু ঝগড়া কলহ, বিদ্বেষ। বড়রা তো বড়রা, ছোটরাও এই কোন্দলে ঝাঝড়া। সকালবেলায় বল এসে ভেঙ্গে ফেললো আয়াতের শখের চুড়ি। ক্রোধ বর্ষণ হলো এই পাশ থেকে। কিন্তু ওপাশের সৌম্য পুরুষ, সাফওয়ান কেবল ই হাসলো। ফলে আরেকদফা ঝগড়া লাগলোই। আর দর্শক হলো মুসলিম পাড়া। এই বিদ্বেষ, কলহের বাতাসে প্রেমপুষ্প ফোটাবার দুঃসাহস পোষন করেছে এক জোড়া কপোত-কপোতী, প্রভা-ইশতিয়াক। আঠারো বছর ধরে সঞ্চিত প্রণয় পরিণয়ে পৌছাবে তো? নাকি তার পূর্বেই দু-বাড়ির কোন্দল পিষিয়ে দিবে প্রেম? সাফওয়ান-আয়াতের ঝগড়া কি কখনো শেষ হবে? নাকি চাঁদ কখনো বলবে হাতটি ধরতে?
ই-বই : চাঁদ বলে হাতটি ধরো (অংশ বিশেষ)
পুরো গল্পটা পাবেন শুধুমাত্র বইটই এপে। দাম মাত্র ৬০ টাকা!বইটি পড়তে হলে অবশ্যই গুগল প্লে স্টোর থেকে বইটই এপ ডাউনলোড করে নিজের একাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে]
মুশফিকা রহমান মৈথি